শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,২৪,২৫

0
836

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,২৪,২৫
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_২৪

রায়হান নিজের মা ,বাবাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় ৷ তারপর আবরারকে সাথে নিয়ে সাদমানের দেওয়া কফিশপে চলে গেল ৷ কিন্তু সেখানে যেয়ে জানতে পারলো রাই কক্সবাজার চলে গেছে ৷রায়হান বারবার রাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয় ৷ ফোনটা বারবার বন্ধ বলছে ৷ অবশেষে ক্লান্ত হয়ে রাত বারোটার দিকে বাসায় ফিরে আসে ৷বাসায় এসে দেখে আজাদ মাহমুদ আর তনিমা বেগম বসে আছে ৷ পাশেই ছোট ভাই ফয়সাল দাড়িয়ে আছে ৷ রায়হান তাদের দিকে তাকিয়ে বলল ,

“এত রাত হয়ে গেছে আর তোমরা বসে আছো ৷”

কেউ কোনো কথার জবাব দিল না ৷ আজাদ মাহমুদ রায়হানের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিল ৷রায়হান কাগজটা হাতে নিয়েই দেখলো একটা চিঠি ৷ রায়হান পড়তে শুরু করে চিঠিটা ৷

প্রিয় বাবা ,

কেমন আছো তুমি ? আমি জানি তুমি খুব ভালো আছো ৷ কিন্তু তোমার মুখ থেকে কথাটা আর শুনতে পারলাম না ৷আমার তোমাদের কারো উপর অভিযোগ নেই ৷ কারন অভিযোগ প্রিয় মানুষের প্রতি করা যায় ৷ কিন্তু আমি তো তোমাদের প্রিয় নই ৷ তাই অভিযোগ করতে চাই না ৷ তোমাকে আজ একটা প্রশ্ন করতে চাই বাবা ৷ তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছো ?নাকি সব লোক দেখানো ছিল ৷ আচ্ছা বাবা আমার চোখের পানি কি এতটাই মূল্যহীন ছিল ৷ যে আমার কষ্ট তোমরা অনুভব করতে পারো নি ৷ আমাকে যেই দিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলে ৷ ঐ দিন আমি বুঝে ছিলাম টাকার মূল্য ৷ বাবার বাড়ী ,ভাইয়ের বাড়ী অথবা স্বামীর বাড়ী কোনো বাড়ী মেয়েদের নিজের বাড়ী হয় না ৷ চাইলেই তাদের ছুড়ে ফেলা যায় ৷ মিথ্যে অপবাদ নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বের করে দিলে ৷তুমি জানো তারপর কি হয়েছে আমার সাথে ৷ তুমি কিছু জানো না বাবা ৷ চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ছিলাম ৷ সেখানে যখন জানলো আমি তোমাদের সাথে থাকি না ৷ তখন আমাকে খারাপ কাজের অফার দেওয়া হয় ৷ আমাকে মুহূর্তেই ওরা রাস্তায় এনে দাড় করায় ৷ সায়মার বাসা থেকে যেই রাতে বের হয়ে যাই ৷ ঐ রাতে আমি দুইজন লোক দ্বার নির্যাতনের শিকার হই ৷ তারা রাতের আধারে আমাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে ৷ আমি সেই দিন অনেক কেদেঁ ছিলাম ৷ কিন্তু আমার হয়ে কেউ আসে নি ৷ অন্ধকার রাতে যখন তারা আমাকে ধর্ষনের চেষ্টায় ব্যস্ত ৷ ঠিক তখন আমি খুব করে চাই ছিলাম তোমাদের ৷ কিন্তু কাউকে পাই নি ৷ অবশেষে একটা বোবা প্রানীর জন্য বেচেঁ গেলাম ৷ সেই রাতে কোনো রকম বেচেঁ যাই ধর্ষনের হাত থেকে ৷কিন্তু সেই দিনের পর আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি বাবা ৷ কিন্তু আমি এতটাই অসহায় যে নিজের মানুষদের বলতে পারি নি ৷ পুলিশের কাছে বিচার চাইতে পারি নি ৷ যাই হোক শুনলাম আবরার বিয়ে করছে ৷ সে সুখে তাই আমিও অনেক খুশি ৷ তবুও চোখের আজ পানি আসছে ৷ তার জন্য আমার শুভ কামনা ৷ এই শহরে আমার আর আপন কেউ নেই ৷ আমি চলে যাচ্ছি তোমাদের রেখে ৷ চলে যাবো এটা ভাবতেই তোমার কথা বড্ড মনে হচ্ছে ৷ হয়তো তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসতাম ৷ নিজেকে আর প্রমান করতে চাই না ৷শুধু বলবো নিজের খেয়াল রেখো ৷ ঐ দিন হাসপাতালের খারাপ ব্যবহারের জন্য দুঃখিত ৷ আমি হাপিয়ে উঠে ছিলাম ৷ আর অপমান নিতে পারছিলাম না ৷ আমাকে মাফ করে দিও ৷ আর কখনো যদি বুঝতে পারো আমি নির্দোষ ছিলাম ৷ তাহলে ভুল করেও আমাকে খুজতে এসো না ৷ কারন আমি প্রিয়জনদের জন্য মরে গেছি ৷আর এই চিঠিটা যখন তোমার হাতে পৌছাবে ৷ তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে ৷ তাই আমাকে খুজতে এসো না ৷ নিজের শরীরের যত্ন নিও ৷ঔষুধ নিতে ভুল করো না ৷ রোদে বেশি বের হবে না ৷ তোমার শরীর খারাপ করবে ৷আর আপুকে বলে দিও আমি সত্যি কিছু করি নি ৷ আম্মুর রান্না ঘরে গেলে একদম হুশ থাকে না ৷ তাই প্রায় সময় হাত পুড়িয়ে ফেলে ৷ তাই সাবধানে কাজ করতে বলবে ৷রাফীকে একটু খেয়াল করে রেখ ৷ কারন এরপর আমি আসতে পারবো না ৷ আর ঐ দিন ওকে টাকার জন্য রক্ত দেই নি ৷ ওকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি ৷ তাই ছুটে গিয়ে ছিলাম ৷ওর খেয়াল রেখ ৷ আর বড় ভাইকে বলো সিগারেট কম খেতে ৷ নিজেদের খেয়াল রেখ ৷ আর এরপর কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে তোমার কয় সন্তান ?তাহলে উত্তরে বলে দেবে চার সন্তান তোমার ৷ তার মধ্যে একজন মারা গেছে ৷ ভয় পেও না তুমি ৷ কখনো সম্পত্তির ভাগ বসাতে যাব না ৷ শুধু তোমরা ভালো থেকো ৷

