শ্রাবন_আধারে_তুমি,০৩,০৪,০৫

0
847

#শ্রাবন_আধারে_তুমি,০৩,০৪,০৫
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট:৩

মিশকা রাইকে নিয়ে আবরার ঘরে গেল ৷মিশকা দেখলো আবরার ব্যাগের মধ্যে জামা কাপড় আর কিছু কাগজ গুছিয়ে রাখছে ৷মিশকা আবরারকে বলল

ভাইয়া তুমি হঠাৎ ব্যাগে কেন কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছো ৷মাত্রই তো বাড়ীতে এলে ৷

আবরার কোনো কথা বলল না ৷মিশকা আবারো আবরার কাছে যেয়ে বলল কি হলো ভাইয়া বলো না ৷

এবার আবরার কঠিন চোখে একবার রাইয়ের দিকে তাকালো ৷তারপর বলল আমাকে এই মেয়েটা ফাসিঁয়েছে ৷এই মেয়েটার সাথে আমি কিছুতেই সংসার করবো না মিশকা ৷আবরার কথাটা বলেই বেড়িয়ে গেল ৷মিশকা আনিলা বেগমকে ডাকতে লাগলেন ৷আনিলা বেগম আসতে আসতে আবরার গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেছে ৷রাই শুধু মূর্তির মতো দাড়িয়ে ছিল ৷আবরার ফুপু রুহানা বেগম আনিলা বেগমের কাছে এসে বলল

বলে ছিলাম না ঐ মেয়েটা অলক্ষী একটা ৷দেখলি তো কিভাবে ছেলেটা চলে গেল ৷আমাদের ছেলেটাকে ফাসিয়ে কিভাবে বিয়ে করে নিল ঐ ছোট লোকের মেয়েটা ৷

আনিলা বেগম তার কথায় কান না দিয়ে আবরারকে কল করলো ৷প্রথমবারে আবরার কল রিসিভ না করলেও পরে রিসিভ করে ৷আবরার ফোন রিসিভ করতেই আনিলা বেগম বলল

আবরার বাবা তুই কোথায় যাচ্ছিস সোনা ৷

আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি মা আবরার বলল ৷

কেন বাবা ৷ এমন করিস না ৷পরে কিন্তু আফসোস করবি তুই ৷ রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই ৷চলে আয় বাড়ীতে তাড়াতাড়ি ৷আনিলা বেগম ঐ দিন আবরারকে অনেক বোঝায় কিন্তু আবরার ফিরে আসে নি ৷

বর্তমানে….
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই রাইয়ের ধ্যান ভেঙ্গে যায় ৷রাই পাশে তাকিয়ে দেখে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে ৷বাইরে তাকিয়ে দেখে আলো ফুটে গেছে ৷রাই একবার আবরার ছবির দিকে তাকিয়ে দরজা খুলতে যায় ৷দরজা খুলতেই মিশকা ভেতরে আসে ৷

মিশকা বলল রাই আজ কলেজে যাবে না ৷

হ্যা আপু যাবো ৷

ওকে আমার সাথে তাহলে চলো ৷আর একটু পরে নাস্তা করতে নিচে এসো কেমন ৷

মিশকা চলে যেতেই রাই দরজা লাগিয়ে দেয় ৷রাই ছাদহীন বিশাল ডিভানে গিয়ে তার লাগানো ফুল গাছে পানি দিতে লাগে ৷আবরার একদম গাছ পছন্দ করে না ৷কিন্তু রাইয়ের গাছ লাগাতে বেশ ভালোই লাগে ৷নিজের অবসর সময় এই গাছের সাথেই রাই পার করে দেয় ৷একটু পরে রাই রেডি হয়ে নিচে নাস্তা করতে যায় ৷রাইকে দেখেই রুহানা বেগম বলল

