ফাগুন_এলো_বুঝি! (১৬)

0
957

# ফাগুন_এলো_বুঝি!
(১৬)

“ভালোবাসা”
শব্দটা কারো মুখ থেকে প্রথম শুনলো পূর্ণতা।পরিচিত হলোও প্রথম।ভেতরটায় ঢেউ তুলল অন্যরকম অনূভুতি।ধ্রুবর সামনে বসে থাকার সাহস পেলনা।ধুকপুক কাঁপতে থাকা হৃদয় নিয়ে একছুটে পালাল।নেমে গেল ছাদ থেকে।
ধীর পানি খেতে বেরিয়েছে।ওপর থেকে কেউ দৌড়ে নামছে বুঝে এগিয়ে এল। সাথে আসছে নূপুরের ঝুনঝুন শব্দ।কে হতে পারে?এ বাড়ির মেয়েদের মধ্যে কেউ তো নূপুর পরেনা।ধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।পূর্ণতাকে নামতে দেখে অবাক হলো খুব।সামনে ধীরকে দেখে থমকে গেল পূর্ণতা।কদম থেমে শান্ত হয়ে দাঁড়াল।
ধীর বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘তুই এখনও ঘুমাসনি পূর্না?
ধ্রুব পূর্ণতার পেছন পেছন আসছিল।ধীরের কন্ঠ শুনতেই ওপরের সিড়িতে দাঁড়িয়ে গেল তাৎক্ষণিক। সে পূর্ণতাকে দেখছে।পূর্ণতাও ওপরে তাকালে দেখবে তাকে।কিন্ত ধীর দ্বিতীয় তলায় থাকায় দেখতে পাচ্ছেনা।
পূর্ণতা চটপট উত্তর দিতে পারলনা।সময় নিয়ে আমতা-আমতা করে বলল,
‘ঘুম আসছিলনা ধীর ভাইয়া।তাই একটু ছাদে হাটতে গেছিলাম।
ধীর ভ্রু কোঁচকালো,
‘এত রাতে ছাদে একা গেছিলি?কেন?আমাকে ডাকলেই পারতিস।
ওপর থেকে ধ্রুব বিড়বিড় করে বলল,
‘তোমাকে ডাকলে প্রেম করতাম কী করে?বোকা ছেলে!
পূর্ণতা কথা খুঁজে না পেয়ে বলল,
‘আচ্ছা।
‘কী আচ্ছা?
‘মানে এরপর থেকে ডাকব।
ধীর হাসলো।সেও বলল ‘ আচ্ছা।এখন ঘুমোতে যা।
‘তুমি এখনও ঘুমোয়নি কেন?
‘এইতো ঘুমোব।কাল অনেক কাজ বুঝলি!ধ্রুবর জন্মদিন না!সব আয়োজনের দায়িত্ব আমার ওপর। বিশ্রাম নিতে পারবনা গোটা দিনে।

তখনই পূর্ণতার মনে পড়ে গেল ধ্রুবর জন্মদিনের কথা।ধীর তাকে ঘরে যেতে বলল।পূর্ণতা ধুপধাপ পা ফেলে দ্রুত চলে যাওয়ায় অবাক লাগল ধীরের।পূর্ণতা এত চঞ্চল নয়।ইদানীং দৌড়াদৌড়ি একটু বেশিই করছে মনে হয়।

পূর্ণতা রুমের দরজা লাগিয়ে প্রথমেই দেয়ালঘড়ি দেখল।১১;৫৭ বাজে।এতক্ষন ছাদে ছিল?যাক ভালো হয়েছে।আর মাত্র তিন মিনিট বাকি বারোটা বাজতে।এবার ধ্রুবর জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছা সেই জানাবে।পূর্ণতা হাতে ফোন তুলে এই তিন মিনিট পায়চারি করল।অধৈর্য সে।তিন মিনিট হতে এতক্ষন লাগে?যেই মাত্র ঘড়ির কাটা বারোতে দাঁড়িয়েছে পূর্ণতা ধড়ফড় করে ধ্রুবর নম্বরে ডায়াল করল।ধ্রুব বোধ হয় ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল।সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করল।পূর্ণতা হা করল হ্যাপি বার্থডে বলতে,ধ্রুব তার আগেই বলে দিল,
‘থ্যাংক ইউ মায়াপরি।
পূর্ণতার হা’টা তৎক্ষনাৎ বন্ধ হলো।কপাল কুঁচকে শুধাল,
“কিসের জন্যে?
” এইযে! আমার অপেক্ষার অবসান ঘটালে।তাই।
পূর্ণতা বলল,
“আমি কিন্তু আপনাকে উইশ করতে ফোন করিনি।
ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘তাই?তার মানে উইশ করতেই কল করেছ !
পূর্ণতা জ্বিভ কাটল।ভুলভাল বলে নিজেই ধরা খেল।তখন ধ্রুব লহু স্বরে বলল,
“আমার কাছে অনেক আগেই ধরা পরেছ মায়াপরী।এ আর নতুন কি।
পূর্ণতা চোখ পিটপিট করল। এই লোক কীভাবে বুঝল সে কী ভাবছে?
ধ্রুব বলল
”এখন এসব ছাড়োতো।আমি কিন্তু জানতাম তুমি আমায় ফোন করবে।তোমার মুখ থেকে প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা শুনবো বলে সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি।উইস করো এবার…
পূর্ণতা লাজুক হাসল।একটু চুপ থেকে রিনিঝিনি কন্ঠে বলল,

