#ফাগুন_এলো_বুঝি,১২,১৩
(১২)
আস্তে খেতে পারিস না? এমন হাঁসের মত গিলতে থাকলে বিষম তো লাগবেই।
কেশেটেশে আমাদের খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে দিল।
পূর্ণতা লজ্জ্বায় মাথা নিঁচু করে ফেলল।ধ্রুব চোয়াল শক্ত করে মিশরার দিক তাকাল।এই মেয়ের কথার ধরন এরকম কেন?নাকি শুধু মায়াপরির ক্ষেত্রেই এমন?ওর কি কাজই খালি মায়াপরিকে ছোট করা?রেগে কিছু বলবে,এর আগেই মেহবুব মৃদূ ধমক দিলেন
“এসব ঠিক কোন ধাঁচের কথা মিশু?ও তোমার বোন হয়।আজ অব্দি কথা বলাটাই শিখলেনা দেখছি!
ধীর তিক্ত মেজাজে বলল,
‘ওকে বলে লাভ নেই বাবা।ও সেই বস্তুটার মত যেটা কোনো দিন টানলেও সোজা হয়না।
অপমানে মিশরার মুখ থমথমে হয়ে এলো।ধীরের গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করলো।শেষে কুকুরের লেজের সঙ্গে তার তুলনা?স্টিল নাউ ধীর পূর্ণতার সাপোর্টারই রয়ে গেল?পূর্ণতা!হ্যা এই মেয়েটাই যত নষ্টের গোড়া।এর জন্যে মার থেকে শুরু করে সামনে আরো কী কী পোহাতে হবে হু নোস!রাগে কিড়মিড় করতে করতে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল মিশরা।পেছন থেকে সায়রা, পূর্ণতা সেলিনা ডাকলেন অনেকবার।মেয়েটা শুনলোইনা।সেলিনা মন খারাপ করে বললেন,
‘এতদিন পর দেখা হলো,আজকেও ওকে এভাবে না বললে তোর হতোনা ধীর?বাচ্চা মেয়ে বলে ফেলেছে একটা কথা,তাই নিয়ে তুইও কি না কি বললি!
ধীর ভ্রু কুঁচকে বলল ‘ আমি এমন কি বলেছি মা?আর ও অতোটাও বাচ্চা নয়।
ধ্রুব তাল মেলাল ‘ মিশরা মায়াপ__
একটু থেমে বলল ‘ মিশরা বলেছে হাঁস,আর ভাইয়া বলেছে কুকুর,দুটোইতো পশু। তাহলে মিশরার এত রাগ করার কী হলো?
পূর্ণতা উঠে যেতে ধরলে ধীর হাত চেপে ধরল ওর।
‘তুই কোথায় যাচ্ছিস?
‘মিশরাকে ডেকে আনি ভাইয়া।
ধীর চোখ পাঁকিয়ে বলল
‘ চুপচাপ খা।
ধমক খেয়ে পূর্ণতা গুটিয়ে গেল।এসবের মধ্যে চুপ রইলেন আশরাফ আর সায়রা।সায়রার মেজাজ পূর্ণতার প্রতি বরাবরের মতো পরলেও আশরাফ ভাবছেন ভিন্ন কথা।মৃত্যুর আগে কী দেখতে পারবেন না,
পূর্ণতা আর মিশরার ভালোবাসা!সায়রা কী কোনো দিন পূর্ণতাটাকে বুকে জড়াবেনা?আসবেনা সেই সুদিন?সায়রা কেন পূর্ণতাকে নিজের মেয়ে ভাবতে পারেনা।যেখানে মিশরার পূর্ণতার প্রতি বিরুপ আচরন দেখেও সে মিশরাকে বাবার মত ভালোবাসে।কারন মেয়েটাকে দেখলে মায়া হয়।বাবা থেকেও নেই।তাকেই বাবা ডাকে।কাছে আসতে চায়।আদর পেতে চায়।পূর্ণতার প্রতি মিশরার হিংসেটাও বাবার ভালোবাসার জন্যে সৃষ্টি। তাহলে সায়রা কেন পারেনা?কেন মেয়েটাকে এভাবে শিক্ষা দিচ্ছে সে? যেন পূর্ণতা মিশরার শত্রু!মিশরারতো দোষ নেই।ছোট থেকে মা যা শিখিয়েছে মেয়ে তাই জেনেছে,তাই বুঝেছে।কেন সায়রা একটু অন্যভাবে ভাবেনা পূর্ণতাকে নিয়ে।কেন সবাই তার মত উদার হতে পারেনা?আশরাফ বিশ্বাস করে তার ভালবাসা একদিন বদলে দেবে মিশরার মানসিকতা।ঠিক পাল্টাবে মেয়েটা।
মেহবুব খেতে খেতে বললেন,
‘সায়ু!মেয়েটাকে একটু ভালো শিক্ষা দে।এসব রেষারেষি, হিংসে এগুলো ভালো নয়।হাত পেতে কারো কিছু নেয়ার থেকে হাত উপুড় করে দেয়া ভালো।তেমন ভালো কারো ভালোবাসা পাওয়ার আশা করার থেকে আগে তাকে ভালোবাসা।
সায়রা চুপ করে থাকলেন।ভাইজানের মুখের ওপর কিছু বলার অবাধ্যতা ধাঁচে নেই তার।
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে ধ্রুবর দিক তাকালো।সব কিছুর জন্যে এই ক্যাবলাকান্ত দ্বায়ী।ইচ্ছেতো করছে একে গ্লাসের ভেতর চুবিয়ে মারতে।ধ্রুব তাকাতেই পূর্নতা চটজলদি চোখ সরাল।এ ছেলেকে আর বিশ্বাস নেই।যে সবার মধ্যে বসে ফ্লায়িং কিস দিতে পারে সে না জানি আর কি কি পারে।পূর্ণতা তখনও ভাবছে,ধ্রুব এমন করছে কেন?ওনার কী আমার প্রতি_!
___
মিশরাকে অনেক তোষামোদ করা হয়েছে।করেছেন স্বয়ং সেলিনা।মেহবুব ও আদর করে কত কি বোঝালেন। মিশরা সেসব শুনল।তবে মনোযোগ দিলোনা।এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করেছে।সেলিনা আবার নতুন করে ভাত মেখে খাইয়ে দিয়েছে ওকে।মিশরা খেতে খেতে আড়চোখে বারবার পূর্ণতার দিক তাকাচ্ছিল।আশরাফ হেসে হেসে মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন।আর তাতেই সেলিনার আদরটুকু ফিকে হলো মিশরার কাছে।তার সবার আদর চাই।পূর্ণতাকে কেউ ভালোবাসবেনা এটাই ওর একমাত্র ইচ্ছে।
—
সব শেষে এবার বের হবার পালা।খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সকলে।বসার ঘরেই বসেছিল আড্ডা।ধ্রুব আলগোছে সবার মধ্যে থেকে উঠে গেল।মাকে খুঁজছে সে।গিয়ে পেল রান্নাঘরে।খাবার তুলে টিফিন ক্যারিয়ারে ভরছেন সেলিনা।ধ্রুব গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াল।টেনে টেনে ডাকল
“মা!
