অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #পর্ব ৩১

0
774

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#পর্ব ৩১
#আনিশা_সাবিহা

বেশ রাত করে বাড়ি ফিরে আসে অনুভব। চোখেমুখে তার ক্লান্তির ছাপ। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উষ্কখুষ্ক লাগছে। নীলাভ চোখজোড়া নিস্তেজ হয়ে রয়েছে। নিজের ঘরের দরজা টেনে অর্ধেক খুলতে গিয়ে তার মনে হয় ঠোঁটের কোণে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে পারে। দ্রুত নিজের হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটের দুপাশে মুছতেই মাধুর্যের কন্ঠে ভীত চোখে তাকায় সে।
–“কেন প্রমাণ মুছছেন? রক্ত মুছলেই কি সত্যটা ঢাকা পড়বে অনুভব?”
ঘরে ঢুকে অনুভব দেখে মাধুর্যকে জাগ্রত অবস্থায়। বিছানায় সটান হয়ে রোবটের মতো বসে রয়েছে মাধুর্য। হঠাৎ ভয় অনুভবকে জাপ্টে ধরে।
–“তু…..তুমি কি বলছো মাধুর্য?”
মাধুর্য অদ্ভুত চাহনি নিয়ে তাকায় অনুভবের দিকে।এই চাহনিতে নেই কোনো ভালোবাসার আস্তরণ। অনুভব সেই দৃষ্টিতে খুঁজে পাচ্ছে শুধু অবিশ্বাস। সে অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত হতে থাকে। মাধুর্য তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

–“তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছো না নাকি বুঝতে চাইছে না প্রিন্স?”
‘প্রিন্স’ নাম এবং তুমি ডাক শুনে অনুভবের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। মাধুর্য আবারও তাকে অবাক করে দিয়ে বলে….
–“আকাশ থেকে পড়ছো যে! তোমাকে আগে তুমি করেই তো ডাকতাম। প্রিন্সও বলতাম।”
–“মা…মাধুর্য তোমার স…সব মনে….”
মাধুর্য অনুভবকে কথার মাঝপথে থামিয়ে দেয়।
–“হ্যাঁ। সবটা মনে পড়েছে আমার। আজ পিছু নিয়েছিলাম আমি। অনেকদিন পর নিজের রাজ্যে গিয়েছিলাম। মনে পড়েছে সেখানেই। মনে পড়েছে তোমার নিখুঁত অভিনয়ের কথা, তোমার বিশ্বাসঘাতকতার, আমায় আঘাত করার কথা!”
কথাগুলো শোনার পর অনুভবের বুকের বা পাশে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। তার মাধুর্যরুপি ভাবনা তাকে অবিশ্বাস করবার জন্যই বোধহয় এই যন্ত্রণা বাড়ছে। ক্ষণে ক্ষণে বড় নিশ্বাস নিচ্ছে সে। মাধুর্যের দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে সে বলে ওঠে….
–“সেদিনও আমি বলেছিলাম আজও বলছি, আমি তোমাকে মারতে পারি না মাধুর্য। তোমার মাঝে লুকিয়ে রয়েছে আমার প্রাণভোমরা। নিজের প্রাণভোমরাকে আঘাত কি করে দিতে পারি আমি বলতে পারো?”

মূহুর্তের মাঝেই থ হয়ে যায় মাধুর্য। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। এলোমেলো হয়ে যায় তার দৃষ্টি। একটুর জন্য মনে হয় সে আসলেই অনুভবকে ভুল বুঝছে। পরক্ষনেই মনে পড়ে যায় তার ভালোবাসাময় বিষ মাখানো অতীত! দৃঢ় গলায় বলে ওঠে…..
–“আমার চোখ কি মিথ্যে ছিল? যাকে সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি সেই যদি ধোঁকা দেয় তাহলে এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কি আছে?”
–“আর যাকে নিজের ভালো-মন্দ থাকার অবলম্বন মনে করেছি সে যদি অবিশ্বাস ও ঘৃণা করে এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কি আছে?”
–“আবারও অভিনয় করছো?”
অনুভব মলিন হেসে মাধুর্যের সুন্দর ও বড় বড় চোখজোড়া স্পর্শ করতেই মাধুর্য সরে যায়। অনুভব অন্যদিকে ঘুরে বলে ওঠে…..
–“অভিনয় করে তোমার ওই সুন্দরতম দৃষ্টি থেকে অবিশ্বাস কি সরাতে পারব? তাহলে আমি অভিনয় করতে প্রস্তুত!”
–“তুমি জানো তাই না? যে আমিই ভাবনা? সে কারণেই তুমি আবারও আমাকে বিয়ে করেছো। এরপর ভালোবাসা দিয়ে মুড়িয়ে আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছো?”
–“আমার প্রতি তোমার একটুও বিশ্বাস কি অবশিষ্ট নেই মাধুর্য?”

