#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব ১
#সুমী(writer)
তোর জামা কাপড় কিছু নেই নাকি এভাবে ভুলভাল পোশাক পরে আছিস কেনো??
জামার উপর লুঙ্গি পড়ে টিভিটা অন করে গান দিয়ে উড়াধুরা ডান্স করছি ডয়িং রুমের সোফার উপর হঠাৎই পিছনে তাকিয়ে দেখি মেহরাব ভাই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।তখনি কথাটা বললেন ওনি,,,
ওখান থেকে নেমে আয় নইলে কানের পাশে ঠাডিয়ে এক চড় মারবো??(মেহরাব)
আমিও চুপচাপ ভাইয়ার কথামতো সোফার উপর থেকে নেমে ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
এটা কি পড়েছিস??বাড়িতে কি জামার অভাব পড়েছে?? এখন যদি আমার বদলে অন্য কেউ আসতো তাহলে কি হতো??আর দরজা খোলা রেখেছিস কেনো??(চেচিয়ে বলল মেহরাব)
সরি ভাইয়া আর করবো না(মাথা নিচু করে বললাম)
হুম ঠিক আছে,, এখন এসব খুলে জামা পড়ে আয়,।
আচ্ছা ঠিক আছে, এই বলে আমি ভিতরে যেতে গেলাম তখন ভাইয়া বললো
, আর শোন একদম ঘর থেকে বেরোবি না ওকে??(মেহরাব)
কেনো?? আর আজ তো মেঘলা আপুকে দেখতে
আসছে,, আমি ওখানে যাবো না??
না তুই কোথাও যাবি না,, এখন যা রুমে যা(এই বলে ভাইয়া চলে গেলো)
আমিও রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে আসলাম,,,কি পেয়েছেন টা কি ওনি,, ওনার সব কথা শুনতে হবে নাকি আমায় দুর ভালোলাগে না, কোথায় ভাবলাম আপুর কাছে গিয়ে বসবো,, তা না ওনি এসে মানা করে দিলো ধ্যাত।
মেহরাব হলো আমার বড় মামার বড় ছেলে আর মেঘলা হলো ওনার বোন,, আজকে মেঘলা আপুকে পাএ পক্ষ দেখতে আসবে তাই জন্য সবাই ভাইয়াদের বাসায়,,, আর আমি হলাম মাহি,,,আমার ছোট একটা ভাই আছে ক্লাস ৫ এ পড়ে আর আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।।
ধুর কিছুই ভালো লাগছে না সবাই ওখানে কত্ত মজা করছে আর আমি এখানে একা একা বসে আছি,,আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয় আমি চুপিচুপি ওখানে যাবো হুম তাই করি।।
তারপর আমি জামা পড়ে চুলটা আঁচড়ে সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে,,, ভাইয়াদের বাসায় গেলাম আমাদের বাড়ি থেকে ভাইয়াদের ফ্লাট কাছেই ২০ মিনিট এর রাস্তা,,, আর ভাইয়াদের বাসাটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে কত্ত বড় বাড়ি,,, বড় মামার নিজের ব্যবসা আছে,, বড় অফিস আছে,,মেহরাব ভাইয়া সেই অফিসেই বসে,, আসোলে ওনি অনেক বড় তো তাই,, আমার থেকে গুনে গুনে ৯ বছরের বড়,,,এই তো ওনাদের বাড়ি চলে আসছি।
,,,,,,,
এই পিচ্চি শোনো?(নেহাল)
আমি চুপি চুপি বাসার মধ্যে ঢুকে মাকে খুজতেছিলাম তখনি পিছন থেকে কে যেনো ডাক দিলো।
আমাকে ডাকছেন??
—হুম তুমি ছাড়া তো এখানে আর কেউ নেই,, তোমার নাম কি আর তুমি মেঘলার কি হও??
—আমি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে মেহরাব ভাইয়া বললেন,,,
—আরে নেহাল তুমি এখানে??? ভিতরে সবাই তোমাকে খুজছে যাও ভিতরে যাও(মেহরাব)
—আচ্ছা ঠিক আছে।
তুই এখানে কি করছিস??(রেগে বলল মেহরাব)
ইয়ে ম,,,মানে ভাইয়া(আমতা আমতা করে)
কি ইয়ে মানে আর এতো সেজেছিস কেনো?? বিয়ে করার খুব সখ না?? দাড়া ফুপিকে বলে তোর ব্যবস্হা করছি।
ওনি সব সময় আমার সাথে এমন করে,,, কই আর সবার সাথে তো এমন করে না শুধু আমার সাথেই কেনো? সবার সাথে কত্ত ভালো ভালো কথা বলে হেসে কথা বলে,, আর আমাকে শুধু ধমকায়(মনে মনে বললাম)
তোকে মানা করার পরেও তুই এখানে কেনো এসেছিস?? ছেলেদের সাথে মিশতে ভালো লাগে??
আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললাম,,আসোলে ভাইয়া আমি তো।
চুপ আর একটা কথাও নয় যা এখান থেকে সোজা আমার রুমে যাবি,, গিয়ে চুপ করে বসে থাকবি,,
জি আচ্ছা।
আচ্ছা শোন আমার ফোনটা নিয়ে যা,,, একা একা বোর হলে গেম খেলিস,,, তারপর ভাইয়ার থেকে ফোন নিয়ে চলে আসলাম।
,,,,,রাতে,,,,
পাএ পক্ষ মেঘলা আপুকে পছন্দ করে আংটি পড়িয়ে গেছে সামনের মাসে বিয়ে,,,আর নেহাল হলো পাএের ছোট ভাই,,,
ফুপি শোনো,, বলছি যে মাহি আজকে আমাদের এখানেই থাক,,, কাল সকালে চলে যাবে(মেহরাব)
সেকিরে মাহি এখানে?? কখন এসেছে মেয়েটা?? আমি তো জানি না(আনিকা মাহির মা)
ওই তো বিকেলের দিকে আর এখন আমার রুমে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তোমরা চলে যাও আমি সকালে গিয়ে দিয়ে আসবো,,
আচ্ছা গেলাম তাহলে,,
মা আমি ঘুমাতে গেলাম,, আমি সোহান এর রুমে যাচ্ছি আমার রুমে মাহি ঘুমিয়ে আছে।
সেকি রে খাবি না??(রুপালি)
না মা এখন ক্ষিধে নেই আমি গেলাম,,, এই বলে সোহান এর রুমের দিকে যাচ্ছি সুহান আমার ছোট ভাই এবার মাহির সাথেই পড়ে আর মেঘলা হলো আমার ছোট আর সুহানের বড়,,,
ওহ শিট আমি তো ফোনটা নিতেই ভুলে গেছি,,,এরপর আমি ফোনটা নিতে আমার রুমে গিয়ে দেখি মাহি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে,,, পাগলি একটা,,, আস্তে করে ওকে সোজা করে শুইয়ে দিলাম,,,,
এই পিচ্চি মেয়েটা কি কোনোদিনই বুঝবে না যে আমি ওকে কতটা চাই,,,
,,,,সকালের শুভ্র নির্মল বাতাসে ওকে চাই,,
,,,খুব কাছে থেকে ওকে চাই,, যতটা কাছে থাকলে,, ওর প্রতিটা নিশ্বাস আমি গুনতে পারবো,, অনুভব করতে পারবো কিন্ত পাগলি টা তো আমায় ভয় পাই ভালোবাসা তো দূরে থাক,,,নাক টিপে দিয়ে।
,,,,সকালে,,,,
এখান থেকে সোজা বাড়ি যাবি রাস্তায় কোথাও দাঁড়াবি না,,, বাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে বসে থাকবি আমি এসে অফিস যাওয়ার পথে তোকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবো, বুঝেছিস??
,, হাত মুখ ধুয়ে মামির হাতে খেয়ে বাড়ি আসার জন্য যেই বেরোবো তখনি পিছন থেকে খেতে খেতে মেহরাব ভাই কথাগুলো বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে,,
ওকে এবার যা,,,,
উফফ বাবা বাঁচলাম এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল যেনো যমরাজের সামনে দাড়িয়ে আছে,,,একা একা বকবক করতে করতে যাচ্ছিলাম তখনি কালকের সেই ছেলেটা আমার সামনে বাইক নিয়ে থামালো।
হাই পিচ্চি কেমন আছো(নেহাল)
ভালো,,,আর শুনুন আমায় পিচ্চি বলবেন না আমি অনেক বড়,
তাই নাকি?? আচ্ছা এখন বলো তোমার নাম কি?? আর মেঘলা তোমার কি হয়??
মেঘলা তো আমার আপু হয়,, আমার বড় মামার মেয়ে,, আর নামটা আপনাকে বলবো না কারন আমি আপনাকে চিনি না তাই,,,
ওরে বাবা তাই নাকি?? আচ্ছা চলো আমি তোমাকে চিনায় দিই,, আমি নেহাল তোমার মেঘলা আপুর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার ছোট ভাই,,
ওহ তাই,,,আচ্ছা
তাহলে এখন তো তোমার নাম জানতে পারি??