“Happy Birtjday.Many Many Happy Returns Of This Day.
পূর্ণতা থামলে ধ্রুব বলল,
‘আর কিছু বলবেনা?
‘আর কী বলব?
‘কিচ্ছুনা?ফোনের মধ্যে একটা গিফট তো দিতে পারো।
পূর্ণতা বুঝতে না পেরে বলল,
‘ফোনের মধ্যে থেকে গিফট দেয় কীভাবে?
‘কেন?সেদিন আমি যে তোমাকে দিলাম।তুমি সেটা আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও।
পূর্ণতা মুখ হা করে ফেলল।ধ্রুবর ইঙ্গিত বুঝেছে এখন।মিনমিন করে ‘অসভ্য ‘বলে লাইন কেটে দিল।ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে কান থেকে ফোন নামালো।ফোনের স্ক্রিনে দীর্ঘ একটা চুমু খেল।এর মধ্যে আবার ফোন বাজল।বন্ধুরা ফোন করছে। ধ্রুব ফোন সুইচ অফ করে দিল।এখন আর কারো উইস নিতে ইচ্ছে করছেনা। যেটা পাওয়ার পেয়েছে।
ঘড়িতে বারোটা বেজে দু মিনিট তখন।দরজায় ঠকঠক শব্দে ধ্রুব এগিয়ে গেল।দরজা খুলতেই মিশরা চিৎকার করে উঠল,
‘হ্যাপি বার্থডে ধ্রুব ভাইয়া।
ধ্রুব হকচকিয়েছে।এত জোরে কেউ চেঁচায়?পরপর খেয়াল করলো পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে তার।।বাদ নেই পূর্ণতাও।সে তাকাতেই সবাই এক যোগে চিল্লিয়ে বলল
‘হ্যাপি বার্থডে!
ধ্রুব প্রশান্ত হাসল।এই সারপ্রাইজ প্রত্যেক জন্মদিনে পায়।আজকের টা ডাবল।এই যে পূর্ণতা আছে সাথে।তার মায়াপরি!
মেহবুব এগিয়ে এলেন,আমুদে কন্ঠে বললেন,
‘হ্যাপি বার্থডে মাই সন।মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।
ধ্রুব হেসে বলল ‘ থ্যাংক ইউ বাবা।
‘আরে থ্যাংক ইউ কি বলছো,বুকে এসো।
ধ্রুব বাবাকে জড়িয়ে ধরল।সঙ্গ দিল ধীরও।সেলিনা ধ্রুবর কপালে চুঁমু খেয়ে দোয়া করলেন প্রান ভরে।কেক এনেছেন ছোটখাটো। সেলিনা নিজের হাতে বানিয়েছেন।সবাই মিলে কেক কাটল।একে অন্যকে খাওয়াল।ধ্রুব এক টুকরো কেক হাতে নিলো।মেহবুব সেলিনার গালে কেকের ক্রিম মেখে দিয়েছেন।রীতিমতো লেপ্টে গিয়েছে চেহারায়।সেলিনা ওনাকে বকতে বকতে মুছছেন।মিশরা আবার দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কোথায় লেগে রয়েছে।পূর্ণতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেসবই দেখছিল।ধ্রুব এসে পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাকল,
‘মায়াপরি!
পূর্ণতা ঘুরে তাকাল।
ধ্রুব চোখ ছোট করে বলল ‘ ভালো আছো?
পূর্ণতা মুখ কোঁচকায়।এখন এটা আবার কেমন প্রশ্ন।কিছু বলতে হা করল।ওমনি সুযোগ পেয়ে ধ্রুব কেকের টুকরো ঠুসে দিল মুখে। পূর্ণতা ভ্যাবাচেকা খেল।ধ্রুব নিশব্দে হেসে উঠল ওর মুখের অবস্থা দেখে।পূর্ণতা মুগ্ধ চোখে দেখল ধ্রুবর সুন্দর,মনকাড়া হাসি।অথচ পেছনে ধীরের মুখে নেমে এলো আমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার।
_____
সমস্ত বাড়ি লাইটিং করা।
বিশাল বড় পার্টির এরেঞ্জমেন্ট করেছেন মেহবুব।পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের নিজেদের পক্ষ থেকেও অতিথিরা এসছে।পূর্ণতা একটা নীল রংয়ের থ্রিপিস পরেছে।গোসল করে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।বিছানার ওপর রাখা একটা বিরাট বাক্স দেখে অবাক হলো।এগিয়ে এল।
বাক্সের ওপর ইংরেজিতে লেখা ‘ফর ইউ মাই ফেইরি!
পূর্ণতা তোয়ালে বিছানায় ফেলে ত্রস্ত হাতে বাক্স খুলল।
সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট আলাদা হয়ে গেল তার।সমস্ত বাক্স ভর্তি শুধু চুড়িতে।পূর্ণতা বিস্ময়ে মাথায় হাত দিল।এত চুড়ি কেউ কাউকে দেয়?সেতো এই প্রথম পেল।পূর্ণতা বিড়বিড় করল
‘পাগল লোক!
ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে দুহাত ভরে নীল চুড়ি পরল পূর্ণতা।সাথে দুই ঠোঁট ভর্তি হাসি।ধ্রুব সেদিন জেনেছিল তার চুড়ি পছন্দ।তাই জন্যেই কী দিয়েছে?কিন্তু আজ তো ওনার জন্মদিন।গিফট সে কেন পাচ্ছে?
__
মিশরা হাল্কা এ্যাশ কালারের একটা গাউন দুপাশ থেকে ধরে ধরে নিচে নামল।সবাই সেজেগুজে একেবারে তৈরী। আত্মীয় স্বজনের উপচে পরা ভীড়।এখন শুধু বার্থডে বয় নিচে নামার অপেক্ষা।আশরাফ, সায়রা এরাও এসেছেন।এসেছেন মিশরার দুই খালামনিও।মিশরা বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে পোজ দিচ্ছে,আর ক্যামেরায় ক্লিক দিচ্ছে ইশিতা।পূর্ণতা এক কোনায় দাঁড়িয়ে। ধীর শত কাজের মধ্যেও তার দিক খেয়াল রাখছে।বাড়ি ভর্তি ছেলে।কেউ তার পূর্নার দিক হাত না বাড়ায়।
হঠাৎ সেলিনা এসে পাশে দাঁড়ালেন পূর্ণতার।ঘাড়ের কাছটা দেখিয়ে বললেন
‘আমার নেকলেসের চেইনটা খুলে গেছে রে পূর্ণতা।একটু লাগিয়ে দে।
পূর্ণতা লাগিয়ে দিল।এর মধ্যে সিড়িতে কারো পায়ের শব্দে সেদিক ফিরল।নীল রংয়ের পাঞ্জাবি পরিহিত ধ্রুবকে দেখে চোখ আটকে গেল ওখানেই।পাঞ্জাবির ওপর সোনালি রঙের কোটি পরেছে ধ্রুব।স্পাইক চুল,হাতে ঘড়ি।
পূর্ণতা ঢোক গিলে আওড়াল ‘ মাশআল্লাহ!

