#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,58,59
#ফাতেমা_তুজ
#part_58
অনু হঠাৎ করেই ফারহানের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। আর এলোমেলো ভাবে ফারহানের গাঁয়ে চুমু খেতে থাকে। ফারহানের ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটাকে থাপ্পড় মেরে দিতে।
কিন্তু হাত ছিলো বাঁধা । ফারহান চিৎকার করে উঠে। অনু ছিটকে সরে যায়। ফারহান বার বার বলে বাঁধন খুলে দিতে। প্রথম দিকে অনু খুলতে চায় না।
কিন্তু পরে বাঁধন খুলে দেয়। ফারহান কিছু বলবে তাঁর আগেই আবার ঝাঁপিয়ে পরে। দু হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় অনু কে।
অনু আবার আসে। ফারহানের খুব রাগ উঠে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঁচু করতেই মিস্টার রহমানের কন্ঠ ভেসে আসে।
ফারহান পেছন ঘুরতেই লোকটা বলল
_ ওয়েলকাম মাই ডিয়ার সান। আমার মেয়ে কে ভালোবাসার জন্য তোমাকে এনেছি। মারার জন্য নয় , তাই সাবধান। একটা ফুলের টোকা ও যেন না পরে।
আমার প্রিনন্সেস এর গাঁয়ে আঘাত করার কথা ভুলেও স্মরণ করো না।
_ নো মোর ওয়ার্ড ডেড। ওহ আমাকে হাজার বার মারবে তুমি কিচ্ছু বলবে না।
যাও এখান থেকে । আমি শুধু ওর সাথে কথা বলতে চাই।
_ মামনি
_ নো মোর টক ডেড। প্লিজ লিভ দ্যা রুম।
মিস্টার রহমান চলে যায়। অনু ফারহানের দিকে এগিয়ে আসে।
ফারহানের বুকে মাথা রাখে। ফারহান ছিটকে দূরে সরে যায়।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। অনুর মুখে তখনো হাসি। ফারহান হাত উঠিয়ে ও নামিয়ে নেয়।
মেয়েটা পাগলামি শুরু করে দেয়। ফারহান চিৎকার করে উঠে। এই সামান্য মেয়ের শরীরে এতো শক্তি ফারহান ভাবতে ও পারে না।
হিমসিম খেতে থাকে । ফারহানের চিৎকারে মিস্টার রহমান চলে আসেন। অনু কে বুঝিয়ে নিয়ে যান। ফারহানের চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে ।
চিৎকার করে বলে
_ আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি ?
_ আমার মেয়ে। শুধু মাত্র আমার অনুর জন্য তোমাকে নিয়ে এসেছি আমি।
ওহ তোমাকে ভালোবাসে।
_ আপনি কি জানেন না আমি যে ম্যারিড ?
_ তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এসব করেছি ?
তোমাকে আমার প্রয়োজন। তোমার কাছে চব্বিশ ঘন্টা সময় আছে ভেবে নাও তুমি কি করবে ।
আমার মেয়েকে আগলে রাখবে নাকি নিজের স্ত্রী কে ফাঁসির দড়ি তে
ফারহান চিৎকার করে উঠে। ফারাবির নামে একটা বাজে কথা শুনতে চায় না ওহহ।
লোকটা বাঁকা হেসে চলে যায়। ফারহান বুঝতে পারে এই ষড়যন্ত্র টা বেশ গভীর । তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে।
অনু কে দেখেই ফারহান বেশ অবাক হয়েছে। এই মেয়ের জন্যই আজ এতো ঝামেলা ।
ফারহান যথাসম্ভব নিজেকে ঠান্ডা রাখে।
মিস্টার রহমান কে বলে অনুর সাথেই থাকবে ওহ।
তবে ফারাবির কোনো রকম ক্ষতি যেন না হয়।
মিস্টার রহমান রাজি হয়ে যান। আর ফারহান নাটক শুরু করে। দীর্ঘ এক মাস অনুর পাগলামি সহ্য করে।
তবে যথাসম্ভব ওর থেকে দূরে থাকে। অনু কে ভুল বুঝিয়ে ওরা শপিং মলে যায়।
আর ঐ খান থেকেই ফারহান পালিয়ে যায়।
অনেক কষ্টে এখানের বিখ্যাত এক বিজন্যাস মেন এর সাথে দেখা করে।
লোকটা সম্পর্কে ফারহান অনেক কিছু জানে। হেল্প ফুল একজন ব্যক্তি। খ্রিস্টান ধর্মের হলে ও ফারহানের প্রতি সদয় হন ওনি।
সেই থেকে ফারহান ওনার কাছে আছে। ওনি ফারহান কে সর্বোচ্চ সাহায্য করে যাচ্ছেন।
*
বর্তমান
ফারাবি ঘুমিয়ে আছে। রুমের কলিং বেল বাজতেই ফারাবি পিট পিট করে তাকায়।
শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানি গালে লেপ্টে আছে। মুখ টা কেমন টান টান লাগছে । তবু ও সে দিকে পাত্তা দিলো না। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। প্রান হীন অস্তিত্ব নিয়ে দরজা খুলতেই অবাক হলো। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষন এভাবেই কেঁটে গেল। হঠাৎ করে ফারাবি আপু বলে আর্তনাদ করে উঠে।
মেয়েটি দু হাতে ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফারাবির কান্নার বেগ যেন থামছেই না।
নাক টেনে উচ্চারণ করলো।
_ আপু ওনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। আমাকে ভালোবাসেন না ওনি। দেখো আমি এখনো ওনাকেই ভালোবাসি খুব ভালোবাসি ।
কিন্তু ওনি আমাকে ভালোবাসলেন না। কেন ভালোবাসলেন না আমায় ?
