স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,54,55

0
624

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,54,55
#ফাতেমা_তুজ
#part_54

ফারাবি কে স্কাই ব্লু রঙের শাড়ি লেহেঙ্গায় বেশ সুন্দর লাগছে। মুখে ব্রাইডাল মেকআপ নয়। তবে একেবারে কম সাজ ও নয়। সব থেকে সুন্দর হয়েছে আইলেনার টা। কারন এটা দিয়ে দিয়েছেন প্রান প্রিয় স্বামী ফারহান চৌধুরী। নিজের দিকে তাকিয়ে আনমনেই হাসলো। লজ্জা হাসিতে মাখো মাখো।
ফারহান অফ হোয়াইট কালারের সুট পরেছে। সুটের বোতাম গুলো খোলা। হাত দিয়ে চুল গুলো গোছাতে গোছাতে বলল
_ তাড়াতাড়ি চল সবাই কে সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে।

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ দুপুরে গিয়ে বড় মা আর বড় আব্বুর বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করলাম। এখন সন্ধ্যা তে কি পার্টি আছে বলুন তো ?

ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মুখ টা মলিন করে বলল
_ এতো জেনে কি করবি তুই ?

_ জানতে হবে না কেন ?

_ আহা সেটা বলি নি তো। শুধু সবার সাথে জানার কথা বলেছি।
এভাবে সারপ্রাইজ হয় বল তো ?

_ ঠিক আছে। তবে আমি বেশি ক্ষন এই ভারী জামাকাপড় পরে থাকতে পারবো না।

_ আচ্ছা রাত 9 টা অব্দি থাকিস প্লিজ ?

_ ওকে ডান।

ফারাবি হাসি হাসি মুখ করে ফারহানের হাতে হাত রাখলো। মিষ্টি এক ঘ্রানে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। ফারহান হেচকা টান মারতেই ফারাবি ফারহানের বুকে গিয়ে পরলো।
_ কি হয়েছে জান ? এভাবে শিউরে উঠলি কেন ? বর কে এখনো লজ্জা পাস ?

ফারাবি আমতা আমতা করতে লাগলো। এই কয়েক দিনে ও ফারাবি নিজের লজ্জা সংযত করতে পারে নি।
ফারহান কাছাকাছি এলেই শিউরে উঠে। এ কেমন বাজে অভ্যাস ?
তবে ভালোবাসায় কিছু বাজে অভ্যাস থাকা বেশ প্রয়োজনীয় ।

*

ফারাবি দের বাসার কাছে গাড়ি থামালো ফারহান। ফারাবি চমকপ্রদ প্রায়। কারন বাড়ির ডিজাইন টাই বদলে ফেলা হয়েছে। দুপুরের আয়োজনের কোনো রেশ নেই। এ যেন কোনো বিয়ের মঞ্চ। ফারহান অধর কোনে হাসি রেখে বাসায় প্রবেশ করলো। সন্ধ্যা সাত টা বাজে। ফারহান বাসায় আসতেই এক সঙ্গে সবাই বললো
_এই সব কি ফারহান ?

ফারহান ভাব নিয়ে দাঁড়ালো। কোনো উত্তর দিলো না। সবার পড়নে ব্রাইডাল সব মেকআপ আর গর্জিয়াস জামাকাপড়।
সব থেকে বড় কথা বাড়ি টাকে এতো টাই জাঁকজমক করেছে যে চারিদিকে শুধু লাইটিং ই দেখা যাচ্ছে।

ফারাবি বেশ বিরক্ত হলো। সবাই প্রশ্ন করলো অথচ ফারহান কোনো উত্তর দিলো না। এ কেমন সারপ্রাইজ?

ফারহান স্টেজ এ উঠে গেল। একটা গিটার রাখা আছে। গিটারের গায়ে হাত বুলিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললো। ফারহানের এমন কান্ডে বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফারহান মৃদু কন্ঠে দু এক লাইন গাইলো। সবাই মুখে কুলুপ গুঁজে আছে।

ফারহান আলতো হেসে ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি আমার প্রেয়সী কে তো পেয়ে গেছি। কিন্তু আমার প্রিয় কিছু মানুষ তাঁদের প্রেয়সীর শোকে কাতর হয়ে আছে। তাঁরা বোধহয় স্বপ্নে ও তাঁদের প্রেয়সীর জন্য ছটফট করে। এই সব কি দেখা যায় ? ”

