আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_22

0
1222

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_22
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

র‌‌ওশনের কাধে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সুবহা। আর র‌‌ওশন! ঘুমন্ত অবস্থায় ওর মাথা সুবহার মাথার সাথে এলে আছে। দু হাত দিয়ে সুবহার হাত দুটো মুঠো করে রেখেছে ও।

এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখার জন্য যেন মোটেও প্রস্তুত ছিল না আভি। আর না এমন কিছু দেখার আশা ছিল ওর।

র‌‌ওশন একটা মেয়ের এতোটা কাছাকাছি, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আভির। শুধু তাই নয়, র‌‌ওশন মেয়েটার কতটা কেয়ার করে সেটা ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। র‌‌ওশন যেভাবে মেয়েটাকে নিজের বাহুতে আগলে রেখেছে এটা সামান্য কেয়ার হতে পারে না।ওদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা তো আছে। হয়তো ভালোবাসা! কারন এমনিতেই যাকে তাকে এতোটা সযত্নে নিজের পাশে কখনোই জায়গা দিবে না র‌‌ওশন। ও এমন মানুষ‌‌ই নয়। তাই এতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে আভি, র‌‌ওশনের জীবনে মেয়েটির আলাদা গুরুত্ব আছে। এখন এটা সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য সেটা বলা মুশকিল।

এই মুহুর্তে এখান থেকে চলে যাওয়াটাই ঠিক মনে করছে আভি। তাই ধীর পায়ে পেছনে ফিরে যেতে নিয়েও থেমে যায় ও। মাথা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে ওর। মনে পড়ে যায় র‌‌ওশনের ফোনে থাকা ওর ভিডিওর কথা। প্রতিশোধ তো নিতেই হয়। কারন প্রতিশোধ ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ একদম‌ই নয় আভি। সে যেই হোক না কেন।

ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে নেয় আভি, পকেট থেকে সাবধানে ফোনটা বের করে ক্যামেরা অন করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল ও,

“স্যরি ব্রো। কিন্তু তুই তো জানিস আমি এমন‌ই। কিন্তু বলতে হবে, ইউ টু লুক গ্রেট টুগেদার। ওয়াও!”

ছবি গুলো দেখতে দেখতে বলল আভি। তারপর ফোনটা পকেটে রেখে আলতো পায়ে বেরিয়ে যায় ও রুম থেকে।

বাইরে বের হতেই ও দেখে নীল দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে বিরবির করছে। মুখ ফুলিয়ে আছে ও। নিশ্চয়ই আভিকে বকছে। নীলের দিকে তাকিয়ে দ্বিধায় পরে যায় আভি, এখন এই পিচ্চিটাকে কীভাবে হ্যান্ডেল করবে ও?

ভাবনায় পরে যায় আভি। এর মধ্যেই নীল সামনে তাকিয়ে আভিকে দেখতে পায়। দ্রুত পায়ে ওর সামনে আসে নীল, তারপর আভির পেছনে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কৌতুহল নিয়ে বলতে শুরু করে,

“ভাইয়া কোথায়?”

নীলের কথায় হচকিয়ে যায় আভি। যেভাবেই হোক এই পিচ্চিকে নিয়ে এখান থেকে কেটে পরতে হবে। তাই নীলকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলতে শুরু করে আভি,

“উমম ভাইয়া? ভাই নেই তো ভিতরে। ভাই কী ভাইয়ের ভুত‌ও নেই। বলেছিলাম না তোমার আন্দাজ ভুল, দেখলে তো? এখন চলো অন্য কোথাও গিয়ে খুঁজি, চলো।

আভি সামনে হাঁটা ধরে, কিন্তু নীল ঠাঁই দাঁড়িয়ে। নীল সাথে না আসায় আভি থেমে যায়, ওর দিকে ঘুরে তাকায়। নীল সন্দেহ ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আভির দিকে। একদম প্রখর দৃষ্টি, যেন আভির মিথ্যা ধরে ফেলেছে।

নীলের এমন রিয়েকশন দেখে আভির নিজের ক্লাস ফোরের গণিত টিচারের কথা মনে পড়ে যায়। যখন পরিক্ষায় আভির চিটিং ধরা পড়েছিল তখন সে টিচারটাও ওর দিকে এমন দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়েছিল।

পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই ঢোক গিলে আভি। এখন এই পিচ্চিকেও ভয় পেতে হচ্ছে ওর। কী সাংঘাতিক!

আভির দিকে তাকিয়ে নীল একটা কথাই বলল, “তুমি মিথ্যা বলছো, লায়ার!”

বলেই রুমের দিকে দৌড় দিল। আভি নীলকে ধরতে গিয়েও ধরতে পারলো না।

” ছেলেটা একদম পিছলে মাছের মতো, ধরাই যায় না। এই পিচ্চি, এই পিচ্চি দাঁড়াও। আরে শোনা তো!”