অনুষ্ঠানের সবার ধ্রুবর দিকে নজর পরল।মিশরা তো পলক ফেলতেই পারছেনা।ধ্রুবকে পাঞ্জাবিতে এত্ত সুন্দর লাগছে কেন?এমন তো নয় যে মেয়েদের মত মেক-আপ করে চেহারা পালটে ফেলেছে।হ্যা ধ্রুব সুদর্শন। কিন্তু আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছেনা?
ধ্রুব নিচে নেমে এলে একে একে সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানালো।কেউ এসে হাতে গিফট’স ও দিল।ধ্রুব ঘাড় কাঁত করে পূর্ণতার দিক ফিরল।দুজনের ম্যাচিং ড্রেস!সাথে পূর্ণতার হাত ভরা চুড়ি।তার দেয়া চুড়ি।ঠোঁট প্রস্বস্থ হলো ধ্রুবর।পূর্ণতা তার দৃষ্টি থেকে বাঁচতে পায়ের পাতার দিক চেয়ে।ধ্রুব চোখ সরিয়ে সুমন কে শুধাল,
‘রিদ আসেনি?
_____
রুপ বিধ্বস্তপ্রায়।ধ্রুব আজ তাকেও ইনভাইট করেছে পার্টিতে।বাড়ি থেকে বের হয়ে পরপর মেজাজ বিগড়ে গেল।প্রথমে গাড়ি খারাপ হলো মাঝপথে। তাদের দুটো গাড়ি।একটা তার বাবা অফিস নিয়ে যান আরেকটা তার জন্যে।ধ্রুবদের বাড়ি আর আধঘন্টার পথ।এদিকে আশেপাশে গ্যারেজ নেই।রুপ গাড়ি থেকে নেমে রিক্সার জন্যে দাঁড় হলো রাস্তার এক পাশে গিয়ে।আর সেই যে দাঁড়িয়ে, রিক্সা পাওয়ার নাম নেই।এদিকে আবার শখ করে শাড়ি পরেছে।গরমে চুল খুলে রেখেও বিপদ।সব মিলিয়ে রুপের অবস্থা বিপন্ন।সময় হয়ে যাচ্ছে। অলমোস্ট সাড়ে সাতটা বাজে।রুপ ঘড়ি দেখে পার্স থেকে ফোন বের করল।উবার ডেকে নেবে। কিন্তু উবার আসতেও তো সময় লাগবে।যেই লাউ সেই কদু হলোনা?রুপের ভাবনার মধ্যে একটা বাইক এসে ব্রেক কষলো সামনে। রুপ ফোন থেকে মুখ তুলে তাকাল।রিদ কে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল।রিদ ঠান্ডা চোখে তার আপাদমস্তক নিরীক্ষন করল।বাইকের পেছনের সিট ইশারা করে বলল
‘ ওঠো।
রুপ ভীষণ অবাক হয়ে বলল
‘ আমি?
“এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ আছে?ধ্রুবর বার্থডে পার্টি শুরু হবে। আমাকে বারবার কল করছে।সময় নেই।ওঠো।

