The_Boss
Last part…(29)
Aarizona Ella.
মায়া মন খারাপ করে বসে আছে চোখ থেকে দু একফোটা জলও গড়িয়ে পড়েছে তার,,ইলমাজকে আসতে দেখে জলদি চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলো মায়া।
ইলমাজ মায়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে পাশে এসে বসলো তারপর বলতে লাগলো,
আমি জানি তুমি কি করছিলে,নেক্সট টাইম থেকে যদি আর কখনো কেঁদেছো তো দেখবে আমি কি করি।রাগান্বিত গলায় বললো।
মায়া হাল্কা নাক টেনে বললো,
আমি কাঁদছিলাম না ইলমাজ,মাঝে মাঝে কিছু অনুভূতিকে থামিয়ে রাখতে ভীষণ কষ্ট হয়।
তুমি জানো টার্কিশ রং টা আমার প্রাক্তনের প্রেমিকার খুব পছন্দের ছিলো,তাই তোমাকেও প্রথম বার ওই রঙে দেখতে চেয়েছিলাম।।(ইলমাজ)
কিন্তু কেন?মায়া নাক ফুলিয়ে আড়চোখে তাকালো ইলমাজের দিকে।
তোমাকে ঘৃনা আর তোমার থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম।(ইলমাজ)
কাছেই তো ছিলেন না তবে দূরে সরার দরকার কি ছিলো? মায়া চোখ ছোট করে ভ্রু দুটো উপরে উঠিয়ে নাক ফুলিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ছুড়লো ইলমাজের দিকে।
আরেহ তোমার নেশায় মগ্ন হয়ে যাচ্ছিলাম,পাগল করে দিচ্ছিলে তুমি আমাকে তাই তো এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।(ইলমাজ)
আপনাকে কি আমি বলেছিলাম আমার জন্য পাগল হতে?একটা ভ্রু উপরে উঠিয়ে বললো মায়া।।
তা কি বলতে হয়?তোমার চেহারাটা এমন যে অটোমেটিক পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।(ইলমাজ)
তাই আপনি পাগল থেকে আবার ছাগলে পরিনত হওয়ার জন্যই তো আমাকে টার্কিশ রঙের কাপড় টা ইচ্ছে করেই পড়তে দিয়েছিলেন?তাই না?ঝাড়ি দিয়ে বললো মায়া।
যখন এক্সের সাথে সম্পর্কে ছিলাম তখন আসলেই আমি একটা ছাগল ছিলাম।(ইলমাজ)
আচ্ছা?আপনার প্রাক্তন এর ইতিহাস টা আমার আজও অজানা।কিভাবে সে আপনার প্রাক্তন হলো আর ছাগল থেকে আপনি আবার পাগলে পরিনত হলেন??(মায়া)
অনেক বিরক্তিকর একটা মেয়ে ছিলো,সারাদিন শুধু বকবকবকবক করে মাথা খেয়ে ফেলতো,আর মেকাপ তো এমন ভাবে করতো যেনো উটের মুখে ময়দার খামি ছুড়ে মেরেছে,কেউ কি এতটা বিকৃত রুপে সং সাজে?(ইলমাজ)
তাহলে প্রেম করেছিলেন কেন??(মায়া)
আরেহ যা হয়েছে সব আমার ফ্রেন্ডসদের তালে। তখন কলেজে ছিলাম মাত্র,ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে, ফ্রেন্ডসরা সবাই প্রেম করতো তাই আমার ও একটু ইচ্ছা হচ্ছিলো প্রেম করতে এই মাইয়াও আমার জন্য পাগল ছিলো তাই ভাবলাম একটু প্রেম করলে আর কি হবে তাই করে ফেলা যাক।এক চোখ টিপ মেরে বললো ইলমাজ।
তারপর প্রাক্তন হওয়ার ইতিহাস টা??(মায়া)
তারপর কি এমন ফর্সা ছিলো যেমন একটা জলজ্যান্ত জোম্বি, ওই যে ওয়াকিং ডেড এর ভুত গুলোর মতো লাগতো হুবুহু।।(ইলমাজ)
তারপর ডাইরেক্ট ইতিহাসে আসেন?আড়চোখে তাকালো মায়া।।
কলেজের একটা ফ্রেন্ড এর পার্টিতে গিয়েছিলাম,সে এমনি তে ছিলো বাংলা কধু,চেহারায় একপয়সার ও মায়া ছিলো না তার উপর করেছিলো ৬ ধাপের মেকাপ,লাল টকটকে লিপ্সটিক পড়েছিলো টার্কিশ রঙের ত্যানা টাইপের একটা গাউন,আমি তো দেখে প্রায় ৪ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম।আল্লাহ মানুষ এমন ভয়ংকর ও হয়?(ইলমাজ)
ইতিহাস?রাগান্বিত স্বরে বললো মায়া।
তারপর ওইদিনই আমাকে কিস করতে চেয়েছিলো ওর লিপ্সটিক দেখে আমি ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে কাত হয়ে সেখান থেকে সোজা কেটে পড়ি,বেশ কয়েকবছর এই শোকে আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি পর্যন্ত।(ইলমাজ)
তাই টার্কিশ রং এতো অপছন্দের ছিলো আপনার?(মায়া)
হ্যাঁ কারন রঙটা ওই জোম্বির খুব পছন্দের ছিলো খ্যাত পুরা।নাক ছিটকে বললো ইলমাজ।
তার সাথে আমার সম্পর্ক কি?(মায়া)
খুব বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম তোমার প্রতি,তাই ভেবেছি হয়তো এই রঙ কে ঘৃনা করার সাথে সাথে তুমিও এর শামিল হয়ে যাবে কিন্তু তা সম্পুর্ণ বিপরীত হয়েছে,এই রঙে যে কাউকে এতটা অপরুপ লাগে তা তোমাকে না দেখলে হয়তো কখনোই বুঝতাম না,আরও বেশি মাতলামো কাজ করছিলো তোমার প্রতি।তুমিই ছিলা আমার পাগলামির কারন।(ইলমাজ)
তাহলে দূরে সরতে চেয়েছিলেন কেন?(মায়া)
কারও প্রতি অভ্যস্ত হতে চাই নি,আর এই অভ্যাস হয়ে যাওয়া মানে দুর্বলতা আর দুর্বলতা খুব খারাপ একটা পয়েন্ট যেটার সম্মুখীন আমি কখনো হতে চাই নি কিন্তু অবশেষে আমি তারই ঘেরাটোপে আটকে গেলাম।।যেদিন তোমাকে আমি দিহানের বুকে দেখেছিলাম সেদিনই বুঝতে পেরেছি খুব কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা কেমন হয়,সেদিন খুব বেশি ভয় লেগেছিলো,যদি তুমি অন্য কারও হয়ে যেতে?তখন হারে হারে টের পেয়েছি তোমাকে ছাড়া থাকার যন্ত্রণা টা কেমন।(ইলমাজ)
মুচকি হাসছে মায়া,চোখের কোনে যেন জলের মুক্ত ঝলমল করছে তার।।
ইশ!!আমারও যদি একটা প্রাক্তন প্রেমিক থাকতো, দুষ্টু হাসি হেসে বললো মায়া।
তখন তার শরীর হাজার ভাগে বিভক্ত হতো।মুখে রাগের ছাপ আর ধমকের স্বরে বললো ইলমাজ।
মায়া হো হো করে হেসে উঠলো,
আজকে পাঁচ বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি আপনাকে একটা বেবি দিতে পারার সক্ষমতা রাখি নি।।মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে,আমার মতো অযোগ্য মানুষটা কে আপনি কিভাবে সহ্য করেন।তাচ্ছিল্যের সাথে কথাগুলো বললো মায়া মুখ থেকে হাসিটা যেনো পলকেই উধাও হয়ে গেলো তার।।
মায়া,বেশি বলে ফেলছো,আগেও বলেছি তোমাকে আমার সাথে এইসব কথাগুলো শ না বলতে।আমার জন্য তুমিই পর্যাপ্ত তুমি ছাড়া আর কিছু লাগবে না আমার।যদি আবার কখনো বলো সত্যি আর কখনো তোমার দিকে তাকাবোও না আমি।(ইলমাজ)
আপনি আরেকটা বিয়ে করে ফেলুন না,সে আপনাকে অনেক হ্যাপি রাখবে,বাচ্চার বাবা বানাবে।।(মায়া)
ইলমাজ নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে ছল ছল চোখে মায়ার সামনে থেকে চলে গেলো।।মায়াও দু এক ফোটা চোখের জল গড়িয়ে দিয়ে ঢোক গিললো।।
রাত অনেক হয়েছে ইলমাজ ঘর থেকে বেরিয়েছে এখনো আসে নি,বড্ড চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে মায়া,সেই কখন থেকে মায়া নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে ইলমাজের রাগ ভাঙানোর জন্যে কিন্তু রাগ তো এমন যে বাসায় ফিরে আসার কোন খবর নেই ইলমাজের।মায়া বিষণ্ন চেহারায় ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু ইলমাজ ফোন পিক করছে না।
বেশ কিছুক্ষন পর রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ফিরে তাকালো মায়া।ইলমাজ কে দেখে তার কাছে দৌড়ে গেলো সে।
ফিরতে এতো দেরি করেছেন কেন?(মায়া)
ইলমাজ মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে তাওয়াল হাতে সোজা ওয়াশ্রুমে ঢুকে পড়লো।
মায়াও আর দেরি না করে ইলমাজের পিছু পিছু সেও ওয়াশ্রুমে ঢুকে পড়লো।।
মায়াকে দেখে কোন রিয়্যাক্ট ই করলো না ইলমাজ।মায়ার অনেক রাগ লাগছে ইলমাজের এমন আচমকা আচরনে।
ইলমাজ শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।মায়া রাগে ফুসছে আর ইলমাজের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে টগবগিয়ে ইলমাজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
আমাকে কি দেখছেন না নাকি?(মায়া)
মায়া কি বলছে তার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ইলমাজের, সে চোখ বন্ধ করে আপন মনে শাওয়ারের পানি উপভোগ করছে।
ইলমাজের উদম বুকে ডান হাতে ধাক্কা দিলো মায়া আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
সমস্যা কি আপনার হ্যাঁ?অন্ধ হয়েছেন ভালো কথা সাথে কি বয়রা ও হয়ে গেছেন??
ইলমাজ একচোখ খুলে মায়ার দিকে তাকালো আর বলতে লাগলো,
আরেকটা বিয়ে করলে তো আপনার থেকে দুরত্ব বজিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে নাহলে পাপ হবে পাপ।
কিইইইইইই?তুই বিয়ে করবি আরেকটা? তোকে আজকে মেরে ফেলবো ন্যাকা কান্না করে ইলমাজের বুকে ঘুষি মারতে শুরু করলো মায়া।ইলমাজ মায়ার দুহাতের কব্জি ধরে টেনে মায়াকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে বলতে লাগলো,
যেগুলো সহ্য করতে পারবে না ওগুলো করতে বলো কেন হ্যাঁ?মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে বললো ইলমাজ।
স্যরি আর কখনো বলবো না।ফুপিয়ে কাঁদছে মায়া।
ইলমাজ মায়ার কপালে চুমু দিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলো,
আই লাভ ইউ মায়া,আই লাভ ইউ সো মাচ,তুমি ছাড়া আর কারও দিকে তাকাতে ইচ্ছে পর্যন্ত করে না,তুমি ছাড়া না কেউ আমার জীবনে ছিলো আর না কেউ থাকবে।
আই লাভ ইউ টু ইলমাজ।।
ভিজে গেছো,আসো চেঞ্জ করিয়ে দেই ঠান্ডা লেগে যাবে নাহলে।(ইলমাজ)
মায়া লজ্জায় ইলমাজের বুকে মুখ লুকালো,ইলমাজ আবারও বলতে শুরু করলো,
ডাক্তার বলেছিলো বেবি নেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে আর আমার মন বলছে আমাদের চেষ্টা এবার বিফলে যাবে না,বাকা হেসে মায়ার কানে ফিসফিসিয়ে বললো সে।
মায়াকে এলোপাথারে কোলে তুলে নিলো ইলমাজ,মায়ার কপালে চুমু দিয়ে ওয়াশ্রুম থেকে বেরিয়ে মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মায়ার উপর ইলমাজও ঝুকে পড়লো।।
হয়তো আবারও নতুন আলোর উদয় হতে চলেছে,সম্পুর্ন পরিবারের আশায় ভালবাসার প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করছে তারা,ভালো থাকুক সব চাওয়া পাওয়ার মানুষগুলো, সত্যি হোক তাদের অফুরন্ত স্বপ্নগুলো।।।
——সমাপ্ত,,,,।।।।