স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 40

0
802

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 40
______________________________

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ পেছন থেকে রিমি আমায় জড়িয়ে ধরে।
আমি রিমির হাত ধরে বললাম
– হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরলি যে।
রিমি আমাকে বলে ফারাবি তোর জন্য একটা জিনিস আছে।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমার জন্য কি জিনিস ?
রিমি হালকা হেসে বলল
– যেটা তুই চেয়েছিলি ?

আমি হালকা ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমি চেয়েছিলাম?
কবে আর কি চেয়েছিলাম ?
রিমি আমাকে কিছু না বলে হাত ধরে ওদের বাসায় নিয়ে গেল।
আমি আর কিছু বললাম না।
বাসায় ঢুকতেই রোমা আন্টির সাথে দেখা।
আন্টি আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলল
– এখন ঠিক আছিস মা?

আমি হাসি দিয়ে বললাম
– আন্টি চিন্তা করো না,
আমি একদম ঠিক আছি ।

তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে, রিমির সাথে উপরে চলে আসলাম।
রিমি সোজা আমাকে ফারহান ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেল।
আমি খানিকটা অবাক হলাম, ফারহান ভাইয়ার রুমে কেন ।
রুমে গিয়ে রিমি কাবাড থেকে প্রায় 7 8 বক্স
চকলেট বের করে দিলো।
আমি রিমির দিকে প্রশ্নবোচক দৃষ্টি তে তাকাতেই রিমি মলিন হাসলো।
কিন্তু কিছুই বলল না, আমি শুধু দেখছিলাম।
রিমি রুম থেকে ব্যালকনিতে চলে গেল ,আর বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো।
আমি ওর হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম।
কারন ওর হাতে রয়েছে তোতা পাখি, কিন্তু একটা।
রিমি আমার হাতে খাঁচা সহ তোতা পাখি টা দিয়ে বলল
– ভাইয়া দিয়ে গিয়েছে।
দুটোই এনেছিল, কিন্তু একটা নিয়ে গেছে।

আমি রিমি কে মৃদু স্বরে বললাম
– কেন ?

রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– তা জানি না রে।

রিমির হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আমি রিমি কে জড়িয়ে ধরে বললাম
– এই মেয়ে কাঁদছিস কেন ?
রিমি আমাকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
– আমার ভাই টা তোকে খুব ভালোবাসে রে, খুব ভালোবাসে।

আম্মুর ডাকে ঘোর থেকে বের হলাম।
আমি খানিকটা তুতলিয়ে বললাম
– হুমম আম্মু।

আম্মু বলল
– তাড়াতাড়ি লান্স করতে আয়।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– হুমম যাও আসছি।

আম্মু চলে যেতেই ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।
সত্যি বলতে আজ তিন বছর পর ও আমি জানি না , ফারহান ভাইয়ার প্রতি আমার অনুভূতি কি।

ফারহান ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমার সজ্ঞি হয়ে ছিল কালো গোলাপ গাছ আর তোতা পাখি টা।
তোতা পাখি টা কে আমি অনেক কথা বলতে শিখিয়েছি।
রোজ ফারহান ভাইয়ার নামে অভিযোগ করি ।
কিন্তু কেন করি তা জানি না।
ওনি যদি আমায় ভালোবাসেন ই তাহলে এতো বকতেন কেন?

আসলে ভালোবাসা টাসা কিছুই নয় সব ঢং।
এতো ভালোবাসে ই যখন, তো রোজ ফোন করে কথা বলা উচিত ছিল।
যত্তসব একটি বার ফোন ও করলো না, আবার ভালোবাসা
এভাবেই তোতা পাখি নিয়ে কেটে যেত আমার সারাদিন।
দেখতে দেখতে মাস পেরিয়ে 2 বছর পার হয়ে গেল ।
এই দুবছরে ফারহান ভাইয়ার সাথে দু দিন কথা হয়েছে, শুধুমাত্র আমার জন্মদিনে।
আমি ওনাকে নিয়ে ভাবতে চাইতাম না।
কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় ওনি আমার মাথায় ঘুরতেন।
আজববব এখনো ঘুম থেকে উঠি ওনার ডাকে।
রোজ স্বপ্নে এসে কঠোর একটা ধমক দিয়ে বলে
– ফারাবি পড়তে বস।

