তুমি_সূচনায় #পর্ব-২

0
552

#তুমি_সূচনায়
#পর্ব-২
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

আজ বৃহস্পতিবার, ঊর্মিরা বাসে উঠে বসে আছে পিকনিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য। ঊর্মি তার আম্মুকে বলার পরের দিনই ঊর্মি, সাহিল আর রিয়া একসঙ্গে টাকা জমা দেয় আর বিকেলে তিনজন মিলে শপিং করে আসে পিকনিকে পড়ে যাওয়ার জন্য।” বাস চলছে আপন গতিতে, কেউ ছবি তুলছে, কেউ বা ভিডিও করছে আর সাথে গান বাজনা তো আছেই। ঊর্মি জানালার পাশে বসে চিপস খাচ্ছে আর আনমনে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে রিয়া তার পাশেই, সাহিল ওদের সামনে সিঙ্গেল সিটে বসেছে।

প্রায় ২ঘন্টা পর বাস কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যায়, এখানের পুরো রিসোর্টটা ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বুক করেছে। বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে তৈরি রিসোর্টটি, এখানে বড় একটা বড় সুইমিং পুল আছে, একপাশে বড় একটা বাগান আর সাথে কয়েকটা দোলনাও আছে। রিসোর্টের পেছন দিকে বড় লেক রয়েছে তবে কোনো স্টুডেন্টের সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই যেহেতু সবার দায়িত্ব ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের।

রিসোর্টের প্রত্যেকটা রুমে ৬ জন করে স্টুডেন্ট দেয়া হয়েছে বিশ্রাম করার জন্য। ঊর্মি আর রিয়া একসঙ্গেই আছে, সাহিল অন্য ছেলেদের সাথে ২য় তলায় আছে। বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর সবার খাবার সময় চলে আসে। সবার খাবার পর্ব শেষ হতেই সবাই কিছুক্ষণ জিরোয় তারপর সবাই ঘুরাঘুরি শুরু করে দেয়। অনেকে ছবি তুলছে, ভিডিও করছে, কেউ কেউ আবার স্যার/ম্যাম দের সাথে সেলফি তুলছে। গানের আয়োজন করা হয়েছে স্যার/ম্যামরা মাইক হাতে নিয়ে গান গাইছে সাথে যোগ হয়েছে স্টুডেন্টরা আর সাথে থাকছে সারপ্রাইজ কুপন, যাতে আছে নানা রকমের গিফট।
হাসি আনন্দের সাথে ওদের পিকনিক শেষ হয়ে, রাত ৯টার দিকে ওরা যে যার বাসায় পৌঁছে যায়।

————————————

আজ যেহেতু শুক্রবার তার ভার্সিটি যাওয়ার তেমন তাড়া নেই। আজ ঊর্মি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে, অবশ্য উঠতে চায়’নি মিসেস অন্তরা জোর করে উঠিয়েছে। শাস্তি স্বরূপ এই গরমের মধ্যে ফ্যান অফ করে দিয়েছে যার ফলে বাধ্য হয়ে ঊর্মিকে ঘুম থেকে উঠতে হলো। আজ ঊর্মিদের বাড়িতে ওর খালামণি আর দুই কাজিন আসবে। সকাল থেকে মিসেস অন্তরা তোড়জোড় শুরু করেছে তার আদরের ছোট বোন আর তার ছেলে মেয়ে আসছে। ঊর্মি বাড়ির অন্যান্য কাজ গুলো করছে আর মিসেস অন্তরা রান্নার কাজ গুলো সামলাচ্ছে।

ঊর্মি সবে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে, আজ সে নীল রঙের গাউন পড়েছে। কিছুক্ষণ আগেই খালামণি আর তার দুই ছেলে মেয়ে (নিবিড়, নাজিফা) এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঊর্মি চুল ঠিক করছিলো এমন সময় কেউ ওর রুমে নক করে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নাজিফা দাঁড়িয়ে আছে। (নাজিফা দেখতে কিউট একদম ডলের মতো গোলুমোলু, ইন্টার সেকেন্ডে ইয়ারে পড়ছে)

