ফাগুন_ এলো_ বুঝি! (৩১)

0
818

#ফাগুন_ এলো_ বুঝি!
(৩১)

এই রুপ,রুপ দাঁড়াও।এই রুপ!
রিদের উঁচু ডাকেও থামলনা রুপ।গটগটিয়ে হেটে চলছে মেয়েটা।রিদ পায়ের গতি বাড়িয়ে দিল।একপ্রকার ছুটে এসে পথ আগলে দাঁড়াল ওর।
‘কী ব্যাপার, কখন থেকে ডাকছি শুনছোনা?
রুপ অন্যদিক তাকিয়ে বলল,
‘কেন ডাকছেন?
রিদ ভ্রু কোঁচকালো,
“কেন ডাকছি মানে?এটা কেমন প্রশ্ন?
রুপ তখনও তাকালনা।
” সামনে থেকে সরুন, বাসায় যাব।তাড়া আছে।
‘তুমি কী আমাকে ইগ্নোর করছো?
রুপ এবার তাকাল।
‘ইগ্নোর করার কী আছে?আপনি সিনিয়র, আমি জুনিয়র,ইগ্নোর শব্দটাই বেমানান এখানে।
রিদ অধৈর্য হয়ে বলল,
“তোমার হয়েছে কী বলবে আমাকে?কদিন ধরেই লক্ষ্য করছি অদ্ভূত বিহেব করছো।না ভালো করে কথা বলো,না ফোন তোলো,না ক্লাশ শেষে আমার জন্যে অপেক্ষা করো।আমি কিছু করেছি বলেও তো আমার মনে পড়ছেনা।তাহলে কেন এমন করছো তুমি?

রুপ ঠোঁট জ্বিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,
‘আপনি বোধ হয় ভুল করছেন রিদ ভাইয়া,আপনার সাথে আমার এমন কোনও সম্পর্ক নেই যে এগুলো ধরবাধা করতেই হবে।আমার ইচ্ছে হয়না তাই করিনা।সরুন এবার।
রুপ পাশ কাটিয়ে যেতে ধরলেই রিদ হাত চেপে ধরল।শক্ত বাঁধন, সাথে শক্ত চোয়াল।
‘সব তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী হবেনা রুপ।আমি কিন্তু ফালতু জিনিস নই।ইচ্ছে হলো রাত জেগে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বুকে তোলপাড় তুলবে,আবার ইচ্ছে হলে এড়িয়ে যাবে এরকম তুচ্ছ্ব আমাকে ভেবোনা।
‘তুচ্ছ্ব কেন ভাবব?আপনারা হলেন সাধুপুরুষ। একটা মেয়ের ইগ্নোর করা আপনারা মানতে পারেননা,কিন্তু দিনের পর দিন সেই মেয়ের অনুভূতি, তার বিশ্বাস নিয়ে খেলে তাকে ছুড়ে ফেলতে পারেন।মাঝরাস্তায় হাত ছেড়ে দূরে যেতে পারেন। এসব তো আপনাদের সাজে।কারন তথাকথিত সমাজে পুরুষই রাজা।আমরা মেয়েরা কী!

রিদের কটমটে চোয়াল কেমন বদলে গেল।চোখ পিটপিট করে বলল,
‘আমি ঠিক বুঝলাম না।আমি কখন তোমার হাত ছেড়ে দিলাম মাঝপথে? কবে কার বিশ্বাস নিয়ে খেললাম?কাকে ছুড়ে ফেললাম?

‘ফেলেননি।কিন্তু ফেলবেন না তার কী গ্যারান্টি আছে?দিন শেষে আপনিও ধ্রুব ভাইয়ার মতোই করবেন।দেখেছিতো পূর্নতার কষ্ট।ওর শুকনো চেহারা,ফোলা,কালো চোখ।আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল।দুঃখে আমি ওর বিয়েতেই যাইনি।সেখানে ধ্রুব ভাইয়া কী করে পারলেন এমন করতে?ছি!
আর আপনি তো তারই বন্ধু।গলায় গলায় ভাব আপনাদের।
আমার সাথেও এরকমই করবেন।আমি জানি।দেখুন, পূর্নতার মত সহ্য শক্তি আমার নেই।আমি কিন্তু সুইসাইড এটেম্প করে ফেলব।আর চিঠিতে গোটা অক্ষরে আপনার নাম লিখে যাব।
তার থেকে ভালো,আপনি এখনই আমার থেকে দূরে যান।সম্পর্ক তৈরী হওয়ার আগেই ভেঙে যাক।

রুপ থেমে থেমে বলল।গলা ধরে এল তার।পুরোটা থমথমে চেহারায় শুনল রিদ।রুপ ফের বলে ওঠে,
“আমার হাত ছাড়ুন।আমি আর আপনার সাথে__
” চুপ!একদম চুপ!
রিদ বাজখাই ধমকে ওঠে।চমকে গেল রুপ।ঢোক গিলল সে।
রিদ চেঁতে বলল,
“কিছু না জেনেশুনে ধ্রুবকে নিয়ে এরকম কথা বলো কী করে তুমি?তুমি কী আদৌ জানো,ধ্রুব কেন এরকম করেছে?
রুপ মাথা নাড়ল।জানেনা সে।
রিদ বলল,
” তাহলে এমন মন্তব্য কেন করছো?ধ্রুব পূর্নতাকে ওর নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
রুপ বিশ্বাস করলনা।মিনমিন করে বলল,
“তবে ওনার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হতে কেন দিলেন উনি?আটকালেন না কেন?
রিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
” কারন আছে।আর কারনটা হলো_______
একে একে সব ঘটনা খুলে বলল রিদ।সব শুনে রুপের ঠোঁট ফাঁকা হয়ে গেল।চোখ কপালে উঠিয়ে বলল,
‘এর মানে ধ্রুব ভাইয়া ওনার ভাইয়ের জন্যে__
“হ্যা।
” কিন্তু পূর্নতাতো কষ্ট পেল।ওতো ধ্রুব ভাইয়াকেই ভালোবাসে।ওনার ভাইকে নয়।মেয়েটার কী হবে?কত বড় একটা ভুল হয়ে গেল, ইশ! কী হবে এখন?
রুপের হা -হুতাশ
দেখে রিদ হেসে ফেলল।রুপ চটে বলল,
“আপনি হাসছেন?
‘হাসছি।কারন কারোর জীবনই নষ্ট হয়নি।পূর্নতার বিয়ে ধ্রুবর সঙ্গেই হয়েছে!
রুপ বিস্ময়ে কিছুক্ষন পলক ফেলতে পারলনা।
রিদ বলল,
” কী ভাবে, কী কর, এসব আমি জানিনা।তবে ধ্রুবই ফোন করে জানাল আমায়।সত্যি বলতে তুমি ঠিক যেই কারনে বিয়েটায় যাওনি?আমিও একই কারনে যাইনি।ধ্রুবর প্রতি তোমার থেকেও বেশি রাগ হয়েছিল আমার।তাই যখন শুনলাম,ওদেরই বিয়ে হয়েছে,আমি যে কী খুশি হয়েছি বললে বুঝবেনা!সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও হারেনা,এটাই তার প্রমান।

রুপ বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
“পূর্নতা কী আর ভার্সিটি আসবেনা?পড়বেনা আর?
‘পড়বেনা কেন?নতুন বিয়ে হলো,কদিন পরেই আসবে হয়ত।তাছাড়া ওর খবর তো তোমার জানা উচিত।তোমরা না বেস্টফ্রেন্ড?
রুপ মন খারাপ করে বলল,
‘আসলে পূর্ণতার মনের অবস্থা ভালো ছিলনা।সাথে আমারও না।তাই আর__
রিদ রুপের হাত ছেড়ে বুকের সাথে দুহাত গুজে দাঁড়াল।
‘কেন?তোমার মনের কী হয়েছিল?
রুপ ঠোঁট কামড়ে মাথা নামিয়ে ফেলল।মিথ্যে মিথ্যে একটা রাগ পুষে এতদিন রিদকে দূরে রেখে সেকী একটুও ভালো ছিল?একদমই না।কিন্তু এটা মুখে বলবে কী করে?ঠিক তখনি রিদ প্রস্তাব রাখল,
” আমায় বিয়ে করবে রুপ?
চকিতে মাথা তুলল রুপ।অবিশ্বাস্য দৃষ্টি।
‘কী!
রিদ আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল।চোখে চোখ রেখে বলল,
“বাবা মাকে কথা বলতে পাঠাব?
রুপ কতক সময় চেয়েই থাকল।তখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা কথাটা সত্যি শুনল,না মিথ্যে?
রুপের ফ্যালফ্যাল চাউনি দেখে রিদ কপাল কুঁচকে ফেলল।পরপর চেঁচিয়ে বলল,
” বিয়ে করবে আমায় রুপ?
চিৎকারে কেঁপে উঠল রুপ।হুশে ফিরল। আশেপাশের যারা শুনেছে তারা অবাক চোখে তাকাল।রুপ লজ্জ্বায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা।লাজুক হেসে ছুটে চলে গেল।পালাল যেন।রিদ কতবার ডাকল।শুনলোইনা।
গাড়িতে উঠে লজ্জ্বায় মুখ ঢেকে ফেলল দুহাতে।ধাতস্থ হয়ে কাপা কাপা আঙুল চালিয়ে মেসেজ পাঠাল রিদের ফোনে।
“বাবা শুক্রবার বাড়িতে থাকে।
মেসেজ পড়ে মুচকি হাসল রিদ।আর দাঁড়ালনা।দ্রুত পায়ে বাইকের দিক এগোলো।বাড়িতে গিয়েই আজ সম্পর্কের কথা মাকে জানাবে।
________
ফেরার কথা ছিল চারদিন পর,সেখানে একদিনের মাথায় ধ্রুবদের দেখে অবাক হলেন সেলিনা-মেহবুব।সায়রা,আশরাফ তখন পাড়ি জমিয়েছেন সুইডেনের জার্নিতে।মেহবুব অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেও পারেননি এর আগেই খান বাড়িতে চারজনের পা পরল।তার ওপর ধ্রুবর মুখে ব্যান্ডেজ।সেলিনা-মেহবুব উদ্বিগ্ন হয়ে পরলেন।সেলিনার ভাব হলো কেঁদে ফেলার।একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ হতে হলো ওদেরকে।ধ্রুবর তাদেরও একই কথা বলল,
” ছিনতাইকারী ধরেছে।
মেহবুব মেনেও নিলেন।ধ্রুবর খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলে সেলিনা লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করলেন।কক্সবাজারে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন নয়।মেহবুব শক্ত কন্ঠে ধমকালেন ধীরকে।কেন অত রাতে বাইরে ছিল সে!ধীর এর উত্তরে কিচ্ছু বলেনি।
“ক্লান্ত লাগছে “বলে দিয়ে রুমে চলে যায়।পেছনে গেল মিশরা।ধ্রুব আর পূর্নতাকেও বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে দিলেন সেলিনা।

ধীর অস্থির পায়ে ঘরে পায়চারি শুরু করল।মাথা কাজ করছেনা।ধ্রুবর বলা তখনকার কথাগুলো ঘুরছে সেখানে।
ধীর চোয়াল ঘষতে ঘষতে বিছানায় বসল।মিশরা ঘরে ঢুকে কোনও কথা না বলে ফ্রেশ হতে গেল।ধীর তাও লক্ষ্য করেনি।সে গভীর ভাবনায়।
