হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৭,১৮

0
456

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৭,১৮
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
এদিকে জারিফ প্রিয়ার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করে যাচ্ছে। অপেক্ষার প্রহর যত দীর্ঘ হচ্ছে ততো অস্থীরতা বাড়ছে। একবার ভাবলো ফোন করবে আবার ভাবে পরে করবে। দ্বিধার মধ্যেই জারিফ প্রায় বাড়ির কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করে দেখল এখনও ফিরতি মেসেজ আসেনি। জারিফ কপালে হাত ঘষে এবার। তারপর ফোন অফ করে চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।

প্রিয়া বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরেছে। ফোন আর দেখা হলো না। প্রিয়ার ঘুম ভাঙে এশার আজানের সময় তাও দরজায় করাঘাতে। দরজা যেনো ভেঙে যাবে! এমন ভাবে ডাকছে। প্রিয়া টলতে টলতে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুললে প্রিয়ম ওকে ধ*মকে বলে,

“তোর ফোন কই? সারাদিন কী করিস? যে একটা মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারিস না!”

প্রিয়া ঘুম ঘুম চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। প্রিয়ম রুমো ঢুকে প্রিয়ার ফোনটা চার্জ থেকে খুলে প্রিয়াকে দিলো লক খুলে দিতে। প্রিয়ার মা*থায় কিছুই ঢুকছে না। সে লক খুলে দিলে প্রিয়ম ছোঁ মে*রে হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয় তারপর চেক করে দেখে কল ও মেসেজ নোটিফিকেশন প্রিয়া অফ করে রেখেছে। প্রিয়ম প্রিয়ার দিকে চোখ গরম করে তাকালে প্রিয়া ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়ম এবার জারিফের মেসেজটা বের করে বলে,

“তখন তোর ফোন কই ছিল? আর নোটিফিকেশন অফ করে রাখছিস কেন?”

প্রিয়া ভালো করে দেখে চোখ মুখ খিঁচে নেয় তারপর বলে,
“সরি ভাইয়া। আমাকে তো সচরাচর কেউ ফোন করেনা ওই সময় তাই আমি প্রায়ই এমন অফ করে রাখি।”

প্রিয়ম ঝা*রি দিয়ে বলে,
“তখন ছিল না কিন্তু এখন তো আছে। এখনি জারিফকে ফোন করে কথা বলবি। তোর মতো মা*থামোটাকে বিয়ে করে আমার বন্ধুর জীবনটা খড়খড়ে পাতার মতো হয়ে যাবে!”

প্রিয়ম প্রিয়ার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। প্রিয়া ঠোঁট উলটে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়ার মনে মনে ব*কা খাওয়ার জন্য রাগ হচ্ছে। একটা মেসেজের রিপ্লাই করেনি বলে ভাইকে বলতে হলো লোকটার! কী আজব! তাও যদি কল দিতো তো বুঝা যেতো। আজকালকার মেসেঞ্জার, হোয়াটসএপের যুগে কে সিমকার্ডে মেসেজ দেয়! সিমকার্ডে তো সিম কম্পানি মেসেজ দেয়। সারাদিন কতো কেয়ার করে সিম কম্পানি! সেখানে এই লোকটাকে কেনো মেসেজ দিতে হবে? প্রিয়া মন খারাপ করে নিজে নিজে বলে,

“ধ্যাত ভাল্লাগে না। এখন আবার ফোন দিতে হবে।”

_________

অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যালকনিতে বসে জারিফ কফি খাচ্ছে আর ভাবছে, প্রিয়মকে বলা ঠিক হলো কীনা? বলতে তো চায়নি কিন্তু প্রিয়ম যেভাবে পিঞ্চ করছিল!

ফ্লাশব্যাক,
জারিফ সন্ধ্যার পর সবসময়ের মতো ফোন স্ক্রল করার সময় প্রিয়মের সাথে কথা হচ্ছিল তখন প্রিয়ম জানতে চায়,

“কীরে? প্রিয়ার সাথে কথা হয়েছে আজকে?”

“নোপ! ক্লাস ছিল না ওদের সাথে আর…”

প্রিয়ম জারিফকে আবার প্রশ্ন করে,

“আর কী?”

