শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,বোনাস_পার্ট,০৩

0
835

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,বোনাস_পার্ট,০৩
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#বোনাস_পার্ট

(গল্পের নিচে কিছু কথা লেখা আছে ৷সবাই দয়া করে একটু কষ্ট করে পড়ে যাবেন ৷)

রাই জানালার পাশে বসে আছে ৷দূর আকাশের দিকে তার দৃষ্টি ৷চোখের কোনে পানি শুকিয়ে দাগ হয়ে গেছে ৷ রাইকে বিষন্ন দেখে সায়মা তার ঘাড়ে হাত রাখতেই কিছুটা চমকে গেল রাই ৷সায়মার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারো বাইরে তাকালো রাই ৷কোনো কিছুই যেন তার ভালো লাগছে না ৷সায়মা রাইকে আদুরে গলায় বলল ,

“এবার আমাকে শুরু থেকে বলতো কি হয়েছে ৷ কাকু তো এমন না ৷হঠাৎ করেই তোকে কেন বাড়ী থেকে বের করে দিল ৷ কি হয়েছে সবটা খুলে বল আমাকে ৷”

রাই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল ,

“দুই দিন আগে বিকেলের দিকে আমি রান্না ঘরে নিজের জন্য নাস্তা তৈরি করছিলাম ৷ বাসায় তেমন কেউ ছিল না ৷ আমি , আপু , বড় ভাবি আর মা ছিলাম বাড়ীতে ৷ হঠাৎ করেই আপু আমাকে তার ঘরে ডাক দেয় ৷ আপুর ঘরে যেতেই আপু আমাকে বলে সে স্যুপ খাবে ৷ আমি তার কথা মতোই স্যুপ বানিয়ে নিয়ে যাই ৷ আপুকে স্যুপ দিয়ে আমি আবার নিজের কাজ করতে চলে আসি ৷ সব ঠিকঠাক ছিল ৷ হঠাৎ করেই আপুর ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসে ৷ আমি প্রথমে দৌড়ে আপুর ঘরে যাই ৷ঘরে যেয়ে দেখি আপু কাদঁছে নিজের পেট ধরে ৷ এর মধ্যে মা আর বড় ভাবিও চলে আসে ৷ আপুর নাকি খুব পেট ব্যাথা করছে ৷ আমরা তাড়াতাড়ি বাবাকে কল করি ৷বাবা বাইরে থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে ৷ আমরা আপুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ৷ততক্ষনে বড় ভাইয়া আর মেজো ভাইয়া চলে আসে ৷ আপুকে হাসপাতালে নেওয়ার পর জানতে পারি আপুর পেটের বাচ্চাটা নাকি নষ্ট হয়ে গেছে ৷ মেডিকেল টেস্টের পর ডাক্তার জানায় আপুর বাচ্চা নাকি ঔষুধের প্রভাবে মারা গেছে ৷ কিন্তু আমাদের জানা মতে আপু ঐ রকম কোনো কিছুই খায় নি ৷ অতঃপর ডাক্তার আপুকে জিজ্ঞাসা করে ব্যাথা শুরুর আগে সে কিছু খেয়েছে কি না ৷ আপু বলে দেয় সে স্যুপ খেয়ে ছিল ৷ বাবা সেই স্যুপ মেডিকেল টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠায় ৷আর আপুর শ্বশুড় শ্বাশুড়ী সবাইকে খবর পাঠানো হয় ততক্ষনে ৷ আপুকে একদিন হাসপাতালে রাখার পর বাসায় নিয়ে আসে বাবা ৷ আর আজ ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসে ৷রিপোর্ট অনুযায়ী স্যুপের মধ্যে বাচ্চা নষ্ট করার ঔষুধ মেশানো আছে ৷ আর সেই স্যুপটা আমি নিজে বানিয়েছি ৷ কিন্তু আমি জানি না ওটা কিভাবে এলো ৷ আমি শুধু এতটুকু জানি ৷আমি কোনো প্রানকে হত্যা করি নি ৷এত করে বোঝাতে চাইলাম তাও কেউ বুঝলো না ৷”

সায়মা উত্তেজিত কন্ঠে বলল ,

“কি সব বলছিস তুই ৷আচ্ছা মনে করে দেখতো ঐ দিন তুই ছাড়া কি আর কেউ ছিল রান্না ঘরে !”