এসে গেছে নাস্তা করতে ৷এই মেয়ে তোমার লজ্জা করে না এই বাড়ীতে থাকতে ৷নিজের মা বাপ তো খোজঁ নেয় না ৷আর যাদের কাছে বড় হয়েছো ৷ তোমার ঐ মামা মামীতো এই পর্যন্ত তোমার একটা খোজঁ নিল না ৷তা জন্মের কি ঠিক আছে ৷নাকি কুড়িয়ে পেছেয়ে তোমাকে ৷রাইয়ের চোখ পানিতে ভরে এলো ৷রাই নিজের কান্না থামাতে না পেরে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷বিছানায় শুয়ে হাউমাউ করে রাই কাদঁতে লাগলো ৷

গভীর রাত হয়ে গেছে ৷রাই ডিভানে দাড়িয়ে আছে ৷আজ সারাদিন রাই ঘর থেকে বের হয় নি ৷আনিলা বেগম একটু আগে জোড় করে রাইকে খাইয়ে দিয়ে গেছে ৷যাওয়ার আগে পরম যত্নে রাইয়ের কপালে চুমু দিয়ে গেছেন ৷আনিলা বেগমকে কখনো শ্বাশুড়ী মনে হয় না রাইয়ের ৷নিজের মায়ের জায়গাটাই রাই তাকে দিয়েছেন ৷

মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে রাই নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে ৷রাইয়ের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে ৷হঠাৎ রাই ঢুকরে কেদেঁ দিল ৷

কেন আবরার আমার কি দোষ ৷আপনি কেন আমাকে ভুল বুঝলেন ৷আমি কেন দোষ না করেও শাস্তি পাবো ৷আমাকে আপনার সাথে বেধে কেন চলে গেলেন ৷দিনের পর দিন লোকের অপমান যে আমি আর নিতে পারছি না ৷আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি আবরার ৷রাই কাদঁতে কাদঁতে বসে পড়লো ৷

অপরদিকে আনিলা বেগম ঘরে বসে আছে ৷কিছুক্ষন পর আফজাল খান ঘরে প্রবেশ করে ৷আফজাল খান হচ্ছে মিশকা আর আবরার বাবা ৷আনিলা বেগমকে অন্যমনষ্ক দেখে তিনি বললেন

কি হয়েছে আনিলা ৷

আজকাল রাইয়ের জন্য বড্ড চিন্তা হয় ৷আবরার চলে যাওয়ার পর আর খোজঁ নেয় নি মেয়েটার ৷মেয়েটা দোটানার মধ্যে আছে ৷আর প্রতিদিন তোমার বোনের অপমানে মেয়েটা নিজিকে আরো গুটিয়ে নিচ্ছে ৷মেয়েটার বাড়ীর কেউ তার খোজঁ নেয় না ৷কি করবো আমি বুঝতে পারছি না ৷

আফজাল খান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে স্ত্রীকে বললেন

চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে ৷আমি দেখি কি করতে পারি ৷এখন চলো ঘুমাবে ৷

রাইয়ের চোখে ঘুম নেই ৷একের পর এক ধাক্কা তাকে ভেঙ্গে দিয়েছে ৷নিজের প্রিয়জনরা যেভাবে তাকে দূরে ঢেলে দিয়েছে তাতে এক চরম হতাশায় সে ভুগছে ৷হতাশা তাকে ঘিরে ধরেছে ৷মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে তার ৷কিন্তু রাই পারে না মরে যেতে ৷ আত্মহত্যা যে মহাপাপ ৷এই পাপ সে করতে চায় না ৷রাই ফুপিঁয়ে কাদঁছিল ঠিক তখনই রাইয়ের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয় ৷আজকাল হঠাৎ হঠাৎ রাইয়ের মাথা খুব ব্যাথা করে ৷রাই কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলে নি ৷রাই ব্যাথায় মাথা চেপে ধরে ৷রাই নিজের নাকে তরল কিছুর আভাস পায় ৷রাই একটা আঙ্গুল নাকের নিচে রাখতেই তার আঙ্গুর ভিজে গেল ৷রাই নিজের আঙ্গুলটা সামনে ধরতেই লাল বর্নের রক্ত দেখতে পেল ৷রাইয়ের নাক থেকে রক্ত আসছে বিন্দু বিন্দু করে ৷রাই মাথাটা দুইহাতে চেপেঁ ধরলো ৷তারপর আস্তে করে উঠে দাড়ালো ৷রাই ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিল ৷তারপর একটা মাথা ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নিল ৷

