স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,#part_5_6

0
930

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,#part_5_6
#ফাতেমা_তুজ

5.
মধ্য রাত। আকাশে চিক চিক করছে ঝলমলে তারার সারি। আর তার ই মাঝে সম্পূর্ণ আকাশের মধ্য মনি চাঁদ টা যেন খিল খিল করে হাসছে।
ব্যলকনিতে দাড়িয়ে আছে ফারহান। মুখে উপচে পড়া খুশি।
প্রিয়তমার হাসির কারন হতে পারাই এই হাসির উৎস।
ঝলমলে হাসে ফারহান। বাগানের সারি সারি ইউক্যালিপ্টাস গাছ গুলো পহরীর মতো দাড়িয়ে আছে।
থেকে থেকে ঝকঝকা আলো জ্বলছে ।
পুরো শহরের 70 % মানুষ ই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
আর বাকি মানুষ গুলো নিশাচরের দায়িত্ব পালন করছে।
ফারহান বুক ভরে শ্বাস নেয়।
ঠান্ডা বাতাস স্বরনালি তে পৌছাতেই ফারহান কেঁপে উঠে।
হঠাৎ ই ভালো লাগা গুলো বেড়ে যাচ্ছে।
ফারাবির জন্য অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে পৃথিবী এফোর ওফোর করতে রাজি।
ভালোবাসার মতো সুন্দর বোধহয় কিছু হয় নাহ।
বিচিত্র রঙের অনুভূতি নিয়ে রাঙানো ভালোবাসা।
যখন কষ্ট হয় তখন মনে হয় ভালোবাসার মতো সর্বনাশা অনুভূতি তে সর্বনাশ ই হয়।
যখন ভালো লাগা কাজ করে তখন মনে হয় ভালোবাসার মতো সুন্দর অনুভূতি কোথাও নেই।
আনমনে হেসে উঠে ফারহান।
কৈশোরের অনুভূতি কাজ করছে।

ফারহানের ফোন বেজে উঠে। বিরক্তি তে ভরে উঠে তার মুখ।
সুন্দর অনুভূতি তে তিক্ততা এনে দেওয়ার জন্য একটা ফোন কল ই যথেষ্ট।

ফারহান তিক্ত মেজাজ নিয়েই ফোন রিসিপ করলো।
ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তার।
ফোন রেখে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
ফোন টা মেঝেতে ধাক্কা খেয়ে মিররে লাগলো।
ঝন ঝন আওয়াজ তুলে মিরর ভেঙে পরলো।
অথচ ফোন টার তেমন কোনো ক্ষতি হলো নাহহ।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল , রাগ টা বরাবর ই বেশি তার।
কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটলেই উগ্র মেজাজ হয়ে যায়।
মাথা টা ধরে গেছে, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা ব্ল্যাক কফির প্রয়োজন।

**সকাল 11 টা থেকে 4 টা অব্দি টানা লিখতে হয়েছে আমায় ?
হতাশ করবেন না প্লিজ।

ডান হাত টা উঁচু করে ঘড়িতে টাইম দেখলো।
1’37 বাজে সবাই নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে।
সারা দিন কাজ করে ক্লান্ত সবাই।
এই সময়ে মেড দের বিরক্ত করার কোনো মানেই হয় নাহহ।

