ভালোবাসি_বুঝে_নাও?? #পর্ব_১১,১২

0
1217

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_১১,১২
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
১১

সকাল হতেই চারিদিকে হইচই চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো,, যতই হোক বিয়ে বাড়ি বলে কথা,, কালকে গায়ে হলুদ পরশো দিন বিয়ে,,, আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছে মাহি,,, পাশে তাকিয়ে দেখলো মীরা ঘুমাচ্ছে তাও মাহির থেকে অনেকটা দূরে খাটটা অনেকটা বড় তো তাই, আর মাঝে একটা নয় দুইটা কোল বালিশ দিয়ে রেখেছে,৷ মীরাকে দেখে মাহির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো ও পাশের টেবিল থেকে কাজলটা নিয়ে মীরার মুখে ইয়া বড় একটা বাদশাহী গোঁফ একে দিলো,,

হিহিহি অনেক মজা না?? আমার ফুল নষ্ট করা এখন বুঝবে মজা,,,কি ঘুমরে বাবা ঘুমাও তুমি চান্দু পরে বুঝবে (কথাগুলো বলে বিছানা থেকে নেমে বাইরে গেলো মাহি)

ব্রাশ করতে করতে নিচে নেমে দেখলো বাড়ি ভর্তি অনেক মানুষ বিয়ে উপলক্ষে অনেক আত্মীয় স্বজনরা এসেছে,, সবাই একটা না একটা কাজ করছে,,, বসার ঘরে গিয়ে দেখলো, মেহরাব, মেঘ মাহির ছোট মামা আর মাহির আব্বু সবাই মিলে লিস্ট তৈরি করছে কি কি লাগবে তার,, এখানে তো আর কেটারিং এর লোক নেই তাই সবটা নিজেরাই করতে হবে।

মেঘ ভাইয়া আপনি মেঘলা আপুকে দেখেছেন?? কোথাও খুজে পাচ্ছি না(মাহি মেহরাবদের কাছে গিয়ে বলল)

না তো আমি দেখিনি,, দ্যাখো এদিকেই কোথাও আছে খুঁজো ঠিক পেয়ে যাবে(মেঘ)

মাহি এখানে আমরা কাজ করছি তুই বাইরে যা,,মার কাছে গিয়ে জিগাস কর (মাহির বাবা)

ঠিক আছে আব্বু,,,

মাহি মন খারাপ করে চলে আসছিলো তখনি মেহরাব বলল।

দাড়া ওখানে,,,

ছোট্ট চাচ্চু তোমরা একটু দ্যাখো আমি এখুনি আসছি,,(এই বলে মেহরাব চলে গেলো আর মাহিকেও আসতে বলল,)

এখানে এসে তোর সাহস বেড়ে গেছে দেখছি?? (মেহরাব)

কেনো আমি কি করলাম আবার(মাহি)

আগে মুখটা ধুয়ে আয় তারপর বলছি,,, তারপর মেহরাব কল চাপ দিলো আর মাহি মুখটা ধুয়ে নিলো,,, মেহরাব৷ মাহির হাত ধরে টেনে একেবারে নিজের রুমে চলে গেলো। তারপর সুন্দর করে মুখটা মুছিয়ে দিয়ে বলল।

এখানে চুপচাপ বসে থাক আমি আসছি,,, তার কিছুক্ষণ পর মেহরাব হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আসলো,,

হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি তারপর যেখানে খুশি যা,, এখানে এসে ফুপি আর আমি যেই একটু কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেছি ওমনি তুই খাওয়াই অনিয়ম শুরু করেছিস,, শরীলের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছিস?? শুকনা কাঠি একটা,, নে যলদি হা কর আমার কাজ আছে (মাহির সামনে এক লোকমা ভাত ধরে)

এতো সকালে??? হুম না আমার খেতে মন চাইছে না এখন(মাহি)

তোর এখনো সকাল মনে হচ্ছে??? ৯ টা বেজে গেছে,, নে যলদি হা কর এখনি আবার আমার ডাক পড়বে (মেহরাব)

মাহি মেহরাব এর ধমক শুনে হা করল তারপর মেহরাব আস্তে আস্তে সবগুলো ভাত মাহিকে খাইয়ে দিলো।

