হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,২১,২২

0
426

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম,২১,২২
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
জারিফের নাম্বারে ডায়াল করার পর প্রথমবার রিং হয়ে কে*টে গেছে। দ্বিতীয়বার আবার ট্রাই করার পরও রিসিভ হলো না। প্রিয়ার কিছুটা মন খারাপ হলো। সে ভাবলো, হয়তো জারিফ রাগ করেছে। এতো কল, মেসেজ করেও পায়নি তো রাগ করা স্বাভাবিক। প্রিয়া কিছুক্ষণ পায়চারি করে তামান্না ভাবীকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিলো। ভাবা মোতাবেক কাজ করেও ফেলল। তামান্নাও প্রথমবার রিসিভ করতে পারলো না কারণ সে তুতুলকে খাওয়াচ্ছিল। দ্বিতীয়বার রিসিভ করে সালাম দিয়ে তামান্না বলে,

“প্রিয়া আমি পাঁচ মিনিট পরে কল করি? তুতুলটাকে খাওয়াচ্ছি। একটুখানি বাকি আছে।”

প্রিয়া রাজি হয়ে যায়। এই পাঁচ মিনিট যেনো ওর কাছে পাঁচ ঘণ্টা। সে তো আর ইচ্ছে করে ফোন অফ করে রাখেনি। চার্জ ছিল না আর বন্ধুরা আগেরদিন বলল পরীক্ষা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে একটু ঘোরাঘুরি করলে মন্দ হয় না। কে জানতো সে ওমন সময় ফোন করবে! অন্য পরীক্ষাগুলোতে তো ফোন করেনি। প্রিয়ার অস্থীর অস্থীর লাগছে। আরেকবার জারিফের নাম্বারে ট্রাই করলো। ভাগ্যবশত এবার জারিফ রিসিভ করলো তাতে প্রিয়ার রুহুতে যেনো পানি ফিরল! প্রিয়া হড়বড় করে বলে,

“সরি সরি। আর কখনও এমন হবে না। বিশ্বাস করুন, সকালে ফোন চার্জে দেওয়ার কথা মনে ছিল না। আর বাসায় সবাইকে বলে গিয়েছিলাম ফ্রেন্ডরা একটু ঘুরবো পরীক্ষা শেষে। প্লিজ রাগ করবেন না। প্লিজ সরি।”

জারিফের মনের অবস্থা এতক্ষণ গম্ভীর ছিল। সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বের হয়নি। ফুফি আর মুন্নির হাহাকারে জারিফের মা*থাব্যথা শুরু হয়েছিল। এতক্ষণ মাথায় বাম লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল আর ফোন ছিল সাইলেন্ট মুডে। প্রিয়াকে অস্থীর চিত্তে বলতে শুনে জারিফ হালকা হাসলো অতঃপর বলল,

“ডোন্ট বি প্যানিক প্রিয়া। রিল্যাক্স। আমি রাগ করিনি। তুমি যে বেখেয়ালি তা আমি জানি। আমার একটু হেডঅ্যাক হচ্ছিল। ইটস অকে।”

প্রিয়া জারিফের অসুস্থতার খবরে আরও অস্থীর হয়ে বলল,
“এখন কমেছে? ঠিক আছেন আপনি? মেডিসিন নিয়েছেন? একটু ঘুমান ভালো লাগবে।”

জারিফ বলল,
“মেডিসিন নেইনি। ডিনার করে তারপর নিবো। বাম লাগিয়েছি। অনেকটা পেইন কমে গেছে। তুমি কিছু খেয়েছ? লাঞ্চ একসাথে করতাম বলে দুপুরে ফোন করেছিলাম।”

“হ্যাঁ। দুপুরে লাঞ্চ হয়েছে। আপনি লাঞ্চ করেছিলেন?”

জারিফ প্রিয়ার প্রশ্নের জবাবে না বোধক বললে প্রিয়া বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“আপনি আমার উপর রাগ করে খাননি? আমাকে আপনি যদি আগে জানাতেন তবে আমি ওদের সাথে যেতাম না সত্যি। অথবা ফোনে চার্জ থাকলেই হতো। ”

জারিফ প্রিয়ার উদ্বিগ্নতায় হালকা হেসে বলে,
“তোমার উপর রাগ না প্রিয়া। বাসার পরিস্থিতিতে খেতে ইচ্ছে করেনি। তুমি অযথা নিজেকে ব্লেম করছো।”

“কেনো? বাসায় কী হয়েছে? কারও কিছু হয়েছে?”

