#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,০৫,০৬
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
প্রিয়ার মামাতো বোন ওকে দেখে দৌঁড়ে আসে। মামাতো বোনটা ছোটোই। ক্লাস এইটে পড়ে কিন্তু অতিমাত্রায় বা*চাল! প্রিয়া নিজেও বা*চাল টাইপ তাই ওর মামাতো বোন রাহাকে ওর তেমনটা ভালো লাগে না। প্রিয়া চায় ওর সামনের মানুষটা ওর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। প্রিয়া বিছানায় ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বসে। তখন থেকে রাহা উৎসুকভাব তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। প্রিয়া বলে,
“কিছু বলবি?”
“আসলে আপু, তোমাকে না বলতে পারলে পেটের ভিতর কেমন গুড়মুর করছে।”
প্রিয়া সেন্টি টাইপ হাসি দিয়ে বলে,
“তাহলে বল।”
“জানো? আমি এখানে কেনো এসেছি?”
প্রিয়া ঘার নাড়ায় মানে জানেনা। রাহা বলতে থাকে,
“আমি কালকে এক স্যারের নামে গসিপ করছিলাম আর সেই স্যার যে আমার পেছোনে দাঁড়িয়েছিল বুঝিনি। এখন তাই আজ স্কুলে যাবো না বলে এখানে চলে আসছি। শুধু হাসির ছলে এটুকু বলেছিলাম, ‘স্যার ম্যাথ করতে করতে মাথায় টা*ক বানিয়ে ফেলেছে।’ এখন কী করব বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করো আমি বুঝিনি স্যার ওখানে থাকবে আর ওইটুকু বাদে আর কোনো খারাপ কথা বলিনি। প্রসঙ্গটা এক বান্ধুবী তুলেছিল যে ওই স্যার নাকি অনেক কড়া। ম্যাথের মধ্যে একটা একক লিখতে ভুল করলে পুরো ম্যাথ কে*টে দেয়। স্যার আমার ক্লাস নেয় না তাও স্কুলে যেতে ভয় হচ্ছে। ক্লাস নাইনে নাকি ছেলেদের সেকশনে ম্যাথ ক্লাস নেয়। এখন যদি স্যার রাগ করে আমাদেরও ম্যাথ নিতে আসে তাহলে?”
প্রিয়া বেদনাতুর দৃষ্টিতে তাকালো। নিজের দুঃখ রাখার জায়গা নাই এখন আরেকজন। প্রিয়ার মনে হলো, ‘জারিফ স্যার যে স্যার এটা তো সে জানতো না। তাহলে তো স্যারের ব্যাপারটা ভুলে যাওয়া উচিত। সে অযথায় এতো ভয় পাচ্ছে। তার থেকে রাহার ব্যাপারটা গুরুতর। সে যে তাকেই মিন করেছে তার প্রমান কী?’
প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিলো এই সপ্তাহে আর একটা ক্লাস। সেটা কা*টিয়ে নিয়ে সামনের সপ্তাহ থেকে আর লুকাবে না। রাহাকে বলে,
“স্যারের কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে নিস। এখন কী আর করবি বল? আমিও একটা ঝামেলা করে ফেলেছিলাম তবে তোরটা শুনে মনে হচ্ছে আমারটা অতোটাও খারাপ ছিল না। আমি নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারব।”
রাহা জানতে চাইলো কিন্তু প্রিয়া কথা কা*টিয়ে ওকে নিয়ে মুভি দেখতে বসলো।
____________
জারিফের কলেজের বন্ধুরা বলছে ট্যুরে যাবে। জারিফও রাজি হলো। দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে একটু অ্যাডভেঞ্চার টাইপ ট্যুর দিবে। তার জন্য ওরা সুন্দরবন বেছে নিলো। সুন্দরবনে অ্যাডভেঞ্চার করার মতো তেমন কিছু নেই কিন্তু সেখানে টেন্টে রাত্রি যাপন করা আর মনের মধ্যে বন্য প*শুদের ভয় নিয়ে থাকাটাও একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো। জারিফের পরিবারও চাইছে একটা ফ্যামিলড ট্যুরের কথা। তবে তুতুলের জ্বর আর জায়ান এই সপ্তাহে ছুটি নিতে পারবে না কারণ অফিসে কাজ আছে। সামনের সপ্তাহেও হবে না। তাই সামনের সপ্তাহের পরের সপ্তাহে বৃহঃপতিবার, শুক্রবার, শনিবার এই তিনদিনের ট্যুর দিবে।
সন্ধ্যার পর বাসায় এসে শুনে জারিফের ফুফাতো বোন মুন্নি, যে কীনা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। সে কলেজের কোচিং টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলেই এখানে আসবে। জারিফের সাথে দেখা করতে সে খুব উৎসুক। মুন্নির একটা পরীক্ষা শেষ হয় তো আরেকটা শুরু হয় তাই সে এতোদিন আসতে পারেনি। কয়দিন পর কয়েকদিনের ছুটি পাবে সেই খুশিতে আসবে। জারিফ যখন কানাডা গিয়েছিল তখন মুন্নি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো। মুন্নি এই বাসায় আসলে জারিফের পিছু লেগেই থাকতো যা জারিফের পছন্দ ছিল না। জারিফের বুকশেলফ অগোছালো করতো। সেই মুন্নির আগমনের বার্তা শুনে জারিফ যারপরনাই হতাশ। যদি ওর আগের মতোই স্বভাব থাকে তবে জারিফ কী করবে! হতাশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
তামান্না আবার জারিফের মুখশ্রীর হতাশা কিছুটা ঠাওর করতে পারলো তাই সে তরুণীমা বেগমকে বলে,
“মা, মুন্নির সাথে জারিফের বিয়ে নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?”