চলবে…

#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট:৪

আস্তে আস্তে চোখ মেলে রাই তাকালো ৷মাথাটা এখনো ভার হয়ে আছে ৷ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো নয়টা বাজে ৷রাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল ৷

নিচে নামতেই রাই অবাক হয়ে গেল ৷সবাই বাড়ী পরিষ্কার করছে ৷বাড়ী রং করার জন্য লোকও এসেছে ৷হঠাৎ এত লোক কেন কাজ করছে এর মানে রাই বুঝলো না ৷রাই রান্না ঘরে উকি মারতেই আনিলা বেগমকে দেখতে পেল ৷রাই মলিন কন্ঠে একবার বলল মা ৷ আনিলা বেগম পেছনে ঘুড়ে রাইকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল ৷তারপর রাইয়ের কাছে এসে বলল আমার মায়ের ঘুম হয়েছে ৷

রাই বলল হুমম হয়েছে ৷

আনিলা বেগম বললেন কত বেলা হয়েছে দেখেছিস ৷তাড়াতাড়ি খেয়ে নে যা ৷

আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মা ৷

কেন রে কি হয়েছে আবার ৷

আমার মাথাটা ব্যাথা করছে ৷কিছু ভালো লাগছে না ৷

আনিলা বেগম ব্যস্ত কন্ঠে বলল বেশি ব্যাথা করছে ৷ডাক্তার ডাকতে বলবো তোর বাবাকে ৷

না মা এমনিই ব্যাথা করছে ৷তুমি টেনশন করো না ৷

এখন যা খেয়ে নে তাড়াতাড়ি ৷অনেক কাজ আছে আমার ৷

মা একটা কথা বলবো ৷

হ্যা বল তাড়াতাড়ি ৷

মা বাড়িতে এত লোক কেন কাজ করছে ৷কেউ কি আসবে বাড়িতে ৷
আনিলা বেগম মুচকি হেসে বললেন আবরার আসছে ৷আজ সকাল পাচঁটায় কল করেছিল এয়ারপোর্ট থেকে ৷এখন প্লেনে আছে ৷আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে ৷

রাইয়ের পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে ৷বুকের ভেতর অজানা ঝড় শুরু হয়েছে ৷বুকের বা পাশটা খুব করে কাপঁছে ৷রাই কোনো রকম খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷রাইয়ের চোখে জল রাশি জমা হয়ে গেছে ৷আজ কি সত্যি সে আসবে ৷আচ্ছা আবরার কি তার সাথে একটু কথা বলবে ৷নাকি দূরে ঠেলে দেবে ভুল বুঝে ৷রাই পুরো ঘর পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখলো ৷কাবার্ডের অর্ধেক ফাকা করে রাখলো ৷

বিকেল হয়ে গেছে ৷রাই ডিভানে দাড়িয়ে আছে ৷রাইয়ের ছোট মনে হাজারো কথার ছন্দ খেলা করছে ৷হঠাৎ গাড়ীর শব্দে রাইয়ের ধ্যান ভাঙ্গে ৷আফজাল খান আবরারকে রিসিভ করতে গিয়ে ছিল ৷রাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো গাড়ীর দিকে ৷রাইয়ের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে গাড়ীর ভেতর থেকে কালো কোর্ট পরা আবরার বেড়িয়ে এলো ৷রাইয়ের বুকে লাভডাব আওয়াজ প্রচন্ড গতিতে বেড়ে গেছে ৷রাই আর দাড়ালো না দৌড়ে চলে গেল মিশকার ঘরে ৷

