হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১১,১২

0
443

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১১,১২
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১

ভার্সিটিতে গিয়ে ফাঁকা লিফটে উঠে কাঙ্খিত ফ্লোরের বোতামে প্রেস করার পর লিফটের দরজা বন্ধ হচ্ছে হুট করে আধ বন্ধ হওয়া দরজা খুলে গেলো আর জারিফ লিফটে প্রবেশ করলো। প্রিয়া আচমকা জারিফকে দেখে থতমত খেয়ে সালাম দিয়ে চুপচাপ লিফটের কোনার দিকে চলে গেলো। জারিফের হুট করে হাসি পেলো কিন্তু হাসলো না। হাসি চেপে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে দরজার দিকে মুখ করে পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কাঙ্খিত ফ্লোরে লিফট থামার পর জারিফ নেমে গেলো আর প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কিন্তু এদিকে সে বেমালুম লিফট থেকে নামার কথা ভুলে গেছে। লিফট উপরের ফ্লোরে উঠার পর নিজের কপাল চাঁ*পড়ে বিড়বিড় করে,

“সবই কপাল! ধ্যাত ভাল্লাগে না।”

এটা বলে উপরের ফ্লোরে নেমে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো অথচ সে লিফট দিয়েও নামতে পারতো!

সারাদিনের ক্লাস শেষে লাঞ্চ করে একটু হাত পা মেলে বসেছে। একটু পর বাড়ি ফিরবে। প্রিয়া আয়ানের দিকে তাকালো অতঃপর ওর পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে ভ্রুঁকুটি করে বলে,

“কী হয়েছে তোর? চোখ মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো?”

আয়ান জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আরে কিছু না। ভাবছিলাম ক্লাস টেস্ট তো এসে পরছে কিন্তু পড়া হয়নি কিছু। তাই একটু…”

“পড় পড়। ব্রিলিয়ান্ট পোলা। তুই না পড়লে আমাদের কে দেখাবে!”

সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো। রাদ ও সাদ আয়ানের হাসির আড়ালে লুকানো ব্যথা আন্দাজ করতে পারে। আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। বিষয়বস্তু প্রিয়ার বিয়ে। প্রিয়াকে শুক্রবার ছেলেপক্ষ আবার দেখতে আসবে আর ওর বিয়েতে কে কি পরবে সেসব। তারপর বাড়ির জন্য রওনা করে।

_________

পরেরদিন জারিফের ক্লাসে জারিফ প্রিয়াকে একটা পড়া বিষয়ক প্রশ্ন করলে প্রিয়া জবাব দিতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে জারিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“ফাঁকিবাজি করলে চলবে না। পড়ালেখা ভালো করে করতে হবে। দেখতে দেখতে দুইটা উইক চলে গেছে। ক্লাস টেস্ট নিতে হবে সাথে মিড আসছে। সিম্পল পড়া ছিল এটা।”

তারপর প্রিয়াকে বসতে বললে প্রিয়া বসে বিড়বিড় করে বলে,
“আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অতো পড়তে হবে না। পরীক্ষার সময় টুকটাক পড়ে নিবো। আর আমার গ্যাং তো আছেই।”

আবারও ক্লাসে মনোযোগ দিতে চাইল। জারিফ প্রিয়াকে আরেকবার দেখে পড়ানোতে মন দিলো। জারিফ মনে মনে ভাবে,

“এতো ফাঁকিবাজ মেয়ে আমার বউ হবে ভাবতেও অস্বস্থি হচ্ছে। তার রেজাল্ট খারাপ হলে আমি ডিপার্টমেন্টে কি বলব!”