মাধুর্য চুপ হয়ে যায়। তার খুব ইচ্ছে করছে অনুভবকে বিশ্বাস করতে। অথচ কোথাও একটা বাঁধা আসছে মন থেকে। আশপাশটা বিষাদময় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে অনুভব চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই ছিল তাদের ভালোবাসায় ঘেরা একটা জগত। যেটা তারা নিজেরা বানিয়েছিল। বর্তমানে সেই জগতটি ভেঙে যাওয়ার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মাধুর্যের নিঃস্তব্ধতার কারণে তার দিকে ঘুরে তাকায় অনুভব।
–“উত্তর দাও মাধুর্য!”
–“বিশ্বাস করতে চাই। তবে কি জানো তো! আবারও যদি পেছন থেকে ছুরির আঘাত করো তখন?”
–“এতোটা ভয় আমার জন্য?”
মাধুর্য মুখ তুলে একবার তাকায়। জবাব দেয় না কিছুর। অনুভব চট করে বলে ওঠে….
–“ঠিক আছে। ওয়েট।”

অনুভব রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেলে একে একে সব হিসেব মিলাতে থাকে মাধুর্য। এবার সে বুঝতে পারছে সে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন কেন এতোটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল! নিশ্চয় তার জন্মের আগেই তার মাকে আক্রমণ করা হয়েছিল যাতে সে জন্মাতেই না পারে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে জন্মেছে। একজন ভ্যাম্পায়ার মানুষের থেকে দ্রুত জন্ম নেয়। যেখানে মানুষ ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে থাকার পর জন্মগ্রহণ করে সেখানে ভ্যাম্পায়ার তার অর্ধেক সময়ের মাঝেই পৃথিবীর আলো দেখতে পারে। তবে শেষ হিসেব কিছুতেই মিলাতে পারল না সে। তার মা-বাবা কোথায় গায়েব হয়ে গেল?
আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে তার সামনে এসে হাজির হয় অনুভব। অনুভবের ডান হাতে পড় তলোয়ার দেখে চমকে ওঠে সে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে তারই মৃত্যুর দৃশ্য। ভয়াতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকায় অনুভবের দিকে। অনুভব মুচকি হেসে বলে….
–“ভয় পেও না। আমি তোমাকে মারব না।”

বলেই অনুভব খাপ থেকে তলোয়ার বের করতেই তলোয়ারের ধারালো অংশ চকচক করে ওঠে। মাধুর্যের হাত নিজের হাতে নিয়ে তলোয়ারটা ধরিয়ে দেয় মাধুর্যের হাতে অনুভব। মাধুর্যের দৃষ্টি ভয়াতুর থেকে বিস্মিত হয়ে আসে। অনুভব তলোয়ারটি নিজের দিকে তাক করে মাধুর্যকে ধরিয়ে বলে…..
–“তোমার মনে হয় আমিই তোমাকে মেরেছিলাম। তাহলে আজ এক্ষুনি তুমি আমাকে মারো। ঠিক সেভাবে যেভাবে তোমার মৃত্যু হয়েছিল। এই অবিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা দায় আমার কাছে। তোমার জন্য অপেক্ষা করব বলে তোমার মায়ের দেওয়া অভিশাপ মাথা পেতে নিয়েছিলাম। যেন আবারও তোমার দেখা পাই। আবারও তোমাকে নিজের করে নেওয়ার অন্তত একটা সুযোগ পাই। যদি সত্যিই তোমার মনে হয় এসবও আমার অভিনয়। তাহলে ঢুকিয়ে দুই খন্ড করে দাও আমার হৃদয়। যেই হৃদয়ে তোমার প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা সেই হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলো যাতে সেই হৃদয় তোমায় ভালোবাসতে না পারে।”

