হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৯,২০

0
421

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,১৯,২০
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
প্রথম ক্লাসটা করে প্রিয়ারা ক্যাম্পাসে বসলো হাতে লেমোনেট নিয়ে। তখন এক সিনিয়র এসে দাঁড়ায় ওদের কাছে। ওরা ছয়জন তাকে সালাম দিলে তিনিও সালাম নেন তারপর তিনি বলেন,

“কেমন আছিস তোরা? আর নিশি, মিম, অর্ষা, প্রিয়া তোমরা কেমন আছো?”

মিম জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাইয়া আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

“আমিও ভালো আছি। আজকাল কী দিনেও তারা দেখা যাচ্ছে নাকি?”

সিনিয়র ভাই শাফিনের হেয়ালিপূর্ণ কথায় ওরা ছয়জনেই কনফিউজড হয়ে তাকায়। সাদ বলে,

“ভাই, তারা তো রাতে দেখা যায়।”

শাফিন সাদের পিঠ চাঁ*পড়ে বলে,
“আরে পা*গলা! তারা বলতে কি আকাশের তারা বুঝিয়েছি নাকি! প্রিয়াকে আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশি সুন্দর লাগছে। তারকারাজির ঝলমলে তারা।”

প্রিয়ারা অবিশ্বাসের নজরে তাকায় শাফিনের দিকে। শাফিন তা দেখে বলে,

“সুন্দরকে সুন্দর বলা উচিত। এতে দোষের কিছু নেই। তারাদের রাণীর মতো লাগছে তোমাকে প্রিয়া।”

প্রিয়ার মাথা ঘুরছে। মিম বিড়বিড় করে বলে,
“অন্যের বউকে এতো রসিয়ে রসিয়ে সুন্দর বলিস! লজ্জা করে না তোর!”

নিশি মিমকে ঠেলে বলে,
“চুপ কর। সে একটু ফ্লার্টিং করছে করতে দে। একটু ডান সাইডের উপরে তাকা।”

মিম নিশির কথা মতো উপরে তাকিয়ে দেখে চারতলায় জারিফের অফিস রুমের জানালার কাছে জারিফ দাঁড়িয়ে আছে। শাফিন যে প্রিয়াকে নিয়ে কথা বলছে তা সে শুনতে না পেলেও বুঝতে পারছে। কেমন গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিম নিশির দিকে তাকিয়ে কনফিউজড হয়ে বলে,

“স্যার কি সব শুনছে? মনে তো হচ্ছে শুনছে না। সে গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? আর দৃষ্টি যেনো প্রিয়া আর শাফিন ভাইয়ার দিকেই স্থীর!”

নিশি বাঁকা হেসে বলে,
“না শুনলেও শাফিন ভাই যেমন অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলছে তা দেখে স্যার ঠিকই বুঝতে পারছে। স্যার জেলাস হচ্ছে রে!”

মিম আর নিশি দুজনেই মিটমিট করে হাসতে থাকে। ওদের হাসতে দেখে অর্ষা ইশারায় জিজ্ঞেস করলে ওরা জারিফ স্যারের দিকে ইশারা করে তারপর অর্ষারও হাসি পেয়ে যায়। শাফিন আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। শাফিন গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অর্ষা বলে,

“বান্ধুবী! উপরে তো দেখো।”

“কী?”

“চারতলায় তো দেখো।”

প্রিয়া চারতলায় তাকালে দেখে জারিফ দাঁড়ানো। প্রিয়াকে তাকাতে দেখে জারিফ পর্দা টেনে দেয়। প্রিয়া বোকার মতো নিশিদের দিকে তাকালে নিশি বলে,

“স্যার মেবি জেলাস। দশটা না পাঁচটা না তার একটা মাত্র সুন্দরী বউ বলে কথা! সেটাকেও এখন মানুষের নজর লেগে যাচ্ছে।”

ওরা পাঁচজন হেসে উঠে। প্রিয়া ঠোঁট উলটিয়ে বসে রয়।
__________

জারিফের ক্লাসে জারিফ সবার আগে প্রিয়াকেই পড়া ধরে। প্রিয়া জবাব দিতে গিয়ে একটু আধটু আটকে গেছে। জারিফ বলে,

