মধ্যবিত্ত #পার্টঃ০৩

0
770

#মধ্যবিত্ত
#পার্টঃ০৩
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১১.

নীল রুমে এসে পড়ছে। তাকে অনেক পড়তে হবে৷ এই পড়াশোনা করেইতো তাকে সকল স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তার বাবার যে বড় ইচ্ছে ছেলে বড় ব্য*ব*সা*য়ী হবে। নীল এইসব ভাবছিলো ঠিক তখনি মেঘ এসে হাজির। মেঘ শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে। প্রয়োজনের বেশি কথা বলায় বড্ড কাঁচা সে। যথেষ্ট শালীনতা তার চালচলন। মাত্র ক্লাস টেনে পড়ুয়া মেঘ এই বয়সে দারুণ ম্যাচিউরড। মেঘ চুপচাপ ভাইয়ের রুমে এসে বললো,

“ভাইয়া তোমার কি কিছু হয়েছে?”

“নাতো আমার কিছু হয়নি। কেনো মেঘ? তোমার এমন মনে হচ্ছে কেনো?”

“আসলে তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে তাই….

নীল চেয়ার থেকে উঠে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

” আমার কিছু হয়নি মেঘ। পড়াশোনা করো। আমাদের তিন ভাইবোনকে অনেক এগিয়ে যেতে হবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবে মেঘ, জীবন তোমাকে, আমাকে অনেক কিছু শিখাবে। এই শিক্ষাটা পেতে হলে আমাদেরকে অনেক ক*ষ্ট পেতে হবে। ক*ষ্ট পেলেইতো তুমি কিছু কিছু শিখতে পারবে তাইনা?”

মেঘ ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ ভাইয়া।”

মেঘ বুঝতে পারলো যে তার ভাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে। অনেক কিছু স*হ্য করতে হচ্ছে যে তাই।

১২.

“নীল…

” হ্যাঁ মা বলো।”

“এই নে তোর বেতন।”

নীল কাঁ*পা কাঁ*পা হাতে টাকাটা নিলো। বুকটা কেঁপে উঠছে তার। মনে হচ্ছে মা-বাবার র*ক্ত চু*ষে নিচ্ছে সে।

১৩.

“এই মেঘ তোর ড্রেসটা কেমন কালো কালো হয়ে গেছেরে। এমন কেনো?”

“আসলে…অনেক আগেরতো তাই।”

“নতুন একটা বানাচ্ছিস না কেনো? দেখতে খা*রা*প লাগে।”

“হ্যাঁরে বাবাকে বলেছি। বলেছে, সামনের মাসের স্যালারী পেলে একটা ড্রেস অর্ডার দিবে।”

“ওহ বুঝেছি। না মানে…স্কুলের ছাত্রী হিসেবে এমন কা*লো কালসে ড্রেস মানানসই লাগছেনা ভাই। তোর জন্য মানুষ বলবে, আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের গেট আপ ভা*লো*না, রুলস ভা*লো*না।”

মেঘের এইবার বি*র*ক্ত লাগছে আলিয়ার কথায়। মেয়েটা সব কিছুতে কেমন খোঁ*চা দিয়ে কথা বলে। মেঘ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বললো,

“এই নে খাতা৷ হোম ওয়ার্ক কর।”

১৪.

“হ্যাপি বার্থডে নীল…”

নীল চমকে উঠে৷ আজ তার জন্মদিন। সেতো ভুলেই গিয়েছিলো। বন্ধুমহল থেকে একজন বলে উঠলো,

“কিরে নীল? ধন্যবাদ জানালিনা?”

“ধন্যবাদ।”

“ট্রিট দিবিনা নীল?”

“ট্রিট! আসলে না মানে…

” কি মানে মানে করছিস ভাই? ট্রিট দিবিনা? পকেটে টাকা নাই নাকি?”

নীল চুপ হয়ে গেলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে গুলোর যে আ*জে*বা*জে টাকা খরচ করার ক্ষ*ম*তা নেই। তারা যে বড্ড হিসাবি তা কি করে সে তার বন্ধুদের বুঝাবে। তাদেরকে খুশি করতে গিয়ে নীল তার মা-বাবাকে ক*ষ্ট দিতে পারবেনা।”

“আজ নারে। কোনো একদিন না হয় তোদেরকে ট্রিট দিবো। আজ একটু তাড়া আছে বাসায় ফিরতে হবে।”

কথাগুলো বলেই নীল তড়িঘড়ি করে হাঁটতে শুরু করে৷ এইখানে দাঁড়ালেই সমস্যা। ল*জ্জায় পড়তে হবে নীলকে৷ যে ল*জ্জা নেওয়ার স*ক্ষ*ম*তা নীলের হয়তো নেই।”

১৫.