সেলিনা তাকালেন।মোলায়েম কন্ঠে শুধালেন ‘ কিছু লাগবে তোর?
‘না। দেখতে এলাম কি করছিলে।সবাই আছে তুমি নেই।আমার আবার তোমাকে ছাড়া কোত্থাও ভালোলাগেনা।
সেলিনা ভ্রু কোঁচকালেন।সন্দেহী কন্ঠে বললেন,
‘হঠাৎ মায়ের প্রতি এত ভালবাসা?মতলব কী?কি চাই?
ধ্রুব দুঃখি দুঃখি মুখ করে বলল,
‘মতলব?এভাবে বললে আমায়?এরকম ভোলাভালা একটা ছেলেকে তোমার মতলববাজ মনে হলো মা?
‘তোমাদের দুইভাইকে তো আমি চিনি বাবা!পেটে ধরেছি।তাই__
ধ্রুব আটকে দিল ‘ তাই “ক” বললে ভাব কলকাতা বলতে এসেছি।
সেলিনা হেসে ফেললেন।
“আচ্ছা বল।কি বলবি?
‘কিছুনা।এমনিই এসেছিলাম।খাবার কাদের জন্যে? ফুপিদের?
” হ্যা।ওরাতো এখন রওনা দেবে।
“থেকে যেতে বললেনা?
‘বলেছিলামতো!শুনলোনা।আশরাফ ভাই কেমন কাজ পাগল জানিসই তো।
‘তাহলেতো আঙ্কেলের যেতেই হবে।আবার ওনার দেখভালের জন্যে ফুপিরও যাওয়া প্রয়োজন।কিন্তু বাকিরা?বাকিদেরতো তুমি রাখতেই পারো মা।
সেলিনা বুঝতে না পেরে বললেন,
” পূর্ণতা আর মিশুর কথা বলছিস?
‘হ্যা।আর কার কথা বলব?এতদিন পর ভাগ্নীদের কাছে পেলে।দুদিন নিজের কাছে রেখে আদর যত্ন করবেনা?তুমি নাকি ওদের অনেক ভালোবাসো।
‘আমিতো রাখতেই চাই।কিন্তু আশরাফ ভাই, সায়রা এনারা কি মেয়েদের ছাড়বেন?
‘ছাড়বেনা কেন?ছোট বেলায় মিশু কত এসে থেকেছে আমাদের এখানে।এখন তাহলে সমস্যা কোথায়?
আর তুমি হলে ওদের মামুনি?মা____মুনি।
নামটা শুনলেইতো একটা অধিকার অধিকার ফিল আসে।একটা এক্সট্রা পাওয়ার আছে না তোমার?জোড় করে রেখে দেবে ওদের।কি পারবেনা?
সেলিনা জোর দেখিয়ে বললেন,
‘কেন পারবনা?নিশ্চয়ই পারব।তুই একদম ঠিক বলেছিস ধ্রুব।দাঁড়া আসছি।
হাতের কাজ ওভাবে ফেলে রেখেই সেলিনা ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে গেলেন।মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো ধ্রুব।প্ল্যান সাকসেসফুল।ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“মায়াপরি! আজ আর তোমার যাওয়া হচ্ছেনা।
___
” এবার তাহলে উঠি ভাইজান?রাত তো অনেক হলো।
“আজ থেকে গেলে পারতেনা আশরাফ?
‘আপনি তো বোঝেন ভাইজান।বিজনেস এর কাজ কখন কোথায় দৌড়ঝাপ করতে হয় নিজেও জানিনা।তবে এবার থেকেতো ঢাকাতেই আছি।আবার আসবো অন্য সময়।
” সে আপনি আসবেন ভাই।তাই আপনাকে আমি আটকাচ্ছি না।আর না আটকাচ্ছি আমার ননদিনী কে।
কিন্তু মেয়ে দুটোকে যে আমার কাছেই রেখে যেতে হবে।
সেলিনা রান্নাঘর থেকে হেটে এসে আশরাফের সামনে দাঁড়ালেন।
‘কিন্তু ভাবি,ওদের ভার্সিটিতো খোলা।
মেহবুব বললেন,
‘তাতে কী হয়েছে?ধ্রুবরওতো সেম ভার্সিটি। সবাই মিলে একসাথে যাবে এ’কদিন।
পূর্ণতা মিনমিন করে বলল,
‘কিন্তু বই খাতা তো আনিনি।
ধীরের ভীষণ পছন্দ হয়েছে মায়ের প্রস্তাবটা।পূর্ণতারা চলে যাবে ভেবেই খারাপ মন নেঁচে উঠেছে ওর থেকে যাওয়ার আলাপে।সে উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ধ্রুবর বই আছেনা?ওগুলো নিয়ে যাবি।
মিশরা লাফিয়ে উঠল খুশিতে।সে থেকে যেতে এক পায়ে রাজি।
‘বাবা আমি মামুনির কাছে থাকব।
“থাকবে তুমি? কিরে মা তুই কি বলিস?
পূর্ণতা বলার আগেই সেলিনা বললেন,
‘ও আবার কি বলবে?ওর মামুনি যখন বলেছে তখন ও না বলবে নাকি!কিরে পূর্ণতা! থাকবিনা আমার কাছে?
পূর্ণতা হেসে মাথা দোলালো
‘ থাকব মামুনি।
সঙ্গে সঙ্গে দুটো মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এক ধ্রুব,দ্বিতীয় ধীর।
দুই মেয়েকে সেলিনা আর মেহবুবের জিম্মায় রেখেই রাতে আশরাফ আর সায়রা বের হলেন নিজেদের গন্তব্যে।আর খান বাড়ি মেতে উঠল চিরচেনা মুখগুলোর হৈ-হুল্লোড়ে।
_____
মেহবুব ক্লান্ত ছিলেন।সারাদিন অফিস করে রাতে আবার বাজার করেছেন।বারোটা বাজতেই তার চোখ ঘুমে ঢলে পরল।ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে ঘুমোতে গেলেন তিনি।তবুও আড্ডা চলছিল।বিষয়বস্তু সেলিনার ছোটবেলার গল্প।পূর্ণতা গালে হাত দিয়ে শুনছে।মিশরা অল্প শুনছে আবার হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের মেসেজের উত্তর দিচ্ছে।ধীর,ধ্রুব দুজনেই বসে।তাদের সামনে টেলিভিশন খুলে রাখা।অথচ দুজনের কান সচকিত এদিকে।ধীর কখনওই এত রাত অব্দি জাগেনি।ধ্রুব সারারাত জেগে পড়াশুনা করতো।আজকে ধীর সোজা হয়ে বসে আছে শুধুমাত্র পূর্নতার জন্যে।সেলিনা লক্ষ্য করছেন সব।তবে কারন কি আসলেই পূর্ণতা?এটুকু খটকা পরিষ্কার ভাবে মেলাতে পারছেননা।গল্প শুনতে শুনতে পূর্ণতা বলল
‘মামুনি,তোমার বিয়ের গল্প বলোনা!