তরুণীমা বেগম ভ্রুঁকুটি করে বলেন,
“কেনো? জারিফ কি মুন্নিকে পছন্দ করে?”
তামান্না হড়বড়িয়ে বলে,
“আরে না না। জারিফকে তো মুন্নির আসার খবরে হতাশ হলো মনে হচ্ছে। আমি তো জারিফ কানাডা যাওয়ার আগে জারিফকে দেখিনি আর মুন্নির সাথে সম্পর্ক কীরকম তাও জানিনা। মুন্নি আমার বিয়ের পর যতোবার এখানে এসেছে সে জারিফের কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলতো। আর এদিকে জারিফের চোখে-মুখে মুন্নির আসার খবরে হতাশা ও বিরক্তির ছাঁপ।”
তরুণীমা বেগম বলেন,
” মুন্নি জারিফকে বিরক্ত করতো। জারিফের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতো যা জারিফের পছন্দ না। তাই জারিফ ওকে আগেও পছন্দ করতো না। জারিফের বিয়ে নিশ্চয়ই আমরা ওর পছন্দের বাহিরে দিবো না। শুধু ভিনদেশী ও অন্য কালচারের মেয়েকে চাইনি জারিফের জীবনে আনতে। আমি ও তোমার বাবা ভেবেছিলাম জারিফের সাথে হয়তো মারিয়ার সম্পর্ক আছে।”
“আচ্ছা মা? যদি জারিফ আপনাদের কস্ট না দিতে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে যায় তবে? যদি জারিফ সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতো বা করে তবে?”
তামান্নার কথায় তরুণীমা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন। তামান্না শাশুড়ির চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে উঠে গেলো আর কথা না বাড়িয়ে। তরুণীমা বেগম জারিফের সাথে এই বিষয়ে খোলসা করে কথা বলবেন বলে ভাবলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজে ছেলের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেলেন।
জারিফ সবে হাত-মুখ ধুয়ে বসেছে তখনি দরজায় নকের শব্দে দরজা খুলে মাকে দেখে হালকা হাসে। তরুণীমা বেগম কফির মগ হাতে ভেতরে ঢোকে। ছেলের হাতে কফির মগ দিয়ে পাশে বসে। জারিফ কফিতে চুমুক দিয়ে দেখে তার মা হয়তো কিছু বলতে চায়। উনাকে বিব্রত লাগছে। সে জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবে মা?”
তরুণীমা বেগম ধীর স্বরে বলেন,
“হ্যাঁ আসলে কিছু বলতাম।”
“তো বলো। এতো ভাবতে হবে না তোমার। যা বলার বলো।”
জারিফের মা ইতস্তত করে বলেন,
“তুই কি সত্যি মারিয়াকে পছন্দ করতি? না মানে সত্যিটা জানতে চাই। তোর মনে যা আছে তাই বলবি।”
জারিফ এতক্ষণে বুঝলো আসল কারণ। জারিফ হালকা হেসে বলে,
“তুমি তো আমাকে চিনোই। কোনো মানুষের উপর আমার ফিলিংস থাকলে আমি সেটা সহজে ভুলি না। ফিলিংসটা ঘৃণার হোক বা ভালোবাসার। মারিয়া আমার শুধু ভালো বন্ধু। এমনকি মারিয়া এইনগেজড। তার ফিয়ন্সে অন্য শহরে থাকে চাকরিসূত্রে। ওর ফিয়ন্সের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক।”
তরুণীমা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন। তিনি এবার ভাবলেন মুন্নির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। মুন্নি যে জারিফকে পছন্দ করে সেটা সে মুন্নির কথাবার্তায় টের পেয়েছেন খানিকটা। তাছাড়া তামান্নাও বলল আজ।
“মুন্নিকে তোর কেমন লাগে?”
