ভালোবাসি_বুঝে_নাও?? #পর্ব_৯,১০

0
1180

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_৯,১০
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
০৯

১ সপ্তাহ পর.

আজকে মেঘদের আসার কথা,,মেঘরা ছাড়াও মেহরাব এর খালা আর খালাত বোনরাও আসবে,,, কেননা বিয়ের আর বেশিদিন বাকি নেই যদিও বলা হয়েছিলো একমাস পর বিয়ে হবে কিন্তু বিয়ের ডেট কয়েক দিন আগানো হয়েছে। সকাল থেকে সবাই ব্যাস্ত মাহি মেঘলা আর ইশিতা সব রুম গোছাচ্ছে আর মাহির মা আর মামীরা রান্না করায় ব্যাস্ত,, সোহান রকি রাকিব আর মুনিরকে পুরো বাড়ির বাইরের ঝুল আর যেখানে মেঘরা থাকবে সেখানে পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সবাই সবার কাজ করছে,, মেহরাব গেছে মেঘদের আনতে, মেঘরা গতকাল বিকেলের দিকে বার হয়ছিলো নাইট এ আসছে,, সকালে মেহরাব কে ফোন করে বলায় মেহরাব গাড়ি নিয়ে চলে গেছে ওদের আনতে। এরি মাঝে মেহরাব এর খালা খালু আর খালাত বোন মীরা চলে এসেছে।

বড় মামী তারাতারি আসো দাখো মীরা আপুরা চলে আসছে (মাহি গিয়ে মেহরাব এর মাকে বলল)

তাই নাকি কই কই। তারপর মেহরাব এর মা গিয়ে ওদের ভিতরে নিয়ে আসল।

খালা মনি তোমাদের এখানে অনুষ্ঠান করতে কে বলছে বলো তো?? উফ কি ধুলো চারিদিকে আর রাস্তার কথাতো বলবোই না ছি ইয়াক এমন অজপারা গায়ে কেউ এতো বড় অনুষ্ঠান করে??(নাক সিকটে বলল মীরা)

হ্যাঁ তোরা যে কি করিস এখানে বিয়েটা দিতে গেলি কেনো?? ঢাকা গিয়ে কোনো বড় সেন্টার এ করলেই তো ভালো হতো(মীরার মা,, রত্না)

আহা তুমি এতো কথা বলছো কেনো আপারা নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তেই করছে, আর মেঘদের তো কোনো সম্যসা নেই (মীরার বাবা মহিন)

তুমি চুপ করো সবসময় এতো বেশি কথা বলো কেনো(রত্নার কথা শুনে মহিন একেবারে চুপ হয়ে গেলো)

আরে মেহরাব বললো তাই, আর আমার শশুর এর শরীল টাও ভালো নেই তাই,,, তা মীরা এটা তো গ্রাম এখানে অন্তত এমন পোশাক না পরে আসতি(মেহরাব এর মা রুপালী)

উফ খালামনি গ্রাম বলেই তো এতো বড় আর বাজে পোশাক পড়ে এসেছি নয়ত এমন লং পোশাক কেউ পরে??আচ্ছা বাদ তাও আগে বলো মেহরাব কোথায়??(মীরা)

আবার তুই ওর নাম ধরে ডাকছিস?? ও শুনলে তোর খবর আছে,,, মেহরাব মেঘদের আনতে গেছে,, এখন তোরা রুমে যা।

মীরা আপু আসো আমি তোমাকে তোমার রুমে নিয়ে যাচ্ছি (মাহি)

এই তুমি মাহি না??

জি।

এই সেই মাহি যাকে নিয়ে মেহরাব একটু বেশিই পসেসিভ (মনে মনে বলল)

তারপর ওখানে সবার সাথে কথা বলে মাহি মীরাকে মাহি মেঘলা আর ইশিতা যে রুমে থাকে সেই রুমে নিয়ে আসলো,, মেঘলা আর ইশিতা রুমেই ছিলো।

এই যে আমাদের রুম আমরা সবাই এখানেই থাকবো(মাহি)

হোয়াট??? ঠাসাঠাসি করে সবাই এক রুমে থাকবো?? তাও আবার এই গরমে?? নো ওয়ে আমি পারবো না(মীরা)