মাধুর্যের ঠোঁটজোড়া অনবরত কাঁপতে থাকে। চোখে রয়েছে রাজ্যের ভয়। সামনে রয়েছে তার ভালোবাসা। তাকে আঘাত করার জন্য সে নিজেই এগিয়ে দিয়েছে তলোয়ার। মাধুর্য আজ চাইলেই পারবে যে তাকে নিঃশ্বাস করেছে তাকেই আজ নিঃশেষ করে ফেলতে। তবে সামনে শুধু তার খুনি নয় তার স্বামীও রয়েছে। তাকে আঘাত করলে নিজেকে ক্ষণে ক্ষণে মরতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে মাধুর্যের হাতেও কম্পন শুরু হয়। তার হৃদয়ে চলছে এক অসম্ভব ভয়ানক যুদ্ধ! সেই যুদ্ধে কে জিতবে? ভালোবাসা নাকি ক্রোধ?
অনুভব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। মাধুর্য এখনো তাকে আঘাত করতে পারেনি। বিষয়টা তার কাছে আশ্চর্যজনক না হলেও আনন্দময় নিশ্চয়! কারণ এতে প্রমাণ হয় এতোকিছুর পরেও তার ভাবনা তাকে ভালোবাসে। অসম্ভব ভালোবাসে!
তলোয়ার মাধুর্যের হাত থেকে পড়ে যাওয়ায় ঝনঝন শব্দ হয়। অনুভব নিচু হয়ে তলোয়ার তুলে নিতেই মাধুর্যের কান্নামাখা কন্ঠ তার কানে আসে।

–“আমি পারব না তাকে মারতে যার নামে নিজেকে সমর্পণ করেছি আমি। যার নামে আজই রাতে একটা ছোট্ট ভালোবাসার পৃথিবী বানিয়েছি তাকে মারা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি আমার স্বামী! আমারই পরিপূরক। তোমাকে কি করে আঘাত দেব আমি? পারব না। এই কাজ আমার দ্বারা হবে না।”
মাধুর্য হাঁটু গেঁড়ে বসে এক নাগাড়ে কাঁদতে শুরু করে। কি করা উচিত সে বুঝতেই পারছে না। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের ভার সে কমাতে চায়। অনুভব খুব করে চাইছে মাধুর্যের কাছে বসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু মাধুর্য কি তা মানবে? অনুভব সেসব ভাবা বাদ দিয়ে মাধুর্যের পাশে বসে। তৎক্ষনাৎ পেছন হটে যায় মাধুর্য। দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় সে।
–“কেন এলে আবারও আমার জীবনে? কেন করতে বললে অনুভবকে অনুভব? সব তোমার দোষ। না তুমি আসতে আর না ভালোবাসা আসত।”
–“আবারও বলছি, আমি তোমায় কখনো আঘাত করার কথা ভাবতে পারি না মাধুর্য”
–“উঁহু না! অনুভবকে অনুভব করা আমার ভুল ছিল।”
মাধুর্য উঠে দাঁড়ায়। চলে যায় সেই ঘর থেকে। অনুভব চেয়েও আটকাতে পারে না তাকে। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় সে।

সকালে…..
সবাই খেতে বসেছে। অনুভব এখনো আসেনি খাবার টেবিলে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন প্রলয় সিনহা। মাধুর্য হাত বাড়িয়ে সবাইকে পরিমাণমতো খাবার দিতে ব্যস্ত রায়মার সঙ্গে। তার মুখে নেই বিন্দুমাত্র হাসি। চোখজোড়াতে নিস্তেজ একটা ভাব এসেছে। প্রলয় মাধুর্যের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন….
–“মাধুর্য, অনুভব কোথায়? ও তো এতো দেরি করে না। অফিসে যেতে হবে তো আমাদের।”
মাধুর্য থম মেরে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। সে তো জানেই না অনুভব কি করছে। সে গতকাল ওই রুমে আর যায়নি। তারপর কিছু বলতে নিতেই অনুভবকে সামনে দেখতে পায় সে।
–“বাবা, যার খোঁজ করছেন সে এসে গেছে।”
–“অনুভব বস। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেড়ে নে। অফিসে যেতে হবে। ”
অনুভবকে তাড়া দিয়ে বলেন প্রলয়। অনুভব একপলক মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে বসতে নিলেই মাধুর্য বলে….
–“অফিসে নাকি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে মহারাজ?”