জারিফ বলে,
“ভার্সিটিতে দেখলাম না। মনে হয় ক্লাসে যায়নি।”

প্রিয়ম অবাক হয়ে যায় তারপর লিখে,
“কী বলিস! গিয়েছে তো।”

“দেখলাম না। ওর বন্ধুদের দেখলাম কিন্তু প্রিয়া ছিল না। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে টেক্সট করলাম কিন্তু নো রিপ্লাই।”

প্রিয়ম অবিশ্বাসের সাথে লিখে,
“কী বলিস! প্রিয়া তো ভার্সিটিতে ওর ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথেই চি*পকে থাকে। আর ফোন তো ওর সবসময়ের সঙ্গী! ওয়েট কর। বাসায় গিয়ে দেখি।”

জারিফ লিখে,
“বাদ দে। লাগবে না। বিজি হয়তো। তোর কী খবর বল? বিয়ে করছিস কবে?”

“ইশার বাবা-মা চান ইশার অনার্স শেষ হলে বিয়ে দিবেন। তাই দেরি আছে।”

ওদের কথাবার্তা আরও দীর্ঘায়িত হয়। তারপর প্রিয়ম বাসায় গিয়ে প্রিয়াকে ধরে।

ফ্লাশব্যাক এন্ড—-

জারিফের ভাবনার মাঝে ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে প্রিয়ার নাম্বার দেখে আলতো হাসে। তারপর রিসিভ করলে অপরপাশ থেকে কোনো শব্দ আসেনা দেখে জারিফ আবারও নিরবে হাসে। নিজেই সালাম দেয়,

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো প্রিয়া?”

প্রিয়ার হৃৎপিন্ডের গতি যেনো আরও বেড়ে গেলো। স্ট্রোক, অ্যাটাক হয় কিনা সেই ভয়ে প্রিয়া বুকে হাত দিয়ে রেখেছে। একটু আগের রাগ যেনো নিমিষেই হাওয়া! জারিফ এবারও কোনো জবাব না পেয়ে বলে,

“বিজি? প্রিয়ম কি তোমাকে কিছু বলেছে?”

প্রিয়া একটু দম নিয়ে ঢোক গিলে বলে,

“আসলে বিকেলে বাসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম আর সহসা কেউ ওই সময় কল করেনা। কল করলেও বাসায় এসে কল লিস্টে এক নজর বুলানো হয় কিন্তু মেসেজ লিস্টে সিম কম্পানির রাজত্ব! ওটা চেক করাই হয়না। তাছাড়া মাথাব্যথাতে বাসায় এসেই ফোন চার্জে দিয়ে ঘুম দিয়েছিলাম। এই মাত্র ভাইয়ার ডাকে উঠলাম। সরি আপনার মেসেজ দেখিনি।”

জারিফ বলে,
“ডোন্ট বি সরি। তুমি রেস্ট করো। মাথাব্যথা কমেছে? মেডিসিন নিয়েছ?”

“হ্যাঁ। মেডিসিন নিয়েই ঘুম দিয়েছিলাম। এখন পেইন নেই।”

জারিফ স্বস্থি পায়। তারপর বলে,
“প্রিয়মকে বলতে চাইনি কিন্তু সে কথা বলেই এভাবে যে শেয়ার করে ফেলি। বেস্টফ্রেন্ড সে আমার। ব*কেছে সে?”

প্রিয়া মুখ ভাড় করে দুঃখি কন্ঠে বলে,

“হু। ভাইয়া আমাকে ব*কে গেলো। আমার ফোনের নোটিফিকেশন কেনো অফ ছিল তা নিয়ে।”

“এই প্রিয়মটাও না। যাকগে বাদ দেও। কাল ক্লাসের পড়া ভালো করে কভার করে আসবে। ডিনার করে কিছুক্ষণ পর একটু চা-কফি খেয়ে পড়তে বসো। ডিনারের অন্তত পঁচিশ-ত্রিশ মিনিট পরে চা-কফি খেয়ো।”

প্রিয়া পড়ার কথা শুনে বিতৃষ্ণায় মুখ কুঁচকে ফেলে। সারাদিন পড়েছে। এখন আর ভালো লাগছে না। তাও জারিফকে হ্যাঁ বলে। জারিফ প্রিয়াকে বায় বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখে দেওয়ার পর প্রিয়া আগে রান্নাঘরে গিয়ে কড়া লিকারের চা বানায়। তাতে লেবু-চিনি দিয়ে চা নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসে। রাতের খাবার সে আরও ঘণ্টাখানেক পরে খাবে।

_________

হোটেলের গার্ডেনে আয়ান গিটার হাতে বসে আছে। গিটারে সে টুকটাক সুর তুলতে পারে এই আরকি। সেই মোতাবেক টুংটাং করছিল। হঠাৎ গার্ডেনের সোডিয়াম বাতির আলোয় একটা ছায়ামানবি দেখে। মানবি কারণ তার গায়ে ফ্রক জড়ানো সেটা ছায়াতে বুঝা যাচ্ছে। আয়ান গিটার বাজানো থামিয়ে তৎক্ষণাৎ পেছোনে ঘুরলে ছায়ামানবিটি ভড়কে যায়। আয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে,

“কে আপনি? লাইটের সামনে আসেন।”

মেয়েটি পিছিয়ে যাওয়া ধরলে আয়ান বলে উঠে,
“ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমি তো আপনাকে মা*রবো না। সামনে আসেন।”

মেয়েটি এবার ভীরু পায়ে সামনে এগোয়। আয়ান এবার লাইটের আলোয় মেয়েটির চেহারা দেখে বলে,

“ওহ তুমি! এই হোটেলেই উঠেছ?”