কেনো মীরা থাকো না অনেক মজা হবে সবাই একসাথে মজা করবো(মেঘলা)

তোমাদের থাকার হলে তোমরা থাকো আমি থাকবো না,,, আমি পাশের রুমে থাকবো (মীরা)

কিন্তু পাশের রুমে তো মেহরাব ভাইয়া থাকে(মাহি)

তো?? আমি ওই রুমেই থাকবো,, আর আমি জানি মেহরাব এতে কিছু বলবে না আমায় ওকে,, বাই আমি গেলাম উফ কি গরম, (এই বলে মীরা চলে গেলো)

এই এই মেয়ে কি সত্যি ভাইয়ার সাথে থাকবে?? বাবা কি অহংকার আর পোশাকের কি ছিড়ি(ইশিতা)

আরে না কি যে বলিস ভাইয়া এসে ওকে রুম থেকে বার করে দেবে দেখিস,, গায়ে পড়া মেয়ে (মেঘলা)

আপু কারো বিষয়ে এমন করে বলা ঠিক নয়(মাহি)

হুম তুই ছোট তো তাই বুঝিসনা,, আমার তো ওকে দেখে প্রথমেই পছন্দ হয়নি,, আর তুই চুপ করে থাকতো পুচকি।

প্রায় অনেকক্ষণ পর মেঘরা আসলো মর্হুতেই বাড়িটা খুশির আমেজে ভরে গেলো। মেঘ এসে সবার সাথে কথা বললো,, মেঘলা গিয়েও মেঘের মা বাবাকে সালাম দিলো মেঘ আর চোখে মেঘলা দিকে তাকালো মেঘলাও তাকালো তারপর মেঘলা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। মেঘদের জন্য যে দিকটা রাখা হয়েছে ওদের কে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বলা হলো। সবাই যার যার রুমে চলে গেলো৷ মেহরাব চারিদিকে একবার চোখ বোলিয়ে মাহিকে খুজে না পেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বসতেই হুট করে মীরা ওর সামনে চলে এসে বলল।

সারপ্রাইজ (মীরা)

তুই?? কখন এলি?? খালামনিরা এসেছে সবাই??

হুম সবাই এসেছে একটু আগেই এসেছি,, তোমার কি বেশি গরম লাগছে?? ফ্যানটা বাড়িয়ে দেবো?? মেহরাব।

এই তোকে না বলেছি আমার নাম ধরে ডাকবি না ভাইয়া বলবি, আর এখন আমার রুম থেকে যা আমি রেস্ট নেবো।

কোথায় যাবো?? আমি তো এই রুমেই থাকাবো আজ থেকে।

নো এটা আমার রুম তুই মাহিদের রুমে থাক।

না আমি সবার সাথে ওমন ঠাসাঠাসি করে থাকতে পারবো না,, আমার একলা একা রুম চাই তাই আমি এই রুমেই থাকবো।

বেশি কথা না বলে ব্যাগ নিয়ে অন্য কোনো রুমে যা,, অনেক জার্নি করে এসেছি ভালো লাগছে না যা(ধমক দিয়ে বলল মেহরাব)

মেহরাব এর ধমক শুনে মীরা কেঁপে উঠল যতই ও মেহরাব কে পছন্দ করুক কিন্তু ওকে ভয় ও পাই তাই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখনি দেখলো মাহি দরজার সামনে দাড়িয়ে হাসতেছে (কেননা মীরা তখন হেবি এ্যাটেটিউড নিয়ে কথাগুলো বলেছিলো,, কিন্তু এখন মাহি মেহরাব কে ডাকতে এসে মীরার এমন অবস্থা দেখে নিজের হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারলো না তাই হেসে দিলো)

এই মেয়ে তুমি এমন হাসছো কেনো?? আর তোমার এখানে কি??(মীরা)

মাহি মীরার কথা শুনে হাসি থামিয়ে বলল।
আসোলে ভাইয়াকে ডাকতে এসেছিলাম নিচে কাজ আছে তো তাই (মাহি)

তুমি যাও আর গিয়ে বলো মেহরাব এখন নিচে যাবে না ও এখন রেস্ট নেবে (মীরা)

ওকে (মীরার কথা শুনে মাহি চলে যাচ্ছিলো তখনি মেহরাব বলল)