নাজিফা : আরে আপু দিন দিন তুমি কি সুন্দর হয়ে যাচ্ছো গো। রহস্য কি? (জড়িয়ে ধরে)
আমি : ধুর কি যে বলিস না, আমি আগের মতই আছি। তুই কেমন আছিস?
নাজিফা : এতোক্ষণ শুধু ভালো ছিলাম তোমাকে দেখে আরও ভালো হয়ে গেছি।
আমি : পড়ালেখা কি খবর তোর? সামনে তো টেস্ট এক্সাম!
নাজিফা : আর ভালো লাগে না আপু! মনে হচ্ছে পড়তে পড়তে আমি পাগল হয়ে যাবো। ভাইয়া নিজে আমাকে গাইড করে।

ওদের কথার মাঝেই মিসেস অন্তরা ঊর্মি আর নাজিফা’কে নিচে ড্রইং রুমে আসার জন্য ডাক দেয়। দু’জনে নিচে গিয়ে দেখে মিসেস অন্তরা আর মিসেস অহনা বসে গল্প করছে। নিবিড় একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে ফোন টিপছে। (নিবিড় দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন, প্রথম দেখায় যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। পড়াশোনা কমপ্লিট করে বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে। সবসময় গম্ভীর হয়েই থাকে, শুধুমাত্র ফ্যামিলির সাথে থাকলে হাসিখুশি থাকে) ঊর্মি মিসেস অহনার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

আমি : খালামণি কেমন আছো তুমি? আমাকে তো ভুলেই গেছো! আমাদের বাড়িতে এখন আসতেই চাও না। (মন খারাপ করে)
মিসেস অহনা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা! জানিস’ই তো সামনে নাজিফার এক্সাম শুরু হবে তাই কম আসা হয়। তুই কেমন আছিস বাবু?
আমি : আমিও ভালো আছি (কথাটা বলে নিবিড়ের দিকে তাকায়) কেমন আছেন ভাইয়া?

নিবিড় ফোনে কিছু একটা দেখছিলো যার জন্য ঊর্মি কথাটা শুনতে পায়নি। মিসেস অহনা ছেলে ধাক্কা দিয়ে বলে……

মিসেস অহনা : ঊর্মি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে! মোবাইলে কি করছিস এতো?
নিবিড় : ওহ স্যরি! আসলে একটা কাজ করছিলাম। আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আমি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। (কথাটা বলে মিসেস অহনার দিকে তাকায়) খালুমণি আসবে না?
মিসেস অহনা : তোর খালুমণি রাতে আসবে।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। আনিসুল সাহেব আর নেহাল সাহেব নিজেদের বিজনেস নিয়ে কথা বলছে। মিসেস অন্তরা আর মিসেস অহনা সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেরাও বসে পড়েছে। নাজিফা, অনন্ত আর ঊর্মি বিভিন্ন গল্প করছে খেতে খেতে আর নিবিড় চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে।

আনিসুল সাহেব : আমাদের নিবিড় তো এখন নিজেদের বিজনেস সামলাচ্ছে। তা ভাই নেহাল ওর বিয়ে সাদি নিয়ে কিছু ভেবেছো?
নেহাল সাহেব : ছেলে বড় হয়েছে, নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে এই নিয়ে আমরা ওকে কোনো জোর করতে চাইছি না।
নিবিড় : আসলে খালুমণি আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না, আমার আরও ১/২ বছর সময় লাগবে। (কথাটা ঊর্মির দিকে তাকিয়ে বলে)

————————————

পরের দিন সকালে নাস্তা সেরেই নেহাল সাহেব তার স্ত্রী, সন্তান নিয়ে চলে যায়। ঊর্মি আজ ভার্সিটি যায়নি বোরিং লাগছিলো বলে, সে যায়নি বলে রিয়া আর সাহিলও আজ ভার্সিটি যায়নি।

আমি : অনন্ত শোন না ভাই আমার! (রুম থেকেই অনন্তকে ডাকছে)
অনন্ত : কিরে পেত্নী! ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো? (ঊর্মির রুমে এসে)
আমি : তুই আবার আমাকে পেত্নী বলেছিস? আম্মু তোমার ছেলেকে কি জন্মের পর মুখে মধু দাও নি? (চেচিয়ে) ষাঁড়ের মতো তো তুই চেঁচাচ্ছিস বেয়াদব ছেলে!
অনন্ত : চুপ থাক! কেনো ডেকেছিস সেটা বল?
আমি : আমার না ভালো লাগছে না, আমাকে চকলেট আর আইসক্রিম এনে দে না ভাই!
অনন্ত : মামার বাড়ি আবদার! আমার কাছে কোনো টাকা নেই, পারবো না আনতে!
আমি : তোর টাকা দিতে হবে না আমি দিচ্ছি! (বলেই অনন্তঅর হাতে পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দেয়)
অনন্ত : আমাকেও ভাগ দিতে হবে নইলে আমি যাবো না!
আমি : আচ্ছা যা অর্ধেক অর্ধেক!