ভাত গুলো কার পেটে গেলো হুম?? খুব তো না না করছিলি,,, এখন যেখানে ইচ্ছে যা।(মেহরাব)

আপনি খাবেন না???(মাহি)

আমি কি তোর মতো নাকি আমি আরো অনেক আগেই খেয়ে নিয়েছি অনেক কাজ আছে আমার আমি গেলাম (এই বলে মেহরাব চলে গেলো)

মীরা ঠিক ১২ টায় ঘুম থেকে উঠল,,,, উঠে চুলগুলো স্টাইল করে এক পাশে রেখে ফোন টিপতে টিপতে নিচে নামলো,,, আর ওকে দেখে নিচে যে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো খেলছিলো তারা হাসতে লাগলো ৷

কিরে ওমন বিয়াদপের মতো হাসছিস কেনো??(রেগে বলল মীরা)

ছীড়া আপু না না থুক্কা মীরা আপু তুমি ওমন করে বাদশাহী মুছ রাখলে তো ওরা হাসবেই,, জীবনে তো আর মেয়ে মানুষের এমন ইয়া বড় গোঁফ দেখেনি তাই হাসছি(রকি+রাকিব বলল)

হুয়াট?? রাবিশ,, কি সব ভুলভাল কথা বলছিস (রেগে বলল মীরা)

আমরা ঠিকি বলছি তুমি গিয়ে আয়নায় নিজের মুখটা ভালো করে দ্যাখো গা(রাকিব)

মীরা রেগেমেগে নিজের রুমে গেলো তারপর আয়নায় নিজের মুখটা দেখে রেগে ফায়ার হয়ে অনেক জোরে জোরে নিজের মা কে ডাকতে লাগল।

মম মম কোথায় তুমি জলদি আসো(মীরা)

মীরার মা কেবলি একটা হাড্ডি নিয়ে চিবোচ্ছেলো তখনি মেয়ের এমন রাগি কন্ঠে ডাকা শুনে হাড্ডি টা ফেলে হন্তদন্ত হয়ে মীরার রুমে ছুটল।

কি হয়েছে বেবি হুয়াট্স হ্যাপেন???

লুক (মীরা ওর মায়ের দিকে ঘুরে)দেখো দেখেছো তোমার মেয়েকে কেমন জোকার বানিয়ে দিয়েছে।

কি?? এত বড় সাহস কার?? এটা যে করেছে তার অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে।

আম শিওর এটা মাহি ছাড়া আর কেউ করবে না,, কেননা এখানে শেষে আমি আর মাহি ছিলাম আর এখন ও নেই,, ওই এটা করেছে (মাহি)

কি?? ওর এত বড় সাহস ওকে তো আমি (মীরা ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল)

না মা তুমি কিছু করো না,, ও আমাকে সবার সামনে হাসির পাএ বানিয়েছে তো?? ওকে এর মাসুল তো ওকে দিতেই হবে, তুমি শুধু দেখবা আমি ওর সাথে ঠিক কি কি করি(মীরা)

কি করবি??

সেটা সময় হলেই দেখতে পারবে,, এখন সরো আমি মুখটা ধুয়ে মাহিকে খুঁজতে হবে (এই বলে মীরা চলে গেলো)

,,,,,,,ওদিকে,,,,,

মাহি একটা গামছা মাথায় দিয়ে চুপিচুপি বাড়ি থেকে বার হচ্ছে,, কেননা একটু আগে ইশিতা আর রকি রাকিব দের সাথে মাহিও পুকুরে যাচ্ছিলো গোসল করতে,, মেঘলা ছিলো না,, বিয়ের কণেদের নাকি ভর দুপুরে কোথাও বেরোতে হয় না তাই বলেছে গ্রামের মুরুব্বিরা তাই মেঘলা ওদের সাথে যাইনি।

তাই ওরা যখন যাচ্ছিলো তখনি মেহরাব সামনে এসে মাহিকে যেতে নিষেধ করেছে,, কেননা ও নিজে কাজ করছে যেতে পারছে না আবার মেঘলাও সাথে নেই তারপর আবার মাহি সাঁতার ও জানে না তাই ওকে বাড়ির কলে গোসল করতে বলে আবার কাজে চলে গেছে মেহরাব,,, আর সবাই যেহেতু মেহরাবকে ভয় পাই তাই মাহিকে না নিয়েই চলে গেছে,, তো এখন মাহি চুপিচুপি যাচ্ছে যাতে মেহরাব ওকে না দেখতে পাই।

