ফাগুন_ এলো_বুঝি! (১৭)

0
950

#ফাগুন_ এলো_বুঝি!
(১৭)
“এই পূর্ণতা!কি হলো তোর?হাপাচ্ছিস কেন এভাবে?
পূর্ণতা চোখ খুলল তৎক্ষনাৎ।বিছানার ওপর বসে থাকা সেলিনাকে দেখে প্রথম দফায় ভঁড়কাল।সেলিনা উদ্বিগ্ন হয়ে চেয়ে আছেন।পূর্ণতা শ্বাস ফেলল।নিজেকে সামলে ঠিকঠাক করল।হাসার চেষ্টা করে বলল,
” কিছু হয়নি মামুনি।
তুমি,তুমি কখন এলে?

‘এইতো কিছুক্ষন।এসেছিলাম তোর সাথে একটু গল্প করতে।তুই রুমে ছিলিনা তাই ভাবলাম একটু বসি,তা এরকম হাপালি কেন?আর দৌড়ে এলি মনে হলো!
পূর্ণতা নিচের দিক চেয়ে বিড়বিড় করল,
“না দৌড়িয়ে উপায় আছে?তোমার ছেলে যা জ্বালাচ্ছে আমায়।
‘তাই?
পূর্ণতা হকচকিয়ে তাকাল।মামুনি শুনে ফেলেছে বুঝে জ্বিভ কাটল।আমতাআমতা করে বলল,
‘না মানে আমি বলতে চেয়েছি__
সেলিনা মোটা কন্ঠে বললেন
এদিকে আয়।
পূর্ণতা কাচুমাচু মুখে এগিয়ে গেল।সেলিনা পাশ ইশারা করলেন,
‘বোস।

পূর্ণতা বসেই বলতে নিল ‘ মামুনি হয়েছে কী,আমি বলতে__
সেলিনা চোখ রাঙালেন ‘ চুপ থাকবি?
পূর্ণতা ঠোঁট উলটে চুপ করে গেল।কি একটা কথা বলেছে।এখন কী হবে?পূর্ণতার চেহারা দেখে সেলিনা ঠোঁট চেপে হাসলেন।পূর্নতার নিচু থুতনী উঁচু করে বললেন,
“তা আমার ছেলেটা বুঝি বড্ড বেশিই জ্বালায় তোকে?
পূর্ণতা লজ্জ্বা পেল।সেলিনা হেসে বললেন,
“কিন্তু এই জ্বালানোতে আমি যে তোর মুখে বিরক্তির জায়গায় ভালোলাগা দেখতে পাচ্ছি পূর্ণতা।এমন লজ্জ্বারাঙা মুখ দেখলে,না জ্বালিয়ে থাকা যায়? আমার ছেলেরই বা দোষ কোথায়?
পূর্ণতার কুন্ঠা দ্বিগুন হলো।
‘তুমিও না মামুনি!
“আচ্ছা এতো লজ্জ্বা পেতে হবেনা।আমাকে একটা কথা বলবি পূর্ণতা?
পূর্ণতা তাকাল।
‘কী কথা মামুনি?
সেলিনা ওর দুহাত মুঠোয় চেপে বললেন,
“আমার ছেলের এমন জ্বালায় সারাজীবন যদি তোকে জ্বালাতে চাই,জ্বলবি তুই?

পূর্ণতা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু চেহারায় চেয়ে থাকল।সেলিনা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,
‘আমার ছেলের বউ হবি?
পূর্ণতার চোখ ফেটে বেরিয়ে আসবে প্রায়।ওষ্ঠযুগল আলাদা হয়েছে সেই কখন।অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
‘মামুনি!কি বলছো?
‘কেন?তোর আপত্তি আছে?পারবিনা,এই বুড়ো মামা মামুনিকে শ্বশুর শাশুড়ি হিসেবে মেনে নিতে?আমার পাগল ছেলেটার ঘর সামলানোর দায়িত্ব নিতে?পারবিনা পূর্ণতা?

পূর্ণতার লজ্জ্বায় রাঙা হয়ে মাথা নামিয়ে নিল।ওপর নিচ মাথা নেড়ে ক্ষীন কন্ঠে বলল
‘পারব।
লাজুক পূর্ণতা আবার ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।সেলিনা সেদিক চেয়ে হাসলেন।প্রসন্ন শ্বাস ফেললেন।
“আমি ঠিক জানতাম,তোরও ধীরকে পছন্দ।এবার শুধু সুযোগ বুঝে তোদের এক করে দেওয়ার পালা।খুব আদরের বউমা হবি তুই আমার।

এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে সিড়ির দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে পরলো পূর্ণতা।ঘন নিঃশ্বাস পরছে তার।কানে বাজছে সেলিনার কন্ঠে উচ্চারিত ‘ আমার ছেলের বউ হবি?পূর্ণতা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল।তাকাল ধ্রুবর ঘরের বন্ধ দরজার দিকে।
নিজে নিজে বলল’ আমি বউ হবো?আপনার বউ? বিয়ে হবে আমাদের?
কথাটা ভেবেই পূর্ণতার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত গড়াল।প্রকৃতিও বুঝি টের পেল পূর্ণতার বুকের তোলপাড়। ফুরফুরে বাতাসে মেতে উঠল তারা।আচমকা চোখে কিছু এসে পরতেই চোখ কুঁচকে নিল পূর্ণতা।
‘আহ!
চোখ জ্বালা করছে।পূর্ণতা ত্রস্ত হাতে চোখ ডলছে।পানিও বেরিয়েছে এর মধ্যে।ধীর সিড়ি দিয়ে উঠছিল।
পূর্ণতাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ ডলতে দেখে দ্রুত এগোল ওর দিকে।অধৈর্য কন্ঠে বলল,
” কি রে পূর্না! কি হয়েছে চোখে?

