#ফাগুন_ এলো_ বুঝি!
পর্ব–০৭
ক্লাস চলছে।পূর্নতা রুপ মাঝমাঝি সাড়ির এক বেঞ্চে বসে। পূর্নতা স্বভাবসুলভ শান্ত রইলেও রুপ মোচড়ামুচড়ি করছে একটু পরপর।পূর্ণতা অনেকক্ষন যাবত খেয়াল করলেও ক্লাশের জন্যে কথা বলতে পারলোনা।কিন্তু রুপের নড়নচড়ন কমার বদলে বাড়ছে।শেষ মেষ পূর্নতা বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘কি হয়েছে?এরকম করছিস কেন?
রুপ করুন কন্ঠে বলল ‘ আমার না খুব জল তেষ্টা পেয়েছে রে!
‘সেটা তো আমাকে বললেই হতো।
দাঁড়া।
পূর্নতা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করলো।খালি,শূন্য বোতল দেখে অবাক হয়ে বলল,
“একি!এটাতো খালি।কিন্তু আমিতো খাই-ইনি।তাহলে খালি কিভাবে হলো?
‘আমি খেয়েছি।
পূর্নতা আগের থেকেও অবাক হয়ে বলল,
‘এ্যা?এরপরেও তোর তেষ্টা পাচ্ছে?
রুপ মাথা নাড়লো।পাচ্ছে।
‘ঠিক আছে বোস।আমি ফিল্টার থেকে নিয়ে আসছি।
রুপ আটকে দিয়ে বলল,
“না।তোকে যেতে হবেনা।তুই গেলে আমাকে স্যার কি বললেন সেসব কে বোঝাবে?আমি যাচ্ছি,তুই মন দিয়ে স্যারের লেকচার শোন।
‘কিন্তু,স্যার রয়েছে,বেরোতে না দিলে?
রুপ ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
” হাহ! বাচ্চা মেয়ে।এটা তোমার স্কুল নয়। ইটস আ ভার্সিটি।ইচ্ছে মতো বেরোনো যায়,এন্ড ইচ্ছেমতো ঢোকা যায়।তবে হ্যা ক্লাশে কোনো ডিস্টার্ব করা চলবেনা বুঝলি?এই যে আমরা।ফিসফিস করে কথা বলছি?এটা স্যারের কানে গেলে ক্লাশ থেকে বের করে দেবে।
পূর্নতা মাথা নেড়ে বলল ‘তাইতো!বুঝেছি আমি।তুই যা।
রুপ খালি পানির বোতল নিয়ে ক্লাশরুম থেকে বের হলো।একদম কোনার দিকে একটা নীল রঙের প্লাস্টিকের ফিল্টার বসানো এখানে।রুপ এগোলো সেদিকে।
“এই যে অরুপসী!
রুপ মাত্রই পানি খেতে নিয়েছিল।নিজের নামের এমন কদুচ্চারন শুনতেই বিষম খেয়ে সব নাকে মুখে ঢুকে গেল।কাশতে কাশতে পেছন ফিরলো।রিদ দাঁত কেলিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
সামনে এসে বলল ‘ কি ব্যাপার? দিন দুপুরে বিষম খেলে যে?কেউ মনে করছে নাকি?
রুপ মুখ কুঁচকে বলল ‘ আপনি এখানে?
‘সিনিয়ররা যখন যেখানে ইচ্ছে সেখানে থাকতে পারে।তা কেমন আছো অরুপসী?
রুপ নাক ফুলিয়ে বলল ‘ কী হাবিজাবি নামে ডাকছেন?আমার নাম রুপ!
রিদ মাথা দোলাতে দোলাতে বলল
‘ যাহাই রুপ তাহাই রুপসী।আর রিদের কাছে রুপ মানেই অরুপসী।
রুপের চেহারা এইটুকু হয়ে এলো।ছেলেটা অরুপসী বলছে তাকে?কেন? সে কী সুন্দর নয়?এই ছেলের চোখে ন্যাবা হয়েছে। দেখতে পায়না নিশ্চয়ই।
বলল
‘আপনার একটা চশমা দরকার মিস্টার সিনিয়র।
রিদ ভাব নিয়ে বলল,
‘অরুপসীদের দেখতে চশমা লাগেনা।এখানে আগ্রহ কম থাকে।অন্ধ হলে তো আরো ভালো।
রুপ আঙুল উঁচিয়ে বলল ‘ আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন।
রিদ আঙুলটার দিক তাকাতেই রুপ নামিয়ে ফেলল।
‘এখনও তো কিছুই করলাম না।তাতেই এসব বলছো?