রুপ আর কথা বাড়ালনা।চুপচাপ উঠে বসল।রিদ বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
‘পরে যাবে। আমাকে ধরে বসলে তোমার জাত যাবেনা।
রুপ কপাল কোঁচকায়। সেকি একবারও বলেছে এই কথা?আস্তে আস্তে হাত এগিয়ে রিদের কাঁধে রাখল রুপ।রিদ ভিউ মিররে একবার ওকে দেখে বাইক চালাতে মন দিল।
_____
গিফট রাখার জায়গাটা আলাদা।যেই আসছে সেই গিফট রাখছে।এখন আর ধরছেওনা।একটার ওপর আরেকটা ঠেসে রাখা।অনেক গিফট পেয়েছে ধ্রুব।পূর্ণতার মন খারাপ হলো।এত লোকের দামি দামি উপহারের ভীড়ে তার সামান্য উপহার টা কী ধ্রুবকে দেয়া উচিত? উহু।থাক। ভালো করেছে আনেনি সাথে।রুপ রিদ একসাথে ঢুকল পার্টিতে।রিদ ধ্রুবদের দিক এগিয়ে গেলেও রুপ চেনাজানা কাউকে খুঁজছে।মিশরা আর ইশিতা ছাড়া আর কাউকেই তো চেনেনা।মিশরাকে দেখেও রুপ কাছে গেলনা।ওই চুন্নির সাথে মিশবে সে?কাভি নেহি!
হঠাৎ কিছু একটা মনে করে মিশরার দিক সতর্ক চোখে তাকাল।আচ্ছা মিশরা এখানে কি করছে? ওকি ধ্রুব ভাইয়ার পরিচিত? নাকি আমার মত ও আর ইশিতাও দাওয়াত পেল?ভাবুক রুপের হঠাৎ চোখ পৌঁছাল সিড়ির গোড়ায় দাঁড়ানো পূর্নতার দিক।রুপের চোখ বেরিয়ে এল।ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল ওর দিকে।পূর্ণতা তখন গিফটের কথা ভাবছিল।আচমকা রুপের আওয়াজে চমকে উঠল সে।
‘ তুই এখানে পূর্ণতা!
পূর্ণতা হেসে বলল’ এসেছিস তুই,আম__
রুপ বলতে দিলনা।সে রেগে ফায়ার।
‘ তুই চুপ থাক।আগে আমাকে বলতে দে।শাকচূন্নি!তুই এখানে আসবি আমাকে বলেছিস? বললে কী
হতো? তোর ভাগে খাবার কম পরতো?নাকি ছেলেরা আমাকে দেখলে তোকে লাইন মারতোনা?
পূর্ণতা নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ এসব আবার কি কথা?
আমি তোকে জানাইনি কারন তোরমনের অবস্থা ভালো ছিলনা।আর কাল তো উনি তোকে আমার সামনেই বার্থডে তে ইনভাইট করলেন।একজন করলেইতো হলো।