“কেউ ছিল না ৷ মা নিজের ঘরে শুয়ে ছিল ৷ ফুলিকে দোকানে পাঠিয়ে ছিল বড় ভাবি ঔষুধ কিনতে ৷আর বড় ভাবি তার ছেলের সাথে ঘরে খেলা করছিল ৷আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না রান্নাঘরে ৷”

সায়মা রাইয়ের ঘাড়ে হাত রেখে বলল ,

“আবরার স্যার কি জানেন এই ব্যাপারে ?”

রাই টলমল চোখে সায়মার দিকে তাকিয়ে বলল ,

“জানি না সে কিছু জানে কি না ৷তবে মানুষটা ভেঙ্গে পড়বে রে ৷ মানুষটা এগুলো সহ্য করতে পারবে না ৷উপর থেকে যতই কঠিন হয়ে থাকুক ৷আমি তো জানি উনি কতটা ভালোবাসেন আমাকে৷ আমি কোন মুখে মানুষটার সামনে দাড়াবো ৷ কিছু মাথায় আসছে না ৷”

রাই সায়মাকে ধরে আবারো কাদঁতে লাগলো ৷সায়মা রাইয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ৷

অপর দিকে কেউ একজন ফোনে কথা বলছে ৷ হাসতে হাসতে সে বলল ,

“আরে চিন্তা করিস না ৷ এবার এমন চাল দিয়েছি যে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙ্গবে না ৷নিজের অধিকার খুব ভালো মতো বুঝে নিতে পারি আমি ৷ সামনে দেখে যা আরো কি কি হয় ৷রাইয়ের কাছ থেকে ওর সব সুখ কেড়ে নেব আমি ৷ ওকে লাশ বানিয়ে রাখবো ৷ এমন হাল করবো না পারবে বলতে ৷আর না পারবে সহ্য করতে ৷ এখন খোঁজ নে তাড়াতাড়ি কোথায় আছে ৷ মাত্র ওর পাখা কেটেছি ৷ এবার ওকে আস্তে আস্তে শেষ করার পালা ৷আর আমাদের আবরার কানে তার প্রিয়তমার করা কুকর্মের কথা পৌছানোর ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি ৷”

কথা গুলো বলেই ফোনটা রেখে দিল এই অপরিচিত মানুষটা ৷

(অনেকেই বলছেন কাহিনী বুঝতে পারছেন না ৷ কে বাচ্চা নষ্ট করলো ?কেন নষ্ট করলো? গল্পের পার্ট দিলাম মাত্র দুইটা ৷দুই পার্টে কি সব রহস্য প্রকাশ করা সম্ভব বলেন ৷ আপনি পড়তে থাকেন ৷আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে ৷ আর রহস্য সমাধান হতে সময় লাগবে ৷ দয়া করে ধৈর্যহারা হবেন না ৷)

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৩

রাত ঘড়িতে নয়টা বাজে ৷ দূর দাড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের দিকে রাই তাকিয়ে আছে ৷ ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ব্যস্ত নগরী দেখছে সে ৷ কোনো কিছুই থেমে নেই ৷ কারো জন্য কিছু থেমেও থাকে না ৷ আচ্ছা সে যদি না থাকে তাহলে কি হবে ? সবাই কি ভুলে যাবে তাকে ? রাই ভেবে পায় না ৷ ধ্যান ভেঙ্গে যায় সায়মার স্বামী অনিকের ডাকে ৷ রাই দ্রুত চোখের কোনে লেগে থাকা পানিটা মুছে নেয় ৷ সুতির ওরনা টা ঠিক মতো শরীরে পেচিঁয়ে বাইরে বের হয় ৷ বাইরে এসে দেখে সায়মা টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে ৷ আর একটা চেয়ারে অনিক বসে আছে ৷ রাইকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দেয় সে ৷ একটা সময় অনেক সাহায্য করেছে রাই তাকে ৷ তা কখনো ভুলবে না সে ৷ অনিক রাইকে ডাক দেয় ,

