The_Colourful_Fragrance_Of_Love? Part: 14

0
1598

?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 14

গত এক সপ্তাহ ধরে জানুয়ারি মাসের কনকনা ঠান্ডায় গা পুরো জমে যাবার উপক্রম,,পানি তো না যেনো পুরো বরফ,,তিন চারটে গরম কাপড় গায়ে দিলেও যেনো শরীর উসুম হয় না,,চারিদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন,দিনের বেলা তাও যা আকাশের সূর্য টা চোখে পড়ে কিন্তু ভোরের দিকে কুয়াশার চাদরের জন্য ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে সূর্য তো দূরে থাক পাশের বাড়িটাও আবছা দেখা যায়,,

আর এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় কেউ যদি ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পড়তে বসায় তাহলে তো ইচ্ছে করে তার মাথার চুল গুলো সব টেনে টেনে ছিঁড়ে দিয়ে আসি,,হু,,আর এখন সেরকমই এক কাজ করছে উজান এক মাস বাদে হিয়ার ফাইনাল পরীক্ষা বলে দিন রাত ২৪ঘন্টা এখন সে হিয়াকে বইয়ের সাগরের মাঝে ডুবিয়ে রাখে,,ঔ অফিস টাইমে যেটুকু উজান বাহিরে থাকে ওতেই হিয়ার শান্তি আর বাড়িতে আসলে তো,,,এতো পড়া যায় নাকি আজব

উজানঃ হিয়া আর কতো ঘুমাবা,,উঠো

হিয়াঃ পাঁচ মিনিট (ঘুমন্ত কন্ঠে)

উজানঃ তখন থেকে পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করে করে সাড়ে ৬টা পাড় করলে____হিয়াআআআ

হিয়াঃ আর পাঁচ মিনিট প্লিজ

উজানঃ না পাঁচ মিনিট কেনো পাঁচ সেকেন্ড ও না,,উঠো বলছি উঠো

উজানের জোড়াজুড়ি তে হিয়া ওখানে লেপ মুড়ে দিয়ে কেঁদে উঠে

হিয়াঃ প্রত্যেকদিন কি আমার উপর এ-ই রকম অত্যাচার না করলে আপনার শান্তি হয় না,,ও উজান আজ সত্যি খুব শীত করছে আজ কি সকালটায় না পড়লে হয় নাআ??

উজানঃ না হয় না,,উঠো তো,,এবার কিন্তু আমি ভীষণ রাগ করছি হিয়া

হিয়াঃ আআআআআ বাজে লোক একটাআআ,,,আপনি খুব খারাপ,,আপনি কিন্তু কাল রাতে আমাকে আদর করবার সময় বলেছিলেন আজ আমার ছুটি তাই আপনি বেশি করে আদর করে দিয়ে এ্যা হ্যা এ্যা

উজানঃ (হেঁসে দিয়ে)সে তো আমি আদর করবার টাইম অনেক কিছুই বলি তাই বলে তুমি যদি বোকার মতো আমার সব কথা বিলিভ করে নেও সেটা তো তোমার ভুল?

হিয়াঃ মাআআআআআ,,,,মাআআআআ দেখো না তোমার ছেলে ঘুম থেকে উঠেই এরকম করে রোজ রোজ আমাকে অত্যাচার করে,,এবার কিন্তু আমি তোমার ছেলের নামে থানায় মামলা করবো

উজানঃ উঠবা কি তুমি,,ওলয়েজ বেশি কথা

হিয়াঃ শুনুন না ঔ বলছি কি,,বই খাতা গুলো এখানে নিয়ে আসলে হয় না আমি কম্বলের ভেতর?

