অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #১৮,১৯

0
935

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#১৮,১৯
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৮
অন্ধকার ঘর। কাদের যেন চাপা আর্তনাদ ভেসে আসছে এই চারদেয়ালে বন্দি ঘরের ভেতর থেকে। ঘরের ভেতর সামান্য আলো বা বাতাস ঢোকার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এই অন্ধকার এবং দমবন্ধকর পরিবেশে যে দুটো প্রাণ এখনো নিস্তেজ হয়ে বেঁচে আছে সেটাই বোধহয় অনেক।
হঠাৎ দুজনের চোখে আলো পড়ায় চোখ বন্ধ করে ঝিমানো দুজন ব্যক্তির চোখসহ কপাল কুঁচকে ফেলে। আলোর থেকে নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করে। কিন্তু বেঁধে রাখা চেয়ারের থেকে এক চুলও নড়তে পারে না। মুখে বাঁধা লাল কাপড় তাদের কিছু বলতে দিচ্ছে না। অন্ধকারে থাকতে থাকতে তাদের জীবনটা পুরো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আলোকে ভয় পায় তারা। তবুও বসে আছে কারো আশায়। দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন শয়তান ওয়ারওল্ফ রাজ্যের কিং যে অরুণের বাবা। তার মুখে শয়তান মার্কা হাসি দেখে পিটপিট করে তাকায় বন্দি থাকা মহিলা এবং লোকটি। কিং অলক এগিয়ে আসেন তাদের দিকে। দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে তাদের মাঝে লোকটির মুখে গুঁজে থাকা কাপড় নিচে টেনে দেন।

বন্দি থাকা লোকটি হিসহিসিয়ে বলে ওঠে…..
–“কেন এসেছো এই ঘরে? এতগুলো বছর বন্দি রাখলে। এখন বন্দি আছি চুপচাপ তাতেও শান্তি হচ্ছে না?”
–“বন্দি রাখতে চাইনি তো তোমাদের। অযথা তোমরাই তোমাদের আদরের মেয়েদের জন্য এতোটা কষ্ট করে নিজেরা বন্দি হয়ে থেকেছো। তোমরা যদি তোমাদের মেয়েকে আমার হাতে প্রথমেই তুলে দিতে তোমাদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিতাম। থাকতে হত না আমার এই অন্ধকার রাজ্যে।”
দাঁতে দাঁত পিষে কথাটা বলে ওঠেন কিং অলক। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে লোকটি আবারও চেঁচিয়ে বলে ওঠে…..
–“তোমার মতো সবাই নির্দয় নয়। যাকে আমরা জন্ম দিয়েছি তাকে যদি নিরাপত্তা না দিতে পারি কীসের মা-বাবা আমরা? আজ ২২ বছর হতে চলল। আজও আমাদের মেয়েকে পাওনি আর আমরাও বেঁচে আছি। আমাদের মেয়েকে তোমরা পাবেও না কখনো।”
কিং অলক উম্মাদের মতো হাসেন। সামনে বসে থাকা লোকটির কথাগুলো বছরের সেরা কৌতুক লেগেছে তার কাছে।

হাসি দেখে লোকটি আর মহিলাটি দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করতে থাকে। মহিলাটি ছটফট করতে থাকে কথা বলার জন্য। মুখে কাপড় থাকায় কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারছে না সে।
–“শয়তানের রাজা আমি। আমার ক্ষেত্রে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। হ্যাঁ তোমাদের মেয়েকে খুঁজে বের করতে আমার সময় লেগেছে ঠিকই। কিন্তু অবশেষে খোঁজ পেয়েই গেছি। খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের মেয়ের লাশ পড়ে যাবে।”
বন্দি থাকা লোকটি কিছু বলার আগেই তার মুখের বাঁধন শক্ত করে বেঁধে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় কিং অলক। বন্ধ করে দেয় দরজা। আবারও অন্ধকারে ঢেকে যায় দুটো প্রাণের চিহ্ন। নিজের মেয়ের কথা ভেবে চোখের কোণা দিয়ে পানি পড়ে যায় মহিলাটির। কারো জানা নেই সামনে কি হতে চলেছে। অন্য সন্তানের মতো ১০ মাস ১০ দিন পেটে না ধরলেও ৫ মাস ৫ দিন তো পেটে ধরেছে নিজের মেয়েকে। সেই মেয়ের বিপদের কথা শুনে চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে সেই মহিলা। কিন্তু আজ সে নিরুপায়।