ফারহান মাথার চুল খামচে ধরে হাঁটতে লাগলো।
করিডোর দিয়ে নেমে নিচে চলে আসলো।
সবার ঘরেই ড্রিম লাইটের আলো জ্বলছে।
অথার্ৎ সবাই ক্লান্ত হয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
ফারহান ধীর পায়ে কিচেনের দিকে যেতে লাগলো।
স্লিপারের আওয়াজ টা মধ্য রাতে মার্বেল ফেলার আওয়াজের মতো ঝন ঝন শব্দ করছে।
কি আশ্চর্য দিনের বেলাতে চেঁচিয়ে ও কারো সারা শব্দ পাওয়া যায় নাহ।
অথচ রাতে একটা পানির ফোঁটা ও ঝন ঝনে শব্দ তোলে।
ফারহান কিচেন থেকে কড়া করে কফি বানিয়ে উপরে উঠে গেল ।
কফি খেতে খেতে করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হাসির শব্দ পেল।
এতো রাতে ফারাবির হাসির শব্দ শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল।
ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।
ফারহান ফারাবির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আবার সেই হাসির শব্দ।
চোখ গুলো লাল আভায় ছেয়ে গেছে ফারহানের। দরজা লক করা ছিলো নাহহ তাই হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ফারহান আধ ভেজানো দরজা টা পুরো খুলে ভেতরে ঢুকলো।
ফারাবি দরজার দিকে পেছন ফিরে আছে সাথে কানে ইয়ারফোন।
যার দরুন বুঝতেই পারে নি ফারহান এসেছে।
ফারাবি আবার খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ফারহানের রাগ হচ্ছে, এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে ওহ ?
ফারহানের হাতের রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
চোখ দিয়ে যেন দাবানল ঝরছে।
চোয়াল বার বার উঠা নামা করছে।
ফারাবির হাসির শব্দ কানের ভেতর ঝুংকার তুলছে।
ফারহান তেতে গিয়ে ফারাবি কে টেনে তুললো।
হঠাৎ আক্রমণে ফারাবি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
এতো রাতে ফারহান কে দেখে ভয় পেয়ে গেল।
শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো।
ফারহানের চোখের দিকে তাকাতেই ফারাবির হার্ট বিট থমকে গেল।
ফারাবির মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে নাহহ।
বুকে পানি শূন্য অনুভব করছে।
ফারাবির দু বাহু তে চেপে ধরে তেতিয়ে ফারহান বলল
_ এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিস তুই ?

ফারাবি নিশ্চুপ , মুখ থেকে একটা রা ও বের হচ্ছে নাহহ।

ফারহানের রাগ হু হু করে বেড়ে গেল।
ফারাবির দু বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
_ কথা বলিস না কেন ?
এতো রাতে কার কথা শুনে হাসছিস তুই ?

ফারাবির চোখ ফেটে কান্না এলো।
কাঁটা জায়গা তে আবার আঘাত পাওয়ায় দ্বিগুন যন্ত্রণা হচ্ছে।
কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে নাহহ।
ফারাবির চোখ দুটো অশার হয়ে অশ্রু ঝরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফারহানের সে দিকে কোনো ধ্যান নেই।
ফারহানের রাগ চরম পর্যায় , এলো মেলো তার চাহনি।
ফারাবির মুখ থেকে কোনো শব্দ না বের হতে দেখে ফারাবি কে বেডে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।
ফারাবি টাল সামলাতে না পেরে বেডের কোনে পা লেগে বেশ ব্যাথা পেল।
বোধহয় কেঁটে গেছে, নিজের মাথার চুল খামচে ধরল ফারহান।
এলোমেলো হয়ে গেছে তার পৃথিবী।
ফারাবি কে আবার টেনে তুললো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে চিৎকার করে বলল
_ তোর সাহস কি করে হয় ?
তোকে বার বার বলেছি, আমার জানের দিকে কারো নজর যেন না পরে।
তুই বার বার কেন এমন করিস ?

ফারাবি কে কোনো কথা বলতে না দিয়েই ফারাবির ফোন হাতে নিলো ফারহান।
ফোন হাতে নিয়ে চমকে উঠলো।
কারন ফোনে কমেডি মুভি চলছে।
ফারাবি দেয়ালের সাথে লেগে থেকেই মাথা নিচু করে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
ফারহান অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
দেয়ালে সর্বশক্তি দিয়ে ঘুসি মারলো , ফারাবি কেঁপে উঠলো।
হাতে বেশ ব্যাথা পেলে ও মনের ব্যাথার কাছে তা বিলীন হয়ে গেল।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ফারহান।
ফারাবি কেঁদে যাচ্ছে , ফারহান অসহায় দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
মেয়েটাকে বিনা দোষে শাস্তি দিলো।
ফারহান কাছে আসতেই ফারাবি দূরে চলে গেল।
ফারহান ছলছলে নয়নে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবি নাক টেনে বলল
_ আমি কমেডি দেখছিলাম।

ফারহানের দৃষ্টি তে স্পষ্ট অসহায়ত্ব।
ফারহান অপরাধীর স্বরে বলল
_ আম সরি। প্লিজ কাদিস নাহহ।

ফারাবির কান্না থামছে নাহহ। অভিমান আর রাগ বুকের ভেতর থেকে একদলা পানি হয়ে চোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে।

ফারহান মাথা থেকে সমস্ত কিছু ঝেরে ফেলে শান্ত দৃষ্টি তে ফারাবির দিকে তাকালো।
ফারাবির মুখ টা দেখেই বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলো।

