#ফাগুন_এলো_বুঝি!
(৩০)
সারা বিকেল ঘুরে, হোটেলে ফেরা হলো বেশ রাতে।বাইরে থেকে ডিনার সেড়ে এলো চারজন।উচ্ছ্বল মিশরা মন খারাপ করে থাকল সারা সময়। কথা বলল খুব কম।ধীরের সঙ্গে তো নয়ই,যতটুকু বলেছে শুধু ধ্রুবর সাথে।পূর্নতা ঠিক খেয়াল করেছে মিশরার মন খারাপ।হোটেলে এসেই নিজের ঘরে না গিয়ে ধীরের ঘরে গেল সে।ধীর ওদের সাথে ফেরেনি।ফিরেছিল ওরা তিনজনই।খাওয়ার পর কোথায় যে গেছে বলে যায়নি।পূর্নতা মিশরার পেছন পেছন ওদের রুমে ঢুকল।
‘মিশু!
মিশরা ফিরে তাকায়।পূর্নতাকে দেখে বলল,
‘কিছু বলবি?
‘তোমার কী মন খারাপ?
প্রশ্নটায় মিশরার কালো মুখ আরো কালো হয়ে গেল।অথচ মাথা নেড়ে বলল,
“না।
” কিছু হয়েছে?আমাকে বলতে পারো।
‘কিছু হয়নি।
‘কিছু একটা তো__
মিশরা রেগে গেল এবার।
‘বললাম তো কিছু হয়নি।তাও এত কথা বলছিস কেন?
পূর্ণতা চুপ করে গেল।ছোট শ্বাস ফেলে ফিরে আসতে নিলেই মিশরা ডেকে উঠল এবার।
‘পূর্নতা!
পরপর একটু চুপ থেকে বলল,
“স্যরি!
পূর্ণতা অবাক চোখে ঘুরে তাকাল।ঠিক শুনল কী?এতগুলো বছরে মিশরা এর থেকেও খারাপ ব্যাবহার করেছে।কখনও স্যরি বললনা।আজ হঠাৎ?
মিশরা এগিয়ে এল।নরম কন্ঠে বলল,
‘রাগ করিস না।আমার মন টা ভালো নেই।তাই চেঁচিয়ে ফেললাম।
পূর্ণতার চোখ চিকচিক করে উঠল।আনন্দে,খুশিতে মিশরাকে জড়িয়ে ধরল প্রথম বারের মত।মিশরা থমকাল প্রথমে।সময় নিয়ে সেও হাত উঠিয়ে পূর্নতাকে আগলে ধরে।পূর্ণতা খুব আনন্দে কেঁদে দিল।ধ্রুব পূর্নতাকে না পেয়ে খুঁজতে এসেছিল।এই দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে গেল সে।হা করে থাকল কিছু সময়। মিশরা পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরেছে?হাউ?
_____
রাত বাড়ল।ঘড়ির কাঁটা একটা ছোঁবে প্রায়।ধীর তখনও হোটেলে ফেরেনি।মিশরা চিন্তায় আধখানা হয়ে ঘুমাতে পারলনা।টিকতে না পেরে শেষমেষ ধ্রুবদের কাছে গেল।
ধ্রুব তখন পূর্নতার বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়ে।দরজা ধাক্কানোর শব্দে প্রথমেই ঘুম ভাঙলো তার।মুখ কুঁচকে নড়েচড়ে উঠল।যখন মস্তিষ্ক টের পেল কেউ অধৈর্য হাতে করাঘাত করছে লাফিয়ে উঠে বসল ধ্রুব।দ্রুত গিয়ে দরজা খুলল।মিশরা সঙ্গে সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে বলল,
‘ধীর ভাইয়া এখনও ফেরেনি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ফোন করেছিলি?
‘হ্যা।বন্ধ।
ধ্রুবর কোঁচকানো ভ্রু আরও গাঢ় হয়।ওদের কথাবার্তায় পূর্নতাও জেগে গেল।মাঝরাতে মিশরাকে দেখে উদ্বিগ্ন পায়ে এগিয়ে এল।
‘কী হয়েছে?
