স্বপ্নের_প্রেয়সী,21,22

0
837

#স্বপ্নের_প্রেয়সী,21,22
#ফাতেমা_তুজ
#part_21

ফারাবি মুখ চেপে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পরেছে। কাঁদছে ওহহ , এমন ভাবে কাঁদছে যেন এই দিনটার জন্য ই কতো শত বছর অপেক্ষা করছিলো ওহহহ।
ফারহানের চোখে মুখে অসাধারণ খুশি। ফারাবির কান্নায় আজ ওর কষ্ট হচ্ছে না বরং খুব আনন্দ হচ্ছে ওর।
কারন আজ ফারাবির চোখের পানি ভালোবাসার জন্য।
ফারহান ফুল গুলো নিচে রেখে উঠে দাঁড়ালো ।
ফারাবির কাছে গিয়ে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
ফারাবি ঝাপটে ধরলো ফারহানের গলা।
এতো টাই শক্ত করে ধরেছে যে ফারহান খানিকটা ব্যথা ও পাচ্ছে।
ফারহান মৃদু হাসছে , ফারাবির অভিমান গুলো আজ চিরতরে বিদায় করবে ওহ।
কেন চলে গিয়েছিল ওকে ছেড়ে সব বলবে ওহ।
ফারাবির চোখের নোনা জ্বলে ফারহানের গলা ভিজে গেছে।
মেয়েটা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। ফারাবি কে কোলে নিয়ে একটা বোর্ট এ উঠে পরলো ফারহান।
বোর্ট টা ইঞ্জিন চালিত হলে ও এটাকে রিমোর্ট দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়।
মিটার সেট করে দিলে একা একাই চলতে পারে এটা।
ফারাবি কে বোর্ট এর মাঝে বসিয়ে দিলো ফারহান ।
ফারাবি এখনো কেঁদে চলেছে। ফারহান আনমনে হেসে ফারাবির কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রাখলো।
ফারাবি কেঁপে উঠলে ও কান্না থামলো না।
ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে সুরসুরি দিতে দিতে বলল
_ বউ কাঁদলে স্বামীর অকল্যাণ হয়।

ফারাবি কাঁদতে কাঁদতে ভ্রু কুঁচকালো।
ফারহান ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
_ সত্যি বলছি।

ফারাবি কান্না থামানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু ওর কান্না থামছে না। ফারাবি অসহায় মুখ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
_ আমি কান্না থামাতে পারছি না।