অনু ফারাবির চোখ মুছিয়ে দেয়। বোনের মায়া ভরা মুখে চুমু দেয়। চোখ দুটো ভিজে গেছে। ফারাবি আবার আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে। অনু তার স্নেহের হাতে ফারাবির পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।
_ আপু এসে গেছি তো ? দেখবি তোর সব কষ্ট দূর করে দিবো। একটু ও কষ্ট লাগবে না তোর।
_ আমি ওনাকে চাই আপূ। ওনি ই আমার কষ্টের এক মাত্র ঔষধ।
অনু ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফারাবির বাহু ঝাঁকিয়ে বলে
_ আপু হই তোর । একটু হলে ও তো দায়িত্ব আছে তাই না ?
তোর কষ্ট আমি কি করে দেখি বল তো ? আমি তোকে সব কষ্ট থেকে মুক্তি দিবো।
জল ভরা নয়নে ফারাবি উচ্চারন করে আপু। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নেয় অনু।
হাত বুলিয়ে বলে
_ দেখ একদম কষ্ট হবে না তোর। তোর সব কষ্ট দূর করে দিবো আমি। আর আমরা সবাই খুব ভালো থাকবো।
এটাই তো চাস তুই ?
ফারাবি কাঁদতে থাকে। অনু ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। জিন্স এর পকেট থেকে ধারালো নাইফ বের করে।
চোখ বন্ধ করে ফারাবির পিঠে ঢুকিয়ে দেয়। ফারাবির চোখ লাল হয়ে উঠে। পিঠ থেকে লাল তরল গড়াতে থাকে।
চোখ দিয়ে অজ্রস নোনা জল নেমে যায় ।
অনুর দিকে ছলছল নয়নে তাকায় ফারাবি । অনুর চোখে জল মুখে হাসি। কম্বিনেশন অনুভূতি তে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।
কষ্টের সাথে প্রাপ্তির মিল রেখা ও রয়েছে।
হাত থেকে নাইফ টা পরে যায়। মুহুর্তেই ফারাবি চোখ বন্ধ করে নেয়।
_ ফারাবিইইইইইই
ফারহান আর্তনাদ করে উঠলো । শরীর ঘামে চুপচুপ করছে। সময় রাত তিনটে বেজে আটত্রিশ মিনিট। বুক এখনো কাঁপছে । তীব্র গতিতে উঠা নামা করছে হৃদস্পন্দন । ফারহান নিজের চুল খামচে ধরলো।
স্বপ্ন ছিলো এটা। তবু ও নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। ফারাবির জন্য মন টা উতলা হয়ে উঠেছে।
ধীর পায়ে ব্যলকনিতে চলে আসলো। অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরের বিশাল এক ভবনে সে থাকে।
চারিদিকে শুধুই ঝকঝকে আলোর বাহার। ফারহানের মন শান্তি পেল না। অনু কে নিয়ে ভীষন ভয় হচ্ছে।
মেয়েটা ফারাবির কোনো ক্ষতি করে দিবে না তো ?
নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যে ছোট বোন কে এতো বড় ষড়যন্ত্রে ফাসাতে পারে সে খুন যে করবে না তাঁর ই বা কি গ্যারান্টি ?
খুন কথা টা মনে হতেই ফারহানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।
না এ কি ভাবছে ওহ ? ফারাবির কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
কিছুতেই মেয়েটার ক্ষতি হতে দিবে না। ফারহান আর এক মুহুর্ত ও সেখানে দাঁড়ালো না। দ্রুত মিস্টার স্টিফেন এর রুমে চলে গেল।
ফারাবির বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমানের পৃষ্ঠে প্রমান দাঁড় করাতে হবে।
তাঁর পর অনু আর মিস্টার রহমান এর বিষয় টা দেখে নিবে।
এদের যোগসূত্র ফারহানের কাছে অস্পষ্ট। যে করেই হোক সব কিছু ওকে জানতেই হবে।
*
রিমির ডেলিভারি হয়ে গেছে। ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছে রিমি।বাড়ির সবাই বেশ খুশি।
সব থেকে খুশি ফাহিম। লাজ লজ্জা ভুলে সে কেঁদেই দিলো। রিমি ছলছল নয়নে তাকালো। ছেলেটা এমন কেন ? এই যে হুটহাট যা তা করে বসে।
এতো ভালোবাসার দরকার কি ? রিমির ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। ছেলেটার প্রাপ্য ভালোবাসা আদৌ কি কখনো দিতে পাবরে ওহ ?
ফারাবি দের বাসার সকলে আজ ফারহান দের বাসায় এসেছে। পারিবারিক ভাবেই ধুম ধাম করে অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফারাবির কানে সে শব্দ এখনো পৌছায় নি। মেয়েটা ফারহানের ছবি জড়িয়ে বসে আছে।
এতো আনন্দ , উল্লাস হলে ও ফারাবির সে দিকে ধ্যান নেই।
ফারহানের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের স্মৃতি গুলো ভাবছে। হুটহাট কোলে তুলে নেওয়া। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা। এমনকি জোড় করে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করানো।
সব কেমন রঙিন তাই না ? আজ আছে কাল নেই। মানুষ বড্ড অভাগা প্রানী।
দরজায় নক পরতেই ফারাবি উঠে দাঁড়ালো। চোখের পানি মুছে নিয়ে ডোর খুলে দিলো।
বাবা কে দেখে হালকা হাসার চেষ্টা করলো। ফারাবির বাবা ছলছল নয়নে মেয়ের দিকে তাকালেন।
মেয়ে কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলেন না।
ফরহাদ চৌধুরী পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফারাবির দিকে এগিয়ে আসলেন। স্নেহের হাত টা মাথায় রেখে বললেন
_ আজ অনেক সুখের সংবাদ রে মা। তুই যদি আজ ও মন মরা হয়ে থাকিস তাহলে কি করে হয় বলতো ?
