স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,49,50

0
560

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,49,50
#ফাতেমা_তুজ
#part_49

আরিফের বিয়ে সম্পূর্ন হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। সবাই বেশ খুশি। এখন বিদায়ের পালা। তবে মনি বলে দিয়েছে সে কান্না করবে না। আর এই কথার জন্য সবার কি হাসি। আসলে বিয়ে টা যখন মনের মানুষের সাথে হয় তখন কান্না টা আসের সুখের। এতো এতো অপেক্ষার পর কাঙ্খিত ব্যক্তি টি কে পুরোপুরি নিজের করে পাওয়া। এর থেকে সুখকর খবর বোধহয় আর নেই। জীবনে কয়জন পায় তার ভালোবাসা কে। রিমি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। সব এলোমেলো লাগছে। দু চোখ বেয়ে অজস্র পানি ঝরছে। আচ্ছা জীবন টা এভাবে এলোমেলো না হলে ও তো পারতো?
নাকি ভাগ্যের লিখন কখনো খন্ডানো যায় না। ফাহিম যথেষ্ট কেয়ারিং । ওহ কখনোই রিমির উপর জোড় খাটাবে না। ওহ নিজের ভালো থাকার নয় , মেয়েটার ভালো থাকার দায়িত্ব নিয়েছে। আর কখনোই সে দায়িত্বের খেলাপ করবে না।

_ ফারাবি একটা কথা শোন আমার। কাকি আর কাকা বড্ড কষ্টে আছে । আমার মনে হয় ও তাদের থেকে এভাবে দূরে থাকা উচিত নয়।

_ আমি চাই সহজ হতে। কিন্তু আমি পারছি না। আমার মনে হয় সবাই আমার পর হয়ে গেছে।

_ দোষ টা আমার ছিলো। রাগ করার যথেষ্ট কারন তাঁদের ছিলো। এভাবে থাকার মানেই হয় না।
বাসায় ফিরে আজ সব মিটিয়ে নিবি ।

_ কিন্তু

_ উহহুহ। কোনো কথা নয়। আমি যেটা ঠিক করেছি সেটাই ফাইনাল। দেখ আব্বু আর আমি কোনো ফরমালিটিস করি নি। আব্বু জাস্ট আমার নাম ধরে ডেকেছে আমি ও সাড়া দিয়েছি।
নিজেদের মাঝে কিসের ফরমালিটিস?
আমি কি বলতে চেয়েছি বুঝেছিস না ?

ফারাবি মলিন মুখে একটু হাসার চেষ্টা করলো। ফারহান এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। জীবন টাকে এগিয়ে নিতে হবে। একা একা থমকে যাওয়ার থেকে সবার সাথে মিলেমিশে থাকাই শ্রেয়।

*

_ আম্মু শোনো ।

ফারাবির কথায় থম মেরে গেলেন ফারাবির মা। কতো দিন পর মেয়ের মুখে আম্মু ডাক টা শুনলেন ওনি। দু চোখ ভরে উঠলো। এতো টাই শকড হয়েছেন যে হাতে থাকা ফুলের প্লেট টা পরে গেল। খানিকটা পিছিয়ে ও গেলেন। ফারাবি ছুটে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো। মায়ের মমতা ভরা বুকের সান্নিধ্যে পেয়ে যেন নিমিষেই গলে গেল।

_ আম্মু আম স্যরি। আমি অনেক ভুল করেছি। তোমাদের ছাড়া ও যে আমি ভালো নেই। প্লিজ আম্মু আমায় মাফ করে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আর কোনো ভুল করবো না।

দু চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না ওনি। ফারাবি কে বুক থেকে উঠালেন। স্নেহের হাত দিয়ে ফারাবির মুখে হাত বুলালেন। প্রায় দশ মাস দশ দিন গর্ভে রাখা সন্তান কে অবহেলা করা কি যায় ?
একজন প্রকৃত মা কখনোই তা করতে পারেন না। একদিন না একদিন স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিতেই হয়।
ফারাবির মুখে অজস্র চুমু খেলেন। ফারাবি কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো।
মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন
_ আর কখনো তোকে ছাড়বো না। তুই যে আমার সন্তান। আমি তোকে ছাড়া ভালো থাকি কি করে বল ?