গতকালকের ঘটনায় সেই মাস্টারমাইন্ড ছিল।ধ্রুবকে আক্রমণ করা লোক তারই ভাড়া করা এও সত্যি।তবে ধ্রুবকে প্রানে মারতে পাঠায়নি।কয়েকটা ঘা দিয়ে ভয় দেখাতে পাঠিয়েছিল।সাথে হুমকি-ধামকি দেবে,যাতে ধ্রুব জীবনের মায়ায় অন্তত পূর্নার থেকে সরে যায়।শত হলেও ভাই,প্রানে মারার মত অমানুষ ধীর নয়।কিন্তু ধ্রুব চাল উলটে দিয়েছে।ওই লোকদের সাথে কথা হয়েছে ধীরের।ধ্রুবর সাথে সাথে কজনের হাতে গণপিটুনি খেয়েছে ওরা।একজনের অবস্থা খারাপ।সবাই মিলে খুব কষ্টে জান বাঁচিয়ে পালিয়েছিল।ধ্রুবর সাথে গার্ড ছেলেটিও ছিল।দুপক্ষই আহত হয়েছে ঠিক,তবে যে কাজের জন্যে পাঠিয়েছে এর কিছুই হয়নি।মানুষ জড়ো হয়ে যাওয়ায় ওরা পালিয়েছে উলটে।ধীরের বিরক্তিতে “চ’বর্গীয় শব্দ করল।কাজের কাজ কিচ্ছু হলোনা।সব প্ল্যান বানচাল।
ধ্রুবতো উলটে ঠান্ডা হুমকি দিল,সে পূর্নতার জীবন থেকে কোনও দিন সরবেনা।তবে কী করবে ধীর?পূর্নাকে পাওয়ার উপায় কী নেই?
_____
আজ এক নতুন ঘটনা ঘটল।ধ্রুবর সাথে সাথে ইচ্ছে করে ওয়াশরুমে ঢুকল পূর্নতা।ধ্রুব ভীষণ অবাক হলো।পূর্নতা উশখুশ করতে করতে বলল,
‘আপনার তো গায়ে ব্যাথা,একা একা শাওয়ার নেবেন কী করে?শার্টইতো পরতে পারেননা।
ধ্রুব মিটিমিটি হাসতেই পূর্নতা ক্ষেপে বলল,
‘একদম এভাবে হাসবেন না।গা জ্বালা করে আমার।
ধ্রুব শব্দ করে হেসে উঠতেই পূর্নতার মুখটা চুপসে গেল।ধ্রুবর মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি হানা দিল।চট করে শাওয়ার ছেড়ে দিল সে।পূর্নতার মাথার ওপর ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল যেন।পূর্নতা চমকে সরতে গেলেই ধ্রুব কোমড় চেপে ধরল।পরপর টেনে কাছে আনল।দুজনেই ভিজে চুপচুপে হলো কয়েক মুহুর্তে।পূর্নতার চুল থেকে শুরু করে পুরো শরীর বেয়ে পানি পরছে।জামদানি শাড়িটা লেপ্টে গিয়েছে দেহে।ধ্রুব মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে রইল।পূর্নতা ভ্রু কোঁচকালো,
‘শুরু করে দিলেন?এই জন্যেই কারো ভালো করতে নেই।
ধ্রুবর সাড়া নেই।সে তখনও চেয়ে।পূর্নতা ক্রমশ গুলিয়ে ফেলছে নিজেকে।ভালোবাসার মানুষটা এভাবে চেয়ে থাকলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা কার সাধ্যি?সে চোখ নামিয়ে এলোমেলো পাতা ফেলল।ধ্রুব তাতেও বাঁধা দিল।থুত্নী উঁচু করে ধরল পূর্নতার।চারটে চোখ মিলে গেল।
“তোমার এই স্নিগ্ধ মুখটা আমার সব যন্ত্রনার ওষুধ।আমার সব বিপত্তির উপশম ,তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা।
ধ্রুবর হাতের আজোলে পূর্নতার ভেজা মুখখানি।পূর্নতা আগামাথা কিছুই বুঝলোনা।তার কপালে গাঢ় কুঞ্চন।কিয়ৎক্ষন সেও চেয়ে রইল ওইভাবে।তারপর নিজেকে সামলে,নিজের অনুভূতির জোয়াল টেনে চোখ সরাল ধ্রুবর থেকে।বলল,
‘আমার ক্লান্ত লাগছে!ঘুম পাচ্ছে।ভালোলাগছেনা এসব।
পূর্ণতার মিথ্যে বিরক্তির আঁচ ধ্রুব ধরতে পারলেও আজ ছেড়ে দিল ওকে।পূর্নতা ছোট্ট করে শ্বাস টেনে ধ্রুবর শার্ট খুলে দিল।পরপর গায়ের স্যান্ডোগেঞ্জিটাও খুলল।ধ্রুবর ফর্সা দেহ উন্মুক্ত হয়।
পূর্নতা আর তাকালোনা।দ্রুত আওড়াল,
‘আপনি শাওয়ার শেষ করে আমাকে ডাকবেন।
‘তুমিতো ভিজে গিয়েছ।
‘রুমে পালটে নেব।
পূর্নতা সেই আগের মত বেরিয়ে গেল। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল।মন-মেজাজ কিছুই ভালো নেই।যে ভাইটাকে বাবা সমতূল্য ভালোবাসত,এক কথায় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ত্যাগ করতে চাইল,সেই ভাই কাল তাকে মারতে লোক পাঠিয়েছে।
ধ্রুবর এখনও গতরাতের কথা স্পষ্ট মনে আছে।

গার্ড ছেলেটাকে সঙ্গে করে ধীরকে খুঁজতে বেরিয়েছিল।অন্ধকারে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে হাটছিল দুজন।কিছুদূর যেতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন পুরো চেহারাটা কাপড় দিয়ে পেচিয়ে ধরল ধ্রুবর।অকষাৎ ঘটনায় ধ্রুব হকচকাল।পরপর নাকে মুখে কি*ল-ঘু*ষি পরল।সাথে পায়ে, পিঠে শক্ত কিছুর আ*ঘা*ত। ধ্রুব তখনও ব্যাস্ত নিজের মুখ থেকে কাপড় ওঠাতে। ছেলেগুলোর মধ্যে একজন ধ্রুবর ঠোটের পাশে ঘু*ষি মে*রে বলল,
‘মাইয়া নিয়া টানাটানি করো?আজ দেখব তোর কত দম।মার শালারে!