জারিফ প্রিয়াকে মুন্নির ব্যাপারটা জানাতে চাইলো না তাই বলল,
“তেমন কিছু না। তুমি রেস্ট করো। সারাদিন পরীক্ষার টেনশন তারপর ঘোরাঘুরি। টায়ার্ড নিশ্চয়ই। আমিও একটু ঘুমানোর চেষ্টা করব।”

“আচ্ছা। আপনি খেয়ে নিয়েন।”

প্রিয়া ফোন কেটে দিয়ে ভাবলো তামান্না ভাবীর থেকে জেনে নিবে। জারিফ যে বলতে ইচ্ছুক না তা বুঝে গেছে। ম্যাথাব্যাথা তাই জোর করল না। তামান্না ভাবীকে প্রিয়া হোয়াটসএপে ফোন করল। ফোনে ব্যালেন্স শেষ। তামান্না ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলে,

“বলো প্রিয়া। কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাবী। তুমি কেমন আছো? তুতুল ও বাকিরা?”

“সবাই আলহামদুলিল্লাহ্‌।”

এরপর কুশল বিনিময়ের পর প্রিয়া জিজ্ঞেস করল,
“তোমাদের বাড়িতে কারও কিছু হয়েছে?”

“কই নাতো?”

তামান্না ভাবলো, শুধু শুধু মুন্নির কথাটা বলার দরকার নাই।

“তাহলে জারিফ স্যার দুপুরে লাঞ্চ করলো না আবার বলল, বাড়ির পরিস্থিতির কারণে খাওয়া হয়নি। বলো না আমাকে। সে তো বলল না। অনেক আশা নিয়ে তোমাকে ফোন করেছি।”

তামান্না দোটানায় পরে গেলো। প্রিয়াকে বলা ঠিক হবে কীনা ভাবতে লাগল। প্রিয়া মুন্নিকে নিয়ে টেনশনে থাকবে। আবার ভাবে, প্রিয়ার অধিকার আছে জানার। জারিফ ও প্রিয়ার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে মুন্নি।
এদিকে প্রিয়া বারবার জিজ্ঞেস করছে তাই তামান্না বলল,

“আসলে আমার ফুফি শাশুড়ির মেয়ে মুন্নি, জারিফকে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোটো থেকে। সে জারিফের বিয়ের খবরে অনেক কেঁদেছে। আজ এই বাড়িতে এসেও অনেক কান্না করছে সাথে কাকুতিমিনতি করেছে। তাই জারিফ আসার পর থেকে ঘর থেকে বেরোয়নি। তুমি চিন্তা করো না। জারিফ ওকে বোনের নজরে দেখে।”

প্রিয়া হতবাক হয়ে গেছে। তার একমাত্র গম্ভীর বরের দিকে দেখি মানুষ হাত ধুয়ে পরেছে! বর নিয়ে তো সে এখন রিস্কে আছে। প্রিয়া মুখ ভাড় করে বলে,

“এখন আমার কী হবে? ওই মেয়ে যদি আমার বর নিয়ে টানাটানি করে! এদিকে বর আমার না খেয়ে আছে। অসুস্থও হয়ে গেছে। যাও না ভাবী, তাকে খাবারটা ঘরে দিয়ে আসো। ওই মুন্নি শা*ক*চু*ন্নি যাতে না দেখে। কালকে আবার তার ক্লাস আছে। আমাদের তো মিডের পর বন্ধ দেয় না। যেমনেই পারো মেয়েকে বিদেয় করো। আমার খুব টেনশন হচ্ছে জামাই নিয়ে।”

তামান্না প্রিয়ার বাচ্চাসুলভ কথায় হেসে ফেলে তারপর বলে,
“নো চিন্তা দেবরানী। আমি আমার দেবরানীর বরের উপর অন্য মেয়ের কুনজর পরতেই দিবো না। সাথে তুতুলও! তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”