উজানঃ হ্যা কিন্তু হাত মুখ টা ধুয়ে আসো অনন্ত

হিয়াঃ পানি যে ঠাণ্ডা

উজানঃ গিজার নেই ওয়াশরুমে

হিয়া উঠে দাঁত মুখ খিচে উজানের মাথার সব চুল খামচে ধরে রাগে গটগট করে ওয়াশরুম গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে,,এসেই দেখে উজান এক পালা বই নিয়ে কম্বলের সাইডে রেখে দুটো বালিশ বিছানার উপরে ঠেকিয়ে দিয়েছে,,একটায় নিজে হেলান দিয়ে আছে আর অন্য টা হিয়ার জন্য দিয়ে রাখছে,,হিয়া এসে চোখ মুখ পাকিয়ে বালিশে হেলান দিলে উজান কম্বল টা দুজনের গায়ে পেচিয়ে ধরে আর হিয়ার কোলের কাছে বই ধরে কি কি পড়াবে এখন সেগুলো বুঝিয়ে দিতে থাকে,,বুঝানো হয়ে গেলে উজান উঠে হিয়ার জন্য পাউরুটি আর কলা নিয়ে এসে মুড়ে দিয়ে হিয়াকে এক হাতে খাইয়ে দিতে থাকে তো অন্য হাতে বুঝিয়ে দিতে থাকে হিয়ার পড়া,,

হিয়াঃ যেটুকু আদর যত্ন করে আপনি আমাকে পড়াচ্ছেন তার সিকি ভাগ টুকুও যদি আমাকে আদর করবার সময় আপনি দেখাতেন,,জীবন টা ধন্য হতো আমার ধন্য,,অসহ্য লাগছে,,জীবনে এই প্রথম পড়াশুনা করতে আমার বিরক্ত লাগছে,,শুধু এই বাজে লোক টার জন্য,,বেশি বেশি ভালোবাসলে যা হয়,,আরে এতো পড়লে কি আমি ঔ ক্লা__

উজানঃ (হিয়ার মুখে টুক করে পাউরুটি ঢুকিয়ে দিয়ে)মনে মনে আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি খাওয়া টা শেষ করো কুইক

হিয়াঃ??

উজানঃ তাড়াতাড়ি খাও

হিয়াঃ খাচ্ছি তো গপ গপ করে আর কতো তাড়াতাড়ি খাবো

উজানঃ আচ্ছা আস্তে খাও

হিয়াঃ হুম

উজান হিয়াকে খাইয়ে দিয়ে কম্বলকাথা মুড়িয়ে হিয়াকে নিয়ে বিছানার মধ্যেই পড়তে বসে,,

টানা তিন ঘন্টা পড়িয়েও উজানের কোনো ক্লান্তি নেই,,কিন্তু হিয়া এদিকে দম ছাড়ছে তার পক্ষে এখন আর পড়া সম্ভব না

উজানঃ কি হলো কি মনোযোগ দেও

হিয়াঃ উজান,,একটা কথা বলি

উজানঃ বলো?

হিয়াঃ অনেকদিন ধরে বাড়ি যাই না,,মামু কে আর মামি কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে একটু গিয়ে ঘুরে আসি না কয়দিন

উজান কড়া বাক্যে জানিয়ে দেয় যে যাওয়া হবে না

হিয়াঃ কেনো এরকম করেন আপনি,,দুদিন,,দুদিন শুধু থাকবো প্লিজ যাই না

উজানঃ আমি যখন বলছি যাওয়া হবে না তো হবে না

হিয়াঃ আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি কান্না করে দেবো

উজানঃ তুমি সত্যি সত্যি কাঁদো আর মিথ্যে মিথ্যাে বাড়ি যাওয়া হবে না মানে হবে না,,আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না,,দরকার হলে কিছু দিন মামু মামি কে বাড়িতে এসে থাকতে বলো কিন্তু তোমার গ্রামে যাওয়া হবে না,,আর আমার ছুটিও নেই যে আমি তোমার সাথে গিয়ে থাকবো

হিয়াঃ আপনাকে থাকতে হবে না আপনি জাস্ট আমাকে পৌঁছে দিয়ে চলে আসবেন,,আর দুদিন পর আবার গিয়ে নিয়ে আসবেন,,প্লিজ প্লিজ প্লিজ

উজানঃ আহ,,কি ছেলেমানুষী শুরু করলে আমি বললাম না যা-ওয়া হবে না মানে হবে না

হিয়াঃ আমি যাবো যাবো যাবো

উজানঃ পরীক্ষা শেষ হোক তখন একদিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো

হিয়াঃ না আমি এখনি যাবো সামনের শুক্রবারই যাবো?