‘আজ না মা।কাল বলব,
অনেক রাত হয়ে গেছে এবার সবাই ঘুমোতে যা তোরা।
ধ্রুব উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ কে কোন রুমে থাকবে সেটা তো বললেনা?
‘ওমা তোদের রুমে তোরা থাকবি।এটা আবার বলার কি আছে?
‘ আমি কি আমাদের কথা বলছি নাকি? আমিতো আমাদের বাড়ির দুই মহামান্য অতিথির কথা বলছিলাম।
সেলিনা বললেন ‘ ওরা ওদের যে রুমটা পছন্দ সেখানে ঘুমাবে।আমি বলে দেব কেন?তোদের ভয় লাগলে দুজন একসাথে ঘুমালেও পারিস।
মিশরা প্রস্তাব নাকচ করে বলল,
‘ভয় লাগলেও আমি পূর্ণতার সঙ্গে ঘুমাবনা।
আমি কারো সাথে বেড শেয়ার করতে পারিনা।
পরমুহূর্তে ভেবে বলল,
‘আমি ধীর ভাইয়ার পাশের রুমটাতে থাকবো মামুনি।পার্কিং সাইডে রুম নিয়ে ঘুমের ১২ টা বাজাতে পারবোনা বাবা।
ধীর ঘোর আপত্তি জানাল
‘তুই আমার পাশের রুমে থাকবি কেন?না। ওখানে তোর থাকা চলবেনা।
মিশরা অবাক কন্ঠে বলল
‘ তোমার পাশের রুমে থাকছি,তাতে তোমার সমস্যা কী?এমন ভাব করছো যেন তোমার রুমে থাকতে চাইছি।
ধীর মুখের ওপর বলল
‘সেদিন আমার রুমটাই ভেঙে ফেলব।আমার রুমে যে কেউ থাকতে পারেনা।
সেলিনা ছেলেকে ধমকালেন,
‘ধীর!কি হচ্ছে এসব?তোরা কি এখনো ছোট আছিস?এভাবে ঝগড়া করছিস কেন?
ধীর বলল
‘ ও আমার পাশের রুমে থাকবেনা মা।ব্যাস।
মিশরাও জেদ ধরল
‘ থাকলে আমি ওখানেই থাকব।পার্কিং সাইডে আমি থাকবনা।ওখানে পূর্ণতা থাকুক গিয়ে।
‘আমিতো বললাম তুই__
ধীরের কথা আটকে গেল সেলিনার গম্ভীর কন্ঠে,
‘ধীর!বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবার।
আমার ছেলেরা কি এখন আমার কথা শুনবেনা?
ধীর চুপ করে গেল।ধ্রুব ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বোঝাল ‘ ঠান্ডা হতে।পূর্ণতা মৃদূ কন্ঠে বলল,
“মামুনি আমাকে একটা রুম দিলেই হলো।
‘কিন্তু পূর্ণ…
” থাক না ধীর ভাইয়া।এতেই চলবে।তাছাড়া ওই রুম টা ও ভারি সুন্দর।বেলকোনিটাও আমার বেশ পছন্দ।
মামুনি আমি ওখানেই বরং থাকব।
সেলিনা কিছু বললেননা।শুধু মাথা নেড়ে স্বায় দিলেন।
ধ্রুবর চেহারা চকচক করে উঠল।পূর্ণতার পাশের রুমখানা তার।মানে আসতে দেখা, যেতে দেখা।এর থেকে ভালো আর কি হয়?
ধীর কটমটে চেহারায় মিশরাকে দেখল একবার।হেলেদুলে চলে যাচ্ছে ও।ধীর মনে মনে বলল,
‘দিন দিন তোর ওপর রাগ আমার বাড়ছে মিশু।একদিন এই রাগের পাহাড়েই চাপা পরে মরবি তুই।দেখিস।
ধ্রুব ঘাড় চুলকে ভাবল,
‘তোকে আস্ত একটা ধন্যবাদ মিশু।এতক্ষন যেটুকু রেগে ছিলাম শেষ হয়ে গেল সব। কিছুতো কাজে লাগলি আমার।মায়াপরী কে কাছাকাছি এনে দেয়ার জন্যে তোকে এবারের মত সাধারণ ক্ষমা করে দিলাম যা।
____
নতুন বিছানায় পূর্ণতার ঘুম আসা দুষ্কর হয়ে পরেছে।ঘন্টাযাবত এপাশ ওপাশ করছে সে।শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে বারান্দায় গেল। বেশ বড়সড় এটা।সেখানে খোলা হাওয়ায় পায়চারি করলো কিছুক্ষন।তাতেও বিরক্ত হয়ে রুমে আসতে নিলো।হুট করে কেউ একজন হাতে হ্যাচকা টান মেরে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল।পূর্ণতা হকচকাল।সাথে পেল প্রচন্ড ভয়।ভীত কন্ঠে অন্ধকারে প্রশ্ন ছুড়ে দিল
‘কে?
পরপর কানের কাছে পেল একটা গরম নিঃশ্বাসের স্পর্শ।সাথে ফিসফিস আওয়াজে কেউ বলছে,
‘হুস!আমি।মায়াপরি!
পূর্ণতা বুঝে ফেলল এটা কে।এই এক ডাক একদিনে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।ধ্রুব একা পেয়েছে ঠিক যতবার, তরবার ডেকেছে এই নামে।
পূর্ণতার ভয় তখনও গেলনা।কেঁপেকেঁপে বলল,
‘ আআপনি?এমন ককেউ করে? ভয় পেয়ে গগিয়েছি আমি।আর এতত ররাতে এখখানে এসেছেন কেন?মমানে কি এসসবের?
“সব কিছুতেই এত মানে মানে করো কেন?
পূর্ণতা ছোটাছুটি লাগাল
‘ সরে দাঁড়ান।
এত রাতে কেউ এভাবে দেখলে কি ভাববে?