আদির পকেটে ২০ টাকা। টিফিন পিরিয়ডে খেতে এসেও সে খেলোনা। নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া আদি পকেট থেকে টাকাটা নিয়ে বললো,

“আংকেল আমাকে ২০ টাকা দামের একটা চকলেট দেনতো।”

আদি চকলেট কিনে স্কুলের মাঠে বসেছিলো। ঠিক সেইসময়ই মেঘ আসে ভাইয়ের কাছে। ভাইয়ের পাশে বসে বললো,

“কি হয়েছে আদি? তুমি টিফিন খাওনি?”

আদি বোনের থেকে কথা লুকিয়ে গুছিয়ে মি*থ্যে বললো,

“হ্যাঁ আপু খেয়েছি।”

“কি খেয়েছো?”

“কেক আর কলা।”

“২০ টাকায় শে*ষ!”

“হুম।”

“এইটা তুমি কি করলে আদি? ২০ টাকা কেনো খেলে? আজকে ১০ টাকা খেয়ে কালকের জন্য ১০ টাকা রেখে দিতে। তাহলে মাকে আর আগামীকাল টিফিনের টাকা দিতে হতোনা।”

“আমার খুব ক্ষু*ধা পেয়েছিলো আপু।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন পে*ট ভ*রে*ছে?”

“হুম।”

আদি জানে মেঘও আজ কিছু খায়নি৷ তার আপুতো প্রতিদিনই খায়না। টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখে। তার আপুর ধারণা এইসব হা*বি*জা*বি না খেয়ে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের হাতে করা শুটকির ভর্তা আর ভাত খাওয়া অনেক শান্তির।

১৬.

“শুভ জন্মদিন বাবা।”

নীলকে জড়িয়ে ধরে কথাটি বললো, আরিফ সাহেব। নীল বাবার পায়ে ধরে সালাম করে বললো,

“দোয়া রাখবেন বাবা আমি যেনো জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারি।”

মাকেও সালাম করলো নীল। আরিফ সাহেব মাঝেমাঝে ভাবেন, “দা*রি*দ্র্য*তা তার সন্তানদেরকে ঘায়েল করতে পারেনি। হয়তো হাজারো একটাও পাওয়া যাবেনা ওনার সন্তানদের মতো এতো নম্র,ভদ্র ও বিনয়ী। নীল হাতে থাকা মি*ষ্টির বাক্সটা মায়ের হাতে দিয়ে বললো,

” এই নাও মা। সবাইকে খেতে দাও।”

“আবারও না খেয়ে মি*ষ্টি! ”

“মা আমার জন্মদিনে আমার ভাই বোনদের আমি হয়তো এইখানে ওইখানে ঘুরিয়ে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে পারবোনা…কিন্তু কলেজের খরচ বাঁচিয়ে মি*ষ্টি মুখতো করাতেই পারি তাইনা?”

আরিফ মিয়ার স্ত্রীর চোখ ট*ল*ম*ল করছে পা*নি*তে। মুগ্ধ নয়নে ছেলের দিকে তাকান তিনি। কখন যে ওনার ছেলে মেয়েরা এতো বড় হয়ে গেলো।

“আদি মেঘ কোথায় মা?”

“এইতো আমরা ভাইয়া…

মেঘ আর আদি জ*ড়ি*য়ে ধরে নীলকে। একসাথে দুই ভাইবোন বলে উঠে…! হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া।”

“Thank Youuuu”

“এই নাও ভাইয়া তোমার গিফট..”

আদির হাতে চকলেট দেখে চমকে উঠে মেঘ আর বাকি সবাই। আদি এইবারও টিফিন না খেয়ে চকলেট এনেছে নীলের জন্য! বুঝ হওয়ার পর থেকে ভাইয়াকে গিফট দেওয়ার জন্য আদি না খেয়ে টিফিনে, সেই টাকা দিয়ে চকলেট নিয়ে আসে নীলের জন্য। নীল আদিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আজকেও না খেয়ে চকলেট নিয়ে এসেছো আদি?”

মেঘ আদির দিকে চোখ রা*ঙ্গি*য়ে তাকায়৷ আদি মাথা নিচু করে বলে,

“রা*গ করোনা আপু। আমি মি*থ্যে না বললে তুমি আমাকে ব*কা দিতে।”

মেঘ হেসে ফেলে। মেঘ ব্যাগ থেকে একটা ছোট গিফট বক্স খুলে বললো,

“এইটা তোমার বার্থডে গিফট ভাইয়া।”

“এইটা কি মেঘ! তুমি আবার আনতে গেলে কেনো?”

“আমার ভাইয়ার বার্থডে আর বোন হয়ে আমি কিছু দিবোনা?”

আরিফ সাহেব আর ওনার স্ত্রী একসাথে দাঁড়িয়ে সন্তানদের এতো মুগ্ধকর দৃশ্য দেখছেন।

“দেখলে গিন্নি আমাদের সন্তানদের?”

“হ্যাঁ গো হ্যাঁ। কখন যে এতো বড় হয়ে গেলো ওরা।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here