আমি তোকে বলেছি?? যে আমি নিচে যাবো না,, আমি তোকে যেতে বলেছি তুই যা আর তুই (মাহিকে উদ্দেশ্য করে) ভিতরে আয় কথা আছে।

মেহরাব এর কথা শুনে মীরা রেগে বোম হয়ে হনহন করে চলে গেলো,, আর মাহি গুটি গুটি পায়ে মেহরাব এর কাছে এসে দাঁড়ালো।

কোথায় ছিলি?? আসার পর থেকে তোকে কোথাও দেখলাম না।।

আসোলে মেঘ ভাইয়ারা আসবে তো তাই সব রুম গোছাচ্ছিলাম তাই দেখতে পাননি।

আচ্ছা এতো কাজ করা লাগবে না,, আনলার পড় আমার ওই জামাটা দে তো??

মাহি আনলার উপর থেকে জামাটা নিয়ে মেহরাব এর দিকে বারিয়ে দিলো।

আমি নিয়ে কি করবো?? জামার পকেটে হাত দে।

মাহি জামার পকেটে হাত দিয়ে দেখলো লাল রঙের দুই ডজন কাচের চুড়ি,, চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে মাহির মুখটা খুশিতে চকচক করে উঠল।

এগুলো আমার??

তো কি আমি পরবো নাকি??? মেঘদের আনতে যাওয়ার সময় একটা দোকানে দেখলাম ঝুলানো রয়েছে তাই দেখে আমিও দু ডজন কিনে নিলাম আমার অবুঝ পরিটার জন্য,,, আচ্ছা সেই শাপলা ফুল গুলো কি করেছিস??

ওগুলো তো আমি কাঁচের বতলে পানি ভরে তার মধ্যে ফুলগুলো রেখে দিছি যাতে তাজা থাকে (চুড়ি গুলো দেখতে দেখতে বলল)

তাই নাকি?? মাহি আর মেহরাব কথা বলছিলো তখনি পাশের ঘর থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ হলো।

কিসের আওয়াজ হলো বলতো?? কিছু পড়লো মনে হয়৷ (মেহরাব)

চলেন তো দেখি কি ভাঙলো??

এর পর মাহি আর মেহরাব মাহিদের রুমে চলে গেলো তারপর ওখানে গিয়ে যা দেখলো তাতে মাহির চোখে পানি এসে গেলো। এতোক্ষণ যত খুশি ছিলো এখন ততটাই দুঃখে মনটা ভরে গেলো সব সময় ওর সাথেই এমন কেনো হয়৷,

চলবে,,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
মাহি গিয়ে দেখলো ওর সখের ফুলগুলো নিচে পড়ে আছে আর তার উপর পা দিয়ে মীরা দাঁড়িয়ে আছে।

অ!সো সরি মাহি আমি দেখতে পাইনি,,, এখানে আমার ব্যাগটা রাখতে গিয়ে পড়ে গেছে(আসোলে মেহরাব মীরাকে রুম থেকে চলে যেতে বলার পর মীরা দরজার সামনে কান পেতে ওদের কথা শুনছিলো আর যখনি ফুলগুলোর কথা শুনলো তখনি রুমে এসে ফুলগুলো ইচ্ছে করে নষ্ট করে দিলো যাতে মাহির মন খারাপ হয়,,, পারলে তো তোর হাতের ওই চুড়ি গুলোও আমি মরমর করে ভেঙে দিই,, মনে মনে বলল মীরা)

তুই এই ঘরে কি করছিস??(মেহরাব)

তুমিই তো বললে আমায় এরুমে থাকতে তাই চলে আসলাম।

তুই বলছিস তুই ইচ্ছে করে ফুলগুলো ফেলিসনি ভুল বসত পরে গেছে তাহলে ফুলগুলো ওমন থেতলে গেলো কি করে মনে হচ্ছে কেউ পা দিয়ে ফুলগুলো মারিয়েছে (মেহরাব)

মেহরাব এর কথাশুনে মীরা থতমত খেয়ে গেলো কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷।।

আ,,,আসোলে কি বলো তো আমি এটা পরার আওয়াজে ভয় পেয়ে গিছিলাম তাই লাফাই উঠছিলাম তখনি মনে হয় ফুল গুলো পায়ের নিচে পরে ছিলো আমি দেখীনি(উফ বাঁচলাম মনে মনে)