ফারাবি উত্তর দিলো না। শুধু দু হাতে মাকে জড়িয়ে রাখলো।

মা মেয়ে কে করিডোরে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা নিবেদন করতে দেখে দু চোখ ভরে উঠলো ফারাবির বাবার। চোখ মুছে পেছন ফিরতেই ফারাবির ডাক
_ আব্বু

থমকে গেলেন ওনি। দু হাত বাড়িয়ে দিলেন। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলেন নিজ কন্যার দিকে। অভিমান টা বুঝি একটু বেশিই ছিলো । না হলে চোখ ফেটে জল বের হচ্ছে কেন ?

*

বাসর সাজিয়ে বসে আছে সবাই। আর ফাহিম চিৎ হয়ে বেডে শুইয়ে আছে। মনি কে একটা চেয়ারে বসানো হয়েছে। কি ভয়ঙ্কর বিষয়। যার বাসর তাকেই বেডে বসতে দিচ্ছে না। আরিফ সবার সাথে কথা বলে রুমের দিকেই আসছিলো।
রুমের বাইরে কাউকে না দেখতে পেয়ে অবাক হলো। এ কেমন বাসর ?
বাসর ঘরের সামনে তো বাচ্চা কাচ্চা রা টাকার জন্য ভির জমায়।
এ তো দেখি মাঠ খালি। আরিফ এক মনে বেশ খুশিই হলো।
পকেটের টাকা বেঁচে গেল কি না। খুশি হয়ে এক প্রকার ডান্স করতে করতেই রুমে ঢুকলো।
রুমে ঢুকে সোজা দরজা বন্ধ করে দিলো। পেছন ঘুরতেই হার্ট ব্রেক কষলো। শুকনো ঢোক গিলে বলল
_ তোরা এখানে কি করছিস ? যাহহ রুম থেকে বের হ।

_ ফারহান ভাইয়া চাচ্চুর বোধহয় বাসরের চিন্তায় মাথার স্ক্রু গুলো খুলে গেছে ।
কারো কাছে স্ক্রু বেশি থাকলে একটু ধার দাও না গো।

আরিফ দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। একজন বেডে শুইয়ে আছে । আরেক জন ফোন স্ক্রল করছে তো আরেক জন হাই তুলছে। এরা কি ঠিক করেছে এখানেই ঘুমাবে নাকি ?

_ ছোট চাচ্চু এতো ভেবো না তো। কথা দিয়েছিলাম না তোমার বাসরে আমরা ফুল সাপোর্ট দিবো। তাই তো চলে এসেছি।

_ রিফাত এখনি বের হ। না হলে একটা মার ও মাটিতে পরবে না।

_ আমার ভাই কে মেরেই দেখো তোমার বারো টা বাজিয়ে দিবো।

রিফাত চকচকে চোখে তাকিয়ে ফারাবি কে একবার জড়িয়ে ধরলো। ফারহান শিষ বাজাতে বাজাতে ফোন টা পকেটে পুরে দিলো।

মনিকা ফিস ফিস করে বলল
_ পুরো পঞ্চাশ হাজার।

_ এই এই কি বললি তুই ওকে ? কোন ধান্দা এটা ?

আরিফের কথাতে মনিকা মেকি হাসলো।
ফারহান মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে বলল
_ চাচ্চু মনিকা টা একদম গাঁধা। মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছে। আমি তো ভেবে রেখেছি এক লাখ টাকা নিবো।
কিন্তু ছোট বোন টি আমার যখন বলে ই ফেলেছে

আরিফ ভ্যাবলার মতো চেয়ে আছে। ফারহান একটু ভাব নিয়ে দাঁড়ালো। সবার কান্ডে রিমির ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটে উঠেছে। আড়চোখে ফাহিম তা দেখছে ।

আরিফ রাফাজের দিকে তাকালো। রাফাজ মৃদু হেসে বলল
_ আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি আর তনি আউট অফ সিলেবাস ।