উজানঃ তুমি খুব ভালো করে জানো হিয়া আমি তোমাকে ঔ গ্রামে আর পাঠাবো না so এরকম বাচ্চা দের মতো বিহেভ করা বন্ধ করো,,আমি তোমার মামুকে ফোন করে বলছি কিছুদিন এসে বাড়িতে থেকে যাবে এখন ওনারা,,ওদের নিয়ে তখন আমাদের শহর টা ঘুরে দেখাইও,,ওরা তো কখনো শহরে এসে ওভাবে থাকে নি

হিয়াঃ তাহলে আপনি মামু কে রাজি করান মামু যেনো মামি আর চিএা সহ এসে আমাকে দেখে যায়

উজানঃ আচ্ছা বলবো,,আর তুমি কি হ্যা যেই মামি আর বোন তোমাকে সারাজীবন কথা শুনিয়ে ছোট করেছে তাদের কিসের এতো দেখতে চাওয়া হ্যা।

হিয়াঃ মামি আর ঝিনুক আমাকে যতোই কথা শুনাক না কেনো বাবা মার পর ঔ মানুষ গুলোই তো আমাকে এতোদিন একটা মাথা গোজার ঠাই দিয়েছিলো বলুন,,মামি হাজার বকলেও কখনো আমার জ্বর আসলে উনিই তো আবার সারারাত জেগে জেগে আমার জ্বর টা পড়েছে কি না সেটা দেখে গেছেন!!

উজানঃ তাই তুমি সব অপমান ভুলে তাদের আপন করে নিছো তাই তো

হিয়াঃ হুম,,এখন ওসব বাদ দিন আপনি মামুকে কবে বাড়িতে নিয়ে আসবেন সেটা বলুন

উজানঃ আনবো,,দেখি এখন বই গুলো রাখো

হিয়াঃ পড়া শেষ ?

উজানঃ হুমমমম,,,এখন একটু

হিয়াঃ এখননন একটু কি হ্যা দশটা বাজতে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসে যান কুইক

উজানঃ যাবোই তো তার আগে

হিয়াঃ তার আগেও কিছু না তার পরেও কিছু না,,,উজাননননন,,,আরে আমার সুরসুরি লাগছে তো,,দেখো তো জ্বালা

উজানঃ দেখি না একটু ওরকম করে লাফাচ্ছ কেনো?

হিয়াঃ ইসসস কি ঠান্ডা হাত,,বরফ বরফ

উজানঃ আরে,,!!

হিয়াঃ এরকম করবেন না এখন দয়া করে,,মা কি ভাবছে বলুন তো এতো বেলা করে আমরা এখনো শুইয়ে আছি

উজান হিয়াকে চেপে ধরে হিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাতে যাবে ওমনি সন্ধির ফোন আসলে হিয়া ফিক করে হেঁসে দেয়

সন্ধিঃ এই কোথায় তুই,,প্রেজেন্টেশন দেবার ইচ্ছে আছে না চাকরি হারানোর কোনটা___তাড়াতাড়ি আয় আমরা সবাই ওয়েট করছি

বলেই সন্ধি ফোন টা কেটে দেয়

হিয়াঃ সন্ধি আপু টা পুরো চুমু,,ঠিক টাইমে ফোন দিছে একবারে??

হিয়া মনে মনে খুশি হয়ে ভাবছে উজান হয়তো এবার উঠে যাবে,,উজান উঠলো তো ঠিকই উঠে ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দিয়ে গায়ে পড়া শার্ট খুলতে খুলতে হিয়ার কাছে এসে হিয়ার সামনে ফোনের পাওয়া ওফ বাটনে ক্লিক করে ফোন টা ওফ করে দিলো

হিয়াঃ এটা কি হলো!!!!!