মেয়েটি সকালের ঘটনার জন্য আয়ানের উপর বিরক্ত হলেও আয়ান যে ওকে টেনে তুলেছে তাই এখন রাগ দেখালো না। পিহু বলে,

“হ্যাঁ। আমার গিটার অনেক ভালো লাগে কিন্তু বাজাতে পারিনা। আপনার বাজানোটা শুনে চলে আসলাম।”

“ওহ!”

আয়ানের স্বল্প জবাবে পিহু একটু দমে যায়। পিহু বলে,

“আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি কম কথা বলেন। আসলেই কি তাই?

আয়ান নিরব হাসলো তারপর উদাস কন্ঠে বলল,

“নিরবতার জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি তাই এই নিরবতাকেই দায়িত্ব দিলাম সে আমার জীবনটা গুঁছিয়ে দিক।”

পিহু অবাক হলো। কিছু ভেবে রম্যস্বরে বলল,
“ছ্যাঁকা খেয়েছেন বস? কেমন ভগ্ন হৃদয়ের গন্ধ আসছে!”

আয়ান তাচ্ছিল্য হাসলো অতঃপর বলল,
“ভগ্ন হৃদয় তাই ভগ্ন হৃদয়ের গন্ধ পাচ্ছো। বাই দা ওয়ে! হৃদয়ের গন্ধ আসে? তাও ভাঙা হৃদয়ের?”

পিহু চমৎকার হেসে বলে,
“মন পো*ড়ার গন্ধ আসলে ভগ্ন হৃদয় বেচারা কি অন্যায় করলো শুনি! সবই আসে।”

আয়ান হেসে ফেলে বলে,
“তুমি আসলেই বাচ্চা। তো বাচ্চা মেয়ে! তোমার বাবা-মা তোমাকে এতোদূরে বন্ধুদের সাথে ছাড়লো?”

“ছাড়বে না কেনো? আমার বাড়ি তো খাগড়াছড়িতে। আমার উড়নচণ্ডী মনের জন্য তারা ভয় পায় কিন্তু আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।”

আয়ান পিহুর সাথে কথা বলে মজা পাচ্ছে। মেয়েটা ফানি অনেক। বাচ্চাসুলভ ব্যাবহার। আয়ান তারপর বলে,

“তোমার এই স্বভাবের জন্য আজ ম*র*তে ম*র*তে বেঁচেছো।”

পিহু হুট করে বলে বসলো,….

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
“আপনি ছিলেন তো বাঁচানোর জন্য!”

আয়ান খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো তারপর পিহুর বাচ্চা স্বভাবের কথা ভেবে বলল,

“এমন ভাবে বলছ যেনো তুমি স্লিপ করেছই যাতে আমি তোমাকে উঠাই!”

কথাটা বলেই আয়ান হেসে ফেলে। পিহু এই আলো আঁধারিতে হাস্যজ্বল পুরুষটিকে মুগ্ধতার নজরে দেখছে। সকালে যখন হেলিপ্যাডের জন্য রওনা করেছিল তখনই আয়ানের উদাস দৃষ্টি পিহুর নজর কেড়েছিল। এরপর তো কতোকিছু হয়ে গেলো। ষোল বছরের জীবনে সে অনেক ক্রাশ খেয়েছে তবে সবগুলোই সেলিব্রেটি। এই প্রথম কারও উদাস দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়েছে পিহু।
পিহুকে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হলো আয়ান। হালকা কেশে নিয়ে বলে,

“আমোদপ্রিয় জীবনে সবকিছুতে আকর্ষণ কাজ করে। তাই নয় কি?”