রুপ চোখ পিটপিট করে বেলল,
“কিছুই বুঝলাম না।ভাইয়ার বার্থডে ভাইয়াই তো ইনভাইট করবেন।আচ্ছা উনি কি তোকেও ইনভাইট করেছেন?কিন্তু কখন করলেন?
তোদের কী ফোনে যোগাযোগ আছে?এই আঙ্কেল,তোর ছোট মা,মিশরা সবাই এখানে।পুরো পরিবার দাওয়াত পেয়েছে?তাহলে ইশিতা এলো কীভাবে?ওকে___
রুপের হাজারটা প্রশ্নে পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে বলল,
‘উফ থাম বাবা!এটা মিশুর মামা বাড়ি।ধ্রুব ওর মামাতো ভাই।
রুপ বেখেয়ালে বলল’ও”
খেয়াল করতেই চোখ বড় করে তাকাল।পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল,
‘জ্বি।ঠিকই শুনেছেন।
রুপ মিটিমিটি হেসে বিলল,
‘তাহলে রোমিও জুলিয়েট একই কয়েদে বন্দি?প্রেম জমে ক্ষীর তবে।
পূর্ণতা লজ্জ্বা পেল।মুখ ঘুরিয়ে বলল,
‘ধ্যাত।
‘আচ্ছা আমি যাই।ধ্রুব ভাইয়ার গিফট দিই,আর উইশ দুটোই সেড়ে আসি।
রুপ যেতে নিলে পূর্ণতা হাত চেপে ধরল।রুপ তাকালে বলল,
‘রাতুল ভাইয়ার ব্যাপারটা কতদূর কী হলো?বললিনা তো!
রুপ চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“জানিনা রে!আমি নিজেও কিছু জানিনা।রাতুল কাল থেকে আমায় একবারও ফোন করে বিরক্ত করেনি।আর রিদ ভাইয়াও কিছু জানালেন না আমাকে।
‘ধ্রুবর বন্ধুদের আমি চিনিনা।তবে ওনাকে যতদূর চিনলাম,ওনার বন্ধুরা খারাপ হওয়ার কথা নয়।রিদ ভাইয়া যখন দায়িত্ব নিয়েছেন আমার মনে হয় ভালোই হবে।
রুপ দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ধ্রুব?সরাসরি নাম সম্বোধন? সত্যি করে বল,প্রেম কতদূর?আই লাভ ইউ বলেছে?
রুপ ফিসফিস করে বলল।পূর্ণতা ওর মাথায় চাটি মেরে বলল,
‘চুপ। যা গিফট দিয়ে আয়।
_____
ধ্রুব ওই রাতুলের ব্যাপারটা ___
ধ্রুব যত্র রিদের মুখ চেপে ধরল।
চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘চুপ থাক।মা বাবা কেউ শুনলে বিপদে পরব।
ধ্রুব হাত সরাল।রিদ মাথা চুল্কাল।ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘এখন এত ভাবছিস কেন?তখন তো খুব বললি, ধ্রুব তুই এখানে থাক,আমি ম্যানেজ করছি।
রিদ বাচ্চাদের মত ঠোঁট উলটে বলল,
‘আরে, তখন তো ভেবেছিলাম পারব।ভাবলাম কোনো রকম ধমকি- ধামকি দিলে ব্যাপারটা মিটবে।মারামারি হবে কে জানত।
ধ্রুব ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘আরে আস্তে বল।কেউ শুনবে।
মাকে কথা দিয়েছিলাম ঝামেলায় জড়াবনা।

‘তাহলে এখন?
ধ্রুব কাধ উঁচু করে বলল,
‘এখন আর কী?ঝামেলা আমি পছন্দ না করলেও,ঝামেলা আমাকে ভালোবাসে।এড়ানোর উপায় আছে?
রিদ হেসে ফেলল।ধ্রুব আস্তে করে জিজ্ঞেস করল,
‘পা ‘টা ভেঙেছিস?
‘আরে না।রাতুলের নাক মুখ ফেটেছে।যা একটা ঘুষি মেরেছি মামা!তবে ওর সাথে যে কটা ছেলে এসেছিল ওদের একজনের হাত ভাঙার সম্ভাবনা আছে।ওই ব্যাটার হাতে হকিস্টিকের বারি লেগেছিল।
‘বুঝলাম!এখন কি আর বিরক্ত করবে রুপকে?
‘কীভাবে করবে?ওর ফোন আমার কাছে।সব ছবি ডিলিট।
ধ্রুব রিদের কাঁধ চাপড়ে বলল ‘ গুড!
এখন আমাকে কী করতে হবে?
‘ওই যেটা করছিস এতকাল।বাবাকে ম্যানেজ ওটাই।
মোড়ের মাথায় মারামারি করেছি সবাই দেখেছে।বাবার কানে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।তুই শুধু বাবাকে বোঝাবি এখানে আমার কোনো দোষ নেই।তুইতো জানিস,বাবার কাছে তুই হলি ভদ্র, সভ্য, ব্রিলিয়ান্ট বয়।তুই বললে এভ্রিথিং ইজ ওকে।
ধ্রুব হাসল,
‘আচ্ছা বলব।এখন আমাকে একটা কথা বল তো,রুপের ঘটনা শুনতেই এত রিয়্যাক্ট কেন করেছিলি কাল?কি ব্যাপার?(ভ্রু উঁচিয়ে)
পছন্দ করিস মেয়েটাকে?
রিদ ঘাড় চুল্কে বলল,
‘জানিনা ভাই।তবে যখন মেয়েটাকে অরুপসি ডাকি,নাক ফুলিয়ে যেভাবে তাকায় না,সোজা বুকে এসে লাগে।ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে ফেলি।
ধ্রুব মুখ কুঁচকে বলল ‘ অশ্লীল!
রিদের শেষ কথাটা শুনতেই রুপের মাথা চক্কর দিল।লজ্জ্বায় হাঁসফাঁস করে উঠল।হাতে ধরে রাখা র‍্যাপিং বাক্সটা পরে যেতে ধরল।রুপ ফিরে যেতে নিল,এসব শুনেও ধ্রুবর কাছে গিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব না।রিদ আছে যে।কিন্তু তার আগেই ধ্রুব দেখে ফেলল ওকে।রিদকে লজ্জ্বায় ফেলতে দুষ্টুমি করে ডেকে বলল,
‘আরে রুপ কখন এলে?
রুপের কদম থেমে গেল।অসহায় মুখ করে তাকাল সে।রিদ ওকে দেখেই জ্বিভ কাটল।শুনে ফেলল কী?
‘দাঁড়িয়ে কেন?এসো।
ধ্রুবর ডাকে রুপ গিয়ে দাঁড়াল ওদের সামনে।লজ্জ্বায় তার মরিমরি অবস্থা!চোখ তুলতেই কষ্ট।কোনো রকমে বলল,
‘হ্যাপি গিফট ভাইয়া।
ধ্রুব চোখ ছোট করল।
‘হ্যাপি গিফট?
রুপ ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘না মানে…
কথা মুখ থেকে বের হচ্ছেনা দেখে রুপ গিফট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্যে বার্থডে ভাইয়া।
ধ্রুব রিদের দিক তাকাল।রিদ নিশব্দে ঠোঁট নেড়ে বোঝাল,
‘সব শুনে ফেলেছে।
ধ্রুব রুপের দিক ফিরল।রুপ বারবার জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে।কথাতো মুখে আসছেনা।যা বলছে সব উল্টোপাল্টা। ধ্রুব গিফটের বাক্স হাতে নিয়ে বলল,
‘থ্যাংক ইউ।তুমি এসেছ আমি খুশি হয়েছি রুপ।