ফারহান এক গাল হাসলো। ফারাবি এমনি , যখন অতিরিক্ত পরিমানে খুশি হয়ে কাঁদে তখন কিছুতেই কান্না থামাতে পারে না।
আর তখন কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি কান্না থামাতে পারছি না।
ফারাবির হেচকি উঠে গেছে। লাল শাড়ি টা এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু সেই দিকে ওর কোনো খেয়াল ই নেই।
ফারহান ঝরা হাসলো ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ আমি থামিয়ে দিতে পারি , থামাবো ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো । ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির গলাতে ডিপলি চুমু খেলো।
ফারাবি হিচকি তুলতে তুলতে ভ্রু কুঁচকালো।
ফারহানের চোখে মুখে নেশা যাহহ ফারাবি কে ও নেশাক্ত করে তুলছে।
ফারাবি সামান্য ভরকে গেল। ফারহান কে সহ্য করা সত্যি ই খুব কঠিন।
ফারহানের স্পর্শ মাদকতার মতো কাজ করে।
তবে ফারহানের স্পর্শ গুলো সহ্য করা খুব বেশি ই কঠিন।
ফারহান লম্বা হাসলো , ফারাবি শাড়ি ভেদ করে ফারাবি কে জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।
ফারহান তার এক হাত ফারাবির চুলে গলিয়ে দিলো ফারাবির নাকে নাক লাগিয়ে বলল
_ বউ টা রাগ করে থাকতো । তিন টে বছর দূরে ছিলাম কেন জানিস ?
এই দেখ তোর কাছে এসে আমি পাগল হয়ে গেছি।
তোকে একটু ভালোবাসার জন্য মরিয়া হয়ে গেছি।
তোকে না দেখলে বুকের ভেতর যন্ত্রণা হয়।
তখন আমাকে দেখলে তুই প্রতি মুহুর্ত যন্ত্রণা পেতি। আমাকে দেখলেই ঘৃনা হতো। বার বার মনে হতো আমি তোকে জোড় করে বিয়ে করেছি।
আর আমাকে ভালোবাসতে পারতি না তুই।
আমি যে তখন আর ও বেশি মরে যেতাম।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহানের লাগামহীন ছোঁয়া ফারাবির শরীরে বিচরন করছে।
ফারহান তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে ফারাবির গালে সুরসুরি দিচ্ছে।
ধীর কন্ঠে আলতো হেসে বলল
_ আই কান্ট কন্ট্রোল , আমি সত্যি এখন পুরো নেশাক্ত হয়ে গেছি।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহান তার এক হাতে ফারাবি কে আর ও কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি কেমন ভরকে গেছে। ফারহান প্রশস্ত হেসে ফারাবির ঠোঁটে সময় নিয়ে চুমু খেল ।
ফারাবি স্পষ্ট অনুভব করছে ফারহানের চোখের নোনা জল।
ফারাবি কেঁপে উঠলো , ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো সর্ব শক্তি দিয়ে।
ফারহানের স্পর্শ গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে ফারাবির প্রতি কতোটা নেশা ওর।
ফারহানের ভালোবাসা এতোটাই গাঢ় যে ফারাবির চোখ দিয়ে নোনা জল গরিয়ে পরছে।
দুজনের চোখ থেকেই অশ্রু ঝরছে। দুজনেই ভালোবাসায় মত্ত , ফারাবি কে ছেড়ে দিতেই ফারাবি ফারহান কে টেনে ধরলো।
ফারহানের দু গালে হাত রেখে নাকের নাক রেখে চোখ বন্ধ করে বলেই দিলো

আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারহান। খুব খুব ভালোবাসি, আপনার মতো ভালোবাসতে না পারলে ও আমি আমার মতো করে আপনাকে ভালোবাসি।

ফারহান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই একটা শব্দ শোনার জন্য পাগল হয়ে আছে পাঁচ টে বছর।
এই একটা কথা শোনার জন্য নিজেকে আঘাত করেছে কতো শত বার।
ফারহান এক ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলল।
ফারাবির গলায় মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ফারাবি চমকালো , ওহ ও কেঁদে দিলো তবে চোখে মুখে খুশির ঝলকানি।
একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এভাবে কেঁদে উঠে তা সত্যি ওর জানা নেই।
এই মানুষ টার জন্য তো জান দিতে ও দু সেকেন্ড ভাববে না ওহহ।
ফারাবি তার দু হাত ধীরে ধীরে ফারহানের পিঠের উপর রাখলো।
আলতো হাতে জড়িয়ে বলল
_ এভাবেই কাঁদবেন আপনি ?

ফারহান নাক টেনে বলল
_ আমার লজ্জা লাগছে ফারাবি।

ফারাবির অধর কোনে হাসি ফুটে উঠলো।
ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ফারাবির ঘাড়ে চুমু খেল।
ফারাবি অনুভব করছে সে ও একজনের বউ। তার ও একজন প্রান আছে , যার কাছে ফারাবি নিরাপদ।
যার সাথে ফারাবি পবিত্র। যার প্রতি টা স্পর্শের অধিকার আল্লাহ তায়লা প্রদত্ত।
যে ছোঁয়া স্বয়ং আল্লাহ তায়লা হালাল করেছেন।
ফারাবি ঝরা হাসলো, এই মানুষ টাকে কখনোই হারাতে দিবে না ওহ।