উজানঃ কাজের সময় অন্য দিকে মন দিতে নেই!!❤️❤️

_________________________

গ্রাম থেকে উজানের অনুরোধে মামি মামু আর চিএা আসে,,তবে মামু এসে দুদিন থেকেই চলে যায় উনি না থাকলে দোকান গুলো ঠিক চলবে না তাই জন্য,হিয়ার বায়নাতে চিএা আর মামি আর দুদিন থেকে তার পর ফিরে,,এই চার পাঁচ দিন হিয়া ওদের সাথে খুব মজা করে,,মামি আর চিএাও এখন আগের মতো করে হিয়াকে ছোট করে না,,উজানকে বড্ড ভয় পায় কি না!!

দেখতে দেখতে হিয়ার পরীক্ষা টাও শেষ হয়ে আসে,,উজানের দিন রাত পড়াশুনা নামক টর্চারিং এ বেশ ভালো করেই হিয়ার পরীক্ষা গুলোর ইতি ঘটে,,

উজানঃ কোথায় আপনি এখন??বাড়ি ফেরা হবে তো ঠিক সময়

হিয়াঃ এ-ই তো ঝিনুককে নিয়ে একটু কেনাকাটা করছি,,ওগুলো শেষ করে ফিরবো

উজানঃ দুপুরে খেয়েছ কোথায়?

হিয়াঃ ঝিনুকদের বাড়িতে,,ইচ্ছে তো ছিলো সবাই মিলে বাহিরে খাবো কিন্তু ঝিনুকের মা এতো রিকুয়েস্ট করলো আমাদেরকে তাই ঝিনুকের বাড়িতেই,,,আপনি খেয়েছেন দুপুরে

উজানঃ হুম খেলাম,,তা ফেরার পথে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো না ঝিনুক সহ আসবা

হিয়াঃ আপনাকে নিতে আসতে হবে না আমি ঝিনুক সহ ফিরতে পারবো

উজানঃ ঠিক তো

হিয়াঃ আরে আমি ছোট বাচ্চা নাকি,,

উজানঃ ফোন সাথে রেখো,,আমি ফোন করবো

হিয়াঃ আচ্ছা,,রাখছি ঝিনুক ডাকছে

উজানঃ হুম

হিয়া ফোন রেখে ঝিনুকের সাথে কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার জন্য বাসে উঠে,,এরমধ্যে উজান আরো প্রায় দু বার ফোন করে হিয়ার খোঁজ নেয়,,শেষ বার ফোন টা রাখতেই ঘটে এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ!!

বাস প্রায় লাস্ট স্টপে নামতেই বাসটার সাথে একটা বড় প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে,,ঘটনাস্থলে নিহতের কোনো খবর না আসলেও গাড়ির চালক আর হেল্পার সহ সামনের সারির যাএীদের মারাত্মক ইনজুরি ঘটে,,এদিকে জানালার পাশে হিয়া বসাতে জানালার কাঁচ ভেদ করে হিয়ার হাত টা হালকা বেড়িয়ে পড়তেই হিয়া হাতে মারাত্মক ভাবে আঘাত পায়,,হাত দিয়ে অঝরে রক্ত পড়তে থাকে,,কিছুক্ষণের মধ্যে অতিরিক্ত বিলিডিং এর বেগে হিয়া সেন্সলেস হয়ে পড়ে,,,,ঝিনুক আবার সামনের সীটে সজোরে বারি খেয়ে মাথায় হালকা চোট পায়!!
____________________
!
!

ঝিনুকের ফোনে হতাহতের খবর কানে পৌঁছাতে উজান পুরো কেঁপে ওঠে,,এই তো একটু আগে সে তার পিচ্চি টার সাথে কথা বললো আর এখন তার হিয়া কি না,,উজানের হৃৎপিণ্ড টা যেনো পাম্প করা থামিয়ে দেয়,,চারপাশের পরিবেশ তাকে চেপে ধরতে শুরু করে!!
!
!