এই লোকটা স্বপ্নে ও জ্বালাতন করে।
আহহহ আর শান্তি নেই।

দেখতে দেখতে এইস এস সি পরীক্ষা ও হয়ে গেল।
এইস এস সি পরীক্ষা তে ও বেশ ভালো রেজাল্ট করলাম।
সবাই বেশ খুশি হলো, সাথে এটা ঐ টা গিফট তো আছেই।
আব্বু আমাকে একটা সিম কার্ড ও দিলো।
কারন ভারসিটি তো একটু দূরে , তাই সিমের প্রয়োজন ও আছে।
সিম কার্ড টা পেয়ে এক প্রকার লাফিয়ে রুমে চলে গেলাম।
প্রথমেই একটা ফেসবুক আইডি ওপেন করে ফেললাম।
অবশ্যই সেটা ফেক আইডি , কিছু একটা ভেবে সার্চ দিলাম ফারহান চৌধুরী খান লিখে।
সঙ্গে সঙ্গে ফারহান ভাইয়ার আইডি এসে পড়লো,
সেটা ও সবার উপরে।
বাহহহ

উত্তেজনা নিয়ে প্রোফাইল এ ঢুকলাম।
বায়ো তে বড় বড় করে লেখা।

❤স্বপ্নের প্রেয়সী কে ছেড়ে আজ আমি বহু দূরে❤

দেখেই চোখ জোড়া রসগোল্লা হয়ে গেল।
বাব্বা

বেশ কিছুক্ষণ প্রোফাইল এ স্কল করতে থাকলাম।
প্রোফাইল এ ছবি গুলো দেখে চোখ জোড়া আটকে যাচ্ছে।
উনি আগের থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছেন।
হায় রে এবার বোধহয় ক্রাশ টা খেয়ে ই গেলাম।পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলাম, তারপর বললাম
– না ফারাবি না, তুই কেন ক্রাশ খেতে যাবি।
কখনো ই নাহহ

পুরো প্রোফাইল ঘুরে এসে ভাবলাম একটা ম্যাসেজ দিবো।
পরক্ষণেই নিজের ভাবনাকে পরিবর্তন করে বললাম
– আমি কেন ম্যাসেজ দিবো।
উনি কখনো আমার খোঁজ নেন।
ইসসস ভালোবাসা, সব হলো নেকামি।
কিন্তু মন টা যে কেমন কেমন করছে।
পরক্ষণেই বললাম না একটা ম্যাসেজ দিই।
তারপর ভাবলাম নাহহ নাহ এই আইডিতে আমার ফ্রেন্ড রা থাকবে।
শেষে ধরা খেয়ে যাবো, বুদ্ধি করে আরেকটা ফেক আইডি খুলে নিলাম।
এটা সম্পূর্ণ গোপন , কাউকে জানালাম না।

ফারহান ভাইয়া কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলাম, সাথে হ্যালো লিখে একটা ম্যাসেজ তারপর নেট অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

___________________

সকাল বেলা টং করে নোটিফিকেশনের আওয়াজে হুরমুরিয়ে উঠলাম।
আজববব কোন শালায় ম্যাসেজ দিলো।
কালকে মাথার কাছে ফোন টা রেখে ঘুমিয়েছিলাম।
ধ্যাতত
ফোনটা নিয়ে নোটিফিকেশন চেক করলাম।
ওরে বাছছ এ তো ফারহান ভাইয়া , বাবহা রিকোয়েস্ট একসেপ্ট ও করে নিয়েছেন।
ম্যাসেজ চেক করে দেখলাম ওনি ও অনলাইন এ।
তাই আরেক টা ম্যাসেজ দিলাম
– কেমন আছেন ?
কিছুক্ষণ পরে রিপলে আসলো
– আলহামদুল্লিহ তুমি ?

ওরে কি জিনিস রে বাবা, প্রথম দিন ই একে বারে তুমি করে বলা হচ্ছে।
নিশ্চয়ই এই বেটার আরো অনেক এর সাথে লাইন আছে।
বেটা বজ্জাত হনুমান, তোর বিয়ে হবে না ।
যত্তসব
আমি ও রিপলে দিলাম
– আলহামদুল্লিহ।
কি করছেন ?
– এই তো সবার সাথে কথা বলছি ?
আমি বললাম
– ওহহহহ।
গালফেন্ড বুঝি ?