ইতি
রাই

রায়হান চিঠিটা পড়ে শেষ করতেই রাইয়ের বাবা বললেন ,

“বাসায় আসতেই ফুলি দরজা খুলে দেয় ৷ তারপর বলল আমাদের জন্য নাকি একটা পার্সেল এসেছে ৷ তোর ছোট ভাই ফ্রেশ হয়ে পার্সেলটা বের করে ৷ প্যাকেটের ভেতর একটা পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক পায় ৷ যেটা তুই ওকে দিয়েছিলি ৷ গত বছর জন্মদিনে দেওয়া চেইন আর তোর দেওয়া মোবাইল ফোনটা দিয়ে দিয়েছে ৷ তার সাথে এই চিরকুট ৷ মেয়েটা বড্ড অভিমান করে চলে গেল রে বাপ ৷বাপ হয়েও মেয়েকে বুঝলাম না ৷ মেয়েটাকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ছেড়ে দিলাম ৷”

আজাদ মাহমুদ চোখের পানি আড়াল করতে ঘরে চলে যায় ৷রায়হান শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ৷

সকাল ঘড়িতে দশটা ৷ রায়হান নাস্তা করছে ৷ একটু পরেই আবরারকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবে ৷ঠিক তখনই রায়হানের ফোন বেজে ওঠে ৷ রায়হান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদমান কল করেছে ৷রায়হান ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাদমান বলল ,

“রায়হান তোর বাসার অবস্থা কি এখন ?আমি ভাবতেই পারছি না তুই এত তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করবি ৷”

“আমার বাসার অবস্থা আবার কি হবে ?আমি আর আবরার একটু পর বের হবো কক্সবাজরের উদ্দৈশ্যে ৷ রাইকে ঠিক বুঝিয়ে নিয়ে আসবো ৷ দরকার হলে পা ধরে মাফ চাইবো ৷ যা করতে হয় করবো ৷তবুও নিয়ে আসবো ৷”

“বেচেঁ থাকলে তো নিয়ে আসবি রায়হান ৷”

“মানে ! কি বলছিস তূই ? বেচেঁ থাকলে নিয়ে আসবো মানে ৷”