ধ্রুব নড়লোনা।বরং উদ্বেগহীন জবাব দিল,
‘কি আবার ভাববে?ভাববে আমরা প্রেম করছি।আর তারপর আমাদের ধরে বিয়ে পড়িয়ে দেবে।
পূর্ণতা লজ্জ্বায় হাঁসফাঁস করে বলল,
‘কি?কি বলছেন এসব?আর, আর তখন ওরকম করলেন কেন?
‘কিরকম?
‘ওইযে আপনার পা দিয়ে___
ধ্রুব না জানার ভান করে বলল,
‘পা দিয়ে?কি করছিলাম পা দিয়ে?
‘জানিনা।ছাড়ুন আমাকে।
ধ্রুব ভ্রু উঁচায়,
“যদি না ছাড়ি?
পূর্ণতা অবাক হয়ে বলল ‘
না ছাড়ি মানেটা কি? আমিতো শুনেছিলাম আপনি নাকি মেয়েদের ধারে কাছেও ঘেঁষেন না।
“এটাতো সত্যি কথা।আমি মেয়েদের আশপাশ দিয়েও যাইনা, তো??
‘ওহ তাই নাকি!তাহলে এটা কি?আমি মেয়ে নই?
ধ্রুবর সরল স্বীকারোক্তি,
“তুমি মেয়ে।তবে আমার কাছে বাকী সব মেয়ের থেকে ভিন্ন।
শীতল কন্ঠে জমে গেল পূর্নতা।শুধু ঠোঁট নেড়ে শুধালো ‘কেন?
ধ্রুব মুখটাকে আরেকটু কাছে আনল
‘না বললে কি বোঝা যায়না মায়াপরি?সব কথা কি বলে দিতে হয়?
পূর্ণতা কিছুক্ষন কথা বলতে পারলনা।তবে টের পাচ্ছে তার হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে।ধ্রুবর উষ্ণ শ্বাস ঠোঁটে ঠিকড়ে লাগতেই হুশ ফিরলো যেন।ফের মুচড়ে উঠল
‘ছাড়ুন আমায়।
‘ছাড়ব।তবে একটা শর্ত আছে।
পূর্ণতা ভ্রু গোঁটালো
‘ কি শর্ত?
“তোমাকে কাল সকালে আমার রুমে গিয়ে আমার ঘুম ভাঙাতে হবে।
পূর্নতা চোখ কপালে তুলে বলল,
‘ আমি আপনার ঘুম ভাঙাতে যাবো?
‘যাবে।
পূর্ণতা মুখ ঘুরিয়ে বলল
‘ পারবোনা।
ধ্রুব হাতের বাঁধন দৃঢ় করে বলল,
“তবে আমিও ছাড়বোনা।
পূর্ণতার কেঁদে ফেলার যোগাড়। কতক্ষন নিজেকে গালাগাল দিলো।ঘুম আসছিলনা বিছানায় শুয়ে থাকতিস।বারান্দায় আসতে গেলি কোন দুঃখে? উপায় না দেখে মেনে নিল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে।তাই হবে।এবার তো ছাড়ুন।
‘ দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল!
ধ্রুব হাত ছেড়ে সরে দাঁড়াল।সুযোগ পেয়েই পূর্ণতা ছুটে রুমে এসে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর থেকে।ধ্রুব দরজার ওপাশে থেকেই বলল
‘ভয় নেই।রুমে যাচ্ছিনা।আফনান খান ধ্রুব আর যাই হোক দুশ্চরিত্র নয়।
কন্ঠটা কেমন শোনাল না ধ্রুবর?পূর্ণতা সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলল।ধ্রুব ততক্ষনে নিজের রুমে চলে গেছে।পূর্নতার মন ঝুপ করে খারাপ হলো।উত্তেজনায় দরজাটা লাগিয়ে ফেলেছে।কিন্তু ধ্রুব কি অপমান বোধ করল এতে?
পূর্ণতার চিন্তা হতে লাগল,
‘উনি কি রাগ করলেন?
চলবে…..
# ফাগুন_এলো_বুঝি!
(১৩)
পূর্ণতা মিশরা একদম তৈরি হয়ে নাস্তার টেবিলে বসেছে।খানিকবাদে ধীর ও নামল।আজ তার যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও উপায় নেই।গতকাল ইচ্ছে করে ম্যাচ খেলেনি।অসুখের ছুঁতো দিয়েছিল।আজ তো যেতেই হবে।চেয়ার টেনে বসলো পূর্নতার পাশে।সেলিনা ওর প্লেটে স্যান্ডউইচ তুলে দিলেন।ধীর প্রশ্ন করল,
“ধ্রুব ওঠেনি এখনও?
” না।
ধ্রুবর কথা শুনে পূর্ণতার খাওয়ার স্পিড কমে এল।মন খারাপ হলো গতকাল রাতের কথা ভেবে।ধ্রুব তার ওপর রাগ করলো কীনা!পরমুহূর্তে ভাবল,
‘রাগ করলে আমার কি?আমি এত কেন ভাবছি ওনাকে নিয়ে?
ধীর উঠে গেল,
‘আমি ধ্রুবকে ডেকে নিয়ে আসছি।
____
“এই ধ্রুব!ধ্রুব?আর কত ঘুমাবি?ভার্সিটি যাবিনা?
ধ্রুব খানিক নড়েচড়ে উঠল।কিন্তু ঘুম ভাঙেনি তার।ঘুমের ঘোরে বলল,
” উম মায়াপরি!এতক্ষনে আসার সময় হলো তোমার!
ধীর হতভম্ব হয়ে বলল,
‘পরী? কোথায় পরী?কি বলছিস?
এই ধ্রুব?
এক ঝাঁকিতে ঘুম ছুটে গেল ধ্রুবর।চোখ খুলল।ধীরের মুখটা ঝুঁকে থাকতে দেখে হুড়মুড় করে উঠে বসল।
‘একি ভাইয়া!তুমি কেন ডাকতে এলে?
ধীর ডান ভ্রু উঁচাল
“তবে কি আপনার বউ আসবে??
‘সেরকমইতো কথা ছিল।
‘কি বিড়বিড় করছিস?
‘হু?না কিছুনা।
‘ন’টা বাজে।ফ্রেশ হয়ে আয়।সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্যে।
ধ্রুব ছোট করে বলল “আসছি।
“আচ্ছা আমি গেলাম।ঘুমিয়ে পড়িস না আবার।আজকাল ঘুমের ঘোরে জ্বিন-পরীও খুজিস দেখছি।
ধীর যেতে যেতে বলে গেল।ধ্রুব অবুজ কন্ঠে বলল,
‘যা বাবা!আমি আবার কখন জ্বিন পরি খুঁজলাম?