– হাহা হুম ।

ওনার এই উত্তরে আমার চোখ গুলো রসগোল্লা হয়ে গেল।
ওনার গালফেন্ড ও আছে।
তার মানে সব ছিলো লোক দেখানো ভালোবাসা।
এক নাম্বারে বজ্জাত, হুহহ

এভাবেই চলতে থাকে আমাদরে কথোপকথন।
আমার প্রতি ওনার একটু বেশি ই ইন্টারেস্ট দেখছি।
হুট হাট ম্যাসেজ দেয়, সব কিছু জিজ্ঞাসা করবে।
খেয়েছি কিনা, ঘুমালাম কি না, সব।
তার মানে আমার প্রতি আগে যে কেয়ার দেখাতেন।
সব ই লোক দেখানো , এই তো এখন অন্য মেয়ে ভেবে তার কতো কেয়ার করছে।
আসলে ঐ টা ছিলো মোহহহ

দূরে সরে সব ভুলে গেছেন।
তাতে আমার কি?
আমার কি ওনার কেউ হই নাকি।
উনি পড়ে থাকুক অন্য মেয়ে কে নিয়ে।

কিন্তু বেহায়া মন বার বার ভাবাতো , ওনি কি সত্যি আমায় ভুলে গেছেন ?
তাহলে সবাই কে কেন এতো ভালোবাসা দেখালেন , কেন ?

এই সব ভাবতে ভাবতে আর তোতা পাখির কাছে দিন রাত অভিযোগ করেই কেটে গেল তিন তিন টে বছর।
এমন কোন দিন যায় নি যে ফারহান ভাইয়া কে মনে পরে নি।
কেন এমন হয় আমার , কলেজ থেকে শুরু করে ভারসিটি অব্দি কতো প্রপোজ পেলাম, কিন্তু কাউকে ভালোবাসা তো দূরে থাক ভালো ও লাগে নি।
কখনো ফিরে ও তাকালাম না।
সবাই কে বিরক্ত লাগতো।
কেন এমন হয়?

এই সব প্রশ্নের উত্তর আমি ভেবে পাই না, শুধু ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।

হঠাৎ ধ্যান ভাঙ্গলো, ইসসস আম্মু কখন ডেকে গেছে।
বলতে না বলতে আম্মু খাবার নিয়ে আসলো।

আম্মু আমার পাশে বসে বলল
– অসুস্থ লাগছে মা?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– নাহহ।
আম্মু হালকা হেসে বলল
– আমি খাইয়ে দিই?

আমি হালকা হেসে সম্মতি জানালাম।
আম্মু খাইয়ে দিয়ে মাথায় চুমু দিয়ে চলে গেল।

বেডে উপর হয়ে শুয়েই পরলাম।
হঠাৎ মনে পড়ল ইসসস ফারহান ভাইয়ার ম্যাসেজ ই চেক করা হলো না।
কিন্তু ওনি জানলেন কি করে এটা আমার আইডি ?
আর হঠাৎ এতো বছর পর কেন ম্যাসেজ দিলেন ?

এই সব ভাবতে ভাবতে ম্যাসেজ টা ওপেন করেই ফেললাম।
প্রথম ম্যাসেজ

– বিকেল 4 টায় মনিকা দের ছাদে চলে যাবি ।
ভুল যেন না হয় ।
যদি কথা না শুনিস তো খবর আছে।
এসে যেন দেখতে পাই।

আমি অবাক হয়ে রইলাম ।
এই লোক টা বি ডি তে বেক করছেন।
কই আমায় তো কেউ কিছু জানায় নি।
অবশ্য আমাকে জানিয়ে ই বা কি হবে।
কিন্তু ওনি আমাকে দিয়ে কি করবেন?
আমাকে কি দরকার ?
আজববব লোক

কেন রে ভাই তোর গালফেন্ড ই তো আছে।
আমায় কি প্রয়োজন, যত্তসব।

দ্বিতীয় ম্যাসেজ

– এখনো কি সেই পিচ্ছি টাই রয়েছিস ?
এখন তো বড় হওয়া উচিত 18 পেরিয়ে 19 পূর্ন হবে।

আমি ম্যাসেজ টা দেখে কিছুক্ষণ বসে রইলাম।
বিকেল হতে আর মাত্র কিছুক্ষণ।
উফফফ আমি এই লোকটার সামনে যাবো কি করে।
3’55 বাজে কোন মতে নিজেকে ঠিক করে ছাদে চলে আসলাম।
বাড়ি ভর্তি মানুষ, সবার আত্মীয় স্বজন এসেছে।
একে বারে গম গম করছে, ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে বাসার গেট টা বার বার দেখছিলাম।