রিদ এক পা এগোতেই রুপ দুপা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
‘আপনার,আপনার এখানে কি চাই?এত সিনিয়র হয়ে একটা ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েকে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন,লজ্জ্বাও লাগছেনা?
রিদ কাঁধ উঁচু করে বলল,
‘লজ্জ্বা লাগবে কেন?ওটাত নারীদের ভূষন।আমিতো নারী নই অরুপসী।
রুপ চেঁতে বলল ‘ আবার?
রিদ সব কটা দাঁত দেখিয়ে বলল,
‘এক কাজ করো,বাড়িতে গিয়ে বেশি করে জনশন পাউডার মেখো।তাহলে রুপটা খুললেও খুলতে পারে।আমার কাছে যদি তোমাকে সুন্দর মনে হয়,তবে নাহয় তারপর থেকে অন্য নামে ডাকব?
রুপ বিরক্ত হয়ে অন্যদিক তাকালো,
‘কোনও দরকার নেই।আপনার কাছে আমি কী,তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।
‘তার মানে তুমি কিপ্টেও?মানে তোমার কাছে কিছুই নেই।যেটা যাবে আবার আসবে?
রুপ মুখ বিকৃত করে তাকালো।রিদ একটু ঝুঁকে এসে বলল,
গত বছর ডিবেটে প্রথম হয়েছিলাম।এ বছরেও পার্টিসিপেট করব।প্র্যাকটিস করতে হবেনা?
রুপ আর সহ্য করতে না পেরে বলল,
‘আপনার কি চাই বলুন তো!
রিদ ভ্রু ওঁচালো ‘ বলব?
আচ্ছা বলছি।
আমি আসলে তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
রিদের কন্ঠ সিরিয়াস।
রুপ তাকালো ‘ কি কথা?
রিদ বলল,
“বলতে চাইছি যে, সিনিয়রদের পাওয়ার দেখেছ? সেদিন তোমার বন্ধুর নাম জিজ্ঞেস করাতে কি ভাব দেখিয়েছিলে!অথচ দেখলে,পরের দিনই তোমার বন্ধুসহ তোমার নাম টাও জেনে এলাম।পুরো ক্লাসের সবার কথা তো বাদই দিলাম।
রুপ ভ্রু কুঁচকে বলল ‘তো?
‘তো এরপর থেকে সিনিয়রদের সমঝে চলবে।
রুপ মুখের ওপর বলল,
‘পারবনা।কী করবেন?
‘বেশ, পারতে হবেনা।
আমি বরং তোমার বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেব তার মেয়ে ভার্সিটিতে ক্লাশ বাং করে বোটানিতে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে আইস্ক্রিম খায়।
রুপ চমকে উঠল।এই কথা এই ছেলে জানল কী করে?তুঁতলে বলল,
‘বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছেন?
রিদ সুন্দর করে হেসে বলল ‘
কালো টপ্সে কিন্তু তোমাকে একদম পেত্নীদের মতোই লাগছিল অরুপসী!আমি একটা ছবিও তুলে রেখেছি।দেখবে?না থাক, একবারে তোমার বাবাকেই দেখাব।
রুপ পাত্তা নিয়ে বলল ‘ বললেই হলো।আমার বাবার নম্বর কোথায় পাবেন শুনি?
রিদ চুল গুলো ওপরে ঠেলে বলল,
‘অফিস রুম থেকে নিয়েছি।লাস্ট ডিজিট ০৫১ না?
রুপ চোখ বড় করে ঢোক গিলল।রিদ বাঁকা হেসে বলল,
‘এবার থেকে দেখা হলেই সালাম দেবে।সুন্দর করে জিগেস করবে কেমন আছেন ভাইয়া!মনে থাকবে?