______

আজ শুক্রবার। সকাল থেকে প্রিয়াদের বাড়িতে ভীড় লেগে আছে। প্রিয়ার মামা, চাচা, ফুফুরা এসেছে। সাথে ছোটো বড়ো কাজিনরা। প্রিয়ার এক বিবাহিত কাজিন ইফা, প্রিয়ার সাঁজ সজ্জার দায়িত্ব নিয়েছে যে কিনা প্রিয়ার ফুফাতো বোন। সকাল উঠিয়ে ওর মুখ, হাত-পায়ে কিসব ফেসিয়াল জিনিসপত্র লাগিয়ে বসিয়ে রেখেছে। রাহা প্রিয়ার এই অবস্থার ছবি তুলছে আর এই ঘর থেকে ওই ঘরে ঘুরছে। কাজিন চারটা ভাই যেগুলোর একটা প্রিয়ার থেকে একটু বড়ো আর দুইটা ছোটো। এগুলো ওর মামাতো ভাই আর আরেকটা প্রিয়মেরও বড়ো যে কিনা ওদের চাচাতো ভাই। তার বউ প্রিয়ার মা-চাচিদের সাথে রান্নার কাজে হাত দিয়েছে। আর কিছু পিচ্চি পিচ্চি বোন আছে সেগুলো ঘরময় দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে।

প্রিয়া হাত-পা, মুখ ধুয়ে একেবারে গোসল সেরে এসে বলে,

“ইফাপু, আমি এসব আর লাগাবো না। শীতের মধ্যে আমাকে বারবার পানির ছোঁয়া লাগাতে হচ্ছে। আমি একটু ঘুমাবো। যাও তো তোমরা যাও। টেনশনে আমার কলিজা শুকিয়ে আসছে আর তারা আমার রূপচর্চা করছে!”

“একটু টুকটাক করেই এই অবস্থা! তাহলে অনুষ্ঠানের সময় সপ্তাহ জুরে যে পার্লারে দৌঁড়াতে হবে সেটা!”

“অতো পারব না বাবা! এখন তোমরা দয়া করে যাও। এতো উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে মাথা ব্যাথা করছে। ঘুমাব একটু।”

ইফা প্রিয়াকে মেডিসিন নিতে বলে তার স্বামীর খোঁজ করতে চলে যায়। রাহা এসে প্রিয়ার পাশে বসে তারপর বলে,

“তোমার একটা দেবর থাকলে আমি সেটাকে বিয়ে করব। আহা! তারপর দুইবোনে মিলে মুভি দেখব।”

“আজকে যদি জামাই আমার পছন্দ না হয় তো আমি তোর মুভি দেখা জন্মের মতো ঘুঁ*চিয়ে দিবো মনে রাখিস। যা ভাগ।”

রাহা ঠোঁট উলটে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে একটু কান্নার অভিনয় করে বলে,

“সত্যি বলছি আপু, সবাই জিজুর ছবি দেখে বলেছে জিজু একটা ছেলে হুর!”

“ছেলে হুর! সেটা আবার কি?”

রাহার উদ্ভট কথার বিনিময়ে প্রিয়া প্রশ্ন করলে রাহা জবাব দেয়,

“আরে সুন্দর মেয়েদের হুরপরীর সাথে তুলনা করলে সুন্দর ছেলেদেরও ছেলেহুর বলাই যায়! নাহলে পরীরর মেইল ভার্সনটা জ্বি*ন! এখন হুরজ্বি*নের থেকে ছেলেহুর কথাটা মানায়।”

প্রিয়া বিরক্তিতে নিজের কপাল চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,

“বের হ আমার রুম থেকে। এখন গিয়ে দোয়া-দুরুদ পড় যাতে তোর উপর ঝড় না বয়। বের হ।”

রাহা ভদ্র বাচ্চার মতো সুরসুর করে বেরিয়ে গেলো। প্রিয়া দরজা লক করে জানালার পর্দা টেনে বারান্দার দরজার পর্দা টেনে ভেজা চুলগুলো বালিশের উপর এলিয়ে দিয়ে কম্বল পেঁচিয়ে ঘুম দিয়েছে।

