গল্প-ভাইরাল,২য় পর্ব
লেখায়-#এস_এ_তানিশা_রহমান
রাফি ডায়েরি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো!
—–আমি তিশা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতাম, কলিগদের সাথে আমার বেশ ভাব। জুনিয়র রা আমায় খুব সম্মান করতো, আর আমিও ওদেরকে খুব ভালোবাসতাম আগলে রাখতাম কাজ না বুঝলে বুঝিয়ে দিতাম। সিনিয়ররা আমার কাজে খুশি হতো এবং স্নেহ করতো। অফিসের বসও আমার কাজে খুব খুশি হয় বরাবর। আমি কখনো কাজে ফাঁকি দেইনি এখন অব্দি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে অফিসের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছি। আমার কিছু স্বপ্ন ছিলো স্বপ্ন গুলো আকাশছোঁয়া না হলেও একটু কঠিন। আমি কখনো কাউকে জানিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতাম না, সফল হওয়ার পরই সবাইকে সারপ্রাইজ করতে ভালোবাসতাম।
আমি যদি কোনো কাজে ভেঙ্গে পড়তাম তাহলে একজনের কাছে বলতাম, সে হলো আমার প্রাণের বান্ধবী লিজা। ও আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা জোগাতো, ভরসা দিতো আমার গার্ডিয়ান হয়ে। কিন্তু সব শেয়ার করলেও এবারের ঘটনাটি আমি ওকে বলতে পারলাম না। ও নিজেও কিছুটা মানসিক চাপে আছে তাই আমি আমার বিষয়টি আর বলিনি, আমার কথাটা জানলে ও আর-ও ভেঙ্গে পড়তো। লিজা আমার বান্ধবী কম বোন বেশি ছিলো, ও আমার সবচেয়ে কাছের এবং একমাত্র বেষ্টু ছিলো। তাই আমি ওকে আর আলাদা টেনশন দিতে চাইনি, নিজে একা একা সমাধান করার চেষ্টা করেছি কিন্তু এতোটাই ঘোলাটে হয় গিয়েছে আমি পারিনি। আমার স্বপ্ন গুলো আমার সাথেই মাটি চাপা পড়ে যাবে।
—-আসল ঘটনায় আসি,
জানি তোরা আমার এভাবে মৃত্যু হওয়াটা মেনে নিতে পারবি না, আমার মরা দেহ যখন তোদের সামনে পড়বে তখন তোরা আমার মৃত্যুর রহস্য খুঁজতে মরিয়া হয়ে ঘুরবি। আমার লেখা যখন তোদের হাতে পড়বে তখন তোরা আর তোদের এই বোনটাকে পাবি না। চিরদিনের মতো উড়াল দিয়েছে এই তোদের বোনটা। ভাইয়ারে আমি চাইনি এভাবে চলে যেতে, আমি বাঁচতে চেয়েছি তোদের সাথে হাসিখুশিতে থাকতে চেয়েছিলাম। আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে পথ শুরু করেছিলাম ভাইয়া। আমি এই সুন্দর পৃথিবী আর আমার পরিবারকে ছেড়ে কখনো এভাবে মরে যাবো ভাবিনি। আমাকে এভাবে নিজেকে মারতে হবে আমি কল্পনাও করিনি রে ভাইয়া।
আমাকে ওরা বাঁচতে দেয়নি, আমাকে ওরা আশার আলো দেখার আগে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলো। আমাকে ওঁরা বাধ্য করেছে মরে যেতে।
আমি আদনান কে ভালোবাসি, আদনানও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমরা দুজন দুজনকে বিয়ে করার প্ল্যানও করেতেছিলাম। আদনানের বাবা একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বড়লোকের একমাত্র ছেলে আদনান। আমি প্রথমে আদনানের প্রতি দূর্বল না হলেও ধীরে ধীরে ওর মায়ায় মুগ্ধ হয়ে যায়। আমি বড়লোকদের ঘৃণা করি এটাতো তোরা সবাই জানিস, বড়লোকরা বেশিরভাগ ধোঁকাবাজ হয় সেজন্য আমি আদনানকে বিশ্বাস করতে অনেক সময় নিই। আদনানের কথা বার্তা চালচলন আমার প্রতি এত এত কেয়ারিং দেখে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি। আদনান আমাকে প্রথম দেখে কলেজের একটা অনুষ্ঠানে, যদিও আমি তাকে তখন দেখিনি। আদনান আমার জন্য আমার অফিসে জব নেয়, আমাকে ওর প্রতি আসক্ত করার জন্য আমার কাছাকাছি চোখে চোখ রেখে কথা বলা সব করতো ও। আদনানও জানতো আমি বড়লোক ছেলেকে পছন্দ করি না তাই ও নিজে একটা জব করছে।