“ইজি পড়া ছিল এটা। এটা বলতেও এভাবে আটকানো লাগে! মনোযোগ নেই পড়াতে একদম। আরও পড়তে হবে।”

প্রিয়া মন খারাপ করে বসে পরে। একটু ঠেকে গেছে বলে এভাবে বলবে! প্রিয়া মনে মনে বলে,

“কই? ওই সাহারাকেও পড়া ধরতেছে। সাহারা তো আমার থেকেও বেশি আটকেছে। সাহারাকে তো এমন করে বলল না! খ*বি*স কাহিকা। সব ব*কা-ঝকা আমার জন্য! হুহ্!”

প্রিয়া রাগ করে জারিফের দিকে আর একটাবারের জন্যও তাকায়নি। জরিফ এক দুইবার তাকিয়েছিল কিন্তু কিছু বলেনি। এটুকু বুঝেছে তার বউয়ের রাগ হয়েছে।

__________

আজকের মতো প্রিয়া ও জারিফের ক্লাস শেষ। জারিফ প্রিয়াকে মেসেজ করে যেনো কিছুটা সামনে এগিয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়া মেসেজ দেখে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। লোকটা কেমন যেনো! একবার ভাবে, দাঁড়াবে না। চলে যাবে। আবার ভাবে, এখন চলে গেলে সে জারিফকে বুঝাবে কী করে যে সে রাগ করেছে? তাই সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাঁচ মিনিট দাঁড়ানোর পর মেসেজ আসে,

“রাস্তার অপজিট পাশে আসো।”

প্রিয়া রাস্তার ওইপাশে কেনো যাবে তাই বুঝলো না। বাড়িতে যেতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়! প্রিয়া লিখল,

“কেনো? কোথায় যাবেন? বাড়িতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়।”

জারিফ লিখল,
“জানি আমি। রাস্তার অপজিট পাশে আসতে বলেছি নিশ্চয়ই কারণ আছে। জলদি দেখে শুনে আসো।”

বাধ্য হয়ে প্রিয়া রাস্তার অপরপাশে গেলো। সেখানে জারিফের গাড়ি একটু সাইড করে রাখা। প্রিয়া গাড়ির কাছে গেলে ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দেয় জারিফ। ড্রাইভিং সিটে জারিফ বসা। প্রিয়া অবাক হয়ে বলে,

“ড্রাইভার আঙ্কেল কই?”

জারিফের ভাবলেশহীন গম্ভীর জবাব,
“তাকে যেতে বলে দিয়েছি। উঠো।”

প্রিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে উঠে বসলো। প্রিয়া উঠে বসার পর জারিফ দেখলো প্রিয়ার মাঝে সিটবেল্ট বাঁধার তাগদা নেই তাই নিজেই বেঁধে দিলো। প্রিয়া জারিফের হুট করে কাছে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সিটবেল্ট বেঁধে জারিফ সরে যায় তারপর গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়ি মোড় ঘুরে এসে বাড়ির পথ ধরে। প্রিয়া এবার বুঝলো ওইপাশে যাওয়ার কারণ কী ছিল। এইপাশে তো ভার্সিটির কয়েকজন দাঁড়ানো তাই অপরপাশে যাওয়া।

কিছুটা পথ যাওয়ার পর জারিফ বলে,
“তোমার সামনের কেবিনেটটা (গাড়ির ফ্রন্টে কিছু রাখার মতো জায়গা) খুলো।”

প্রিয়া জারিফের দিকে তাকিয়ে কেবিনেটটা খুলতে অগ্রসর হলো। কেবিনেটটা খোলার পর যে এতোটা অবাক হবে তার ধারণাও ছিল না। কেবিনেটের ভিতর একটা বক্সে কতোগুলো চকলেট রাখা। প্রিয়াতো খুশিতে আটখানা অবস্থা। চকলেট বক্সটা নিয়ে জারিফকে খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে,

“এটা আমার?”