ধ্রুব ফোনে ধীরের নম্বরে ডায়াল করছে।মিশরা পূর্নতাকেও একই কথা বলল।ধীর ফেরেনি।পূর্নতাও এবার চিন্তায় যোগ দিল মিশরার সঙ্গে।
ধ্রুব ধীরকে ফোনে পেলনা।পূর্নতা বলল,
‘আমরা বরং ভাইয়াকে খুঁজতে যাই।বিচে থাকতে পারে।
মিশরাও তাল মেলায়,
‘হ্যা তাই করি।
কিন্তু ধ্রুবর মন স্বায় দিলনা।এত রাতে দুটো মেয়ে মানুষ নিয়ে বাইরে যাওয়া ঠিক হবেনা।আপত্তি জানিয়ে বলল,
“না তোদের যেতে হবেনা।আমি দেখছি।
পূর্ণতা উদ্বেগ নিয়ে বলল,
” আপনি একা কোথায় যাবেন?
‘আমার কিছু হবেনা।
ধ্রুব বেরিয়ে গেল।মিশরা পূর্নতার দিক তাকাল।মেয়েটার মুখ শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।পূর্নতা লক্ষ্য করল ওর চেহারা।একেই বুঝি বলে স্বামীর চিন্তা!আশ্বাস্ত করতে বলল,
“কিছু হবেনা।চিন্তা কোরোনা।উনি গেলেন তো,ভাইয়া ঠিক চলে আসবে।
পানি খাবে একটু?
মিশরা মাথা নাড়ল।খাবে।পূর্নতা ওকে নিয়ে এসে বিছানায় বসাল।টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে হাতে দিল।মিশরা গ্লাসটা কেবল মুখের সামনে ধরল এর মধ্যে ভেসে এল একটি পরিচিত স্বর।
‘তুই এত রাতে ওদের ঘরে কী করছিস?
পূর্ণতা-মিশরা এক সঙ্গে দরজার দিক তাকাল।ধীরকে দেখেই মিশরা পানি খাওয়ার কথা ভুলে গেল।দাঁড়িয়ে পরল বসা থেকে।
‘তুমি কোত্থেকে এলে ধীর ভাইয়া?
পূর্ণতার প্রশ্নে ধীর সহজ জবাব দেয়,
‘কেন?মেইন গেট দিয়ে।
পূর্ণতা-মিশরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।
মিশরা বলল,
‘তুমি এতক্ষন কোথায় ছিলে?ফোন ধরছিলে না কেন?
‘চার্জ শেষ হয়ে গেছিল।তোরা কী চিন্তা করছিলি আমায় নিয়ে?
পূর্ণতা বলল,
‘উনি,উনিতো তোমাকে খুঁজতে গেলেন।তুমি এলে তাহলে ওনাকে দেখোনি?
‘কে ধ্রুব?কই দেখতে পেলাম না তো।আর আমাকে খোজার কী দরকার?আমি কী ছোট বাচ্চা?তুই ওকে ফোন কর পূর্না,বলে দে আমি এসে গেছি।
পূর্ণতা মাথা নাড়ল।ধীর মিশরাকে বলল,
‘রুমে আয়।
মিশরা আর পানিটা খেলনা।টেবিলের ওপর রেখে হাটা ধরল।পূর্নতা ফোন নিয়ে ধ্রুবর নম্বরে ডায়াল করল।
‘ওনার নম্বর বন্ধ বলছে কেন?
মিশরা এগোতে গিয়েও কথাটা শুনে ফিরে তাকায়।ধীর ও থেমে দাঁড়ায়।
‘বন্ধ বলছে মানে?ধ্রুব ভাইয়ার ফোন তো চার্জেই লাগানো ছিল।আমাদের সামনেই না খুলল।
‘তাইতো।তাহলে বন্ধ কেন বলবে?ওনার ফোন তো খোলা থাকে।বন্ধ থাকেনা।
“আরে,বোধ হয় নেটওয়ার্ক নেই।ফোন বন্ধ আসা মানেই খারাপ কিছু নয়।তোরা এত ভাবিস না।পূর্না,ঘুমিয়ে পর।ধ্রুব চলে আসবে।
ধীরের কন্ঠ নিশ্চিন্ত।
কিন্তু পূর্নতা নিশ্চিন্ত হতে পারলনা।দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পূর্নতার দিক চেয়ে থাকল মিশরা।ধীর তখন তাড়া দিল,
‘কীরে আয়!