নদীর পাড়ে এসে থামে অনুভবের সাদা গাড়িটা। সামনের লাইট টি ওন করতেই সামনে গাছপালায় ঘেরা আচ্ছাদনের রাস্তা দেখা যায়। সেদিকে আর এগোবে না অনুভব। রাস্তার ডান পাশে অনেক নিচুতে বেয়ে গেছে নদী। ঘাড় ঘুড়িয়ে নিজের বাম দিকে তাকিয়ে নরম সুরে যেই বলে ওঠে….
–“মাধু….”
কথাটা সম্পূর্ণ না করে মুখের ভেতরে কথা জমা রাখে। কারণ মাধুর্য ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। চোখ বুজে জানালার সাথে মাথা লাগিয়ে আছে সে। আলতো করে মাধুর্যের হাত ধরে একটু টান দিতেই মাধুর্য ঢোল দিয়ে অনুভবের কাঁধে এসে পড়ে। বাম হাত দিয়ে অনুভব তার মাথা কাঁধের সঙ্গে চেপে ধরে। অন্য হাত দিয়ে জানালা খোলে আস্তে আস্তে। হিমেল বাতাসে শিহরণ খেলে যায় অনুভব ও ঘুমন্ত মাধুর্যের শরীরের কোণে কোণে। নদীর কাছাকাছি থাকা বাতাসগুলো একটু অন্যরকম প্রাণবন্তই হয়। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় মাধুর্যের চুলগুলো এলোমেলো করে উড়ে গিয়ে অনুভবের চোখেমুখে আঁচড়ে পড়ে। এক ফোঁটাও বিরক্ত হয় না সে। বরণ আবেশে কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ রাখে।

যখন সে তার চোখ খোলে তখন মাধুর্য নড়েচড়ে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে উঠে বসে। চোখ কচলাতে কচলাতে বলে….
–“মা-বাবা!”
অনুভব খানিকটা বিচলিত হয়ে তাকায়। মাধুর্য যখন অনুভবকে দেখে মূহুর্তেই শান্ত হয়ে যায় সে। মলিন হয়ে ওঠে তার মুখ। অনুভব বিমূঢ় হয়ে প্রশ্ন করে….
–“এনি প্রবলেম?”
–“না। হঠাৎ মা-বাবার কথা মনে পড়ল। মনে হলো, তারা ভালো নেই।”
ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দেয় মাধুর্য। অনুভব আর সেই বিষয়ে এগোয় না। কারণ সে জানে, মাধুর্যের মা-বাবা নেই। এখন তাকে মা-বাবার কথা বলে মনটা আরো বিষন্ন করে তুলতে চায় না। গাড়ির দরজা খুলে মাধুর্যের কাছে এসে ওর কাছের দরজারটাও খুলে দিয়ে অনুভব ওর চোখজোড়ার ওপর হাত রাখে। হকচকিয়ে উঠে অনুভবের হাতের ওপর হাত রাখে মাধুর্য।
–“কি করছেন?”
–“হুঁশশ…। বিশ্বাস করে যখন এতোখানি এসেছো। তখন আরেকটু বিশ্বাস করে গন্তব্য পর্যন্ত চলো।”

মাধুর্য আর বারণ করতে পারে না। সম্মতি দেয় হালকা মাথা দুলিয়ে। অনুভবকে অনুসরণ করে আস্তেধীরে পায়ের ধাপ ফেলে হাঁটতে থাকে সে। ও বুঝতে পারে সে নিচের দিকে কোথাও যাচ্ছে। হালকা ভয় তার মনে ভর করলে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে অনুভবের ব্লেজার। বিষয়টাতে নিঃশব্দে হাসে অনুভব। একসময় এসে ওদের দুজনেরই চলা থামে। মাধুর্যের চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলে চোখ খুলে তাকায় সে। নিজেকে এক অন্য দুনিয়ায় আবিষ্কার করে। অজান্তেই হা হয়ে যায় তার মুখ। তার অস্বাভাবিক বড় বড় চোখজোড়া আরো বড় বড় করে ফেলে। চোখেমুখে ফুটে ওঠে এক আনন্দের ঝিলিক। সামনেই নদী। আর মাধুর্য ও অনুভব দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ে। যেখানে গাছপালা আর ঘাসে ভর্তি। চারিপাশে জুড়ে বসেছে জোনাকির মেলা। টিমটিম করে জ্বলছে জোনাকিরা। তারা এই প্রকৃতির রূপকে আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। মাধুর্য হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে জোনাকি ধরতে চায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়। তাতে আরো হাসি ফুটে ওঠে মুখে।
বুকে হাত গুটিয়ে রেখে অনুভব দেখতে ব্যস্ত এই প্রকৃতির মাঝে মাধুর্যের মাধুরি মিশে প্রকৃতি আরো সুন্দরতম হয়ে উঠেছে।