*

বোর্ট এর মাথায় শুয়ে আছে ফারহান আর তারউপর শুইয়ে আছে ফারাবি ।
ফারহানের প্রতি টা হৃদস্পন্দন মনোযোগ দিয়ে শুনছে ফারাবি।
হৃদস্পন্দন গুলো যেন গুন গুন আওয়াজ করে সুর তুলছে।
ফারহান তার শক্ত পোক্ত হাত দুটি দিয়ে ফারাবি কে জড়িয়ে রেখেছে ।
বাতাস বইছে সা সা করে , চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার।
শুধু বোর্ট এ জ্বলছে হ্যারিকেন এর ডিজাইন করা ল্যাম্প সেট।
জ্বলজ্বল করছে তিনটে মোম , আর তার ই পাশে রাখা ছোট্ট দুটো পাখি।
যারা কিচির মিচির করছে , আকাশের মোহনীয় চাঁদ টা যেন খিল খিল করে হাসছে।
ফারহানের দৃষ্টি ঐ চাঁদের দিকে থাকলে ও তার ভাবনা তে শুধু ফারাবির বিচরন।
ফারাবি প্রান ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। ফারহানের গায়ের মারাত্মক ঘ্রান টা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।
কে জানে শরীরে কি মাখে , না হলে এতো মোহনীয় ঘ্রান হলো কি করে ?
ফারাবি তার ডান হাতে ফারহানের বুকে আঁকি বুকি করতে লাগলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আঁকি বুকি করছিস নাকি ?

ফারাবি ছোট্ট করে বলল
_ হু

ফারহান তার এক হাতে ফারাবির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
_ কি আঁকছিস ?

_ দুটো বাচ্চার ছোট ছোট হাত পা।

ফারাবির কথায় ফারহান চমকালো। খানিকটা সন্দিহান স্বরে বলল
_ কার বাচ্চা ?

ফারাবি আনমনেই উত্তর দিলো
_ আমার আর আপনার ছোট্ট দুটো বাচ্চা।

ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ বাচ্চার জন্য রেডি তাহলে আমার বউ টা ?

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কিহহ ?

_ বললাম দুটো বাচ্চা আনার জন্য রেডি তুই ?

_ আপনি

_ কি আপনি আপনি করছিস ? তুই তো বললি দুটো বাচ্চা আঁকি বুকি করছিস।

ফারাবি লজ্জা পেল।
ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ আমার বউ টাই তো একটা পিচ্ছি বাচ্চা। আগে সে বড় হয়ে যাক , তারপর দুটো ছোট ছোট হাত পা আনার ব্যবস্থা করবো।

ফারাবি ঝরা হাসলো। হঠাৎ করেই সে কেন বাচ্চার কথা ভাবলো তা ওহ জানে না।
ফারহান প্রাণখোলা হেসে বলল
_ বউ আমার না কেমন কেমন ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।

ফারাবি চমকে ফারহানের বুক থেকে উঠে পরলো।
ফারহান মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ আমি তিন বছর ধরে নিজেকে সামলিয়েছি ।
যাতে তোর উপর কোনো প্রভাব না পরে তাই এতো দূর চলে গেছি।
এখন তো তুই এডাল্ট ও হয়ে গেছিস।

ফারাবির ভীষন লজ্জা লাগছে।
ফারহান হেচকা টান মেরে ফারাবি কে কাছে নিয়ে আসলো।
ফারাবির চুলে নাক ডুবিয়ে বলল
_ ম্যাডাম এতো ভয় পাবেন না। আমি খারাপ হলে ও অতো খারাপ নই।
আপনার জন্য সহস্র বছর অপেক্ষা করতে রাজি।
যেদিন তোর মনে হবে তুই আমার ভালোবাসা নিতে প্রস্তুত আমি সেদিন ই সব ভালোবাসা উজার করে দিবো।