_ কিসের সংবাদ বাবা ? নিচ থেকে সোর গোল শোনা যাচ্ছে ।
_ রিমির ছেলে হয়েছে।
ফারাবির অধর কোনে হাসি ফুটে উঠলো। প্লাস্টিকের হাসি নয়। মন থেকে প্রান খোলা হাসি।
ফারাবির বাবা অবাক চোখে তাকালেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
_ ফারাবি নিচে যাবি মা ?
_ কেন যাবো না আব্বু ? অবশ্যই যাবো। আসো তোমরা ।
ফারাবি হন হনিয়ে বের হতে নিলো। সবাই অবাক চোখে তাকালো। দরজায় গিয়ে ফারাবি থেমে গেল।
এক মুহর্তের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিলো পেছনে ফেলে আসা কালো অতীত।
রুমের চৌকাঠ পেরোলো না আর। পিছিয়ে ব্যলকনিতে চলে আসলো। ফরহাদ চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কুলঙ্গার ছেলেটা সব শেষ করে দিলো। ফুলের মতো মেয়ে টাকে এমন ভাবে নিঃশ্বেষ করে দিলো যে দশ টা মাস ধরে মেয়েটা এক ঘরে বন্দি ।
ঘন্টা খানেক পর ফারাবি শাওয়ার থেকে বের হলো। চিৎকার করে কেঁদেছে আজ। বুকের ভেতর যন্ত্রনা হচ্ছে খুব। কেন এমন টা হলো ?
রিমি কে বেডে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো। রিমি ছলছলে নয়নে তাকিয়ে বলল
_ আমার ছেলেকে দেখতে যাবি না তুই ? আমার বিয়ের দিন কি বলেছিলি মনে আছে তোর ?
ফারাবি উত্তর দিলো না। চোখের সামনে ভেসে আসলো রিমির বিয়ের ঘটনা। প্রচন্ড হেসেছিলো সেদিন। রিমির হাত দুটো ধরে আমুদে স্বরে বলেছিলো তোর বেবি হলে নামটা কিন্তু আমি ই রাখবো।
সেটা শুনে ফারহান ঈশারা করে তাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছিলো।
কি দারুন ই না ছিলো মুহুর্ত গুলো।
_ যাবি না ছোট ছোট হাত পা গুলো দেখতে ?
_ রিমি
_ আমার ভাই না হয় বেইমানি করেছে। তুই ওহ কি
_ রিমি । তোর ভাইয়ের নামে আর একটা বাজে কথা শুনতে চাই না আমি।
ফারাবির হাত দুটো জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো রিমি। মেয়েটার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না আর। তাঁর ভাই সত্যি ই এমন টা করতে পারলো ?
এতো ভালোবাসা দেখিয়ে চলে গেল।
_ তুইইই যাহহ আমমমি আসছি।
কথাটা কাঁপা স্বরেই বললো ফারাবি। রিমির চোখে মুখে আনন্দ এসে ভর করেছে। ফারাবি দু চোখ মুছে নিয়ে আশস্ত করতেই রিমি চলে গেল।
** বাই দ্যা রাস্তা বোনাস পার্ট টা কেমন লাগলো ? ?
**প্যাঁচ গুলা লাগাইতাম না। কে যেন কমেন্ট বলছিলো প্যাঁচ লাগাতে। তাই হঠাৎ করেই প্যাঁচ গুলা লাগাইয়া দিছি। ? নেক্সট পার্ট এ সব ক্লিয়ার হবেন ।
ফারাবির সাথে অনুর সম্পর্ক টা একটা কারনে দিতে হয়েছে। পরশু সেটা বলবো।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_59
দেড় মাস কেঁটে গিয়েছে। আজ বাদে কাল ফারাবির চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকী। ফারাবির মুখে হাসিরা ঝিক ঝিক করছে। বিবাহ বার্ষিকীর জন্য নয় রিমির ছেলের জন্য। পুঁচকো টার নাম রাখা হয়েছে বিহান। ফারাবি আর ফারহানের নামের শেষ থেকেই নাম টা রেখেছে মেয়েটা। সারা দিনের অর্ধেক সময় পুঁচকো টাকেই নিয়ে থাকে। ছোট ছোট হাত পা গালে ছুঁইয়ে নেয়। ফারহানের কথা গুলো পুঁচকো টাকে শোনায়।
পুঁচকো টা বুঝে কি না তা ওর জানা নেই। তবে ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে হাসে। তখন ফারাবি মায়া ভরা নয়নের তাকিয়ে থাকে। কলেজ থেকে নোটিশ এসেছে। বোর্ড এক্সাম নিয়ে ফারাবি কোনো মতামত দেয় নি। নোটিশ টা খুলে ও দেখে নি।
এখন তাঁর অস্তিত্ব এই বাড়ির মাঝেই। এই বাসা থেকে এখনো বের হয় নি মেয়েটা। পুঁচকো টা কে জড়িয়ে সারা বাসা ঘুরে বেড়ায়।
ফাহিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েক মাস এই বাসাতেই থাকবে।
কারন ফারাবি এখনো স্বাভাবিক নয়।
_ রিমি একটু শুনবে ।
_ কি হয়েছে ?