কে শোনে কার কথা নীল দরজা খুলে সোজা ভেতরে ঢুকে যায়। হঠাৎ দরজায় ঠাস ঠাস শব্দ হতেই ধরফরিয়ে উঠে র‌‌ওশন সুবহা। ঘাবড়ে ঘুম ভেঙে গেছে ওদের।

নীল সোজা দৌঁড়ে এসে র‌‌ওশন সুবহার মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন‌ই পেছন থেকে আভি ছুটে এসে ওর চোখ চেপে ধরে। র‌‌ওশন আর সুবহা দুজনেই হতবাক আভি আর নীলের কাজে। নীল ছুটার জন্য ধস্তাধস্তি করছে কিন্তু আভি ওকে একদম জব্দ করে ধরে আছে।

র‌‌ওশন দুজনের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। ও যেন বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। এর মধ্যেই আভি নীলকে কোলে তুলে উল্টো ভাবে বের হতে হতে বলে,

” ইউ গাইজ প্লিজ ক্যারি অন, আমরা চলে যাচ্ছি। আমরা একদমই কাবাবে হাড্ডি হতে ইচ্ছুক নই। প্লিজ ইগনোর আয্!”

আভি নীলকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। র‌‌ওশন হতভম্ব হয়ে আছে এখনো। সুবহাও যেন বেকুব হয়ে গেছে। হঠাৎ এমন কাঁচা ঘুম থেকে উঠে ব্রেইন জ্যাম হয়ে গেছে ওর।

র‌‌ওশন আর সুবহা মাথা ঘুরিয়ে একে অপরের দিকে তাকাতেই হচকিয়ে যায়। ওরা একে অপরের হাত ধরে আছে, তার চেয়েও বড় কথা সুবহার মাথাটাও র‌‌ওশনের বুকে লেগে আছে। র‌‌ওশনের এক হাত ওর কাঁধ ধরে ওকে আগলে আছে।

দু’জনেই এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। ঢোক গিলে সুবহা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন ও নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। র‌‌ওশনের‌ও এক‌ই অবস্থা। দুজন‌ই যেন একদম ফ্রিজ্ড হয়ে আছে।

র‌‌ওশন আলতো ভাবে সুবহার কাঁধ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। কেউ যেন কারো দিকে তাকাচ্ছে না। প্রায় কয়েক সেকেন্ড এভাবেই স্তব্ধ থেকে, হুট করে আচমকা দুজনেই হন্তদন্ত হয়ে দুই দিকে ছিটকে সরে যায়। হঠাৎ এভাবে সরে যেতেই পাশের শেলফের সাথে র‌‌ওশনের হাত বারি খায়। কিন্তু ব্যথাটা প্রকাশ করলো না ও। শুধু অন্য পাশ ফিরে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ব্যথাটা হজম করে নিল।

কিছুক্ষণ পর,

ড্রাইভ করছে আভি। পাশে র‌‌ওশন বসে আছে আর পেছনের সিটে নীল। নীল ঘুমিয়ে পরেছে, আর র‌‌ওশন সিটে হেলান গিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মাত্র সুবহাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে র‌‌ওনা হয়েছে ওরা।

আভি ড্রাইভ করছে ঠিকই কিন্তু ওর ধ্যান অন্য জায়গায়। বার বার র‌‌ওশনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর হাসছে আভি। চোখ বন্ধ অবস্থায়‌ও র‌‌ওশন যেন স্পষ্ট আভির হাসি উপলব্ধি করতে পারছে। রাগ লাগছে ওর। এমনিতেই তখন সুবহার সামনে বিব্রত হতে হয়েছে ওকে আর এখন আভি বিরক্ত করছে।

চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ধমকের স্বরে বলে র‌‌ওশন,

“তুই তোর হাসি বন্ধ করবি নাকি আমি তোকে লাথি মেরে গাড়ি থেকে নামাবো?”

র‌‌ওশনের এমন হুমকিতে হাসি বন্ধ করার বদলে আরো জোরে ফিক করে হেসে দেয় আভি। তারপর হাসি বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে বলে ও,

“স্যরি ব্রো ডোন্ট মাইন্ড। আমি তোর উপর হাসছি না, ট্রাস্ট মি! আমি তো পরিস্থিতির উপর হাসছি। আর সত্যি বিশ্বাস কর, তোর রোমান্টিক মোমেন্ট নষ্ট করার আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না। এসব তো এই ছোট পটাকার দোষ।”

নীলকে দেখিয়ে বলল আভি। র‌‌ওশন কিছু বলল না। মাথা ঘুরিয়ে বাইরে তাকালো ও।আভির সাথে তর্ক করে লাভ নেই, এই ছেলে কখনো সুধরাবে না। তাই এই মুহুর্তে ওকে ইগনোর করাটাই শ্রেয়।