আরিফ তপ্ত শ্বাস ফেললো । বড় মা এসে সবার জন্য পকরা দিয়ে গেলেন । এই পকরা আনার ব্যবস্থা করেছে ফারহান। কারন ওহ জানে আরিফের থেকে টাকা নিতে অনেক সময় লাগবে।
সবাই পকরা নিয়ে খেতে লাগলো । মনি আরিফের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে আছে। বেচারাই বা কি করবে ?
বিয়ের জন্য কতো গুলো টাকা গেছে। এখন আবার পঞ্চাশ হাজার। ফারাবি রিমির কাঁধে মাথা রাখলো। মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
_ একদম মন খারাপ নয়। সবার সাথে হাসি খুশি দেখতে চাই।

রিমি মৃদু হাসলো। সবার সামনে নিজেকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টাই করছে ওহ। একটা বেইমানের জন্য নিজের পরিবারের মানুষ দের কেন কষ্ট দিবে ?
ভেতরে ভেঙে যাবে তবু ও কাউকে বুঝতে দিবে না। তাই রিমি গলা ঝেরে বলল
_ যদি চাচ্চু টাকা না দেয় তো দিবে না। আমরা ও এখান থেকে যাচ্ছি না।

রিমির কথাতে সবাই রিমির দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখ থেকে কথা টা শুনে যেন সবার প্রানে স্বস্তি ফিরলো। ফারহান মৃদু হেসে বোনের দিকে এগিয়ে গেল । বোনের বাহু তে ধরে বলল
_ আমার বোনের কথার কোনো নড় চড় হবে না ।
এবার দেখো তুমি কি করবে ।

আরিফ হার মেনে নিলো। বাট ক্যাশ পঞ্চাশ হাজার টাকা তার কাছে নেই। তাই চেইক দিলো। টাকা পেয়ে সবাই হৈ হুল্লর করতে লাগলো। আরিফ ও মৃদু হাসলো।সবার মুখে তৃপ্তির হাসি দেখার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পয়সা কোনো ব্যাপার না।

*

ফারাবি আর ফারহান নিজেদের ছোট্ট বাড়িতে ফিরে এলো। সবাই বারন করলে ও শুনলো না। কারন আপাতত কয়েক দিন সেখানেই থাকতে চায় ওরা। পরিস্থিতি টা আরেকটু ভালো হলে এখানে থাকবে।

বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হতেই ফারহানের ফোন বেজে উঠলো।
ফোন রিসিপ করে বলল
_ হ্যাঁ আব্বু আমরা পৌছে গেছি।

_ বাড়ি তে থাকলে কি হতো ?

_ আসবো তো আব্বু। শুধু কয়েক দিন এখানে থাকি ?

_ আচ্ছা শোন তুই যখন ঠিক করেই ফেলেছিস ওখানে কয়েক দিন থাকবি।
তাই আমি মানে আমরা সবাই মিলেই একটা বিষয় ঠিক করেছি।

_ হুমম বলো।

_ আমার ছেলে আর ছেলের বউ কে গেট টুগেদার করে আমার বাসায় নিয়ে আসবো।
সবাই তো তদের বিয়ে সম্বন্ধে জানে না তাই ভাবলাম এটাই বেস্ট হবে।
আর তোর মা বলছিলো সেদিন রিমি আর ফাহিমের বিয়ের এনাউন্স ওহ করে দিতে।

_ গুড ডিসিশন আব্বু। রিমি কে ফাহিমের হাতে তুলে দিতে পারলেই দেখবে রিমি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ছেলেটা খুব ভালো। আর রিমি কে ও খুব ভালোবাসে।

ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। ফারহান তা স্পষ্ট শুনতে পেলে ও কথা বাড়ালো না।
রাত প্রায় একটার কাছা কাছি ফারাবি জুস হাতে রুমে ঢুকতেই ফারহান স্মিত হাসলো। ফারাবির কাছে ফোন দিয়ে বলল কথা বলতে।
ফারাবি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বললো। কথা বলার সময় একটু ও আড়ষ্ঠতা কাজ করলো না। কারন সবাই যে ওর নিজের মানুষ। জন্মের পর থেকে সবাই কে চেনে। এরাই তো কোলে পিঠে করে বড় করেছে। ফারহান স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। আর ফারাবি কে সারপ্রাইজ দিবে বলে গেট টুগেদারের কথা টা স্কিপ করে গেল।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_50