_ আমি একটু অফিস যাচ্ছি। আজ সন্ধ্যা তে কোনো এক গেস্ট আসার কথা। আম্মু কে বললাম বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করবো নাকি।
কিন্তু নাকোচ করে দিলো। তুমি একটু সাহায্য করো।
আর পুঁচকো কি ফারাবির কাছে ?
_ হ্যাঁ। বারান্দায় বসে আছে।
_ আচ্ছা আমি তাহলে আসছি। আর শোনো সময় মতো খেয়ে নিও।
আজকাল বড্ড অযত্নে যাচ্ছো তুমি।
প্রতিউত্তরে রিমি হাসলো। এতো কেয়ার আর নিতে পারে না মেয়েটা।
এতো এতো ভালোবাসা উপেক্ষা করে থাকতে পারে না রিমি। তাই ফাহিমের একটা ডাকেই ছুটে চলে যায়।
কি অদ্ভুত , যাকে ভালোবেসে ছিলো সেই ধোঁকা দিলো। আর যাকে অবহেলা করেছিলো সেই আগলে নিলো ।
রিমি চোখের কুর্নিশের পানি টুকু মুছে নিয়ে হাঁটা লাগালো।
কোন গেস্ট আসছে আজ ?
*
” পুঁচকো শোনা জানিস তোর মামা আমাকে অনেক ভালোবাসে। রাত একটা নেই দুটো নেই আমার কাছে চলে আসতো।
সবার থেকে প্রটেক্ট করতো। এতো ভালোবাসা দিয়েছে যে আমি ওনাতেই আটকে গেছি।
জানিস খুব আগলে রাখতো আমায়। তুই ও কিন্তু তোর মামার মতো হবি। বউ কে অনেক ভালোবাসবি। তবে কোনো দিন ছেড়ে যাস না। তোর মামা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। খুব ভালোবাসি আমি , কিন্তু ওনি আমাকে ভালোবাসলেন না।
চলে গেলেন আমায় রেখে। ”
ফারাবি আর্তনাদ করে উঠলো। ছোট্ট বাচ্চা টা সামান্য ভয় পেয়ে গেল। ফারাবি নাক টানতে টানতে বলল
_ ওকে রিলাক্স বেবি আমি আর কাঁদছি না। তুই খুব ভালো হ। মামার মতো খুব ভালো হবি।
বুঝেছিস , আমি জানি তোর মামা আমাকে খুব ভালোবাসে।
_ ফারাবি।
কারো ডাকে ফারাবি নড়ে চড়ে বসলো। চোখ দুটো মুছে নিয়ে বলল
_ ছোট চাচ্চু । কখন এলে ?
_ অনেক ক্ষণ।
_ ওহহ।
ফারাবি মাথা নিচু করে নিলো। আরিফ মিনিট পাঁচেক বসে রইলো। মেয়েটার কষ্ট দেখে বুকে ব্যথা অনুভব হলো।
কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারলো না। মলিন হেসে চলে আসলো।
বিকেলের দিকে পুঁচকো কে নিয়ে করিডোর দিয়ে হাটছিলো ফারাবি। বাচ্চা টা ঘুমিয়ে আছে অনেক ক্ষন। ফারাবির মনে হলো বাচ্চা খুব ক্ষিদে পেয়েছে। পুচঁকোর গালে চুমু খেয়ে ফারাবি নিচে নেমে আসলো।
ড্রয়িং রুমে কাউ কে দেখতে পেল না। ডাইনিং এ গিয়ে দেখলো তনি ডাইনিং গুছিয়ে রাখছে।
হরেক রকমের খাবার। এতো আয়োজন সচরাচর কোনো গেস্ট আসলেই হয়।
আজ কি কেউ আসছে ?
ফারাবি নিজের বিস্ময় ধরে রাখতে পারলো না।
বাচ্চা টাকে বেবি দোলনায় শুইয়ে দিলো। তনি তখনো কাজের প্রতি গভীর মনোযোগী।
ফারাবির কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
_ ভাবি কেউ আসবে আজ ?
_ হ্যাঁ । বাবার বন্ধু আসবেন সাথে ওনার মেয়ে।
ফারাবি ছোট করে হাসলো। আর জিঙ্গাসা করার ইচ্ছে হলো না।
সন্ধ্যার দিকে ড্রয়িং রুমে শোরগোল শোনা গেল। ফারাবি তখন ফারহানের শার্ট জড়িয়ে আছে। ফারহানের শরীরের গন্ধ লেগে আছে এতে।
তাতেই মেয়েটার পাগল প্রায় অবস্থা। দরজা লক না থাকায় করিডোর দিয়ে আওয়াজ গুলো সরাসরি কানে এসে লাগছে।
ফারাবির ভ্রু যুগল না চাইতে ও বেঁকে গেল। বেশি আগ্রহ না থাকায় দরজা টা অফ করে দিতে গেল।
দরজার কাছে এসেই থমকে গেল। চোখ দুটো ভিজে উঠলো। অনু এসেছে , ফারাবি একটু হাসার চেষ্টা করলো।
অনু এসেই ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি কিছু বলতে পারলো না।
_ কেমন আছিস বনু ?
_ আছি যেমন দেখছো। তুমি কেমন আছো ? কত দিন পর আসলে ?