মিশরা পূর্নতাকে দেখতে দেখতেই রুম থেকে বের হল।যাওয়ার আগে বলল,
‘ কোন ও প্রয়োজন হলে ডাকিস।
পূর্ণতা বারবার ধ্রুবর নম্বরে ডায়াল করছে।লাগছেনা ফোন।বন্ধ তখনও।পূর্নতার এবার হাঁসফাঁস লাগছে।ঘরের মধ্যে পায়চারি করল কিয়ৎক্ষন।ঘড়ির দিক চেয়ে দেখল দুইটা বাজে প্রায়।পূর্নতার বুক কেমন কাঁপতে শুরু করল।এক ঘন্টা ধরে মানুষটা নিখোঁজ।কোথায় কোথায় ধীর ভাইয়াকে বেকার খুঁজে বেড়াচ্ছে কে জানে।আর ধীর ভাইয়াও,কেমন লোক,ওনাকেই তো খুঁজতে গেছিল।আর উনি কী নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে গেলেন।
পূর্নতার অসহায় লাগছে নিজেকে।নরম মেয়েটা কেঁদেই ফেলল। হাত জড়ো করে প্রার্থনা করল ধ্রুব যেন ঠিক থাকে।মন শান্ত না হওয়ায় তাহাজ্জুদ পড়তে দাঁড়িয়ে গেল পূর্ণতা।আড়াইটা বাজলেও ধ্রুবর দেখা নেই।পূর্নতা এবার আর ঘরে থাকার সাহস পেলনা।কেমন কু ডাকছে ভেতরে।পূর্নতা ঘর থেকে বের হলো।হোটেলের করিডোর আলোয় ভর্তি।একটা ব্যাপার পূর্নতার মাথায় ঢুকলনা,ধ্রুব যাওয়ার পরপরই ধীর এসছে।দুজন দুজনকে না দেখে থাকল কীভাবে?
পূর্নতা দরজা বাইরে থেকে চাপিয়ে বের হবে এর মধ্যেই পেছন থেকে ধীর ডেকে উঠল,
‘কোথায় যাচ্ছিস?
পূর্ণতা থামলনা।ছুটতে ছুটতে বলে গেল,
‘ওনাকে খুঁজতে।
ধীরের মেজাজ বিগড়াল।মিশরাও বেরিয়ে এসছে পূর্নতার কথা শুনে।ধ্রুবর জন্যে তারও চিন্তা হচ্ছে।সেও বের হয়ে গেল একিরকম।বলে গেল,
“আমিও যাই।পূর্নতা একা একা কোথায় যাবে!
ধীরের অবাক লাগল মিশরার আচরন।এই মেয়ে আবার পূর্নতাকে নিয়ে ভাবছে কবে থেকে?উপায় না দেখে স্যান্ডোগেঞ্জির ওপর শার্ট জড়িয়ে সেও বেরোলো।
মিশরা-ধীর এসে দেখল পূর্নতা রিসিপশনে দাঁড়িয়ে। কথা বলছে একটা লোকের সঙ্গে। ওরা দুজন এগিয়ে এসে দাঁড়াল।
মিশরা জিজ্ঞেস করল,
‘কী হয়েছে?
পূর্নতা তাকাল।এই টুকু সময়ে চেহারার অবস্থা করুন তার।
‘উনি নাকি সাথে হোটেলের একজন গার্ড নিয়ে গেছিলেন।
ধীর বলল,
‘ও তাহলে তো আর কোনও চিন্তাই থাকলনা।আমিতো বলেছি তোদের,চিন্তার কিছু নেই।যা তোরা ঘরে যা।
পূর্ণতা মাথা নাড়ল,
‘আমি যাবনা।উনি না ফেরা অব্দি আমি কোথাও যাবনা।
” কিন্তু পূর্নতা,এত বড় জায়গায় কোথায় খুঁজবি ভাইয়াকে?
মিশরা লোকটার দিক চেয়ে বলল,
‘আচ্ছা আপনাদের ওই গার্ডের নম্বরে কল দিন তো!