মনিকা আপুদের আরো কাজিন রা ও ছাদের এপাশ ওপাশ ছিলো।
আমাকে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসলো।
আমার সাথে দাঁড়িয়েই সবাই আড্ডা দিতে লাগল।
আমি হালকা কথা বলছিলাম আর আড় চোখে বার বার গেটের দিকে তাকাচ্ছিলাম।
মনের ভেতর কেমন খচখচ করছে।
কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল।
সমস্ত অস্থিরতা কাটিয়ে দেখতে পেলাম বাড়ির গেট দিয়ে তিনটে বড় বড় গাড়ি প্রবেশ করছে।
আশে পাশের আপু রা ও আড্ডা বাদ দিয়ে গাড়ির দিকে মনোযোগ দিলো।

ব্ল্যাক কার থেকে চিরচেনা সেই মানুষ টা বেরিয়ে আসলো।
দেখেই মনটা কেমন করে উঠলো।
বার বার চোখ জোড়া ওনার দিকে চলে যাচ্ছে।
আগের থেকে ও অনেক বেশি কিউট হয়ে গেছেন ওনি।
বরাবর ই ফরমাল লুকে এ থাকেন , কিন্তু আজ আর ও বেশি ড্যাশিং লাগছে।
ব্লু ব্লেজার , ব্লেক শার্ট , ব্লেক প্যান্ট, ব্লু সু।
চোখে সানগ্লাস, হাতে ওয়াচ, চুল গুলো স্পাইক করা।
অসাধারণ লাগছে , বেহায়া চোখ বার বার ওনার দিকে তাকাচ্ছে।
আশে পাশে তাকিয়ে দেখি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
রিতি আপু তো বলেই ফেলল
– এই ঐ ছেলেটা এতো সুইট ।
উফফফ একে তো চাই ই চাই।
অন্য আপু গুলো ও তালে তালে মেলালো সবার ই নাকি চাই।

মাথা গেল চরে, ওনি কি জিনিসপত্র নাকি যে, দাম দর করে নিয়ে নিবে।
আজববব

আর এই লোকটার ই বা এতো সেজে গুঁজে আসার কি দরকার।
যত্তসব ঢং
সোজা ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসলাম।
ইচ্ছে তো করছিলো এদের সবার মাথা ফাটিয়ে দিই।
কেন রে সুন্দর ছেলে দেখলেই চোখ দিয়ে গিলে খেতে হবে।
লুইচ্চা মাইয়া রা ,

ব্যালকনি তে গিয়ে তোতা পাখির সাথে কথা বলতে লাগলাম।
আর হাজারো অভিযোগ তো আছেই।
তোতা বলল
– হুম বাজে, হুম বাজে।

ঐ ভাবেই বসে রইলাম।
একটু ও ভালো লাগছে না, মনটা বেশ খারাপ।

বিকেলটা গাঢ় হতে চলল তাই মেহেন্দির জন্য রেডি হয়ে নিলাম।
স্কাই ব্লু কালারের শাড়ি লেহেঙা পড়ে হালকা মেকআপ করে বের হয়ে আসলাম ।
ড্রইং রুমে আসতেই দেখলাম মনিকা আপুর দাদুভাইয়ের সাথে বসে ফারহান ভাইয়া কথা বলছেন।
আর তার আশে পাশে ঘিরে আছে সব লুচু মেয়েরা।
পারছে না শুধু একে বারে গলায় ঝুলে পড়তে।
আজববব

ওদের দেখে ও না দেখার ভান করে যেতে লাগলাম।
কিন্তু তখনি দাদুভাই ডাক দিলো
– ফারাবি বুড়ি যাচ্ছিস কোথায়।

আমি দাদুভাই এর কথায় থেমে গিয়ে বললাম
– এই তো এখানেই।

দাদুভাই বলল
– পড়ে যাস, দেখ আমাদের নতুন সাহেব এসেছে।
আমায় বাইরে টা দেখতে হবে তুই ও ওদের সাথে আড্ডা দে।

আমি হালকা তুতলিয়ে বললাম
– নাহহ না আমি ঠিক আছি।

ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না।
শুধু আড় চোখে দেখছেন আর সবার সাথে গল্প করছেন।