কথা বলা শেষে প্রিয়া আজগুবি কতোকিছু ভাবতে লাগল মুন্নিকে নিয়ে। শেষে নিজেই নিজের চুল টেনে বিড়বিড় করে বলে,

“একটা পুচকে মেয়েকে ভয় পাচ্ছি! আমার বর আমার জোর চলবে বেশি। ওই মুন্নি ফু*ন্নির না! একবার আমার সামনে এসে এমনে কাঁদুক তখন তার চু*ল ছিঁড়ে দিবো! হুহ্।”

_________

সকালে প্রিয়া জলদি ভার্সিটিতে চলে গিয়ে ডিপার্টমেন্টে জারিফের রুমের সামনে পায়চারি করছে। জারিফ এখনও আসেনি। রুম লক করা। প্রিয়া বারবার ফোনে সময় দেখছে। আবার করিডোরের ব্যালকনিতে এসে উুঁকি দিচ্ছে যে জারিফ আসছে কিনা। আজ আকাশে হালকা রোদ জ্বলমল করছে। পরীক্ষার মাঝেই বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটেছে। ভ্যালেন্টাইনস ডে টাও চলে গেছে শেষ পরীক্ষার আগেরদিন। জামাই থাকতেও সিঙ্গেলের মতো ভ্যালেন্টাইনস ডে গেছে তার। প্রিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে নিজে নিজেই বলে,

“কী লাভ বিয়ে করে! যদি ভ্যালেন্টাইনসেও সিঙ্গেলের মতো ঘুরতে হয়! ভ্যালেন্টাইনসের পরেরদিন সে আমারে ফোন করে কিন্তু সেদিন না! আস্ত আনরোমান্টিক। এখন একটা শাঁ*ক*চু*ন্নি জুটেছে কপালে। এই ব্যাটা আসে না কেন! ওই মুন্নি আবার আটকে রাখেনি তো?”

প্রিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে জলদি করে জারিফের নাম্বার ডায়াল করার জন্য উদ্দত হলো। কাল রাতেই জারিফ প্রিয়ার ফোনে রিচার্জ পাঠিয়ে দিয়েছিল। প্রিয়া কিছু বলেনি তাও জারিফ নিজেই দিয়েছে সাথে একটা মেসেজ,

“তোমার চিন্তা জুরে আমার বসবাস থাকুক কিন্তু দুশ্চিন্তাতে না। একটা মাত্র বউ তুমি আমার। চিন্তা করতে করতে হাইপারটেনশনের রোগী হওয়ার দরকার নাই।”

প্রিয়া মেসেজটা আবারও দেখল। দেখেই তার ঠোঁট কোলে হাসির রেখা ফুটল। মনে মনে প্রশান্তি কাজ করছে। জারিফকে আর ফোন না করে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রায় দশ মিনিট পর জারিফ ডিপার্টমেন্টে এলো আর প্রিয়াকে তার অফিস রুমের বাহিরে পায়চারি করতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে এলো। অফিস রুমের সামনে গিয়ে রুমের লক খুলতে খুলতে প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তুমি এখানে?”

প্রিয়া হকচকিয়ে তাকায়। সে তখন পায়চারি থামিয়ে ক্যাকটাস গাছটার মিষ্টি রঙের ফুলগুলো ধরে ধরে দেখছিল। জারিফের মুখ নিঃসৃত প্রশ্নে জারিফের দিকে তাকায় তারপর হালকা হেসে বলে,

“কেনো আসতে পারিনা?”

জারিফ রুমের লক খুলে ভ্রুঁ কুঁচকানো অবস্থায়ই নিরব হাসে। তারপর বলে,

“ভেতরে আসো।”

প্রিয়া ভেতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। জারিফ বলে,
“তোমার তো এতো সকালে ক্লাস না। এতো জলদি কেনো আসলে?”

প্রিয়ার সরল জবাব,
“আপনার জন্য।”

জারিফ হেসে ফেলে। প্রিয়া মুগ্ধ হয়ে জারিফের হাসি দেখে।
“মুন্নিকে নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। আজকেই চলে যাবে। আমি আসার সময় বলে এসেছি চলে যেতে।”

প্রিয়া অবাক হয়ে বলে,
“ওমা! চলে যেতে বললেন! কেউ কিছু বলেনি আপনাকে?”