আরে মাহি এমন চুপিচুপি চোরের মতো কোথায় যাচ্ছে দেখিতো(মীরাও মাহীর পিছন পিছন গেলো)

আমি এসে গেছি(পুকুর পাড়ে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল মাহি)

একি তুই?? তুই এখানে এসেছিস ভাইয়া জানে??(ইশিতা)

যদি বলি না তাহলে আপু আমায় জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে,, তার বদলে আমি মিথ্যা বলি,, একটু মিথ্যা বললে কিছু হবে না (কথাগুলো মনে মনে বলে মাহি বললো)

হ্যাঁ আমি তো ভাইয়াকে বলেই এসেছি (ডাহা মিথ্যা কথা)

ভাইয়া তোকে আসতে বলল??(একটু ভেবে) আচ্ছা ঠিক আছে আয় এখানে দাঁড়াই থাক আমরা গোসল করে আসি তারপর আমরা পাড়ে বসবো তারপর তুই গোসল করবি ঠিক আছে??

আচ্ছা ঠিক আছে (এই বলে মাহি পুকুরের এক কিনায় দাড়াই থাকলো)

ওহ তারমানে এ চুপিচুপি এখানে আসলো? যত্তসব ঢং (এই বলে মীরা ওখান থেকে চলে আসতে গেলে,, একটু ভেবে) আরে আমি এতো বড় একটা সুযোগ এখুনি মিস করছিলাম,, (একটা শয়তানি হাসি দিয়ে) আমায় সবার সামনে হাসির পাএ বানানো না এবার বুঝবি মজা,, এই বলে মীরা মাহির কাছে গেলো।

আরে মাহি তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো যে গোসল করবে না??(মীরা)

আরে এ এখানে?? আমি সকালে এর সাথে এতোকিছু করলাম তাও ওনি আমার সাথে এতো ভালো করে কথা বলছে?? মনে হয় বুঝতে পারিনি যে কাজটা আমি করেছি হিহিহিহি কি বোকা (মনে মনে কথাগুলো বলে মাহি বলল)

হ্যাঁ আপু আমি গোসল করবো কিন্তু আমিতো সাঁতার জানি না তাই এখানে দাড়িয়ে আছি ইশিতা আপু গোসল করে আসবে তারপর আমি নামবো (মাহি)

আরে না না তুমি ওতো পরে নামবে কেনো,, এখুনি নামো আর আমি তো এখানে আছিই তোমার কোনো ভয় নেই কিছু হলে আমি ওদের ডাক দিবো।

সত্যি আপু তুমি এখানে থাকবে??

হুম থাকবো তো তুমি নামো,,, আর ইশিতা রাও তো বেশি দূরে নয় ওই তো ওরা পুকুরের মাঝে ভেলার উপর ভেসে বেড়াচ্ছে তুমি ডাক দিলেই তো ওরা চলে আসবে।

আচ্ছা ঠিক আছে আমি নামি তাহলে বলো??

হুমম নামো নামো।

মীরার কথা শুনে মাহি গামছাটা পাড়ে রেখে পুকুর ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে পানিতে নামছে,, পানি শুকিয়ে যাওয়াই পানি অনেকটাই নিচে নেমে গেছে আর পানির ভিতর কার সিঁড়ি উপরে বার হয়ে গেছে,, আর অনেক দিন পানির নিচে থাকায় অনেকটা শ্যাওলা জমে অনেক পিচ্ছিল হয়ে গেছে,,, মাহি পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো যখনি ওই পিচ্ছিল সিঁড়ি তে পা দেবে তখনি মীরা পিছন থেকে মাহির নাম ধরে ওকে ডাক দিলো।

মাহি??(মীরা ইচ্ছে করে মাহিকে ডেকেছে যাতে মাহি অন্যমন্ষক হয়ে ওই সিঁড়ি তে পা রাখে আর পানিতে পরে যায়। ঠিক তাই হলো মীরার ডাক শুনে যেই মাহি মীরার দিকে তাকালো ওমনি ওই সিঁড়ি তে পা পরায় ঝপাৎ করে পানিতে পরে গেলো)