–“কত সুন্দর চারিপাশটা। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এর আগে আমি কখনো দেখিনি।”
মুগ্ধতার সাথে বলে ওঠে মাধুর্য। অনুভব মুচকি হেসে বলে….
–“ভালো লেগেছে?”
–“খুব।”
ছোট্ট করে ব্যস্ততার সঙ্গে বলেই মাধুর্য জোনাকি ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটাই যেন তার একমাত্র কাজ। এদিক ওদিক হন্তদন্ত হয়ে হাত নাড়াতে থাকে সে। না পেরে মিনিট দুয়েক পরই ক্লান্ত হয়ে কোমড় ধরে ঠোঁট কামড়ে জোনাকি পোকার দিকে তাকায়। জোনাকি পোকারাও যেন আজ মাধুর্যকে দেখে হাসছে! তখনই মাধুর্য খেয়াল করে ওর কাঁধে একটা জোনাকি। একটু একটু করে তাকায় সে। নিজের চকচকে চিকন দাঁত বের করে হেসে আঙ্গুল দিয়ে আলতো ছোঁয়া দিতেই উড়ে যায় সেটা। খিলখিল করে হেসে ওঠে মাধুর্য। প্রকৃতির সঙ্গে মজে উঠেছে মেয়েটা। হাসি শেষে অনুভবের দিকে তাকাতেই অনুভবের স্নিগ্ধমাখা চাহনি দেখে মিইয়ে পড়ে সে। মাধুর্যের পেছনে এসে দাঁড়ায় অনুভব। পলকহীন দৃষ্টিতে দেখতে থাকে মাধুর্য লোকটার কর্মকান্ড।

মাধুর্যের দুটো হাতের নিচে হাত রেখে ওর হাত দুটো উঠিয়ে মুঠো করায় অনুভব। দুজনের মুঠো করা হাতের মাঝে এসে উড়তে থাকে জোনাকি পোকা। যেন জোনাকি টাও খুশি দুটো ভালোবাসার মানুষের হাতের বন্ধনে আসতে পেরে।
–“আচ্ছা, এখানে নিয়ে আসার কোনো বিশেষ কারণ কি আছে?”
জোনাকি পোকাকে সেভাবেই আগলে রেখে কথাটা বলে মাধুর্য। অনুভব মাধুর্যের কাঁধে থুঁতনি রেখে বাঁকা চোখে তার প্রেয়সীকে দেখে চলেছিল। তারই কন্ঠে অনুভবের দেখাতে ঘটে ব্যাঘাত। সে আনমনে বলে ওঠে….
–“হুমম তা অবশ্য আছে।”
–“কি কারণ?” (প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
–“সেটা তো আমার থেকে তুমি ভালো জানো।”
ঘাড় বাঁকিয়ে বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে তাকায় মাধুর্য। হতভম্ব হয়ে কথা আওড়ায়….
–“আমি?”
–“হুমম তুমি।”
অনুভবের রহস্যজনক কথাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে মগ্ন হয়ে পড়ে মাধুর্য। তৎক্ষনাৎ উড়িয়ে দেয় অনুভব হাত নাড়িয়ে জোনাকি পোকা। রহস্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে হার মেনে নদীর কাছে চলে যায় মেয়েটি। একদম পাড়ে নদীর হারহিম করা পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়ে সে।

মুহূর্তের মাঝে পৌঁছে যায় অনুভব নিজেও। ধপ করে বসে পড়ে মাধুর্যের পাশে। পা ডুবিয়ে দেয় পানিতে। পানির শব্দে মুখরিত হয়ে পড়ে আশেপাশের পরিবেশ। থৈ থৈ করে ওঠে চারিদিকে। ফোনটা পকেট থেকে বের করে সময়টা দেখে নেয় অনুভব। ১১ টা বেজে ৪৬ মিনিট। আবারও পকেটে রেখে দেয় ফোনটা। তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। ইচ্ছে করে পা পানির মাঝে নাড়িয়ে লাগিয়ে দেয় মাধুর্যের পায়ের সঙ্গে। চমকে উঠে একটা শুকনো ঢক গিলে লাজুক চোখে তাকায় মাধুর্য। পা সরিয়ে নিয়ে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়তে থাকে। আবারও অনুভবের পা গিয়ে ঠেকে মাধুর্যের সঙ্গে। প্রথমে বুঝতে পা পারলে পরে বুঝতে পারে এটা অনুভব ইচ্ছে করে করছে। চোখ ছোট ছোট করে মাধুর্য নিজের পায়ের নখ অনুভবের পায়ের একটু ওপরে বসিয়ে দিতেই চকিতে তাকায় অনুভব। মাধুর্য মিটিমিটি হাসে।
–“এই, এটা কি হলো?”
অনুভবের প্রশ্নে মাধুর্য না জানার ভান করে চমকে ওঠার ভান করে বলে…..
–“কি হলো?”
–“তুমি কি করলে?”
–“কি করলাম?”
তার হাসি দেখে অনুভব আগের মতো শান্ত হয়ে পা সরিয়ে মাধুর্যের পায়ে স্লাইড করতে থাকে। এবার মাধুর্য পুরোপুরি দমে গিয়ে মাথা নুইয়ে বসে থাকে।