আবরার নিজের বাড়ীতে অনেক দিন পর এসেছে ৷আনিলা বেগমের খুশির শেষ নেই ৷ছেলেকে জরিয়ে ধরে তিনি কেদেঁ ফেললেন ৷আবরারও মাকে জরিয়ে ধরলো ৷

আবরার নিজের ঘরে আসলো সব কিছু নিয়ে ৷মায়ের কান্না থামাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তার ৷ঘরটা পরিষ্কার দেখে আবরার খুশি হলো ৷আবরার চারদিকে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না ৷যার জন্য এসেছে তাকেই কোথাও দেখতে পেল না সে ৷আবরার ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷ফ্রেশ হয়ে নিজের জিনিস কাবার্ডের ফাকা জায়গায় রাখলো ৷তারপর বাকি অর্ধেক জায়গায় রাখা কাপড় গুলো কয়েকটা ব্যাগে ভরে নিল ৷

আবরার বাড়ীর সবার সাথে আড্ডা দিয়েছে ৷সাদিও এসে ছিল আবরার সাথে দেখা করতে ৷রাত দশটা বেজে গেছে আবরার ঘরে বসে আছে ৷তার খুব রাগ হচ্ছে কারো উপর ৷সে রাগে মাথা নিচু করে বসে আছে ৷

অন্যদিকে রাই মিশকার ঘরে বসে আছে ৷সে আবরার ঘরে যাবে না ৷ আনিলা বেগম অনেকক্ষন ধরে রাইকে বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি করায় ৷

রাই ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে ৷চিরচেনা ঘরটাতে আজ প্রবেশ করতেই তার ভয় করছে ৷রাই ঘরে যেয়ে দেখলো আবরার ঘরে নেই ৷রাই বিছানার এক কোনে যেয়ে শুয়ে পড়তে গেল ৷রাই আবরার সামনা সামনি হতে চায় না ৷রাই বিছানাতে শুয়ে পড়বে এমন সময় একটা পুরুষনালি কন্ঠ তার কানে ভেসে এলো ৷রাই পেছনে তাকিয়ে দেখলো আবরার কঠিন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷আবরার বলল

তুমি আমার বেডে কি করছো ৷

রাই কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলল আমি তো এখানেই ঘুমাই প্রতিদিন ৷

মানে তুমি এতদিন এখানে ঘুমিয়েছো আবরার বলল ৷

রাই মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল ৷

আবরার চোখে এক রাশ ঘৃনা থাকলেও রাইয়ের চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা ৷আবরার আবারো বলল আজ থেকে আর এখানে ঘুমাতে পারবে না তুমি ৷

মলিন কন্ঠে রাই বলল তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো ৷

ডিভানে ঘুমাবে তুমি ৷আমার ঘরে তোমার জায়গা হবে না ৷

রাইয়ের ছোট মনে কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে ৷রাই নিজের জায়গায় দাড়াতে পারছে না ৷তার খুব কষ্ট হচ্ছে ৷আবরার কথা গুলো বলে কাবার্ড খুলল তারপর একটা পেপার রাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল এই পেপারে সাইন করে দাও ৷

রাই বলল এটা কিসের পেপার ৷

আবরার কাঠ কাঠ গলায় বলল ডিবোর্স পেপার ৷তুমি এই বাড়ীতে আর চার মাস থাকতে পারবে ৷তারপর তুমি চলে যাবে ৷ আবরার কাবার্ড খুলে একটা প্যাকেট বের করলো ৷তারপর আবরার বলল এখানে দেনমোহরের সব টাকা আছে ৷চার মাস পরে চলে যাবে তুমি আমাকে মুক্তি দিয়ে ৷এখন পেপারে সাইন করে দাও ৷

রাই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলল এখন সাইনটা না করলে হয় না ৷চার মাস পরেই না হয় সাইনটা করবো ৷

আবরার বলল না এখনই করে দাও ৷তোমাদের মতো মেয়েদের বিশ্বাস নেই ৷তোমরা ছেলেদের ফাসাঁতে সব করতে পারো ৷এখন তাড়াতাড়ি সাইন করে দাও ৷