এবার বুঝবে মজা আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে এমনি হয় (মীরা জানে মাহি পানিতে পরার কিছুক্ষণ পর ইশিতা ঠিক পেয়ে যাবে আর ওকে বাঁচাবে কিন্তু ইশিতারা আসার আগ পযন্ত একটু হাবুডুবু খাক,, দেখুক কেমন লাগে, আমার সাথে লাগতে আসা না?? তারপর মীরা ওখান থেকে চলে গেলো আর ওদিকে মাহি)

চলবে,,,,,,?

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও??
#পর্ব_১২
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
গলা পানিতে দাড়িয়ে আছি,, এতো পানির নিচে দাড়িয়ে থেকে যতটা না ভয় লাগছে তার থেকে বেশি ভয় লাগছে মেহরাব ভাইয়াকে দেখে ওনি ঠিক আমার সামনে পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে,, আর ওনার পিছনে ইশিতা আপু রকি রাকিব দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,,, আমার এতো পানির মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে হেব্বি ভয় লাগছে যেনো মনে হচ্ছে এখনি কিছু এসে পানির নিচে থেকে আমার পা টেনে ধরে নিয়ে যাবে, উফফ ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না। আসোলে তখন মীরা আপু ওভাবে ডাক দিয়াই আমি তাল সামলাতে না পেরে পানিতে পরে যায়,,, আর পানি অনেকটা শুকিয়ে যাওয়াই বেশি দূর যায়নি তবুও মনে হচ্ছিল যেন ডুবে যাচ্ছি সাহস করে পা নামিয়ে দেখি যে গলা পানিতে পরেছি ভাগিস্য আর একটু দূরে পরেনি তাহলে তো একদম পানির তলদেশ চলে যেতাম আর পানি খেয়ে একদম ঢোল হয়ে যেতাম,।

আমি ওখানে দাড়িয়েই ইশিতা আপুদের ডাক দিলাম ওরা আমার ডাক শুনে পাড়ে এসে আমায় তুলতে গেলেই তখনি কোথা থেকে মেহরাব ভাই এসে সবাইকে পুকুর থেকে উঠায়ে দিয়ে আমাকে এভাবে গলা পযন্ত পানিতে দাড় করিয়ে রেখেছে। এসব ভাবছিলাম তখনি ভাইয়ার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।

কিরে কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেনো?? গোসল কর তোর না পুকুরে গোসল করার অনেক ইচ্ছে তো কর (মেহরাব)

পানি খাওয়ার জন্য কলপাড়ে আসতেই দেখি মাহি গামছা মাথায় দিয়ে চুপিচুপি পুকুর ঘাটের দিকে যাচ্ছে আমি তখনি ওকে ডাকতাম কিন্তু তখনি ছোট কাকু আমায় ডাক দিলো আর আমি আসতে পারলাম না তারপর কাজ সেরে পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি মেড্যাম গলা পানিতে দাড়িয়ে আছে আর সবাই ওনাকে উঠাচ্ছে (মেহরাব)

আমার অনেক ভয় লাগছে ভাইয়া, মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার পা পানির নিচে থেকে টানছে(ভয়ে ভয়ে বলল মাহি)

তাই বুঝি?? কে টানবে?? কেউ নেই তুই গোসল কর আমরা যাচ্ছি ওকে,,আর আপনারা এভাবে ভিজা গায়ে দাড়িয়ে আছেন কেনো যান বাড়ির ভিতর যান(ইশিতাদের উদ্দেশ্য করে) তারপর মেহরাবরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যাচ্ছিলো,, আমি তা দেখে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে বললাম।

আমি ও যাবো আমায় নিয়ে যান প্লিজ আমার অনেক ভয় করছে আমি উঠতে পারছি না,,, আর এমন করবো না সত্যি (কেঁদে কেঁদে বলল মাহি)

এর আগেও বলেছিলি যে আর এমন করবি না, আমায় না বলে কোথাও যাবি না,, তাহলে আমি নিষেধ করা সত্বেও এখানে আসলি কেনো??(মেহরাব)

ভুল হয়ে গেছে আমার আর করবো না সত্যি এই শেষ বার প্লিজ উঠান আমায়(কেঁদে)

সত্যি তো??

