আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_২৩

1
1408

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৩
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

রুমে ঢুকেই ব্যাগটা সোফায় রেখে বেডে শুয়ে পড়ল সুবহা। একদম স্বটান হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।

এতক্ষণে টাইসেলও দৌড়ে চলে এসেছে। কিছুক্ষণ সুবহার আশে পাশে ঘুরে এখন ফ্লোরে বল নিয়ে খেলা করছে ও।

আর সুবহা এখনো চুপটি করে শুয়ে আছে। সারা রাস্তা কোনো কথা বলে নি ও আর না রওশনের দিকে তাকিয়েছে। সুবহা নিজেও বুঝতে পারছে না ও এমন কেন করছে বা এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে।

সাধারণ শুধু রওশনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েই তো ছিল! এতে আহামরি তো কিছু হয়ে যায় নি।

উঠে বসে সুবহা। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে ওর। দু হাতের তালু দিয়ে গাল দুটো স্পর্শ করতেই গরম অনুভব করে ও। শরীর গরম হয়ে আছে ওর।

‘ওয়েইট, আমি কি লজ্জা পাচ্ছি? কিন্তু কেন? লজ্জা পাওয়ার মতো কিছুই তো করিনি এখনো!’

বিছানা থেকে বালিশ তুলে বুকে জড়িয়ে নেয় সুবহা, মুখ ভার করে গভীর চিন্তায় ডুব দেয় ও। গালে হাত রেখে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওর চোখ যায় টাইসেলের দিকে।

টাইসেল নিজের খেলা বাদ দিয়ে সুবহাকে দেখছে। বেচারা যেন নিজেও কনফিউজড হয়ে আছে সুবহার আচরণ দেখে।

টাইসেলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেসে দেয় সুবহা। এগিয়ে এসে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ওকে বেডে তুলে নেয় ও‌‌। তারপর কোলে নিয়ে ওর গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে শুরু করে, ‘ টাইসু তুইও কনফিউজড হয়ে গেছিস তাই না? আমারও সেইম অবস্থা। জানি না কি হচ্ছে আমার, অযথা এসব ভেবে মাথা ন’ষ্ট করছি। অনেক হয়েছে আর না, আর ভাববো না। হুম, কিছুই হয়নি‌।

ঘুম দরকার আমার। অনেক রাত হয়েছে, সকালে অফিসেও যেতে হবে।’

কথা গুলো নিজে নিজে বলে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলল সুবহা তারপর টাইসেলকে একটু আদর করে ছেড়ে দিল ও। ছাড়া পেতেই টাইসেলও দৌড়ে নিচে নেমে নিজের ঘুমানোর জায়গায় চলে যায়। সুবহা ওকে দেখে মুচকি হেসে লাইট বন্ধ করে দিল।

খোলা জানালা দিয়ে গোল চাঁদটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঘরের লাইট বন্ধ করলেও চাঁদের কিরণে ঠিকই রুম বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে সেই খোলা জানালার দিকে ফিরে শোয় সুবহা, একদৃষ্টিতে তাকায় চাঁদটার দিকে। মুচকি হাসে ও, ভালোবাসার অনুভূতি সত্যিই অদ্ভুত হয়। এই ছোট ছোট ঘটনা গুলোও কতটা বড় প্রভাব ফেলে মনের উপর। সামান্য কাছে আসাটাও যেন গভীর অনুভূতির সৃষ্টি করে।

সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার অনুভূতি তখন হয় যখন খোলা আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবা হয়, মনের জানলা দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করা হয়। সুবহার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। ও তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে অথচ ওর মন দেখছে অন্য কারও মুখ।

হয়তো সে মানুষটিও এই মুহূর্তে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে এই বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের মধ্যে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখার চেষ্টা সেও করছে।

হয়তো দুই পকেটের মধ্যে দুই হাত গুঁজে জানলার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সেও নিজের মনের দৃষ্টি দিয়ে খুঁজছে তার প্রেয়সিকে। হয়তো!

এভাবেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে রওশনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে যায় সুবহার। অন্য দিকে রওশন যে এই মুহূর্তে নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে জানলার সামনে, সেও সোফায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

সকালে,

সকাল ঠিক আটটা বাজে। ভোর সকালেই তৈরি হয়ে বেরিয়েছে আভি। আজকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করতে হবে তাকে। সঠিক আ’সা’মির খোঁজ যখন পেয়েছে আজ তাকে হাতেনাতে ধরবে ও। সব প্রস্তুতি নিয়েই আভি হাজির হয় খাঁন ভিলার সামনে। বাইকটা কিছুটা দূরে দাঁড় করিয়ে নেয় ও। মাথা থেকে হেলমেট এখনো খোলেনি, খুলবেও না। বলা তো আর যায়না হুট করে যদি আবার দৌড় দিতে হয়‌। যে নিজের বাড়িরই গার্ডদের দৌড়ানি খেয়েছে সে অন্যদের বাড়ির গার্ডদের কিভাবে বিশ্বাস করবে। তাই সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিজেকে পালানোর জন্য প্রস্তুতও করে রেখেছে ও।

মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে, আজ সব গুলোর উত্তর নিয়ে তবে বাড়ি ফিরবে ও‌।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আভি, আটটা পনের বেজে গেছে। এমন সময় হঠাৎ বাড়ির গেইট থেকে একটা গাড়ি বের হয়। সাথে সাথে সতর্ক হয়ে যায় আভি। ভালো করে দেখতেই বুঝে যায় এটা সেই গাড়িই যেটা কয়েকদিন ধরে ওকে ফলো করেছিল।

দ্রুত বাইকে উঠে বসে আভি তারপর গাড়িটার পেছনে ফলো করে ও।

এইদিকে,

রওশন আজ তারাতাড়ি অফিসে যাচ্ছে। আগামীকাল নীলের জন্মদিন তাই আজকে অফিসের সব কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। যেহেতু নীলের জন্মদিন নীল অবশ্যই রওশনকে কমপক্ষে দুই দিন অফিসে যেতে দিবে না। পাক্কা তিন দিন টানা নিজের জন্মদিন পালন করবে ও। তার উপর ওর একেক ধরনের আবদার তো আছেই।

হাতে ঘড়ি পরতে পরতে নিচে ডায়নিংয়ে চলে আসে রওশন। নীল সেখানেই বসে ছিল। রওশনকে আসতে দেখে দ্রুত উঠে তার সামনে চলে আসে ও। তারপর মুখে বড় একটা হাসি টেনে বলতে শুরু করে, “ভাইয়া তোমার মনে আছে কালকে কী ডে?”

“কী ডে?” চেয়ারে বসে গ্লাসে জুস ঢালতে ঢালতে বলে রওশন। কিন্তু রওশনের এমন উত্তর যেন পছন্দ হলো না নীলের। মুখটা সাথে সাথে বাংলার পাঁচ করে রওশনের পাশের চেয়ারে বসে ও, “ তুমি সত্যিই ভুলে গেছো নাকি এক্টিং করছো? কালকে অনেক স্পেশাল ডে!”

“স্পেশাল ডে? কিসের স্পেশাল ডে?” রওশন ফোন টিপছে আর জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। আর নীল? ওতো পুরো লাল হয়ে গেছে রাগে। মুখ ফুলিয়ে একদম বেলুন করে নিয়েছে ও। রওশন ওর বার্থডে ভুলে গেছে, ওর বার্থডে? এটা কি মানা যায়?

নীল টেবিল থেকে কাঁটাচামচ তুলে স্যান্ডউইচটাতে জোরে বসিয়ে দেয়, যেমন কারো বুকে ছু’রি বসানো হয়। বিষয়টা রওশনের চোখে পরলেও ও না দেখার ভান করে। ও ভালোই বুঝতে পারছে যে খুব বেশি রাগিয়ে ফেলেছে ও নীলকে। কিন্তু ওর কিছুই করার নেই। সারপ্রাইজ পেতে হলে একটু আধটু রাগাতে হয়ই।

“ তুমি সত্যিই ভুলে গেছো?” আবারো প্রশ্ন করে নীল। কিন্তু এবার রওশন সাথে সাথে উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলো তারপর বলল, “ ওহ মনে পরেছে!” রওশনের এমন কথায় খুশি হয়ে যায় নীল। উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বলে ও, “ মনে পরেছে?”