ধ্রুব তৎক্ষনাৎ বুঝে ফেলল ঘটনার আসল রহস্য।ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় টের পাচ্ছে এখানে একজন নয় অনেকে আছে।পাশ থেকেও পাচ্ছিল হা*তাহা*তির শব্দ।গার্ড ছেলেটির সঙ্গেও কী একই কাহীনি ঘটছে?তার হাতের ফোন অনেক আগেই কোথাও পরে গিয়েছে।ওদের মধ্যেই কেউ আঙুল থেকে স্বর্নের আংটিটা খুলে নিয়েছে।ধ্রুব যখন পা দিয়ে আন্দাজে সামনের ছেলেটাকে লা*থি মারল। ছিটকে পরল সে।হয়ত ওই দৃশ্যে পেছনের ছেলেটার হাত শিথিল হয়েছিল,সেই সুযোগে ধ্রুব হাতড়ে মুখ খা*ম*চে ধরল তার।ব্যা*থায় সে পিছিয়ে গেলে ধ্রুব একটানে কাপড় সরাল চোখমুখ থেকে।এরপরই ছেলেটার মেইন পয়েন্টে ঘা বসাল।ব্যাথায় মাটিতে লুটিয়ে পরল ছেলেটি।
চারজন আক্রমন করেছে ওর ওপর।এতক্ষন মা*র খাওয়ায় ধ্রুবর মাথা ঘুরছিল কেমন। কপাল ফেঁটে বেয়ে পরা র*ক্তে চোখের পাপড়ি ভিজে গেল।বোধ হলো কয়েক টন ভারি পাথরের সমান।গার্ড ছেলেটিকে অন্য দুটো ছেলে মারছিল।তার পেছনে টাঙানো থাকত বড় সাইজের বন্দুক।সেটা লুটিয়ে আছে মাটিতে।ধ্রুবকে ছুটতে দেখেই ওই দুজন থেমে যায়।ছেলেটাকে ছেড়ে তার দিকে আগাতেই ধ্রুব খুব দ্রুত মাটি থেকে বন্দুকটা তুলে নেয়।এতেই ঘাবড়ে যায় ওরা।এগোনোর সাহস পায়না।বন্দুকের ভেতর গুলি আছে কীনা ধ্রুব জানতোনা।ছেলেগুলোও না।
তখন গার্ড ছেলেটিই শ্বাস টেনে টেনে বলল,
‘স্যার বন্ধুকে গুলি আছে।আপনি ট্রিগার চাপুন শালারা লুট করতে এসছে।
ছেলে চার‍টে ভয় পেয়ে পালাতে ধরবে এর আগেই ধ্রুব সতর্ক করল,
‘এক পাও নড়বিনা।সোজা ওপরে পাঠিয়ে দেব তাহলে।
ভয়ে আর কেউ নড়লনা।দাঁড়িয়ে থাকল জায়গায়।
একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।ধ্রুব বন্দুক তাক করে রেখেই শুধাল,
‘তোরা কী উদ্দেশ্যে এসেছিস?সত্যি করে বল।
কমবয়সী ছেলে।ধ্রুবর থেকে কয়েক বছরের ছোট হবে।ওদিকে যারা বিচে ছিল, ধ*স্তাধ*স্তির আওয়াজে তারা এগিয়ে আসছে।ছেলেগুলো ভীত হয়ে উগড়ে দিল সব।কয়েকজন লোক এগিয়ে আসতেই গার্ড ছেলেটি গড়গড় করে তাদের কাছে ঘটনা বলে দিল।চারজন স্বীকার হলো গণধো*লা*ইয়ের। ধ্রুব নেতিয়ে পরল তখন। গার্ড ছেলেটি কম আহ*ত হওয়ায় সেই ধ্রুবকে সাথে নিয়ে এল।ধ্রুব রাস্তায় যা বলতে শিখিয়ে দিল,হোটেল ফিরে তাই তাই বলল ও।

ক্ষততে জলের ঠান্ডা স্পর্শে জ্বলছে খুব।ধ্রুবর এতে একটুও কষ্ট হলোনা।সে নিরবে কাঁদছে। শাওয়ারের পানি চোখের অশ্রু ধুয়ে -মুছে নিচ্ছে।ছোট বেলা থেকে ধীরের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহুর্ত গুলোর কথা মানস্পটে একেক করে ভাসছে।দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি প্রিয় ভাইয়ের সঙ্গে এমন দ্বন্দ্বে নামতে হবে, আর তার কারন হবে একটা মেয়ে!