মেহরাব কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো মাহি একমনে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে এখনি কত খুশি ছিলো মেয়েটা কত হাসতেছিলো আর এরি মাঝে কি হয়ে গেলো। কত সখের ফুলগুলো এই ফুলগুলোর জন্য কতকিছু করল আর শেষ মেষ কি হলো। মাহি রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। মেহরাব ও কিছুক্ষণ মীরার দিকে রেগে তাকিয়ে চলে গেলো।

ঠিক এভাবেই তোর সখের জিনিস গুলো আমি নষ্ট করে দেবো তোর প্রিয় জিনিস গুলোও তোর কাছ থেকে কেরে নেবো মিলিয়ে নিস (মনে মনে বলে ফুলগুলো পা দিয়ে আরো বেশি করে মারিয়ে দিলো)

বারান্দার এক কোনে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে মাহি তখনি পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল,, পিছনে তাকিয়ে দেখল ওর মা।

কি হয়েছে আমার মায়ের এমন মন খারাপ করে বসে আছে কেনো??(মাহির পাশে বসে)

আম্মু (মাকে জরিয়ে ধরে) আমরা বাড়ি যাবো কবে??

সেকিরে তুই তো এখানে এসে কত খুশি ছিলি এই বিয়ে নিয়ে কত মজা করবি বললি আর এরি মাঝে কি হলো??(আম্মু)

কিছু না ভালো লাগছে না,,, তুমি তো এখানে এসে আমার কথা ভুলেই গেছো সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ (মাহি)

সত্যি এখানে আসার পর থেকে মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকানোর সময়ই পাইনি ছেলেটা তো ওর বাবার সাথে,,, (মনে মনে বলে মাহির মা বলল)

তাই,, আচ্ছা মুখটা এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো?? সকাল থেকে কিচ্ছু খাসনি নাকি?? বস এখানে আমি খাবার নিয়ে আসছি,,,, এই বলে মাহির মা খাবার আনতে চলে গেলো৷ আর মাহি ওখানেই মন খারাপ করে বসে থাকলো৷ আর এই সব কিছু দূর থেকে মেহরাব দেখলো। কিছুক্ষণ পরই মাহির মা খাবার নিয়ে এসে নিজে হাতে মেয়েকে খাইয়ে দিলো,,,, তারপর বাকি সারাদিন মাহি মায়ের পিছন পিছনই থাকলো। মেহরাব ও আর ডাকিনি ওকে।

,,,,রাতে,,,,

দূরে বাগানের চড়াটের উপর মেঘলা আর মেঘ বসে আছে,,, মেঘলার কোলের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে মেঘ৷

আরে কি করছেন?? কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে??(মেঘলা)

কি ভাববে আবার?? ভাববে যে আমি তোমার সাথে প্রেম করছি এটাই(মেঘ)

তাই বলে এখানে?? বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে লজ্জাই পড়ে যাবো।

ধূত চুপ করো তো কিছুই হবে না,, এখন চুপচাপ আমার দিকে মন দাও।

সবাই ওঠানে মাদুর বিছিয়ে বসে গল্প করছে পাশেই মুনির ওর বয়সী গ্রামের কিছু ছেলে মেয়েদের শহরের গল্প শুনাচ্ছে,,,,, আর সুহান এককোনে বসে চুপচাপ ফোন দেখছে,,,,
গ্রামের মহিলারা অনেকেই এসেছে বড় বাড়ির বিয়ে বলে কথা বিয়ে ১সপ্তাহ আগে থেকেই বিশাল আয়োজন,,, সবাই বসে পান খাচ্ছে আবার কেউ কেউ একসাথে হয়ে গীত গাইছে। আর ইশিতা এই ফাঁকে ওর রুমে গিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছে। এখানে বাড়ির সবাই আছে সবাই সবার সাথে মজা করছে নেই কেবল একজন আর সে হলো মাহি।

মেহরাব পুরো বাড়ি খুঁজেছে সব রুম গুলোও দেখেছে কিন্তু কোথাও মাহিকে পাইনি,,, শেষে বাগানে খুঁজতে গিয়ে বেশ লজ্জাই পেয়েছে,, কেননা সেখানে মেঘ আর মেঘলা প্রেম করছে। এখন শুধু একটা জায়গাই বাকি আছে আর সেটা হলো ছাদ।। মেহরাব আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো দেখলো মাহি ছাদের মাঝে বসে চাঁদের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে।