জারিফ ভ্রুঁকুটি করে মায়ের দিকে চাইলেন। মুন্নির নাম শুনতেই চেহারায় এক ধরণের বিরক্তির ভাব উদয় হয়েছে। জারিফ বলে,
“কাজিন হিসেবে যেমন লাগা উচিত। ততোটুকুই। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“না এমনি। থাক তবে। গেলাম আমি।”
তরুণীমা বেগম চলে যান। জারিফ লম্বাশ্বাস নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে। দুইদিন পর্যন্ত সবগুলো ক্লাসের ফার্স্ট ক্লাস থাকায় পড়ানো লাগেনি। আগামীকাল থেকে পড়ানো শুরু তাই নিজে পড়াটুকু তর্জমা করে নিচ্ছে সাথে বুঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব।
_____________
সকাল সকাল প্রিয়া আজকে নিজের কনফিডেন্স লেভেল বাড়িয়ে রেখেছে। সকাল থেকে কোনো ঝামেলাতেও পরতে হয়নি। ফ্রেন্ডদের সাথে আজকে নরমাল কথাবার্তা ছাড়া কোনো কথা বলেনি। জারিফের ক্লাসে মুখে মাস্ক লাগিয়ে কর্নারের সারিতে একদম ফার্স্ট সিটে বসেছে। আজকে ক্লাসে কনসেনট্রেট করবেই। তাও একটা সপ্তাহ যদি মুখ না দেখিয়ে থাকতে পারে তাহলে পরের সপ্তাহ থেকে আর মাস্ক পরতে হবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
জারিফ ট্যুরের জন্য তৈরি। এখন সে প্রিয়মকে ফোন করছে। প্রিয়মের সাথে একসাথে বাস স্ট্যান্ডে যাবে। প্রিয়মকে আবার জারিফের মা দেখতেও চেয়েছেন। জারিফ কানাডা যাবার আগে প্রিয়ম জারিফদের বাড়িতে অনেক যাওয়া আসা করতো। বেস্টফ্রেন্ড কীনা। জারিফ খুব একটা কারও বাড়ি যেতো না কিন্তু নিজের বাড়িতে ফ্রেন্ডদের আনতো। বাস রাত দশটায়। এখন আটটা বাজে। প্রিয়মকে ফোন করলে প্রিয়ম বলে,
“বের হচ্ছি ওয়েট। আরে ছোটোবোন রাগ করে বসে আছে। কেনো তার ভার্সিটি বন্ধের সময় কোথাও ট্যুরে গেলাম না! এখন আবার নিয়ে যেতে বলছে। বন্ধের সময় সে অলস সময় পার করেছে যে।”
জারিফ হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“আয় তবে। মা তোকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“দশ মিনিট লাগবে অটো দিয়ে আসতে। আসতেছি।”
প্রিয়ম ওর মা-বাবা, প্রিয়া ও রাহাকে বলে বেরিয়ে পরে। প্রিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তারও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। মুখ ফুলিয়ে রাহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে।
________
প্রিয়ম পনেরো মিনিটের মধ্যে জারিফদের বাড়িতে গেলো। জারিফের মা ওর সাথে কথা বলছেন। প্রিয়ম খুব সহজেই মানুষের সাথে নিজেকে খাঁপ খাইয়ে নিতে পারে। আড্ডা, সাক্ষাত শেষে জারিফ ও প্রিয়ম বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। সুন্দরবন যেতে ৮-৯ ঘন্টা লাগবে। লম্বা পথের জন্য রাতের সময়টা উপভোগ্য। রাত দশটায় বাস ছাড়ে। প্রিয়মের ফোনে তখন প্রিয়ার ফোন আসে। ফোন রিসিভ করার পর অপর পাশ থেকে শুনতে পায়,
“শোন ভাইয়া, আমার জন্য সুন্দরবনের খাঁটি মধু, মুলতানি মাটি ও চন্দন আনবি। আমাকে তো নিলি না তাই এগুলো আনবি।”
“খাঁটি মধু নাহয় আনলাম। বাকিগুলো তো ঢাকাতেই পাওয়া যায়। ওগুলো ওখান থেকে কেনো আনবো?”