রুপ কাঁদোকাঁদো চেহারায় মাথা নাড়লো।
‘গুড গার্ল।
একবার জিজ্ঞেস করোতো দেখি…
কি হলো?জিগেস করো..
রুপ ঠোঁট উলটে বলল ‘ কেমন আছেন ভাইয়া?
রিদ লম্বা শ্বাস ফেলে গম্ভীর কন্ঠে বলল ‘ ভালো আছি।আর ক্লাসের সময় বাইরে কি করছো?যাও ক্লাশে যাও।
রুপ কটমট করতে করতে ক্লাসের দিক হেটে গেল।রিদ সেদিক চেয়ে শব্দ করে হেসে উঠল।
রুপ যেতে যেতে আরো একবার পিছনে তাকাতেই রিদ হাসি থামিয়ে মুখ গোমড়া করে দাঁড়াল।রুপ বিড়বিড় করে বলল,
‘বেয়াদব!একবার একটা সুযোগ পাই দাঁড়া।
_____
ক্লাস শেষ হয়নি।মিশরা একদম পেছনের বেঞ্চে বসে ফোন টিপছে।পাশে বসা ইশিতা হঠাৎ বলল,
” এই মিশু দ্যাখ দ্যাখ…
মিশরা তাকালো।ইশিতার হাতের জিনিসটাকে দেখে ভ্রুকুঁচকে বলল
” খেলনা সাপ নিয়ে কি করছিস?
” যা! তুই বুঝে গেলি, এটা খেলনা সাপ?
ইশিতা ঠোঁট উল্টালো।মিশরা বলল,
” একটা জ্বলজ্যান্ত সাপ হাতে ধরে রাখার মত সাহসি মেয়ে তুই নোস। যেভাবে হাতে পেঁচিয়ে আছিস,তাতেই বুঝলাম।আসল হলেতো ছিটকে দশহাত দূরে গিয়ে পরতি।
ইশিতা হেসে ফেলল।বলল,
‘সাপে খুব ভয় পাই।এটা এখন বোধ হয় একটা পাব্লিক নিউজ হয়েছে।আমাকে ভয় দেখাতে ছোট ভাইটা ব্যাগে রেখে দিয়েছে। মাত্র বই খুঁজতে হাত দিলাম আর হাতে বাঁধল।আমিতো প্রথমে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছি।একেবারে আসল সাপ এর মত দেখতে তাইনারে!যে কেউ ভয় পাবে!
ফোন টিপতে ব্যাস্ত মিশরার আঙুলগুলো থেমে গেল।ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“যে কেউ ভয় পাবে বলছিস?
‘ হ্যা।না পাওয়ার কি আছে?আচমকা দেখলে তো ভয় পাবেই।
মিশরা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো।ইশিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
” ক্লাস শেষে তোকে আজ একটা মজা দেখাবো।
ইশিতা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“তাই?কি দেখাবি রে,এখনই দেখানা!
‘উহু।যখনের টা তখন।
—–
বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব।চোখে সানগ্লাস।পড়নে কফি কালার শার্ট ।ধ্রুব সব সময় শার্টের সঙ্গে ম্যাচিং করে সানগ্লাস পরে বিধায় দেখতে আরো সুন্দর লাগে।ধ্রুবর মনোযোগ, চোখ দুটোই ক্লাস রুমের দরজার দিকে।যাতে সবাই বের হওয়া মাত্রই মিস না হয় পূর্নতাকে এক ঝলক দেখতে পাওয়া।
ধ্রুব নিজেতো দাঁড়িয়ে আছে,সাথে রিদকেও দাঁড় করিয়ে রেখেছে।রিদের গায়ে আবার দুপুরের রোদ টা এসে সরাসরি লাগছে।ভীষণ গরম লাগছে তার।অধৈর্য হয়ে বলল,
” কিরে ধ্রুব,,চল এবার।ক্লাস শেষ তো দাঁড়িয়ে কেনো আছি এটাই মাথায় ঢুকছেনা।
ধ্রুব ভ্রু গুটিয়ে বলল,
‘আমাদের ক্লাস শেষ, কিন্তু First year এখনও ক্লাসে কি করছে বলতো?
“ওদের হয়তো এক্সট্রা ক্লাস নিচ্ছে।নাহলে শরীফুল স্যার ক্লাসে।উনিতো আবার দু ঘন্টায়েও বিদেয় নেননা।তাতে আমাদের কী?