“আরে রাই দাড়িয়ে আছো কেন ? তোমার বান্ধুবী কিন্তু সব তোমার পছন্দের রান্না করেছে আজ ৷ তাই দ্রুত খাওয়া শুরু করো ৷”

রাই একটা চেয়ার টেনে বসে পরে ৷ রাই হয়তো এই ব্যবহার গুলো আশা করে নি ৷ লোকে হয়তো ঠিকই বলে আপনের থেকে পর ভালো ৷ আর পরের থেকে জঙ্গল ভালো ৷ তাই হয়তো তার আপন মানুষ গুলো তাকে বোঝে নি ৷

অপর দিকে কেউ একজন রাইয়ের ফোনে কল দিয়েই চলেছে ৷ কিন্তু বারবার ফোনটা বন্ধ বলছে ৷ মানুষটা অধৈর্য হয়ে পরে ৷ আজ সারা দিন কোনো কথা হয় নি রাইয়ের সাথে তার ৷ ভার্সিটিতেও আজ তিন দিন মেয়েটা যায় না ৷ মেয়েটা কি তাকে এড়িয়ে চলছে ! যদি এমন হয় তাহলে কানের নিচে দেবে দুই চড় ৷ মেয়েটাকে হাজার বার বকা দিয়েও মানুষ করতে পারলো না ছেলেটা ৷ আর এই ছেলেটা আর কেউ নয় আবরার খান জয় ৷ আবরার আকশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় ৷ তারপর ফোন দেয় রাইয়ের বড় ভাই রায়হান মাহমুদের ফোনে ৷ কিন্তু সেও ফোন রিসিভ করে না ৷ এবার আবরার বেশ রেগে যায় ৷ সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস নিতে হয় ৷ সময় পেলে বাবার অফিসেও যেতে হয় ৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের উপর থাকতে হয় ৷ সারাদিন পর যদি প্রিয় মানুষটার খোঁজ ঠিক মতো না পাওয়া যায় ৷ তাহলে যে কোনো মানুষের রাগ হবে প্রচুর ৷ আবরার আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না ৷ নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ৷

আবরার সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিজের মাকে বলল ,

“মা আমি একটু রায়হান ভাইদের বাসায় যাচ্ছি ৷ চলে আসবো তাড়াতাড়ি ৷ তোমরা ঘুমিয়ে যেও ৷ আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না ৷”

আবরার মা আনিলা বেগম পেছন থেকে বললেন ,

“তুমি ঐ বাড়ীতে যেতে পারবে না আবরার ৷”

আবরার পেছনে ফিরলো ৷ সে কিছু বলবে তার আগেই আনিলা বেগম বললেন ,

“আমি জানি তুমি কেন যেতে চাইছো ৷ কিন্তু তুমি যার জন্য যাবে ৷ সে এখন আর ঐ বাড়ীতে নেই ৷ এমন কি কোথায় আছে সেটাও কেউ জানে না ৷”

আবরার কিছুটা অবাক হয়ে গেল তার মায়ের কথা শুনে ৷ আবরার কিছু বুঝলো না ৷ তাই নিজের মায়ের কাছে যেয়ে বলল ,

“তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না মা ৷”

“রাইকে বাড়ী থেকে আজ সকালে বের করে দিয়েছে ওর বাবা ৷”

আবরার চমকে ওঠে মায়ের কথায় ৷ সে যেন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে ৷ আনিলা বেগম ছেলের কাছে এসে বললেন ,

“তোকে যে কিভাবে কথা গুলো বলবো বাবা জানি না ৷ রাইয়ের সাথে ওর মা বাবার এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই ৷তিন দিনে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে ৷ তুই শুনলে বিশ্বাস করবি না বাবা ৷ তোর বড় ভাইকেও কিছু জানাই নি ৷”