খাবার খাওয়া থামিয়ে দেয় সবাই। মাধুর্য একে একে সবাইকে চমক দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার চেহারা একেবারে স্বাভাবিক। যেন সে একটু আগে এমন কিছুই বলেনি। প্রলয় বোঝার চেষ্টা করেন উনি কি ঠিকঠাক শুনলেন?
–“অবাক হবার কিছুই নেই মহারাজ। আপনি ঠিকই শুনেছেন। আমার মুখ থেকেই শুনেছেন।”
–“এই মেয়ে কে তুমি?”
রায়মা দ্রুত এগিয়ে এসে মাধুর্যকে পর্যবেক্ষণ করে কথাটি নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলেন। অনুভব সবার দিকে তাকিয়ে থাকে। বিষয়টা জানবার পর কি রিয়েকশন হবে সবার? বিশেষ করে তার বাবার কথা ভাবছে সে।
–“একসময় আমি আপনাদের সবার অতি প্রিয় ছিলাম। এখন আছি কি না জানি না। জানা সম্ভবও না। আমি সেই যাকে আগের বার আপনার ছেলের বউ করতে গিয়েও পারেননি বাবা। তবে এবার ভাগ্যক্রমে সে বউ হয়ে গিয়েছে।”
সবাই বড়সড় শখ খেয়ে থ মেরে বসে থাকে। প্রলয় সিনহার মাথা ঘুরাতে থাকে। কোনোক্রমে সামলে উনি প্রশ্ন করেন….
–“তু…তুমি ভাবনা? এসবের মানে কি? সেদিন তাহলে কেন বলেছিলে যে কবিতাকে মারা যাওয়ার আগে ওর হত্যাকরী ওকে ভাবনা নামক কেউ ভেবেছিল।”

মাধুর্য মলিন হাসে। প্রলয় সিনহার সামনে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে….
–“সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না বাবা। তখন আমার নিজের সম্মন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। আমি কে সেটা নিজেই জানতাম না। যখন জেনেছি তখন বুঝতে পারলাম আমি ঠকে গেছি আবারও। জানতে অনেক দেরী করে ফেলেছি।”
প্রলয় সিনহার ভয় হয় নিজের ছেলেকে নিয়ে। এখন কি হবে ওর ছেলের?
–“তুমি এখন কি করতে চাইছো মাধুর্য?”
মাধুর্য প্রলয়ের দিকে তাকায়। উনার দৃষ্টিতে ছেলেকে হারানোর ভয় উপলব্ধি করতে পারে সে।
–“ভয় নেই। মারব না আপনার ছেলেকে। উনার সঙ্গে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। কি করে মানব?”
প্রলয় নিশ্চিন্তের নিঃশ্বাস ছাড়েন। অনুভব কিছুই বলছে না। বলবেই বা কি? অবিশ্বাসের পাত্র ছিল তাই তো থেকে যাবে। সে নির্দোষ হবার জন্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি। অনেক চেষ্টা করেছে সবার অজান্তে। সে অসহায়!!!

গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে অজানা গন্তব্যে ছুটছে সামিহা। জায়গাটি গ্রামের বললে ভুল হবে। শহরের ছাপও রয়েছে। তবে পুকুর, ধানচাষ দেখে গ্রামই বলা শ্রেয়। সামিহা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখেমুখে অজস্র বিরক্তি। সাইকেলের প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে বিরবির করে বলে…..
–“বড়লোকের ছেলে বিয়ে করতে বললেই এক কথায় করতে হবে? একবার জানব না তাকে? চিনব না? যাকে তাকে মা এনে বলবে, সামিহা ছেলেটা বড়লোক আর ভালো ইনকাম করে। বিয়ে কর সুখে থাকবি। এসব বললেই হলো নাকি? জাস্ট অসহ্যকর!”
সামিহার কপালে ভাঁজ পড়ে। কয়েকদিন ধরেই রেনুকা তার সামনে শুধু বড়লোক পাত্রের বায়োডাটা এনে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এদেরকে নাকি বিয়ে করতে হবে বড়লোক বলে। সামিহা এসবে বিরক্ত। হুটহাট করে বিয়ে করতে চায় না সে অচেনা কাউকে। তাই রেগেমেগে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সে। ছোটকাল থেকে তার অভ্যেস মেজাজ খারাপ থাকলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না!

এসব পাত্রের কথাগুলো আগাগোড়া ভাবতে ভাবতে তার সাইকেলটা গিয়ে হঠাৎ করেই কোনো বাইকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কায় যেমন সামিহা সাইকেল নিয়ে কপোকাত হয়ে পড়ে তেমনই বাইকটাও কাঁত হয়ে যায়। মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। কোনোমতে মাটিতে উঠে বসতেই সেই চিৎকার করতে করতে আসে তার সামনে। সে আর কেউ না জোহান। সে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে যাবে বলে বেরিয়েছিল। কিং তাদের ডেকেছে। রাস্তা শর্টকাট হবে বলে এদিক দিয়ে যাচ্ছিল সে। কিন্তু রাস্তায় হঠাৎ তার ইমারজেন্সি পেয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে নেমে অন্যদিকে চলে যায় সে। তখনই ঘটে সামিহার সঙ্গে অঘটন। তা দেখে দৌড়ে আসে জোহান।
–“চোখ কি কাউকে দান করে দিয়েছেন?”
বলে বাইক দাঁড় করাতেই বসে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ যায় জোহানের। চোখ ছোট ছোট হয়ে আসে। এই মেয়েটাকে কোথায় যেন দেখেছে!
–“হ্যাঁ মনে পড়েছে। এই হার কিপ্টে মেয়ে তুমি? সেদিন আমার ক্যামেরার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে গিয়েছিলে না?”
–“অদ্ভুত তো! একটা মেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন, তার কোথায় লেগেছে না লেগেছে দেখবেন তা নয়। টাকা নিয়ে পড়েছেন?”
–“তুমি কোন দিক থেকে মেয়ে?”
সামিহার মুখ হা হয়ে যায়। নিজে থেকে উঠে তেড়ে আসে জোহানের দিকে।

–“কি বললেন আপনি? আমাকে কোন দিক থেকে মেয়ে মনে হয় না?”
–“ওতোসব জানি না। আমার টাকা দাও। আমার বাইক ফেলে দিয়ে আমার বাইকের আয়না এবং হেডলাইটও নষ্ট করে ফেলেছো। তারও ক্ষতিপূরণ আমার দরকার।”
সামিহা খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বাইকের কাছে এসে আরো কয়েকটা লাথি মারে বাইকে। এসেছিল মেজাজ ভালো করতে পরিবর্তে উল্টোটা হয়ে গেল। জোহান ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে কাছে আসতেই সামিহা সাইকেল উঠিয়ে যেতে লাগল। জোহান হাত নাড়িয়ে বলে ওঠে…..
–“হেই হারকিপ্টে মেয়ে! দাঁড়াও। দাঁড়াও বলছি।”
সামিহা দাঁড়ায় না। জোহানও কম যায় না। দ্রুত পায়ে বিদ্যুতের গতিতে গিয়ে সাইকেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সামিহা চোখমুখ খিঁচে ব্রেক কষে। সাইকেল থেমে যেতেই ঝড়ের গতিতে নেমে যায় সাইকেল থেকে।
–“আপনি কি হ্যাঁ? এক্ষুনি যদি কিছু একটা হয়ে যেত?”
জোহান তার উত্তর না দিয়ে নিজের পকেট হাতড়ে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ বের করে। সামিহার হাত ধরে কনুইয়ে তা লাগিয়ে দেয়। সামিহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

চলবে…..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here