ফারহানের কথা তে ফারাবির খানিক টা খারাপ লাগলো।
তবে ওহহ সত্যি ই এখন চায় না এসব।
প্রথমত পরিবারের কেউ ওদের বিয়ের সম্পর্ক জানে না।
সবাই কে জানাতে হবে, সবার রিয়্যাকশন দেখতে হবে।
সব কিছু সামলাতে হবে। যদি এখনি ওরা একে অপর কে পূর্ন করে নেয় তাহলে আর ও ঝামেলা হতে পারে।
এমনিতেই সবাই খুব কষ্ট পাবে তারউপর এসব।
ফারাবির মন খারাপ হয়ে গেল। ফারহানের পূর্ন অধিকারে ওহ সম্মতি জানালো না তাই।
কিন্তু এভাবে কি আদৌ ঠিক ?
যদি ও ওদের সম্পর্কের কোনো বাঁধা নেই।
কারন ওরা স্বামী স্ত্রী সেটা ধর্ম মতে ও আর এখন তো আইন মতে ওহ।
ফারাবি এখন আঠারো পূর্ন করে নিয়েছে এখন ওর অধিকার স্বাধীন।
ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারহান তা বুঝতে পারলো।
ফারাবির নাকে চুমু খেয়ে ফারহান বলল
_ একদম মন খারাপ করবি না জান। এমন না যে একটা শারীরিক সম্পর্কের জন্য কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে।
আল্লাহ্ আমাদের এক করে দিয়েছেন। কারো সাধ্য নেই আমাদের দুজন কে আলাদা করার।
আর এটা ও ভাববি না যে আমি কষ্ট পেয়েছি।
তুই শুধু আমার , তোর উপর আমারি অধিকার।
আর আমি জানি আমার মিষ্টি ফারাবি ও আমাকে চায়।

ফারাবি লাজুকতা নিয়ে ছলছল চোখে তাকালো।
ফারহান তার উষ্ণ উষ্ঠ দ্বয় ফারাবির চোখে ছোঁয়ালো।
ফারাবি কে ঠিক করতে ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ তুই কি চাচ্ছিস আমরা এখনি একে অপরকে

ফারাবি লম্বা হাসলো। ফারহান তার দু হাতে ফারাবি কে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে কানের নিচে হালকা কামড় দিলো।
ফারাবি উহহ করে বলল
_ আপনি একটা অসভ্য।

ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ফারাবির গালে চুমু এঁকে বলল
_শুধু তোর ই জন্য।

ফারাবি মৃদু হাসলো ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ কেক টা কি কাটবেন না আপনি ?
দুটো বছর তো এমনি এমনি চলে গেছে।

ফারাবি মাথা ঝেকে সম্মতি জানালো। ফারহান একটা বক্স থেকে ছোট্ট একটা রেড ভেলভেট এর কেক বের করলো।
উপরে দুটো চেরি বসানো , আর একটা হার্ট সেপ করা চকলেটের উপর বসে আছে দুটো সুন্দর পুতুল।
ফারাবি মোহনীয় হাসলো , ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ ডল দুটো কে ভালো করে লক্ষ্য কর।

ফারাবি নাক কুঁচকে ডল দুটোর দিকে তাকালো।
মূহুর্তেই ফারাবি গাল দুটো কমলা রঙের আকার ধারণ করলো।
ফারহান প্রানখোলা হেসে বলল
_ আমি ভেবেই রেখিলাম আজ আমরা লিপস টু লিপস চুমু খাবো।
সো পুতুল দুটো কে ঐ ভাবেই রেখেছি।

ফারাবি লজ্জায় নুইয়ে পরছে। যতবার পুতুলের দিকে চোখ যাচ্ছে ততবার সেই দৃশ্য মনে পরে যাচ্ছে।
চাঁদের আলোতে ফারাবির অবয়ব স্পষ্ট। এক চিলতে আলো এসে ফারাবি কে রাঙিয়ে যাচ্ছে।
লাল শাড়ি তে ফুটে উঠেছে ফারাবির সৌন্দর্য ।
মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ফারহান। এ যে শুধু তার স্বপ্নের প্রেয়সী।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন2
#ফাতেমা_তুজ
#part_22

মধ্যরাত্রী পেরিয়ে গেছে এবার ভোর হবার পালা। আকাশে এখনো চিক চিক করছে ঘন কালো অন্ধকার।
ফারহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারাবির দিকে। ফারাবি চোখ বুজে বাতাস গাঁয়ে মাখছে।
ফারহানের ঘড়ির টং টং আওয়াজে কেঁপে উঠে ফারাবি।
ফারহান আলতো হেসে বলল
_ এখন আমাদের যেতে হবে। না হলে দেরি হয়ে যাবে।