ফারহান কিছু না বলে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
ফারাবি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।ফারহান আলতো হাসলো। ফারাবি কে বেডে শুইয়ে দিয়ে ফারাবির দু হাত জড়ো করে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেল।
ফারহানের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়াতে ফারাবি শিউরে উঠলো।
তবে অভিমান আর রাগে হাত ছাড়িয়ে নিলো।
ফারহান অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ড্রিম লাইটের আলো তে মোহনীয় দেখাচ্ছে ফারাবি কে।
ফারহান ফারাবির দিকে ঝুঁকে নাকে নাক ঘষতে লাগলো।
ফারাবি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
ফারহানের লেইম আচারন বার বার ওকে লজ্জায় ফেলে দেয়।
ফারহান আলতো করে ফারাবির গালে চুমু খেল।
ফারাবি শিউরে উঠলো , ওর হার্ট বিট স্পষ্ট অনুভব করলো ফারহান।
ফারাবি গলাতে নাক ডুবিয়ে ফারহান বলল
_ আমি অনেক অনেক সরি।
দেখ তোকে নিয়ে চিন্তা হয় আমার। আমি প্রতি টা মুহূর্ত তোকে মিস করি।
বুকে যন্ত্রণা হয় , ভয় হয়, তুই কেন বুঝিস না আমায় ?
এতো কেন ঘৃনা করিস আমায় ?

ফারহানের ছোঁয়া তে ফারাবির দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ফারাবি চোখ বন্ধ করেই বলল
_ আমার উপর থেকে সরুন প্লিজ।

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ তোর আর আমার মাঝে এখনো এক ইঞ্চির দূরত্ব।

ফারাবি চোখ মেলে তাকালো। ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ এতো ভয় কেন পাস আমায় ?

_ সরুন প্লিজ , কেউ এসে পরলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ সবাই যেনে গেলে আখেরে লাভ টা আমার ই হবে।

ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই ফারহান ফারাবির দিকে ঘোর লাগানো চোখে তাকালো।
ফারহান ধীর গতিতে আগাতে ই ফারাবি চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ আমি তোকে চাই ফারাবি। খুব করে চাই, একদম নিজের করে চাই।
বুকের ভেতর আগলে রাখতে চাই।
কাউ কে দেখতে দিবো নাহহ , জানিস তুই গত তিনটে বছর কতোটা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।
প্রতি মুহুর্ত তোকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করি আমি।
তোর চোখের কোনে পানি দেখলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই।
কেউ তোর দিকে চোখ তুলে তাকালে তাকে ধ্বংস করে দিই।
আমি তোকে চাই ফারাবি একদম নিজের করে চাই।

6.

ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাস গুলো খেলা করে যাচ্ছে ।
ফারহানের চাওয়া গুলো সম্ভব নয়।
গত তিনটে বছরে সব এলো মেলো হয়ে গেছে।
তিন বছর আগে ফারাবি কে শাস্তি তো দিয়েছে কিন্তু ফারহান ভুলে গেছে পরবর্তী তে কি হতে পারে।
ফারাবির অনুভূতি গুলো ফারহান কে চায় নাহহ।
সব কিছু ছাপিয়ে ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস আর ঘৃনা বের হয়।
অভিমান গুলো সম্পর্কে তিক্ততা এনে দেয়।
তবে ফারহান কাছে আসলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।
ফারহানের ছোঁয়া তে ফারাবির দম বন্ধ হয়ে যায়।
ফারাবির চোখ ছল ছল করে উঠলো। হয়তো অধিকার বোধ থেকেই ফারহানের কাছে আসা কে মেনে নেয় ওহ।
ফারহান কে বোঝানো সম্ভব নয়।
যে অনুভূতি আর অধিকার দেখায় ফারহান সব কিছু তুচ্ছ।

ফারহান অনুনয়ের স্বরে বলল
_ কেমন যন্ত্রণা, আমি সহ্য করতে পারি না যে।
তুই বার বার কেন এমন করিস।

ফারাবি চমকে তাকালো।
ফারহান ধীর গতিতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
চোখে নেশাক্ত অনুভূতি ফারাবির হার্ট বিট বেরে গেল।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ আমার অধিকার তুই , আমার যন্ত্রণা ও তুই আমার সব টা জুরে তুই।