হুম সত্যি(একবার এখান থেকে উঠি তারপর আবার করবো এমন আপনার কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে নির্ঘাত ভয় পাই তাই,, মনে মনে বলল মাহি)

এখন এমন করে বলছে আমি জানি এ আবার একটা না একটা ভুল করবেই এ কখনো শুধরাবে না (মনে মনে বলে মেহরাব পানিতে নেমে মাহিকে তুলে আনলো).

,,,রাতে,,,,

কারেন্ট চলে গেছে তাই আমরা সবাই উঠানে বসে গল্প করছি আর বড়রা সবাই অন্যদিকে বসে গল্প করছে,,, একটা বড় মাদুর বিছিয়ে আমি মেঘলা আপু আর ইশিতা আপু বসে আছি আর আমাদের পাশেই একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে মীরা বসে ফোন দেখছে। আমরা গল্প করছি তখনি মেহরাব ভাই মেঘ ভাইয়া সোহান রকি রাকিব আর মুনির আসলো।

কি হচ্ছে এখানে??(মেঘ)

আমরা তো এখানে এমনি গল্প করছি কালকে কি করবো তা নিয়ে (মাহি)

ওহ তাই নাকি তাহলে তো আমাদের ও শুনতে হয়(এই বলে মেঘ ভাইয়ারা সবাই আমাদের সামনে আরেকটা মাদুরে বসে পড়ল,,, ওনাদের বসা দেখে মীরা আপু সাথে সাথে চেয়ার থেকে নেমে মেহরাব ভাই এর কাছে বসতে গেলো তখনি মেহরাব বলল)

কিরে তুই এখানে আসছিস কেনো?? এতো ছেলেদের মাঝে যা ওদের সাথে গিয়ে বস(ধমকে বলল মেহরাব)

আমরা বলেছিলাম বসতে ওর নাকি মাদুরে বসতে পারে না তাই চেয়ারে বসেছে (মেঘলা)

আচ্ছা তাহলে তুই চেয়ারেই বসে থাক ওকে(মেহরাব)

মীরা মুখ বাকা করে গিয়ে আবার চেয়ারে বসে পড়ল।

জানেন তো ভাইয়া আমরা মেয়েরা অনেক কিছু পারি এই জন্যই তো সবাই বলে লেডিস ফাস্ট আর ছেলেরা তো কিচ্ছু পারে না একেবারে অকর্মার ঢেঁকি (ইশিতা)

এই অকর্মার ঢেঁকি মানে কি?? জানি না তবে ইশিতা আপু যখন বলেছে তখন হবে হয়ত ছেলে নিয়ে কিছু (এটা মনে মনে ভেবে মাহি বলল)

হ্যাঁ আপু তুমি একেবারে ঠিক বলেছো (মাহি)

কিহ এতো বড় অপমান?? না না ছেলেরা এটা কিছুতেই মানবে না এর কিছু একটা বিহিত করতেই হবে, কিরে মেহরাব কিছু বল তুই(মেঘ)

হুম তাহলে কাল মেঘলার হলুদ সন্ধ্যায় একটা প্রতিযোগিতা হয়ে যাক ছেলে vs মেয়ে দেখি কারা জেতে (মেহরাব)

হুম হুম হোক প্রতিযোগিতা আমরা রাজি কি বলো আপুরা (মাহি)

হ্যাঁ আমরাও রাজি,, এবার প্রমান হয়ে যাবে কারা বেশি কাজের (মেঘলা +ইশিতা)

তবে তবে,, যে পক্ষ জিতবে সে পক্ষ অপর পক্ষকে যা করতে বলবে সেটাই কিন্তু করতে হবে,, কি রাজী?(মেহরাব)

হুম আমরা রাজী (সবাই)

আমি কিন্তু মেহরাব এর দলে (মীরা)

হ্যাঁ তুমি তো ছেলে পক্ষ হবেই তোমাকে তো দেখতে ছেলে ছেলেই আমার তো সন্দেহ হয় তুমি আদৌও মেয়ে কিনা (এটা বলে ইশিতা ফিক করে হেসে দিলো সাথে সবাই)