প্রিয়া শা*সানো স্বরে বলে,
“আনতে বলছি আনবি। এতো কথা বলিস কেন?”
প্রিয়ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“যা আনবো। এবার ফোন রাখ।”
প্রিয়া মুখ ভে*ঙচি দিয়ে ফোন রেখে দিলো। তারপর চিল্লিয়ে মাকে বলল,
“আমিও ট্যুরে যেতে চাই চাই চাই। মানুষ ঘোরাঘুরি করবে আর ফেসবুকে ছবি আপলোড দিবে আর আমি লাস্ট কবে ট্যুরে গেছি আমার মনেই নেই।”
তারপর স্বর নিচু করে আফসোস করে বলতে থাকে,
“কতোদিনে শখ আমি সমুদ্রকন্যার কোলে সূর্যাস্ত দেখব। কক্সবাজার নিয়ে তো গেছিল তাও যখন বাবা-মাকে ছাড়া একটু দূরে যেতেই ভয় হতো। এখন কুয়াকাটা যেতে ইচ্ছে করছে আর গেলে আমি নিজের মতো ঘুরবো। ছেলেকে ঠিক বন্ধুদের সাথে একা ছেড়েছে কিন্তু আমার বেলায়, জামাই নিয়ে একা একা যাস! কী আজব! তখন জামাইয়ের হাত ধরে থাকতে হবে এটাই ভাবে। জামাই নিয়ে যে যাবো তো বিয়েটা দেও!”
রাহা প্রিয়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে। প্রিয়া ওকে একটা ধ*মক দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
__________
সকাল ৭টার পর সুন্দরবনে পৌঁছালো। জারিফ ও প্রিয়মরা কাঁধে ট্রাভেল ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটতে থাকে। ওরা দশ জনের মতো এসেছে। ওরা এখন জামতলা সৈকতে যাবে। জামতলার পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হলো আকর্ষণীয় জায়গা। টাওয়ার থেকেই বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি দেখা যায়। মাঝে মাঝে রয়েল বেঙ্গল টা*ইগারেরও দেখা পাওয়া যায়। নাস্তা শেষে জামতলা সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সবুজ বনভূমি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে বড্ড নজরকারা লাগে। মন বলে, এই বিস্তীর্ণ সবুজ অরণ্যের সমোরোহে হারিয়ে যাই। বনের ভিতর দিয়ে সরু সরু পানিপথ আছে সেখানে পর্যটক নৌকা চলাচল করে। বনের ভিতর ঢুকলে সূর্যরশ্মি খুব স্বল্প পৌঁছায় তাই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিয়ে যেতে হয়।
জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। পথের পাশে ঘন অরণ্যে বা*ঘ, হরিণ, শূ*কর, বি*ষধর সা*প ইত্যাদির দেখা পাওয়া যায়। খুব সাবধানে যেতে হয় আর এই গা ছমছমে পরিবেশের জন্য দুঃসাহসী পর্যটকদের বিকল্প নেই। এই গাছ থেকে ওই গাছে বা*নরের ছোটাছুটি দেখে অনেক সময় পর্যটকদের ভীত করে তোলে।
প্রিয়মরা বনের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। জারিফ বলল,
“তোরা ছবি তুলতে থাক। পরে আমি নিয়ে নিবো। আমার তো পাখির কিচিরমিচির, বা*নরদের ডাক ও বন্য প্রাণীদের ছুটে চলার শব্দে মন বারবার প্রশান্তিতে হারাতে চাইছে।”
অর্ক পিঞ্চ করে বলে,
“এট বল যে এখানে তোর বাড়ি বানিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।”
সবাই হেসে উঠল। জারিফ বলে,
“মোটেও না। এখানে থাকলে আমি তখন আর প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারাতে পারব না কারণ তখন প্রকৃতি আমার কাছে ফিকে লাগতে পারে। তাই মন ফ্রেশ করতে এসব জায়গায় ট্যুর করাটাই বেটার। এখানে যারা থাকে, তারা কী আমাদের মতো মুগ্ধতার নজরে দেখে? দেখে না। কিছু মানুষ দেখে তবে বেশিরভাগ তাদের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে এখানে আসে। তারা প্রকৃতিবিলাশ করতে খুব কম আসে। আমি মনে করি সুন্দর সবকিছুর থেকে দূরে থাকা ভালো যাতে তা চিরকাল সুন্দর থাকে।”