আবরার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,

“যা বলার পরিষ্কার করে বলো মা ৷ আমি তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না ৷”

আবরার মা ছেলেকে সোফায় বসিয়ে নিজের ঘরে গেলেন ৷ একটু পরে ফিরে এলেন একটা ফাইল হাতে নিয়ে ৷ তার সাথে আফজাল খান ও এসেছে ৷আবরার অধৈর্য হয়ে পড়েছে ৷ অতঃপর নিজের মায়ের কাছে যেয়ে বলল ,

“মা দয়া করে আমাকে তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছে ৷”

আফজাল খান ছেলেকে বসালেন ৷তারপর এক এক করে সব বলতে লাগলো ৷

সব শুনে আবরার শরীর থেকে ঘাম ছুটে গেছে ৷ এসির মধ্যে থাকার পরেও সে ঘেমে গেছে ৷ আবরার হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলল ,

“আমি এই সব বিশ্বাস করি না ৷ রাই এমন টা করতেই পারে না ৷”

আফজাল খান ছেলের কাছে যেয়ে বললেন ,

“রাই নিজের হাতে জেরিনের এত বড় ক্ষতি করেছে ৷তাও তুমি ওর পক্ষে কথা বলছো ৷ তোমাকে আর কি বলবো ৷ তুমি তো অনেক আগেই পাগল হয়ে গেছো ৷ বিশ্বাস না হলে রিপোর্ট গুলো দেখে নাও আবরার ৷”

আবরার বাবার কথা মতো রিপোর্ট গুলো দেখতে লাগলো ৷ আবরার রিপোর্ট গুলো দেখে নিজের ঘরে চলে গেল ৷ একটা কথাও বললো না ৷অপর দিকে রাইয়ের বাবা নিজের ঘরে শুয়ে আছেন ৷ তার পাশে সবাই বসে আছে ৷ তার শরীরটা ভালো নেই বিকেলের পর থেকে ৷ বিকেলের পর থেকে বুকটা নাকি ভিশন ব্যাথা তার ৷ তাই বড় ছেলে রায়হান পরিচিত একজন ডাক্তারকে নিয়ে এসেছে ৷ ডাক্তার তাকে চেক আপ করে বললেন ,

অতিরিক্ত চিন্তার জন্য বুকে ব্যাথা বেড়েছে হয়তো ৷ রোগীর এখন চিন্তা মুক্ত থাকা জরুরী ৷ এর আগেও যেহেতু একবার হার্টে অপারেশন হয়েছে ৷তাই একটু ঝুকি কিন্তু আছে ৷ আমি কিছু ঔষুধ লিখে দিলাম ৷ এগুলো নিয়ে এসে খাইয়ে দিন ৷

ডাক্তার চলে যেতেই রাইয়ের বড় ভাবি বলল ,

রায়হান আমি তোমাকে বারবার বলেছিলাম ৷ রাইকে বের করে দিও না ৷ মেয়েটা না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছে ৷তার জন্য বের করে দিতে হবে কেন ৷ দেখেছো বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৷ আমার কথা তো কখনো শুনেও শুনতে চাও না ৷ এখন যা ইচ্ছে করো তোমরা ৷

রাইয়ের ভাবি চলে গেল নিজের ঘরে ৷ রাইয়ের মা আচঁলে মুখ গুজে কাদঁতে লাগলেন ৷ তার সুখের সংসারে যে কার নজর লাগলো তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না ৷ বড় মেয়ে নিজের বাচ্চাকে হারিয়ে পাথর হয়ে গেছে ৷ কারো সাথে কথা বলে না ৷ ছোট মেয়েকে বাড়ী ছাড়তে হয়েছে ৷ আর এখন স্বামী অসুস্থ ৷ চোখের সামনে তার সংসারে ফাটঁল ধরেছে ৷যা চাইলেও তিনি থামাতে পারছেন না ৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here