_______

জারিফের বাড়িতে অতো তোড়জোড় নেই। জায়েদ সাহেব তার ভাইকে জানিয়েছেন আর তার বোনকে একটু আগে জানিয়েছেন যে জারিফের জন্য মেয়ে দেখতে যাবেন। জারিফের ফুফি সেই রংপুর থাকেন। অতোদূর থেকে এখন চাইলেও আসতে পারবেন না। প্লেনে করে আসা গেলেও সেটা জমিলা বেগমের স্বভাব বিরুদ্ধ। জমিলা বেগম কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিজের কথার মাধ্যমে যা জায়েদ সাহেব নিজের বোনের কথায় বুঝেছে তাই আর আকদের কথাটা বলেননি।

জারিফের চাচা, খালা, মামারা এসেছেন। উনাদের ছেলে-মেয়েরা কেউ দেশের বাহিরে বা কেউ অনেক দূরে আছে চাকরিসূত্রে তাই জারিফের সব কাজিন আসতে পারেনি। দুইটা কাজিন ভাই যারা ইউনিভার্সটিতে পড়ে আর স্কুল পড়ুয়া একটা কাজিন বোন ফিহা এসেছে। জারিফ নিজের রুমে বসে কিসব কাজ করছে তাই ওকে কেউ বিরক্ত করছে না। তামান্না ফিহার কাছে তুতুলকে ধরিয়ে দিয়ে গোছগাছ করছে। জুম্মার পরপরই প্রিয়াদের বাড়িতে যাবে। তামান্নার মা-বাবা ও বড়ো ভাই এসেছেন। তামান্নার বড়োভাই এবার মাস্টার্সে পড়ছে সাথে জব করছে।

_______

জুম্মার নামাজের পর জারিফরা প্রিয়াদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি ও বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন ও ফল নিয়ে হাজির হলো সাথে কাজিও। প্রিয়াকে সাঁজাতে তামান্না ও ফিহা জিনিসপত্র নিয়ে প্রিয়ার ঘরে গেলো। প্রিয়াকে ডার্ক ওয়ান রঙের হালকা কাজের বেনারসিটা পড়ায়। তারপর হালকা সাঁজগোজ করিয়ে ড্রয়িংরুমে আনে। প্রিয়া মাথা নিচু করে চোখ-মুখ খিঁচে রেখেছে। বরের মুখ দেখবে তাই ভয় হচ্ছে। প্রিয়াকে জারিফের বরাবর সোফায় বসায়। জারিফের মা তরুণীমা বেগম প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“মাশাআল্লাহ্। অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে মা। আমার ছেলেকে এবার দেখো। দুজনকে মানাবে ভালো।”

প্রিয়া আঁড়চোখে দেখতে চেষ্টা করলো। লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। তামান্না অপেক্ষা করছে প্রিয়ার রিয়াকশনের। সে প্রিয়াকে শুনিয়ে জারিফকে বলে,

“জারিফ দেবরজি, তোমার দুলহান তো লজ্জায় তোমাকে দেখতে পারছে না। একটু লজ্জা ভাঙাও!”

রাহা, প্রিয়মরা হেসে উঠলো। জারিফ নামটা শুনে প্রিয়ার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। তাড়াহুড়ো করে চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করা যেনো গলার কাঁ*টা মনে হচ্ছে। সামনে তার ডিপার্টমেন্টের স্যারকে দেখে অক্ষিগোলক কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এদিকে জারিফ ভাবশূণ্য! সে প্রিয়ার সাথে একবার চোখাচোখি করে নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। যেনো যা হচ্ছে তা কোনো অবাক বা হতবাক করা বিষয়ই না।

জারিফের বাবা কাজিকে বলে উঠেন,
“কাজি সাহেব, বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।”