লোকটা তাই করল।কিন্তু রিসিভ হলোনা।এতে যেন চিন্তা আরো দ্বিগুন হলো পূর্নতার।
সে ফুপিয়ে কেঁদে বলল,
‘ওনার কিছু হবেনাতো?ওনার কিছু হলে আমি মরেই যাব।
কথাটা তীরের মত আঘাত করল ধীরের বুকে।এফোড় ওফোড় করে ছিদ্র করল হৃদপিণ্ডটা।নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে এমন কথা?কারই বা সহ্য হয়?ধীর কাতর চোখে চেয়ে থাকল পূর্নতার টকটকে লাল মুখটার দিকে।
‘কেন পূর্না,কেন আমাকে ভালোবাসলিনা তুই?ধ্রুবর আগে তো আমি এসেছিলাম তোর জীবনে।ওর আগে আমি ভালোবেসেছি তোকে।তাহলে এই ভালোবাসার এক বিন্দু আমাকে কেন দিলি না?
মিশরা পূর্নতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
‘কাঁদছিস কেন?কিচ্ছু হবেনা ভাইয়ার।
পূর্ণতা চোখ মুছল।নিজেকে শক্ত করে বলল,
‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারবনা।এক্ষুনি ওনাকে খুঁজতে যাব।
কারো কোনও বাধা -নিষেধ না শুনে পূর্নতা হোটেলের মেইন গেটের দিক এগোল।দারোয়ান গেট খুলে দিলেন।পূর্নতা বের হতে নেবে এর মধ্যেই একটা সি -এন- জি এসে থামল গেটে।পূর্নতার পেছনে ধীর-মিশরাও আসতে নিচ্ছিল।সম্মুখে সি -এন জি দেখে তিনজনেই দাঁড়িয়ে যায়।সি-এন -জি থেকে প্রথমেই নামল গার্ড অল্পবয়সী ছেলেটা।তার নাক দিয়ে র*ক্ত পরছে।পরপর সে ধরে নামাল ধ্রুবকে।ধ্রুবর অবস্থা আরো খারাপ।মুখের জায়গায় জায়গায় ফে*টে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। পূর্ণতা বিধ্বস্ত ধ্রুবকে দেখতেই আঁতকে উঠল।উত্তেজিত হয়ে ছুটে গেল ধ্রুবর কাছে।ধ্রুবর ভর গার্ড লোকটির কাঁধের ওপর।পূর্নতা আর্তনাদ করে বলল,
‘একী!কি হলো আপনার?এই অবস্থা কী করে হলো?
মিশরাও ভয়ে পেয়েছে।রিসিপশনের লোকটিও এগিয়ে এলেন।
‘কী ব্যাপার? তোমাদের এই অবস্থা কেন?
ধ্রুব কথা বলতে পারছেনা।নেতিয়ে গিয়েছে।পূর্নতা হাঁসফাঁস করছে।কাঁদছে।গার্ড ছেলেটা বলল,
‘ছিনতাইকারী ধরেছিল স্যার।অন্ধকারে কিছু বুঝতে পারিনি।ওরা আঘাত করে পালিয়েছে।স্যারের ফোন,ওয়ালেট,ঘড়ি, আংটি সব নিয়ে গিয়েছে।
‘আপনি গিয়েছিলেন কেন?আপনি থাকতে ওর এমন অবস্থা হবে কেন?কী করছিলেন আপনি?
ধীর ছেলেটির ওপর চেঁচিয়ে উঠল।ধ্রুব আস্তেধীরে ঠান্ডা চোখ তুলে ধীরের দিক তাকাল।খুব কষ্টে বলল,
‘ওনার দোষ নেই।ওনাকে কেউ কিচ্ছু বলবেনা।
“ওনাকে রুমে নেয়ার ব্যাবস্থা করুন।ওনার কষ্ট হচ্ছে।
পূর্ণতা কেঁদেকেটে বলল।
গার্ড ছেলেটা,দারোয়ান এরা সবাই ধরাধরি করে ধ্রুবকে নিয়ে লিফটে উঠল।পূর্নতা ছুটল, সাথে সাথে মিশরা।ধীর সি-এন-জির ভাড়া মেটাল।রিসিপশনের লোকটাকে কটমট করে বলল,
” এত বড় হোটেল,অথচ কোনও নিরাপত্তা নেই আপনাদের?