_______
কিছুদিন পার হলো।ধীর নতুন কোনও উপায় পেলনা ধ্রুব -পূর্নতাকে আলাদা করার।উলটে ভয়ে ভয়ে থাকল,
‘এই বুঝি ধ্রুব সবাইকে সব বলে দেয়।প্রতিনিয়ত চোখের সামনে পূর্নতার ধ্রুব প্রতি সেবাযত্ন,ওদের সংসার দেখে দেখে ক্ষোভ,আ*ক্রোশে ফেঁটে পরত ধীর।না পারতো বলতে,না পারত ফেলতে।সব রাগ মেটাত মিশরার ওপর।এইকদিনের প্রত্যেকটা রাত মিশরার কেটেছে ধীরের ক্ষুব্ধ স্পর্শে।অথচ এতে একটুও খারাপ লাগেনি।ধীরের হিং*স্রতাও যেন ভালো লাগতে শুরু করেছে।মিশরা গা ভাসাতো, একপ্রকার আত্নসমর্পণ করত।দিনশেষে ঘোষণাও করল,সে ধ্রুবকে ভালোবেসে ফেলেছে।তবে মা-ই ঠিক?একেই স্বামী বলে?যার হিংস্র ছোঁয়াতেও মিশরা ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়?
ধীর যে ঝাল মেটায় সেইদিনের, মিশরা খুব ভালো করে জানে,বোঝে ।ধীরের মনের আনাচে কানাচেও সে নেই,তাও জানে।তবু খারাপ লাগেনা।জেনেশুনে বিষপান যখন করেছে শেষ লড়াইটা লড়বেনা?ধীরের মনে ভালোবাসার বীজ বপণ করবেনা?যে বীজের ফসল হবে তার নামে।পূর্নতার ঠাঁই হবেনা এখানে।মিশরা নিজেকেই কথা দিল,
একদিন ঠিক ধীরকে ভুলিয়ে দেবে পূর্নতার কথা।প্রতিটা ক্ষন,প্রতিটা মুহুর্ত ধীর তাকে ভাববে।ভাববেই।

মিশরার রাতারাতি পরিবর্তন সবার চোখে পরেছে।জিন্স,টপ্স পরা মেয়ে শাড়ি পরে।গুটিগুটি পায়ে কুচি ধরে হাটে।সকালে পূর্নতা চা বানালে সে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।বাইরে থেকে ধীর,ধ্রুব,মেহবুব যেই আসুক পূর্নতা শরবত গুলে দেয়,মিশরা গিয়ে তুলে দেয় হাতে।সেলিনা-মেহবুব ভাবেন ছেলেরা বউ নিয়ে ভালো আছে।কোনও ঝামেলা নেই,ঝঞ্চাট নেই।একে একে প্রত্যেকে মানিয়ে নিয়েছে।কিন্তু ভেতরের খবর কেই বা রাখে?বাইরের খোলস দেখে কী আঁচ পাওয়া যায়?
এই যে ধ্রুব-পূর্নতা দুজন দুজনকে ভালোবেসেও সম্পর্কের কোনও উন্নতি হয়নি।ধ্রুব হাজার চেষ্টা করেও পূর্নতাকে বোঝাতে পারলনা কোনওকিছু।পূর্নতার মান ভাঙানোর শপথ সফল হয়নি।সে খবর কেউ জানে?জানেনা।ওপর থেকে তাদের দেখানো খুশিটাই দেখছে সকলে।
___
মিশু?মিশু?
বাইরে বৃষ্টি।ছাদ থেকে বেনির তুলে আনা আধভেজা কাপড় বারান্দায় নাড়ছিল মিশরা।ধীরের উচু ডাকে এক ছুটে রুমে এল।কোমড়ে গোঁজা শাড়ির আঁচল ছাড়তে ছাড়তে বলল,
“ডাকছো?
“এই টেবিলের এখানটায় একটা ছোট ক্যালেন্ডার ছিল। কোথায় গেল এখন?
মিশরা মনে করে বলল,
‘ওটাত ঝুড়িতে ফেলেছি।ভেবেছি তোমার লাগবেনা।আজকালতো সবাই ফোনেই ডেট দেখে।
মিশরা ভাবল ধীর রেগে যাবে।কিন্তু ধীর ঠান্ডা স্বরে বলল
‘ঝুড়ি থেকে তুলে আগের জায়গায় রাখ।ওখানে সব ম্যাচের ডেট মার্ক করে রেখেছি।লাগবে।
মিশরা মাথা নাড়ল।ধীর বেরিয়ে যেতেই রুমের কর্নারে রাখা ময়লার ঝুড়িটায় হাত দিল সে।নাক মুখ কুঁচকে গেল সাথে সাথে।কস্মিনকালেও এসব করতে হবে কে জানত!ঝুড়িতে শুধু কাগজ পত্র,ব্যাবহৃত টিস্যু,অথচ এতেই মিশরার গা গুলিয়ে উঠল যেন।ছোট্ট টেবিল ক্যালেন্ডারটা তুলে আবার টেবিলেই রাখল।ফিরে যেতে ধরবে হঠাৎ কিছু একটা খেয়াল করে ঘুরে তাকাল।এখন তো ফেব্রুয়ারী চলছে।কত তারিখ আজ?মিশরা ঘেঁটে দেখল আজ তের তারিখ।এর মানে কাল চৌদ্দ? চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি তো “ভ্যালেন্টাইন্স ডে”।মিশরার চেহারা ঝলমল করে উঠল কেমন।কাল ভালোবাসা দিবস।মনের কথা জানানোর এর থেকে ভালোদিন হয়?মিশরা সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিল কালই ধীরকে বলবে,সে ভালোবাসে ওকে।আর সব কিছুর জন্যে ক্ষমাও চাইবে।নতুন করে জীবন শুরু করবে ।ধীর একবার বলেছিল না?এবার সে বলবে এই কথা।ধীর খুব চমকাবে নির্ঘাত।ভেবেই আনন্দ লাগল মিশরার।অপেক্ষা করল কাল নতুন ভোরের।নতুন উদিত সূর্যের।
____
অনেক রাত।বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে।পূর্নতা এপাশ- ওপাশ করছে শুধু।এক ফোঁটা ঘুম আসছেনা।ক্ষনে ক্ষনে পেট চেপে মোড়াচ্ছে। ধ্রুব ঠিক টের পেল।আজ ওপাশ ফিরে শুয়েছিল সে।এবার এপাশ ফিরে বলল,
‘কী হয়েছে মায়াপরি?