কি বললে তুমি??(রেগে বলল মীরা)

এই চুপ সবাই,, মেয়েরা একদিকে আর ছেলেরা একদিকে সো না ছেলেদের মাঝে কোনো মেয়ে আসবে আর না মেয়েদের মাঝে কোনো ছেলে যাবে ওকে (মেহরাব)

হুম ওকে।

এবার তাহলে হারার জন্য প্রস্তুত হও আমার অবুঝ পরী(মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল মেহরাব)

হম?? দেখা যাবে কারা জেতে আর কারা হারে, জিতবো তো আমরাই (মাহি)

হুম?? দেখা যাবে হারার পর যেনো আবার কেউ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে না কাঁদে (মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল)

মাহিও চোখ কটমট করে তাকালো মেহরাব এর দিকে।

,,,,সকালে,,,

সকালে উঠেই সবাই ছুটাছুটি করছে বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ সবার,, আবার এরি মাঝে ১০ টা বেজে গেছে সময় যেনো দৌড়ে চলে যাচ্ছে।

আপু আমিও উটবো প্লিজ আমাকেও উঠাও (মাহি)

হ্যাঁ তোকে গাছে উঠাই আর মেহরাব ভাই আমায় সপাং সপাং করে চড় মারুক তাই না?? না বাবা দরকার নাই তুই বরং নিচে থেকেই পাতাগুলো গোছা।(ইশিতা)

আসোলে আজকে মেঘলার গায়ে হলুদ তো তাই ইশিতা মাহি আর রকি রাকিব গেছে গাছ থেকে নিম পাতা পারতে তারপর হলুদ উঠাতে হবে তারপর ওগুলো বেটে মেঘলার গায়ে লাগাবে,, তো ইশিতা আর রকি রাকিব গাছে উঠে নিম পাতা পারছে আর মাহি নিচে দাঁড়িয়ে আছে ও উঠতে চাইছিলো কিন্তু ইশিতাই উঠাইনি, কেননা মেহরাব এর কড়া নিষেধ আছে।

তারপর ওরা নিমপাতা পেরে আর বাগান থেকে হলুদ তুলে বাড়ি ফিরে গেলো,, তারপর বড়দের কাছে দিয়ে দিলো ওনারা ভলো করে ধুয়ে ওগুলো একএে বেটে একটা বাটিতে নিয়ে মেঘলাকে নিয়ে পুকুর ঘাটে গেলো এটা মেয়েলি অনুষ্ঠান তাই ছেলেরা কেউ নেই, অন্যদিকে মেঘকে আগে হলুদ লাগিয়ে বসিয়ে রেখে তারপর সেই হলুদ নিয়ে এবার মেঘলাকে লাগাবে তারপর বাকিটা সবাই সবাইকে মাখাবে।

চারজন চারপাশে একটা কাপড় উঁচু করে ধরে আছে আর তার নিচে মেঘলাকে বসিয়ে রেখে ওর গায়ে হলুদ মাখাচ্ছে,, মাহি দূরে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসছে তখনি কেউ ওর হাত টেনে নিয়ে গেলো, মাহি তো ভয় পেয়ে গিছিলো তারপর তাকিয়ে দেখে মেহরাব।

একি মেহরাব ভাই আপনার মুখের এই অবস্থা কেনো??(মেহরাব এর সারা মুখে হলুদ মেখে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে)

আরে আর বলিস না মেঘ এমন করেছে।

আরে আমাকে নিয়ে এখানে আসলেন কেনো??

তোকে একটা জিনিস দেবো তাই।

কি জিনিস দেন দেন।

আগে চোখ বন্ধ কর তারপর দেবো।

মাহির তো গিফট পেতে হেব্বি লাগে তাই মেহরাব এর বলার সাথে সাথেই টপাটপ করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।আর তখনি মেহরাব নিজের মুখটা মাহির মুখের সাথে ঘষে নিজের মুখের হলুদ টা ওর মুখে দিয়ে চলে গেলো। আর মাহি তো ওখানেই চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো কি হলো কিছুই বুঝলো না কিন্তু বুকের মধ্যে কেমন যেনো একটা ভালো লাগার বাতাস বয়ে গেলো।

,,,,চলবে,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here