সন্ধিঃ সিস্টার একটু একটু আগে আজিমপুরের সামনে যেই বাস এক্সিডেন্ট টা ঘটেছিলো তার সব আহত যাএী কোনো ফ্লোরে কাইন্ডলি একটু দেখিয়ে দিবেন প্লিজ

সিস্টারঃ যাদেরকে এ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হ’য়েছে তাদের তো মারাত্মক খারাপ অবস্থা আমি ওদের জন্য ব্লাড আনতে যাচ্ছি সবার হাতে পায়ে চোট গেলে খুব বিলিডিং হচ্ছে,,,,,ইমিডিয়েট রক্ত দিতে হবে_____আপনারা এদিক দিয়ে থার্ড ফ্লোরে যান ওখানে কম ইনজুরেট পেশেন্ট আছে আর ফিফথ ফ্লোরের বা দিকে যারা সিরিয়াস ভাবে আহত হ’য়েছে তাদের রাখা হ’য়েছে____আপনারা দয়া করে নিজেরা একটু খুঁজে নিন

সন্ধিঃ হুম____অভিক তুই উজানকে নিয়ে থার্ড ফ্লোরে যা আমি ফিফথ ফ্লোর হয়ে আসি

অভিকঃ উজান চল_____কি হলো চল

সন্ধিঃ আমি তোর মনের অবস্থা টা বুঝতে পারছি__কিন্তু এই মুহুর্তে এতো ভেঙে পড়লে হবে না,,হিয়া তো একদম ঠিক ও থাকতে পারে

উজানঃ ঝি ঝি ঝিনুক ফোন তুলছে না কেনো আমার!!

সন্ধিঃ তুই একটু শান্ত হ দেখ ওদের কে হয়তো ডক্টর দেখছে তাই জন্য___উজাননন একটু নিজেকে strong করতে চেষ্টা কর,,একটু বুঝ___অভিক তুই নিয়ে যা ওকে আমি ওদিকটায় যাই,,বেশি দেড়ি করা ঠিক হচ্ছে না

সন্ধি ফিফথ ফ্লোরের দিকে আগাতে ধরে,অভিক উজানকে নিয়ে থার্ড ফ্লোরে আসতেই সবার ভয়ার্ত কান্না শুনে উজান ভয়ে আরো আঁতকে উঠে,,অভিক কোনো রকম সব পেশেন্ট দের দেখে কিন্তু হিয়া এখানে কোথাও নেই,,অভিক আর বেশি দেড়ি না করে উজানকে নিয়ে ফিফথ ফ্লোরে আসে,,,ফিফথ ফ্লোরে আসতেই উজান এবার পুরো পাগল হয়ে উঠে,,চারিদিকে সবার অন্য রকম চিৎকার,,কেউ স্বজন হারানোর ভয়ে কাঁদছে কেউ বা প্রিয় মানুষটাকে সুস্থ করে তুলতে জান প্রাণ দিয়ে ডক্টরদের হাত পা ধরছে,,চারিদিকে ব্লাডের ছড়াছড়ি,,ফ্লোরে ব্লাডে,ডক্টরদের এ্যাপরোনে ব্লাড,কেউ বা স্ট্রচারে করে পেশেন্ট কে ওটি তে নিয়ে যাচ্ছে তার পা দিয়ে ঝরছে ব্লাড,,সব সব খানে এক ভয়ানক পরিস্থিতি চলছে,,ডক্টর রা আজ দূত হাত চালিয়েও যেনো সব দিক সামলাতে ব্যার্থ হচ্ছে

এই সব কিছু এসে গ্রাস করে উজানকে,,তার পিচ্চি কোথায়,,তার পিচ্চি ঠিক আছে তো,,তার পিচ্চি তার পিচ্চি তাকে ধোঁকা দিয়ে পালিয়ে যাবে না তো,,নীলিমার দেওয়া কষ্ট টা তো সে সামলে নিয়েছিলো কিন্তু হিয়ার এভাবে হারিয়ে যাওয়া কি করে সামলাবে সে!!