“কেনো? তোমার নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না? না ইচ্ছে হলে রেখে দেও।”

নিমিষেই প্রিয়ার মনঃক্ষুণ্ণ হলো। এমন ত্যাড়া কথা বলছে কেনো লোকটা? প্রিয়ার অভিমান হলো। বক্সটা যথাস্থানে রেখে দিলো তারপর বুকে হাত গুঁজে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। জারিফ এক পলক অভিমানীনির অভিমান দেখে নিঃশব্দে হাসলো অতঃপর নিজেই এক হাতে স্টেয়ারিং ধরে বক্সটা বের করে প্রিয়ার কোলের উপর রেখে বলল,

“তুতুলেরটা ব্যাক সিটে রাখা আছে। আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না। এই চকলেটগুলো তোমার জন্যই।”

প্রিয়ার মনে খুশিরা ডানা মেলেছে। জানালার দিকে তাকিয়েই মুখ টিপে হাসলো। সে চাইছে না জারিফ এই হাসিটা দেখুক। জারিফ বুঝোক, তার অভিমান এখনও পানি হয়নি। জারিফ বলল,

“গাল ফুলালে তোমার গালগুলো রেড চেরির মতো লাগে।”

প্রিয়া দ্রুত জারিফের দিকে ফিরলো। নয়নযুগল গোল গোল করে জারিফের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখেছে। জারিফ আনমনে হাসলো অতঃপর বলল,

“চেরি ফলটা আমি খেতে অতোটা লাইক করতাম না কিন্ত দেখতে দারুন লাগে। এটা পাঁকার পর যখন সাওয়ারনেসটা কমে তখন ভালো লাগতো।”

প্রিয়া কিছু বলল না। বক্স খুলে চকলেট খেতে শুরু করেছে। প্রিয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে জারিফ চলে যেতে উদ্যত হলে প্রিয়া বলে,

“বাসায় আসেন।”

“আজকে না। অন্য কোনোদিন।”

“আম্মু জানলে কস্ট পাবে। আপনি বাসার বাহির পর্যন্ত এসে ভিতরে আসলেন না।”

জারিফ হাসলো তারপর বলল,
“বলবে কাজ পরে গিয়েছিল। আমাকে এখন ব্যাংকে যেতে হবে। আর্জেন্ট।”

প্রিয়া আর কিছু বলল না। জড়তা কাজ করছে তার। জারিফ গাড়ি নিয়ে চলে গেলে প্রিয়াও বাসায় ঢুকে।

_________

সন্ধ্যার একটু আগেই আয়ান বাড়িতে এসে পৌঁছেই ঘুম দিয়েছে। এদিকে পিহু সকাল থেকে পুরো রিসোর্টে আয়ানকে খুঁজে না পেয়ে ম্যানেজারের থেকে জানতে পারে আয়ান ঢাকা ফিরে গেছে। তখন থেকে পিহুর মন খারাপ। বন্ধুদের সাথে থেকেও তার মন হারানো। আর কোনোদিন আয়ানের দেখা পাবে কীনা সে জানে না। কোনো কন্টাক্ট নাম্বারও দিয়ে যায়নি। শুধু আয়ানের নাম ও ভার্সিটির নামটা জানে। আজকে পিহুরাও ফিরে যাবে। পিহুর মন খারাপ বিষয়টা লক্ষ্য করে তনিমা জিজ্ঞেস করে,

” কী হয়েছে তোর? এতো মুডঅফ কেন?”

পিহু জবাব দেয় না। তনিমা রাখি ও নাইমার দিকে তাকালে ওরাও ইশারায় জানায় ওরা জানে না। পিহু যেহেতু চুপ করে আছে তার মানে পিহু কথা বলতে ইচ্ছুক না তাই ওকে যা জিজ্ঞেস করবে সব বৃথা। তাই ওরা আর কিছু বলে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
দেখতে দেখতে প্রিয়াদের মিড১ পরীক্ষা এসে পরেছে। সপ্তাহ খানেক চলবে পরীক্ষা। সপ্তাহ জুরে জারিফের সাবজেক্টের পরীক্ষা ছাড়া প্রিয়া আর জারিফের ভার্সিটিতে দেখাই হবে না। পরীক্ষা শেষ হলে সরাসরি বাড়ি ফিরবে কারণ টানা চারদিন পরীক্ষা। আগামীকাল পরীক্ষা আর প্রিয়া ফোন অফ করে পড়ছে। গত সেমিস্টারে সে মিড পরীক্ষাগুলোতে এতো পড়েনি কিন্তু এবার পড়ছে। বেচারির নাজেহাল অবস্থা। হঠাৎ দরজায় খটখট শব্দ হলে প্রিয়া চি*ল্লিয়ে বলে,