দাদু ভাই বলল
– নাহহ নাহহ এখানে এসে বস।

আমি আর কি বলব গেলাম চলে।

ফারহান ভাইয়া সবার সাথে বেশ হেসে হেসে ই কথা বলছেন।
মনে হচ্ছে আমাকে চিনেন ই না।
রিতি আপু বলল
– ফারাবি চলো পরিচয় করাই।

আমি অনিচ্ছাকৃত হাসি দিলাম।

উনি হচ্ছেন ফারহান, অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন,
মনিকার সিনিয়র ফেন্ড।

আমি মনে মনে বললাম
– এই বজ্জাত হনুমান রে আমার থেকে ভালো কে জানে।

ফারহান ভাইয়া একপলক আমাকে দেখে উঠে দাড়ালো।
তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
– হায় ।

আমি অনিচ্ছাকৃত হাত মিলিয়ে বললাম
– হ্যালো।

কিন্তু বিপদ হলো তখন যখন ওনি আমার হাত টাই ছাড়ছিলেন না।
আমি সবার সামনে কিছু বলতে ও পারছি না।
বার বার হাত মুচরাচ্ছি কিন্তু ওনি ছাড়ছেন ই না।

রিতি আপু বলল
– আর ফারহান ওও হচ্ছে ফারাবি।
রিফাত ভাইয়ার বোন।

এবার ফারহান ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে বলল
– ওহহ নাইচ টু মিট ইউ।

আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম
– আই অলসো।

ফারহান ভাইয়া আমাকে আর কিছুই বললেন না।
রিতি আপুদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে, এখানে সব থেকে অপরিচিত আমি।
এই ছিলো ভালোবাসা, বেটা বজ্জাত হনুমান , তোর ভালোবাসা আমার বোঝা হয়ে গেছে রে।
ইচ্ছে তো করছে একটা ঘুষি মেরে দিই।
আর এই লুচু মেয়ে গুলো ও , বলি কি তোদের কোনো কাজ কর্ম কি নেই।
যত্তসব

এই সব বুলি আওরাতে আওরাতে ওখান থেকে চলে আসলাম।
এদের রং ঢং দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
বাড়ি থেকে বের হতেই দেখি রিমি রা ও এসে পড়েছে।
সোজা গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম, রিমি ও আমায় জাপরে ধরলো।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে , রিমি কে নিয়ে বাড়ির পেছনের পুকুর টাতে গেলাম।
পুকুর পাড়ে রিমি কে নিয়ে বসে আছি।
বেশ কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে বললাম
– ভাইয়ার কথা বাসায় বলেছিস?
রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– নারে, ভয় লাগে যদি মেনে না নেয়।

– আজববব মেনে কেন নেবে না।

– তুই তো জানিস ওও এতিম , সেই ছোট্ট সময়ে একটা এক্সিডেন এ সব হাড়িয়ে ফেলে।

– তাতে কি রিমি। ভাইয়া কষ্ট করে পড়াশুনা করেছেন, আর এখন যথেষ্ট ভালো জব করে।
আর সব থেকে বড় কথা তোরা একে উপর কে ভালোবাসিস।

রিমি কিঞ্চিত হেসে বলল
– সে তো আমার ভাই টা ও তোকে খুব ভালোবাসে , তুই কি বাসিস ?

রিমির এমন কথায় আমার পুরো শরীর কাঁপনি দিয়ে উঠলো।
ভালোবাসা,
আমি ওনাকে ভালোবাসি কি না ?

কখনো তো এই প্রশ্নটা মাথায় আসে নি।
আচ্ছা আমি কি ওনাকে ভালোবাসি?
ধ্যাত কি সব ভাবছি।

রিমির দিকে তাকাতেই রিমি বলল
– আচ্ছা চল সন্ধ্যা হতে চলেছে।
তারপর রিমি আর আমি বাসায় চলে আসলাম।
সন্ধ্যা তে অনেক হৈ হুল্লর করতে করতে মেহেন্দির উৎসব পালন হলো।
কিন্তু এর মাঝে আমার সাথে ফারহান ভাইয়ার কোনো কথাই হয় নি।
উনি যেমন ভাব দেখাচ্ছেন আমায় চেনেন না , তেমন আমি ও চিনি না।
আমার কি দায় ওনার সাথে কথা বলার।
হুহহহ