রাই কথা বাড়ালো না ৷চোখের পানি মুছে সাইন করে দিল পেপারে ৷রাই সাইন করতেই আবরার পেপারটা নিয়ে গেল ৷তারপর বলল এখন যাও ঘর থেকে ৷আর শোন তোমার জামা কাপড় আর কাবার্ডে রাখতে পারবে না ৷আমি ব্যাগে ভরে রেখেছি ৷ঘরের অন্য কোথাও রেখে দিও ৷রাই নিজের কান্না আটকে রাখলো যতটা সম্ভব ৷সে আবরার সামনে দুর্বল হবে না ৷রাই শীতের মধ্যে চলে গেল ডিভানে একটা বালিশ আর কম্বল নিয়ে ৷

চলবে…

#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট:৫

হাড় কাপাঁনো শীতের মধ্যে দাড়িয়ে রাই ৷ স্বচ্ছ থাই দরজায় বার বার আঘাত করছে সে ৷রাই দুঃখ ভরা কন্ঠে বলল

আবরার দয়া করে দরজাটা খুলুন ৷আমি বাইরে থাকতে পারছি না ৷আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ৷আমি ফ্লোরে শুয়ে থাকবো ৷তবুও আমাকে ভেতরে যেতে দিন ৷আবরার আমার কথা শুনছেন ৷আমি ঠান্ডা বাতাসে ঘুমাতে পারছি না ৷আমার মাথায় খুব ব্যাথা করছে ৷

রাইয়ের কথা গুলো আবরার শুনতে পারছিল ৷কিন্তু সে বিছানা থেকে উঠছে না ৷রাইয়ের যা ইচ্ছা হোক তাতে তার কি ৷

এতটা নিষ্ঠুর হবেন না ৷একটু দয়া করুন আমার উপর ৷আবরার অন্তত্য মাথা ব্যাথার ঔষুধটা দিন আমাকে ৷আমি আর সহ্য করতে পারছি না ৷

এবার আবরার ভিষন রাগ হলো ৷নিজেও ঘুমাচ্ছে না আর তাকেও ঘুমাতে দিচ্ছে না ৷আবরার রাগ হয়ে দরজার কাছে গেল তারপর বলল

এভাবে চিৎকার করছো কেন ৷অভদ্র লোকের মতো চিৎকার করে আমার ঘুমের বারোটা না বাজালে শান্তি হচ্ছিল না ৷

আবরার বাইরে প্রচুর ঠান্ডা বাতাস ৷আমি একটুও ঘুমাতে পারছি না ৷আমার মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে ৷একটা ঔষুধ দিন না প্লিজ ৷

কি ভেবেছ আমি কিছু বুঝি না ৷সব তোমার রুমে ঘুমানোর ধান্দা ৷তাড়াতাড়ি ঔষুধ নাও আর চলে যাও ৷রাই ঔষুধের পাতা থেকে একটা ঔষুধ নিল ৷তারপর আবার ডিভানে চলে গেল ৷কিন্তু অশ্রুসজল চোখে আবরার দিকে একবার তাকিয়ে ছিল ৷আবরার রাইয়ের সেই চোখ কি দেখে ছিল ৷রাই ডিভানে যেতেই আবরার আবারো দরজা আটকে দিল ৷একটু একটু করে রাত পার হয়ে গেল ৷কিন্তু রাইয়ের চোখে ঘুম ধরা দিল না ৷শেষ রাতের দিকে রাই ঘুমিয়ে গেল ৷

এই মেয়ে আর কতক্ষন ঘুমাবে ৷আবরার চিৎকারে রাইয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷ আমার মা বাবাকে দেখাতে চাও যে আমি তোমাকে সারারাত বাইরে রেখেছি তাই না ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে রইলো ঘুম ঘুম চোখে ৷তোমাদের মতো মেয়েদের আমার ভালো করে চেনা আছে ৷এখন তাড়াতাড়ি ওঠো ৷রাই ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াস রুমে যাবে তখন আবরার বলল