“ডোন্ট ডিস্টার্ব। আমি পড়ছি।”

কিন্তু অপরপাশের ব্যাক্তিটি মনে হয় কথাটা আমলেই নিলো না! আবারও পালাক্রমে করাঘাত করেই যাচ্ছে। প্রিয়া বুঝে গেছে এটা তার গুনধর ভাইয়ের কাজ। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে প্রিয়া। প্রিয়াকে দরজা খুলতে দেখা মাত্রই প্রিয়ম দাঁত কে*লিয়ে নিজের ফোনটা প্রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়া চোখ বাঁকিয়ে তাকায়। প্রিয়ম গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,

“এই রাত বারোটায় তোর বরের তোর কথা বারবার মনে পরছে। নে কথা বল।”

প্রিয়া অবাক হয়। এতো রাতে জারিফ ফোনই বা করলো কেনো? প্রিয়ম আবারও বলে,

“পরীক্ষার আগেরদিন যতো পড়া তোর! ফোন-টোন অফ করে সে পড়ে উলটিয়ে ফেলতেছে। কই একটু ইশার সাথে কথা বলব! কিন্তু না। এখন ছোটোবোন ও বেস্টফ্রেন্ডের প্রেমালাপের বাহক হতে হচ্ছে!”

প্রিয়া প্রিয়মের কথা পাত্তা দিলো না। ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। লম্বাশ্বাস নিয়ে প্রিয়া সালাম দেয়। অপরপাশ থেকে জারিফও সালামের প্রতিউত্তর করে তারপর জারিফ বলে,

“পড়া কতোদূর? সব রিভিশন শেষ?”

নিমিষেই প্রিয়ার মনে অভিমান জমলো। লোকটা ফোন করলে শুধু পড়াশোনা নিয়েই কথা বলে। হোক সে স্যার! সেটা ভার্সিটিতে। কিন্তু ফোনে কথা বলার সময় তো বর হিসেবেই কথা বলবে তাই না? জারিফ প্রিয়ার জবাব না পেয়ে বলল,

“কী হলো?”

প্রিয়া তাগদা দেখে জবাব দিলো,

“না কিছু না। এক দফা রিভিশন শেষ। আরেকদফা শুরু করেছি সেটা শেষ হলেই ঘুমাব। আপনি কী করেন? খেয়েছেন?”

জারিফ হালকা হেসে বলল,
“হ্যাঁ। আমি রাত দশটায় ডিনার করি। বেশি হলে সাড়ে দশটা। তুমি তো খাওনি। পরীক্ষার আগেররাতে কিছুটা খেতে হয়। তুমি তো খাও না। তোমার পছন্দের চকলেট হরলিক্সই নাহয় খেয়ে নেও।”

প্রিয়া আবারও অবাক হলো। লোকটা তবে ওকে খেতে বলা জন্য ফোন করেছে? নিশ্চয়ই এই তথ্য তার ভাই লোকটাকে দিয়েছে। প্রিয়া জারিফকে বুঝ দিতে বলে,

“আচ্ছা খেয়ে নিবো।”

“এটা ভেবো না যে প্রিয়ম আমাকে এখন জানিয়েছে!”

“তো জানলেন কী করে আমি খাইনি?”

জারিফের রহস্যময় কথার পিঠে প্রিয়ার অবাক কন্ঠ শুনে জারিফ হাসলো তারপর বলল,

“যখন কলেজে পড়তাম তখন পরীক্ষার আগ মূহুর্তে প্রিয়ম খাবার জিনিস যা সামনে দেখতো তাই খেতো আর একদিন বলেছিল, ‘আমার বোন পুরোই আমার বিপরীত। সে পরীক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত এতোই টেনশনে থাকে যে তার খাওয়া উঠে যায় আর আমাকে দেখ! এতো খিদে পায় কী বলব!’ এবার বুঝেছো?”