একটু পরেই উঠে দাঁড়ায় অনুভব। পা ঝেড়ে মাধুর্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সে। তাকে ধরেই উঠে দাঁড়ায় মাধুর্য। আরো কয়েক ধাপ হেঁটে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় অনুভব। ইশারা করে আকাশের দিকে তাকাতে। মাধুর্য ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে জ্বলজ্বল করে ওঠে কিছু একটা। লিখা ভেসে ওঠে বড় বড় করে। সেখানে লিখা ‘Happy Birthday Madhurjo’। মুখে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে দেখে দৃশ্যটা। একবার আকাশে তাকায় তো একবার অনুভবের দিকে। গাছে ঠেস দিয়ে এক পা সামনে ঠেলে পকেটে দুই হাত গুঁজে অনুভব চোখ বুজে বলে…..
–“বাবাহ, তোমার জন্মদিন আজ? জানতাম না তো।”
এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মাধুর্য। ভার গলায় বলে….
–“নিজে এসব কিছু করে না জানার ভান করছেন? উহু…এক্টিং এ আপনি বেজায় কাঁচা বুঝলেন?”
–“তাই? তাহলে কোনটা ভালো?”
জানতে চায় অনুভব। মাধুর্য কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে….
–“ভাইলেন। আপনি যখন সেদিন ভাইলেন এ সুর তুলছিলেন সেদিন অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। ওই সুর টা আমাকে গ্রাস করে ফেলছিল।”

–“আবারও শুনতে চাও ভাইলেনের সেই সুর?”
প্রকট হয়ে তাকায় মাধুর্য। তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়। অনুভব কিছু না বলেই দ্রুত চলে গেল কোথাও। গাছে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই আবারও দেখা যায় অনুভবকে। ওর হাতে ভাইলেন।
–“এটা কোথায় পেলেন আপনি? এই সময়।”
আলতো হেসে হেঁটে এসে মাধুর্যের হাতে ধরিয়ে দেয় ভাইলেন টা অনুভব।
–“আমার গাড়িতেই ছিল।”
মাধুর্য নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে ভাইলেন টা। অনুভব পেছন থেকে মাধুর্যের দুই হাত ধরে বলে…..
–“চলো আজ তুমিও বাজাও ভাইলেন আমার সঙ্গে। আগে যেমন বাজাতে।”
বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় মাধুর্য।
–“মানে?”
–“মানে তো অনেক কিছুই। কিছু জিনিসের মানে সবসময় জানতে নেই। সময় বলে দেয় কিছু জিনিসের মানে। এখন চোখ বন্ধ করো।”
কথা না বাড়িয়ে আবেশে চোখ বন্ধ করে মাধুর্য। তারা দুজন একই ভাইলেনে সুর তুলতে থাকে। মাধুর্যের হাতে অনুভবের হাত। সুরে সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে তাদের রাত। এই সুরে খুঁজে পায় তারা অন্যরকম ভালোবাসা।

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৯
গভীর রাতে বাড়ি পৌঁছায় মাধুর্য ও অনুভব। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। যেন তাদের কতই না কথা বলার আছে। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে বলতে পারছে না। একটা সময় মাধুর্য নীরবতা ভেঙে মেইন দরজার কাছে হাত বাড়ায়। তৎক্ষনাৎ অনুভব মাধুর্য বাম হাত নিজের মুঠোর মাঝে বন্দি করে হাতের ওপরে চুমু বসিয়ে দেয় অনুভব। নিজের হাত মুঠো করে ফেলে মাধুর্য। গালে দেখা যায় গোলাপি বর্ণের আভা।
–“লজ্জাবতী? স্ট্রবেরি হওয়ার চেষ্টায় আছো? আই লাইক স্ট্রবেরি!”
চকিতে তাকায় মাধুর্য অনুভবের কথাটি শুনে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবতে থাকে অনুভব কি করে জানলো যে ওর গাল স্ট্রবেরি রঙে পরিণত হয়েছে? একে তো চারিদিকে অন্ধকার। সবটা ঝাপসা ছায়ার মতো দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থায় অনুভবের এমন কথায় হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে মাধুর্য। মিনমিন করে বলে ওঠে….
–“ছাড়ুন!”
একটু হাসে অনুভব। মাধুর্য অন্ধকারে তা আঁচ করতে পারে। অনুভব শীতল গলায় বলে….
–“যদি না ছাড়ি?”