মাঝে কেঁটে গেছে সাত সাত টা দিন। এর মাঝে তেমন আহামরি কিছু হয় নি। তবে পড়াশুনা নিয়ে বেশ চাপে পড়তে হয়েছে ফারাবি কে। ফারহান রোজ সকাল 9 টায় অফিসে গেছে আর বিকেল 5 টায় ফিরেছে। তবে এর মাঝে ফারাবি কে বিশাল মাপের হোমওয়ার্ক দিয়ে গেছে। সারাদিন হোম ওয়ার্ক করতে করতেই ফারাবির সময় শেষ। ভোর বেলা উঠে এক ঘন্টা ফারহান ফারাবি কে পড়াবে তারপর রেস্ট নিয়ে দুজন এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবে। অফিসে যাওয়ার আগে ফারাবির কপালে ভালোবাসার পরস। আর রাতে ঘুমানোর আগে ফারহানের কপালে ফারাবি কে চুমু দিতে হয়। রিতি মতো ফারহানের টর্চার গুলো খুব ইনজয় করছে ওহ। তবে সাত দিনের মাঝে পরিবারে কারো সাথে না ফোনে কথা হয়েছে। আর না দেখা হয়েছে। ফারহান কেন জানি কারো সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না। এই বিশাল মাপের সমীকরন টা ফারাবির ছোট্ট মস্তিষ্ক নিতে পারছে না। ফোঁস করে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। ফারাবি নিজের মনোযোগ ক্ষুন্ন হয়েছে বুঝতে পারলো। তাই বই টা রেখে দিলো। পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না আর। বেড থেকে বই গুছিয়ে স্টাডি রুমের রেকে বই গুলো সযত্নে রেখে দিলো।
করিডোর দিয়ে বারান্দায় চলে আসলো। দুটো ছোট ছোট পাখি এনে দিয়েছে ফারহান। কাল ই এদের মুক্ত করে দিতে হবে।
ফারাবি ভ্যাগা ভ্যাগা হয়ে বলল
_তোরা ও এক সাথে আছিস। আর আমার বর টা কে দেখ আস্ত এক হুনমান । সকালে গেলে সন্ধ্যায় ফিরে।
কাল তদের ও মুক্ত করে দিবে। আমি আবার একা হয়ে যাবো।
এই লোকটা সপ্তাহ খানেক পর পর নতুন পাখির জুটি নিয়ে আসবে আর এক সপ্তাহ হলেই মুক্ত করে দেয়।
এটা কেমন পাগলামি বল তো ?

পাখি দুটো উত্তর দিলো না। কারন তারা তো কথা বলতে জানে না।
ফারাবি ধীর পায়ে হেঁটে ছাঁদে এসে দাঁড়ালো। বেশ কয়েক দিন পর ছাঁদে আসা হয়েছে। প্রথম কয়েক দিন ফারহানের সাথে চন্দ্রবিলাশ করা হয়েছে। হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল , আর কাঁধে মাথা রেখে নির্ঘুম রাত কাটানো হয়েছে । মৃদু হাসি তে ভরে উঠলো ফারাবির অধর কোন। ফারাবি উড়না টা হাতে নিয়ে দুবার গোল করে ঘুরলো । ভেতর টা কেমন বাচ্চামি করতে চাইছে। ফারাবি খিল খিল করে হাসলো । যদি অচেনা কেউ দেখে তো নির্ঘাত ওকে পাগল বলবে।
দোলনাতে পা মুরিয়ে বসে পরলো। বড্ড সুন্দর দোলনা টা। খানিকটা পাখির বাসার মতো। পুরো দোলনা জুড়ে রয়েছে চকচকে আর্টিফিশিয়াল অর্কিড। রাতের রঙিন আলো তে দেখতে বেশ ভালো লাগে। খানিকটা রূপকথা রূপকথা অনুভূতি।
আপন মনে বলে উঠলো
_ আপনি আমার জীবনের শেষ্ঠ উপহার ফারহান।