“তো কি থেকে যেতে বলব? সে সকালে অন্যায় আবদার শুরু করেছে তাই আমি সরাসরি বলেছি যাতে বাড়ি ফিরে ওকে বাড়িতে না দেখি।”

“কী করেছে? কী করেছে?”

জারিফ প্রিয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে বলে,
“এতো কৌতুহল কেনো? সে চলে যাবে দ্যাটস ইট।”

প্রিয়া এবার জেদী কন্ঠে বলে,
” না। আপনাকে বলতেই হবে। নাহলে কিন্তু আমি নাস্তা করব না।”

“এই তুমি নাস্তা করোনি?”

জারিফের প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দেখে প্রিয়া আমতা আমতা করে বলে,
“করে নিবো তো।”

জারিফ হতাশ হয়। প্রিয়া আবার বলে,
“বলেন না। সে কী করেছে? প্লিজ। নাহলে টেনশনে আমি খেতেও পারব না।”

“সকাল সকাল সে রান্নাঘরে গিয়ে আমার পছন্দের খাবার বানিয়েছে তারপর আমার জন্য টেবিল সাঁজিয়ে বসে ছিল। আমায় খাইয়ে দিবে বলে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে খাইয়ে দিবে বলে।”

প্রিয়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় এগুলো শুনে। প্রিয়া মনে মনে ভাবে,
“বউ আমি না ওই মেয়ে! আমার বরকে সে তো এমনেই হাত করে নিবে রে!”

চিন্তা করতে করতেই প্রিয়ার মুখশ্রী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। জারিফ তা দেখে টেবিলের উপর প্রিয়ার হাতটা ধরে বলে,

“আমি এক নারীতে আসক্ত পুরুষ। যদি মুন্নির প্রতি উইক হতামই তবে আগেই হতাম। তোমার হাজবেন্ড নিয়ে ইনসিকিউর হতে হবে না। এবার ভালো মেয়ের মতো নাস্তা করে নেও। আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে চলো। আমার ক্লাস আরও এক ঘণ্টা পর।”

প্রিয়া জারিফের হাতের স্পর্শে শিহরিত হলো অন্যরকম ভালো লাগায়। ভরসা লাগছে তার। তারপর ওরা দুইজন বাহিরের একটু দূরের একটা রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করতে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
রেস্টুরেন্ট থেকে ওরা ভার্সিটিতে চলে আসে। তারপর প্রিয়া বন্ধুদের জন্য ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করছে আর জারিফ তার অফিসরুমে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে জারিফ প্রিয়াকে প্রথমবারের মতো নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিল। প্রিয়া সেটা এখন একাকি বসে ভাবতেই ব্রীড়ামিশ্রিত হাসলো। প্রিয়াও জারিফকে খাইয়ে দিয়েছিল। ইশ! যদি কেউ ওই মোমেন্টটা ক্যাপচার করে নিতে পারতো! আফসোস হচ্ছে প্রিয়ার। কী সুন্দর একটা মুহূর্ত ছিল। রেস্টুরেন্টটা লাল-নীল আলোক সজ্জায় সজ্জিত। একটা রোমান্টিক ওয়েদার। প্রিয়ার এসব কল্পনা-ঝল্পনার মাঝে অর্ষা এসে হাজির। সে বেখেয়ালি প্রিয়ার পাশে বসে বলে,

“কার ধ্যানে মগ্ন আপনি শেহজাদী? মেসেঞ্জারে এতো মেসেজ করছি যে দেখছেন না! আজ আমার ফোনে টাকা ও এমবি নেই বলে!”

প্রিয়া অর্ষার দিকে ফিরে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“আমি নেটে নাই দেখিস নি?”