পরমুহূর্তে রিদ সতর্ক চোখে তাকিয়ে বলল,
‘এই দাঁড়া দাঁড়া,তুই কি কারোর জন্যে অপেক্ষা করছিস?মেয়েঘটিত কোনো ব্যাপার নাকি মামা?
ধ্রুব সচকিতে সোজা হয়ে দাঁড়ালো,
‘আমি?আমি কার জন্যে অপেক্ষা করব?
রিদ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইল।ধ্রুব আশেপাশে তাকাল এই দৃষ্টি থেকে বাঁচতে।রিদ কি চুপ করে থাকার ছেলে?সে মিনমিনিয়ে গান ধরল
‘তলে তলে ট্যাম্পু চালাও আমরা কইলে হরতাল।
ধ্রুব ধমকে বলল ‘ শাট আপ রিদ।মুড খারাপ করছিস আমার।
রিদ মুখে আঙুল চেপে বলল,
‘ওকে চুপ করলাম।বোম মারলেও আর কথা বলবনা।
ধ্রুব বিড়বিড় করে বলল
‘আলহামদুলিল্লাহ।
___
আশরাফ পত্রিকা পড়ছেন।চোখে পাওয়ারি চশমা।এমন সময় সায়রা পাশে এসে দাঁড়ালো।আশরাফ টের পেলেন।অথচ ভাব করলেন না দেখার।সায়রা হাত কঁচলে অনেকক্ষন পর ডাকলেন,
‘শুনছো!
আশরাফ গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলেন ‘ হু।
‘একটা কথা বলতাম।
‘শুনছি আমি।
সায়রা বললেন,
‘ভাইজান কাল আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।
আশরাফ তাকালেন এবার।
” ভাইজানের তো আজই চিটাগং যাওয়ার কথা ছিলো না?
‘হ্যা। যাওয়া হয়নি।তাই বললেন আমরা যদি__
আশরাফ কথা আটকে দিলেন,
‘ পূর্ণতা যাচ্ছে?
সায়রার ঠান্ডা মেজাজ খারাপ হলো নিমিষে।চঁড়া কন্ঠে জবাব দিলেন,
‘আমরা গেলে ওকে তো আর রেখে যাচ্ছিনা তাইনা?
ভাইজান ও বলে দিয়েছেন ওকে সাথে নিয়ে যেতে।
‘কখন যেতে হবে?
‘দুপুরে।
“যাব।
___
ক্লাশ শেষ হতেই মিশরা পেছনের দরজা দিয়ে ছুটে বের হলো।সামনের দরজার পাশের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেল তারপর।
একে একে বের হচ্ছে সব শিক্ষার্থীরা।পূর্ণতা বের হয়েছে কেবল। মিশরা যত্র হাতের রাবারের খেলনা সাপটা পূর্নতার গায়েছুড়ে মেরে চিৎকার দিল ” সাপ!পূর্নতা তোর গায়ে সাপ!
পূর্নতা হকচকালো।সত্যি সত্যি গায়ের ওপর সাপ দেখে গগনবিদারী চিৎকার ছুড়লো।চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে গেল সকলে।পূর্নতা মাত্রাতিরিক্ত ভয় পেল।হাতের ব্যাগ ফেলে ছুট লাগালো সে।মনে হচ্ছে সাপটা পেছন পেছন ধাওয়া করছে তার।মিশরা হাসতে হাসতে ইশিতার গায়ে ঢলে পরছে এই দৃশ্যে।ইশিতার মুখটা ছোট হয়ে আছে।এই তাহলে মিশরার দেখানো মজা?