ফারহান বাসায় এসে দু বার কলিং বেল বাজালো। কিন্তু দরজা কেউ খুললো না। আরো দু বার কলিং বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। পাঁচ মিনিট পর ও কেউ দরজা খুললো না। ফারহানের ভ্রু যুগল বেঁকে গেল। ভেতরটা কেমন আশংকা আশংকা করছে। মেয়েটা কে বাসায় ফেলে যেতে একদম ই ইচ্ছে করে না ওর। আর অপেক্ষা করা যাবে না। ডুবলিকেট চাবি দিয়ে ডোর খুলে ফেললো। ফারাবি বলে বার কয়েক বার ডাক ও দিলো। কোনো সাড়া শব্দ নেই। ফারহান এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেল। রুমে গিয়ে ও পেলো না। ফারহান পুরো বাসা হন্তদন্ত হয়ে খুঁজলো উহুহহ ফারাবির দেখা নেই। বুক টা কেমন ভারী লাগছে। ফারহান দ্রুত পায়ে ছাঁদে গেল। ছাঁদে এসে ফারাবি কে দেখতে পেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছুটে গেল মেয়েটার দিকে। মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে। এই ভর দুপুর বেলা ঘুমানোর কারন টা ফারহান বুঝে উঠতে পারলো না। পরক্ষণেই মনে পরলো কাল ভোরে দিকে ঘুমিয়েছিলো আর সকাল সাড়ে সাতটা আবার উঠেছে।
এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। কম্পমান ঠোঁট দুটো ফারাবির গালে মুখে ছুঁইয়ে দিলো। হাঁটু গেড়ে বসে ফারাবির কোলে মাথা রাখলো।
আপন মনেই বলল
_ তুই আমার চোখ হয়ে যা জান। যাতে সারাক্ষণ তোকে দেখতে পারি । কখনো ই যেন হারিয়ে না যাস।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেঁটে গেল। ফারাবি এখনো গভীর ঘুমে। ফারহান কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। বেডে শুইয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো মেয়েটা শাওয়ার ও নেয় নি। ভোর বেলা তে অবশ্য সাওয়ার নিয়েছে। এখন তো তিনটে বাজে তা ও গোসল করে নি তার মানে বেশ অনেকক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে। ফারহান ভাবনা বাড়ালো না। হালকা শীত পরেছে। তাই এসি টা লো করে দিয়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে দিলো।
পরনের শার্ট টা খুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো।

*

” রিমি ফাহিম এসেছে ওর সাথে দেখা করে এসো ”

_ আব্বু আমার এখন ভালো লাগছে না।

_ ছেলেটা সেই কখন থেকে বসে আছে। না গেলে কষ্ট পাবে।

_ আম্মু আমি

_ কোনো কথা না মা। জীবন টা অনেক বড়। থমকে থাকা মানে নিজের প্রতি নিজে অন্যায় করা।
আচ্ছা তুই যদি এভাবে চুপচাপ থাকিস আমাদের ভালো লাগে বল ?

_ আচ্ছা আমি যাচ্ছি। ওনি কোথায় আছেন ?

_ ছাঁদে

ফাহিম চিলেকোঠার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে গ্রে রঙা ব্লেজার। তবে মানুষটার অবয়ব বলে দিচ্ছে সে স্থির দৃষ্টি তে কিছু ভাবছে। মিনিট দুয়েক রিমি দাঁড়িয়ে রইলো। রিমি কোনো ভাবেই চাইছে না ছেলেটার জীবন নষ্ট করতে। যাকে ভালোবাসতেই পারবে না তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে লাভ কি ?

হৃদয় চিরে বের হওয়া দীর্ঘশ্বাস টা লুকিয়ে আগালো। ফাহিমের থেকে কিছু টা দূরত্ব রেখে বলল
_ জি ডেকেছেন আমায়।

রিমির কন্ঠে পেছন ফিরলো ফাহিম। ফাহিমের মুখ দেখে রিমির কলিজা কেঁপে উঠলো। চোখ দুটো লালচে দেখাচ্ছে । বোধহয় কাল রাতে ঘুমোয়নি। রিমির অস্বস্তি হতে লাগলো। যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করলো। ফাহিম সরস হেসে বলল
_ এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন রিমি ?

রিমি উত্তর দিতে পারলো না। নিজেকে আড়াল করতে পেছন ফিরে দাঁড়ালো। ফাহিম মৃদু হাসলো। কয়েক মাস আগে মেয়েটাকে খুঁজে পেলে জীবন টা আর ও সহজ হতো। কিন্তু ভাগ্য বোধহয় চায় নি। দীর্ঘশ্বাস গুলো বের না হতে দিয়েই ফাহিম বলল
_ কেমন আছো ?