সবার ভ্রু কুঁচকে গেছে। ফারহান মাইক টা মুখের কাছে এনে শিস বাজালো। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসে ভীর করলো। যে যার বন্ধু দের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

ফারহান ধীরে ধীরে ফারাবির কাছে আসলো। ফারাবির মুখে ফু দিয়ে আলতো হাসলো। ফারাবি বিস্ময়ে অবাক। ফারহান বলা শুরু করলো

” তো সবাই বিয়ের জন্য প্রস্তুত তো ? ”

জোড়ে আওয়াজ আসলো হ্যাঁ । ফারহান বিগতলি হেসে সেই লাইন টা আওড়ালো।

” যাদের বিয়ে তাঁদের হুস নেই আর বন্ধু বান্ধবের ঘুম নেই ? ” আরে ওদের কে রাজি করা সবাই।

সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে বন্ধুরা ঘিরে ফেললো তিন জুটি কে । রিফাত , মনিকা ,
রিমি , ফাহিম আর রাফাজ তনির বিয়ে। ফারহান ফারাবি কে চোখ টিপে দিলো। ফারাবি কোমড়ে হাত গুঁজে বলল
_ ডেঞ্জারাস।

আধ ঘন্টা পর সবাই রাজি হলো। যদি ও সবাই চাইছিলো বড় কোনো এরেঞ্জ করে বিয়ে টা করতে । ফারহানের যুক্তি তে থেমে গেল।
ফারহান বলেছে ওদের সাথে সবার ও গেট টুগেটার হবে। আর বিয়ের কথা ও জানিয়ে দেওয়া হবে।
সবাই এতে রাজি হয়ে গেছে। দ্বিমত করার কোনো কারন নেই। কারন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রা তো আছেন ই।
অবশেষে তিন জুটির বিয়ে হয়ে গেল। ফারহানের বাহু তে মাথা রেখে ফারাবি বলল
_ ইসসস আমাদের ও যদি হতো।

_ আবার বিয়ে করতে চাচ্ছিস ? আমার কিন্তু সমস্যা নেই। আমি ও না হয় আবার বাসর করে নিবো।

ফারাবি নাক কুঁচকালো। ছেলেটা যথেষ্ট লুচু। যেখানে সেখানে লুচুগিরি করে বসে।
ফারহান আলতো হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। নাক নাক ডুবিয়ে বলল
_ আমাদের ভালোবাসা টা খুব রেয়ার জানিস ?

_ কেমন ?

_ তিন টে বছর দুজন ই কষ্ট করেছি। ভালোবাসার ফিলিংস থাকতে ও কেউ কাউ কে জানাই নি। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ও কখনো ছুঁইয়ে দেখি নি। অসম্পূর্ন রেখেছিলাম হালাল সম্পর্ক গুলো ওহ। জানিস কেন ?

ফারাবি উত্তর দিলো না। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ফারহান বলল
_ ভালোবাসা। এই ভালোবাসার একটা গভীর জোড় আছে সেই জোড়েই তোকে পেয়েছি আমি। মানছি আমি এর লিমিট ক্রস করেছি তবে আমার কলিজা কে বুকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমি এই টুকু তো করতেই পারতাম তাই না ?

_ উহহুহ পারতেন না। কারন আমি না চাইলে কখনোই আপনি আমাকে স্পর্শ করতেন না। বিয়ে টা ও ঝোঁকের বসেই করেছেন। যার জন্য আপনি কষ্ট পাচ্ছিলেন ।
তবে যাই হোক সেটাই ছিলো আমাদের প্রেমের সূচনা।
ভালোবাসি আমি , খুব ভালোবাসি।

ফারহান মৃদু হাসলো। ফারাবির কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে নিলো। চোখ থেকে দু ফোঁটা নোনা জল ফারাবির ঠোঁটে এসে পরলো। ফারাবির বুক ধক করে উঠলো।

_আপনি

_ উহহহু একদম নয়। ফারহান যার তার জন্য কাঁদে না। তুই জানিস ও না তুই আমার কাছে কি।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ছেলেটা এতো কেন ভালোবাসে ওকে ?