ফারাবি কিছু না বলে লম্বা করে শ্বাস নিলো। শিরশির অনভূতি তে ছেয়ে গেল পুরো শরীর। ভোরের আগ মুহুর্ত টা এতো সুন্দর হয় বুঝি ?
নাকি প্রিয় মানুষটা কাছে থাকলে সবি সুন্দর লাগে ?
ফারহান সরস হেসে বলল
_ ম্যাডাম এখন সব অনুভূতি ফেলে রিয়েল জগতে যেতে হবে।
যে জগতে কোলাহল আর অশান্তি তে ভরা।
এই সব কিছু ছাপিয়ে আমাদের সুন্দর এক পথ চলতে হবে।

ফারাবি ঠোঁট দুটো এক করে নিলো। কিছুক্ষন ভেবে বলল
_ সময় টা থমকে যাচ্ছে না কেন ?
ফারহান ঝরা হাসলো । কিছু মুহুর্ত পর ই ওদের বোর্ট পারে এসে পৌছালো।
ফারাবির হাত ধরে সাবধানে নামিয়ে নিলো ফারহান।
ফারাবি এক হাত দিয়ে অন্য বাহুতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
সারা রাত নদীতে থাকায় গা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
সাথে মৃদু বাতাসে শরীরের প্রতি টা নিউরন জেগে উঠেছে।
ফারহান বিষয় টা বুঝতে পারলো। কারন ফারাবির শাড়ি টা ওহ ইচ্ছে করেই পাতলা কিনেছে।
ফারাবি কে কোর্ট টা খুলে পরিয়ে দিয়ে বলল
_ কোনো কথা নাহ। আমার শরীর গরম আছে কিন্তু তুই জমে গেছিস।

ফারাবি মুখ ছোট করে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষ টা নিশ্চয়ই কোনো মনোবিজ্ঞানী।

ফারহান চমৎকার হাসলো। বোর্ট এ উঠে গিয়ে পাখির খাঁচা টা নিয়ে আসলো।
ফারাবি নিভু নিভু আলোতে চার পাশ দেখতে মত্ত।
কি সুন্দর দৃশ্য , লেকের ধারের দুটো গাছ কেমন লেগে দাড়িয়ে আছে।
ঠিক যেমন কাপল রা থাকে , ফারাবি মোহনীয় হাসলো।
ফারহান ভাবুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল
_ কি দেখছিস ?
_ গাছ গুলো কি সুন্দর।
_ গাছে চড়বি ?
ফারাবি ভ্রু কুঁচকালো। ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ আমি কোলে করে উঠিয়ে দিবো।

ফারাবির চোখ চকচক করে উঠলো। ফারহান মুখ টা মলিন করে বলল
_ আজ সময় নেই , অন্য একদিন গাছে চড়বো প্রমিস।

ফারাবি খিল খিল করে হাসলো। এই মানুষ টা কে যমের মতো ভয় পায় যে তা ওহ ভুলেই গেছে।
যখন সবার সাথে মিলিয়ে যাবে তখন আবার ফারহান ওর কাছে যম হয়ে যাবে।
খাঁচা খুলে পাখি দুটো কে তুলে নিলো ফারহান।
পাখি দুটো কিচির মিচির করতে লাগলো।
ফারহান প্রশস্ত হেসে বলল
_ আর একটু সময় ওয়েট কর এখনি মুক্ত করে দিবো।

ফারাবি একটা পাখি নিয়ে বলল
_ কি সুন্দর দেখতে, ইসসস আমরা যদি এমন হতাম।

ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ তুই এই পাখির থেকে ও অনেক অনেক সুন্দর।

ফারহানের কথাতে লজ্জা হাসলো ওহহ।
ফারহান আর ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিয়ে পাখি দুটো কে এক সাথে মুক্ত করে দিলো।
আর মনে মনে তাদের থেকে দোয়া চেয়ে নিলো যেন আল্লাহ তায়লা ওদের কে ও এভাবেই সকল বিপদ থেকে মুক্ত করে দেন।
পাখি দুটো কিচির মিচির করতে করতে ওদের চার পাশে ঘুরপাক খেতে লাগলো।
তা দেখে ফারাবি লাফিয়ে উঠলো।
ফারহান সরস হেসে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।