ফাহিমের অতি ঠান্ডা কন্ঠস্বর রিমি কে কাঁপিয়ে তুললো। বার বার কানের কাছে ভয়ঙ্কর প্রতিধ্বনি তুলছে। গলা শুকিয়ে কাঁঠ। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কাজ হলো না।
আবারো ফাহিমের একি প্রশ্ন
_ কেমন আছে ?

_ জি ভালো।

_ সত্যি ভালো আছো ? নাকি অভিনয় করছো ?

রিমির চোখ দুটো ভরে গেল। কয়েকটা দিন ভালো থাকার অভিনয় করেছে ওহ। তবে এখন আবেগ সামলাতে পারলো না।
_ রিমি নিজেকে স্থির রেখো না। যত ইচ্ছে কাঁদো। মনে কষ্ট চেপে রেখো না। এভাবে কেউ ভালো থাকবে না।

_ আমি পারছি না নিজেকে সামলাতে। কি করবো আমি ? আমি ফাহাদ কে খুব ভালোবাসি।

_ ভালোবাসা তো দোষের নয়। কিন্তু যে তোমার সাথে অন্যায় করেছে সে দোষী।
আমি বলছি না ফাহাদ কে ভুলে যাও। মনে রেখো , ভালো ও বাসো। শুধু একটা কথা রাখবে ?

_ কি

_ বন্ধু হবে আমার ? শুধু একটু ভরসা করে হাত টা ধরবে ? ভালোবাসতে হবে না শুধু ভরসা করবে একটু ? জানি না ঠিক কত টা ভালো রাখতে পারবো। তবে কখনো বিশ্বাস ভাঙবো না। তোমার অমতে কখনো তোমায় টাচ করবো না। যদি কখনো মনে হয় এই বুকে মাথা রাখবে চলে এসো নিজের সব অনুভূতি দিয়ে আঁকড়ে নিবো।

রিমি চোখের পানি মুছে নিলো। মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু হাসি ভেদ করে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরলো। এটা কষ্টের নয়, ভরসার অশ্রু । ফাহিম ধীর হাতে রিমির দু হাত মুঠো করে নিলো। স্ত্রী হিসেবে নয় বন্ধ হিসেবে চায় রিমি কে।

*

ঘুমু ঘুমু চোখ খুলে তাকালো ফারাবি। নিজেকে বেডে আবিষ্কার করে চমকালো না। ঘড়ির কাঁটা বলছে সন্ধ্যা সাত টা বাজে। ফারহান এসে গেছে। কিন্তু ফারহান আশে পাশে নেই। ফারাবি হাই তুলে উঠে বসলো। অনেক টা সময় ঘুমিয়েছে।
করিডোর দিয়ে নিচে নেমে গেল। কিচেনে ফারহান কে দেখে মৃদু হাসলো। ফারহান হাতের নাইফ টা রেখে ফারাবির দিকে এগিয়ে এলো। ফারাবি প্রশস্ত হেসে বলল
_ গুড ইভিনিং।

_ নো বেড ইভিনিং মিসেস।

_ কেন ?

_ এতো এতো ঘুমিয়েছেন আপনি মিসেস। আপনাকে না দেখতে পেয়ে আমার অন্তর আত্মা খা খা করছিলো।

_ স্যরি।

_ স্যরি তে কাজ হবে না। ফাস্ট সাওয়ার নিয়ে আসুন।

_ ভোরে তো সাওয়ার নিয়েছিলাম।

_ উহহুহ এখন আবার সাওয়ার নিন।

_ ঠান্ডা যে।

_ গিজার আছে তো। আজ এটাই লাস্ট সাওয়ার। এবার যাহহ

_ কিন্তু

_ কোনো কিন্তু না। আজ আমি ঘুমাবো আর তুই আমার মাথায় বিলি কেঁটে দিবি।

ফারাবি নিঃশব্দে হেসে সাওয়ার নিতে চলে গেল। ফারহান এর উল্টো টাই করবে। নিজে না ঘুমিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। যাহহ ফারহানের অভ্যাস।

*

” একটা কথা বলি ? ”

ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফারহান বলল
_ হুমম ।

_ বাসায় যাচ্ছি না কেন আমরা ?

_ কেন এখানে ভালো লাগছে না ?