বাবা আমার ভিতু রানি দেখছি এতো রাতে একা একা ছাদে বসে আছে ভয় করছে না??(মাহির পাশে বসতে বসতে বলল মেহরাব)

মাহি কিছু বললো না শুধু মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে হয়ে বসল।

আরে আমার সাথে কথা বলছিস না কেনো আমি আবার কি করলাম (মেহরাব)

মীরা আপু ইচ্ছে করে আমার ফুলগুলো নষ্ট করেছে আমি জানি,, ওনি তো আমায় পছন্দই করে না,,,, আপনি ওখানে ছিলেন তবুও ওনাকে কিছু বলেন নি,,, (মুখ ফুলিয়ে বলল মাহি)

ওহ এই জন্যই তাহলে মেডাম আমার উপর অভিমান করে বসে আছে (মনে মনে বলল)

আচ্ছা শোন দেখি আমার দিকে ঘোর (মাহির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে মুখের দুপাশে হাত রেখে বলল মেহরাব)

মীরা অনেক ন্যাকা টাইপ মেয়ে ওকে তখন কিছু বললে ও কাঁদতে কাঁদতে খালা মনির কাছে গিয়ে উল্টো পাল্টা বলত, আর খালামনি আবার সেটাকে ইস্যু করে অনেক বড় অশান্তি করত।একেতে বিয়ে বাড়ি তার উপর গ্রামের বাড়ি এখানে কিছু হলে দাদুর সম্মান টা থাকতো??? আর তাছাড়া মেঘলার কথাটা একবার ভাব ও কত খুশি এতো অপেক্ষা করার পর নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারছে এখন যদি এখানে কোনো সম্যসা হয় তাহলে ওর মন খারাপ হবে না??? আর আমি জানি আমার মাহি তো তা হতেই দেবে না কেননা আমার মাহি অবুঝ হলেও সব বোঝে সে কখনো কাউকে কষ্ট দিবে না আর তার মেঘলা আপুকে তো নয়ই,,, কি তাই তো (মেহরাব)

হুম। (মাহি)

এই তো গুড গার্ল,,, তাহলে এখন এমন মন খারাপ করে না থেকে একটু হাস তো। তোকে সব সময় হাসিতেই বেশি মানায় আর তাছাড়া আমার মাহি তো এই বিয়ের ম্যানেজার তার কত কাজ তার কি এখন এখানে মন খারাপ করে বসে থাকলে হবে?? সারা বাড়ি ছুটোছুটি করতে হবে তো সবাইকে মাতিয়ে রাখতে হবে তো তাইনা???

হুম তাই তো,, দেখেছেন আমি তো ভুলেই গেছি আমার কত কাজ,, আপুকে মেহেন্দি পরানো তারপর সাজানো তারপর (মেঘলা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি মেহরাব বলল)

আরে এগুলো এখনো দেরি আছে,, এখন একটু হাসতো,,, যদি না হাসিস তাহলে কিন্তু কাতুকুতু দিবো।

এই না আমার কিন্তু অনেক কাতুকুতু আর আমিও জানি আপনার ও কাতুকুতু আছে (হেসে বলল মাহি)

কি নিষ্পাপ আমার মাহি কতটা সরল,,, এত সখের ফুলগুলো নষ্ট হয়ে গেলো তাও কেমন একটু ভালো কথা বলায় সেটাও ভুলে গেলো। এত ভালো কেনো তুই মন চাই সব সময় বুকের সাথে একেবারে চেপে ধরে রাখি,,, আমি তো আমার মাহির এই হাসি মুখটাই এতক্ষণ মিস করছিলাম,,,, অনেক ভালোবাসি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি,, কবে যে তুই বুঝবি (মনে মনে বলল মেহরাব)

ও ভাইয়া কই হারিয়ে গেলেন??