ফারাবি দু হাতে ফারহান কে ঠেলতে থাকলো।
ফারহান বিরক্তি নিয়ে বলল
_ হুসসস একদম নাহহ।
আমি যা ফিল করি তুই ও সেটা ফিল করবি।
বড্ড জ্বালাচ্ছিস তুই , সারা শরীরে তুই বিচরন করছিস।

ফারাবি কে ছাপিয়ে ফারহান এগিয়ে গেল।
ফারাবির মুখে হালকা করে ফু দিতেই ফারাবি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
ফারাবির ঠোঁট দুটো কাঁপতে লাগলো।
ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির গলায় অধর ছুঁইয়ে দিলো।
ফারাবি চোখ মেলে দিলো , চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
ফারহানের অনুভূতি গুলো টানে ওকে।
ফারহান আবেদনের স্বরে বলল
_ আমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি।
সব কেমন যেন লাগছে, তোকে কাছে পাওয়ার বাসনা আমায় পুরিয়ে দেয়।
এই যে এতো এতো কাছে তবু ও বুকে যন্ত্রণা হয়।
কলিজা ছিঁড়ে তোকে আগলে রাখতে ইচ্ছে হয়।

ফারাবির শরীরে অস্বস্তি ভর করছে।
ফারহানের অসহনীয় ছোঁয়া তাকে টানছে খুব , যাহ খুব যন্ত্রণা দায়ক।
ফারাবি খামচে ধরলো ফারহানের শার্ট।
ফারহান অভিমানী কন্ঠে বলল
_ আমি কাছে আসলেই দূরে সরিয়ে দিস।
অনুভূতি গুলোর কোনো দাম নেই নাহহ।
তুই আমার কাছে থাকলে সব সুন্দর মনে হয়। যে যন্ত্রণা আমি বয়ে বেড়াচ্ছি সব ফিকে হয়ে যায়।
তোকে শাস্তি দিতে গিয়ে সব থেকে কষ্ট আমি পাই।
আমি গত তিনটে বছর কে ভুলে নতুন করে সব সাজাতে চাই। তোকে পুরোপুরি আমার করে চাই ।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহানের এতো কাছে আশা , অধিকার বোধ সব কিছু বিপর্যয় টেনে তুলছে।
ফারাবি অস্ফুটন স্বরে বলল
_ সরে যান প্লিজ।

_ কেন ? আমি ভুল কিছু করছি ? অধিকারের বাইরে কিছু করছি। কেন এতো দূরত্ব আমাদের।
আমার সব টা জুড়ে তুই তাহলে কেন সব কিছুর আগে কিন্তু জুড়ে দিস।

ফারাবি কিছু বলতে পারলো নাহহ।
তার আগেই ফারহান ফারাবির দু হাত চেপে ধরলো।
নেশাক্ত কন্ঠে বলল
_ আই মিস ইউ জান। তোকে নিয়েই জীবন রাঙাতে চাই।
সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যাক তবু ও তুই আমার ই থাক।

ফারাবি অস্ফুটন স্বরে বলল
_ আমার অস্বস্তি হচ্ছে।

ফারহান সে কথার তোয়াক্কা না করে ফারাবির চোখে চুমু খেল।
ফারাবি চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো।
ফারহানের এতো কাছে আশা, এতো গভীর ছোঁয়া ফারাবি কে নুইয়ে দিচ্ছে।
ফারহান ফারাবির নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বলল
_ আমার অধিকার বোধ আমাকে ভুল করতে বলছে।
আমি কি করতে পারি বল ?
এই যে আমি তোর কাছে আসলে তুই নুইয়ে যাস এটা আমাকে আর ও গভীর ভাবে টানে।

ফারাবি ফারহান কে ধাক্কা তে লাগলো।
ফারহানের গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পরছে ফারাবির চোখে মুখে।
ফারহানের ছোঁয়া গুলো ফারাবির উপর আকর্ষিত হচ্ছে।
ফারহান কে ঘৃনা করতে পারছে নাহ ওহ।
হয়তো ঐ একটা শব্দের কারনে ঘৃনা গলায় আটকে যাচ্ছে।

ফারাবির ছটফট দেখে বিরক্ত হলো ফারহান।
ফারাবি কে ছেড়ে উঠে বসলো।
ফারাবি উঠে বসে বার কয়েক লম্বা শ্বাস নিলো।

দুজন দু দিকে ফিরে বসে রইলো।
ফারহান নিরবতা ভেঙে বলল
_ আমি খুব খারাপ তাই নাহহ ?
তোকে অকারনেই শাস্তি দেই ?
এই যে তোর কাছে এসে ও তোকে যন্ত্রণা দেই।