মাধুর্য থমকে যায়। তার মুখ থেকে বের হয় না কোনো শব্দ। বলতে ইচ্ছে করে তার, ‘ধরেই রাখুন না। আমিও তাই চাই। শুধু আপনার স্বীকার করার অপেক্ষায়।’
কথাগুলো হৃদয়েই থেকে যায়। কথা হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না আর। লাজুকতা ঘিরে ধরে তাকে। অনুভব মাধুর্যের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। প্রশ্নসূচক চেহারা নিয়ে তাকায় মাধুর্য। তবে কিছু জিজ্ঞাসা করবার আগেই অনুভব নিজ থেকে বলে ওঠে…..
–“কাল আমার বাড়িতে একটা পার্টি আছে। তুমি এলে আমার ভালো লাগবে। ইভেন অফিসের সকলেই আসবে। সেক্ষেত্রে তুমি নিশ্চিন্তে আসতে পারো।”
মাধুর্য মাথা নাড়িয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। অনুভবের সামনে টিকতে পারছে না ও। কিছুক্ষণ দরজার সাথে ঠেস লাগিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের ঘরে পা বাড়ায়। ঘরে ঢুকে টি টেবিলের ওপরে ব্যাগ রেখে চেয়ারে বসে পড়ে মাধুর্য। চোখ বন্ধ করে আজকের রাতের কথা ভাবতে থাকে ও। এ যেন ছিল এক মোহময় রাত। সঙ্গে ছিল এক মোহময় পুরুষ যার মাঝে আকৃষ্ট আর নির্ভর হয়ে পড়েছে মাধুর্য। যার সঙ্গে একদিন কথা না বললে যেন তার মরমর অবস্থা হবে। এটাই কি তবে ভালোবাসা?

“আমার জন্মদিন নিয়ে কেউ এতোটা ভাবেনি। সামিহা আপু আর বিভোর ভাইয়া ছাড়া আমার এই বিশেষ দিন নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। এই প্রথম কেউ আমাকে নিয়ে এতোটা ভাবে। আমি তো এমনই একজন মানুষকে চেয়েছিলাম। ইনিই কি তবে সেই? যে আমার ভাগ্যে লিখা আছে!”
আনমনা হয়ে কথাগুলো একা একা বলতে থাকে মাধুর্য। তার এই সুন্দর সুন্দর ভাবনার মাঝে ফোনের আলো জ্বলে ওঠে। ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বিরক্তি নিয়ে তাকায় ফোনের দিকে। না চাইতেও ফোনটা হাতে নিলে দেখতে পায় কারো নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। বিস্মিত হয় মাধুর্য। এখন রাত প্রায় ১ টা! এই সময় কারো মেসেজ তাও আননোন নম্বর থেকে। ব্যাপারটা অদ্ভুত!
অতঃপরেই মাধুর্য ভাবল হয়ত চেনা কেউ তাকে উইশ করার জন্য মেসেজ দিয়েছে। হতে পারে সে কবিতা। ওর মাথাতেই তো সব উদ্ভট চিন্তাভাবনা। দেরি না করে মেসেজ অন করতে মাধুর্য। মেসেজ পড়তেই তার সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
–“যাকে তুমি বিশ্বাস করো। যার ওপর তুমি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছো! হতে পারে সে তোমায় নিয়ে শুধু খেলছে। বা নিজের সত্যটা লুকাচ্ছে।”