*

গাড়ি এসে থামলো ফারাবি দের বাসার পেছনে। ফারাবি সিটে হেলান দিয়ে আছে। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আর একটু পর ই আযান দিয়ে দিবে তাড়াতাড়ি চল।

ফারাবি একপলক তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালো । ওর ইচ্ছে করছে না যেতে , ফারহানের সাথে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
ইসস ফারহানের গাঁয়ের গন্ধ টা এখনো নাকে এসে লাগছে।
মানুষ টা কে সহ্য হতো না আর আজ ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।
এই বিচিত্র রঙা অনুভূতি ইচ্ছে গুলোই বোধহয় ভালোবাসা।
এতে যেমন কষ্ট আছে ঠিক তেমনি সুখ আছে। দিন শেষে যারা এই লড়াইয়ে হেরে যায় তাদের কাছে ভালোবাসা কে বিষাক্ত কোন বিষ কিংবা ধারালো অস্ত্র মনে হয়।
কারন তারা এ যুদ্ধে জয়ী হতে পারে নি।
ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিলো ওহ হারবে না ওহ জিতবে ওকে জিততেই হবে।
যে ভালোবাসার একটু স্বাদেই পাগল হয়ে গেছে ওহ সে ভালোবাসার পূর্ন স্বাদ যে নিতেই হবে।

ফারহান বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে। সেই কখন গাড়ি থেকে নেমে ফারাবির দিকে চেয়ে আছে।
অথচ ফারাবি গভীর ভাবনাতে মত্ত।
ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ অনেক ভেবেছেন এবার প্লিজ নেমে আসুন।

ভাবনায় ফোরন কাঁটায় ফারাবি বিরক্ত হলো।
পরক্ষণেই ফারহান কে দেখে চুপচাপ নেমে গেল।
ফারহান আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কি না।
একটু পর ই ফজরের আযান পরবে তাই খানিকটা সাবধনতা নিয়ে চলছে ওহ।
কাউকে না দেখতে পেয়ে ফারহান ফারাবি কে ইশারা করলো।
ফারাবি মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে নিয়েছে।
আর ফারহান মুখে মাস্ক পরে আছে।
ফারাবি কে নিয়ে ধরে ধরে পাঁচিল টপকালো ফারহান।
ফারাবি দের পাঁচিল বেশি উঁচু নয়। তবে ফারাবি শাড়ি পরে থাকায় একা একা সম্ভব হচ্ছে না।
ফারাবি আর ফারহান চোখ কান খোলা রেখে বাগানের ভেতর দিয়ে যেতে লাগলো।
বাগানের মালি কাকা ভোর বেলাতে উঠে পরেন।
কাউকে দেখলেই গন ধোলানি খাওয়াবেন সিউর ।
আর যদি ওরা ধরা পরে যায় তাহলে পুরো পাড়া রটে যাবে।
ঘরোয়া ব্যাপার টা সামাজিক হয়ে যাবে।
তারপর বিজন্যাস পার্টনার , প্রেস এর লোকজন পুরো দেশে রটে যাবে।
আর হেডলাইন হবে ইয়ং বিজনেস ম্যান এফ এফ ইন্ডাস্ট্রির ওনার ফারহান চৌধুরী লুকিয়ে বিয়ে করে ধরা পরেছেন।
আর প্রেস মানেই এক লাইন কে দশ লাইন বানানো। বিয়ে টাকে পরকীয়া অব্দি ঠেলে নিবে সব শেষে পুরো গন্ডগোল হয়ে যাবে।

ঝোপ থেকে ঝুনঝুন শব্দ হতেই ফারহান ফারাবির হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।
ফারাবি বার বার ফাঁকা ঢোক গিলে যাচ্ছে । খুব ভয় হচ্ছে ওর , ধরা পরে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ফারহান এক ঝটকা তে ফারাবি কে নিয়ে গাছের আড়ালে চলে গেল।
কয়েক সেকেন্ড বাদেই ঝোপ থেকে একটা বিড়াল বের হলো।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান বোকা হেসে বলল।
_ তোকে নিয়ে রিক্স নয় কোনো ।