_ হ্যাঁ ।
_ আমাদের গেট টুগেদার এর দিন আসার কথা ছিলো তোমার । আসলে না তো ।
কথা টা বলার সময় ফারাবির গলা কেঁপে উঠলো। সেই দিন টাই তো ছিলো ওর জন্য মহা কাল । ফারাবি একটু হেসে বলল
_ তা খবর কি তোমার ?
_ ভালোই চলছে সব। তোর কথা টা শুনে খারাপ লেগেছে খুব।
ফারহান এমন করবে সত্যিই ভাবতে পারি নি।
ফারাবি মৃদু হাসি ফুটালো। কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল
_ আঙ্কেল এসেছে ?
_ হুমমম।
_ আব্বু জানে তোমরা যে আসবে ?
_ উহহুহ আব্বু কে জানানো হয় নি। সারপ্রাইজ দিবো ভাবলাম।
ফারাবি মৃদু হাসলো। অনু পেছন ঘুরে নিয়ে বলল
_ আম্মু তোকে খুব ভালোবাসে তাই না রে ?
_ তোমাকে ওহ বাসে।
_ মৃত ভেবে ?
_ আপু।
অনু জল ভরা নয়নে হাসলো। ফারাবির দিকে একটা চকলেট বক্স এগিয়ে বলল
_ তোর ফেবরেট কিটক্যাট।
কিটক্যাট দেখেই ফারাবির বুক ভারী হয়ে উঠলো। ফারহানের স্মৃতি গুলো কেমন মাথায় চেপে আসছে।
বুকে যন্ত্রনা হচ্ছে। ছটফট করতে লাগলো। অনু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ফারাবি অস্ফুটন স্বরে ফারহানের নাম আওড়াতে লাগলো। অনু জাপটে ধরলো মেয়েটাকে। ফারাবি ততক্ষণে জ্ঞান হাড়িয়েছে।
*
জ্ঞান ফিরে ফারহান কে দেখেই ফারাবি চমকে গেল। ফারহান তাঁর হাত দুটো মুঠো বন্দী করে আছে। ফারাবির মাথায় বেশ যন্ত্রনা করতে লাগলো। এক হাতে মাথা চেপে ধরে উচ্চারন করলো
_ ফারহান।
ফারাবির কন্ঠ শুনেই ধুরমুরিয়ে উঠলো ফারহান। অশ্রু শিক্ত নয়নে ব্যস্ত হয়ে বলল
_ জান তুই ঠিক আছিস ? একদম প্রেসার নিবি না এখন। রেস্ট নে আগে।
ফারাবি কিছু বলতে যাচ্ছিলো। ফারহান থামিয়ে দিলো। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি ডুকরে কেঁদে উঠলো। ততক্ষণে ফারহানের হৃদয়ে ভাঙচুর শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটার মুখে অজ্রস চুমু খেয়ে বলল
_ আমি আছি তো জান। একদম ভাববি না। আমি তোকে একা ফেলে যাবো না আর।
অনেক ভালোবাসি জান ।
ফারাবি খামচে ধরলো ফারহানের
শার্ট। কেঁদেই যাচ্ছে। একবার ওহ প্রশ্ন করলো না কেন তাকে ফেলে চলে গেল। বার বার ফারহানের শরীরে হাত বুলাতে লাগলো। ফারহানের চোখে পানি চিক চিক করছে।
মেয়েটাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ঘন্টা খানেক পর ফারাবি শান্ত হলো। এখনো ফারহানের বুকে মাথা গুঁজেই আছে। মেয়েটা এমন করছে যেন ছেড়ে দিলেই ফারহান হারিয়ে যাবে।
_ আসবো ?
ফারহান একটু হাসার চেষ্টা করে বলল
_ আয় ফরমালিটি করার দরকার নেই।
রিফাত প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলল
_ নিচে আয়। সবাই বসে আছে তো।
ফারহান সম্মতি জানালো। কিন্তু ফারাবি দু হাতে আঁকড়ে ধরলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারাবি কে বোঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ফারাবি বুঝলো না।
অবশেষে ফারাবি কে নিয়েই নিচে চলে আসলো।
অনু মাথা নিচু করে কেঁদে চলেছে। তাঁর ই পাশে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে হামিদ রহমান। সবার মুখে চিন্তার ছাঁপ। কারন ফারহান কিছু ক্ষণ আগে বোম ফাটিয়ে গেছে।
ফ্ল্যাশব্যাক
ফারাবি জ্ঞান হারাতেই বেডে শুইয়ে দেয় অনু। মেয়ে টাকে হঠাৎ জ্ঞান হারাতে দেখে সামান্য অবাক হয়।
নিচে আসে সবাই কে বলার জন্য। ড্রয়িং রুমে এসে মিসেস চৌধুরী কে বলতেই ওনি ছুটে আসেন।
কিন্তু তাঁর ই পেছন থেকে সব টা শুনে নেয় ফারহান।
বিডি তে এসেছে আজ সাত দিন। ওদের আসার খবর পেয়েই বাসায় চলে আসে।
কারন সমস্ত প্রুভ জোগাড় করে ফেলেছে ওহ।
ফারাবি জ্ঞান হাড়িয়েছে শুনে এক মুহূর্তের জন্য নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে ফারহান। চিন্তিত মুখে অনু পেছন ঘুরতেই দেখে ফারহান কে।
পাগলের মতো ছুটে যায় ফারহানের দিকে। অনু কে ধাক্কা মেরে ফেলে যায় ফারহান। অনুর আর্তনাদে সবাই ছুটে আসে। ফারহান এক বার ঘুরে শুধু বলে