পা ফ্লোরে রেখে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ায় মাধুর্য। অতি উত্তেজনায় দ্রুততার সঙ্গে মেসেজের রিপ্লে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
–“কে আপনি? এভাবে মেসেজ দিয়ে কি বুঝাতে চান?”
কথাগুলো লিখে সেন্ড এ ক্লিক করতেই সেন্ডিং ফেইলড দেখায়। অজানা আতঙ্কের ছাপ পড়ে মাধুর্যের মুখে। নম্বরটা টাইপ করে কল দেয় সে। কিন্তু নম্বর বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়। ফোন বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে নিজেও বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মাধুর্য। নিজেকেই বিরবির করে বলে ওঠে….
–“কে এই লোকটা? কেনই বা সেসব কথা বলল কে জানে!”
কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে থাকে মেসেজটার কথা। বের করে দিতে চায় মাথা থেকে বিষয়টি। কিন্তু কোনো কারণে পারে না। কার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সে? অনুভব? মাথা ঝাঁকুনি দেয় মাধুর্য। সামান্য এক মেসেজের জন্য কি উল্টাপাল্টা ভাবছে সে। মাথায় চাপ দিয়ে এই ঘটনাটি ভোলার চেষ্টা করে সে। একসময় ভুলেও যায়।

সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা। নামাজ পড়ে আবারও নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়েছে মাধুর্য। এমন সময় দরজায় খট করে শব্দ হয়। কেউ ভেতরে ঢুকে আসে। মাধুর্যের ঘুমে হালকা ব্যঘাত ঘটে। একটু নড়েচড়ে অন্যপাশ ফিরে ঘুমের সাগরে ডুব দেয় সে। কিন্তু ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়া মানুষটির তা যেন মোটেই সহ্য হয় না। পা টিপে টিপে বেডে এসে বসে পাশে থাকা বালিশ দুষ্টুমির ছলে মাধুর্যের মাথার ওপরে রেখে দেয়। ঘুমের মাঝে মাথায় ভারি কিছু অনুভব করে মাধুর্য। হাতিয়ে মাথায় হাত দিয়ে ভারি জিনিসটি সরিয়ে ফোলা ফোলা চোখে তাকানোর চেষ্টা করে সে। পাশে থাকা মানুষটি মাধুর্যের ঘুম ঠিকঠাক ভাবে না কাটতেই শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে মাধুর্যকে। চেঁচিয়ে আনন্দের সঙ্গে মানুষটি বলে ওঠে….
–“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে মাই ডিয়ার মাধু। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”
কন্ঠ টা চিনতে ভুল হয় না মাধুর্যের। এটা কবিতার কাজ। এদিকে কবিতা এমনভাবে তাকে জড়িয়ে রেখেছে তার দম বন্ধ হয়ে এলো বললে হয়। কবিতার পিঠে দুটো কিল-ঘুষি চালাতেই ছেড়ে দেয় কবিতা মাধুর্যকে। মাধুর্য বড় বড় শ্বাস ছেড়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলে….

–“পালোয়ান গিরি করছিস কেন সকাল সকাল? গায়ের জোর বেশি হয়ে গেছে? পালোয়ানদের কাছে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসব। তখন জোর দেখাস।”
হতাশায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় তার মুখ। নাটক করে নাক টেনে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে…..
–“কত কষ্ট করে তোর বাড়িতে সকাল সকাল সারপ্রাইজ দিতে এলাম। আর তুই আমাকে বকাবকি করছিস? এই তোর বন্ধুত্ব? শোকে তো গলায় ফাঁসি দিতে ইচ্ছে করছে রে!”
–“এতো সহজে মরবি কেন? আজকাল মানুষ কত ইউনিক উপায়ে মরছে জানিস? যেমন, হারপিক খেয়ে মরতে পারিস। না না! এটা তো কমন। তুই এরোসল খেয়ে মরতে পারিস। এগুলা ইউনিক। মরার পর ভাইরাল হয়ে যাবি। একটা বেশ ফেমাচ ফেমাচ ফিলিংস চলে আসবে। বল এখন বুদ্ধিটা কেমন লাগল?”
এতোগুলো কথা বলবার পর ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় মাধুর্য। উঠে বসে সে। কবিতা বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে। দ্রুত মাধুর্যের গালে মুখে হাত দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বলে….
–“তুই মাধু নস। আমার মাধু হতেই পারে না। আমাকে এভাবে মরতে বলতেই পারে না। বল কে তুই।”