আমাদের মধ্যে যা হয়েছে তা যেন মা বাবা না জানে বুঝেছো ৷

রাই আবরার দিকে তাকিয়ে রইল ৷রাই মুখে কিছু বলতে পারলো না ৷ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে রাইয়ের ৷ তবুও কাউকে কিছু বুঝতে দেবে না সে ৷

কিছুক্ষন আগে রাই নাস্তা করে বেড়িয়ে গেছে মিশকার সাথে ৷রাই আর মিশকা যাচ্ছে ৷হঠাৎ রাই মিশকাকে বলল

আপু গাড়ীটা একটু থামাতে বল না ড্রাইভার আংকেল কে ৷

কেন কিছু লাগবে মিশকা বলল ৷

রাই বলল আসলে আপু আমার একটু কাজ আছে ৷তুমি যাও আমি একটু পরে যাবো ৷

মিশকা রাইকে নামিয়ে দিল ৷আর যাওয়ার সময় রাইকে সাবধানে থাকতে বলল ৷

মিশকার গাড়ী যেতেই রাই একটা রিকশা ডেকে নিল ৷তারপর রওনা দিল হাসপাতালের দিকে ৷

রাই এখন বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে ৷ডাক্তার রাইকে বলল

আপনার মাথা ব্যাথা আজ কত দিন যাবত ৷

আজ প্রায় ছয় মাস ম্যাডাম ৷

এতদিন মাথা ব্যাথা আর আপনি এখন ডাক্তারের কাছে এসেছেন ৷আর কোনো উপসর্গ আছে আপনার ৷

মাঝে মাঝে আমার জ্বর আসে রাতে ৷আজকাল মাথার পেছনে খুব ব্যাথা করে ৷বেশিক্ষন বসে থাকতে পারি না ৷আর দুই দিন আগে নাক থেকে রক্ত এসে ছিল ৷

আপনাকে আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি ৷এগুলো তাড়াতাড়ি করে আমার কাছে আসবেন ৷একদম দেরি করবেন না ৷

রাই চেম্বার থেকে বের হয়ে টেস্ট গুলো তাড়াতাড়ি করিয়ে নিল ৷টেস্ট করার পর রাই আবারো কলেজের দিকে রওনা দিল ৷মিশকা ক্লাস থেকে বের হয়ে রাইকে না পেলে সন্দেহ করবে ৷রাই সিএনজি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল কলেজে ৷

অপরদিকে আবরার হাজার চেয়েও গাড়ী ব্রেক করতে পারছে না ৷আজ বাবার অফিসে সে এসেছে ৷আফজাল খান আবরারকে ব্যবসার হাল ধরতে বলছেন ৷আবরার আসার সময় নতুন গাড়ী নিয়েই অফিসে এসেছে ৷কিন্তু গাড়ীটা ব্রেক কেন করছে না ৷সেটাই আবরার বুঝতে পারছে না ৷বার বার ব্রেক করতে চেয়েও ব্যর্থ সে ৷আবরার গাড়ীর সামনে হঠাৎ একটা ট্রাক চলে আসে ৷আবরার নিজের গাড়ী ঘুড়িয়ে অন্য দিকে নিয়ে যায় ৷কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না ৷আবরার গাড়ীটা বিরাট বড় একটা গাছের সাতে ধাক্কা খায় ৷

রাই আর মিশকা কিছুক্ষন আগে বাসায় এসেছে ৷রাই রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল ৷রাই নিচে যেতেই দেখলেন আফজাল খান কাউকে কল করছে ৷তার মুখে চিন্তার ছাপ ৷রাই আফজাল খানের পাশে বসলো ৷তারপর বলল বাবা আপনাকে চিন্তিত লাগছে ৷কিছু কি হয়েছে ৷

আফজাল খান হালকা হেসে বললেন না মা কিছু হয় নি ৷আবরার ফোন ধরছে না ৷তাই একটু চিন্তা হচ্ছে ছেলেটার জন্য ৷যাও খেয়ে নাও এখন ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here