আমরা দুজন দুজনকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, আদনান আমার জন্য কত কি যে করছে সেসব আর বলা হয়ে উঠবে না তোদেরকে। আচ্ছা আসল কথা বলি এগুলো বাদ দিই। একদিন আমরা অফিস ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হই। ওখানে হঠাৎ মাঝরাস্তায় আমি মাথা ঘুরে পরে যায়, আদনান আমাকে কোনোরকম তুলে ওর বাসায় নিয়ে যায়! ওখানে আমাকে লেবুর শরবত ঠান্ডা পানি, কিছু ঔষধ খাইয়ে স্বাভাবিক করে তোলে। আমি চলে আসতে চাইলে আদনান বলে তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ ফিল করছো না একটু রেস্ট নিয়ে তারপর যাও। আমি বললাম এখন আমি যাই অনেক দেরি হয়ে যাবে পরে, বাসায় দুঃশ্চিন্তা করবে মা বাবা সবাই। আদনান বললো তুমি চিন্তা করো না আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবো। আমিও আর কিছু বলিনি চুপচাপ সোফায় শুয়ে থাকলাম।
প্রায় আধাঘন্টা পর কলিংবেলের শব্দ পেলাম আদনান গিয়ে দরজা খুললো। দরজা খোলার সাথে সাথে কয়েকজন লোক ভিতরে ঢুকে গেলো। ভেতরে এসেই একটা লোক বলতে লাগলো বাকিদেরকে যে দেখেন আপনারা, আমি আপনাদেরকে বলেছি না যে শফিক চৌধুরীর ছেলে ওর মা বাবা বাসায় না থাকলে রাত নেই দিন নেই মেয়ে নিয়ে এসে এগুলো করে। সেদিন আদনানের মা বাবা বাসায় ছিলেন না, ওনারা কাছেই এক আত্নীয়ের বাসায় গিয়েছেন। একজন অসুস্থ রোগীকে দেখতে। এ কথাটা আদনান আমাকে বাসায় এসেই জানিয়েছিলো। লোকটা আবারও বলতে শুরু করলো-
আদনান না-কি আমাকে নিয়ে ফূর্তি করতেছিলো এতক্ষণ, আমি আর আদনান না-কি নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছিলাম একা বাসায়।
লোকটার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বাকি রাও সেইম কথা বললো, আদনান লোকটার কলার ধরে ধমক দিয়ে বললো করিম ভাই আপনি আরেকবার যদি নোংরা কথা বলছেন তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। লোকটা ক্ষেপে গিয়ে যা নয় তাই বলে যাচ্ছিলো, আমাদের সম্পর্ক নিয়ে যে নোংরা কথাগুলো বলছিলো সেগুলো তোদেরকে আমি বলতে পারছি না। কথাগুলো শুনে আমার মাটি ভাগ করে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করলো। আমি কান্না জড়িত কণ্ঠে সবার কাছে অনুনয় করে বলেছিলাম দয়া করে আপনারা এসব বলবেন না। আমরা এমন ধরনের মানুষ নয়, আমাদেরকে ভুল বুঝবেন না। আমি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আদনান আমাকে ওদের বাসায় আনে। আমি এখুনি চলে যেতে বের হচ্ছিলাম তাঁর মাঝে আপনারা এসেছেন।
সেদিন অনেক কষ্টে ওদের থেকে আমি রেহাই পাই, রাতে যখন আদনান কল দিলো আমি অভিমানে ওর ফোন কেটে দিচ্ছিলাম কল ধরিনি ওর। পরে ওর মেসেজ পেয়ে আমি কল ধরি, মেসেজে লেখা ছিলো তুমি কলটা ধরো অনেক জরুরি কিছু কথা ছিলো প্লিজ তিশা কল টা ধরো। আমি কলটা ধরলাম আদনান জানালো যে লোকটা আজ এসব বলছিলো সে তাঁর বাবার রাই বাল। তাঁর বাবার এত এত উন্নতি দেখতে না পেরে অনেকবার অনেকরকম ক্ষতি করার চেষ্টা ও করেছিলো করিম চৌধুরী। কোনো বার সে তাঁর চেষ্টায় সফল হতে পারেনি, প্রত্যেকবার সে অসফল হয়েছিলো। কিছুদিন আগেও না-কি করিম চৌধুরী আদনানের বাবাকে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারতে চেয়েছিলো। করিম চৌধুরী বিজনেস এর জায়গায় একরকম আর লোকসমাজে ভিন্ন। করিম চৌধুরী আদনানদের উপরের তলাতে থাকে, হিংসার কারণে আদনানদের নানানরকম ক্ষতি করতে চায়।