সন্ধিঃ আমি সারা ফ্লোরে খুঁজলাম কোথাও তো পেলাম না হিয়াকে___এই উজান উজান তুই ঠিক শুনেছিস তো ঝিনুক হিয়াকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে এই হাসপাতালে এসেছিলো,,,কি রে উওর দে

উজানের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,,চোখ দুটো জলে টল টল করছে,,চারপাশের এই আহা কার তার বুক টাকে পুরো ছিঁড়ে দিচ্ছে,,তার গলা শুকিয়ে গেছে

অভিকঃ কোথায় যাবে আর একটু ভালো করে খুঁজি,,এখন কাউকে বলেও কিছু লাভ নেই সবাই তো দেখছিস কি রকম পাগল হয়ে ছুটাছুটি করছে

সন্ধিঃ আচ্ছা একবার রিসিপশনে আয় তো দেখি ওরা পেশেন্ট দের কাউন্ট নোট করেছে কি না

সন্ধি অভিক সহ উজানকে কোনোরকম রিসিপশনে নিয়ে আসে,,রিসিপশনের মেয়ে টা সব পেশেন্ট দের ফাইল চেক করে

মেয়েটাঃ আমরা তো নাম ঠিকানা এখনো সেসব কিছু তুলবার সময় পাই নি,,তবে ঘটনাস্থলে যারা আহত হয়েছিল তাদের সবাই কে এ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে আনা হ’য়েছে এটুকু সিউরিটি আপনাদের দিতে পারি

সন্ধি হিয়া আর ঝিনুককের বিবরণ দিতে থাকে,,তখনি পাস থেকে এক ভদ্রমহিলা সন্ধির কাছে আসে

ভদ্রমহিলাঃ মেয়ে গুলো কি অল্প বয়সী ছিলো নাকি,,আজিমপুর নামবে বলে উঠেছিলো উওরা যাবে ওজন্য

অভিকঃ হ্যা মানে,,দুটো মেয়ে ছিলো,, উওরাতেই বাড়ি,,তাই আজিমপুরের বাস ধরে হয়তো

ভদ্রমহিলাঃ অনেক ব্যাগ ট্যাগ ছিলো নাকি বাবা,,মনে হয় কেনাকাটা করেছিলো,,আমার পাশের সীটে ছিলো মেয়ে দুটো

উজানঃ হ্যা হ্যা ঝিনুক আর হিয়া তো কেনাকাটা করবে বলে,,আপনি আপনি ওদের দেখেছেন কোথায় কোথায় আমার হিয়া,,ওরা ওরা ঠিক আছে তো!!

ভদ্রমহিলাঃ ঠিক কি করে বলি,,আমি তো দেখলাম ওদেরই একটা মেয়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে ওটি তে নেওয়ার মুহুর্তে মারা গেলো,,সাথে আরেকটা মেয়ের অবস্থাও খুব ভালো না সেও হয়তো যেকোনো সময়

উজানঃ না___আপনি ভুল শুনেছেন আমার হিয়ার কিচ্ছু হতে পারে না কিচ্ছু না

সন্ধিঃ তুই একটু শান্ত হ আমরা কথা বলছি তো

উজান কিছুতেই শান্ত হতে পারে না,,চোখ দিয়ে গড়গড় করে জল বের হতে থাকে,,সন্ধি কিছু বলার আগেই রিসিপশনের মেয়েটা বলে উঠে

মেয়েটাঃ উনি কিছু ভুল বলছে না,,এখানে আসার পর দুজন পেশেন্টের ডেড হ’য়েছে একটা একজন বয়স্ক লোক মাথায় আঘাত পেয়ে আর একজন উনি যেই মেয়ে টার কথা বললেন,,ওদের কে মর্গের এক পাশে রাখা হ’য়েছে আপনারা গিয়ে যদি একবার চেক করতেন তাহলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতো

সন্ধিঃ হুম ওটা কোনদিকে

মেয়েটাঃ দাঁড়ান আমি ওয়াডবয়কে ডেকে দেখিয়ে দিতে বলছি

সন্ধি উজানকে কিছু বলার আগে উজান ধপ করে নিচে বসে যায়,,শরীর ছেড়ে দেয় তার,বলিষ্ঠ শরীর টা কেমন নরম হয়ে শরীরের সব শক্তি ছেড়ে দিতে থাকে,,মুখ দিয়ে একটাই শব্দ শুনতে পাওয়া যায় হিয়া!!

সন্ধি ঝিনুক সবাই উজানকে ডাকতে থাকে,উঠতে বলে কিন্তু উজান উঠতে পারে না,,হিয়ার সেই মিষ্টিমুখ তো ভেসে আসছে আসছে সাথে আজ নীলিমার সেই না বলা বিদায় টাও তার মনে অন্য রকম ভয়ে ভরিয়ে তুলছে,,সে নীলিমা কে হারিয়ে বাঁচতে শিখেছে হিয়া ছাড়া যে সেটা কখনোই আর হয়ে উঠবে না

উজানঃ বাঁচবো কি করে তোমাকে ছাড়া!!তুমি আমার সাথে এটা করতে পারো না হিয়া!!এটা তুমি করতে পারো না___!!
______________________

হঠাৎই এতো আহাজারির মধ্যে কানে আসে হিয়ার সেই মিষ্টি হাসির শব্দ,,আর কানে আসতেই উজানের পুরো শরীরে একটা বাতাস গিয়ে যেনো ধাক্কা লাগে,,মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে হিয়া ঝিনুকের হাত ধরে আস্তে করে অনেক কষ্টে হাসতে হাসতে একজন ডক্টরের সাথে রিসিপশনের দিকে আসছে,,

ঝিনুকের মাথায় আর পায়ে হালকা করে ব্যান্ডেজ করা,,আর এদিকে হিয়ার মাথার কানিতে ছোট্ট করে ব্যান্ডেজ,,বা হাতে পুরো ব্যান্ডেজ লাগানো আর পায়ে চোট পেয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে এখন সে হাঁটছে

ডক্টরঃ আপনি চাইলে আজ আমরা আপানাকে একটা কেবিন দিতে পারতাম

হিয়াঃ না ম্যাম,,আপনি এটুকু সময় আমার জন্য যা ব্যাবস্থা করলেন,,আপনি এখন অন্য পেশেন্ট দের গিয়ে দেখুন ওদের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ

ডক্টরঃ তোমার বাসা থেকে লোক এসেছে??আমি ওয়াডবয়কে বলে তোমার জন্য একটা হুইলচেয়ার এর ব্যবস্থা করছি,,তুমি কোথাও গিয়ে বসো না হয় আপাতত

ডক্টর টা সামনে হাটতেই হিয়া সামনে তাকায় আর তাকাতেই দেখে উজান কি রকম ওর দিকে আলতো পায়ে এগিয়ে আসছে,,উজান একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো এতোক্ষণ,,ঘোর টা কাটার সাথে সাথেই উজান একটু থমকে দাঁড়ায়,,হিয়া উজানকে দেখে একটা হাসি দিতেই উজান দিক বিদিক ভুলে দৌড়ে এসে হিয়াকে জাপ্টে ধরে,,আর ধরেই শুরু হয় তার এ-ই সেই কান্না,,এতোক্ষণ যেই কান্না গুলো সে মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলো ঝড় হয়ে সেগুলো চিৎকারের স্বরে বেড়িয়ে আসে,,ফিফথ ফ্লোরের পাশাপাশি রিসিপশন টাও এবার উজানের একার কান্নায় ভরে ওঠে

হিয়াঃ কি মুশকিল,,আমি একদম ঠিক আছি আপনি শুধু শুধু এতো কেনো ভয় পাচ্ছেন___উজান___আরে দেখো তো কি জ্বালা____এই যে,,লোকে আমাদের দিকে কি রকম করে দেখছে দেখুন____ও আপু ওনাকে একটু চুপ করতে বলুন না____এ-ই যে শুনছেন

উজান কিচ্ছু শুনার মুহুর্তে নেই এখন,,সে কাঁদছে গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদছে,,হিয়াকে নিজের পাজরের কোলে লেপ্টে ধরে কাঁদছে,,

সন্ধিঃ এখন তো চুপ কর,,মানুষ দেখছে তো নাকি,,আরে তোর পিচ্চি বউ একদম ঠিক আছে দেখ,,হেই উজান

হিয়াঃ আপনি যদি আরো কান্না করেছেন তো আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি পালিয়ে যাবো হ্যা,,,গেলাম কিন্তু

উজানঃ নাআআ___পারবো না তো তোমাকে ছাড়া বাঁচতে!!