“তুই একবার টিভি অন কর ৷ আর সোসাল মিডিয়া চেক কর ৷ যা বোঝার তুই বুঝে যাবি ৷ রাই হয়তো আর বেচেঁ নেই ৷ কাল রাতে চট্টগ্রামে দুইটা বাসের এক্সিডেন্ট হয়েছে ৷তাতে প্রায় সবাই মারা গেছে ৷ যাত্রীদের ফোন আর সাথে থাকা ডকুমেন্ট খবরে দেখানো হচ্ছে ৷ আমি মাত্র রাইয়ের ছবি দেখেছি খবরে ৷ তার সন্ধান চাইছে ৷তুই তাড়াতাড়ি চেক কর ৷”

রায়হান দৌড়ে টিভির কাছে যায় ৷ আজাদ মাহমুদ ছেলের এমন আচরনের কারন খুজে পায় না ৷রায়হান খবরের চ্যানেলে যেতেই ধপ করে বসে পরে ৷ টিভিতে রাইয়ের রক্তাক্ত মুখের ছবি ভেসে উঠেছে ৷ রাইয়ের গলায় একটা কাচঁ ডুকে আছে ৷ সেখানে তাজা রক্তে লাল হয়ে আছে ৷ পুরো শরীর রক্তে লাল ৷ চেহারার অবস্থা ভালো না ৷ তার নাম পরিচয় কেউ জানে না ৷ তাই স্বজনদের যোগাযোগ করতে বলছে ৷ রাইয়ের বুকের সাথে একটা কুকুর শক্ত করে জড়িয়ে আছে ৷ যেন একে অন্যের অবলম্বন তারা ৷

রাইয়ের মা মেয়ের এমন দশা দেখে একটা চিৎকার করে ৷ তারপর ধপ করে নিচে পরে যান ৷ রাইয়ের বাবা নিজের বুক চেপে ধরেন ৷ ফয়সাল বাবাকে ধরে বলল ,

“বাবা তুমি শান্ত হও কিছু হবে না ৷ আমি ঔষুধ নিয়ে আসছি ৷”

ফয়সাল ছুটে যায় বাবার বুকে ব্যাথার ঔষুধ নিয়ে আসতে ৷ আর ফুলি তনিমা বেগমের জ্ঞান ফিরাতে চেষ্টা করে ৷ রায়হান রান্না ঘর থেকে পানি নিয়ে আসে ৷ তারপর বাবাকে ঔষুধ খাইয়ে দেয় ৷ তারপর মায়ের জ্ঞান ফিরাতে চেষ্টা করে ৷

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_২৫

বিকেল ঘড়িতে চারটা ৷ চট্টগ্রামের সদর হাসপাতেল মর্গের সামনে রাইয়ের পরিবার দাড়িয়ে আছে ৷মর্গের ভেতর স্বজনদের চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ৷মৃত লাশ গুলো শনাক্ত করার পর স্বজনরা চিৎকার করছে ৷ আবরার ফ্লোরে বসে আছে ৷ মুখে কোনো কথা নেই তার ৷ মানুষটা যেন পাথর হয়ে গেছে ৷মর্গের ভেতর থেকে একজন হাসপাতাল কর্মী এসে বলল ,

“আপনাদের বর্ননা অনুযায়ী ভেতরে একটা লাশ আছে ৷ আপনারা চাইলে লাশটা দেখতে পারেন ৷ ”

এক এক করে সবাই ভেতরে প্রবেশ করলো ৷মর্গের ভেতরে আবছা আলো ৷ তার মধ্যে রক্তের গন্ধ ৷ হাসপাতালের লোকটা বলল ,

“ঊনত্রিশ নাম্বার লাশটা দেখুন ৷ বর্ননা অনুযায়ী ঐ লাশটা হতে পারে ৷ রাইয়ের বাবা দেখলো একটু দুরেই ঊনত্রিশ নাম্বার লাশটা একটা বেডে রাখা ৷ লাশের ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলে একটা কার্ডের উপর নাম্বার লেখা ৷ লাশের মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা ৷ তবে পা দুইটা বের হয়ে আছে ৷ পায়ের তলায় রক্ত জমাট হয়ে কালো বর্ন ধারন করেছে ৷রাইয়ের বাবা টলমল চোখে লাশটার দিকে এগিয়ে যায় ৷ নিজের সন্তানের মৃত্যু দেখার মতো কষ্ট এই দুনিয়াতে হয়তো আর কিছু হয় না ৷ এই পৃথিবীতে যেই বাবা সন্তানের লাশ কাধে নিয়েছে ৷ একমাত্র সেই বাবাই জানে ঐ লাশের কত ওজন ৷রাইয়ের বাবা লাশের মুখটা খুললো না ৷ চোখ থেকে অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়তে লাগলো ৷ মেয়ের লাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন আজাদ মাহমুদ ৷তারপর লাশের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,