ফারাবি দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
_ এটা আমার সাথে হওয়ার ই ছিলো।
আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি নাহহ।

ফারাবির কথাতে স্পষ্ট অভিমান।
ফারহান পেছন ফিরে ফারাবির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
_ এতো এতো রাগ ?
এতো শত অভিমান ও যে আমায় কাছে টানে।
আমি পাগল হয়ে যাই।
তুই যখন হাসতে থাকিস আমার পৃথিবী থমকে যায়।
তুই যখন কাঁদিস আমি পাগল হয়ে যাই।
তোর প্রতি টা অনুভূতি তেই আমি পুরে ছাই হই।

ফারাবি মুখ বাঁকিয়ে নিলো।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির গলায় সুরসুরি দিতে লাগলো।
ফারাবি তিক্ত কন্ঠে বলল
_ কি করছেন কি এসব ?

ফারহান খিল খিল করে হাসলো।
বিরক্তি তে ভরে উঠলো ফারাবির মুখ।
ফারাবি বির বির করতে লাগলো এই বজ্জাত গাঁয়ে পরা হনুমানের চরিত্রে ঘাপলা আছে।
যখন তখন কাছে আসার ধান্দা।

ফারহান সামান্য কেশে বলল
_ বির বির করতে হয় ধীর কন্ঠে আর তুই তো মনে হচ্ছে ভাষন দিচ্ছিস।

ফারাবি মুখ বাঁকিয়ে নিলো, ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আর আমি ভদ্রলোক আমার চরিত্রে কোনো দোষ নেই।

ফারাবি ঝরা হাসলো ।
ফারহান এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবি আবার বলল
_ আজাইরা ভদ্রলোক। আমার ফুল সন্দেহ এর চরিত্রে ঘাপলা আছে।

ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবি কে বেডে চেপে ধরলো।
ফারাবি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান ডেভিল স্মাইল দিয়ে ফারাবির দিকে আগাতে লাগলো।
হঠাৎ করেই ফারাবি আর্তনাদ করে উঠলো।
ফারহান ফারাবি কে ছেড়ে দিতেই ফারাবি পা চেপে ধরলো।

ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান ফারাবির পায়ে হাত দিতেই ফারাবি পা সরিয়ে নিলো।
ফারহান কপট রাগ নিয়ে বলল
_ পায়ে কি হয়েছে ?
_ কিছু নাহহ এমনি তেই ব্যাথা লাগছিলো।

ফারহান সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আবার পায়ে হাত দিলো।
ফারাবি খানিকটা ছিটকে দূরে সরে গেল।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ যাকে ঘৃনা করিস সে পা ধরলে কেন অস্বস্তি তে নুইয়ে যাস।

ফারাবি থমথমে গলায় বলল
_ পায়ে হাত দিবেন নাহহ।

_ এতো কথা বলিস কেন ?

_ প্লিজ।

ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ঝটকা মেরে ফারাবির পা কাছে নিয়ে আসলো।
ফারাবি অস্বস্তি তে হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
ফারহান আলতো হাতে ফারাবির ট্রাউজার একটু উপরে তুলল।
পায়ের গোড়ালির কিছু টা উপরে বেশ খানিকটা কেঁটে গেছে ।

ট্রাউজারের সাথে রক্ত লেপ্টে আছে।
ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে ফু দিলো ।
বুকের ভেতরে যন্ত্রণা হচ্ছে, ওর জন্য কতোটা যন্ত্রণা পেল মেয়েটা।
ফারহান ছলছলে নয়নে তাকিয়ে বলল
_ খুব যন্ত্রণা হচ্ছে তাই নাহহ ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ তেমন কিছু ই না।
প্লিজ পা থেকে হাত সড়ান।

ফারাবির কথার তোয়াক্কা না করে ফারহান আলতো করে ঠোট ছুইয়ে দিলো ফারাবির পায়ে।
ফারাবি ছিটকে সরে গেল, অস্বস্তি নিয়ে বলল
_ কি করছেন কি ?