পূর্ণতা ধ্রুবর দিক বাচ্চাদের মত ঠোঁট উলটে তাকাল,
ধ্রুব ভ্রু উঁচাল।পূর্নতা বলল,
“আমার না ভীষণ খিদে পেয়েছে!
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে দেয়াল ঘড়ির দিক তাকায়।অন্ধকারেও ঘড়ির কাটা জ্বলছে।রাত প্রায় দেড়টা বাজে।
ধ্রুবর হাসি পেল।জিজ্ঞেস করল,’কী খাবে?
পূর্নতা চটপট উত্তর দিল ‘ পাস্তা খেতে ইচ্ছে করছে।
ধ্রুব উঠে বসল।নেমে যাওয়া ধরতেই পূর্ণতা উদ্বেগ নিয়ে শুধাল,
‘কোথায় যাচ্ছেন?
‘কেন? পাস্তা খাবেনা?
“এত রাতে পাস্তা পাবেন কোথায়?
‘বানাব।
ধ্রুবর নিরুদ্বেগ জবাবে পূর্ণতা হা করে বলল,
‘এই মাঝরাতে আপনি পাস্তা বানাবেন?
‘হ্যা?কেন?রাতের বেলা রান্নাবান্না নিষেধ নাকি?
‘তা নয়___
‘তুমি বোসো আমি আসছি।
পূর্নতা ফের উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘থাকনা।দরকার নেই।
ধ্রুব না শুনে হাটা দিল।পূর্নতাও এবার বিছানা থেকে নামল,
‘আমিও যাব।
‘এসো।
ধ্রুবর পিছু পিছু রান্নাঘরে ছুটল পূর্ণতা।সত্যি বলতে ব্যাপারটা দারুন লাগছে তার।রোমাঞ্চকর, রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাচ্ছে পূর্নতা।ধ্রুব এই রাত- দুপুরে তার জন্যে পাস্তা বানাবে,আর সে খাবে?এত ভালোবাসা!
____
প্যানে পানি ফুঁটছে।ধ্রুব দক্ষ হাতে পাস্তা সেদ্ধ করতে ঢেলে দিল।পূর্ণতা পাশেই বসে।সানসেটের ওপর।ঝুলে থাকা পা-দুটো দোলাচ্ছে একটু পরপর।পাশাপাশি সচেতন চোখে ধ্রুবর কাজকর্ম দেখছে।এই বুঝি কিছু হয়ে গেল!ধ্রুব পেয়াজ কুচি করার সময় পূর্নতার দিক তাকায়।পূর্নতা তাকেই দেখছে।দৃষ্টিতে মুগ্ধতা, ভালোবাসা।ধ্রুব দুষ্টু হেসে বামচোখ টিপে দিল।
পূর্ণতা থতমত খেতেই ঝকঝকে দাঁত বের করে হেসে ফেলল ধ্রুব।পূর্নতা বরাবরের মত কপাল কুঁচকে ভেঙচি কাটল।ধ্রুব এতেও হাসল।পূর্নতার দিক চেয়ে থেকেই প্যানের পাশ থেকে হাতা তুলতে গেল।বেখেয়ালে হাত লাগল গরম প্যানের সঙ্গে।
ধ্রুব ‘উফ’ বলে বিদ্যুৎ বেগে হাত সরিয়ে আনল।ছ্যাকা লেগেছে।সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে নামল পূর্নতা।
ধড়ফড় করে ধ্রুবর হাত মুঠোয় নিয়ে বলল,
“দেখি দেখি, কোথায় লেগেছে?
ধ্রুব’ আঙুল দিয়ে দেখাল।পূর্নতা সময় নষ্ট না করে ধ্রবর হাতে ঠান্ডা পানি ঢালল।পরপর ফুঁ দিতে শুরু করল জায়গাটায়।বিচলিত হয়ে বলল
‘আপনাকে আমি বলেছিলাম এসব এখন করার দরকার নেই।শুনলেন না।দেখলেন তো,কী হলো?এখন যদি ফোস্কা পরে যায়?
আপনি একটু দাঁড়ান,আমি বার্নের মলমটা নিয়ে আসছি।
পূর্ণতার উদ্বিগ্নতা ধ্রুবর সব সময়ের মত মন কাড়লো,ভালো লাগল।পূর্ণতা যেতে নিলে থামিয়ে দিল ওকে,
‘লাগবেনা মায়াপরি! সামান্য গরমের তাপ লেগেছে।উতলা হয়োনা।
‘আপনি সরুন,বাকিটা আমি করছি।
‘তাতে আমার লাভ?নিজের বউকে রান্না করে খাওয়ানোর শখ অপূর্ণ রাখব?