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
প্রিয়া ঘরে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে বারকয়েক তাকালো। নাহ্! কারও মুখশ্রীতে প্রিয়ার মনের অবস্থার প্রতি সমবেদনা পরিলক্ষিত হলো না বরং নিজের আপন মায়ের পেটের ভাইও কেমন মিটমিট করে হাসছে! প্রিয়া দেখল জারিফের ভাবিও মিটমিট করে হাসছে। তবে কি এরা জানতো?
এদিকে কাজী বিয়ে পড়ানোর জন্য নাম ঠিকানা বলছে। প্রিয়া ওর ভাইকে ইশারায় কাঁদো কাঁদো চাহনিতে ডাকলে প্রিয়ম হাসি চেপে হালকা গলা ঝেড়ে প্রিয়ার পেছোনে এসে ঝুঁকে। প্রিয়ার অন্তরে শীতল অনুভূতি হচ্ছে। প্রিয়ম জিজ্ঞেস করে,

“কী বলবি বল।”

“ভাই উনি কে? উনাকে আমি চিনি ভাই!”

প্রিয়ার জড়তাগ্রস্ত কথায় প্রিয়ম হাসে তারপর ফিসফিস করে বলে,

“উনি ‘জারিফ আহমেদ’। আমার বেস্টফ্রেন্ড ও তোদের ডিপার্টমেন্টের নিউ লেকচারার। আর কিছুক্ষণের মধ্যে তোর স্বামী হবে!”

প্রিয়া আঁতকে উঠে বড়ো বড়ো চোখ করে প্রিয়মের দিকে ঘার ঘুরায়। প্রিয়ম এবার শান্ত কন্ঠে বলে,

“বিয়েটা করে নে। তোর তো অন্য কাউকে পছন্দও নেই। শুধু তোর স্যার বলে বিয়েতে মানা করবি এটা ভালো দেখায় না। আমরা সবকিছু জেনেই এগিয়েছি। জারিফ তোর জন্য ঠিক। তোর মা-বাবা, ভাইকে তো তুই চিনিস, নিশ্চয়ই তোর খারাপ চাইবে না।”

প্রিয়া চোখ বন্ধ করে দুইবার নিঃশ্বাস নিলো তারপর জারিফের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। তখনি জারিফও তাকালো। নয়নযুগলের শুভদৃষ্টির মাঝে কাজী সাহেব জারিফকে কবুল বলতে বলল। জারিফ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখে হাসলো অতঃপর তিনবার কবুল বলে দিলো। এবার কাজী সাহেব প্রিয়াকে কবুল বলতে বললে প্রিয়ার হৃৎপিন্ডের ধুকপুকানি কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। ঢোল পে*টানোর মতো ধ্রিম ধ্রিম করছে। শ্বাসটাও আটকে আসছে। বাবা-মায়ের দিকে তাকালে তারা কবুল বলতে ইশারা করে। প্রিয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো সাথে ওর গলাও শুকিয়ে গেছে। প্রিয়ম রাহাকে ইশারা করলো প্রিয়াকে পানি দিতে। এদিকে জারিফের ভাবী বলছেন,

“কবুল বলো প্রিয়া।”

প্রিয়া শুকনো ঢোক গিলে জারিফের দিকে তাকালে দেখে জারিফ প্রিয়ার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা প্রিয়ার জন্য এই মূহুর্তে অপ্রতিরোধ্য। রাহা পানি এনে দিলে প্রিয়া খপ করে নিয়ে সবটুকু পানি খেয়ে নিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়। ইয়াং জেনারেশনের সবাই হেসে উঠে একমাত্র জারিফ বাদে। সে এখনও প্রিয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে তার তীক্ষ্ম হাসি। প্রিয়াকে কাজী সাহেব আবারও কবুল বলতে বললে সবার পিড়াপীড়িতে প্রিয়া ধীর স্বরে কবুল বলে চোখ মুখ খিঁচে নেয়। হয়ে গেলো স্যারের বউ! লোকটার সাথে বাসে প্রথম দেখা আর তিক্ত অনুভূতি সেই সাথে স্যার হয়ে আগমন। সবটা অক্ষিপটে ফুটে উঠছে তার।

ঘরময় সকলে খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে মিষ্টিমুখ করছে। ডার্ক ওয়াইন রঙের পাঞ্জবি পরিহিত জারিফকে সত্যি অসম্ভব সুন্দর লাগছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতে থাকলে প্রিয়াও কয়েকবার ক্রাশ খেয়ে বসতো! প্রিয়ম এসে জারিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“হয়ে গেলাম তোর শা*লা! বেস্টফ্রেন্ড থেকে শা*লা! হোয়াট অ্যা নাইস জার্নি!”