শার্ট -প্যান্ট পরে,বুক পকেটে চশমা ঝুলিয়ে একেবারে পরিপাটি হয়ে নিচে নামল ধ্রুব।পূর্নতার অন্যপাশের চেয়ার টেনে বসতেই পূর্ণতার খাওয়া থেমে গেল ওখানেই।
ধ্রুব খেতে শুরু করল চুপচাপ। পূর্ণতা ভেবেছিল এসেই ওকে জ্বালাতে শুরু করবে।কিন্তু তা হয়নি দেখে নিশ্চিত হলো ধ্রুব রেগে আছে।পূর্ণতা খাওয়ায় ব্যাস্ত প্রত্যেককে একবার দেখে ধ্রুবর দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে শুধাল
” আপনি কি আমার ওপর রেগে আছেন?
ধ্রুব জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে তাকাল।
পূর্ণতা ঠোঁট উলটে বলল
“স্যরি!আমি কাল অতকিছু ভেবে দরজা আটকায়নি।আপনার খারাপ লেগেছে?
ধ্রুব ও পূর্ণতার মত নিঁচু কন্ঠে বলল,
‘কাল তোমার সাথে কি শর্ত ছিল মায়াপরি?সকালে আমাকে তুমি ঘুম থেকে তুলবে।যাওনি কেন?
‘কি করে যাব?বাড়ির সবাই কি ভাববে?
‘সেটা শর্তে রাজি হওয়ার আগে মনে রাখা প্রয়োজন।শর্ত ভঙ্গ করেছ যখন, শাস্তি পাবে তুমি।আ বিগ পানিস্মেন্ট ওয়েটস ফর ইউ।
ধ্রুব অর্ধেক খাবার রেখেই উঠে দাঁড়াল।
‘কিরে খবিনা আর?
‘না মা।
মিশরার দিক চেয়ে বলল ‘ তাড়াতাড়ি আসিস।আমি বাইরে আছি।
মিশরা মাথা দোলাল।ধ্রুব বেরিয়ে গেল।পূর্ণতা ওর যাওয়ার দিক চেয়ে শুকনো ঢোক গিলল।
আজ আর ভার্সিটি থেকে এবাড়ি ফিরবেনা।লুকিয়ে নিজের বাড়ি চলে যাবে।
___
ধ্রুবর বাবা অবস্থাসম্পন্ন লোক।বাড়ি,গাড়ি সবই আছে।শুরুতে এমন ছিলেননা তারা।মেহবুবের অনেক পরিশ্রমের সুফল এসব।তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দাঁড় করানো ব্যাবসা রমরমিয়ে চলছে এখন।কোনো কিছুরই কমতি নেই।ধীরের ছোট থেকে স্বপ্ন ক্রিকেটর হবে।ন্যাশনাল টিমে খেলবে।তাই নিয়েই ব্যাস্ততা তার।ধ্রুব এম-বি-এ করছে।পড়া শেষ করেই বাবার ব্যাবসায় ঢুকবে।অতি দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।আর তারপরপরই মায়াপরিকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে।মন ভরে চুঁমু খাবে মায়াপরির টোল পরা গালে।
এই মুহুর্তে সে গাড়ির ড্রাইভিং-এ বসে।এপাশের দরজা হা করে খোলা।পূর্ণতা,মিশরা আর সে আজ একসাথে ভার্সিটি যাবে।ধ্রুবর দরজা খোলা রাখার কারন,পূর্ণতাই।যাতে ও এসেই ধ্রুবর পাশে বসতে পারে।কিন্তু ধ্রুবর
বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে মিশরা এসে বসে পরল সেখানে।পূর্ণতা উঠে বসলো পেছনে।ধ্রুব ব্যাক্কলের মত চেয়ে থাকল কিছুক্ষন।ব্যাপারটা কি হলো?
মিশরা তাড়া দিল,
“সবাই এসেছি,চলো।
ধ্রুবর মেজাজ চড়ে গেল।জোড়াল শ্বাস ফেলে নেমে গেল গাড়ি থেকে।মিসরা বলল ‘ কি হল?
ধ্রুব উত্তর দিলনা।উঁচু কন্ঠে ডেকে উঠল,
‘হানু কাকা!হানু কাকা?
মধ্যবয়সি লোক হানিফ ছুটে এলেন একপ্রকার।
‘হ্যা, ছোট বাবা?
‘আজকে তুমি গাড়ি চালাও।আমার ইচ্ছে করছেনা।
‘কিন্তু তুমি যে তখন বললে__
“এখন যেটা বলছি সেটা শোনো।
হানিফ মাথা নেড়ে গাড়িতে উঠলেন।পূর্ণতাকে গুটিয়ে দিতে পাশে বসল ধ্রুব।পূর্ণতা নড়েচড়ে এক সাইড হলো।মিসরা পেছনে বসা ধ্রুবর দিক চেয়ে বলল,
” এটা কি হলো ভাইয়া?
ধ্রুবর নিরুদ্বেগ জবাব
‘যা দেখলি তাই।
মিশরা আর কিছু বললনা।এদিকে ধ্রুব একটু এগিয়ে বসল পূর্নতার কাছে।যত্র পূর্ণতা জানলা ঘেঁষে গেল।ধ্রুব হাত চেপে ধরল পূর্ণতার।পূর্ণতা চোখ বড় করে তাকাল।ধ্রুব রীতিমতো ওর আঙুলের ভাঁজে পূর্ণতার আঙুল আটকে দিয়েছে।পূর্ণতা ছাড়াতে গেলে বাঁধন আরো শক্ত হচ্ছে দেখে বেচারি অবশেষে দমে গেল।তবে সমস্ত রাস্তাটায় বুকের কাঁপুনি কমলোনা।
____
রিদ,সুমন,সাকিব সবক’টা মিলে আড্ডা দিচ্ছে মাঠের কোনায়।রিদ বাইকের ওপর চড়ে বসা।সব গলা ছেড়ে গান গাইছে।রুপ মাত্রই গেট দিয়ে ঢুকল।রিদ ওকে দেখেই বাকিদের বলল
‘এই দাঁড়া দাঁড়া থাম।
কথামত সবার গান অফ।
রুপ রিদকে দেখেও না দেখার ভান করল।যেন রিদ না বোঝে সে দেখেছে।বুঝলেই সালাম দিতে হবে।যেটা এইকদিনে তার রুটিনে বদলেছে।রুপ যেই সামনে দিয়ে যেতে ধরল ওমনি রিদ গেয়ে উঠল,
‘ও লাল দোপাট্টে ওয়ালি তেরা নাম তো বাতা…
সুমন বাইকের গায়ে হাত দিয়ে ঢোল বাজানো শুরু করল।বাকি গুলো সমস্বরে গেয়ে উঠল,
“নাম তো বাতা তেরা নাম তো বাতা।
রুপ শুনেও পাত্তা দিলনা দেখে রিদ গান পালটে ফেলল,গেয়ে উঠল,
‘খালি কলসি বাজে বেশি ভরা কলসি বাজেনা।
অরুপসী সাজে বেশি রুপসিরা সাজেনা।
দাঁড়িয়ে গেল রুপ।তিক্ত মেজাজ নিয়ে ফিরে তাকাতেই রিদ আর তার বন্ধুরা হো হো করে হেসে উঠল।রুপ বিড়বিড় করে বলল,
‘অসভ্য!