“হ্যাঁ! কালকে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে। ফরেন থেকে ইনভেস্টার্সরা আসবে‌। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন কাল। আমার মাথা থেকে তো সরেই গিয়েছিল কথাটা। ভালো হয়েছে তুমি মনে করিয়ে দিলে। অফিসে গিয়ে তারাতাড়ি ক্লাইন্টদের ফাইল গুলো চেক করতে হবে।”

উঠে দাঁড়ায় রওশন, “ নীল আমি অফিসে যাচ্ছি, গুড বয়ের মতো বাসায় থাকবে ঠিক আছে? আমি তারাতাড়ি চলে আসবো। বায়।” নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায় রওশন।

আর এইদিকে নীল পুরোই ফা’য়া’র হয়ে আছে। রা’গে দুঃখে কান্না আসছে ওর। নাক টেনে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে নীল। ও একজন ছেলে, ও কান্না করতে পারবে না। কান্না করা তো মেয়েদের কাজ। ছেলেরা থোরিনা কান্না করে।

নাক টানছে নীল, মনে হচ্ছে চোখের পানি নাক দিয়ে ঝড়ছে ওর‌। প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে নেয় নীল তারপর নাক মুছতে মুছতে বলে, “মিটিংয়ের কথা মনে পরলো অথচ আমার বার্থডের কথা মনে পরলো না। পঁচা, সবাই পঁচা। কথা বলব না আমি তোমার সাথে হুহ।”

এইদিকে,

অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হয় সুবহা। লিফটের সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই লিফটের দরজা খুলে যায়।

সুবহা লিফটে উঠতে নিলেই খেয়াল করে একজন লোক আগে থেকেই লিফটে আছেন। লোকটা অচেনা। এর আগে এই এপার্টমেন্টে কখনো সে দেখেনি এমন কাউকে।

অদ্ভুত লাগে সুবহার কাছে। তবুও বিষয়টা অগ্ৰাহ্য করে লিফটে উঠে পরলো ও। লোকটার দিকে ধ্যান না দিয়ে নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো সুবহা।

লিফট নিচে আসতেই বেরিয়ে যায় সুবহা। লোকটাও লিফট থেকে বেরিয়ে এসেছে।

সুবহা পার্কিংয়ে নিজের গাড়ির সামনে আসতেই খেয়াল করলো একটা বড় কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে সামনে। গাড়িটার থেকে চোখ সরিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগোতে নিলেই হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে রুমাল দিয়ে সুবহার মুখ চেপে ধরে। সুবহা ছুটার জন্য ধ’স্তা’ধ’স্তি করলেও লাভ হলো না। তীব্র মেডিসিনের কারনে সেকেন্ডেই সে’ন্স’লে’স হয়ে যায় ও।

সুবহা সে’ন্স’লেস হতেই একজন লোক কালো গাড়িটার দরজা খুলে দেয় আর আরেকজন সুবহাকে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

সবে অফিসে পৌঁছেছে রওশন‌। নিজের কেবিনে এসে কিছু ফাইল ঘাঁটছে ও। এমন সময় ওর ফোনে কল আসে। ফাইলটা রেখে ফোন হাতে নেয় রওশন। আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে।

প্রথমে রিসিভ করলো না রওশন। কয়েক মিনিট রিং হয়ে বন্ধ হয়ে যায় আবারো কল আসে। এবার আর ইগনোর করতে পারলো না রওশন। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশের কথা শুনে স্থির হয়ে গেল ও।

শরীরে যেন হঠাৎ একটা কাঁপুনি অনুভব করল ও।
সেকেন্ডেই রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে নিল, ঘাড়ের রগ টানা হয়ে গেছে। ভারি কন্ঠে শুধু একটা কথাই বলল রওশন, “শান!”

To be continued….

1 COMMENT

  1. আপনি খুব সুন্দর কাজ করছেন এভাবেই চালিয়ে যান আমি আপনার পুরো সিরিজটি পড়েছি খুব সুন্দর একটি গল্প দয়া করে আরেকটু বেশি পরিমাণ গল্প তাড়াতাড়ি করে দেওয়ার চেষ্টা করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here