মাহির কথায় হুস ফেরে।। না না কোথাও না, এই তো আমাদের মাহি হাসছে,, ওমমম এই হাসির জন্য তো তোকে কিছু একটা দিতে হয় কি দিই বলতো ওমমম (একটু ভেবে) দাড়া (তারপর মেহরাব কাউকে ফোন করল,, তার কিছুক্ষণ পরই মেঘ পিছনে কিছু নিয়ে ছাদে আসলো)

এই তো মাহির গিফট চলে এসেছে (মেঘ)

গিফট?? কি গিফট??(মাহি)

ওমম সেটা আমি বলছি,,, তারপর মেহরাব গিয়ে মেঘের পিছন থেকে তিনটা শাপলা ফুল বের করে মাহির সামনে ধরলো।

সেদিন সব তুলে আনছিলাম তো তাই আজকে আর বেশি ফোটেনি এই গুলোই ছিলো,, দয়া করে আপনি এগুলো গ্রহন করে আমায় ধন্য করুন রানী সাহেবা (মেহরাব)

মাহি তো ফুল গুলো দেখে সেই খুশি এতোক্ষণের সব মন খারাপ যেনো উধাও এক লাফে ফুলগুলো নিজের হাতে নিয়ে।

ইয়ে আমার ফুল,, কত্ত সুন্দর থ্যাংকু ভাইয়া ওহ কত খুশি লাগেরে ইয়ে (বলে লাফাতে লাগলো।)

বারে আমিও তো ফুলগুলো আনলাম তাহলে খালি মেহরাব কেই থ্যাংকু বললে আমাকে কেনো বললে না (মেঘ)

ওহ আপনাকেও থ্যাংকু মেঘ ভাইয়া গাড়ি গাড়ি থ্যাংকু (এই বলে মাহি লাফাতে লাফাতে চলে গেলো,, আর মেহরাব মাহির যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো,, তখনি মেঘ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল)

এই সালা তাহলে এই জন্যই তুই ওই দুপুরে আমায় ঘুম থেকে টেনে তুলে ওই রোদের মধ্যে মাঠে নিয়ে গেলি তাও আবার সাপের বাড়িতে। এখন বুঝলাম আপনি কেনো ওখানে সাপ আছে যেনেও ফুলগুলো তুললেন (মেঘ)

হুম (একটা কথা বলি মেঘ আর মেহরাব দুজন বন্ধু একিসাথে পড়ত,,,)

কে যেনো আমায় বলেছিলো প্রেম করা ভালো নয় আর বয়সে ছোট্ট মেয়ের সাথে তো একেবারেই নয়(মেহরাবকে উদ্দেশ্য করে বলল মেঘ)

ভাই কেনো পুরানো কথা বলে লজ্জা দিচ্ছিস,, তখন তো আর জানতাম না যে আমিও কোনো এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবো। আর আমি তো তোর মতো না,, তুই তো আমাকে দিয়ে আমার বোনকে লাভ লেটার পাঠাতে চাইছিলি (মেহরাব)

আরে আমি কি তখন জানতাম যে মেঘলা তোর বোন।।। আচ্ছা বাদ দে তা তুই কি মাহিকে বলেছিস??? যে তুই ওকে ভালোবাসিস??(মেঘ)

না বলিনী তবে বোঝার চেষ্টা করছি ও আদেও আমায় পছন্দ করে কি না(মেহরাব)

তাহলে এক কাজ কর তুই মাহিকে দেখিয়ে অন্য মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় কর যদি ও জেলাস হয় তখন বুঝবি যে ও তোকে ভালোবাসে (মেঘ)

না আমি এটা কখনোই করবো না,,, আমি আমাদের মধ্যে কখনোই কোনো থার্ড পার্সন কে আনবো না,, এতে সম্পর্কে একটা খারাপ প্রভাব পড়ে হোক সেটা অভিনয় তবুওও।।আমি চাই মাহি আমাকে বুঝুক আমার থেকেও অনেক বেশি করে আমাকে চিনুক,, ওর নিজের মতো করে আমাকে ঝুকে নিক আমি কখনোই বলবো না আমি তোমাকে ভালোবাসি,, ওকে বুঝে নিতে হবে, মানছি ও অবুঝ তবুও ওকে আমার ভালোবাসা বুঝে নিতেই হবে হবেই #বুঝে_নাও_ভালোবাসি। অনেক বেশিই ভালোবাসি।

চলবে,,,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here