প্রিয়ার ঠোঁটের কোনে অজান্তেই হাসি ফুটলো। সে বলল,
“অতো আগের কথা মনে রেখেছেন? আপনার স্মৃতিশক্তি তো মাশাআল্লাহ্ তুখড়! যাক বাচ্চারা আমার মতো ভোঁতা মস্তিষ্কের না হলেই হয়।”

জারিফ কিছুটা জোরেই হেসে ফেলল। তারপর বলে,
“পরীক্ষার চিন্তায় তোমার চিন্তা-ধারা অনেক ফার্স্ট হয়ে গেছে প্রিয়া। যাও কিছু খেয়ে পড়তে বসো তারপর জলদি ঘুমিয়ে যাও। বারোটার বেশি বাজে।”

জারিফ ফোন কে*টে দেয়। প্রিয়া চাইছিল আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে কিন্তু জারিফের শেষোক্ত কথায় তার মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। প্রিয়মকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে প্রিয়া চকলেট হরলিক্স বানিয়ে পড়তে বসে।

_______

সপ্তাহ জুরে মিড শেষে এবার স্বস্থির নিঃশ্বাস নিলো প্রিয়া, মিমরা। পরীক্ষা শেষের খুশিতে একটু ঘোরাঘুরি করতে ইচ্ছে করছে তাই বন্ধুরা মিলে হাতিরঝিল চলে গেলো বোটে চড়তে। এদিকে জারিফ অনেকক্ষণ যাবত প্রিয়াকে মেসেজ করছে সাথে ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু নট রিচেবল বলছে। জারিফ চেয়েছিল প্রিয়াকে নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে যাবে। গাড়ি নিয়ে অপেক্ষাও করছে। প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে জারিফ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়। এবার আর প্রিয়মকে জানালো না।

বাড়ি ফিরে মুন্নিকে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে আসে জারিফের। মুন্নি রীতিমত হিঁচকি তুলে কাঁদছে। জারিফের ভাবী তামান্না জারিফকে ধীর কন্ঠে বলে,

“ভাই, এই মেয়ে আসছে পর থেকে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদেই চলেছে। তুমি যে এসেছ তা সে জানেনা। দেখলে না? কলিংবেল দেওয়ার আগেই আমি দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ছিলাম? ভাগ্যিস বারান্দায় তুতুলের জামা আনতে গিয়েছিলাম। এখন জলদি করে নিজের রুমে চলে যাও ভাই। যা মেয়ে! এমনভাবে কাঁদছে কখন জানি তোমার গলায় ঝুলে পরে!”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। যেই না জারিফ নিজের রুমে প্রবেশ করবে তখনি আচানক মুন্নি দৌঁড়ে এসে জারিফকে পেছোন থেকে জড়িয়ে ধরে। আকস্মিক আক্রমনে জারিফ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে। মুন্নিকে নিজের থেকে ঝাড়া দিয়ে সরায়। মুন্নি তখনও কেঁদেই চলেছে। জারিফ নিজের শার্টের পেছোনে কাঁধের কাছে নজর দিয়ে দেখলো কিছু অংশ ভিজে গেছে। জারিফ কান্নারত মুন্নিকে বলে,

“তুমি বড়ো হয়েছ মুন্নি। এখন আর সেই ছোটো নেই যে বাছ-বিচার ছাড়া যা খুশি করবে। বিহেভ ইউরসেল্ফ। ইন ফিউচার যেনো এমন না হয়।”

মুন্নি জারিফের চেতাবনির তোয়াক্কা করলো না। কান্নারত ভেজা কন্ঠস্বরে বলল,

“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি জারিফ ভাই। খুব খুব ভালোবাসি। আমার সাথে এমনটা করো না। আমার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিও না দয়া করে।”

জারিফ মুন্নির কাকুতিমিনতি করা চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

“যাকে বোনের নজরে দেখি, তাকে অন্য নজরে কল্পনা করাও দুষ্কর। তোমাকে ছোটো থেকে বোনের নজরে দেখে এসেছি। আমার ও জায়ান ভাইয়ার ছোটো বোনের খুব শখ ছিল কিন্তু নেই। তাই কাজিন বোনদের আমরা বোনের নজরেই দেখি। তুমি ও ফিহা আমার কাছে ছোটোবোন। এখন তোমার মনের ভাবনা তো তুমি আমার উপর চাপিয়ে দিতে পারো না। আমি এখন বিবাহিত। আশা করব এসব নিয়ে ঝামেলা করবে না।”