ফারহান কোনো পাত্তা না দিয়ে ডয়ার থেকে তুলো আর মলম নিয়ে খুব যন্ত করে লাগিয়ে দিলো।
ফারাবি লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেল।
ফারহান মলিন হেসে বলল
_ আর কষ্ট দিবো না তোকে।

ফারাবি কিছু বলল নাহহ।
ফারহান আলতো হেসে ফারাবির কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বলল
_ গুড নাইট। এখন আর জেগে থাকবি নাহহ কেমন।
আমি যাচ্ছি

ফারহান এলেমেলো পায়ে হাঁটতে লাগলো।
ফারাবি পেছন থেকে ডেকে বলল
_ শুনুন।

ফারহান থেমে গেল। ফারাবি অস্বস্তি ছাপিয়ে বলল
_ এটা এক্সিডেন ছিলো। আর আমি বেশি ব্যাথা পাই নি।
তার জন্য নিজের উপর আঘাত করবেন নাহহ।

ফারহান অধর টেনে হাসলো। কিছু না বলে চলে গেল।
ফারাবি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবি জানে নিজেকে হাজার গুন আঘাত করবে ফারহান।
ফারাবি থমথমে পায়ে হেঁটে বেডে বসে পরলো।
না ঘৃনা করতে পারে , না ভেতর থেকে অনুভূতি আসে আর নাহ ভালোবাসা।
এ কেমন যন্ত্রণা ,
সব এলোমেলো হয়ে যায় , কাছে আসলে ও কষ্ট হয় দূরে গেলে ও কষ্ট হয়।
ফারাবি ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ফারাবি তপ্ত পায়ে ছুটে গেল। আশে পাশের দিকে কোনে খেয়াল নেই।
ফারহান নিজের রুমে গিয়ে নিজেকে আঘাত করতে ব্যস্ত।
যে হাত দিয়ে মেয়েটা কে আঘাত করেছে সে হাত কে থেঁতলে দিবে ওহহ।
ফারাবি দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো।
কেন কষ্ট হচ্ছে ওর ?
ওহহ তো দূরে ঠেলে দিতেই চায়।
ফারাবি নক করেই যাচ্ছে।
ফারহান তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে দরজায় এসে বলল
_ কি চাই ?

_ দরজা খুলুন আপনি।

_ কেন ?

_ প্লিজ খুলুন।

_ খুলবো নাহহ।

_ প্লিজ খুলুন আপনি,, বলতে বলতে কেঁদে উঠলো ফারাবি।

ফারহান দরজা খুলে দিতেই হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকলো।
ফারহানের বা হাতের দিকে তাকিয়ে ফারাবি ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির ধ্যান সে দিকে নেই।
ফারহান ধীর কন্ঠে বলল
_ যদি বুকের ভেতর টা দেখতি তাহলে তুই আমার হয়ে যেতি।

ফারাবি ধমকে বলল
_ থামুন আপনি। কি করেছেন কি ?

ফারাবির ধমকে ফারহান সামান্য বোকা বনে গেল।
ফারাবি ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ফারহান ফারাবির চুল মুঠো করে কাছে টেনে নিলো।
ফিসফিস করে বলল
_ কতোটা ভালোবাসিস তুই নিজে ও জানিস নাহহ।

ফারাবি চমকে তাকালো।ফারহান নেশাক্ত কন্ঠে বলল
_ তুই আমার হয়ে যাহহ।

ফারাবি লজ্জায় আর অস্বস্তি তে ছটফট করতে লাগলো।

ফারহান কাছে আসতেই ফারাবি ধাক্কা মেরে বলল
_ আপনার জন্য মানবিকতা দেখানো টাই ভুল।
শুধু ঘুম নষ্ট করলাম।

ফারহান হু হু করে হাসতে লাগলো।
ফারাবি রুমে এসে বসে রইলো।
নিজের গালে চর মারতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কারো জন্য দরদ দেখানো টাই ভুল।

দুজন ই ঘুম হীন নিশাচর হয়ে বসে রইলো।
কেউ নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে আর কেউ প্রেয়সীর চোখে ভালোবাসা দেখার খুশিতে।
বিচিত্রা রঙা অনুভূতি তে রাঙানো ভালোবাসা । না যন্ত্রণা না সুখ সবটাই এলোমেলো ।

**ফারাবির প্রতি ফারহানের এতো কিসের অধিকার??
সবাই সবার মতামত দিয়ে যান।

[পুরো গল্প শেষ না হওয়া অব্দি লেখিকার মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন নাহহ।
পুরো গল্প শেষে আমার মানসিকতা বিচার করবেন।
ওদের এতো কাছাকাছি আসার কারন নিশ্চয় ই আছে।]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here