*

একটা রিসোর্ট বুক করেছে ফারহান। রিসোর্ট টা বাসা থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে। সম্পূর্ন রিসোর্ট বুক করে নিয়েছে। পুরো ফ্যামলি সহ সবাই কে রিসোর্ট এ নিয়ে এসেছে। কাল নাকি সবাই কে নিয়ে ফ্যামিলি পার্টি হবে।

_ এ সবের কি দরকার ছিলো ফারহান ? মানছি তুমি টাকা ইনকাম করো তাই বলে সমস্ত জুয়েলারি ও তুমি ই দিবে ?
প্রতি টা ডায়মন্ড জুয়েলারির প্রাইজ তো হাই লেভেল এর । আমাকে বলতে পারতে ?

_ আব্বু এতো ভেবো না তো। সবাই কে গিফ্ট দিয়েছি আমি। তাছাড়া আমি তো আমার বিয়ে তে কাউকে ইনভাইট করি নি। তাই আর কি

ফরহাদ চৌধুরী মৃদু হাসলেন। পাগল ছেলে তাঁর । ওনি এই সব নিয়ে প্রশ্ন করতেন না। যদি না ব্যাংক থেকে হিউজ পরিমানে ফারহানের লোন না নেওয়া থাকতো।
যত ভালোই ইনকাম হোক না কেন। ব্যাংক এর কাছে ঋনগস্ত ফারহান । যথাসম্ভব পরিশোধ করা টাই উত্তম। তা না করে এতো কস্টলি আয়োজন করেছে। আর তাই ওনি প্রশ্ন গুলো করলেন।

_ এই আসো না কেন ? ছেলে মেয়েরা হাসি ঠাট্টা করবে আর তুমি কি দাঁড়িয়ে দেখবে ?
লজ্জা করবে না নাকি ?

স্ত্রীর কথাতে ফরহাদ চৌধুরী সামান্য লজ্জা পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্থান করলেন।

ফারহান সবাই কে লজ্জা দিতে ব্যস্ত। ফারহানের এমন সব কথায় ফারাবিই লজ্জা পাচ্ছে।

_ ফারহান ভাই শোনো তুমি বাসর করেছো আমরা কি বাঁধা দিয়েছিলাম ?
তুমি কেন আমাদের বাসরে বাঁধা দিচ্ছো ?

_ রাইট আচ্ছা ফারহান আমি তো তোর বড় ভাই আর যাই হোক আমাকে রেহাই দে।

_ নো কোনো রেহাই নেই। পঞ্চাশ হাজার করে দাও আর বাসরের পারমিশন পাও।
ফারাবি আমাকে প্রমিস করিয়েছে পঞ্চাশ হাজার করে না দিলে একদম ই যেতে দেওয়া যাবে না।

ফারাবি অবাক চোখে তাকালো। এই সব কখন বললো সে ? ফারহানের দিকে বোকার মতো চেয়ে থেকে ফারহান কে ঝটকা মেরে বলল
_ আমি কখন

_ আরে থাম তো বলেছিলিস হয়তো কখনো। এখন চুপ চাপ দেখ ।

ফারাবি নুইয়ে গেল। ফাহিম বিরক্তিকর শব্দ করে বলল
_ উইদাউট পিপারেশন এ আছি ভাই। নো টাকা পয়সা । এবার প্লিজ আমার বউ এর সাথে একটু কথা বলতে দাও।

_ ফারহান মনিকা আমাকে মেরেই ফেলবে। প্লিজ ভাই যেতে দে।

ফারহান চোখ টিপে বলল
_ বউ কে কাবু রাখতে পারো না কেমন পুরুষ তুমি। শালা তুই দশ হাজার টাকা বেশি দিবি।

রিফাতের কপালে ভাঁজ পরলো। রিফাত তেড়ে আসতেই ফারহান বলল
_ একদম না। বহুত প্যারা দিয়েছিস । এখন টাকা দে না হলে দূর হয়ে যাহহ।

_ আপনি এমন করছেন কেন ? দেখুন তো রাত এগারো টা বেজে গেছে।
ছেড়ে দিন না প্লিজ

_ ছেড়ে দিবো ?

_ হুমমম

_ আচ্ছা যাহহহ ছেড়ে দিলাম। বুঝেছিস আমার বউ বলেছে বলে ছাড়লাম। তবে শুধে আসলে পরে নিয়ে নিবো কিন্তু।

সবাই মাথা ঝাঁকালো। ফারাবির হাত ধরে ফারহান চলে আসলো। ফারহানের গাঁয়ে ভর দিয়ে ফারাবি বলল
_ কোলে করে নিয়ে যান আমায় ।

_ সিউর তো ?

_ হুমমম

ফারহান বাঁকা হাসলো। ফারাবি কে কোলে করে নিয়ে রিসোর্ট এর বাইরে চলে আসলো। আজ সারা রাত চন্দ্র বিলাশ করবে ওরা। ফারাবি হঠাৎ করেই ফারহানের গলায় চুমু দিয়ে দিলো। ফারহান মৃদু ছন্দে দু এক লাইন গান ও গাইলো। ফারাবি ঘোর লাগা চোখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেটার মুখের মায়া ফারাবির চিত্ত কাঁপিয়ে তুললো। ভালোবাসার প্রখরতা নতুন ভাবে শিখছে সে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_55

নিস্তব্ধ পরিবেশ। রিসোর্ট এর পেছনের চিকন রাস্তা টায় কোনো জনমানব নেই। কিছু ক্ষণ পর পর কয়েকটা নিশাচর পাখি ডেকে চলেছে। ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাব থাকলে ও ফারাবির ভয় করছে না। সে ফারহানের গায়ের সাথে লেপ্টে হেটে চলেছে। ফারহানের এক হাত পকেটে গোঁজা । আর অন্য হাত তাঁর প্রেয়সীর বাহু তে।
নীরবতাই যেন হাজারো রকমের প্রেম নিবেদন করছে। দুজনেই একটু পর পর হাঁসছে। চাঁদ টা কে মেঘ আড়াল করতে পারে নি। মেঘ কে ছাপিয়ে চাঁদ নিজ ছন্দে মোহ ছড়াচ্ছে।
_ ভালো লাগছে তাই না ?

_ হুমমম অনেক ভালো লাগছে। আচ্ছা বলুন তো
সময় টা থমকে যাচ্ছে না কেন ? সময় টা আপনি থমকে দিতে পারেন না ?

ফারহান বিগলিত হাসলো। ফারাবির হাত টা মুঠো বন্দী করে বুকে ছোঁয়ালো । ফারহানের কান্ডে ফারাবি অবাক চোখে তাকালো । চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করতে পারলো না। সে শুধু দেখেই যাচ্ছে।
_ অনুভব কর ।

_ কি ?

_ হার্টবিট ।

_ হার্টবিট?

_ হুহহ

ফারাবি চোখ বন্ধ করলো। হাত দিয়ে ফারহানের হার্টবিট গুলো অনুভবের চেষ্টা করলো। কিছু ক্ষণ এভাবেই কেঁটে গেল।ফারহান ফিস ফিস করে বলল
_ তোর জন্য সময় থমকে দিতে ও রাজি। শুধু তুই চাস যদি । আমি নিজেকে হারাতে ও রাজি।

_ কিভাবে ?

ফারাবি কথাটা অবাক হয়েই বললো। এভাবে সত্যি ই সময় থমকে দেওয়া যায় ? আদৌ এ ও কি সম্ভব ?

_সময় থমকে দিতে হলে আমার এই হার্টবিট গুলো থামিয়ে দিতে হবে। তোর জন্য আমি সেটা করতে ও রাজি।

ফারাবির বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হলো। দু চোখ যেন থেমে গেল। অস্ফুটন স্বরে উচ্চারন করলো
_ ফারহান ।

ফারহান অধর কোনে হাসলো। ফারাবি কে হেচকা টান মেরে কাছে টেনে নিলো। বুকের সাথে মিশিয়ে পেছন ঘুরিয়ে নিলো। ফারাবির অনুভব শক্তি বলছে ফারহানের স্পর্শ গাঢ় হচ্ছে।
_ তোকে ভালোবেসে এক জনম কেন যদি শত জনম বিসর্জন দিতে হয় তো তা ও আমি রাজি।
তবু ও তোকে আমার চাই। খুব করে চাই। চাঁদ যেমন সত্য , সূর্য যেমন উত্তপ্ত । পৃথিবী যেমন বাসযোগ্য ঠিক তেমনি তুই শুধুই আমার । এটাকে ও আমি চিরন্তন সত্য করে দিতে চাই।

_ আপনি কি সব বলছেন।

_ পাগল পাগল লাগছে নিজেকে । এতো ভালোবাসার পর ও বুকের ভেতর যন্ত্রনা হয়।

_ যন্ত্রনা ! যন্ত্রণা কেন হয় ? কিসের যন্ত্রনা হয় ? আমি তো আপনার কাছে ই আছি। তাহলে ?

ফারহানের দীর্ঘশ্বাস নিস্তব্ধতার সুর তুলে যাচ্ছে। পাষান বুক টা ধক ধক করছে । ফারাবি কে উত্তর দিতে পারলো না । ফারাবির ছলছল নয়ন দেখে আলতো হাসলো। কানের কুর্নিশে ঠোঁট শুইয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।
সত্যি সময় টা থমকে যাক। হৃদস্পন্দন চলে যাক। তবু ও তাঁর প্রেয়সী তাঁর বুকেই থাক।

*

সকাল থেকেই নানান আয়োজন চলছে। পুরো রিসোর্ট জুড়ে চলছে সাধারন আয়োজন। পরিবারের সবাই কে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে ফারহান। নতুন বর বউ কেউ ই রেহাই পাচ্ছে না। সবাই কেই কাজ করতে হচ্ছে।
এই দিক থেকে ফাহিম কে অবশ্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। কারন সবার মতো ফাহিম আর রিমির সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। ফাহিম আর রিমি পাশা পাশি হেঁটে চলেছে । ফাহিমের বুকে প্রশান্তির ছায়া। হাজার হোক তার প্রেয়সী কে তো কাল বুকে আগলে রাখতে পেরেছিলো।
সারা রাত ফাহিম জেগে ছিলো। আর ফাহিমের বুকে মাথা রেখে শুইয়ে ছিলো রিমি।
ইচ্ছে টা অবশ্য ফাহিমের ই ছিলো। ফাহিম রিমি কে কথা দিয়েছে রিমির সাথে তার সম্পর্ক খুব ভালো বন্ধুর মতোই হবে।
রিমির মনে যদি কখনো ফাহিমের জন্য জায়গা হয় তাহলে ই নতুন সম্পর্কের সূচনা হবে। ফাহিম জানে না সে তাঁর কথা রাখতে পারবে কি না। তবে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
রিমি প্রতি উত্তরে শুধু হেসেছে। হাসি টা সাধারন হাসি ই ছিলো। কোনো কিছু প্রত্যাশা, তাচ্ছিল্য কিংবা কৃতঙ্গতা থেকে নয়।

ফাহিম বন্ধুত্বের সম্পর্কে সাথে একটা সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে। আর সেটা হলো রিমি কে বুকে নিয়ে ঘুমাবে। রিমি ইচ্ছা অনিচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে।
যেই ছেলেটার তাঁর জন্য এতো কিছু করছে তার জন্য এই টুকু তো করা যেতেই পারে ?

রিফাত আর মনিকার সম্পর্ক একটু ও ঠিক হয় নি। দুজনের প্রেমের শুরু যেমন ঝগড়া থেকে হয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই সম্পর্ক টা চলছে।
ফারহান এই বিষয়ে আর নাক গলায় নি। কারন এদের ভালোবাসা টা এমনি। দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা। রাগ ঝগড়ার সম্পর্ক। খানিক টা বাচ্চা বাচ্চা ভাব।

তবে সম্পর্কের এডাল্ট আর্কষন রাফাজ আর তনির মাঝে। দুজনের ভাব মূর্তি অতি সাধারন। না লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে আর না হৈ হৈ করছে।
দুজনের মাঝের বন্ডিং টা সেরা। একে অপরের যে কোনো সমস্যায় শান্ত ভাবে সমাধান করে যাচ্ছে।
যেন দুজন বহু দিনের সংসারী। এই সব কিছু দেখে চলেছেন রোমা চৌধুরী। ছেলে মেয়েদের সুখ দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
ফারাবির মায়ের স্পর্শ পেতেই এক গাল হাসলো। দুজনের চোখেই পানি চিক চিক করছে।
সুখ টা যেন হাতের কাছেই চলা ফেরা করছে।

” রিফাত ভাইয়া এটা কি করলে তুমি ? পুরো ভিজিয়ে দিলে আমায় ? মনিকা আপুর রাগ আমার উপর ঝারছো ? ”

রিফাত মুখ টা ছোট করে নিলো। পানি টা মনিকা কে মারতে চেয়েছিলো কিন্ত পানি গিয়ে পরলো রিমির গাঁয়ে।