হিয়াঃ তাহলে আপনি চুপ করুন,,ছেলেরা কখনো এভাবে কাঁদে___আরে আমার তো শুধু হাতে একটু চোট লেগেছে এই দেখুন ডক্টর আন্টি টা আমাকে কি সুন্দর ব্যান্ডেজ করে দিছে,,আর পায়ের খানিকটা মচকে গেছে তাই হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছে দেখে এভাবে হাঁটছি,,এই তো

সন্ধিঃ তা বুঝলাম কিন্তু তোমরা কি হ্যা ফোন কেনো তুলছিলে না আমাদের,,ফোন টা ধরলে এতো চিন্তা হতো

ঝিনুকঃ আসলে আপু ভাইয়াকে ফোন দিয়ে হিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় কোথায় যে আমার আর হিয়ার ব্যাগ টা উলটপালট হয়ে গিয়েছিলো আমি আর পরে এসে ব্যাগ গুলো খুঁজে পাই নি,,কোনো ছিঁচকে চোর হয়তো সেগুলো,,ভাগ্যিস যে আমার আর হিয়ার ফোন আর টাকা গুলোই ছিলো ঔ ব্যাগ গুলোতে কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ডকুমেন্ট বা কাগজ ছিলো না

সন্ধিঃ আচ্ছা বুঝলাম

ঝিনুকঃ আমি এখানে এসে ফোন করতাম কিন্তু ভাইয়ার নাম্বার তো আমার জানা নেই তাই বাড়িতে শুধু ফোন করতে পেরেছি,,পরে হিয়ার সেন্স যখন ফিরলো তখন ডক্টর এসে

সন্ধিঃ আচ্ছা ওসব কথা বাদ এখন,,দেখি ডক্টর কি বললো আমাকে বলো,,আমি একবার কথা বলতে চাই ওনার সাথে

ঝিনুকঃ আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে

উজান আর হিয়াকে রিসিপশনের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সন্ধি অভিক সহ ঝিনুকের সাথে আবার ডক্টরের সাথে আলাপ করতে চলে যায়

উজান তখনো ওর প্রশস্ত বুকে হিয়াকে শক্ত করে আগলে ধরে আছে,,এই বুঝি ছেড়ে দিলে হিয়া আবার পালিয়ে যাবে

উজানঃ I am sorry পিচ্চি,,আমি আমি কেনো যে তোমাকে আনতে গেলাম না,,আনতে গেলে হয়তো

হিয়াঃ আপনি আবার কান্না শুরু করলেন,,ও উজান বিশ্বাস করুন আপনাকে কান্না করলে না একটুও ভালো লাগে না কেমন পেঁচা পেঁচা লাগে,,,____আবার কাদঁছে আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি এবার

উজানঃ তুমি কথা দেও তুমি আমাকে ছেড়ে আর কখনো এভাবে একা একা বের হবা না

হিয়াঃ এএএ তা আবার হয় নাকি,,সবসময় বুঝি আপনি আমার সাথে সাথে থাকবেন

উজানঃ দরকার পড়লে থাকবো,,,দেখি হাতে খুব ব্যাথা করছে

হিয়াঃ একটু একটু করছে,,আপনি একটু বেশি করে আমাকে আদর দিয়ে দিবেন দেখবেন সব ব্যাথা কেমন উধাও হয়ে যাবে

উজানঃ তাই!!

হিয়াঃ হুম তো,আপনার আদরে যে ম্যাজিক আছে ম্যাজিক ম্যাজিক??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here