“তোর মুখটা আজ সত্যি দেখতে ইচ্ছে করছে না রে মা ৷ বাবা উপর অভিমান করে চলে গেলি ৷ মা একবর উঠবি তুই ৷ কথা দিচ্ছি তোকে আর একা ছাড়বো না ৷ ওঠ না মা ৷ একবার ওঠ ৷”

রাইয়ের বাবা চিৎকার করে কাদঁতে শুরু করলেন ৷ লাশটা বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে বললেন ,

“রায়হান আমার মা কথা বলে না ৷ ওরে উঠতে বল বাপ ৷ আমার কলিজা পাখিটা আর কথা বলে না ৷ আল্লাহ তুমি আমাকে নিয়ে যাইতা ৷ কিন্তু আমার নিরপরাধ মেয়েটাকে কেন নিয়ে গেলা ৷রায়হান আমার রাইয়ের গায়ে আমি কখনো হাত তুলি নাই ৷ আমার রাই কত কষ্ট করছে ৷ ও আল্লাহ মেয়েটারে নিয়ে পুতুলের মতো খেললাম ৷ আমার মেয়েটারে শেষ করে দিলাম আল্লাহ ৷ আমার মা কাউকে বলতে পারে নাই কিছু ৷ আমারে বলতে বলতে পারে নাই আব্বা আমার কষ্ট হয় ৷ রায়হান আমার মেয়েটারে উঠতে বল ৷ ও আর কথা বলে না ৷ আমার মা আর বায়না করে না ৷ আমার মা আর আমার খেয়াল রাখে না ৷ আমাকে রেখে চলে গেছে ৷ আর আসবে না কোনো দিন ৷আমি আমার বুকের ভেতরটা কাকে দেখাবো ৷”

আবরার ঠাস করে ফ্লোরে পরে যায় ৷ আবরার ছোট ভাই ফারহান ভাইয়ের কাছে দৌড়ে যায় ৷ আবরার নিজের হুশে নেই ৷ আবরার মা ছেলেকে ধরে ডাকতে থাকে ৷ কিন্তু আবরার ওঠে না ৷ আবরার শরীরে খিঁচুনি শুরু হয় ৷ মুখ থেকে সাদা ফেনা বেড়িয়ে আসে ৷ হাত ,পা কাপঁতে থাকে অস্বাভাবিক ভাবে ৷চোখ উল্টে যায় তার ৷ আবরার মা ছেলের এমন বেহাল দশা দেখে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে ৷ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মর্গের ভেতর চিৎকার শুরু হয়ে যায় ৷ আবরারকে ধরে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ৷

আজাদ মাহমুদ লাশটাকে নিজের বুক মধ্যে ধরে বিরবির করতে লাগে ৷ রায়হান বাবার পাশে দাড়ায় ৷ তারপর লাশের মুখ থেকে কাপড়টা সরাতেই সবাই চমকে গেল ৷ এটা রাই নয় ৷ রায়হান বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

“এটাতো আমাদের রাই নয় ৷”

আজাদ মাহমুদ নিজের হুশে নেই ৷মেয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছেন ৷ তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ,

“তাহলে আমার মেয়ে কোথায় ৷ওরা কি রাইয়ের লাশটা নিয়ে আসে নি ৷ আমি কি দেখতে পাবো না ওকে ৷”

রায়হান বুঝলো বাবার সাথে কথা বলে লাভ নেই ৷ রায়হান মর্গের কর্মচারীকে ডাকতে লাগলো ৷ কর্মচারী আসতেই রায়হান বলল ,

“আপনি না জেনে অন্য একটা লাশ আমাদের কেন দেখালেন ?”

“দুর্ঘটনায় প্রায় সবাই মারা গেছে ৷ আর আপনাদের বর্ননা অনুযায়ী এমন একটাই লাশ ছিল ৷এখন আমার সাথে চলুন ৷ যারা বেচেঁ আছে তাদের মধ্যে দেখুন ৷”

আইসিইউ এর ভেতর রাই ভর্তি ৷ ডাক্তার তাকে দেখছে ৷ রাইয়ের জ্ঞান নেই ৷ অক্সিজেন চলছে তার ৷ পুরো মাথা ব্যান্ডেজ করা হয়েছে ৷ রাইয়ের অবস্থা সম্পর্কে এখনো কেউ কিছু জানে না ৷ কিছুক্ষন আগেই রাইকে রায়হান খুজে পেয়েছে ৷ ভেতরে একের পর এক ডাক্তার যাচ্ছে ৷ রাইয়ের পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পরেছে ৷ আবরারকে ডাক্তার দেখছে ৷ প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রনা মস্তিষ্ক নিতে পারে নি ৷ তাই খিঁচুনি হয়েছে ৷ আবরার জ্ঞান নেই ৷ ডাক্তার তাকে সেলাইন দিয়ে শুইয়ে দিয়েছে ৷অন্যদিকে একজন ডাক্তার আইসিইউ থেকে বের হতেই আজাদ মাহমুদ তার কাছে যায় ৷ তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“বাবা আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো ৷ ওর কিছু হয় নি তো ৷ ও কি আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে ৷”