_ ওকে কোথাও যেতে দিও না। এই মেয়েটাই সব কিছুর জন্য দোষী।
তারপর ই নিজের রুমে আসে ফারহান। নিস্তেজ অবস্থায় ফারাবি কে দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়।
রোমা চৌধুরী ছেলে কে দেখে অবাক হোন। বিস্ময়ে কিছু বলতে ও পারেন না।
ফারহান ধরা গলায় বলে
_ সবাই চলে যাও এখন।
কেউ প্রশ্ন করার সাহস পায় নি আর। রুম থেকে চলে যায় সবাই। আর ফারহান তাঁর প্রেয়সীর হাত জড়িয়ে বসে থাকে।
বর্তমান
সকলের মুখে চিন্তার ছাঁপ । ফারাবি কে ফারহানের পাশে দেখে অনুর গা জ্বলে উঠে। তিক্ত মেজাজে ছুটে আসে ওদের দিকে। সবাই প্রচন্ড অবাক হয়। ফারহান দুটো লোক কে ইশারা করে অনু করে ধরতে। ফারাবি অবাক কন্ঠে বলল
_ আপু।
অনুর রাগ সহস্র গুন বেড়ে যায়। নিজেকে ছাড়নোর চেষ্টা করে।
_ ডেড আমাকে ছাড়তে বলো। আমি এই মেয়েটাকে মেরে ফেলবো। আমার ফারহান কে জড়িয়ে আছে ওহ। ওকে তুমি আটকাও।
হামিদ রহমানের বুক ফেঁটে যায়। আদরে বেড়ে উঠা মেয়ে কে এমন অবস্থায় দেখে আর থাকতে পারেন না।
ছুটে আসে ফারাবির কাছে। ফারাবির পা জড়িয়ে ধরে।
ফারাবি অবাকের শীর্ষে চলে যায়। বাকি সবাই যেন কোনো ঘোরের মাঝে আছে।
ফারহান মেয়েটাকে এক হাতে জড়িয়ে এক সিঁড়ি উপরে উঠে যায়।
হামিদ রহমান জল ভরা নয়নে আবেদন করেন।
_ ফারাবি আমার মেয়ে টাকে বাঁচা মা। ওহ খুব ভালোবাসে ফারহান কে।
ভিক্ষে দে আমাকে। একজন বাবার হাত ফিরিয়ে দিস না মা।
_ আঙ্কেল !
ফরহাদ চৌধুরীর হাত কাঁপছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তবু ও চুপ করে আছেন।
ফারহান নিজেকে শান্ত করে বলল
_ ফারহান কোনো জিনিস নয় যে ভিক্ষে দিবে। আর কতো ভিক্ষে নিবেন বলুন তো ?
ফারহানের জন্য শুধু ফারাবি আর ফারাবিই থাকবে।
এই বিষয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই মিস্টার রহমান।
অনুর পাগলামি বেড়ে চলেছে। ফারাবি অবাক হয়ে বলল
_ আপু তুমি
_ ওকে ছেড়ে দে তুই । দূরে সরে যাহ না হলে সব ধ্বংস করে দিবো আমি।
ফারাবি শিউরে উঠে।ফারহানের শার্ট খামচে ধরে। ফারহান নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।
মেয়েটার মস্তিষ্ক ঠিক থাকলে সত্যিই থাপ্পড় মেরে দিতো।
ফারাবি নিজেকে ছাড়িয়ে বাবার কাছে যায়। ফারাবির বাবা মাথা নিচু করে আছেন।
_ আপু এমন কেন করছে আব্বু ? আমাকে মেরে ফেলতে চায় ওহ ?
_ ফারাবি মাহহ।
_ কেন এতো রাগ আমার উপর ? আমি কি করেছি ?
অনু তাচ্ছিল্য হাসে। সেই হাসি তে যেন বিদ্রুপ আর বিদ্রুপ। ফারাবি এগিয়ে যায়। ফারহান বাঁধা দেয়। ফারাবি শুনে না। অনুর বাহু ধরে চিৎকার করে উঠে।
_ কেন কেন এতো রাগ আমার উপর ? বোন হই না তোমার ?
_ বোন ?
অনু আবার অট্টো হাসি তে ফেটে পরে। ফারাবির কথায় সবাই একটু অবাক হয়। কিন্তু সেই বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করে না। ফারাবি কে টেনে নিয়ে আসে ফারহান। বুকে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে। চোখ দুটো ভিজে উঠে।
একে একে বলে গত সাড়ে দশ মাসের ঘটনা। সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। ফারাবির বুকে তুমুল ঝড় শুরু হয়। নিজের বড় বোন তাঁর সাথে এমন টা করতে পারলো ?
#বোনাস_পার্ট
ফারহান মেয়েটাকে ধরে রাখতে পারলো না। ফারাবি বাঘিনীর মতো তেড়ে গেল। অনুর দিকে হাত উঠিয়ে ওহ নামিয়ে নিলো। বড় বোন হয় তো।
_ রক্তের সম্পর্ক না থাকলে এখনি খুন করতাম। রক্তের টানে বেঁচে গেলে।
বড় বোন না হলে এখানেই মেরে দিতাম। আমার থেকে আমার স্বামী কে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই তোমার।
ফারাবির চিৎকারে সবাই কেঁপে উঠলো। বিস্ময়ে হতবাক সবাই । রক্তের সম্পর্ক টা বুঝে উঠলো না কেউ ই। ফারাবির মা ফাঁকা ঢোক গিলে নিলেন।
ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ধরা গলায় বললেন
_ রক্তের সম্পর্ক মানে ?