অনুষ্ঠান শেষ হলে রুমে যাচ্ছি, হঠাৎ করে হেচকা টান মেরে ফারহান ভাইয়া একটা রুমে নিয়ে গেল।
আর তারপর দরজা টা লক করে দিলো।
আমি ওনাকে দেখে একদম ফ্রিজ হয়ে গেছি , হঠাৎ এমন লজ্জা লাগছে কেন?
ধ্যাত খুব অস্বস্তি হচ্ছে,

ফারহান ভাইয়া ধীরে ধীরে আমার কাছে এগিয়ে আসলেন।
আর আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
পা যেন মাটির সাথে আটকে আছে।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে কোমর জড়িয়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।
ভয়ে আমার হাত পা হিম শীতল হয়ে গেছে।
শরীর ও বিরতীহীন ভাবে কাঁপছে।
আমি কিছু বলতে ও পারছি না।

ফারহান ভাইয়া ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন।
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– ছাঁদে দাঁড়াতে বলেছিলাম , চলে গিয়েছিলি কেন ?

আমি তুতলিয়ে বললাম
– আসসলে সব আপুরা ঐ খানে ছিল তাই।

– তো , ওরা থাকুক বা না থাকুক হু কেয়ারস?
তোকে থাকতে বলেছিলাম

আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম
– দেখুন কেউ এসে পড়বে।
আপনি আমাকে ছাড়ুন,

ফারহান ভাইয়া আমাকে ছাড়ার বদলে আর ও বেশি শক্ত করে চেপে ধরলো।
তারপর কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে দিলো।
ওনার ছোঁয়া তে আমার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেল।
ফারহান ভাইয়া খুব শান্ত স্বরে বললেন
– বড় হতে বলেছিলাম।
কিন্তু তুই তো এখনো পিচ্ছি, বড় কেন হলি না।
আচ্ছা আর বড় হওয়া ও লাগবে না।
তোকে বকা ও দিবো না, একটা কথা দিবি আমায় ?

ওনার শীতল কন্ঠের রক্ত গরম করা কথায় আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন সজাগ হয়ে গেল।
আমি ধীরস্থির ভাবে বললাম
– কিহহ

ফারহান ভাইয়া বললেন
– ভালোবাসবি আমায় ?
অনেক ভালোবাসতে হবে না , এই টুকু ভালোবাসলেই হবে।
বড্ড বেশি প্রয়োজন রে , দিবি আমায় এই টুকু ভালোবাসা।

ফারহান ভাইয়ার কথায় আমি কেঁপে উঠলাম।
এই মুহূর্তে আমার কাছে কোন উত্তর নেই।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে কপালে আরেক টা ভালোবাসার পরস দিয়ে বললেন
– ঘুমিয়ে পরবি ঠিক আছে।

আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি দ্রুত গতিতে বের হয়ে গেলাম।
কোন কথা না বলে সোজা রুমে।
রিমি বেডে বসে আছে , আমায় দেখে বলল
– সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি, কিন্তু তুই তো লাপাত্তা।

আমি হালকা হেসে বললাম
– এখানেই ছিলাম।

রিমি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল
– আচ্ছা শোন ফাহিম ফোন করছে , কথা বলে আসি,
এই বলেই ব্যালকনিতে চলে গেল।

আমি বেডের উপর শুয়ে ভাবলাম ।
আমি কি ওনাকে ভালো বাসি ?
আচ্ছা সবাই তো কাউ কে না কাউকে ভালোবাসে আমি কাকে ভালোবাসি তাহলে ?
এই সব ভাবতে ভাবতে ফেসবুক থেকে অন্য আইডিটা লগইন করলাম।
আমি অনলাইন হতে না হতে ফারহান ভাইয়ার ম্যাসেজ।
– হে কিউটি।
একটা কথা শুনো আমার গার্লফেন্ড এর সাথে ব্রেক আপ হয়ে গেছে ।
তুমি কি আমার সাথে রিলেশনে যাবে।

এই ম্যাসেজ দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
বেটা বজ্জাত হনুমান, একটু আগে আমাকে বলল ভালোবাসার কথা, আর এখন অন্য মেয়ে কে প্রেম এর কথা বলা হচ্ছে ।
আর তোর গালফেন্ড টা ই বা কে।
বেটা বজ্জাত, তুই যা ইচ্ছে কর তাতে আমার কি।
ফোন টা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম , তারপর শুয়ে পড়লাম।

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here