জারিফ ও প্রিয়ম দুজনেই হেসে উঠে। রাহা দৌঁড়ে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,

“কনগ্রাচুলেট আপি। বলেছিলাম না? জিজু খুব হ্যান্ডসাম। আজকে জিজুকে ডার্ক ওয়াইন কালারের উপর সোনালি সুতোর কারুকাজ করা পাঞ্জাবিতে কেমন রূপকথার প্রিন্স চার্মিংয়ের মতো লাগছে না? তুমি তার জন্য আসা এক প্রিন্সেস। উফ! আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। তোমার কী ইচ্ছে হচ্ছে?”

প্রিয়া রাহার দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর করে হাসলো। রাহা প্রিয়ার চাহনিতে কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে আছে। এরপর প্রিয়া চোখ-মুখ শক্ত করে দাঁত কটমট করে ধীর স্বরে বলে,

“তোকে বরফ কুচি পানিতে চু*বা*ইতে! বারবার চু*বাবো। পারলে ডিফ ফ্রিজে ভরে রাখব। তোকে বরফের ম*মি বানাবো!”

রাহার হাসি-খুশি মুখটা খনিকেই আষাঢ়ের কালোমেঘে ছেঁয়ে গেলো।
“আমি কী করেছি? তোমার শীতকালে এসব ভয়ংকর, নির্দয় ইচ্ছেগুলো কেনো হচ্ছে আমার প্রতি?”

“তোর ওই ফা*লতু এক্সাইটমেন্টের জন্য আমার সাথে কী ঘটেছে জানিস?”

প্রিয়ার হিসহিসিয়ে বলা কথায় রাহা অবাক হয়ে সুধায়,
“কী ঘটেছে? তোমার কি জিজুকে পছন্দ হয়নি? এতো হ্যান্ডসাম জিজুকে তোমার পছন্দ হলো না! এই তোমার চোখের পাওয়ার ঠিক আছে? ডাক্তার তো তোমায় মাথাব্যথা হলে চশমা দিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পার্মানেন্ট চশমা লাগবে তোমার। চোখে ছানি পরেছে তোমার।”

প্রিয়া ভ্রুঁকুটি করে রাহাকে দেখলো। তামান্না এসে প্রিয়ার মুখের কাছে ছানা মিষ্টি ধরলে প্রিয়া জোরপূর্বক হেসে একটু খায় সাথে তামান্নাকেও খাওয়ায়। তুতুল এসে প্রিয়ার মুখের কাছে মিষ্টি ধরে তার মায়ের দেখাদেখি। প্রিয়া তুতুলকে কোলে তুলে নিয়ে ওর গালে চু*মু খায় তারপর তুতুলকে একটু মিষ্টি খাওয়ায় সাথে নিজেও তুতুলের হাত থেকে খায়। এরপর তুতুলকে কোল থেকে নামিয়ে সবাইকে একটু আসছি বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগায়।

রাহা প্রিয়ার ভাবগতি না বুঝে প্রিয়মকে জিজ্ঞেস করে,

“ভাই, প্রিয়ুপির কি জিজুকে পছন্দ হয়নি? সে আমাকে কতো থ্রে*ট দিলো।”

প্রিয়ম রাহার মাথায় টো*কা দিয়ে হেসে বলে,
“পছন্দ হলেও সে এখন বুঝতে পারছে না কারণ সে যে তার ভার্সিটির স্যারকে বিয়ে করেছে! শ*কে আছে বেচারি। কাছে যাস না ভুলেও। কখন তোকে শ*ক দিয়ে তোর ঘো*ড়ার লে*জের মতো চুলগুলো তারকাঁটার মতো খাড়া খাড়া করে দিবে!”