‘জানিনা ভাইয়া।কি যেন পরেছে!জ্বলছে খুব।
“হাত সরা।দেখি আমাকে দেখতে দে..
পূর্ণতা হাত সরাল।চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।ধীর ওর মুখটা আজোলে তুলে ফু দিচ্ছিল চোখের মধ্যে।
শূন্যে একটা আপেল ছুড়ে আবার ধরে ফেলছে মিশরা।ওভাবেই রুম থেকে বের হতে যাবে হঠাৎ চোখ পৌঁছালো ধীর আর পূর্ণতার দিকে।ধীরের পেছন দিক টা দেখা যাচ্ছে।মিশরা দরজা আগলে দাঁড়িয়ে গেল।নিজের মত ভেবে নিল ধীর পূর্ণতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিস করছে।মিশরার চোখ আকাশে উঠে গেল।
” ও গড! এই বাড়িতে দেখছি খুল্লাম খুল্লাম প্রেম চলছে আজকাল।ছি!ছি! এখন যদি মামা -মামুনি বা অন্যকেউ এসে যেতো?ননসেন্স!আর পূর্ণতা তুইও এসব শিখে গেছিস?ভালো মেয়ে মনে করেছিলাম তোকে।বিয়ের আগে কী সব ছি!
ইস!বাবা যদি তার মেয়ের এমন কুকীর্তির কথা শুনতেন!মুখ লোকানোর জায়গা পেতেন উনি?ছবি তুলে রাখব একটা? বাবাকে দেখাব।
পরমুহূর্তে ভাবল,
‘না।এসব ছবি কখনও বাবাদের দেখানো যায়?আমার নিজেরই লজ্জ্বা লাগছে।ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম কিছু নিয়ে লজ্জ্বা পেল মিশরা।
মিশরা আপেলে কামড় বসাল।চিবোতে চিবোতে আওড়াল,
‘যতখুশি প্রেম করে নাও ধীর ভাইয়া!বলাতো যায়না,ভবিষ্যতে কী কী ঘটে তোমাদের সাথে!আশেপাশে তো শত্রুর অভাব নেই তাইনা?
ক্রুর হেসে ঘরের দরজা চাপিয়ে দিল মিশরা।

“কমেছে?নাকি জ্বলছে এখনও?
” হ্যা কমেছে একটু।কি পরেছিল কিছু পেলে?
“তেমন কিছুনা।চোখের পাপড়ি টা ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল।
পূর্ণতা ছোট করে বলল
‘ও।আচ্ছা,আমি এখন যাই।
“কোথায় যাচ্ছিস পূর্না!দাঁড়া না….
” দাড়ালে হবেনা ধীর ভাইয়া।আমাকে এখন প্র‍্যাক্টিস করতে হবে।
ধীর ভ্রু কোঁচকায়
” কিসের প্র‍্যাক্টিস?
“কাল পহেলা ফাল্গুন না?সেই উপলক্ষে প্রোগ্রাম আছে ইউনি-ভার্সিটিতে।
ধীর অবাক কন্ঠে বলল ” তুই নাম দিয়েছিস?
‘দিতে চাইনি।হয়েছে কি ___

“তার মানে কাল তোর সারাদিন ভার্সিটিতে থাকতে হবে??
“প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া অব্ধি তো থাকতেই হবে।
কেনো??
‘কিছুনা।
ধীরের অন্ধকার চোখমুখ পূর্ণতার নজরে পরলনা।সে এখনও মুদে আছে ধ্রুবর সাথে তার বিয়ে হবে সেই কথায়।এর মাঝে সেলিনা পূর্নতার ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিলেন।ধীর আর পূর্ণতাকে কথা বলতে দেখে মুচকি হেসে চলে গেলেন তিনি।
পূর্ণতাও তারপর রুমে চলে গেল।ধীর তখনও দাঁড়িয়ে থাকল ওখানে।তার মনখারাপের আরো একটা কারন আছে অবশ্য।আর তা হলো,আগামীকাল প্রথম বসন্ত উপলক্ষে ভেবেছিল পূর্ণতাকে মনের কথা জানাবে।ঘুরতে বের হবে ওকে নিয়ে।কিন্তু তার আগেই__
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে ধীরের হাসি আবার দপ করে জ্বলে ওঠে,

” এক কাজ করব, কাল পূর্নার ইউনিভার্সিটি গিয়েই ওকে প্রপোজ করব আমি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here