পূর্নতা প্রানপণে ছুটছে।আচমকা একটা শক্ত বুকের সাথে ধাক্কা লাগলো।সামনের ব্যাক্তিটি পূর্নতার প্রবল দৌড়ের আক্রমন কে তাৎক্ষণিক সামলাতে না পারায় দুজনেই ধপাস করে পরলো মাটিতে।মিশরার হাসিটা উবে গেল সাথে সাথে।সকলের মধ্যে শুরু হলো চাপা গুঞ্জন,কানাঘুষা, হাসাহাসি।
ধাক্কা লাগা ব্যাক্তিটি ধ্রুব।পূর্নতাকে ছুটতে দেখে এগিয়েছিল সামনে।মেয়েটা খেয়ালই করলোনা ওকে।আর ব্যাস,দুজনেই চিৎপটাং হয়ে পরেছে।ধ্রুবর অবশ্য খারাপ লাগছেনা।
এই যে পূর্ণতা ভয়ে ওর শার্ট দুহাতে শক্ত করে খামচে ধরেছে এটাও ওর ভালো লাগছে।এতো কাছ থেকে পূর্নতাকে দেখল এই প্রথম।নিঃশ্বাস টাও আছড়ে পরছে ধ্রুবর ফর্সা মুখে।
পূর্ণতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখা চেহারাও কি মায়াবি!কি অসাধারন!ধ্রুবর মনে হলো এই মেয়ের নাম পূর্নতা না হয়ে মায়াপরি হওয়া উচিত।যার মুখে অঢেল মায়া,সেই মেয়েকে এই নামেই ডাকা উচিত না?
মিশরা রেগেমেগে চলে গেছে।শেষ দিকে এসে মজাটাই মাটি হয়ে গেল।ইশিতা মনে মনে বিরক্ত হলেও সেই পিছু নিলো মিশরার।
“এই পূর্নতা!ব্যাথা পেয়েছিস?
পূর্নতা ভয়ে রীতিমতো কাঁপছিল।রুপের ডাকে চোখ খুলল।নিজেকে আবিস্কার করল কারো প্রসস্থ বুকের ওপর।পূর্নতা পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধ্রুবর মুখটা দেখতেই ভয়,ডর সব উড়াল দিল হাওয়াতে। হুড়মুড়িয়ে উঠে গেল।প্রচন্ড লজ্জ্বায় মিশে যাচ্ছে মাটিতে।কোনো মতে কাচুমাচু করে বলল,
‘স্যরি!আমি ইচ্ছে করে করিনি।
পূর্নতার চোখ পায়ের পাতার ওপর।পাশে দাঁড়ানো রুপ মিটিমিটি হাসছে।ধ্রুব উঠে শার্টের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
“ইটস ওকে..এত জোরে দৌড়াচ্ছিলে কেন? আর ওমন চিৎকার?
রুপ হাতের নকল সাপটাকে ওদের দুজনের সামনে ঝুলিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল ‘ এটা দেখে।
ধ্রুব বলল ‘ এটাত নকল সাপ।
পূর্নতা অবাক কন্ঠে বলল ‘ এটা,এটা নকল?আমিতো ভেবেছিলাম __
রুপ বলল,
‘তোর দোষ নেই।এটা প্রথমে দেখলে আসল আসল মনে হয়।আমিও ঘাবড়ে গেছিলাম।পরে দেখলাম বেচারা মেঝেতে পরে আর নড়ছেনা।পা দিয়ে খোঁচালাম তাও না।নকল বুঝতে পেরেই না সাহসি হয়ে সাথে করে এনেছি।
ধ্রুব চিন্তিত কন্ঠে বলল ‘ খেলনা সাপ এখানে কি করে এলো?কেউ কি তোমার গায়ে ছুড়ে মেরেছিল এটা?
রুপ কিছু বলতে গেলে হাত চেপে ধরলো পূর্নতা।মৃদূ কন্ঠে বলল,
‘হয়ত কেউ মজা করতে চেয়েছিল।থাক এসব।আমরা এখন আসি ভাইয়া?
ধ্রুবর মুখটা চুপসে গেল ‘ভাইয়া ‘ডাকে।পূর্নতা রুপকে টেনেটুনে সাথে নিয়ে চলল।
সেদিকে তাকিয়ে ধ্রুব মন খারাপ করে বলল ‘ শেষমেষ ভাইয়া ডাকলে মায়াপরি?