আদনানের কথা শুনে আমি আসল ঘটনাটি বুঝতে পারি, আমাদের রাগ অভিমান সেদিন রাতেই শেষ হয়ে যায়। আমরা আবারও এক হয়ে যায়। ঘটনা এখানে থামলেই পারতো কিন্তু না এমনটা হয়নি, আমি দুদিন পর যখন অফিস যাচ্ছিলাম কয়েকজন আমাকে দেখে উপহাসের চোখে হেসেছিলো, অফিস গিয়েও দেখি একই অবস্থা। কলিগরা আমাকে এসে নানানভাবে নোংরা কথার ইঙ্গিত দিচ্ছিলো, একজন এসে তো সরাসরি বলে দিলো বড়লোকের ছেলের সাথে ভালোই তো মজা মাস্তি চলছে। আমি কি জন্য এসব বলছে বুঝতে না পেরে বিষয়টা জিজ্ঞেস করতেই একজন বললো ভিতরে ভিতরে সব করো কিন্তু ন্যাকা সাজছো কেনো এখন। অতঃপর আমি জানতে পারলাম আদনানের বাসার ঘটনা টা কে জানি ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিছে।
যে কলিগরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ভাবতো, সে কলিগরা আমাকে এভাবে চরিত্রহীন বানিয়ে দিলো। আমাকে এভাবে অপমান করে কথা বলললো শুধু মাত্র একটা ভিডিওর জন্য।
আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি, আমি সেদিন কোনো খারাপ কাজ করতে যায়নি। আমি বাধ্য হয়ে গিয়েছি নিজের অসুস্থতায়। বিষয়টা এখানেও থামেনি সেদিন অফিসে সাংবাদিক এর লোক এসে বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করে দিলো। সাংবাদিক রা মার্জিত ভাষায় প্রশ্নগুলো করেনি, একেকটা শব্দ যেনো আমার সম্মান কে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছিলো। আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আমি কি সত্যি ই টাকার লোভে শফিক চৌধুরীর ছেলের সাথে রুম ডেট করতে গিয়েছিলাম কি-না। ভিডিওতে যা দেখতে পেয়েছি সেগুলো মিথ্যা হতে পারে না বলে আমাকে জাজ় করছিলো তাঁরা।
এতটা কষ্ট কখনো পাইনি আমি যতটা কষ্ট সাংবাদিকদের কথায় লোগেছিলো। সাংবাদিক রা আমাদেরকে প্রশ্ন করে উত্তর পেয়েও ক্ষান্ত হয়নি, আমরা বিস্তারিত খুলে বললেও তাঁরা বিষয়টিকে পুরোটা অন্যভাবে ভাইরাল করে দিলো। করিম সাহেবের করা ষড়যন্ত্রের ভিডিওটার জন্য সাংবাদিক রা আমার অফিস আমার প্রফেশন আমার বাবার নাম ধরে সমাজের চোখে আমাকে বাজে মেয়ে বানিয়ে দিলো। আমার ছবি আর আদনানসহ ভিডিও চ্যানেলে দেখাচ্ছিলো, আদনানকে জড়িয়ে আমাকে পতিতার ন্যায় বানিয়ে দিলো এই সাংবাদিক রাই। সাংবাদিক এম আর জিল্লু আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলো রে ভাইয়া।
আমি এগুলো আর সহ্য করতে পারছিলাম না, রোজ রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো সাংবাদিক দের ঐ দৃষ্টিকটু কথাগুলো মনে করে। আমি বেঁচে থেকেও যেনো মরে গিয়েছিলাম। যাঁরা আমাকে সম্মান করতো তাঁরা ও আমাকে দেখে উপহাস করছিলো, আমার জুনিয়র রাও আমাকে উপহাসের ছলে জ্ঞান দিচ্ছিলো। আমি আর আদনান যে কাজটা করি নাই সে অপবাদে আমাদেরকে কলঙ্কিত করা হলো। আমি পাপ না করেও পাপী নাম পেয়েছি, আমাকে পাপিষ্ঠ বলা হচ্ছিলো। বড়লোকের ছেলে পেয়ে না-কি আমি নিজের সম্মান বিলিয়ে দিয়েছি। ভাইয়া আমি এগুলো একদম সহ্য করতে পারছিলাম না।
তোরা তো কেউ টিভি দেখিস না তাই—-
চলবে