লোকটা অনুরোধ করে বলল,
“স্যার প্লিজ পুলিশকে জানাবেন না,হোটেলের বদনাম হবে।শত হলেও আমাদের গার্ড সাথে ছিল।
ধীর মেনে নিল,
‘ঠিক আছে জানাবনা।
‘থ্যাংক ইউ স্যার!
পূর্নতা অস্থির হয়ে পরেছে।কী করবে,কী বলবে?ধ্রুবকে কোথায় বসাবে,কোথায় শোয়াবে কিছুই বুঝে পাচ্ছেনা সে।পাগল, পাগল অবস্থা তার।বালিশে ঠেস দিয়ে ধ্রুবকে আধশোয়া করা হল।তার পা দুটো বিছানায় উঠিয়ে দিল পূর্নতা।দারোয়ান চলে গেলেন।গার্ড ছেলেটিকে মিশরা বলল
‘আপনার নাক থেকেও র*ক্ত পরছে।ফার্স্টএইড নিন।
‘জ্বি ম্যাডাম!
লোকটি বেরিয়ে যেতেই রিসিপশনের লোকটি ঢুকল।সাথে, হোটেলের ম্যানেজার এবং ধীর।ম্যানেজার লোকটি পূর্নতাকে বললেন,
‘ম্যাম আমি ডাক্তার কে ফোন করেছি।চলে আসবেন কিছুক্ষনের মধ্যে।
পূর্নতা শুনল কীনা কে জানে!সে ত্রস্ত হাতে লাগেজের চেইন খুলল।কাপড় সরিয়ে বের করল ফার্স্টএইডের সাদা বাক্স।তুলোয় স্যাভলন নিয়ে ধ্রুবর ঠোঁটের পাশে ছোঁয়াতেই ধ্রুব ব্যাথায় ‘ উহ ‘ করে উঠল।
পূর্নতা তড়িঘড়ি করে ফুঁ দিল সেখানে।মায়া মায়া কন্ঠে বলল,
‘ব্যাথা করছে?
ধ্রুব নিশ্চল চেয়ে মাথা নাড়ল। করছেনা।
পূর্নতা ফুঁ দিতে দিতে জমাট বাধা র’ক্ত মুছে দিতে শুরু করল।ধীরের একটুও সহ্য হচ্ছেনা এসব।দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইল সে।
” ডাক্তার কখন না কখন আসবেন,আমি কী অতক্ষন বসে থাকব নাকি?আমার স্বামীর সেবা আমিই করতে পারব।কোনও ডাক্তারের প্রয়োজন নেই আমার!
পূর্ণতা ভেজা কন্ঠে ছুড়ে ছুড়ে বলল।ধ্রুবর ভেতরটা জুড়িয়ে গেল।পূর্নতার তেলতেলে চেহারার দিক নিষ্পলক দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো।ধীরের গায়ে যেন আগুন ধরে গেল রাগে।হাত মুঠো করে খুলল আবার।তপ্ত চোখে বিছানায় আধশোয়া ধ্রুবর দিক তাকাল।ধ্রুব ও তাকাল ঠিক একই সময়। দুই ভাইয়ের চোখাচোখি হলো।একে অন্যের দিক চেয়েই থাকল।নিষ্প্রান,নির্জীব সেই দৃষ্টি।যেন আদান-প্রদান হচ্ছে ঠাণ্ডা যুদ্ধের ঘোষণা!
পূর্নতার কথায় রিসিপশনের লোকটা বিভ্রান্ত হয়ে ধীরের দিক তাকাল,
‘তাহলে কী মানা করব স্যার?
জবাবে মিশরা বলল,
‘না। মানা করতে হবেনা।পূর্নতা ফার্স্ট-এইড দিক,ডাক্তার এসে বাকিটা দেখবেন।
আপনারা এখন যান।ডাক্তার এলে আসবেন।
‘ওকে ম্যাম।
ওনার দুজন চলে গেলেন ঘর থেকে।ধীর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকল।
পূর্নতা নাক টেনে জিজ্ঞেস করল
‘আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?
ধ্রুব চোখ ফিরিয়ে পূর্নতার দিক তাকায়।মৃদু হেসে পূর্নতার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“পৃথিবীর সব কষ্ট, সব ব্যাথা, তোমার স্পর্শের কাছে তুচ্ছ্ব মায়াপরি!