_ উহহু সেটা না। সবাই কে দেখতে ইচ্ছে করছে।

_ আচ্ছা কাল রাতে নিয়ে যাবো।

_ কাল রাতে কেন ? সকালে যাই ?

_ উহহুহ রাতেই যাবো।

_ কেন ?

_ পরশু বড় কাকির আর বড় কাকার 30 তম বিবাহ বার্ষিকী ভুলে গেলি ?

ফারাবি জ্বিভ কেঁটে বলল
_ ইসস একদম ই মনে নেই। কখন কি যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।

ফারহান ফারাবির নাক টিপে দিয়ে বলল
_ বুঝবি কি করে ? সারাক্ষণ তো বরের ভালোবাসা তে ডুবে থাকিস।

_ একদম নয়। আপনি মোটে ও সারাক্ষণ ভালোবাসেন না।

_ সারাক্ষণ ভালোবাসি না ?

_ উহুহহ

_ আচ্ছা দেখাচ্ছি মজা।

_ এই ছাড়ুন আমাকে বজ্জাত হনুমান। আজ আমি আগের রূপ নিবো। অনেক দিন হয়েছে বকা দিচ্ছি না।

ফারাবির কথাতে ফারহান ভরকে গেল। মেয়েটা একদম ই ভয় পাচ্ছে না তাকে। মহা বিপদ হবে তাহলে। যে দুষ্টু মেয়ে, এটাকে এমনি ছাড়া যাবে না।

_ ঐ তুই আমাকে আগের মতো ভয় পাচ্ছিস না কেন ?

_ বর কে কেউ ভয় পায় ?

ফারহান স্মিত হাসলো। ফারাবি কে এক হাতে জড়িয়ে কপালে চুমু খেল। ফারাবি ওহ তার মসৃন ঠোঁট দিয়ে ফারহানের গালে স্পর্শ করলো।
ফারহান কিছু বলবে তার আগেই ফোন বেজে উঠলো। কনফারেন্স কল , এটা। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে বলল
_ কাল রাতের প্লানের জন্য কনফারেন্স কল করেছে রিফাত।

ফারাবি হুমরি খেয়ে পরলো। ফারহানের হাত থেকে ফোন নিয়ে কথা বলতে লাগলো। পরসু দিন রিফাতের বাবা মা কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

*

সকাল সকাল এক গাঁদা শপিং করেছে রিফাত আর রাফাজ। শপিং এর মতো প্যারা ময় দায়িত্ব টা তাঁদের ই ছিলো। আরিফ গেছে ফুলের খোঁজে। রজনী গন্ধা ফুল দিয়ে সমস্ত ডেকোরেশন করবে । আর মাঝে থাকবে হাজার খানেক লাল গোলাপের গুচ্ছ। সকাল থেকেই ফারহান আর ফারাবি আলাদা হয়ে গেছে। কারন ফারাবি , মনিকা , রিমি মিলে ডেকোরেশন প্লান করছে। সবাই চেয়েছে নিজ হাতে কাজ করতে। কারন ভালোবাসা গুলো নিজ হাতে হলে তাঁর মোহ হাজার গুন বেড়ে যায়।
ফারহান আর ফাহিম মিলে খাবারের বিষয় গুলো দেখছে। খাবার টা অবশ্য রেসট্রন থেকেই নেওয়া হচ্ছে । কারন শ খানেক মানুষের খাবার নিজেরা রান্না করা পসিবল না। নিজেদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন নিয়েই অনুষ্ঠান টা হবে।
ফারহান এরি সাথে আরেক টা প্লান করেছে যাহহ কেউ জানে না। এটা টোটালি সবার জন্য সারপ্রাইজ। ফারাবি কে ও বলা হয় নি। কারন এ মেয়ের ঠোঁট পাতলা। দেখা যাবে সবাই কে গড় গড় করে বলে দিয়েছে।
ফারহান কাজের বাহানা দিয়ে ফাহিম কে বলল
_ ফাহিম আমার একটা কাজ পরে গেছে তুই খাবারের বিষয় টা একটু দেখ।

ফাহিম সম্মতি জানাতেই ফারহান চলে গেল। ঠোঁটের কোনে ঝরা হাঁসি। সবার জন্য এটা সুখময় ই হবে। সাথে কোনো ঝামেলা ও থাকবে না।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here