অর্ষা মুখ বাঁকিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে। আস্তে আস্তে বাকিরাও আসে। প্রিয়া ওদের কালকের ঘটনা বলে। তারপর ক্লাসে চলে যায়।

_________

ভার্সিটির ক্লাস শেষে জারিফ বেরোবে তখন তার ফোনে তামান্নার কল আসে। তামান্না সচরাচর জারিফকে ফোন করে না বিধায় জারিফ কিঞ্চিত অবাকই হলো। রিসিভ করে সালাম বিনিময়ের পর তামান্না বলে,

“ভাই, তুমি আজকে বাড়ি এসো না। তুমি যাওয়ার পর মুন্নি অনেক ঝামেলা করেছে। রান্না করা সব খাবার ডাস্টবিনে ফেলেছে এখন তোমার রুমের সামনে বসে আছে। ভাগ্যিস তুমি রুম লক করে চাবি নিয়ে গিয়েছ। সে রুমে ঢোকার বহু চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। তুমি.. তুমি এক কাজ করো, আজকে প্রিয়াদের বাড়িতে চলে যাও। আকদের দিনও তো রাতে থাকোনি। আজকে থেকে যাও। এমনিতেও আকদের পর জামাই শ্বশুরবাড়িতে যায় এক দুইবার থাকতে। নাহলে বিষয়টা কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগে। তোমার যাওয়াই হয়নি। আজকে চলে যাও। আর শোনো…”

জারিফ তার ভাবীর একটানা কথায় বাধ সাধে অতঃপর বলে,
“তোমার কী মনে হয় ভাবী? আমি ভয় পাই মুন্নিকে? যে এখন লুকিয়ে থাকতে হবে।”

তামান্না জারিফকে বোঝানোর চেষ্টা করল,
“আরে নারে ভাই। ভয় পাবে কেনো? তোমার তো উচিত প্রিয়াদের বাড়িতে যাওয়া। না গেলে কেমন দেখায় না বলো? বিয়েটা করে যে সেই এলে আর তো গেলে না। আজকে যাও আর এদিকে আমি মুন্নিকে একটু ডোজ দিবো। দেখবা কালকেই ব্যাগ গুছিয়ে পাগারপার!”

জারিফ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“কী করবে ভাবী?”

“পরে বলব। এখন প্রিয়াদের বাড়িতে যাও তো। বিয়ের পর প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে যাবে কিছু নিয়ে যেয়ো। রাখছি।”

তামান্না ফোন রেখে দিলে জারিফ হ্যাং হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয় তারপর প্রিয়মকে ফোন করে। প্রিয়মকে ফোনে যতটুকু পারে বুঝিয়ে বলে। প্রিয়ম জারিফকে বলে প্রিয়ার সাথে একসাথে ওদের বাড়িতে আসতে সে তার মাকে জানিয়ে দিচ্ছে। জারিফ তারপর প্রিয়াকে ফোন করে। এবার প্রিয়া ফোন রিসিভ করতে কোনো দেরি করেনা। রিং প্রথমবারেই রিসিভ করে তারপর সালাম বিনিময়ের পর জারিফ বলে,

“কোথায় আছো?”

“এই তো ক্যাম্পাসে বসে আছি।”

“আচ্ছা। আধঘণ্টা পর সেদিন যেখান থেকে গাড়িতে উঠেছিলে সেখানে এসো। আমি ফোন করব।”

“আচ্ছা।”

প্রিয়া কোনো প্রশ্ন করল না। এক বাক্যে রাজি হয়ে গেছে। কল ডিসকানেক্ট হওয়ার পর সাদ বলে,

“কীরে? স্যারের কল ছিল?”

সাদ প্রশ্নটা করার পর আয়ান প্রিয়ার দিকে এক পলক তাকালো। প্রিয়ার মুখশ্রী লাজে রাঙা। আয়ান আনমনে হাসলো।

প্রিয়া বলে,
“হ্যাঁ। উনি আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন।”

প্রিয়ার কথার প্রতিউত্তরে অর্ষা বলে,
“হাউ রোমান্টিক ইয়ার! জিজুকে ক্লাসে যতোটা বোরিং লাগে সে তার বউয়ের সাথে তার উলটো। ক্লাসে খালি পড়া আর পড়া!”

প্রিয়া চোখ ছোটো করে তাকিয়ে বলে,
“হইছে থাম। সে আমার সাথে রোমান্টিক হবে নাতো কী ওই মুন্নির সাথে হবে! আমার বর সে। আমার সাথেই রোমান্টিক হবে। অন্যকারও সাথে হলে তার চো*খ আমি ঘু*টে তু*লে ফেলব!”