পিহু হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“দুঃখকে পাত্তা না দিলে আপনিও আমার মতো আমোদপ্রিয় হতে পারবেন।”

“বাচ্চাদের মুখেও গম্ভীর্যতা পূর্ণ কথা। ইমপ্রেসিভ। বাই দা ওয়ে আমি আয়ান মাহমুদ। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সটির বায়োকেমিস্ট্রির ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ি।”

পিহু মুচকি হেসে বলে,
“আমি পিহু সরকার। ইন্টার প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান শাখাতে পড়ি। আমি আপনার দুই ক্লাসের ছোটো।”

আয়ান নাকচ সুরে বলে,
“উহু। তিন ক্লাস। আমি এক বছর পর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।”

“ওহ। তা ভার্সিটির নাম কী?”

আয়ান ভার্সিটির নাম বলে তারপর পিহু বলে,
“আপনি গিটার বাজাতে পারেন তো গান গাইতে পারেন না?”

আয়ান গিটারের তারে টুংটাং করে বলে,
“কিছুটা। তবে সুর হয় না। গান শুনতে পছন্দ করি।”

পিহু একটু উৎসুক হয়ে বলে,
“আপনি গিটার বাজান। আমি একটা গান ধরি। অতোটাও ভালো গাই না কিন্তু আপনার কানের পোঁকা ম*র*বে না তা সম্পর্কে গ্যারান্টি দিতে পারি।”

আয়ান আবারও হেসে ফেলল সাথে পিহুও। তারপর আয়ান গিটার বাজায় আর পিহু গান গায়।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো

“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পারো।
আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা তোমায় দেবো আরো (2)
তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো (2)
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়সড়!”

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।)

গানটা শেষ হলে আয়ান পিহুকে বলে,
“তুমি দারুন গান গাও। অনেক রাত হলো। অ্যাই থিংক ইউ শুড গো।”

পিহু খানিকটা মন খারাপ করলো কিন্তু হয়তো আয়ান একটু একা থাকতে চাইছে তাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আয়ান পিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,

“একদিনের পরিচয় মাত্র। আগামীকালই তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়। এতোটা এডিক্ট হবে না। সময়ের নিয়মে তোমার বাচ্চামন ঠিক কন্ট্রোল হয়ে যাবে।”

আয়ানও নিজের রুমে চলে যায়। কাল সকাল ছয়টার গাড়ি ঠিক করিয়েছে হোটেল ম্যানেজারকে দিয়ে। তারপর চট্টগ্রাম থেকে প্লেনে করে ঢাকা যাবে।

__________

প্রিয়া রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়লো। আগামী সপ্তাহে মিড১ পরীক্ষা শুরু। এগারোটার পর ফোন হাতে নেয়। তারপর একটু ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ঢুকে। জারিফের আইডি সার্চ করে। আইডি লক করা না। তারপর ফটো অপশনে গিয়ে ছবি দেখতে থাকে। তবে ছবি খুব কম। পোস্টও কম। প্রিয়া নিজে নিজেই বলে,

“লোকটা মনে হয় পাবলিক করে পোস্ট কম দেয়। তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলে কি কিছু মনে করবে?”

নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে রিকুয়েস্ট দিয়ে ফেলল অতঃপর স্বগোতক্তি করে বলে,

“আমার বিয়ে করা বর! আমি তার ফ্রেন্ড লিস্টে কেনো থাকব না! হুহ!”

তারপর আবার ফেসবুক স্ক্রোল করতে শুরু করে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট পার হয় আর প্রিয়ার মনে অস্থীরতা বেড়েই চলেছে। জারিফ এখনও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছে না। ফোনটা বিছানায় রেখে রুম জুড়ে পায়চারি করে এসে আবার ফোনটা হাতে নেয়। নাহ্! এখনও করছে না। আবার পায়চারি করে এসে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা নিয়েই প্রিয়মের রুমের দিকে ছুটে। প্রিয়মের দরজায় নক করলে প্রিয়ম দরজা খুলে দেখে প্রিয়া। প্রিয়মকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়া অভিযোগের কন্ঠে বলে উঠে,

“আমাকে যে তখন ব*কে গেলি! যা এখন নিজের বন্ধুকে ব*ক! আমি নাহয় ফোনের দিকে নজর দেইনি। সে কী করে? খা*রু*স কাহিকা!”

প্রিয়ম অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকায়। প্রিয়া গটগট করে চলে যায়। প্রিয়ম মাথা চুলকে দরজা লাগিয়ে জারিফকে ফোন করে। তিন বার রিং হওয়ার পর জারিফ রিসিভ করে। প্রিয়ম বলে,

“এই তোর বউ রেগে আছে কেন?”