পরমুহূর্তে বলল ‘ সমস্যা নেই।কিছু ভাইয়া,ভাইয়া থেকেই ছাইয়া হয়।
ধ্রুব ঘাড় চুলকে মুচকি হাসলো।তখন পূর্নতা গায়ের ওপর পরেছে,দৃশ্য টা যতবার মনে পড়ছে কেমন অজানা, অদ্ভূত অনূভূতি হচ্ছে।ইচ্ছে করছে সাপটাকে যে ছুড়েছে তাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানাতে।ভয় দেখানোর জন্যে ছুড়লেও লাভের লাভ হয়েছে।মায়াপরি এত কাছে এসেছে, বুকে হাত রেখেছে সেই ঢের!
ধ্রুব অনেকক্ষন নিজের মত ভাবল।সব ভাবনায় পূর্নতা জড়িয়ে।পেছন ফিরতেই দেখল রিদ হা করে চেয়ে আছে।ধ্রুব ডান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
” হাওয়া খাচ্ছিস নাকি?
রিদ মুখ বন্ধ করে বলল,
না।খাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।ভাত খেয়েতো মাথায় কিছু ঢুকছেনা।হাওয়া খেলে যদি বুদ্ধি টা একটু বাড়ে!
ধ্রুব সরু চোখে তাকাল। রিদ হা-হুতাশ করে বলল
‘আমার মাথা ঠিক নেই দোস্ত।এসব সিনেমার হিরো হিরোইনদের ওপেন সিন দেখে আমার মাথা কাজ করছেনা।
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ হ্যা তুই বরং পাগল হয়েই যা।অন্তত আমি সুস্থ থাকবো তাহলে।নাহলে তোর মত এমন আধপাগলের সাথে থাকলে দুজনকেই বাড়ি ছেড়ে মেন্টাল এসাইলোমের একটা ঘর ভাড়া নিতে হবে।
রিদ মুখ ফুলিয়ে বলল ‘ এভাবে বলতে পারলি?
‘পারলাম।
‘এই তুই আমার বন্ধু?আমার বেস্টফ্রেন্ড?
‘আমি কোনো আধপাগলের সাথে ঘর করতে চাইনা।
রিদ আহত কন্ঠে বলল,
‘ঠিক আছে।এ জীবন রেখে কী লাভ?যেখানে ধ্রুব আমার হবেনা।আমি বাঁচতে চাইনা।
ধ্রুব হেসে ফেলল।ওর হাসি দেখে রিদ ও হাসলো।
ধ্রুব ওর কাঁধ জড়িয়ে বলল
‘থাক আপনাকে আর মরতে হবেনা।আমার রাজসভায় আপনাকে গোপাল ভাঁড়ের চাকরিটা পাঁকা করে দেব।যাতে মন খারাপ থাকলে হাসাতে পারেন।
রিদ রাগ করতে নিয়েও হেসে উঠল।নিজেও ধ্রুবর কাধে হাত রেখে বলল,
‘তুই চাইলে আমি গোপাল ভাঁড় হতেও রাজি।
সাথে বেসুরো গলায় গেয়ে উঠল
‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে,
সেকি জানোনাআআআ………
____
পূর্নতা নয় দশ বছরের ছোট্ট মেয়ে তখন।সেলিনা দোকান থেকে মিশরা আর ওর জন্যে দুটো বাচ্চাদের শাড়ি কিনে আনলেন।মিশরা জেদ করলো তাকে আগে সাজাতে হবে।সেলিনা তাই করলেন।মিশরা সেজেগুজে ছুটে বের হলো ঘর থেকে।কয়েক পা এগোতেই শাড়ির সঙ্গেই পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পরলো।মিশরা রেগেমেগে নিজেই নিজের শাড়ি খুলে ফেলল।পণ করলো জীবনে এসব উদ্ভট পোশাক পরবেনা।সেলিনার কিনে আনা শাড়ি তাকেই ফেরত দিয়ে এলো গিয়ে।সেলিনা কিছু বললেন না।তিনি মনোযোগ দিয়ে পূর্নতাকে সাজাচ্ছেন তখন।সাজ শেষে পূর্নিতা হৈহৈ করে বলল
‘ আমি যাই মামুনি,বাবা আর ধীর ভাইয়াকে দেখিয়ে আসি।
“যা।
দুপাশে দুটো বেনী দোলাতে দোলাতে পূর্ণতা আগে গেল আশরাফের কাছে।বসার ঘরে মেহবুব আর তিনি দাবা খেলছিলেন।দুজনেই প্রসংশা করলেন পূর্নতার।আশরাফ কপালে চুঁমুও খেলেন।পূর্ণতা আবার গুটিগুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে উঠল।চলল ধীরের ঘরের দিকে।ধীর তখন ষোল-সতের বছরের তরুন ছেলে।সদ্য গোসল করে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়েছে।
‘আমাকে কেমন লাগছে ধীর ভাইয়া!