রুপ হাসল।হাসিটা জোর করে ঠেলে বের করেছে।একবারও রিদের দিক না চেয়ে সোজা হাটা দিল পূর্ণতার কাছে যাওয়ার জন্যে।ও যেতেই ধ্রুব শব্দ করে হেসে উঠল।রিদ কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
‘হাসিস না বা**।সব শুনেছে।প্রেস্টিজ শেষ আমার।
_____
আশরাফ মেয়ের কাছে এসে বললেন,
‘পূর্ণতা মা।কেমন আছো?
পূর্ণতা হেসে বলল
‘ভালো আছি বাবা।তুমি?
‘আমার মা’টা এখানে থাকলে ভালো থাকি কী করে? অনেক দিন তো হলো।বাড়ি যাবে এবার?
পূর্ণতা আহ্লাদি কন্ঠে বলল,
‘আর দুটোদিন থাকি বাবা?
আশরাফ মাথায় হাত বোলালেন,
‘বেশ!থাকো। মনে হচ্ছে মামুনির আদর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা।তাইনা?
মাথা দোলালো পূর্ণতা।
অথচ নিজেকে শুধাল,
“সত্যিই কি শুধু মামুনির আদরের জন্যে থেকে যাচ্ছি আমি?নাকি অন্য কিছু?
ধ্রুব’র দিক তাকাল পূর্ণতা। ধ্রুব ওর বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।সেই সময় ধ্রুবও তাকাল।
চোখাচোখি হতেই ধ্রুব ভ্রু নাঁচাল।যার অর্থ
‘কী?
পূর্ণতা জোরে দুবার মাথা ঝাকিয়ে বোঝাল ‘কিছুনা,কিছুনা।
_____
কেক কাটা শেষ।গেস্টদের খাবারের ব্যাবস্থা করা হবে এখন।সুমন ধ্রুবর কাছে এসে বলল
‘এই ধ্রুব।গরিবের অরিজিৎ সিং!একটা গান শুনাবা না মামা?
‘সব সময়ই তো শোনাই।আজ থাক।
রাফিন দুবার মাথা নেড়ে বলল,
‘ কোনও থাকাথাকি নাই।আমি তোর রুম থেকে গিটার আনছি।তুই গান গাইবি ব্যাস।
বাকিরা তাল মেলায়।দু মিনিটের মাথায় গিটার হাতে নামল রাফিন।রিদ হৈহৈ করে সবার মধ্যে এনাউন্স করে দিলো ধ্রুবর গানের কথা।
মিশরা সেলফি তোলা ছেড়ে সজাগ হয়ে দাঁড়াল।পূর্ণতা রুপ, তাদের কথাও থেমে গিয়েছে।

ধীর চেঁচিয়ে বলল ‘সমস্ত বাড়ির লাইটস অফ করতে।
তাৎক্ষণিক কড়া লাইটস নিভে গেল।জ্বলে উঠল টিমটমে আলো।ধ্রুব গিটার নিয়ে সিড়ির শেষ ধাপে বসল।পাশে বসল রিদ।সুমন,রাফিন, সাকিব বাকিরা সবাই ওর সামনেটা ছেড়ে আশপাশ ঘিরে দাঁড়িয়েছে।ধ্রুব পূর্ণতার দিক একবার তাকাল।এতেই গুটিয়ে গেল পূর্ণতা।ধ্রুব মুচকি হেসে গিটার বাজাতে বাজাতে গান ধরল
‘ঠিক এমন,এভাবে।
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই।আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল,ফুটে যাবে ফুল,ভিজে যাবে গা।
কথা দেয়া থাক,গেলে যাবি চোখের বাইরে না।