জারিফ ব্যাপারটা না বুঝে বলে,
“মানে? আমি কীভাবে বলব? তোর বোন কেনো রেগে আছে সেটা তুই জানবি।”

“সে তো তোর উপর রেগে আছে। তুই জানবি। বিয়ের সপ্তাহ না পেরোতেই বউকে রাগিয়ে দিছো বন্ধু! কপাল খারাপ তোমার।”

জারিফ অবাক হয়ে বলে,
“আমি আবার কী করলাম! আমি তো কাজ করছিলাম।”

প্রিয়ম সন্দিহান হয়ে বলে,
“তাহলে এই পা*গলী রেগে গেলো কেনো? একটু ফোন চেক কর তো। ফোন বিষয়ে বলেছিল।”

জারিফ চেক করে প্রথমে কল লিস্ট। তার মনে পরে, সে তো রিংটোন অফ করে রাখেনি। তারপর মেসেজ লিস্ট চেক করে তারপর হোয়াটসএপে। শেষে গিয়ে ফেসবুক চেক করে দেখে প্রিয়ার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পঁচিশ মিনিট আগে। জারিফ হেসে দেয়। প্রিয়মকে বলে,

“তোর বোন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে তাই মনে হয়।”

প্রিয়ম মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“এজন্য এমন করতে হয়! যা একসেপ্ট কর।”

“তুই ওকে বকেছিস কেনো? সে সিক ছিল বলেই চেক করেনি।”

প্রিয়ম ভাব নিয়ে বলে,
“আমার বোন আমি বকেছি। সো আমাকে তুই কিছু বলতে পারবি না।”

দুই বন্ধু হাসি-ঠাট্টাতে ফোনালাপ শেষ করে। জারিফ এবার নিজেই প্রিয়াকে মেসেজ করে বলে,

“সরি অ্যাই ওয়াজ বিজি। এনিথিং সিরিয়াস?”

প্রিয়া জারিফের মেসেজ দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলে। জারিফ এমন মেসেজ করেছে মানে নিশ্চয়ই তার ভাই জারিফকে কিছু বলেছে। প্রিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। কি রিপ্লাই দিবে ভেবে ভেবে শেষে লিখল,

“নাথিং স্যার।”

মেসেজ সেন্ড হতে দেরি কিন্তু প্রিয়ার নেট অফ করতে দেরি নাই। জারিফ প্রিয়ার রিপ্লাই দেখে আনমনে হাসলো তারপর লিখল,

“কাল সকাল সাড়ে আটটায় তোমার ক্লাস? বাস স্ট্যান্ড থেকে একসাথে যাবো। সাড়ে সাতটায় সেখানে থাকবে।”

প্রিয়া ইতোমধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে দিয়েছে। তার ভাইটা যে দুই কূলেই ভীরে সেটা প্রিয়া ভুলেই গিয়েছিল। একদিকে বোন আরেকদিকে বেস্টফ্রেন্ড। ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু মনে অস্থীরতা থাকলে কী আর ঘুম আসে! হাসফাস করে উঠে বসল কিছুক্ষণের মধ্যে তারপর নেট অন করে জারিফের মেসেজ দেখে খানিক লজ্জা পেলো। ফিরতি আর কোনো মেসেজ না করে বান্ধুবীদের সাথে কথা বলায় লেগে পরলো।

________

সকালবেলা প্রিয়া একটা সাদা জর্জেটের থ্রিপিস পরে অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি পরিপাটি হলো। আজ তার ঘুমও অনেক জলদি ভেঙেছে। ফজরের আজানের আগেই ঘুম ভেঙেছে। শীতকালে তো আর শাল ছাড়া বেরোনো যাবে না। সে এখন নিজের হালকা গোলাপি শালটা খুঁজছে। সেটা গায়ে জড়িয়ে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে রিকশা দিয়ে গিয়ে দেখে জারিফ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। প্রিয়া জারিফের সামনে গিয়ে সালাম দেয়। জারিফও সালামের জবাব দেয়। প্রিয়া জিজ্ঞেস করে,

“জায়ান ভাইয়া গাড়ি দিয়ে যায় না?”

“ভাইয়াকে অফিস থেকে রাইড দিয়েছে। আগেও দিয়েছিল। ভাইয়া সবসময় ইউজ করতো না। এখন করে।”

প্রিয়া হালকা হাসে তারপর ব্যাক সিটে জারিফের সাথে বসে। আধঘণ্টা পর প্রিয়াকে আগে এক জায়গায় নামিয়ে দিতে বলে প্রিয়া। জারিফ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে কারণ বুঝতে চাইলে প্রিয়া বলে,

“ভার্সিটির কেউ দেখলে এটার অন্য মানে বের করবে। দ্যাটস হোয়াই।”

জারিফ আর আপত্তি করে না। প্রিয়া নিরাপদ দূরত্বে নেমে যায় আর জারিফ চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here