ঠোঁট নাড়ানো দেখেই বুজে ফেলল রিদ।রুপ হনহন করে ক্লাশরুমে ঢুকে গেল।রিদ ভ্রু কোঁচকালো। মেয়েটার মুখ এত বিষন্ন লাগছে কেন?ওর কি কিছু হয়েছে?
ধ্রুবদের গাড়ি সোজা গেট দিয়ে ঢুকে বাদাম গাছের নিচে পার্ক করলেন হানিফ।আগে ধ্রুব নামল।পরপর মিশরা আর পূর্ণতা।পূর্নতাকে ধ্রুবর সাথে দেখে বাইকের ওপর থেকে লাফিয়ে নামল রিদ।অবাক হয়ে বাকিদের বলল,
‘বন্ধুগন,আমি যাহা দেখিতেছি তোমরাও কি তাহা দেখিতেছ?
সবগুলো গোল চোখে ধ্রুবর দিক চেয়ে থেকে মাথা নাড়ল।তারাও দেখছে।সাকিব অবাক কন্ঠে বলল,
‘ধ্রুবর সাথে দু দুটো মেয়ে?মানে এক মালি দুই ফুল?
সুমন ওর মাথায় চাটি মেরে বলল
“না জেনে এমন উদাহরন দেয়া ঠিক নয়।ধ্রুবর বোন ও হতে পারে।
রিদ মাথা দোলাল ‘ কারেক্ট!এর মধ্যে নীল টপ্স পরা মেয়েটা ধ্রুবর ফুপাত বোন।কিন্তু বাকিজন? হু ইজ সি?তোমরা কি চিনতে পারছ তাকে?
সুমন মনে করার ভঙি করে বলল,
‘এই মনে পড়েছে আমার।এই মেয়েটা তো ঐদিন ধ্রুবর গায়ের ওপর পরেছিল।তাইনা?
সুমন অবাক হয়ে বলল ‘ কখন?আমিতো দেখিনি কোথায় ছিলাম আমি?
‘তুই আসিসনি সেদিন।আমি ছিলাম আমি দেখেছি।
রিদ বলল ‘শুধু গায়ে পরা নয়।আরো অনেক কিছু ঘটেছে।শোন____
ওদের কথার মধ্যেই পূর্ণতা আর মিশরা ক্লাশে চলে গেল।ধ্রুব ওদের দেখে এগিয়ে এল কাছে।এসে দাঁড়ানো মাত্রই সব কটা একে একে ঝাপিয়ে পরল।রিদ কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে বলল,
‘কি চলছে মামা?
ধ্রুব চোখ পিটপিট করল ‘ কি চলছে মানে?
সুমন বলল,
‘অতো সাধু সেজোনা।আমরা সবাই সব জেনে গেছি।
‘কি জেনেছিস?
সব এক সাথে গেয়ে উঠল
‘ তলে তলে টেম্পু চালাও আমরা কইলে হরতাল।
আমরা কইলে হরতাম মামা আমরা কইলে হরতাল।
ধ্রুব আগামাথা না বুঝেই ধমক দিল,
‘থামবি তোরা?
‘কেন থামব?তুমি করতে পারলে আমরা বলতে পারবনা?
‘মানে?কি করেছি আমি?
“এইযে একেবারে রোমিও জুলিয়েট একই গাড়িতে এসেছে। পাশাপাশি,কাছাকাছি হাতে হাত রেখে বসেছ। ওফ আমি আর বলতি পারছিনা আমার লজ্জ্বা লাগছে।রিদ তোরাই বল।
ধ্রুব সাকিবের গালে চড় মারল একটা।
সাকিব গাল চেপে ধরল।ধ্রুব বলল,
‘গাঁধার দল,লজ্জ্বা বাসর ঘরে গিয়ে বউয়ের সামনে পাস।চার চারটে গার্লফ্রেন্ড পুষে লজ্জ্বা দেখাও?
সাকিব জ্বিভ কেটে বলল,
‘এই আস্তে আস্তে।
ধ্রুব বলল,
‘আর তোরা এক্সট্রা ভাবছিস।লজ্জ্বা পাওয়ার মত আমরা কিছু করিনি।শুধু আমি আর ও পাশাপাশি বসেছিলাম।
সুমন ঠোঁট গোল করে বলল
‘ও আচ্ছা,এখন তাহলে মেয়েটা “ও “হয়ে গেল?
তার মানে তুই স্বীকার করছিস ও তোর জুলিয়েট?
সব গুলো হৈহৈ করে উঠল।ধ্রুব ধরা পরে মাথা চুলকে হাসল।
রিদ সুন্দর করে শুধাল
‘এখন তাহলে একটা সত্যি কথা বল।
ধ্রুব তাকালে বলল
‘তুই যে ওই মেয়েটাকে পছন্দ করিস সেটা আমি জানি।এখন ওরাও জানল।তাহলে তুই ক্লিয়ার করে আমাদের এটা বল যে তুই কি ওকে ভালোবাসিস?
ধ্রুব পূর্ণতাদের ক্লাশরুমের দিক চেয়ে নিরেট কন্ঠে বলল
“ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি রে রিদ!ওকে ছাড়া চলবেনা আমার।
সবাই আবার হৈহৈ করে ওঠে।সাকিব আঙুল মুখে পুড়ে সিটি বাজায়।
সুমন খুশি খুশি কন্ঠে বলল,
‘আলহামদুলিল্লাহ!অবশেষে আমাদের ধ্রুব খান প্রেমে পড়েছেন।গুড নিউজ।তবে ভাই,ভাবি কিন্তু মাশআল্লাহ।খালি বিয়ের পর একটু খাওয়া দাওয়া বেশি করে করাস।পাতলা ফিনফিনে তো!
সাকিব ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ভাই তোর কাজিন কি সিঙ্গেল?লাইন করিয়ে দেয়া যাবে?