এক পাহাড় সমান বিরক্ত নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মাধুর্য বিছানা ছেড়ে।
–“সকাল সকাল ডিস্টার্ব করতে চলে আসবি তাও ঘুমের মধ্যে। তোকে সোহাগ করব মনে হয় স্টুপিড? বাই দ্যা ওয়ে এই ঠিকানা তোকে কে দিল তাকে গিয়ে আমি আগে ঝাড়ব।”
–“আর কেউ নয় আমার ক্রাশ কিং অনুভব দিয়েছে রে। আমার সামনে তাকে গিয়ে ঝাড়বি এটা আমি মোটেই সহ্য করব না হুহ।”
চমকে তাকায় মাধুর্য। অস্ফুটস্বরে বলে….
–“অনুভব দিয়েছেন?”
–“হুমম দিয়েছে তো। ফোন নম্বর কালেক্ট করে ফোন দিয়েছিলাম তুই কোথায় থাকিস তা জানতে। তার ফোনের ভয়েস শুনে জাস্ট বুকটা ধক করে উঠেছিল বিশ্বাস কর। একটা কিউট কিউট ভাব আছে ভয়েসেও। কিন্তু দুঃখের কথা কি জানিস? ওকে আমি বিয়ে করতে পারব না রে। কালকে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল আর পছন্দও করে গেছে।”
কথাটুকু বলে ঠোঁট উল্টে ফেলে কবিতা। তার চোখেমুখে যেন রাজ্যের দুঃখ। অনুভবকে বিয়ে করবার কথা শুনে না চাইতেও রাগ উঠে যায় মাধুর্যের মনে। বুকের বাম পাশটা ছোটখাটো দাবানলে পরিণত হয়। তবে তা ধামাচাপা দিয়ে এলোমেলো চুলে খোঁপা করতে করতে সে বলে….

–“খারাপ কি? বিয়ে কর, সংসার কর। অন্তত মানুষের প্রতি ক্রাশ খাওয়া কমবে। বাচ্চাকাচ্চা হলে তোর মধ্যে একটা বুড়ি বুড়ি ভাব চলে আসবে আর আমার মনে খালামনি খালামনি ভাব আসবে। নট এ ব্যাড আইডিয়া।”
কথাটি বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় মাধুর্য। কবিতা ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে থাকে। মাধুর্যের কথাগুলো মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করে সে।
মাধুর্য ওয়াশরুম থেকে বের হলে কবিতা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যস্ত কন্ঠে বলে ওঠে….
–“বার্থডে গার্ল, তোকে আজ একটু স্পেশাল সাজাবো।”
হলুদ রঙের লং জামা গায়ে জড়ায় মাধুর্য কবিতার জোড়াজুড়িতে। আর গলায় পেঁচিয়ে নেয় কালো রঙের ওড়না। কবিতা মাধুর্যের হাতে ধরিয়ে দেয় একটা বড়সড় চুড়ির বক্স। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চুড়ির বক্স খুলে হরেক রকমের চুড়ি দেখতে পায় মাধুর্য।
–“এটা তোর বার্থডে গিফট। আর হ্যাঁ এটাও।”
ব্যাগ থেকে রংতুলি আর জলরঙ বের করে সেটাও সামনে রাখে কবিতা। জলরঙ টা দেখিয়ে বলে….
–“ছোট থাকতে তো রংতুলি দিয়ে আঁকতে পছন্দ করতিস। হঠাৎ করেই ছেড়ে দিলি। আবারও রংতুলি দিয়ে নিজের পছন্দকে তুলে ধরবি নে।”

মাধুর্য শুধু হাসে কবিতার কান্ড দেখে। মেয়েটা বড্ড সহজসরল। মনে কোনো প্যাঁচ নেই। যা মনে আসে বলে দেয়। এই কারণেই মাধুর্যের কাছে কবিতা বিশেষ মানুষের মাঝে একজন। মাধুর্যকে হলুদ আর কালো রঙের কাঁচের চুড়ি পড়িয়ে দেয়। বাঁকা করে বেনি করে দিয়ে বেনিতে গুঁজে দেয় ছোট ছোট নীল অপরাজিতা ফুল। যেটা বাড়ির বাইরে ছিল। সব শেষে নিজেই হা করে তাকিয়ে থাকে কবিতা।
–“মশা ঢুকবে। যত বড় হা করেছিস ডাইনোসরের ছোটখাটো বাচ্চা ঢুকতেও সময় নেবে না।”
সরু চোখে তাকিয়ে কথাটা ছুঁড়ে মাধুর্য। কবিতা ভেংচি কেটে বলে….
–“দেখতে দিবি না? যা দেখব না।”
কবিতা ও মাধুর্য বাইরে চলে আসে। এলিনা মাধুর্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে আজ অনুভব ব্যস্ত আছে কাজে। তাদের একা যেতে হবে ইউনিভার্সিটিতে। তারা দেরি না করে চলে যায় নিজেদের গন্তব্যে।

