The_Boss
Part:20
Aarizona ella
ইলমাজ অফিসে নিজের কেবিনে বেশ কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে এক ধ্যনে বসে আছে।।
আজ একমাস মায়া অফিস আসে না।।মায়ার সাথে সিলেটের কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবতে শুরু করলো ইলমাজ।।কি কি পাগলামো করতো সে আর সেই টার্কিশ রঙ যা মায়াকে পরনে দেখে সে অপছন্দের রঙের মায়ায় জড়িয়ে গেছিলো,ভাংতি পয়সা গুলো, আর মশলা কষানো চা কে খুব মিস করে ইলমাজ কিন্তু তা কাউকে বুঝতে দেয় না।।।
মায়া এখনো রেজিগনেশন লেটার নিয়ে যায় নি,,তা জানালার পাশে বসে বসে চিন্তা করছে মায়া।।লেটার ছাড়া অন্য কোন কোম্পানি তেও জব পাবে না সে।।আর সেখানে যাওয়া টা ও উচিত মনে করছে না মায়া।।যতবারই অফিস যাওয়ার মন বানায় ততবারই ইলমাজের দেয়া প্রতিটি মিথ্যে অপবাদ মায়ার আত্মাসম্মান কে কুড়িয়ে খায়।।
পরেরদিন সকালে মায়া নিজেকে সামলিয়ে মনকে শক্ত করে রেডি হয়ে নিলো অফিস যাওয়ার জন্য, কারন একমাত্র মায়ার আয় দিয়েই ঘর চলে তাদের,,ঘর চালানোর জন্য রেজিগনেশন লেটার অতি অবশ্যক,কারন তা ছাড়া অন্য কোথাও জব করা সম্ভব না।।
তাই মায়া অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।।। অফিসের বাহিরে দাঁড়িয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।। সেকেন্ড ফ্লোরে দিহান মায়াকে দেখে থমকে দাঁড়ালো আর বলতে শুরু করলো,,
হেই মিস আপনি এখানে?খানিকটা অবাক হলো কিন্তু খুব এক্সাইটেড হয়ে বললো।।
মায়া তার কথার কোন জবাব না দিয়ে সিড়ি বেয়ে তিন তলার উদ্দেশ্যে উপরে উঠতে লাগলো।।
হেই হেই মিস,আপনাকে বলছি,,আপনি আমার কথার জবাব দিচ্ছেন না কেন?দিহান ও সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বললো।।
মায়া তার কথার কোন তোয়াক্কা না করে সোজা চার তলায় এসে থামলো।। দিহান দৌড়ে মায়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মায়াকে থামালো।।
কি হলো মিস আপনি আমার কথা শুনেও শুনছেন না যে?ফ্যাকাশে চেহারা বানিয়ে বললো দিহান।।।
ওহ,দিহান আপনি?সরি আসলে আমি খেয়াল করি নি একটু তাড়াহুরোয় ছিলাম তো তাই।।চাপা হেসে বললো মায়া।।
আর ইউ সিউর?আপনি আমাকে সত্যিই দেখেন নি?(দিহান)
আম,জ,হ্যাঁ সত্যিই আমি আপনাকে দেখি নি।।থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে উত্তর দিলো মায়া।।
ওহ আচ্ছা,তো আপনি এখানে?জব এর জন্য এসেছেন নাকি?একগাল হেসে জিজ্ঞেস করলো দিহান।।
না আসলে একটা কাজে এসেছিলাম,আমার কাজিন এখানে জব করে ওর সাথে একটা জরুরি আলাপের জন্য এসেছিলাম।।চাপা হেসে বললো মায়া।।
আচ্ছা,,আম গ্ল্যাড আপনি এখন ঠিক আছেন।।?(দিহান)
ধন্যবাদ, এবার আসি,দেরি হয়ে যাচ্ছে।।মায়া অফিসের ভিতর চলে গেলো।।
ইলমাজ লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো,দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষন।।
দিহান লিফটের দিকে যাওয়ার সময় ইলমাজকে দেখে থামলো
আর বলতে লাগলো।।
ভাই কোথায় ছিলেন?আপনাকে খোজার জন্য আপনার ক্যাবিনে গিয়েছিলাম কিন্তু পাই নি বলে চলে যাচ্ছিলাম।।(দিহান)
হুম,জরুরী কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম।।তো এমন কি প্রয়োজন ছিলো যে একদম এখানে চলে আসতে হয়েছে তোমার আমাকে খোজার জন্যে? (ইলমাজ)
ভাই এভাবে বলছেন কেন?(দিহান)