ধীর তাকাল।দরজায় দাঁড়ানো
লাল সাদা মিশেলের ডালা শাড়ি পরিহিতা পূর্নতাকে দেখে থমকে গেল।হাত থেকে তোয়ালেটা পরলো পায়ের কাছে।চোখ আটকালো।টের পেল বুকের বাম পাশে কিছু একটা হচ্ছে।সেই যে মন হারালো ধীর,ফিরলোনা সেই মন।পূর্নতাকেই দিয়ে বসলো।নিজেকে সামলে বলল,
‘সুন্দর লাগছে।কে সাজিয়েছে?
‘মামুনি।
‘দাঁড়া তোর একটা ছবি তুলে দেই।
ধীর নিজের ফোন থেকে ছবি তুলল পূর্নতার।পূর্নতার ছবিটির কথা মনে না থাকলেও ধীর সেটা প্রিন্ট আউট করে বের করে নিজের ডায়েরিতে লাগিয়েছে।ধ্রুবর আবার ডায়েরি লেখার অভ্যেস নেই।কিন্তু ধীরের ছিল।সেই ছোট থেকে এখনো আছে।
পুরোনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসে ধীর।মুচকি হাসলো পূর্নতার হাস্যজ্জ্বল ছবিটির দিক চেয়ে।পরপর চুমু খেল ওর কপালে।
‘তোর মনে আছে পূর্না? ছোটবেলায় সারাক্ষন তুই আমার সাথে সাথে থাকতিস?আমাকে ক্ষ্যাপাতে স্লো ভাইয়া ডাকতিস।আমি কিন্তু ক্ষেপে যাওয়ার ভান করতাম।তোর ওই টোল পরা হাসি দেখার লোভ ছিল যে।জানিস যেদিন তুই শাড়িটা পরে আমার সামনে এসে দাঁড়ালি? এক মুহুর্তের জন্যে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেললাম।ভালোবাসার ব্যাখা না জানলেও তার শিহরণ সেদিন আমার সারা হৃদয় জুড়ে বয়ে গেলো।আর যেদিন মায়ের কাছে শুনলাম ফুপি বাবার ওপর রাগ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন?শ্বাস আটকে এলো আমার।খুব ভয় পেয়ে গেলাম,তোকে হারানোর ভয়।এক ছুটে তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম আমি।কিন্তু দরজায় তালা দেখার সাথে সাথে বুঝে গেলাম তোর কাছে পৌছানোর রাস্তাতেও তালা পরে গিয়েছে।সেদিন সারারাত মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছি আমি।সবাই ভেবেছে আমি বিদেশ যেতে চাইছিনা বলে কাঁদছি।কিন্তু না,আমার কাছে জাগতিক সব ব্যাথা তুচ্ছ হলো আমার পূর্নাকে হারানোর যন্ত্রনার কাছে।
( একটু থেমে)
যেখানে তোকে এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করলে আমি পাগল প্রায়,সেখানে আজ এত গুলো বছর তোকে একটি বারের জন্যেও দেখতে পাইনি।
এত বছর পর ফিরে আসার সময় হলো তোর? জানিস না আমি অপেক্ষা করে আছি?কত খুঁজেছি তোকে।পাইনি।তবে আমার বিশ্বাস ছিলো একদিন ঠিক তোকে পেয়ে যাবো।তুই আমার কাছে ফিরবি।তোকে ফিরে পাওয়ার প্রার্থনা মিথ্যে হয়নি দ্যাখ।এবার একবার দেখা হোক,মনের কথা জানাব আমি।এত বছর ধরে যে কথা চেপে রাখতে রাখতে আমি ক্লান্ত পূর্না।শেষ হচ্ছি আমি।পুড়ছি এক তরফা ভালোবাসার অনলে।বাঁচা আমায়।একটু ভালোবেসে বাঁচা।
চলবে….