দুপুর বেলা ক্লাস শেষ করে বের হতেই মাধুর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় অরুণ। হুট করেই বিব্রতবোধ করে মাধুর্য। তবে প্রকাশ করে না। কবিতাও রয়েছে মাধুর্যের সঙ্গে। অরুণ মাধুর্যকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দাঁত বের করে হাসে। তার হাসিটা মাধুর্যের কাছে ভালো লাগে না। হঠাৎ করেই অরুণ মাধুর্যের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে সাদা রুমাল চোখে বেঁধে দেয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মাধুর্য।
–“কি ক..করছেন এসব?”
–“শান্ত হও মাধুর্য। একটা সারপ্রাইজ আছে।”
মাধুর্যের দুই কাঁধে হাত রেখে বলে অরুণ। মাধুর্য সঙ্কোচবোধ করে একটু সরে দাঁড়ায়। অরুণ অনুরোধের সুরে বলে….
–“প্লিজ কাম। আই রিকুয়েষ্ট ইউ।”
উপায় না পেয়ে সম্মতি জানায় মাধুর্য। অরুণ মাধুর্যকে ছাঁদে নিয়ে যায়। তবে মাধুর্য কবিতার হাত চেপে ধরে আছে। তাতে বেশ রাগ হয় অরুণের। ছাঁদে গিয়ে দাঁড়িয়ে অরুণ কাউন্ট করে বলে ওঠে….
–“হ্যাপি বার্থডে মাধুর্য।”
চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয় মাধুর্যের। রুমাল সরিয়ে আশেপাশে তাকায় মাধুর্য।

একটা টেবিলে করে বড় কেক আনে একটি মেয়ে। মাধুর্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। অরুণ তার দিকে একটা ছুরি এগিয়ে দিয়ে ইশারা করে বলে….
–“নাও কেক কাটো।”
মাধুর্য ছুরি নেয় না। অরুণের দিকে তাকিয়ে তীব্র গলায় বলে….
–“সরি অরুণ। আমি কেক কাটব না।”
–“কিন্তু কেন?”
মাধুর্য কিছু বলতে পারছে না। শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ও অনুভবের ওপর যতটা ভরসা করতে পারে অরুণের ওপরে ততটা করতে পারে না। সেকারণে সঙ্কোচবোধ হচ্ছে তার। অরুণ যতই মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে ততই মাধুর্যের কর্মকান্ডে রেগে যাচ্ছে সে। কীসের এতো অস্বস্তিবোধ তার? অনুভবের সঙ্গে তো এমনটা করে না মাধুর্য। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে অরুণ। একটা শ্বাস নিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে….
–“ইটস ওকে। এই তোরা কেক টা নিয়ে যা।”
কেক নিয়ে যাওয়া হয়। অরুণ এরই মাঝে এক অবাক করা কাজ করে বসে।

একটা রিং নিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে সে। কোমল সুরে বলে…..
–“আই লাভ ইউ মাধুর্য। প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছি সেদিনই কখন কিভাবে তোমার প্রেমের জালে ফেঁসে গেছি বুঝতে পারিনি। হয়ত একেই বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড। চেষ্টা করেছি তোমার কাছে আসার। কিন্তু নিজের মনের কথা চেপে রাখার স্বভাব নেই আমার। তাই প্রকাশ করে দিলাম। এই আশায় যে তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবে না। প্লিজ এক্সেপ্ট মি!”
কবিতা মুখে হাত দিয়ে মাধুর্যের দিকে তাকায়। ফিসফিস করে বলে….
–“এক্সেপ্ট করেই নে এবার। আমার আর তোর এক সাথে বিয়ের বাজনা বা…”
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই চোখ গরম করে তাকায় মাধুর্য। ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে যায় কবিতা। মাধুর্য বড্ড অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। কড়া গলায় কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় সে।
–“দেখুন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি আপনার আর আমার মাঝে এসব কিছু আনার চিন্তাও করবেন না। বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ থাকতে বলেছিলাম। আমি আপনাকে গ্রহণ করতে পারব না।”

এবার নিজের রাগ চেপে রাখতে পারে না অরুণ। রিং নিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে….
–“কেন? কি কমতি আছে আমার মধ্যে? আমি বড়লোক, টাকার অভাব নেই, দেখতে ভালো, তোমাকে ভালো রাখতে পারব। তবুও কেন আমি আর তুমি এক হতে পারি না?”
–“আমি আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। বাড়াবাড়ি করবেন না। নিজের সীমানায় থাকুন। চল কবিতা।”
কবিতার হাত ধরে টানতে টানতে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে আসে মাধুর্য। অরুণ তার যাওয়ার পানে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রিং হাতে জোরে চেপে বলে….
–“ওকে। আমিও দেখতে চাই আমার কাছে না এসে কোথায় যাও তুমি মিস. মাধুর্য চৌধুরী!”

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here