‘তুই চুপ থাক ব্যাটা।ওকে সামলানো তোর কর্ম নয়।এক্কেবারে ধানিলংকা।
সাকিব ভয় পেয়ে দুহাত ওপরে তুলে বলল,
‘ওরে বাবা থাক তাহলে।দরকার নেই।
_____
পূর্ণতা চেয়েছিল রুপের কাছে ধ্রুবর ব্যাপারটা বলবে।মানে ধ্রুবই যে মিশরার মামাতো ভাই সেটা।কিন্তু ক্লাশে এসে রুপের শুকনো মুখ দেখে আর কিছু বললনা।এমনি গোটা ক্লাশেই রুপ মনমরা বসেছিল।পূর্ণতা অনেকবার জিজ্ঞেস করেও সঠিক উত্তর পেলনা।লাস্ট অব্দি ক্লাশ করলনা রুপ।ভালো লাগছেনা বলে চলে গেল বাড়িতে।পূর্নতার মনটাও খারাপ হয়ে গেল তাই।
রুপের হয়েছে কি?
____
পূর্ণতা লুকিয়ে লুকিয়ে বের হচ্ছে।পিলপিল পায়ে গেট অব্দি গেল।কোনো ভাবেই ধ্রুবর সামনে পরার ইচ্ছে নেই।কী পানিশমেন্ট দেবে কে জানে!ছোটবেলা থেকে এত পানিশমেন্ট পেয়ে এসছে, এখন এসব শুনলেও ভয় লাগে।তাই সোজা বাড়ি চলে যাবে।আর তারপর ফোন করে মামুনিকে কিছু একটা বুঝিয়ে দেবে।সেলিনাতো আর জোর করে ফোনের ভেতর থেকে তাকে টেনে আনতে পারবেনা!আর তারপর দুটো দিন ভার্সিটি আসবেনা।অতদিনে ধ্রুব ঠিক ভুলে যাবে। শাস্তি,টাস্তি কিচ্ছু মনে থাকবেনা।পূর্ণতা অদৃশ্য হাতে নিজের কাঁধ চাঁপড়াল।দারুন বুদ্ধি এঁটেছে সে।সবাই তাকে বোঁকা বলে।কই সে তো বোঁকা নয়।বোঁকা হলে এরকম বুদ্ধি আসতো মাথায়?পূর্ণতা গেট পেরিয়ে যেতে ধরবে ওমনি পেছন থেকে ডেকে ওঠে,
“পূর্ণা
পূর্ণতা থমকাল।ডাক, আর কন্ঠস্বর দুটোই চেনা,পরিচিত।ঠিক জানে এটা কে।পেছন ফিরে ধীর কে দেখে তাৎক্ষণিক হাসি ফুঁটল ঠোঁটে।
ধীর গাড়ি নিয়ে এসেছে।পূর্ণতা এগিয়ে আসাতে বের হলো গাড়ি থেকে।
‘ তুমি এখানে ধীর ভাইয়া?
‘এইতো চলে এলাম।ভাবলাম তুই__
“আরে ভাইয়া!তুই আমার ভার্সিটিতে?
হাউ ইজ ইট পসিবল!
ধ্রুবর উত্তেজনায় ধীরের কথা আটকে গেল।ধীর হাসলো।শুধু পূর্ণতার হাসি মিইয়ে গেল ধ্রুবকে দেখে।বিড়বিড় করে বলল ‘ যেখানে বাঘের পর সেখানেই সন্ধ্যে হয়।এর সামনে পরবনা পরবনা করে পরেই গেছি।
ধ্রুব ধীর আর পূর্ণতার কাছে এসে দাঁড়াল।আগের মতোই অবাক হয়ে বলল,
‘ভাইয়া,তুই ঠিক কি মনে করে এখানে এলি?
আমি কি স্বপ্ন দেখছি? এই আমাকে একটা চিমটি কাটোতো।
ধ্রুব ডানহাতটা পূর্নতার দিক বাড়িয়ে ধরল।ভ্রু গোঁটাল পূর্ণতা।পরমুহূর্তে ভ্রু শিথিল করে সত্যি সত্যি শক্তপোক্ত একটা চিমটি কাটল।ধ্রুব ছিটকে উঠল ব্যাথায়।
হাত দ্রুত কাছে এনে আর্তনাদ করে বলল,
‘মাই গুডনেস!এত জোরে কেউ চিমটি কাটে?
‘চিমটি কাটতে বলেছেন যখন।আস্তে না জোড়ে সেটাও বলে দিতেন।
‘এটা কি চিমটি ছিল?এটাকে রীতিমতো খাবলা দিয়ে মাংস তোলা বলে।
‘কি বললেন?
পূর্ণতা গাঢ় কন্ঠে বলল।ধীর হেসে দুজনকে বলল,
‘তোরাও দেখছি ঝগড়া করছিস।আমার আর মিশুর বাতাস লেগেছে নাকি!
পূর্ণতা মুখ ভ্যাঙচায়
‘আমি সবার সঙ্গে ঝগড়া করিনা ভাইয়া।বিশেষ করে তোমার ভাইয়ের মত ক্যাবলাকান্তের সঙ্গে তো আরোই না।
ধ্রুব চোখ কপালে তুলে বলল
‘আমি ক্যাবলাকান্ত!
‘অবশ্যই।
ধ্রুব মনে মনে বলল ‘ ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না।পানিশমেন্ট একটার হায়গা ডাবল করে দিলাম মায়াপরি।এমন ভাবে এর শোধ তুলব যে আহাম্মক হয়ে যাবে।
ধীর ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল
‘আমার সোনার টুকরো ভাইকে শেষ মেষ ক্যাবলাকান্ত বানিয়ে দিলি পূর্না?
পূর্ণতা মাছি তাড়ানোর মত হাত নেড়ে ব্ললল,
‘সোনার টুকরো?তোমার ভাই টিনের টুকরোও নয়।
ধ্রুবর চেহারা হলো দেখার মত।ধীর স্বশব্দে হেসে উঠল কথাটায়।পূর্ণতা মিটিমিটি হেসে ভ্রু উঁচালো ধ্রুবকে।ধ্রুব তীক্ষ্ণ চোখ নিক্ষেপ করে একটু কাছে এসে আস্তে করে বলল,
‘কাল ফ্লায়িং কিস ছুড়েছিলাম।আজ আর ছুড়বনা।দিয়েই দেব।
পূর্ণতা স্তব্ধ হয়ে তাকাল।ধ্রুব শয়তানি হেসে শার্টের কলার ঝাকিয়ে বলল,
‘প্রচন্ড গরম।বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা আছে।বৃষ্টি মানেই রোমান্টিক ওয়েদার তাইনা ভাইয়া।আর রোমান্টিক ওয়েদার মানেই হলো কাউকে কিস___
ধীরের সামনে ধ্রুবর অবাধ কথাবার্তায় পূর্ণতা হাঁসফাঁস করে বলল,
‘আপনি বাড়ি যাবেন না?