র‌‌ওশন বাইরে মনোযোগ দিয়ে আছে। শুনশান রাস্তা তেমন কোনো যানবাহন চলাচল হচ্ছে না মানুষ তো দূরের কথা।কিছুক্ষণ আগে হয়তো বৃষ্টি হয়েছিল রাস্তাঘাট এজন্যই ভেঁজা। ঠান্ডা বাতাস বইছে। ভালোই লাগছে পরিবেশটা র‌‌ওশনের কাছে। আবারো চোখ বন্ধ করে র‌‌ওশন।

এমন ভাবে ইগনোর হ‌ওয়াটা যেন আভির পছন্দ হলো না। নাক কুঁচকে নেয় ও। পেছনে নীল ঘুমাচ্ছে, পাশে র‌‌ওশন চোখ বন্ধ করে ওয়েদার উপভোগ করছে আর ও! ওকে দিয়ে গাধার খাটনি খাটানো হচ্ছে। সেই সকাল থেকে বেচারা কাজ করছে। আর রাত জেগে র‌‌ওশনকে খুঁজেছে কিন্তু তবুও কেউ যেন পাত্তাই দিচ্ছে না। ভারী অন্যায় হচ্ছে ওর সাথে।

আভি কিছু একটা ভাবে। এভাবে র‌‌ওশনকে আরাম করতে দেওয়া যাবে না।
কিছু একটা তো করতেই হবে। অনেক সময় নিয়ে ভেবে আভি গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করে,

হাম তুম ইক কামরে মে বান্ধ হো, অর চাবি….

গানের কলিটা শেষ হ‌ওয়ার আগেই র‌‌ওশনের ভয়ঙ্কর দৃষ্টি পড়ে আভির উপর। সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় ও। হালকা হেসে আমতা আমতা করে বলে ও,

“বোর হচ্ছিলাম তাই আর কি।”

আভির এমন কথায় কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে র‌‌ওশন,

“এতোই যখন বোর হচ্ছিস তাহলে এক কাজ করি, তোকে এখানেই মাঝ পথে নামিয়ে দেই। সুন্দর একা একা রাস্তার কুকুরদের সাথে গান বাজনা পার্টি করে বাসায় ফিরিস। কেমন হয় আইডিয়াটা?

“একদম বাজে!”

কথাটা বলেই জোরপূর্বক ঠোঁটে হাসি টানার চেষ্টা করে আভি। কিন্তু নাহ, এখন আর হাসি পাচ্ছে না। একটু বেশিই রাগিয়ে ফেলেছে ও র‌‌ওশনকে। সোজা হয়ে সামনে তাকায় ও। পুরো ফোকাস এই মুহুর্তে ড্রাইভিংয়ের উপর।

কিছুক্ষণ পর,

বাসার সামনে গাড়ি থামলো। গাড়ি থামতেই র‌‌ওশন নেমে যায়। কিন্তু আভি বের হচ্ছে না। র‌‌ওশন ভিতরে চলে যেতে নিলেই আভি বলে উঠে,

“ওকে কী করবো? ওতো এখনো ঘুমের রাজ্যে আছে”।

নীলকে দেখিয়ে বলল আভি। কিন্তু র‌‌ওশন থামলো না। বরং যেতে যেতে বলে ও,

“তখন যেভাবে কোলে করে নিয়ে গিয়েছিলি সেভাবেই নিয়ে আয়। তোর এক্সারসাইজ‌ও হয়ে যাবে আর নীলের ঘুম‌ও ভাঙবে না।”

র‌‌ওশনের কথা শুনে আভি মুখ ভাড় করে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,

” হ্যাঁ,সব কাজ তো আমাকেই করতে হয়। ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছি তো। এক কাজ করবো,
কালকে থেকে পুরো বাংলাদেশকেই ফ্রি সার্ভিস দিব। একদম নিউজ পেপারের ফ্রন্ট পেইজে ছাপাবো,

ফ্রি ফ্রি ফ্রি! একদম ফ্রি, চব্বিশ ঘন্টার ফ্রি সার্ভিস চলছে। ঘরের যাবতীয় কাজ থেকে শুরু করে আপনাদের বাচ্চাদের ডায়পার চেঞ্জ করা এবং কোলে করে ঘুম পারানো অব্দি সব কাজ করা হয়। সয়ং আভি রায়জাদা এই সার্ভিস দিয়ে থাকে। যেকোনো কাজের ফ্রি সার্ভিসের জন্য কল করুন জিরো জিরো ওয়ান ওয়ান।”

কথা গুলো নিজে নিজে বলেই নীলের দিকে তাকায় ও। এই ভোটকা বিড়ালটা কম ভারী না। তখন কোলে নিয়েই সেটা টের পেয়েছে আভি।

To be continued…..

আপনারাও ট্রায় করতে পারেন, আভির ফ্রি সার্ভিস।??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here