ডাক্তার হতাশ কন্ঠে বলল ,

“দেখুন আপনাকে আমি মিথ্যা বলবো না ৷রোগীর অবস্থা ভালো না ৷ রোগীর মেরুদন্ডের তিনটা থোরাসিক কশেরুকা এবং দুইটা লাম্বার কশেরুকা খুব খারাপ ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে ৷ রোগীর কন্ঠনালীর অবস্থাও ভালো না ৷ গলায় কাচেঁর টুকরা ঢুকে বেশ আঘাত পেয়েছে ৷ ভোকাল কর্ডে আঘাত পেয়েছে ৷ এছাড়াও রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট হয়েছে ৷ রোগীর চেহারায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে ৷ বাম গালে ছয়টা সেলাই পড়েছে ৷ তার মধ্যে রোগী তেমন রেসপন্স করছে না ৷সব মিলিয়ে রোগীর বেচেঁ থাকার সম্ভাবনা খুব কম ৷ আর বেচেঁ গেলেও তিনি হয়তো আর কখনো দাড়াতে পারবেন না ৷ আর কন্ঠনালীতে আঘাত পাওয়ায় কথাও বলতে পারবেন না ৷ আর কখনো যদি জোড় করে কথা বলতে যায় ৷ তাহলে হয়তো সেটা ওনার জন্য ভালো হবে না ৷যদিও এখন ওনার বেচেঁ থাকাই বড় কথা ৷ আপনারা আল্লাহকে ডাকুন ৷ কারন এই মহা বিপদে উনি ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবেন না ৷”

অপরদিকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে রাইকে খুজে চলেছে সোহরাব ৷ যাকে পাচ্ছে তাকেই রাইয়ের ছবি দেখাচ্ছে ৷ সোহরাব একজন নার্সকে দেখেই দৌড়ে গেল ৷ সোহরাবের চোখ থেকে পানি পড়ছে ৷ সে নার্সকে রাইয়ের একটা ছবি দেখিয়ে বলল ,

“এই মেয়েটাকে কি এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ?একটু সাহায্য করুন প্লিজ ৷ বাস দুর্ঘটনার সকল মানুষকে নাকি এখানে নিয়ে এসেছে ৷ আমি এখানের কিছু চিনি না ৷ দুই ঘন্টা ধরে হাসপাতালের এই মাথা থেকে সেই মাথা আমি দৌড়াচ্ছি ৷ কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না ৷ আমাকে একটু দয়া করে সাহায্য করুন বোন ৷”

নার্স ভ্রু কুচঁকে বলল,

“আপনি রোগীর কি হন ৷”

“আমি ওর খুব কাছের মানুষ হই ৷”

“শুধু কাছের মানুষ হলে তো হবে না ৷ রোগীর আত্মীয় স্বজন হতে হবে ৷ নইলে ওনার কাছে যেতে দেওয়া হবে না ৷”

সোহরাব শত মানুষের মধ্যে মেয়ে নার্সের পা জড়িয়ে ধরে ৷ পা জড়িয়ে ধরে কাদঁতে কাদঁতে সোহরাব বলল,

“আমাকে একবার ওর কাছে নিয়ে চলুন ৷ ও যদি মরেও যায় ৷ তবুও আমি ওকে একবার দেখবো ৷ আমি কোনো সমস্যা করবো না ৷ আমাকে একটু দয়া করুন বোন ৷”

নার্সের মনে হয়তো দয়া হলো ৷ নার্স সোহরাবকে টেনে তুললো ৷ তারপর নার্স বলল ,

“আপনি যার ছবি দেখাচ্ছেন ৷ তার অবস্থা ভালো না ৷ আমি তার কাছেই যাচ্ছি ৷ আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন ৷ তবে রোগীর সমস্যা হবে এমন কিছু করা যাবে না ৷”

সোহরাব উঠে দাড়ায় ৷ তারপর নার্সকে অনুসরন করে যেতে থাকে ৷অতঃপর প্রিয় মানুষকে পেয়েই যায় সোহরাব ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here