দশ মিনিট পর অনন্ত এসে ঊর্মির হাতে তার দেওয়া সেই পাঁচশো টাকার নোটটা ফিরিয়ে দেয়।

আমি : কিরে পেলি না? (মন খারাপ করে)
অনন্ত : নে! (একটা বড় আইসক্রিমের বক্স আর অনেক গুলা চকলেট ঊর্মির দিকে এগিয়ে দেয়)
আমি : তুই টাকা পেলি কোথায়?
অনন্ত : দোকানদারের কাছে খুচরো টাকা ছিলো না আর আমার কাছে খুচরো টাকা ছিলো তা দিয়েই এনেছি (মিথ্যে বলে, অনন্ত ইচ্ছে করেই ঊর্মির টাকা খরচ করেনি। নিজের টাকা দিয়েই বোনের জন্য আইসক্রিম, চকলেট কিনে এনেছে)

তারপর দুই ভাই-বোন মিলে চকলেট আর আইসক্রিম গুলো খেয়েছে। অনন্ত প্রথমে খেতে চায়নি, ঊর্মিই জোর করে ভাইকে খাইয়ে দিয়েছে। ❝ভাই-বোনের ভালোবাসা’টাই এমন কখনো প্রকাশ করে না তবে একে অপরের জন্য জান দিয়ে দিতেই পিছুপা হয় না। এক অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা যেখানে কোনো স্বার্থ নেই।❞

————————————

নাজিফা প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে অড়েই যাচ্ছে, সামনে নিবিড় বসে আছে। এক সপ্তাহ পর ওর টেস্ট এক্সাম শুরু হবে। সামনে এক্সাম তাই পড়াশোনার চাপটাও বেড়ে গেছে, নিবিড়ও যতটুকু পাড়ছে বোনকে পড়াতে গাইড করছে।

নাজিফা : ভাইয়া আজ এতোটুকুই থাক অনেক টায়ার্ড লাগছে।
নিবিড় : হুম ঠিকাছে! তুই রেস্ট নে, আমি গিয়ে তোর জন্য কফি পাঠাচ্ছি।
নাজিফা : Thank you ভাইয়া!

নিবিড় নিজের আর বোনের জন্য দু’কাপ কফি বানালো। নাজিফার জন্য বানানো কফি সার্ভেন্টস কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে আর এক কাপ কফি নিয়ে নিবিড় নিজের রুমে চলে আসে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে হঠাৎ নিবিড়ের ফোনে কল আসে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয় আর আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবতে থাকে।

নিবিড় : তোমার জন্য রাখা অনুভূতি গুলোকে আমি কি নাম দিবো জানি না। কতটুকু গভীর এই অনুভূতি তাও জানি না! শুধু জানি আমার এই অনুভূতি গুলো আবেগ মাখানো কিছু অভিজ্ঞতা। শ্যামা’বতী তোমার ওই হরিণ টানা দু’চোখের প্রেমে পড়েছি বহু আগেই। এই অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো না হয় আমার কাছেই জমানো থাকুক যত্নসহকারে, তুমি অনুভব করে নিও! (মনে মনে)

হঠাৎ কেউ এসে নিবিড়ের কাধে হাত রাখে, পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা মিসেস অহনা দাঁড়িয়ে আছে ছেলের মুখ পানে চেয়ে।

নিবিড় : আম্মু তুমি এখানে, কিছু কি বলবে?
মিসেস অহনা : কেনো আমি কি আমার ছেলের কাছে আসতে পারি না কোনো কারণ ছাড়া?
নিবিড় : তেমন কিছু না। আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে আম্মু?

মিসেস অহনাকে নিয়ে নিবিড় বিছানায় বসিয়ে, মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। মিসেস অহনাও পরম যত্নে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here