ফারাবি মাথা নিচু করে নিলো। চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে রাখলো। ফারাবির মা আবার প্রশ্ন ছুড়লেন।
মেয়ের নীরবতা দেখে চিৎকার করে উঠলেন। রাগে কটমট করতে করতে ফারাবির দিকে এগিয়ে আসলেন।
ফারাবির বাবা দু হাতে টেনে ধরলেন ওনাকে।
ওনার দু চোখের কোনে পানি জমেছে। ফারাবি পেছন ঘুরে কাঁদতে লাগলো। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ফারাবির বাবা কাঁপা কন্ঠে উচ্চারন করলেন
_ অনু আমার বড় মেয়ে।
এই কথাটাই ছিলো বোম ফাটিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ফারাবির মা এক ধাপ পিছিয়ে গেলেন।
ফারাবির বাবা বললেন
_ হামিদ আমার বন্ধু। অনু যখন পেটে তখন ওর স্ত্রী ওহ অন্তঃসত্ত্বা। ওর স্ত্রীর মানসিক সমস্যা ছিলো।
কিন্তু বাচ্চা আসার কথা শুনেই পাগলামি থেমে যায়। দূর ভাগ্য বসতো ওর স্ত্রীর পেটেই বাচ্চা টা মারা যায়। শুরু হয় আবার পাগলামি। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
হামিদ আসে আমার কাছে । কারন প্রচন্ড ভালোবাসতো ওহ ওর স্ত্রী কে।
আমার পা ধরে ভিক্ষা চায় অনু কে। আমি নাকোচ করে দেই।
কিন্তু ওর বাসায় গিয়ে ওর স্ত্রীর অবস্থা দেখে আমি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেই।
অনু হওয়ার আগের দিন ওর মায়ের প্রচন্ড ব্লিডিং হয়। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাই। নিজের মেয়ে কে মৃত ঘোষনা করি। আমি জানতাম ওর মা কাঁদবে কিন্তু নিজে কে শেষ করে দেওয়ার মতো পাগলামি করবে না।
তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুধু মাত্র এক জন কে প্রানে বাঁচানোর জন্য।
সময় কাটতে থাকে তবে সমস্যা হয় আমাদের বাচ্চা নিয়ে। অনু কে দিয়ে দেওয়ার চার বছর পর ও আমাদের বাচ্চা হচ্ছিলো না।
তখন অনুতাপের আগুনে জ্বলতে থাকি। ছুটে যাই নিজের মেয়ে কে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু হামিদ দিতে রাজি হয় না। চলে যায় অস্ট্রেলিয়া তে । তারপর দুই বছর পর আমাদের জীবনে ফারাবি আসে।
আমি আর ওদের নিয়ে ঘাঁটি নি। ভেবেছি এক জনের প্রান রক্ষা করেছি। তারপর কেঁটে যায় অনেক বছর।
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় হামিদ খরব দেয় ওর স্ত্রী মারা গেছে।
অনু কে ফিরিয়ে নিতে চাইলে হামিদ আমার কাছে ভিক্ষা চায়। বলে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে অনু কে । মেয়েটাকে নিয়েই বাঁচতে চায় । আমাদের কাছে তো ফারাবি আছে। কিন্তু ওর কাছে তো কেউ নেই।
তাই আমি বুকে পাথর চেপে দমে যাই। একদিন অনু কে দেখতে যাই অস্ট্রেলিয়া তে। আমাদের কথার সময় অনু সব শুনে ফেলে। তেরো বছরের কিশোরী তখন। আর্তনাদ করে উঠে মেয়েটা। অনেক বুঝাই আমরা। বায়না ধরে দেশে যাবে বোন কে দেখতে।
আমি ওহ তাই করি। এক বছর পর মেয়েটার সাথে ফারাবির দেখা করিয়ে দেই। সমস্ত পরিচয় বলে দেই ফারাবির কাছে । ফারাবি তখন আট বছরে বাচ্চা।কিন্তু আমার লক্ষী মেয়েটা সমস্ত কিছু চেপে যায় ।
বুঝদার ছিলো খুব।
কাউ কে কিছু বলে না। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
আমার বাসায় অনুর পরিচয় হয় আমার বন্ধুর মেয়ে হিসেবেই।
ফারাবির সাথে ওর সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিলো। দুজনের মাঝে দু বোনের সমস্ত গুন ই দেখা যায়।
এ সম্পর্কে আমি ওর মা কে ও জানাতে পারি নি।
কি বললতাম আমি ?