ফারাবি বলদের মতো চেয়ে রইলো। ফারহান শক্ত করে হাত ধরে অতি সাবধানে ওকে নিয়ে গেল।
বাড়ির মেইন ডোর ছাড়া ফারাবি কে নিয়ে যাওয়া যাবে না ।
তাই ফারহান বাসার লোড সেডিং করে দিলো।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো। ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। আর আমি আগে থেকেই সব কালেক্ট করে নিয়েছি।

ফারাবি ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করলো। ফারহান ধীর পায়ে আগাতে লাগলো। ভোরের সামান্য আলো থাকায় যেতে কোনো অসুবিধা হলো না।
সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। অবশ্য ঘুমানোর ও কথা, কাল ফারহান মাশরুমের সুপে ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছিলো।
আর তাই সবাই ঘুমোচ্ছে, কেউ সন্দেহ ও করতে পারে নি।
কারন ফারহান আর ফারাবির মাশুরুমে এলার্জি।
ফারাবির রুমে এসে শ্বাস ফেলল ফারহান।
এতোক্ষন পর যেন বুক থেকে পাথর টা নেমে গেল।
বেডে সটান হয়ে শুইয়ে বলল
_ তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি দে ফারাবি।
আমাকে এখনি যেতে হবে।
ফারাবি দ্রুত টেবিল থেকে পানি এনে দিলো।
ফারহান ঢকঢক করে খেয়ে বলল
_ তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিবি। আর এখন গোসল করবি না , নাহলে গরম ঠান্ডা লেগে যাবে।

ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ কিন্তু

ফারহান সরু চোখ করে রসিকতার ছলে বলল
_ আমি এমন কিছু করি নি যার জন্য সাওয়ার নিতে হবে।

ফারাবি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। ওহ কি বলতে চাইলো, আর ফারহান কি বলে গেল।
ফারহান দ্রুত গতিতে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো।
কেউ উঠে নি এখনো তাই নিশ্চিতে পাঁচিল টপকে বের হয়ে গেল।
ওদের বাসার সামনে গাড়ি এনে হর্ন বাজাতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো।
কাল দারোয়ান কে বলেছিলো রাতে একটা কাজে যাচ্ছে তাই দারোয়ান এক ডাকেই গেট খুলে দিয়েছে।
রুমে আসতে যাবে, তখন ফারহান দেখলো রিমির ঘর থেকে হাসির আওয়াজ।
ফারহান ভ্রু কুঁচকালো। রিমি এখন জেগে আছে কেন ?
কাল তো ওর খাবারে ও ঔষধ ছিল, বোধহয় সুপ টা খায় নি।
ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলল তারপর আবার হাসির শব্দ পেল।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে ভেতরে যেতে নিয়ে ও গেল না।
আপাতত সব ঝামেলা গুলো সারতে হবে তারপর রিমির খোঁজ লাগাতে হবে।
ফারহান দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
মিররের সামনে এসে কোর্ট টা খুলে ফেলল।
ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। শার্ট টা খুলতে যাবে তখনি চোখে পরলো গলাতে দুটো চুল।
ফারহান লম্বা হাসলো, ভাগ্যিস অন্য কেউ দেখেনি ওকে।
এই চুল অন্য কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি রটে যেত।
সাবধানে চুল দুটো ছাড়িয়ে একটা রুপার কারুকাজ করা বক্সে রাখলো।
এই চুল গুলো জমাবে ওহহ , বৃদ্ধ বয়স অব্দি নিজের গায়ে ফারাবির যত চুল লেগে যাবে সব গুলো গুছিয়ে রাখবে ওহ ভালোবাসার চিহ্ন স্বরূপ।
কিছু ছোট ছোট বিষয়ে সুখ খুঁজে নেওয়া টাই তো ভালোবাসার মাহাত্ম্য।