কিভাবে বললাম? আরেকটু কঠিন কন্ঠে বলা উচিত ছিলো মনে হয়?(ইলমাজ)
আপনি ঠিক আছেন ভাই?(দিহান)
হুম আমার কি হবে?ভালোই আছি আমি।।তাছাড়া আজকাল তুমি অনেক বিজি থাকো মেয়েদের সাথে।।(ইলমাজ)
মানে?অদ্ভুত নজরে তাকালো দিহান।
মানে ওই যে দেখলাম এখন ওই মেয়ে টা কে?নিশ্চয় প্রেমিকা?জমিয়ে প্রেম চলছে তাহলে।(ইলমাজ)
ওয়েট ওয়েট,,আপনি কার কথা বলছেন?এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলাম সে?(দিহান)
ইলমাজ নাকি ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।।
আরেহ ভাই সি ইজ নট মাই প্রেমিকা,আই ইভেন ডোন্ট নো হার নেম।।(দিহান)
মানে?মাস খানেক আগে শপিংমলের সামনে ওকে তোমার কোলে দেখেছিলাম কেন তাহলে??(ইলমাজ)
আরেহ ভাই,রিকশার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো, উইক্নেসের কারনে প্রায় বেহুশ হয়ে যাচ্ছিলেন কারের ভিতর থেকে উনার অবস্থা বেশ সুবিধের মনে হচ্ছিলো না আমার তাই গাড়ি থেকে নেমে উনার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম যে আসলেই উনার অবস্থা শোচনীয়,ঢলে পড়ে যাচ্ছিলেন আর তাই আমি উনাকে কোলে করে আমার গাড়িতে বসাচ্ছিলাম,উনি শুধু হাল্কা হাল্কা চোখ মেলে আমাকে খেয়াল করার চেষ্টা করছিলেন।।আর আমি উনাকে হসপিটাল নিয়ে গেছিলাম কিন্তু আপনি কিভাবে জানেন,আপনি কি উনাকে চিনেন??।(দিহান)
ইলমাজ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখ ছল ছল করছে,।।।
ভাই?ইলমাজকে হাল্কা ঝাকিয়ে বললো দিহান।।
মানে তুমি সত্যিই তাকে চিনো না?(ইলমাজ)
না ভাই।।।ওইদিন এর পর থেকে আর দেখা হয় নি,আজ দেখলাম।।প্রথমে ভেবেছি আপনার এখানে কাজ করে কিন্তু এর পর জানতে পারলাম,,,
কি জানতে পারলে? দিহানকে থামিয়ে বেশ কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করলো ইলমাজ।।
তাই বলছিলাম ভাই,বলতে কই দিলেন??(দিহান)
তারপর বলবি??(ইলমাজ)
তারপর জানতে পারলাম উনার কাজিন নাকি এখানে কাজ করে উনার সাথে একটা জরুরি আলাপের জন্য এসেছেন।।(দিহান)
তার মানে মায়া এখানে কাজ করে না বলেছে?মনে মনে বললো ইলমাজ।
ভাই কি ভাবছেন?(দিহান)
কিছু না,তুই বাড়ি যা, ওখানে কথা হবে।।(ইলমাজ)
কিন্তু ভাই,,,,ইলমাজ দিহানের আর কোন কথা না শুনে অফিসের ভিতর চলে গেলো।। দিহান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে লিফটের ভেতরে ঢুকে পড়লো।।। ইলমাজ নিজের ক্যাবিনের দিকে যাওয়ার সময় মায়ার ডেস্কের দিকে উকি মেরে দেখলো মায়া সেখানে নেই।।এনির ক্যাবিনে উকি মারতেই দেখলো মায়া এনির সাথে বসে আছে।।ইলমাজ হাল্কা গলা ঝাড়তেই মায়া আর এনি দুজনেই দরজার দিকে তাকালো,ইলমাজকে দেখতেই এনি ইলমাজের দিকে ছুটে গেল,
স্যার,,এতক্ষণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।।এই যে মা,,,,,,(এনি)
এনিকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো মিস মায়া আপনি একমাস অফিস আসেননি,আপনার সাথে কিছু হিসাব নিকাশ আছে,আমার ক্যাবিনে একটু আসুন।।বলা মাত্রই ইলমাজ নিজের ক্যাবিনে চলে গেলো।।
মায়া বসা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ইলমাজের ক্যাবিনের দিকে এগুলো দরজা নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো মায়া।।।
ইলমাজ চেয়ারে বসতে বসতে বললো,,
নিশ্চয় বেতনের জন্য এসেছেন,কিন্তু বিগত একমাস কাজে না আসার কারনে আপনাকে একপয়সা ও প্রদান করা হবে না৷৷ (ইলমাজ)