সবাই যেন নিরবতা পালনের ব্রত রেখেছে। ফারাবির মা থম মেরে গেছেন। এক মাত্র ফারহানের মাঝে কোনো চঞ্চলতা নেই।
অনু পাগলের মতো হাসতে লাগলো।
_ বোন তো আমি কখনোই মানি নি ওকে। ওর জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছে । সব দোষ ওর , আমার ফারহান কে ও কেড়ে নিলো ওহ।
_ আপু।
_ চুপ। আপু বলে ডাকবি না আমায়। তোর সাথে প্রথম বার দেখা করতে আসি যখন তখনি ফারহান কে দেখতে পাই। ভালোবেসে ফেলি। ডেড এর কাছে বায়না ধরি। ডেড ও সায় জানায়। দুরুত্ব রেখেই ভালোবেসে যাই। ফারহান কে কিছু জানাবো তাঁর আগেই শুনতে পাই ওহ সিঙ্গাপুর চলে গেছে।
ভেবেছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেই সমস্ত টা বলবো।
ডেড ওহ আমাকে তাই বলে। কিন্তু ওহ সিঙ্গাপুর থেকে আসে ঠিক ই কিন্তু আমার আর বলা হয় না।
কারন তিন বছর আগে তোকে বিয়ে করেছে ওহ।
অনুর চিৎকারে সবাই কেঁপে উঠে। ফারহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভালোবাসার অধিকার সবার আছে।
তবে ফারাবি কে ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করতে পারবে না ওহ।
ফারাবি সিঁড়ি তে বসে পরলো । শরীর কাঁপতে থাকে। ফারহান মেয়েটাকে বুকে টেনে নেয়।
কন্ঠে কাঠিন্য এনে বলল
_ সমস্ত কিছু জানার পর ও কিছু অজানা থেকে গেল না তো ?
সবাই অবাক চোখে তাকায়। ফারহান নিজের বাবার দিকে এগিয়ে যায়। এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
_ বন্ধুর কাছে ভাইয়ের স্ত্রীর জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলে তাই না ?
_ ফারহান।
_ আঙ্কেল কিন্তু খুব সুন্দর করে তোমাকে বাঁচিয়ে নিলো। তুমি স্বার্থপর ই রয়ে গেলে আব্বু।
ফরহাদ চৌধুরী মাথা নিচু করে নিলেন।ফারহান তাচ্ছিল্য হেসে বলল
_ নিজের ভাইয়ের স্বার্থের জন্য বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে গিয়েছিলে সেদিন ?
হামিদ রহমান নয় , তুমি গিয়েছিলে ভাইয়ের স্ত্রী কে বাঁচানোর জন্য অনু কে চাইতে তাই তো আব্বু ?
ফরহাদ চৌধুরী সামান্য নড়ে চড়ে উঠলেন। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না।
ফারহান বিদ্রুপের হাসা হেসে বলল
_ হামিদ রহমান নয় বরং ফরিদ চৌধুরী আপনার নাম তাই তো চাচ্চু ?
ওকে ওকে কাউকে কিছু বলতে হবে না আমি বলছি সবটা।
সবাই জানে আমার আব্বুর কোনো ভাই নেই। কিন্তু না ওনার ভাই ছিলো। ভালোবেসে বিয়ে করার জন্য দাদা বের করে দেন বাসা থেকে।
আব্বুর আদরের ভাই ছিলো চাচ্চু। লুকিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করতে থাকে। ভাইয়ের স্ত্রীর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় বাচ্চা হারিয়ে আবার পাগল ও হয়ে যান। আর আমার আব্বু ভাইয়ের স্বার্থের জন্য বন্ধত্ব কে কুরবানি করে।
তাই তো ?
ফারহানের চিৎকারে সবাই কেঁপে উঠে। ফরহাদ চৌধুরী অনুতাপের আগুনে পুড়ে যাচ্ছেন।
ফারহান চিৎকার করে বলল
_ অনুতাপের প্রয়োজন নেই মিস্টার চৌধুরী। তোমার পাপের শাস্তি তোমার ছেলে এই আমি গ্রহন করে নিয়েছি।
শান্তি পেয়েছো তুমি ?
_ ফারহান।
_ এনাফ ইজ এনাফ মিস্টার চৌধুরী। আর কতো ?
সবার কথার মাঝে অনু বাঘিনীর মতো ক্ষেপে যায়। দুজন মানুষ কে ঝটকা মেরে ফেলে দেয়। ফারাবির দিকে এগিয়ে আছে।
কিন্তু ফারহান আগলে নেয় মেয়েটাকে। না চাইতে ও থাপ্পড় মেরে দেয় অনু কে।
ছিটকে পরে অনু। ফারাবির মা মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদছেন।
যে সন্তান কে মৃত জেনে এসেছেন সেই সন্তান জীবিত।
ফারাবি এখনো আপু বলে আর্তনাদ করে উঠলো।
ফারহান দু হাতে বুকে জড়িয়ে নিলো ফারাবি কে।
এতো টাই শক্ত করে ধরলো যে ফারাবি ব্যাথা অনুভব করলো।
তবু ও বোনের দিকে হাত বাড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।
মুহুর্তেই মানসিক হসপিটাল থেকে মানুষ এসে হাজির হলো।
অনু কে টেনে নিয়ে গেল। মেয়ে টার মানসিক সমস্যা হয়ে গেছে। ফারাবি হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো।
সবাই কাঁদছে , কেউ অনুতাপে কেউ বা কষ্টের পাহাড়ে। ফারাবির কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফারহান বলল
_ বলেছিলাম না আপন মানুষ গুলোই আঘাত করে দেয়।
কাউ কেই চোখ বুঁজে বিশ্বাস করতে নেই। দেখলি তো আজ ?
বন্ধু কিংবা বোন সবাই স্বার্থপর হয়ে গেছে ?
_ ফারহান !
_ হুসসসস
ফারাবি দু চোখ বন্ধ করে নিলো। সবাই কে উপেক্ষা করে ফারহান তাঁর উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ফারাবির কপালে ছুঁইয়ে দিলো।
**সমাপ্তির জন্য এখানেই বেস্ট ছিলো ? কিন্তু একজন বলেছিলো ষাট পার্ট করতে।
তাই আরেকটা পার্ট কালকে পাবেন। ?
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে