The_Colourful_Fragrance_Of_Love? Part: 06,07

0
1685

?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 06,07
Eva rahman
06

হিয়া স্নান করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বেড়িয়ে আসতে চেষ্টা করে,উজান এতোক্ষণ হিয়ার ঔ ছোট্ট বিছানা টার এক সাইডে এসে বসে ছিলো,হিয়া স্নানে থাকাকালীন হিয়ার মামু এসে উজানের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করে বাহিরে গিয়ে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে শুরু করে,আজ উজান প্রথম হিয়াদের বাড়িতে এসেছে আর জামাই কে যে ওনার ঠিক মতো না খাওয়ালেই নয়,উনি আবার হিয়ার মামির মতো নন উনি মন থেকেই হিয়াকে খুব ভালো বাসেন একদম নিজের মেয়ের মতো,,,হিয়া বেড়িয়ে এসে উজানের সামনে তোয়ালে টা এগিয়ে দিতেই একটা হাঁচি দিয়ে উঠে

হিয়াঃ হাঁচি টা ওনার সামনেই আসতে হলো,ধ্যাত

উজানঃ এই ভরা সন্ধ্যায় স্নান করবার কি দরকার ছিলো,আর একটু রাত টা বাড়তো তারপর না হয় করতে

হিয়াঃ আপনিও তো রোজ রোজ ঔ অফিস থেকে ফিরে রাত করে স্নান করেন তার বেলা

উজানঃ একদম মুখে মুখে তর্ক করবা না(ঝারি দিয়ে) আমার অভ্যেস আর তোমার অভ্যেস কি এক,ইডিয়ট_______এখন এরকম করে দাঁড়িয়ে না থেকে ব্যাগ গুছিয়ে নেও আমরা বাড়ি ফিরবো

হিয়াঃ কি,কেনো

উজানঃ সারাজীবন কি এখানে পড়ে থাকবার ইচ্ছে আছে

হিয়াঃ হ্যা মানে না,মানে,,আমি আপনার সাথে আজ ফিরতে পারবো না

উজানঃ হোয়াই

হিয়াঃ কাল নিপার বোনের বিয়ে আর নিপা বলেছে আমাকে থাকতে হবে মানে হবেই,আর নিপা আমার অনেক ভালো বন্ধু আমি এখন কি করে ওর কথা টা ফেলি বলুন তো

উজানঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে চোখ মুখ খিচে) কখন বিয়ে কাল

হিয়াঃ দুপুরে

উজানঃ বিকেলের মধ্যেই আমরা বাড়িতে ইন করবো কথা টা যেনো মাথায় থাকে

কথা টা বলেই উজান তোয়ালে টা হিয়ার হাত থেকে দুম করে নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়,এদিকে হিয়ার আজ খুব রাগ হয় কি সুন্দর এ কদিন ও একটু নিজ মন মতো গ্রামে খেলেধুলে স্বাধীন পাখির মতো উড়ে বেরহচ্ছিলো আর কাল থেকে কি না আবার সেই বন্দী জীবন,ধুর
____________________
রাতে খাবার টেবিলে মামি উজানের পাতে ইচ্ছে মতো সব ঢালছিলো আর তা দেখেই উজানের মেজাজ পুরো বিগড়ে যায়,মামি যে শুধু দেখানোর জন্যই উজানকে বেশি তললাই করতে থাকে এটা উজানের বুঝতে বিন্দু মাএ ভুল হয় না,হিয়া এসে মামির থেকে বাটি টা নিয়ে নেয় উজান যে এর চাইতে বেশি খেতে পারবে না এটা এ কদিনে বেশ বুঝেছে হিয়া,তবে এদিক দিয়ে হিয়ার মামু যে হিয়াকে মন থেকে ভালোবাসে এটাও বুঝে ফেলে উজান,,ডাইনিং টেবিলে আজ প্রথম হিয়ার মামুর সাথে কথা হয় উজানের,বেশ ভালো ভাবেই গল্প করে তারা দুজন আসলে উনি যে পেশার তার সাথে উজানদের আর্কিটেকচার প্রফেশনের অনেক যোগাযোগ সেই সূএে গল্প টা জমে উঠে আরকি দুজনের,,,,খাওয়া শেষে এবার ঝামেলা বাধে কে কোথায় ঘুমোবে তা নিয়ে,হিয়ার খাট টা তো উজানের সোফাটার সমান এখন এই খাটে না উজান ঠিক মতো শুতে পারবে না হিয়া উজান আলাদা থাকতে পারবে,শেষ মেষ ঠিক হয় চিএার ঘরে বড় বিছানাটায় উজান হিয়া আজ রাত টা থাকবে,কথা মতো চিএা গিয়ে উজান কে ওর রুম টা দেখিয়ে দিয়ে চলে আসে,রুমের মধ্যে ঢুকে ফোন হাতেই উজান চিএার বিছানায় বসে পড়ে চিএার ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করে,হিয়ার রুম টা যতোটাই রঙ চটা চিএার রুম টা ঠিক ততোটাই সুন্দর করে সাজানো,দামি সব কাঠের আসবাবপএ দিয়ে ভরা,সাথে এই নরম তুলতুলে বিছানা,পর্দাতে টাঙানো কতো সুন্দর পুঁথি,সব পরক্ষ করে উজান ওর চোখ টা নামিয়ে নেয়,এরি মধ্যে হিয়া এসে রুমের গেট লাগিয়ে বিছানায় কোথায় ঘুমোবে মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে তাই ভাবতে থাকে

উজানঃ হোয়াট,,এরকম বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কিসের জন্য,,

হিয়াঃ এমনি,,আচ্ছা আপনি উপরে ঘুমোন,এ ঘরে তো এক্সট্রা সোফা নেই আমি বরং একটা চাদর পেতে নিচে শুইয়ে পড়ছি?

উজানঃ কেনো বেডে কি জায়গার অভাব,,

হিয়াঃ না তা কেনো হতে যাবে,কিন্তু আপনি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমোতে পারবেন,আমরা তো কখনো এর আগে এক সাথে

উজানঃ এক বিছানায় ঘুমালাম বলে যে এক সাথে ঘুমালাম ব্যাপার টা নিশ্চয় এক না

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

উজানঃ আর তাছাড়া তোমার শরীরের যে কন্ডিশন দেখছি ফ্লোরে ঘুমিয়ে কি আরো শরীর খারাপ করবার চিন্তা করছো, যাতে বাড়িতে না যেতে হয় কলেজ করতে না হয় তাই তো

হিয়াঃ আপনি না?

হিয়া উজানকে একটা ভেংচি কেটে দিয়ে বিছানার এক কানিতে গিয়ে আঁটোসাটো হয়ে শুয়ে পড়ে,আর শরীর টা ক্লান্ত থাকায় শুতে না শুতেই হিয়ার চোখ বন্ধ হয়ে আসে ঘুমে,উজান কিছুক্ষণ ল্যাপটপে ওর অফিসের কিছু ফাইল চেক করে নিজেও বিছানার এক পাশ কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
_____________________

উজানের ঘুম ভাঙ্গে সকাল প্রায় ৮ টার কাছাকাছি,উঠেই দেখে হিয়া ওর পাশে নি,উঠে পড়েছে,উজান উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে হিয়াকে খুঁজতে রুম থেকে বেরুলে চিএা এসে বলে হিয়া বাড়িতে নেই,উঠোনে নিপা মিলে গল্প করছে,উজান চিএা কে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে উঠোনে গিয়ে হিয়াকে খুঁজতে গেলেই ওর চোখ পড়ে উঠোনের সামনে বড় হয়ে ওঠা পেয়ারা গাছ টার উপর,যেটার উপর উঠে হিয়া আপন মনে পেয়ারা পাড়ছে আর নিপা ওরনা পেতে দাঁড়িয়ে আছে

উজানঃ হোয়াট দা হ্যাল ইস দিস হিয়া,তুমি এই সাত সকালে গাছের উপর কি করছো?

হিয়াঃ আন্ডা পারছি খাবেন,,,,,দেখতেই তো পাচ্ছেন ফল পারছি তারপরো কি সব বোকা বোকা প্রশ্ন করছে দেখো(উজান কে একটা পেয়ারা ক্যাচ দিয়ে)

উজানঃ (টপ করে পেয়ারা টাকে ধরে নিয়ে) কালকে নিষেধ করেছি না মুখে মুখে তর্ক করবা না আমার সাথে,তারপরো এতো ওডাসিটি আসে কোথা থেকে তোমার?

হিয়াঃ আরে আচ্ছা মুশকিল তো আমি আবার মুখে মুখে কি তর্ক করছি আপনার সাথে

উজানঃ করছো না___এক মিনিটের মধ্যে গাছ থেকে নামবা নাহলে কিন্তু আমি

হিয়াঃ নাহলে কিন্তু কি

উজানঃ একটা কসিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেবো গালে,ইডিয়ট,আর সাথে মাকেও ফোন করে বলে দেবো তুমি এখানে ঠিক কি কি করে বের হচ্ছ যার জন্য বাড়িতে যেতে তোমার বিন্দু মাএ কোনো ইচ্ছে নেই?

হিয়া আর কিছু বলে না,শুধু মনে মনে ফুঁসতে থাকে,আলতো করে এক ডাল টপকে আর এক ডালে নামতে গিয়েই এবার পেয়ারা গাছে বাসা বাধা লাল পিঁপড়ের কামড়ে আচমকাই হিয়ার হাত টা ফস্কে গেলে হিয়া ওর ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাবে যাবে ওমনি উজান দৌড়ে গিয়ে নিচে ওর হাত প্রশ্বস্ত করে দাঁড়ালে হিয়া এসে পড়ে ঠিক উজানের দু’হাতের বেষ্টনে❤️

এদিকে নিপা এদের এই কান্ড দেখে ফিক করে হেঁসে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসে

উজানঃ শখ মিটেছে গাছে ওঠার

হিয়াঃ আপনার জন্যেই আমি তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পড়ে গেছি?নাহলে এসব গাছে ওঠা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না বুঝলেন,হু

উজান হিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দিলে হিয়া দৌড়ে গিয়ে ভেতর থেকে একটা সাইকেল নিয়ে আসে

উজানঃ সাইকেলে করে কোথায় যাচ্ছ আবার?

হিয়াঃ যাবেন আমার সাথে,,আসুন আপনাকে আমাদের গ্রাম টা ঘুরিয়ে নিয়ে আসি

উজানঃ এই সাত সকালে গ্রামে ঘুরবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই

হিয়াঃ ঠিক আছে,আপনি তাহলে ভেতরে গিয়ে বসুন আমি একটু এই সামন থেকে আসছি

হিয়া সাইকেলে প্যাডেল তুলে যেতে ধরলে উজান হিয়াকে থামিয়ে দেয়

হিয়াঃ কি

উজানঃ খুব সাহস না তোমার,ওস্তাদি দেখাচ্ছ আমাকে

হিয়াঃ আরে ওস্তাদি কেনো দেখাতে যাবো,আমার এরকম গ্রামে একায় চলবার অভ্যাস আছে,আমি বলছি তো আপনাকে আপনি একটু ভেতরে গিয়ে বসুন আমি এই যাবো আর এই চলে আসবো

উজানঃ আর রাস্তায় সার্তকি বলে ছেলেটা তোমায় আবার বিরক্ত করলে,তখন,

হিয়াঃ আপ-নি কি ক-রে জানলেন সার্তকি আমাকে বিরক্ত করে,,

উজান কোনো উওর দেয় না শুধু হিয়াকে চোখের ইশারায় সাইকেল থেকে নামতে বলে,হিয়া সাইকেল থেকে নামে হিয়ার তখনো চোখ বড় বড় করে রাখা কি করে এক রাতেই উজান জানলো সার্তকি হিয়াকে সুযোগ পেলেই বিরক্ত করে শুধু,উজান সাইকেলে বসে হিয়াকে চোখের ইশারায় বসতে বলে,হিয়া গিয়ে পেছনের সীটে বসতে যাবে ওমনি খেয়াল করে সাইকেলের পেছনের সীট টা নষ্ট হয়ে আছে,এখন কি হবে

হিয়াঃ সাইকেলের পেছনের সীট টা তো নষ্ট,আমি একদমই খেয়াল করিনি

উজানঃ ঠিক আছে,সামনে এসে বসো

হিয়াঃ হ্যা সামনে!!আপনার সামনে

উজানঃ হ্যা কোনো সমস্যা

হিয়াঃ না মানে সমস্যা কিছু না

হিয়া আর কথা টা লম্বা করে না,চুপচাপ আলতো করে সামনে গিয়ে বসে,আজ প্রথম হিয়া উজানের এতো টা কাছে তখন গাছ থেকে পড়ে যাবার সময় আর এখন সাইকেলে এভাবে,গ্রামের পরিবেশ টা এখন নিতান্তই ঠান্ডা থাকে,তারউপর ভোরের দিকে হালকা গুড়ি বৃষ্টি হওয়াতে সকালের বাতাস টাতে আজ একটু বেশি গা কাটা দিয়ে উঠছে,উজান কাল রাত থেকে একই শার্ট পড়ে আছে যে ছেলে নিজের স্মার্টনেসের ব্যাপারে এতোটা কেয়ারিং সে যে এখনো ঘামে ভেজা কুঁচকে যাওয়া শার্টে নিজেকে ধরে রেখেছে সেদিকে বিন্দু মাএ তার নজরদারি আজ নেই❤️

সাইকেল চলছে,উজান খুব সাবধানতার সাথে উঁচু নিচু জায়গা গুলো দেখে সাইকেল টা চালাচ্ছে,আশেপাশের সবাই কি রকম করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে,আর সবার ওরকম চাহনি তে হিয়ার ভীষণ লজ্জা করলেও উজানের কোনো ভূক্ষেপ নেই

হিয়াঃ আপনি এতো সুন্দর করে সাইকেল চালাতে পারেন জানতাম না তো,,

উজান কোনো উওর না দিয়ে চুপ করে থাকে

হিয়াঃ বা দিকের গলি টা তে মোড় নেবেন,হ্যা হ্যা এদিক টাতে____কার কাছে শিখেছিলেন সাইকেল চালানো,,কি হলো চুপ করে আছেন যে বলুনননন নাআআআআ,,

উজানঃ নীলিমা আর আমি একসাথে শিখেছিলাম

হিয়াঃ ওহ,,আপু তো শুনেছি অনেক সুন্দর গাড়ি ও নাকি চালাতে পারে,আপনারা নাকি এক সাথে ড্রাইভিং ও শিখেছিলেন মা বললো সেদিন,,

উজানঃ মা তোমাকে নীলিমার কথা বলে

হিয়াঃ হ্যা,না বলার কি আছে,রোজই তো কতো গল্প হয় আপুকে নিয়ে আমাদের

উজানঃ কি বলে মা নীলিমা কে নিয়ে

হিয়াঃ অনেক কিছুই তো গল্প হয়,কোনটা রেখে এখন কোনটা বলি বলুন তো,

উজানঃ (কিছুক্ষন চুপ থেকে)তোমার কষ্ট হয় না ওসব গল্প শুনলে

হিয়াঃ কষ্ট!!কষ্ট কেনো হতে যাবে,আমার তো আপনার আর আপুর গল্প শুনতে বেশ লাগে? আপনি নাকি কি রকম চোরের মতো আপুকে দেখবার জন্য আপুর বাড়ির দেওয়াল টপকে রেলিং এর পাইপ ধরে ধরে আপুর রুমে গিয়ে আপুকে দেখতেন(কথা টা বলেঔ হিয়া ফিক করে হেঁসে দেয়

উজানঃ এতে এ-র কম করে হাসির কি আছে,,আর হোয়াট চোরের মতো,আমি কি চোর নাকি যে চোরের মতো দেওয়াল টপকে রেলিং ধরে উপরে উঠবো,ইডিয়ট

হিয়াঃ উঠেননি বলছেন (বলেই হিয়া বেআক্কালের মতো হাসতে থাকে)__থামুন এখানে এসে গেছি,,

হিয়া একটা দোকানে গিয়ে দাঁড়ালে ভেতর থেকে একটা কাকিমা এসে হিয়ার হাতে দুটো প্যাকেট ধরে দেয়,হিয়া ওগুলো নিয়ে কাকিমার হাতে টাকা তুলে দিয়ে আবার সাইকেলে এসে উঠে বসে,দুটো প্যাকেটে একটাতে আছে নিপার বোনের বিয়ের উপহার হিসাবে একটা শাড়ি আর এক প্যাকেটে আছে উজানের জন্য একটা শার্ট,হিয়া আপাতত কিছু না বলে উজানের সাথে বাড়ির দিকে এগুতে শুরু করে,চারপাশের প্রকৃতিতা আজ সত্যিই অনেক মনকড়া,হু হু বাতাসের বেগ এই মনকড়া পরিবেশ টা কে যেন আরো মোহিত করে তুলছে মুহুর্তে,সাথে হিয়ার মনটাকেও রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে

?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?

Part: 07

নিপা হিয়াকে বলে গিয়েছিলো বিয়ে তে যেনো হিয়া শাড়ি পড়ে আসে,কিন্তু শাড়ি তো দূরে থাক হিয়ার কাছে তো এই মুহুর্তে একটা ভালো জামাও নেই পড়ে যাবার,হিয়া অনেক ইতস্তত করে ওর মামির কাছে শাড়ি চাইতে যায় যদি চিএার একটা শাড়ি এক দিনের জন্য উনি হিয়াকে পড়তে দেন,উজান সামনে থাকায় মামি আর না করে না,দিতে না চাইলেও বেছে বেছে একটা সবুজ রঙের সুতির শাড়ি ধরিয়ে দেয় হিয়ার হাতে,হিয়া ওটা পেয়েই মহাখুশি যাক বিয়ে বাড়িতে পড়ে যাবার কিছু তো একটা জোগাড় হলো,

হিয়া সুন্দর মতো করে শাড়ি টা পড়ে সেজেগুজে তৈরি হয়,নিপা ফোন করে বলে হিয়া যেনো সাথে করে উজানকেও ওর সাথে নিয়ে আসে,হিয়া নিরুপায় হয়ে উজান কে ওর সাথে বিয়ে বাড়ি যাবার প্রস্তাব দিলে উজান চুপ করে থাকে,হিয়া ধরে নেয় উজান হয়তো যাবে না,তাই হিয়া আর কিছু না বলে নিজের মতো করে তৈরি হতে থাকে

মামিঃ শ্বশুর বাড়ি থেকে কি একটা শাড়ি পর্যন্ত কিনে দেয় নি নাকি তোকে,এরকম ভিখারির মতো সেই পুরনো জামা কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে বের হোস

হিয়াঃ তা কেনো হবে,ওনার মা বিয়ের দুদিন পরেই আমাকে অনেক গুলো শাড়ি আর জামা কিনে দিয়েছিলো,আমি তো জানতাম না যে আমাকে এখানে এতো টা দিন থাকতে হবে তাই কোনো রকমে এক কাপড়ে চলে এসেছি,নাহলে তো ওগুলো সাথে নিয়েই আসতাম

মামিঃ সে তোকে তোর শ্বাশুড়ি কি কিনে দিয়েছে না দিয়েছে সেটা শোনার বা দেখার কোনো আগ্রহ নেই বাপু আমার,আদৌও দিয়েছে কি না কে জানে,,,,,যাগ গে তুই তো আজ যাবি যাবার আগে আমার মেয়ের শাড়ি টা খুলে দিয়ে তারপরই যাবি,কতো দাম জানিস শাড়ি টার,চিএাও বুঝি এখনো শাড়ি টা ছুঁইয়ে দেখেনি

হিয়াঃ ঠিক আছে মামি,তুমি ভেবো না আমি শাড়ি টা দিয়ে তবেই যাবো

কথা টা বলেই হিয়া ওর মাসির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,এদিকে এতোক্ষণ দরজার ও পাশ থেকে দাঁড়িয়ে উজান সবটা শুনছিলো,সেই মুহুর্ত উজান কোনো রিয়াক্ট করে না,করলেই বিয়ে বাড়ি যাবার আগে হিয়ার মন টা খারাপ হয়ে পড়তো তাই সে চুপ থাকে,

এদিকে হিয়া এখন বিয়ে বাড়িতে যাবার জন্য বাহির দরজায় পা বাড়াতেই উজান এসে হিয়াকে থামিয়ে দেয়

হিয়াঃ আপনি!!আপনি না ঘরে কিসব ফাইল চেক করছিলেন

উজানঃ হুম,চলো

হিয়াঃ কোথায়

উজানঃ কোথায় মানে,বিয়ে বাড়িতে আবার কোথায়

হিয়াঃ আপনি যাবেন আমার সাথে

উজানঃ কেনো তুমি তো তখন বললে নিপা তোমার সাথে আমাকেও ইনভাইট করেছে তাহলে আমি যাওয়াতে সমস্যা কোথায়

হিয়াঃ সমস্যা কেনো হতে যাবে,আপনাকে দেখলে তো ও সত্যি অনেক খুশি হবে

উজানঃ তাহলে

হিয়াঃ আচ্ছা আসুন,কিন্তু হ্যা বিয়ে টা ওর মামা বাড়িতে হচ্ছে,এখান থেকে একটু দূরে,ওদিকে কিন্তু আপনার গাড়ি ঢুকবে না,আর মামু দুপুরে সাইকেল টা নিয়ে বেড়িয়েছে তাই আপনাকে আমার সাথে অর্ধেক রাস্তা অবধি হেঁটেই যেতে হবে

উজানঃ কেনো রিক্সা নেই গ্রামে?

হিয়াঃ তা থাকবে না কেনো,আসলে ওদিকের রাস্তা গুলো তো খুব সরু আর ভাঙ্গা তাই সহজে কোনো রিকশা ওদিকে যেতে চায় না

উজানঃ ঠিক আছে প্রবলেম নেই,আসো

হিয়া উজান দুজনে সরু রাস্তার মাঝ দিয়ে হাতটে থাকে,সরু রাস্তার এক পাশে বিশাল মাইল অবধি সবুজ ধান গাছ,তারি সাথে মাঝে মাঝে কিছু ইউক্যালিপটাসের ইয়া লম্বা গাছ দেখা যাচ্ছে,বাতাস বইছে সাথে ভেসে আসছে রোদের উওাপ

হিয়াঃ আমি না আর হাঁটতে পারছি না,একটা রিকশা বা অটো টোটো কিছু পেলে খুব ভালো হতো(হাঁপাতে হাঁপাতে)

উজানঃ এতোটুকুনিতে হাঁপিয়ে গেলে

হিয়াঃ এটা এতোটুকুনি রাস্তা,আর আপনি যে স্প্রীডে হাঁটছেন ওভাবে হাটা যায়,,,,একটু দাঁড়িয়ে যাই না একটা ভ্যান পেলেও খুব উপকার হতো

হিয়া ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এদিক ওদিক তাকিয়ে অটো ভ্যান খুঁজতে থাকে,এদিকে এতো গরমেও উজান নিজেও ঘেমে পুরো ত্যানা হয়ে আছে,সাদা মুখ টা ফর্সায় আরো লাল হয়ে উঠছে থেকে থেকে,অনেক কষ্টে হিয়া একটা ভ্যান ম্যানেজ করে,ভ্যান চালক টা হিয়ার অনেক পরিচিত তাই উনি এক নিমিষে রাজি হয় ওদের নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যেতে,ভ্যান চলছে,ভ্যানের উল্টোদিকে পা দুলিয়ে বসে আছে উজান হিয়া❤️

হিয়াঃ রহিম আঙ্কেল বাঁচালে আজ, এই গরমে এতোদূর রাস্তা হেটে এসে ঘেমে একদম যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে আছে

রহিম চাচাঃ আমাকে ফোন করে আগে ডাকলেই তো বাড়ি থেকে তোদের নিয়ে আসতাম

হিয়াঃ কে জানতো এরকম হবে,,,,তা খুকি এখন কোন ক্লাসে আঙ্কেল

রহিম চাচাঃ সবে তো তোর ৮পাস করলো এখন সামনে দেখি

হিয়াঃ ওসব দেখি তেখি আবার কি খুকির মতো ভালো ছাএী আছে নাকি গ্রামে,ও যতোদূর পড়তে চায় তোতোদূরই ওকে পড়াবা,আমার বর তো আমাকে ওখানে কলেজেও ভর্তি করে দিয়েছে জানো?

রহিম চাচাঃ তাই নাকি,পড় মা ভালো করে,পড়াশোনা কর,বড় হো,একদিন এই তোরাই তো আমাদের ভালো করে দেখে রাখবি বল

হিয়াঃ তা আর বলতে

গাড়ি চলতে থাকে নিজ বেগে,উঁচু নিচু জায়গায় একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অবশ্য,হিয়া নিজ মতো প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত,ওদিকে উজানো নিশ্চুপ,সব নিরবতা কাটিয়ে হিয়াই এবার কথা শুরু করে

হিয়াঃ আপনি এর আগে কখনো ভ্যানে চড়েছিলেন

উজানঃ হুম চড়েছি

হিয়াঃ বাহ,আমি তো ভাবলাম আপনাদের মতো শহরের ছেলেরা কখনো এসবে উঠেনই নি

উজানঃ শহরে বড় হয়েছি বলে কি আমাদের দেশের বাড়ি নেই

হিয়াঃ হ্যা তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,,,,তা কার সাথে ভ্যানে উঠেছিলেন,একাই?

উজানঃ না,,,,আমার প্রথম ভ্যানে ওঠা নীলিমার জন্য

হিয়াঃ আপুর জন্য!!কেনো?

উজানঃ একবার আমার সাথে অভিমান করে ও ওর গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলো,এক সপ্তাহ হয়ে আসে ও আর ফিরে না,তখন বাধ্য হয়ে বাড়িতে কাউকে না বলে সোজা চলে যাই ওর গ্রামে,রাস্তাঘাট কিছুই চিনতাম না ওখানকার,একটা ভ্যানে অভিক সহ প্রায় ঘন্টা দু একের মতো ঘুরে শেষ অবধি ওর দাদু বাড়িতে পৌঁছে ছিলাম সেদিন

হিয়াঃ তারপর তারপর(মুখে এক বালতি হাসি টেনে)

উজানঃ তারপর আর কি

হিয়াঃ তারপর আপুর মান ভাঙ্গালেন কি করে,নিশ্চয় আপানকে দেখে আপু পুরো থ হয়ে গিয়েছিলো

উজানঃ থ হয়ে ছিলো কি না জানি না,কারণ ও জানতো ওকে দেখতে না পেয়ে আমি ঠিক ওর গ্রামে চলে যাবে,তবে সেদিন আর অভিমান করে নি,,,,,বাই দা ওয়ে আমি তোমার সাথেই বা এসব কেনো শেয়ার করছি আর তোমার এতো সবসময় নীলিমার ব্যাপারে ইন্টারেস্ট কেনো,হোয়াই,,

হিয়াঃ ইন্টারেস্ট হবে না,,আপনাদের মতো প্রেম কজনের ভাগ্যে জুটে বলুন তো,আমি লেখক হলে তো আপনার আর আপুর প্রেম নিয়ে উপন্যাস লিখে ফেলতাম,হে হে

উজানঃ ইডিয়ট

_______________________
গাড়ি এসে থামে একদম উঠোনের বড় গেট টাতে,নিপা বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো,হিয়াকে আর উজানকে নামতে দেখেই দৌড়ে এসে উজানকে বসতে বলে হিয়াকে ওর সাথে বউ এর ঘরে নিয়ে যায়,হিয়া নিপাকে বলে ওরা ঘন্টা দু একের বেশি এখানে থাকতে পারবে না,আজই আবার ওকে ওর শ্বশুর বাড়িতে ফিরতে হবে,নিপা বলে ঠিক আছে তুই যে এসেছিস তাতেই আমি অনেক খুশি,

এদিকে আধা ঘণ্টা হয়ে আসে হিয়া এখনো ভেতর ঘরে,এদিকে উজান বাহিরে উঠোনে বসে সার্তকির উপর নজর রাখছে,কারণ সে খুব ভালো করে জানে সার্তকি কতোটা ডেঞ্জারাস একটা ছেলে,তবে গ্রাম থেকে যতো ছেলেই বিয়ে বাড়িতে আসছে সব চাইতে সুদর্শন পুরুষ এখানে উজান,গ্রামের মেয়ে গুলো তো উজানকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে খাচ্ছেই তার সাথে বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বি রাও উজানের দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না,তবে আমাদের হিয়াও বা কম কিসের সবুজ রঙের শাড়িতে তাকে আজ যা সুন্দর লাগছে,বিয়ে না হলে না ওখানেই আরো হাজার দশেকটা প্রস্তাব এসে যেতো,এ জন্যেই তো উজান এতো চোখে চোখে রাখছে হিয়াকে❤,,

রাইমাঃ তোর বোনের বর টা তো একদম হিরোদের মতো দেখতে রে চিএা,উফফ কি হট

চিএাঃ ধুর আর সে কথা বলিস না,ছেলে এতো হেন্ডসাম জানলে তো নিজেই বিয়ের পিড়িতে গিয়ে বসতাম,,

রাইমাঃ কেনো বিয়ের আগে দেখিস নি ছেলেটাকে

চিএাঃ সে সুযোগ ছিলো কোথায়,ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারি ঔ শাঁকচুন্নি টার আজ বিয়ে,বর নাকি রাজি না কি রকম মাতাল আধ পাগলা টাইপ,কথা বলে না,খায় না, বাড়ি থেকে বের হয় না,

রাইমাঃ সেকি এই সুস্থ ছেলে টা পাগল নাকি!!

চিএাঃ আরে না ছেলে তো পুরো খাপে খাপ,বুঝতে সেদিন আমি আর মাই ভুল করেছি না হলে জেনে শুনে কি এতো বড় জাল টা মিস করতাম

কিছুক্ষণ পর হিয়া নিপার সাথে বেড়িয়ে উজান কে নিয়ে খেতে বসে যায়,নিপা এসে একটু পর পর কি লাগবে না লাগবে দেখে যায়,উজান ওর পকেট থেকে একটা খাম বের করে,খামের মধ্যে আছে দশহাজার টাকা,আসলে উজান যখন ওখানে বসে ছিলো তখন নিপার বাবার সাথে নিপার মার কিছু কথা শুনতে পায়,নিপার বাবা ওনার সব সেভিংস দিয়ে বিয়ে টা সুন্দর মতো করে এ্যারেন্জ করেছে,কোনো কমতি রাখে নি,তাই এতো আয়োজন করতে গিয়ে ওনাকে কিছুটা টানাটানিতে হিসাব করতে হচ্ছে

উজানঃ হিয়া নিপা কে একটু আসতে বলো তো এদিকে

হিয়াঃ কেনো

উজানঃ আবার মুখের উপর প্রশ্ন,ডাকতে বলেছি ডাকো

হিয়াঃ ডাকছি,ডাকছি?

হিয়া নিপাকে ডেকে পাঠালে নিপা দৌড়ে আসে

নিপাঃ হ্যা রে বল,ডাকছিলি কিছু লাগবে

হিয়াঃ আমি না তোর জিজু তোকে ডেকেছে,কি যেন বলবে তোকে

নিপাঃ হ্যা ভাইয়া বলেন

উজানঃ এই খাম টা রাখো,তোমার বোনের বিয়ে উপলক্ষে আমার আর হিয়ার তরফ থেকে এই সামান্য একটা উপহার

হিয়াঃ আরে আমি তো উপহার কিনে রেখেছি,বাড়ি তে ভুলে থুয়ে আসছি,নিপা গিয়ে কাল নিয়ে আসবে এখন

উজানঃ তোমাকে আমি মাঝে কোনো কথা বলতে বলেছি

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

নিপাঃ এটাতে কি আছে ভাইয়া

উজানঃ কিছু টাকা আছে,এটা তুমি তোমার বাবার হাতে দিও,আমি দিলে হয়তো উনি নিতে চাইবেন না,তাই আমি

নিপাঃ আমাকে ক্ষমা করবেন ভাইয়া,এগুলো আমি নিলে মা আমাকে ভীষণ বকবে

উজানঃ বকবে না,মাসিমার সাথে কথা হয়েছে আমার,ওনাকে আশে পাশে দেখতে পাচ্ছি না তাই তোমার হাতে দিলাম

নিপাঃ আপনি ঠিক বলছেন তো

উজানঃ হুম

নিপাঃ ঠিক আছে,আপনারা খান আমি আসছি

হিয়াঃ কতো দিলেন খামে

উজানঃ দশ কেনো

হিয়াঃ দশ মানে শুধু দশ টাকা(বুম বুম বুম)

উজানঃ হোয়াট,মাথা ঠিক আছে দশ টাকা কেনো দিতে যাবো(ঝারি দিয়ে)

হিয়াঃ আপনি তো বললেন দশ,ওজন্যেই তো আমি,,

উজানঃ দশ মানে দশ হাজার

হিয়াঃ ?কি!!দশ হাজার(একটা ঢোক গিলে)দশ হাজারে জানি কটা শূন্য হয়(ফিসফিস করে)

উজানঃ কি বিড়বিড় করছো,তাড়াতাড়ি খাও বাড়ি ফিরতে হবে

হিয়া উজানের ঝারি খেয়ে খেতে শুরু করে আর দশ হাজারে ঠিক কতো টা শূন্য হয় সেটার হিসাব নিজ মনে কষতে থাকে আসলে গ্রামের স্বচ্ছল পরিবারের কেউ ও বুঝি কারো বিয়েতে এতো টাকা দেয় না,উজানের খাওয়া হয়ে গেলে উজান উঠে হাত ধুতে যায়,,কিন্তু হাত ধুয়ে এসে দেখে হিয়া ওর সীট এ বসে নেই,,উজান এপাশ ওপাশ তাকিয়ে হিয়াকে খুঁজে কিন্তু হিয়াকে কোথাও দেখতে পারে না,,নিপা কে ডেকে জিঙ্গেস করে হিয়াকে ও দেখেছে কি না কিন্তু নিপা বলে তখন কথা হবার পর তো তার সাথে আর হিয়ার কথা হয় নি,,উজানের মনে কি রকম একটা সংশয় কাজ করতে শুরু করে,,উজান এসে ওদের দু টেবিল সামনে বসে থাকা সার্তকির টেবিলে নজর দিলে দেখতে পারে সার্তকি ওর টেবিলে নেই,,উজানের আর বুঝতে বাকি থাকে না হিয়া এখন কোথায়

হিয়াঃ সার্তকি দেখ তুই কিন্তু খুব খারাপ করছিস,,আমি এখন চিৎকার করলে তোর কি অবস্থা হতে পারে তুই জানিস

সার্তকিঃ হাসালি রে হিয়া,,তোর কি মনে হয় যে জোরে গান বাজিয়ে রেখেছি আমি এই আওয়াজে তোর চিৎকার কেউ শুনতে পারবে

হিয়াঃ দেখ সার্তকি উনি যদি কোনোভাবে জানতে পারে যে তুই আমাকে,,তুই আন্দাজো করতে পারবি না উনি তোর ঠিক কি হাল করবে

সার্তকিঃ এই রাখ তো তোর হাসবেন্ড,,ছোটো থেকে তোর উপর আমার আলাদা আকর্ষণ আর তুই আমাকে রেখে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিলি,,,হয়ে তো গিয়েছিস সেকেন্ড হ্যান্ড তবুও তোর যা অল্প বয়স এতেই আমার হয়ে যাবে আজ

হিয়াঃ সার্তকি প্লিজ তুই এরকম টা করতে পারিস না,,প্লিজ ছেড়ে দে আমাকে

সার্তকি ওসব নোংরা নোংরা কথা বলে যেই হিয়ার আঁচল টা টানতে যাবে ওমনি কারো হাত এসে সার্তকির হাত দুমড়েমুচড়ে দিয়ে সার্তকি কে একদম ছুঁড়ে ফেলে

হিয়াঃ আপনি!!

উজানঃ জানোয়ারের বাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে আমার ওয়াইফ এর গায়ে হাত দেবার,,যেখানে আমি তাকে আজ অবধি ছুঁয়ে দেখি নি সেখানে তোর মতো একটা

উজান সার্তুকিকে আরো কিছু করতে যাবে তার আগে সার্তকি কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়,,আর উজানের সব রাগ গিয়ে এবার হুমড়ি খেয়ে বসে হিয়ার উপর

উজানঃ এটাই এই গ্রামে তোমার লাস্ট আসা,,আর কখনো কখনো যদি আমার পারমিশন ছাড়া এই গ্রাম তো দূরে থাক তুমি যদি তোমার বাড়িতেও আসো তাহলে আমার চাইতে খারাপ কিন্তু কেউ হবে না হিয়া কেউ না,,মনে থাকবে

হিয়াঃ জ্বী থাকবে

___________________
দুজনে উঠোনের বাহিরে বড় গেটের সামনটাতে দাঁড়িয়ে আছে,দুজনে চুপচাপ উজান রাগে আর হিয়া ভয়ে,এবার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, নিপার থেকে বিদায় নেবার জন্যেই হিয়া নিপাকে ডেকে পাঠায়

নিপাঃ চলে যাছিস,অনেক মিস করবো রে তোকে,সময় পেলে এরকম করে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসিস

হিয়াঃ আর হয়েছে আসা বাড়িতে,,,,,তাও তো এখানে জুই রা সবাই আছে তোরা এখন এক কলেজে পড়বি একসাথে যাবি আর আমি ওখানে বসে বসে শুধু

নিপাঃ কেনো নতুন কলেজে নতুন বন্ধু হবে না বুঝি তোর

হিয়াঃ বন্ধু হলেও বা কি তোদের মতো যদি ওরা না হয় তখন,,,,আচ্ছা আসি এখন সময় করে একবার মামুর সাথে আমার শ্বশুর বাড়িতে ঘুরতে যাস, ওখানে সবাই আমাকে অনেক আদর করে,,

নিপাঃ ঠিক আছে,তা কিসে ফিরবে,দাদাভাই এর সাইকেল টা নিয়ে যা না হয় আমি বরং কালকে গিয়ে নিয়ে আসবো,আসার সময় যেভাবে ভ্যানে করে এলি

হিয়াঃ বলছিস,ঠিক আছে নিয়ে আয় তাহলে,আমি এতোদূর আর হাঁটতে পারবো না বোনু

নিপাঃ ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি,জিজু আসছি,সময় হলে আবার আসবেন কিন্তু বাড়িতে

উজানঃ হুম

নিপা হিয়াকে একবার জরিয়ে ধরে ভেতরে চলে যায়,এদিকে এই গরমে ঘেমে রাগে বিরক্ত হয়ে উজানের অবস্থা কাহিল,উজান ওর শার্টের হাতা দিয়ে বারবার কপালে ভেসে ওঠা ঘাম টা মুছছে তো মুছছেই,হাতে থাকা টিস্যু টাও ভিজে গুড়ো হয়ে গেছে,আর এসব চোখে পড়তেই হিয়া ওর শাড়ির আঁচল টা টেনে মুঠ করে উজানের পুরো মুখ থেকে শুরু করে গলা সহ সব মুছে দেয়,হিয়ার আচমকা এ কাজে উজান স্তব্ধ,নীলিমাও একটা সময় উজানকে পরমযত্নে নিজের ওড়না দিয়ে এরকম করে ঘাম মুছিয়ে দিতো,এক চোখে নীলিমা কে মনে পড়ছে তো আরেক চোখ দিয়ে উজান চোখ ভরে হিয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইছে

হিয়াঃ কি অবস্থা বানিয়েছে দেখো শরীরটার মনে হচ্ছে যেনো সবে মাএ পুকুর থেকে ডুব দিয়ে উনি উঠে এলেন,এতো কেউ ঘামে

উজানঃ বারবার এভাবে নীলিমা কে মনে করিয়ে দেও কেনো তুমি!!

হিয়াঃ কি বললেন,,,,,আমি আবার কখন নীলি আপুর কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিলাম,আর তাছাড়া,,,,,মনে করা-লেও বা কি আপনিই তো বলেছেন আপনি কখনো আপুকে ভুলতে চান না তাহলে(মুছে দিতে দিতে)

উজানঃ সবসময় কথার পিষ্টে কথার উওর রেডি থাকে না তোমার

হিয়াঃ হে হে(মুখ টিপে হেঁসে দিয়ে)
____________________________
রাত ৭টা

হিয়াঃ আমার সব নেওয়া শেষ,আপনি একটু বসুন আমি এই শাড়ি টা মামি কে দিয়েই আসছি

উজানঃ শাড়ি টা আমাকে দেও,আমি তোমার মামি কে দিয়ে আসছি,তুমি বরং আমার জন্য এক কাপ কফি করে নিয়ে এসো

হিয়াঃ কফি যে বাড়িতে নেই,আসলে এখানে কেউ ওসব খায় না তো

উজানঃ ঠিক আছে,লিকার চা করে আনো

হিয়াঃ ঠিক আছে,আপনি মামির সাথে কথা বলুন আমি এক্ষুনি চা টা করে আনছি?

হিয়া উজানের হাতে শাড়ি টা দিয়ে চা করতে চলে যায়,এদিকে উজান শাড়ি টা নিয়ে মামির রুমের দিকে এগিয়ে গেট নক করে

মামিঃ কে,,,,জামাই বাবা তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে ভেতরে আসো

উজানঃ (ভেতরে এসে)শাড়ি টা নিন

মামিঃ শাড়ি টা আবার ফেরত দেবার কি আছে,ওটা পড়েই না হয় বাড়ি তে ফিরতো হিয়া,মেয়ে টা এতো বোকা না

মামি কিছু বলার আগেই উজান ওর পকেট থেকে একটা চেক বের করে মামির দিকে এগিয়ে দেয়

মামিঃ এটা কি উজান

উজানঃ চেক,এখানে ৩০লাখ টাকা আছে আশা করি,হিয়ার ছোট থেকে হিয়ার বিয়ে অবধি আপনার যতো টাকা খরচ হয়েছে এই টাকায় সব পুষে যাবে

মামিঃ বাবা তুমি এসব কি বলছো,আর এতো গুলো টাকা

উজানঃ শুনেছি ছোট থেকে হিয়া ওর স্কুলের বৃওির টাকা তেই পড়াশুনো টা করেছে সেক্ষেত্রে হিয়ার পড়াশুনো তে হয়তো আপনার বেশি টাকা যায় নি,আর রইলো বাদ বাকি হিয়ার খাবার জামাকাপড়ের খরচ,হিয়া নিশ্চয় আপনার বাড়িতে ৩০লাখের বেশি টাকা খায় নি,,,,,চিএার রুম টা যেভাবে ডেকোরেট করেছেন হিয়ার রুম টাকে তো ঠিক তোতোটাই ফেলনা করে ফেলে রেখেছেন,একটা আছে খাট কাম চৌকি একটা রঙ চটা আলনা আর একটা কাঠের ঘুন ধরা পড়ার টেবিল

মামি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয় অকপটে

উজানঃ তাই সব কিছু হিসাব করে আমি এই চেক টা আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি,যদি এরপরো কম পড়ে আমাকে বলবেন আরো টাকা পাঠিয়ে দেবো,,,,,,আর একটা কথা হিয়া কোনো ভিখারি না হিয়া আমার ওয়াইফ?তাই ফার্দার আর কখনো তাকে ছোট করবার আগে বা ওকে কোনো কথা শোনাবার আগে আমার পজিশন টা ঠিক কতোটা উপরে একবার আন্দাজ করে নেবেন?আসছি
__________________________
হিয়াঃ দেখো দেখি চা করতে বলে মামির সাথে গল্প দিতে বসে গেছে___এই যে শুনছেন চা টা এখানে খাবেন না ভেতরে দিয়ে আসবো,মামি মামি তুমি চা খাবে লিকার চা কিন্তু (চিৎকার করে)

চিএাঃ কি করছিস

হিয়াঃ চা করেছি খাবি?

চিএাঃ রং চা,,,,খাবো না

হিয়াঃ দুধ দিয়ে দেই তোর টাতে

চিএাঃ না থাক,,,,সার্তকির খবর কিছু শুনেছিস,তোকে যে ছেলেটা খুব বিরক্ত করতো,রামুদার ঔ গুন্ডা টাইপ ছেলে টা

হিয়াঃ না শুনি নি,কেনো কি হয়েছে

চিএাঃ বেচারার তো সেই খারাপ অবস্থা,এই তো ঘন্টা খানেক আগে কে নাকি ছেলেটার মুখ চোখ বেধে উদুম পিটিয়েছে,এখন পর্যন্ত নাকি সেন্স ফিরে নাই আর ডক্টর বলছে আধাঘণ্টা দেখবে না হলে নাকি আবার আই-সি-ইউ না কি আছে ওটায় শীফট করাতে হবে

হিয়াঃ কে করলো এসব!!

চিএাঃ কে জানি,রামু দা তো একদম চোটে আছে,ধরতে পারলে না,তবে যে কাজ টা করেছে সে কিন্তু খুব সাবধানতার সাথে কাজ টা করেছে বলতে হবে,ধরা খাবার কোনো চান্স নেই,তবে মজার ব্যাপার কি জানিস

হিয়াঃ কি

চিএাঃ যে মেরেছে সে না সার্তকির আসল জায়গায় এমন কেলিয়েছে বেচারা বোধ হায় আর কোনোদিন?

চিএা আর বলতে পারে না তার আগেই হো হো করে হেঁসে দিয়ে রুমে চলে যায়,এসব শুনে হিয়া তো পুরো অবাক,তারমানে তখন যে উজান বেড়িয়েছিলো বাহিরে সে কি তাহলে!!
_____________________________
উজান হিয়াদের গ্রামের বাড়িতে আর একটা সময় নষ্ট না করে হিয়ার মামুর থেকে বিদায় নিয়ে হিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে,এখন রাত আট টা,গ্রামের রাস্তার আকেবাকে চলছে গাড়ি,শহরের রাস্তা শুরু হতে আরো ঘন্টা খানেক বাকি,আবার শুরু হয়েও সেই রাস্তা দিয়ে মেইন শহরে পৌঁছাতে আরো আধা ঘণ্টা,চারিদিকে এখন শুধু ধু ধু অন্ধকার তবুও এই অন্ধকারের মাঝেও মাঝে মাঝে উকি দিচ্ছে কিছু রোড লাইট,চাঁদ উঠলেও আজ মনে হয় চাঁদের আলো টা ঠিক বেশি প্রখর না,

হিয়াঃ (আনমনে জানালার দিকে তাকিয়ে) সার্তকির এই অবস্থা আপনি করেছেন তাই না

উজানঃ হ্যা করেছি তো,

হিয়াঃ আপনি জানেন ওরা এই গ্রামের কতো বড় গুন্ডা,এই গ্রামের সবাই ওর বাবার কথায় উঠতে বসতে পর্যন্ত রাজি

উজানঃ সো হোয়াট

হিয়াঃ সো হোয়াট মানে,আপনি জানেন না ওরা

উজানঃ ওরা আমাকে চেনে না!

হিয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়,,গাড়ি চলতে থাকে নিজ গতিতে,,দুজনে আবার নিশ্চুপ হয়ে যায়,এতো রাস্তা ড্রাইভ করতে করতে উজান এখন অনেকটা ক্লান্ত,,একটা টিন দিয়ে ঘেরা চায়ের দোকানের পাশে গিয়ে উজান গাড়ি টা সাইড করে

হিয়াঃ গাড়ি থামালেন যে

উজানঃ চা খাবে

হিয়াঃ আপনি খাবেন

উজানঃ আমি সিগারেট খাবো

হিয়াঃ ??

উজানঃ খাবা কি????খেলে নামো

হিয়াঃ নামুন আমি নামছি

হিয়া নামলে উজান হিয়াকে নিয়ে সামনের দোকান টায় গিয়ে এক কাপ চায়ের অডার করে,দোকানে থাকা কাকুর বউ টা চা বানাতে শুরু করলে উজান কাকু টার কাছে একটা সিগারেট নিয়ে ঝুলে থাকা লাইটার টা দিয়ে ধরিয়ে সামনে গিয়ে গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে দাড় হয়,আর হিয়াকে বলে চা টা নিয়ে ওর কাছে আসতে,হিয়া চা নিয়ে উজানের পাশে গিয়ে দাঁড় হয়,একদিকে গাড়ির দরজার কাছে হেলান দিয়ে উজান সিগারেট টানছে আর তারি পাশে দাঁড়িয়ে হিয়া চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে,দুজনে সামনে ধু ধু ধান ক্ষেএের দিকে অপলক তাকিয়ে যদিও চাঁদের আলোতে আবছা দেখা যাচ্ছে চারিপাশ

হিয়াঃ কমলো মাথা ব্যাথা

উজানঃ হালকা

হিয়াঃ আমি কি ভাবছি জানেন

উজানঃ কি

হিয়াঃ আপনি আমার জন্য সার্তকিকে এরকম করে পেটালেন আমার জায়গায় নীলিমা আপু থাকলে তো ছেলে টাকে মেরেই ফেলতেন আজ,,,,,আমি সিউর যে আপনার ভয়ে নিশ্চয়ই আপুর পেছনে কোনো ছেলে ঘোরার সাহস অবধি পেতো না

উজানঃ (একটা হালকা হাসি দিয়ে) নীলিমা আমার থেকেও কতো ডেঞ্জারাস তুমি জানো,ওর ভয়ে মেয়েরা আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার দিকে তাকানোর সাহস অবধি পেতো না

হিয়াঃ তাই(লাফিয়ে উঠে)অবশ্য আপনার মতো এরকম রাজপুত্তুরের মতো একটা ভালোবাসার মানুষ থাকলে যে কোনো মেয়েকেই একটু পজেসিভ হতে হয় বুঝলেন?

উজানঃ তাই নাকি,,পাকনি একটা

হিয়াঃ হে হে

উজানঃ তাড়াতাড়ি চা শেষ করো

হিয়াঃ করছি করছি

চা শেষ হলে উজান হিয়ার থেকে কাপ টা নিয়ে দোকানে গিয়ে টাকা মিটিয়ে আবার গাড়িতে এসে বসে,উজান গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে,এদিকে আজ বিয়ে বাড়িতে বেশি লাফঝাপ করায় হিয়ার শরীরটাও অনেক ক্লান্ত,আলতো চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে কখন যে চোখ টা লেগে এসে হিয়া নিজেও বুঝতে পারে না,হিয়ার উপর চোখ পড়তেই উজান গাড়ি টা স্লো করে হিয়ার ঢুলুঢুলু মাথা টা নিজের বুকের কাছে নিয়ে এসে এক হাতে কোনোরকম হিয়াকে আগলে ধরে ড্রাইভ করতে থাকে

এসেছে রাত ভিজে হাওয়া
খোলা চিঠির পাশে থাক
খেয়ালি খাম
তোকে হঠাৎ ভুল করে ছুইয়ে দিলাম???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here