আমি বেতনের জন্য আসিনি,,রেজিগনেশন লেটারের জন্য এসেছি।।আমি রিজাইন করছি স্যার,আমাকে রেজিগনেশন লেটার টা প্রদান করলে আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকবো।।মায়া একনাগার কথা গুলো বলে ফেললো।।
ইলমাজ ভ্রু উপরের দিকে উঠিয়ে এক চোখ ছোট করে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো।।
স্পিচ শেষ?? এবার আমি বলবো? (ইলমাজ)
মায়া কোন জবাব দিলো না।।
তুমি গত একমাস যাবৎ অফিস আসো নি,আর এখন হঠাৎ এসে বলছো রিজাইন করছো?গত একমাস কই ছিলে?(ইলমাজ)
অসুস্থ ছিলাম,তাই আসতে পারি নি।।(মায়া)
অসুস্থতার কথা শুনে ইলমাজের মুখ শুকিয়ে গেলো করুন দৃষ্টিতে তাকালো ইলমাজ মায়ার চেহারার দিকে,মায়া ইলমাজের দিকে তাকালে ইলমাজ গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,
অসুস্থ থাকলে অফিস কতৃপক্ষকে জানাতে পারতে,কিন্তু জানাও নি আর তাই অতি দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে আপনাকে রেজিগনেশন লেটার আপাতত দেয়া যাচ্ছে না।।গত একমাসের মিসিং কনসেপ্টগুলো আগামি একমাসের মধ্যে কম্পলিট করে দেন যেতে পারবেন।।বাকা হেসে বললো ইলমাজ।।
মিস্টার ইলমাজ রেহমান আপনি আমার সাথস যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না।।চেচিয়ে উঠলো মায়া।।
আপনি এখনো ফায়ার হননি, আমি এখনো আপনার বস,সো আওয়াজ নিচে।।(ইলমাজ)
আমি রিজাইন করছি আমাকে রেজিগনেশন লেটার দেন আর না ই দেন।।?(মায়া)
এটা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি, সো এখানে চাকরি ছাড়ার জন্য অনেক ফরমালিটিস লাগে হয়তো আপনি জানেন না,অফিস রুলস মান্য না করলে আপনার জেল ও হতে পারে।আপনার জয়েনিং ফাইলস গুলো চাইলে একবার পড়ে নিতে পারেন।।।ভ্রু উঠিয়ে বললো ইলমাজ।।
আমি আপনার এখানে কাজ করবো না।।?আপনি আমার সাথে যা করছেন ঠিক করছেন না।।কান্নাজড়িত কন্ঠে চেচিয়ে বললো মায়া।।
আমি এর থেকে অনেক জঘন্য কিছুও করতে পারি মিস মায়া আজহারি।।বাকা হেসে একটা ফাইল মায়ার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললো ইলমাজ।।
মায়া টেবিল থেকে ফাইল হাতে নিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় ইলমাজ বললো,,
আমি এখনো আপনাকে যেতে বলি নি।।বসা থেকে উঠে মায়ার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো ইলমাজ।।
মায়া এখন দরজার দিকে মুখ করে থ দাঁড়িয়ে আছে।।
মিস মায়া,,মায়াকে পিছন থেকে ডাকলো ইলমাজ।।
মায়া ঢোক গিলতে গিলতে ইলমাজের দিকে ফিরলো।।
ইলমাজ মায়ার দিকে এগুচ্ছে মায়া আবারও পিছুচ্ছে।।মায়াকে এভাবে ঠেলতে ঠেলতে একদম দরজার সাথে লাগিয়ে দাঁড় করালো মায়াকে।।
মায়ার মুখের কাছে ইলমাজ তার মুখ নিয়ে গেলো,ইলমাজের নাক মায়ার নাক ছোয়া ছোয়া।।
মায়ার চোখ আর জিহব্বা যেন এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে চোখ উল্টো করে এমন ভাবে হা করে আছে আর ঢোক গিলছে।।
মায়া ইলমাজকে ধাক্কা দিবে এমন সময় ইলমাজ মায়ার হাত দেয়ালে চেপে ধরে বাম পাশের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।।
মায়া এক্ষুনি হার্ট এ্যাটাক করবে যেন।।????
চলবে।।
গল্প লিখার পর কি লিখেছি তা আর রিভিশন দেয়া হয় না,বানানে ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।।