মুন্নির হৃদয়ের ক্ষত যেনো গভীর হলো। জারিফকে আরও কাকুতিমিনতি করেও জারিফের মন গলাতে পারলো না। জারিফ নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে আর মুন্নি দরজার বাহিরে বসে কাঁদতে থাকে। মুন্নিকে কাঁদতে দেখে জমিলা আহমেদও কাঁদছেন। তিনি তরুণীমা বেগমকে বলেন,

“কেনো এমন করলেন ভাবী? বিয়েটা মুন্নির সাথে হয়ে গেলে কিছুদিন পর জারিফ এমনিতেই মেনে নিতো। আমার মেয়েটা এই দুই-তিন সপ্তাহ কিভাবে ছিল আমি দেখেছি। কাল না পারতে আমায় এসে বলেছে সে এখানে আসবে। মেয়েটা আমার জীবিত লা*শ হয়ে গেল।”

তরুণীমা বেগম ননদের কথায় খানিকটা ব্যাথিত হলেও নিজেকে সংযত করে বলেন,

“আমার ছেলের পছন্দ না তেমনি আমারও আত্মীয়র মধ্যে সম্বন্ধ করাটা পছন্দ না। যদি আমার ছেলে তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতো তবে আমি রাজি হতাম কিন্তু…!”

এদিকে তামান্না মুন্নিকে মেঝে থেকে জোর করে তুলে গেস্টরুমে নিয়ে যায় তারপর নিজেই ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে আচানক ঝর্ণা ছেড়ে দেয়। মুন্নি পানির স্পর্শে হুশে ফিরে। মুন্নিকে তামান্না শক্ত করে ঝর্ণার নিচে দাঁড়া করিয়ে রেখেছে। মুন্নি তামান্নার চোখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলে,

“তোমরা তো জানতে আমি জারিফ ভাইকে কতোটা ভালোবাসি। তাকে একবারের জন্য বলতে। এতো ভালোবাসা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু সে মূল্য দিলো না!”

তামান্না নরম স্বরে বলে,
“যার ভাগ্যে যে থাকে আর যার যাকে ভালো লাগে। তুমি জারিফ ভাইকে ভালোবাসো এটা সে জানে আর সে তোমাকে সেই নজরে দেখে না। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক আর গুমোট করো না। নিজেকে গুছিয়ে নেও। এক মাস পর তোমার এইচএসসি পরীক্ষা। পড়ালেখায় মনোযোগ দেও আর ভুলে যেতে চেষ্টা করো, জারিফ নামক মানুষটাকে তুমি ভালোবাসো। জানি কস্টকর কিন্তু এটাই মঙ্গলজনক।”

মুন্নি ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে পরলো তারপর নিরবে ঝর্ণার পানির সাথে অশ্রুবিলাশ করছে। তামান্না হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসে।

_________

সন্ধ্যার পর প্রিয়া বাড়ি ফিরে। বাসায় বলেই গিয়েছিল বলে কেউ কিছু বলল না। ফোনটাকে চার্জে বসিয়ে এই রাতেরবেলা কুসুম গরম পানি দিয়ে শাওয়ার সেরে নিলো। চার্জে থাকা অবস্থায় ফোনটা অন করে তার চোখ কপালে উঠার দশা! মেসেজ কতোগুলো আর হোয়াটসএপেও তিন-চারবার মিসডকল। সব জারিফের নাম্বার থেকে। প্রিয়া এক ছুটে তার ভাইয়ের রুমে উুঁকি দিলো। নাহ্! তার ভাই এখনও আসেনি। মায়ের ফোনটা এনে চেক করে দেখে প্রিয়মের নাম্বার থেকে সকালের পর আর ফোন আসেনি। প্রিয়া স্বস্থির নিঃশ্বাস নেয়। ফোনটা আরেকটু চার্জ হওয়ার অপেক্ষা করে। তারপর জারিফকে ফোন করবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here