‘এসব ছাইপাশ কথা বাদ দিন।ভাগ্য ভালো বিধায় অল্প কিছু হলো।যদি উল্টাপাল্টা কিছু হতো?তখন?
ধ্রুব কাঁধ উঁচু করে বলল,
‘কী আর হবে,সোজা ওপরে চলে যাব।
পূর্ণতার বুক ছ্যাত করে উঠল।তৎক্ষনাৎ ধ্রুবর মুখ চেপে ধরল সে।ফর্সা মুখটায় নেমেছে আষাঢ়ে মেঘ।ধ্রুব পূর্নতার হাত সরিয়ে নিজের হাতে নিল।খুব শীতল কন্ঠে বলল,
” আমি মরলে তুমিতো আমার জ্বালানো থেকে বেঁচে যাবে মায়াপরি।ভালো হবেনা?
পূর্ণতা হৃদস্পন্দন ক্ষনিকের জন্যে থেমে যায়।হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল।আঁতকে উঠে ধ্রুবকে জাপটে ধরল সে।বড় শক্ত সেই বাঁধন।
‘এসব কথা আর কখনও বলবেন না।আপনার কিচ্ছু হবেনা।আপনার কিছু হলে পূর্ণতা থাকবে কী করে?সেও শেষ হয়ে যাবে।একমুহুর্ত টিকবেনা দুনিয়ায়।
পূর্ণতার কন্ঠ ভিজে আসছে।ধ্রুবর অন্তঃস্থলে তখন প্রশান্তির হিমেল বাতাস বইছে।পূর্নতা তাকে এতটা ভালোবাসে!এতটা!
ধ্রুবর হঠাৎ খেয়াল হলো আজকের তারিখের কথা।রাত দুটো বাজে,তার মানে চৌদ্দ তারিখ আজ।ধ্রুব সময় ব্যয় না করেই পূর্ণতার কানের কাছে মুখ নামাল।ফিসফিস করে বলল,
“Happy Valentine’s Day!
পূর্ণতার সম্বিৎ ফিরল।চোখ মেলল সে।হুশে পৌঁছাতেই এক ঝটকায় ধ্রুবকে ছেড়ে দিয়ে ছুট্টে ওপরে চলে গেল।
_
পনের মিনিটের মাথায় ধ্রুব পাস্তা সমেত হাজির হলো কামড়ায়।পূর্ণতা তখন জানলা ঘেঁষে বাইরে তাকিয়ে।ধ্রুব গিয়ে পাশে দাঁড়াল,টেনে টেনে বলল,
“আপনার পাস্তা মহারানী।আহার গ্রহন করুন।
পূর্ণতা না তাকিয়ে বলল,
” খাবনা আমি।
ধ্রুব কপাল কোঁচকাল ” কেন?রাগ তো আমার ওপর।অবলা খাবার কী করল?
পূর্ণতা কথা বললনা দেখে ধ্রুব লম্বা শ্বাস ফেলল।দুঃখি কন্ঠে বলল,
‘সবই ভাগ্য!এতরাতে না ঘুমিয়ে বউয়ের জন্যে পাস্তা বানালাম,আর সে খাবেনা।দু-দুবার হাত ও পুড়লা_
পূর্ণতা সচকিতে তাকাল,
আবার হাত পুড়েছে?
‘হুম।
‘দেখি কোথায় পুড়লেন?কী যে করেন না!
উদগ্রীব পূর্ণতা ধরতে যেতেই ধ্রুব ডানহাতটা পেছনে লুকাল।
‘দেখাব,বাট ইন ওয়ান কন্ডিশন!
পূর্ণতা টুপটুপ পাতা ফেলল চোখের ‘ কীসের শর্ত?
ধ্রুব বাম হাতের পাস্তার প্লেট বাড়িয়ে ধরল সামনে
‘আগে এটা খেতে হবে।তারপর।
‘এটা কেমন কথা?
‘এটাই কথা।নাও।
‘আপনি আমাকে দেখতে দিন আগে,কতটা পুড়েছে?ব্যাথা করচে নিশ্চয়ই? ফোস্কা পরবে__
‘ওসব পরে বুঝব।আগে খাও।
পূর্ণতা কাঁদোকাঁদো মুখ করল,
‘প্লিজ!
ধ্রুব হাতের দিক ইশারা করল ‘টেইক ইট বিফোর।

পূর্ণতা আর উপায় দেখলনা।ধ্রুবর হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে পা ছুড়ে ছুড়ে এসে বিছানায় বসল।ধ্রুব একহাত পেছনে বেঁধে,অন্যহাত জানলায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।পূর্ণতা খেতে নিয়ে শুধাল,
‘আপনি খাবেন না?
‘আমি পাস্তা পছন্দ করিনা।তাছাড়া আমার খিদেও পায়নি।তুমি খাও।
পূর্ণতা এরপর খুব দ্রুত খেল।একে খিদে,দুইয়ে ধ্রুবর হাত দেখার তাড়া।প্লেট পুরো শূন্য করে মুখ মুছে ব্যাস্ত কন্ঠে বলল
“শেষ। এবার দেখান!