ধ্রুব থেমে পূর্ণতার দিক তাকাল।বেশ বুঝল পূর্ণতার প্রসঙ্গ এড়ানোর ফন্দি।ধীর বলল
‘ও একা যাবে কেন?আমরা সবাই একসাথে যাব।তুই বাইক এনেছিস ধ্রুব?
‘না এনাদের দুবোন কে নিয়ে বাইক চড়ব কিভাবে?গাড়ি এনেছি।
‘ভালো করেছিস।ড্রাইভার চাচাকে দিয়ে পাঠিয়ে দে।আমার গাড়ি করে বাড়ি ফিরব।
ধ্রুব কাঁধ উচু করে বলল ‘ ওকে।
ধীর পূর্নতার দিক তাকাল ‘ আয়।
পূর্ণতা এবার গুটিয়ে গেল।মূলত ধ্রুবর ভয়েই।কিছুতেই সে ওদের বাড়ি যেতে চাইছেনা আজ।যে ছেলে গভীর রাতে বারান্দা টপকে অন্য মেয়ের বারান্দায় আসতে পারে,তাকে এত হাল্কা ভাবে নেয়া পাগলের কাজ!আর পূর্ণতা পাগল নয়।আজ ধ্রুব কি করবে কে জানে!পূর্ণতার ভাবুক চেহারার দিকে ধীর চেয়ে থাকল।কালো চুড়িদারে মেয়েটাকে কি মারাত্মক সুন্দর লাগছে ও জানে?ইচ্ছে করছে জাপটে ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে।
ধ্রুব গিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে।ধীর পূর্ণতাকে বলল
‘ভার্সিটিতে কোনো ছেলে বিরক্ত করে তোকে?
পূর্ণতা চোখ তুলে তাকায়।ভাবনায় ডুবে ছিল এতক্ষন।ধ্রুবর দিক চেয়ে মনে মনে বলল,
‘করে।তোমার ভাই।
মুখে বলল ‘ না।
ধ্রুব বলে ওঠে,
‘আমি আছিনা?আমি থাকতে ওকে বিরক্ত করবে কার সাধ্যি?
ধ্রুবর কথাটা কেমন যেন শোনাল ধীরের।হাসিটা কমে এল ঠোঁটের। পরমুহূর্তে আবার চওড়া হেসে বলল,
‘তাইতো!
ধ্রুব হাতঘড়িতে চোখ বোলায়।
‘এই মিশুর বাচ্চা কোথায়?
পূর্ণতা বুঝতে না পেরে বলল,
‘মিশুর তো বিয়েই হয়নি। বাচ্চা আসবে কোত্থেকে?
ধ্রুব শব্দ করে হেসে ফেলল।ঝকঝকে দাঁতগুলো উন্মুক্ত হলো।চোখদুটো আরো ছোট ছোট হয়ে এল।মৃদূ বাতাসে ধ্রুবর সামনের চুল দোল খেল।পূর্ণতার বুক ধ্বক করে উঠল।অকারনে,অজান্তে।চেয়েও ধ্রুবর থেকে চোখ সরাতে পারলনা।ধীর ও হাসছে।পূর্ণতা এত সরল।আর এই বোঁকা মেয়েটাকেই চাই তার।ধ্রুব হাসতে হাসতে পূর্ণতার দিক তাকাতেই দেখল সে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে।ধ্রুব হাসি থামিয়ে ভ্রু কোঁচকাল।দুষ্টুমি জেঁকে বসলো মাথায়।চট করে আরেকটা ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিল পূর্ণতাকে।পূর্নতা নড়ে উঠল।মুগ্ধতা লেজ তুলে ছুটে পালিয়েছে।দ্রুত চোখ ফিরিয়ে আনল।খুকখুক করে দু তিনবার কেশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল।ধ্রুবর দিক সে তাকাবেনা।বেহায়া লোক একটা!
দশ মিনিট ওভাবে দাঁড়ানোর পর কোত্থেকে ছুটতে ছুটতে হাজির হলো মিশরা।ধ্রুবর লাগাতার ফোনে আড্ডা মাঝপথেই ফেলে এসেছে সে।হাপাতে হাপাতে বলল,
‘এসে গেছি। এসে গেছি। আর ফোন করতে হবেনা।
ধ্রুব কান থেকে ফোন নামিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ক্লাশ শেষ হয়েছে কখন?আর য়ুই এলি কখন?
ধীর বলল,
‘থাক বাদ দে।
মিশরাকে বলল ‘গাড়িতে ওঠ।
ধীর চাবি বের করে ধ্রুবকে দিল।ধ্রুব শুধাল
‘আমি ড্রাইভ করব?
‘হ্যা।তুই আমার থেকে ভালো ড্রাইভার।
‘ওকে।
ধীর পেছনের সিটে উঠে বসল।ভাবল পাশে পূর্ণতা বসবে।সামনে থাকবে ধ্রুব আর মিশরা।
কিন্তু ধ্রুব গাড়িতে ওঠার আগে পূর্ণতার পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল।পূর্ণতা তাকাতেই আস্তে করে বলল
“মায়াপরী! এবার ব্যাক সিটে বসলে তোমার কপালে শনি নাঁচবে।আফনান খান ধ্রুব গ্যারান্টি দিচ্ছে।
থম মেরে গেল পূর্ণতা।ধ্রুব বলে দিয়েই ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসেছে।মিশরা সামনের সিটের দরজা খুলতে এলেই পূর্ণতা চেঁচিয়ে বলল ” না।
ভঁড়কে তাকাল সবাই।
মিশরা ভ্রু বাঁকালো ‘ কি হয়েছে?
‘ওখানে আমি বসব।
পূর্ণতা এসেই মিশরাকে ঠেলে সরিয়ে দিল।নিজে দরজা খুলে ধপ করে বসে পরল সিটে।
মিশরা বিস্মিত।পূর্নতা ওকে এভাবে ঠেলে সরিয়েছে ভাবতেই গায়ের উষ্ণ রক্ত মাথা চাঁড়া দিল।কিন্তু বলতে পারলনা কিছু। সে পূর্ণতাকে একটা বললে ধীর তাকে দশটা শোনাবে।আর কাল তো ধ্রুবকেও যোগ হতে দেখল।হাত পা ছুড়ে গিয়ে বসল ধীরের পাশে।মিশরা পাশে বসতেই ধীর মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকাল।মন,মেজাজ দুটোই মারাত্মক খারাপ।
“পূর্ণার পাশে বসবো বলে ধ্রুব কে ড্রাইভ করতে বললাম।আর সেই পূর্ণাই?
পূর্ণতা আড়চোখে ধ্রুবর দিক তাকাল।ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
পূর্ণতা অসহায় নিঃশ্বাস ফেলল।এ কোন আইটেমের হাতে পরল শেষমেষ!
চলবে