প্রিয়ম বলে,
“আমার বোন এলে সে সত্যি সত্যি বাড়ি বানিয়ে থাকতে চাইবে।”
রনিত জারিফের কথাগুলো একটু ভেবে বলে,
“তাহলে বিয়ের পর? তুই কি একাধিক বিয়ে করবি নাকি? কারণ তোর কাছে তো ফিকে লাগতে পারে।”
জারিফ হালকা হাসলো অতঃপর বলল,
“প্রকৃতি ও লাইফ পার্টনারের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি যদি কখনও জানতেই না পারি আমি তাকে কেনো ভালোবাসি তবে সারাটাজীবন আমার কেটে যাবে সেই রহস্য উদ্ধার করতে। মানুষ বড্ড বেশি বিচিত্র। আর প্রকৃতির মধ্যে যদি আমি আমার জীবিকা খুঁজি সেটা শুধু স্বার্থই হবে। আমি জানিনা কেনো আমি সবার মতো প্রকৃতিক সৌন্দর্যময় জায়গাতে বাড়ি বানানোর ইচ্ছা মনে পোষণ করতে পারি না। আমার কাছে প্রতিটা ট্যুরের সময় একই প্রকৃতি নতুন করে অনুভব করতে ভালো লাগে। আমার মনটাও বিচিত্র!”
প্রিয়ম জানে জারিফ মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায়। কেউ ওকে তর্ক মূলক প্রশ্ন করলে সে জবাব দিতে পারে না। এজন্য জারিফ তর্কেও যায় না খু্ব একটা। প্রিয়ম বলে,
“আরে ভাই, এখানে থাকলে বন্য প*শুর আ*ক্রমণেরও ভয় থাকবে। তাই না? সবকিছুরই ভালো ও খারাপ দিক আছে। তাছাড়া অন্যান্য টুরিস্ট স্পটেও যারা স্থায়ী বাসিন্দা তারা ঠিক জানে ওই জায়গায় থাকাটা কেমন। তাই প্রকৃতিক সৌন্দর্য খানিক সময়ের জন্য উপভোগ করে মনকে ফ্রেশ করে আবার ব্যস্ত জীবনে চলে যাওয়াই ভালো।”
জারিফ প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওরা বিকেলের সূর্যাস্ত মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে দেখবে। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা। যা এখনও কিছুটা অনাবিষ্কৃত এবং অস্পর্শিত। এর কাছাকাছি কোথাও অনুমতি নিয়ে ওরা টেন্ট বানিয়ে রাতটা থাকবে তারপর সকাল হলে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা করবে। জারিফের শনিবার ছুটি থাকলেও বাকিরা শনিবারের জন্য এক্সট্রা ছুটি নিয়েছে।
___________
প্রিয়ার ছুটির দিনগুলো খুব অলস যায়। সারাদিন ঘুমানো শুধু তিনবেলা খাওয়া ও নামাজের সময়গুলাতে উঠে। বিকেলে সে চা বানিয়ে ব্যালকনিতে বসেছে সাথে রাহাও আছে। ওর ব্যালকনিতে ফুলের গাছ ও বিভিন্ন রকম ক্যাকটাস গাছে ভর্তি। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটানোর কারণে শরীর ম্যাজমেজ করছে। প্রিয়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আকাশপানে দৃষ্টি স্থির রেখে রাহাকে বলে,
“বুঝলি রাহা, আমি ভাবছি একবার শুধু একটা বিয়ের কথা উঠুক। আমি একবারও মানা করবো না। আমিও ট্যুরে যাবো। জামাই নিয়ে সব জায়গায় ঘুরবো। এই পড়ালেখা আমার দ্বারা হবে না।”
রাহা বিষণ্ণ মনে বলে,
“আমার কী হবে আপু? আমাকে তো প্রতিদিন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু আমি শুনেছি ডাক্তার হলে নাকি রাত-দিন কোনো শান্তি নেই।”
“আমাকেও বলছিল কিন্তু চান্স পাইনি তাই আমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে প্যা*রা খেতে ঢুকিয়ে দিলো। জীবনটা বেদনার!”
প্রিয়া ও রাহা দুজনেই মন খারাপ করে চা খাচ্ছে। প্রিয়ার মা হুট করে তড়িঘড়ি করে ওদের রুমে এসে যা বলল তা শুনে প্রিয়ার অক্ষিগোলক বৃহৎ আকার ধারণ করলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,