ধীর জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে এক ধ্যানে পূর্ণতার দিক চেয়ে রয়েছে।পূর্ণতা রুপের শাড়ির আচলের কোনা আঙুলে প্যাচাতে প্যাচাতে গান শুনছে।গাল দুটো রক্তিম।ঠোঁটে লাজুক হাসি।ধ্রুব তার দিক চেয়েই গাইছে,

“আটকে তোকে রাখতে চাইছি খুব।সকালে আমার,বিকেলে আমার।
তুই ডাক না দিলে থাকব আমি চুপ,
দিনেতে আমার,দুপুরে আমার।
ছুঁয়ে দে আঙুল,ফুটে যাবে ফুল,ভিজে যাবে গা।
কথা দেয়া থাক গেলে যাবি চোখের বাইরে না।
______
প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে এগারোটা।সব মিটিয়ে এখন আগের মতোই শূনশান বাড়ি।সন্ধ্যে থেকে হৈ-হুল্লোড় কেটে গেছে কীনা।
হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে বসে আছে পূর্ণতা।ভেতরে সুতির পাঞ্জাবি।ধ্রুবর জন্যে কিনেছিল।কিন্তু দেয়ার বেলায় দ্বিধাগ্রস্ত সে।ধ্রুবর এই সামান্য উপহার কী পছন্দ হবে?হাতে টাকা বেশি ছিলনা।বাবার কাছে চাইলেই দিতো।কিন্তু পূর্ণতার ইচ্ছে হয়নি চাইতে।হাতখরচ বাচিয়ে যতটুকু ছিল তা দিয়েই ধ্রুবকে উপহার দেয়ার ইচ্ছে হলো। কাল ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে আড়ংয়ে নেমে কিনে এনেছে।পূর্ণতা বেশ খানিকক্ষন ভেবেভেবে ঠিক করল দিয়ে আসবে।আর যাই হোক!গিফট তো গিফটই হয় তাইনা!আর ধ্রুব নিশ্চয়ই এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ছেলে নয়।
পূর্নতা ঘর থেকে বের হলো।পাশের রুমটা ধ্রুবর।
দরজা ভেজানো।পূর্ণতা ক’বার টোকা দিলেও উত্তর এলোনা।পূর্ণতা অধৈর্য হয়ে দরজা ঠেলে ঢুকতে গেল ওমনি ধ্রুব’র বুকের সাথে ধাক্কা।ধ্রুব ও বেরোতে যাচ্ছিলো।দুজন দুদিকে এক পা পিছিয়ে গেল ধাক্কায় ।ধ্রুব পূর্ণতাকে দেখে চোখ চোখা করে বলল,
“, ধাক্কা খাওয়ার জন্যে আমাকে বুঝি অনেক বেশিই পছন্দ তোমার?

পূর্ণতা বলল ‘ আমি বুঝতে পারিনি।স্যরি!
‘নিজের লোককে স্যরি বলতে হয়না মায়াপরি।তা তুমি হঠাৎ আমার রুমে?রুম দেখতে এসছো?

“আপনার রুম দেখে আমি কি করবো?
” কেনো? যেখানে সারাজীবন থাকবে, সেটা দেখে রাখবেনা?
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে বলল,
– আবার শুরু করলেন??
ধ্রুব পূর্ণতার হাতের দিক চোখ পরলে শুধাল,
” তোমার হাতে এটা কি?
পূর্ণতা নিচের ঠোঁট ওপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখল কিছুক্ষন।’এখনও ধ্রুবকে উপহার দিতে সঙ্কোচ হচ্ছে।
“এটা আপনার জন্যে এনেছিলাম।পূর্ণতার মিহি কন্ঠ।ধ্রুব অবাক হয়ে তাকালে আরো জড়োসড়ো হয়ে গেল মেয়েটা।ধ্রুবর হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিল, এর আগেই ধ্রুব এক হাত টেনে ধরে বলল,
পালাচ্ছো কোথায়?
পূর্ণতা ঘাড়বাঁকা করে ফিরল,
‘গিফট তো দিয়ে দিলাম, আবার কি?

‘সে দিয়েছ।কিন্তু আমার তোমাকে কিছু দেখানোর আছে।ওয়েট।
হাত ছেড়ে ধ্রুব রুমে গেল।পূর্ণতার দেয়া পাঞ্জাবির প্যাকেট রাখলো বিছানায়।
পূর্ণতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উকিঝুকি মেরে চেষ্টা করল ধ্রুব কী দেখাবে সেটা জানার।ধ্রুব এগিয়ে এলে সোজা হয়ে দাঁড়াল চটপট। ধ্রুবর হাতে ফোন।
হাসছে মিটিমিটি। পূর্ণতা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কী দেখাবেন?
ধ্রুব কথা বললনা।ফোনের স্ক্রিন পূর্ণতার সামনে ধরল।
ধ্রুবর মুখ থেকে চোখ ফিরিয়ে সেদিক দেখতেই পূর্ণতার ভ্রু কপালে উঠে গেল।ছবির মধ্যে পায়েস খাচ্ছে সে,ঠোঁটের এক পাশ বেয়ে পরছে।মুখ কেমন বেঁকিয়ে আছে।চোখ বুজে যে শান্তি নিয়ে খাচ্ছিল,ছবির মধ্যে সে চোখ উলটে রয়েছে।সব মিলিয়ে এক বিশ্রী অবস্থা!পূর্ণতা আর্তনাদ করে বলল,
‘একি!এটা কে তুলেছে?
‘কেন?আমি।
‘আপনি? আপনি এরকম জঘন্য একটা ছবি তুললেন আমার?
পূর্ণতার অবিশ্বাস্য কন্ঠ।ধ্রুব সুন্দর করে হেসে বলল,
‘ইয়েস!দারুন হয়েছে না?