নিশি, মিম, অর্ষা, রাদ, সাদ, সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় আর আয়ান নির্নিমেষ প্রিয়ার অভিব্যক্তি পরিলক্ষণ করছে। মিম বলে উঠে,

“এই তুই এসব ভয়ংকর চিন্তা-ধারা রাখ। জিজু ওরকম করবেই না। অনেকসময় মানুষ দেখলে বুঝা যায় সে কেমন। জিজু অনেক লয়াল তোর প্রতি। ”

প্রিয়া ঠোঁট উলটে বলে,
“ওই মেয়ের কাণ্ডকারখানা আমার পছন্দ হচ্ছে না। অন্যের বরের পেছোনে হাত ধুয়ে পরেছে! আবার মেয়ে কীনা তার ফুফাতো বোন। যদি আমার শ্বশুর তার বোনের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়!”

নিশি প্রিয়ার অতিরিক্ত অলুক্ষুণে চিন্তায় বিরক্ত হয়ে ধ*মক দিয়ে বলে,

“চুপ! খালি আজেবাজে চিন্তা। সারাটাদিন আজকে এইসবই বলেই গেল। তাদের যদি মুন্নিকে ছেলের বউ করারই হতো তবে আগেই করতো। তোকে বিয়ে করাতো না। আরেকবার এসব কথা বলবি তো কানের নিচে খাবি।”

বাকিরাও তাল মিলালে প্রিয়া গালে হাত দিয়ে মুখ ভাড় করে বসে রইল।

________
প্রায় আধাঘন্টা পর জারিফ প্রিয়াকে বেরোতে বলে। প্রিয়া আগেই বের হয়েছে। এখন আর একটু পথ বাকি। রাস্তার অপজিটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আজকেও ড্রাইভার নেই। প্রিয়া জারিফকে বিনিময়ে হাসি দেয়। জারিফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,

“আজ কিন্তু আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।”

প্রিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ জারিফের এহেনো কথায় হকচকিয়ে যায়। তারপর অবাক কন্ঠে বলে,

“রিয়ালি? কই সকালে তো বললেন না।”

“কেনো সকালে না বললে কি যেতে পারব না?”

প্রিয়া বোকার মতো জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে। জারিফের দৃষ্টি সামনের দিকেই স্থীর। প্রিয়া বলে,

“না তা বলিনি। মানে যাবেন সেটা আগে জানতেন কিনা। আমি তাহলে আম্মুকে বলতাম।”

“তোমার মা আগেই জানে।”

প্রিয়া আরও অবাক হয় জারিফের কথায় তারপর বলে,
“শুধু আমিই জানতাম না! নট ফেয়ার।”

প্রিয়ার গোমড়া মুখ দেখে জারিফ হালকা হাসে তারপর বলে,
“এখন তো জানলে। আমিও জানতাম না আধঘণ্টার আগে। জানার পর প্রিয়মকে জানালাম তারপর তোমাকে আসতে বললাম। প্রিয়ম তোমার মাকে জানিয়েছে।”

“ওহ।”

প্রিয়ার ছোট্ট জবাবে জারিফ হাসলো।
“রাতেও কিন্তু থাকব!”

প্রিয়া একটু গা ছেড়ে বসেছিল কিন্তু জারিফের শেষোক্ত কথায় ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসল। ঢোক গিলে বলে,

“মানে?”

“কেনো বুঝোনি? আজকে রাতে আমি তোমাদের বাড়িতে অ্যাই মিন, আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকব।”

জারিফকে বিপরীতে কী বলবে প্রিয়া চিন্তায় পরে গেল। এদিকে তার শরীরের লোম কা*টা দিয়ে উঠছে। হুট করে একটা বোকার মতো বলে বসলো,

“ভাইয়ার সাথে থাকবেন?”

জারিফ প্রস্তুত ছিল না প্রিয়ার থেকে এমন কিছু শুনবে। হুট করে গাড়ি ব্রেক করে প্রিয়ার দিকে ঘুরে।

“তোমার মনে হয়? তোমাদের বাড়িতে গেলে আমাকে তোমার বাবা-মা, ভাই কেউ তোমার রুম ছাড়া অন্যরুমে এলাউ করবে! প্রিয়ম আমার বেস্টফ্রেন্ড তাও সে আমাকে তার রুমে এলাউ করবে না।”

প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে।
“সরি। আমি বোকার মতো বলে ফেলেছি। আর বলব না।”

জারিফ আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here