ধ্রুব উত্তরে এগিয়ে এল ওর দিকে।হাটুমুড়ে পূর্নতার সামনে বসল।পেছনে রাখা হাতের মুঠোটা মেলে ধরল পূর্নতার কোলের ওপর।পূর্ণতা উদ্বেগ নিয়ে দেখতে গিয়ে থমকাল।ধ্রুবর হাতের তালুতে মার্কার দিয়ে লেখা
‘আমার বাচ্চার মা হবে?
পূর্ণতা রেগেমেগে বলল
” এসব কী?
ধ্রুবর সহজ স্বীকারোক্তি,
“আমার মনের কথা!
‘এগুলো আমার একদম পছন্দ নয়।
পূর্নতা ধ্রুবর হাতটা সরিয়ে দিল।বলতে গেলে ঝাড়া মারল একরকম।বালিশ নিয়ে কাঁত হয়ে শুয়ে পরল তারপর।
ধ্রুব পূর্নতার পিঠের দিকে চেয়ে থাকল।আহত তার দৃষ্টি।
“মায়াপরি কী কোনও দিন আমায় ক্ষমা করবেনা?
___
মেহবুব ঠিক সকাল দশটায় অফিস যান।নাস্তা সেড়ে, রওনা হওয়ার আগে এক কাপ চান খান ধীরেসুস্থে।এরপর বের হন বাড়ি থেকে।আজকেও এই রুটিনের ব্যাতিক্রম হলোনা।আরামসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন তিনি।সেলিনা পাশেই দাঁড়িয়ে।পূর্ণতা আর কাজের মেয়ে বেনি মিলে খাবার টেবিল পরিষ্কার করছে।মিশরার শরীর ভালো যাচ্ছেনা ইদানীং।খুব বেশি মাথা ঘুরছে তার।কথাটা শুনে পূর্নতা,সেলিনা দুজনেই ওকে কোনও কাজ করতে দিলোনা আজ।মিশরা কাজ পারেওনা।ভুলভাল হয়।তবুও করতে যায়।বসে থেকেও বা কী করবে?ফোনে গেমস খেলতে ভাল্লাগেনা,টিভি দেখতে ভালো লাগেনা।কিচ্ছু,কিচ্ছু ভালো লাগেনা মিশরার।ভালো লাগার মধ্যে রোজ মায়ের সঙ্গে কথা হয়,এটুকুই আছে।আজকে রাতেই ফিরবেন ওনারা।
মেহবুব চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন।ধীর নেমে এল নিচে।দুজনে একসঙ্গে গেলেও যায় আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে। সদর দরজা অব্দি যেতেই ওপর থেকে ধ্রুবর স্বর ভেসে এল,
‘দাঁড়াও বাবা।
ধীর-মেহবুব একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল।ঘুরে তাকাল।ধ্রুব কোর্ট-প্যান্ট পরে একদম পরিপাটি হয়ে সিড়ি বেয়ে নামল।এসে সামনে দাঁড়াতেই মেহবুব আমুদে কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
‘কী ব্যাপার মাই সন,এত ফরমাল আজ?প্রেজেন্টেশন আছে নাকি?
ধ্রুব মৃদু হেসে বলল,
“না বাবা।
” তাহলে কোথাও যাচ্ছো?
‘হ্যা। তোমার সাথে যাচ্ছি।অফিসে।
সেলিনা রান্নাঘরে চায়ের এঁটো কাপ রাখতে যাচ্ছিলেন।ধ্রুবর কথা শুনতেই থেমে দাঁড়ালেন।মেহবুব অবাক কন্ঠে বললেন,
‘অফিস যাবে?
‘হ্যা।আজ থেকেই ব্যাবসায় হাত লাগাব ভাবছি।
সেলিনা পেছন থেকে বললেন,
” কিন্তু ধ্রুব,তোরতো সামনে পরীক্ষা।একবারে পরীক্ষা শেষে না হয়__
“না মা।আমি আজ থেকেই অফিস যেতে চাই।বাবার কাজে সাহায্য করতে চাই।বেকার বসে থাকতে ভালো লাগছেনা।আর এখন তো আমার কাঁধে আমার স্ত্রীর দায়িত্বও রয়েছে।
ধ্রুব কথাটা ধীরের দিক চেয়ে চেয়ে বলল।চোয়াল শক্ত তার।মেহবুব তৎক্ষনাৎ বললেন,
‘তুমি কী পূর্নতার দায়িত্ব নেয়ার জন্যে অফিস যেতে চাইছো ধ্রুব?কেন?পূর্ণতা কী আমার মেয়ে নয়?ওর দায়িত্ব আমি নিতে__
‘প্লিজ বাবা!আমাকে আটকিওনা।তুমিতো চাইতে ভাইয়া অফিস জয়েন করুক।ও করেনি।হ্যা আমি হয়ত দুদিন পরে করতাম,সেখানে দুদিন আগেই করতে চাইছি। এতে আমার পড়াশুনার কোনও ক্ষতি হবেনা।

মেহবুব মেনে নিলেন।হাসলেন এবার,
‘বেশ! চলো।
ধ্রুব বের হওয়ার আগে পূর্নতার দিক তাকাল।কোমল,মায়াময় মুখটার দিক চেয়ে বলল,
‘কাল থেকে নিয়মিত ভার্সিটি যাবে।
আর মিশু,তুইও যাবি।
দুজনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে আবার ধ্রুবর দিক তাকায়।একসঙ্গে বাধ্যের মত মাথা দোলায়।ধ্রুব, বাবা ভাইয়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে প্রস্থান নিল।সেলিনা সেদিক চেয়ে বললেন,
‘ছেলেদুটো যে কার মত হলো,কখন কী করে,কী বলে মা হয়ে আমি নিজেও বুঝিনা!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here