‘দারুন না ছাই!ফোন দিন,আমি এক্ষুনি ডিলিট করব ওটা।
ধ্রুব তাৎক্ষণিক ফোন নিজের কাছে এনে বলল,
‘নো ওয়ে!
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে বলল,
‘কেন?এমন বিভৎস ছবি রেখে কী হবে?

‘নিজের ছবি নিজেই বিভৎস বলছো?তাহলে যারা দেখবে তারা না জানি আরও কত সুন্দর কম্পলিমেন্টস দেবে মায়াপরি!
পূর্ণতা চোখ গোল করে বলল,
” মানে?আপনি এগুলো কাকে দেখাবেন?

” শুধু দেখাবোনা। কাল তো ভার্সিটিতে ফাংশন রয়েছে।সেখানে পোস্টার হিসেবে ব্যাবহার করব।
পূর্ণতা আঁতকে উঠল।
‘ কি? না না প্লিজ এমন করবেন না।আমার মান ইজ্জ্বত সব একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।

ধ্রুব ভ্রু উঁচাল ‘ করবনা?
পূর্ণতা অসহায় চেয়ে মাথা দোলাল।
ধ্রুব কাঁধ উচু করে বলল,
‘বেশ! তুমি যদি আমার কথা শোনো তবে আমি এক্ষুনি ফোনটা তোমার হাতে দিয়ে দেব।তারপর তুমিই ডিলিট কোরো না হয়।
পূর্ণতা চিন্তাভাবনা না করেই বলল,
– কি কথা বলুন?,আমি শুনবো।
ধ্রুবর মিটিমিটি হাসি চওড়া হলো।পূর্ণতার দিকে ঝুঁকে এসে বলল,
“ইউ হ্যাভ টু কিস মি!
পূর্ণতা স্তব্ধ।কাশি উঠে গেল তার।ধ্রুব লম্বা শ্বাস টেনে বলল
‘থাক এত কাশতে হবেনা!একটাই তো কিস করতে হবে।সেটা করে দিলেই হচ্ছে।
পূর্ণতা কোনো রকম নিজেকে ধাতস্থ করে বলল
‘আপনার মাথা ঠিক আছে?আমি পারবনা ওসব।
ধ্রুব মেনে নিল,
‘পারতে হবে তাতো বলিনি।না পারলে নেই।আমি বরং ছবিটা___
পূর্ণতা উদ্বেগ নিয়ে বলল,

‘এই না না।না প্লিজ,এমন করবেন না।
‘তুমি তো আমার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছোনা মায়াপরি।আর রাজি নাহলে আমাকে তো__

পূর্ণতা আওড়ে দিল
‘আমি রাজি।
ধ্রুব অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল।পূর্নতা মিনমিন করে বলল,
‘একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কিন্তু।
ধ্রুব দৃঢ় কন্ঠে বলে দিল
‘এভ্রিথিং ইজ ফেয়্যার ইন লাভ।
সাথে গাল এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘নাউ কিস মি মাই ফেইরি!
“এভাবে পারবোনা,,চোখ বন্ধ করুন।
ধ্রুব তাতেও রাজি।পূর্ণতা যে তাকে চুমু খাবে এত ছিল কল্পনাতীত।
বলল ‘ ওকে করছি।তবে ভুলেও ভেবোনা যে আমি চোখ বন্ধ করলেই তুমি পালাবে।আমি কিন্তু সত্যি সত্যি ছবিটার পোস্টার বানাব।ধ্রুব যা বলে তাই করে।
‘বুঝেছি বুঝেছি।চোখ বন্ধ করুন এবার।

ধ্রুব চোখ বুজল।শুকনো ঢোক গিলে ধ্রুব’র দিক ঠোঁট এগোলো পূর্ণতা।আলতো করে ছুঁয়ে দিল বারিয়ে দেয়া ফর্সা গাল।পুরো শরীর লজ্বায়,কুন্ঠায় থরথর করে কেঁপে উঠল।দৌড়ে ঢুকে গেল নিজের রুমে।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেলল।বুক এখনও লাফাচ্ছে।ধড়াস ধড়াস করছে।
এদিকে ধ্রুব মুচকি হেসে গালে হাত দিল।তার মায়াপরির প্রথম স্পর্শ এটা।আর জন্মদিনে তার প্রাপ্ত সেরা উপহার!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here