রাহা বলে,
“প্রিয়ুপি কী শ*ক খাবে! আমি নিজেই শ*কড! প্রিয়ুপি কাল রাতে এক স্যারের কথা বলেছিল। সে নাকি নতুন এসেছে আর সে পড়া ধরেছে সেটা আপি পারেনি। তারপর সেই স্যারের সাথে বাসে ঝামেলা হয়েছিল তারপর থেকে আপি লুকিয়ে থাকে ওই স্যারের থেকে। এটাই কী সে?”

প্রিয়ম কনফিউজড হয়ে বলে,
“নতুন তো জারিফই জয়েন করেছে ওদের ডিপার্টমেন্টে। হতে পারে। দাঁড়া, আমি জারিফকে জিজ্ঞেস করি।”

“আচ্ছা করো।”

________

প্রিয়া নিজের রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার এখনও মনে হচ্ছে সে ঘুম থেকে উঠেনি। কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। নিজেকে সামলাতে ফোনটা হাতে নিলো। ফোনের লক খুলে নেট অন করতেই ফোন কেঁপে উঠলো। নিশি, মিম, অর্ষাদের থেকে এতো এতো কল আর ওদের সাতজনের গ্রুপে এতো এতো মেসেজ দেখে প্রিয়া ভড়কে গেলো। প্রিয়া ফোনকে একটু সময় দিয়ে সবার আগে গ্রুপে ঢুকলো। তারপর সেন্টি ইমোজি সেন্ড করলো। প্রিয়া মেসেজ করতেই ওরা জিজ্ঞেস করা শুরু করলো, জিজুর ছবি দে? বিয়ে কি হয়ে গেছে? তোর ছবি দে? কেমন দেখতে জিজু? নাম কী জিজুর? আরও অনেক কিছু। প্রিয়া বিনিময়ে একটা উলটো সেন্টি ইমোজি দিয়ে বলে,

“তোরা তাকে চিনিস ও দেখেছিসও!”

অর্ষা ও সাদ একসাথে মেসেজ করে,
“আমরা চিনি? কে সে?”

“আর কে! তোদের শ্রদ্ধেয় জারিফ স্যার!”

মেসেজ সেনড হওয়া এক মিনিট হয়ে গেলো কিন্তু কোনো রিপ্লাই এলো না। তৎক্ষণাৎ মেসেজের উপর হাহা রিয়াক্ট পরতে শুরু করলো। ওরা সবাই এরপর রিপ্লাইতে মজা নিচ্ছে। প্রিয়া ওদের আবার বলে,

“অ্যাই অ্যাম সিরিয়াস। ফান করছি না। জারিফ স্যার ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড। তোরা তো হাসছিস আর তাকে বরের জায়গায় দেখে আমার যেনো ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা লেগেছিল। কিন্তু সে নির্বিকার। তার মানে সে জানতো!”

নিশি বলে,
“স্যার তাহলে সেদিন জেনে শুনেই তোকে পড়া ধরেছে। স্যার জেনেও চুপ ছিল।”

অর্ষা ফান করে বলে,
“স্যার কি তবে আমার মতো তোর উপর ক্রাশ খেয়ে বসলো! একেবারে বউ করে তুলল!”

সবাই অনেক হাসি-ঠাট্টা করলেও আয়ান একদম চুপচাপ সব মেসেজ সিন করছিল। সে প্রিয়াকে হারিয়ে ফেলেছে। প্রিয়া এখন অন্যের বউ! কথাটা ভাবতেই হৃদয়ে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। নেট অফ করে অফলাইন হয়ে গেলো। অন্ধকার রুমে খোলা জানালা দিয়ে পূর্ণ চাঁদ দেখছে। জোৎসনার আলোতে মোহনীয় চারিপাশ। আজ প্রেয়সী অন্যকারও লিখিত প্রিয়তমা। প্রকৃতির অন্তরিক্ষে পূর্ণ চাঁদ হলেও আয়ানের মনের আকাশে ঘোর অমাবস্যা।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here