আমি মাহি,,
তা এতো সকালে কোথায় যাচ্ছো??
বাড়ি যাচ্ছি।
আচ্ছা চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
না না আমি একাই যেতে পারবো,, আর আমার বাড়ি বেশি দূরে নয় এই তো এখানেই।
তাতে কি আমি দিয়ে আসি চলো৷,, আর আমি তোমার বড় আবার মেঘলা একমাএ দেবর তাই আমার কথা তোমার শোনা উচিত।
আপনি তো বলছেন কিন্তু ভাইয়া যদি একবার দেখে তাহলে আমায় কাচা চিবিয়ে খাবে,, কি যে করি,,, আমি যদি ওনার কথা না শুনি তাহলে যদি ওনি আপুর বিয়েটা ভেঙে দেন তাহলে,, না না এতো ভালো সম্মন্ধো,,, তার চেয়ে বরং আমি যাই ভাইয়া তো আর দেখছে না, (মনে মনে কথাগুলো বলে,, ওনাকে বললাম)
আচ্ছা তাহলে চলুন,,, তারপর ওনার বাইকে করে বাড়ির সামনে নেমে,,, বাড়ির ভিতর চলে গেলাম,, আম্মুর সাথে কথা বলে যলদি তৈরি হয়ে নিলাম।।।
তৈরি হওয়ার কিছুক্ষণ পরই দেখলাম ভাইয়া বাইরে গাড়িতে বসে হর্ন বাজাচ্ছে।
কিরে মাহি তোর হলো?? ছেলেটা সেই কখন থেকে বসে আছে।
কেনো মা তোমার ভাইয়ের ছেলেকে কি বাড়ির ভিতর আসতে লজ্জা করে??
এতো কথা না বলে যাতো তুই।
তারপর তারাতারি করে বাইরে বেরিয়ে আসলাম,,, আমায় দেখে ভাইয়া গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো,, কিন্তু কোনো কথা বললো না,, আজব কান্ড এমনি দিন তো কত কথা বলে আজকে কি হলো?? কে যানে।
ভাইয়া মনে হয় আজকে কোনো কারনে অনেক রেগে আছে নয়ত কখনো তো এতো জোরে গাড়ি চালায় না,,,, আমি ভয়ে ভয়ে ভাইয়াকে বললাম।
এ,,একটু আস্তে চালান ভাইয়া আমার ভয় করে।
মেহরাব গাড়ি থামিয়ে, মাহির গালের দু পাশে শক্ত করে ধরে বলল।
কেনো ভয় করে কেনো?? আমার কাছে আসলেই তোর ভয় করে আর অন্য ছেলের বাইক এ উঠে ঢলাঢলি করতে খুব ভালো লাগে তখন ভয় করে নাহ??(রেগে বলল মেহরাব)
আহ ভাইয়া ছ,,ছাড়ুন আমার লাগছে।
হ্যাঁ লাগবেই তো আমি কাছে আসলেই তোর লাগে,, আর অন্য ছেলেদের কাছে গেলে তো আরাম লাগে তাই না??
আমি ভয়ে গাড়ির একদম কোনায় চুপচাপ করে বসে আছি,,, আর ভাইয়া তার দু হাত মাথায় চেপে ধরে আছে,,, দুহাতে নিজের চুল টেনে ধরে রেখেছে মনে হয় রাগ কমানোর চেষ্টা করছে,,, কিন্তু ভাইয়া জানলো কীভাবে,,,
যা রেগে আছে আমার ভয় করছে,, না জানি কি করে।
আল্লাহ বাঁচাও আমারি দোষ কেনো যে আমি ওনার বাইক এ উঠলাম।
গাড়ি থেকে নাম??
কি বলছেন ভাইয়া এখান থেকে তো আমার কলেজ এখনো অনেক দূরে আর এখনে কোনো গাড়িও নেই কেমন নির্জন,, আমি যাবো কীভাবে,,??
সেটা তোর নেহালের বাইকে উঠার আগে ভাবা উচিত ছিলো। এখন গাড়ি থেকে নাম(রেগে চেচিয়ে বলল)
আমিও ওনার ধমক শুনে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম,,, আমি নামার সাথে সাথে ওনি গাড়ি নিয়ে শো করে চলে গেলেন।
ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওনি এমন কেনো আমি কি ওনাকে বলেছিলাম যে আমাকে কলেজে পৌঁছে দেন,,, এখন আমি কি করবো,, (এসব ভেবে রাস্তায় দাড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছিলাম তখনি হঠাৎ)
চলবে,,,,,,
#সুমাইয়া_সুলতানা