পূর্নতার কান্না থামলনা।নিঃশব্দে কাঁদছে সে।
ধীর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা।লম্বা পায়ে প্রস্থান নিল।মিশরা সেদিক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“ভালোবাসার যেই জাল বুনন হচ্ছে তার হৃদয়ে ধীর কী আদৌ আটকা পরবে সেখানে?
____
পূর্ণতা আর এক মুহুর্ত এখানে থাকবেনা।রাতে অত বড় একটা কান্ড ঘটল ধ্রুবর সঙ্গে।তার আর একটুও স্পর্ধা হচ্ছেনা এখানে থাকার।সেই রাত থেকেই তার এক কথা বাড়ি ফিরবে সে।সকাল হলেই।তার ওপর ধ্রুবর মুখ থমথমে।সেটা অবশ্যই চুরি যাওয়া জিনিস নিয়ে নয়।তবে কেন?এটাই বুঝে পাচ্ছেনা পূর্নতা।তার যুক্তি মিশরাও মেনে নিল।ঘটনাটা কয়েকটা আঘাতের ওপর দিয়ে গেলেও সাংঘাতিক কান্ড ঘটতে পারত।তার-ও মত, সেও থাকবেনা।উপায় না দেখে দুইভাই-ই মেনে নিল।
ধ্রুবর গায়ের ব্যাথা মোটামুটি সেড়েছে।সকাল সকাল সবাই মিলে রওনা হলো।এবার ধীর ঠিক করল সামনের সিটে বসবে।পূর্নতার কাছে বসার মত সুযোগ ধ্রুব তাকে দিচ্ছেনা,দেবেওনা।মিশরা আর পূর্নতা উঠে বসল পেছনে।ধীর যেইমাত্র সামনে উঠতে যাবে ধ্রুব এগিয়ে এল ওর দিকে।আস্তে করে বলল,
” নিচে নামছিস,নাম।তবে এতটাও নামিসনা যে পরে আর টেনেও তোলা না যায়।
দরজা খুলতে যাওয়া ধীরের হাত থমকাল।তাকাল ধ্রুবর দিকে।ধ্রুবর কপালে আর ঠোঁটের পাশে ব্যান্ডেজ লাগানো।ভ্রুয়ের পাশেও কালো গর্ত দেখা যাচ্ছে।ধীর শুধাল,
‘মানে?
ধ্রুব ঠোঁট বাঁকাল।ফুটে উঠল তীর্যক হাসি।
“গতকাল আমার ওপর যারা হামলা করলো,ওরা কার ভাড়া করা?
ধীর সচকিত হলো। চেহারা ভীত করে বলল,
‘আমি কী জানি!তুই আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছিস?
তোকে তো ছিনতাইকারী ধরেছিল।
ধ্রুব এবারেও হাসল,
‘বাকিরা এটা ভাবলেও,তুই আর আমি খুব ভালো করে জানি এসব কার কাজ!
ধীর সাফাই গাইতে নিল,ধ্রুব আরেকটু এগিয়ে এসে মুখোমুখি দাঁড়াল ওর।ধীরকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত,অথচ কড়া কন্ঠে বলল,
‘আমাকে নিরব হুমকি দিয়ে লাভ নেই ভাইয়া।পূর্নতাকে আমি এই জীবনে ছাড়বনা।তুই শত চেষ্টা করলেও ওকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবিনা।শুধুমাত্র আমার ভাই বলে তোকে ছেড়ে দিলাম।নাহলে মারপিটে এক্সপার্ট ধ্রুব তোকে বুঝিয়ে দিত সে কী জিনিস!
দেখলিতো কাল,
আমার ওইটুকু ব্যাথায় কী কান্নাই না করল পূর্নতা!তাহলে ভাব,যদি আমার কিছু হয়,আর তার জন্যে দ্বায়ী থাকিস তুই!তবে পূর্নতার চোখে ঠিক কী পরিমান ঘৃনা দেখতে পাবি?ভালোবাসা তো দূর,তোর মুখ অব্দি দেখতে চাইবেনা ও।তখন পারবিতো সহ্য করতে?
চলবে,