*

সকাল দশটার পর সকলের ঘুম ভেঙেছে। ফারাবি বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। সকাল ছয় টায় ঘুমিয়ে এতো তাড়াতাড়ি কি ঘুম ভাঙবে?
ফারাবির মা আর বড় মা হাই তুলতে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।
এতো বেলায় কখনোই ঘুম ভাঙে না ওনাদের।
বরং ছয় টার জায়গাতে সাত টায় ভাঙে কিন্তু একেবারে দশটায় বিষয় টা হজম হচ্ছে না কারোর ই।
তার থেকে বড় কথা সবাই একসাথে এতো লেট করলো কি করে ?

রিফাত হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।
মেজাজ প্রচন্ড রকমের গরম। কাল সারা রাত বেঘোরে ঘুমিয়েছে আর তাই সকাল সকাল মনিকা অজস্র ফোন কল দিয়েছে।
ঘুমু ঘুমু চোখে কি বলেছে কে জানে।
মেয়েটা কোন বায়না করেছে আর ওহ সেটায় রাজি হয়ে গেছে সেটাই বুঝতে পারছে না।

সকাল সকাল খবরের কাজগের হেড লাইন পড়া টা রিফাতের অভ্যাস।
হেড লাইন খুলতেই রিফাত অবাক হলো।
দুটো খবরের কাগজে একি হেডলাইন

” কোনো এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সাথে তার স্ত্রী , মধ্যরাত্রী তে কঙ্কনা ঝিলের মাঝখানে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন ”

রিফাত আগ্রহ নিয়ে বিবরন টা দেখতে লাগলো।
বিবরন টার পাশে ছোট্ট একটা কাপল ছবি লাগানো।
তবে চেহারা দেখা যাচ্ছে না ছবি টা খুব দূর থেকে তোলা। তবে লাল রঙের পোশাক পরে আছে দুজনি।
রিফাত বিবরন টা পড়া শুরু করলো।

” গোপন সূত্রে জানা গেছে ,
এক পাগল প্রেমিক পুরুষ মাঝ রাতে ঝিলের মাঝ খানে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছে।
তবে আমরা তাদের পরিচয় জানতে পারি নি। মাঝ রাতে বোর্ট এ করে সকলের অগচরে এমন বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন সত্যি ই কি ভাবা যায় ?
কতো টা ভালোবাসা থাকলে এমন ভাবনা আসতে পারে তা আমাদের জানা নেই।
এই রকম যদি প্রতি টা পুরুষ তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা নিবেদন করতো তাহলে আমাদের সমাজে নতুন আলোরন সৃষ্টি হতো।
আমরা আমাদের নিউজ পেপার আর চ্যানেল থেকে তাদের কে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
তাদের বিবাহ জীবন সুখময় হোক ”

বিবরন টা পরেই রিফাতের মনে প্রশান্তি জেগে উঠলো।
ওহহ কখনো ভাবেই নি , মনিকা কে সারপ্রাইজ করবে।
লম্বা করে দম ফেলল এবার মনিকা কে সারপ্রাইজ করবে ওহ।

ফারাবির মা রিফাত কে চা দিয়ে বলল
_ কি রে রিক কি কাল আসছিলো আর ?

_ না ছোট মা। কাল তো আর আসে নি । অনেক বার ফোন করলাম সুইচ অফ বলল।

_ কে জানে ছেলেটা গেল কোথায়।
ভাই আর ভাবি কে ও কিছু বলে যায় নি।

_ এসে পরবে , বাচ্চা তো নয় আর।
তুমি এতো চিন্তা করো না।

ফারাবির মা তপ্ত শ্বাস ফেললেন।
ওনার মাথায় একটা ভাবনাই কাজ করছে।
ছেলে টা এভাবে কোথায় আর কেন চলে গেল ?
কাল কতো খুশি ছিলো। বলেছিলো সবার সামনে নাকি ফারাবি কে রিং পরাবে।
আর তারপর ই বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে। চমকে দিবে সবাই কে। হঠাৎ করেই যে কোথায় চলে গেল কে জানে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here