ফারাবি বাগানের পাশেই ফুলের ঝুপড়ি সাজাচ্ছিলো। হাসতে হাসতে রিমির কাছে আসলো। রিফাত কে ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ বউ এর হাতে কাল বহুত প্যারা খাইছে রে। আর প্যারা দিছ না বেচারা রে। ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।

ফারাবির কথায় রিমি মুখ চেপে হাসলো। দুজনে প্রস্থান করতেই রিফাত ভ্রু কুঁচকালো । আসলেই তো এরা কি করে জানলো মনিকা যে কাল রাতে ও তাঁকে কিল ঘুষি মেরেছিলো।
ক্যামেরার কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের রুমের দিকে ছুট লাগালো।

*

বাগানের পুরোটাই ল্যাম্প সেট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বহুল পরিচিত হ্যারিকেন এর সেপের ল্যাম্ব সেট। মাঝে মাদুর পাতা হয়েছে। তার ই এক পাশে চলছে রান্নার কাজ। বড় রা যেহেতু সাজানোর ক্ষেত্রে হাত লাগায় নি তাই তাঁদের কাজ হচ্ছে রান্না করা।

বাগানের এই দিক টা বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। গ্রামীন পরিবেশের সৌখিনতা আনার জন্য ছনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। আর কিছু দূর পর পর মোমবাতি লাগানো হয়েছে। খুব সুন্দর মোহনীয় এক পরিবেশ।

ফারহান একটা কাঁচের বোতল হাতে দাঁড়ালো । কাঁচের বোতল টাকে মাইক্রোফোন এর মতো ব্যবহার করতে লাগলো।
ফারহানের কান্ডে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

ফারহান গলা ঝেরে বলল

” এটেনশন এভরিওয়ান। এখানে অদূর পর্যন্ত যাদের দেখা যাচ্ছে তাঁরা সবাই কাপল । যদি ও দুজন গুরুজন কে এখানে স্থান দেওয়া হয়েছে। ”

এই টুকু বলেই ফারহান হাসলো। সবাই মুখ চেপে হাসছে। আরিফ মুখে কুলুপ দিয়ে আছে। এদের সাথে লাগলেই এরা ওকে পঁচাবে। কিন্তু মনি নিজেকে সামলাতে পারলো না।
গড় গড় করে বলল
_ মানছি আমরা সম্পর্কে বড় তবে এখানে এক নির্লজ্জ মানুষ ওহ আছে। সবার ছোট হয়ে ও যে সবার আগে বিয়ে করে নিয়েছে। তাকে তো বুড়ো পাবলিক বলা হবে।

মনির কথার সাথে সবাই সায় জানালো। এমনকি ফারাবি ও সায় জানালো। অগত্যা ফারহান স্যালুট এর মতো করে বলল
_ আমার বউ যেখানে রাজি যেখানে আমি ধরি কি করে বাজি ?
যাও যাও আমরা ছোট হয়ে ও বুড়ো বুড়ি ই ভালো।

ফাহিম ব্যগ্র কন্ঠে বলল
_ আম কনফিউজড। সব দিক দিয়েই আমি ছোট আমাকে কেন বাতিলের খাতায় ফেললে ।
সবাই কে চার শো চল্লিশ ধারায় মামলা দেওয়া হলো।

_ ঠিক ঠিক ।

ফারাবি সম্মতি জানিয়ে ই ফাহিমের সাথে হাই ফাইফ করলো। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে হো হো করে হেসে উঠলো।

একে একে গান বাজনা চলতে থাকলো। ফাহিম আর রিমি কে কাপল ডান্স এ জয়েন করতে বলা হলো। রিমির অস্বস্তি দেখে ফাহিম নাকোচ করে দিলো। কেউ জোড় করলো না। রিমি ফাহিমের দিকে কৃতঙ্গতার চোখে তাকালো।

ফারহানের হাতে হাত রেখে ফারাবি ডান্স করতে লাগলো। দুজনের চাহনি এতো টাই গভীর যে একে অপরের থেকে চোখ ই সড়ছে না।
চাঁদ টা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে তাই মেঘ কে আলিঙ্গন করে নিজে কে আড়াল করে নিলো । ঝুম বৃষ্টি তে ছেয়ে গেল দুজনের সর্বাঙ্গ । তবু ও দুজন দুজনার থেকে চোখ সড়ালো না।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here