দিন_বদলের_হাওয়ায়-৪,০৫

0
531

#দিন_বদলের_হাওয়ায়-৪,০৫
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
০৪

রেদোয়ান আর আমি তৈরি হয়ে নিলাম ঝটপট। রেডি হয়ে অপেক্ষা করছি সায়রা আর পায়রার জন্য। ওরা এখনো রেডি হতে পারে নি। বাবা, আমি, আর রেদোয়ান বসে আছি। বাবা আর রেদোয়ান কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর পায়রা, তার ননদ শিউলি তৈরি হয়ে এলো। শিউলিকেও আমাদের মতো একই রকম শাড়ি দেওয়া হয়েছে। পায়রার বোধহয় আমার গায়ে এই শাড়ি ভালো লাগলো না ও মুখ ভে-ং-চে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। আমি চুপচাপ আমার মতোই বসে রইলাম। পায়রার আসার পর থেকে মৌনতা বিরাজমান এখানে। মৌনতা কাটলো সায়রার আগমনে। সায়রা আসতে আসতে বললো, বাবা আমি তৈরি। বের হবে না?

ওর কথায় বাবা বললেন, হ চল। জামাইরা কই?

আসতেছে ও।

সায়রা কথা বলতে বলতে পায়রা আর শিউলির দিকে তাকালো। দেখলাম ওর চেহারার রং ক্রমশই পরিবর্তন হচ্ছে। বুঝলাম না ব্যাপারটা। কিছু না বলে সায়রা বাবাকে ডেকে ওর সাথে নিয়ে গেলো। আমরা সবাই চুপচাপ বসে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বাবা আসলো না তখন পায়রা সায়রার কাছে গেলো। আমি আর রেদোয়ান চুপচাপ বসেই থাকলাম। আমাদের তো ওদের মধ্যে কাজ নেই। যদি যাই তবে শুনতে হবে নানান অ_প_মা_ন জনক কথা।

কিছুক্ষণ পর দুই বোনের কথা কা*টা*কা*টি*র শব্দ পেয়ে ওদিকে গেলাম। যেতেই শুনতে পেলাম সায়রা বাবাকে বলছে,
‘তুমি আমাদের তিন বোনকে শাড়ি দিয়েছো সাথে ওর ননদকেও কেন দিবে? যদি ওর ননদ শাড়ি পায় তবে আমার ননদ কি দোষ করেছে?

পায়রা সায়রার কথায় রেগে গিয়ে বললো, ‘তোর কি সমস্যা এতে? আমার ননদকে যা ইচ্ছে তা দিক তোর কি? তোর ননদের সাথে আমার ননদের তুলনা করছিস কেন?’

কেন রে? তোমার ননদ কি রাজকন্যা নাকি? দিলে সবাইকেই দিতে হবে।

বাবা ওদের দুজনকে শান্ত করানোর চেষ্টা করছেন। বললেন, চুপ কর না তোরা। শিউলি বেড়াতে এসেছে তাই দিছি। সায়রা তোর ননদরেও নিয়া আয় তখন ওরে দিমু!

আগের বার তো এসেছিলো তখন দিলে না কেন?

বাবা কিছু বলতে পারলেন না। শিউলি তখন বললো, ভাবি একটা শাড়ি নিয়ে তোমার বোন এতো ঝা”মে”লা বাঁধাবে জানলে এই শাড়ি আমি জীবনেও নিতাম না।

ওর কথায় সায়রা আরো বেশি রে/গে গেলো। বললো, তাই নাকি? এখন যখন জেনে গেছো তাহলে শাড়িটা খুলে দিয়ে দিচ্ছো না কেন? জলদি খোলো।

সায়রার ধমকের সুর। এক কথায় দুই কথায় সায়রা আর পায়রার মধ্যে তুমুল ঝ”গ”ড়া বাঁধল। বাবার সাথে আমিও ওদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। মা এক কোণায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন। মেয়েদের মধ্যে এই সামান্য বিষয় নিয়ে ঝ”গ”ড়া সব মা বাবার মনেই দা/গ কা_টে। বাবাও কেমন চুপ হয়ে গেলেন হঠাৎ। ওদের দুজনকে আমি থামাতে পারছি না।

‘ সায়রা পায়রা চুপ কর তোরা। আমার কথা কানে যায় না তোদের?’

পায়রা আমাকে বললো, তোর কথা কানে নিবো কেন? তুই আমাদের দুজনের মাঝে কেন এসেছিস আপা? আমাদেরটা আমাদেরই বুঝতে দে। ওর কত্ত সাহস আমার ননদকে নিয়ে কথা বলে।

চুপ হয়ে গেলাম ওর কথায়। ওদের মধ্যে ঝ/গ/ড়া ভ/য়া/ব/হ আকার ধারণ করেছে ধীরে ধীরে। তাই বাধ্য হয়ে জোরে ধ/ম/ক দিয়ে বললাম, সায়রা চুপ কর। তোর ননদকেও শাড়ি দিতে হবে তাই তো? দাঁড়া আমারটা দিয়ে দিচ্ছি। তাও তোরা আর ঝ/গ/ড়া করিস না। দেখছিস মা বাবা কত ক/ষ্ট পাচ্ছে?

সায়রা কিছু বললো না। কিন্তু পায়রা থামছে না। শিউলিকে এতোক্ষণ খুশি দেখা গেলেও এখন সে মুখ গো/ম/ড়া করে নিলো। পায়রাকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গেলো। পরিবেশ এবার শান্ত হলো। বাবা করুন ভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফুফুর বাড়িতে আর যাওয়া হলো না। ঘরে গিয়ে শাড়িটা খুলে সায়রাকে নিয়ে দিয়ে আসলাম। যে যেভাবে খুশি থাকতে চায় তাকে সেভাবেই খুশি থাকতে দেওয়া উচিত।

সায়রাকে শাড়িটা দিয়ে ঘরে আসার পর রেদোয়ানকে দেখলাম কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই দৃষ্টি আমার বোধগম্য হলো না। বললাম, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আয়ু এতো ধৈর্য্য তুমি পেলে কোথায়?

তার কথায় হেসে ফেললাম। সে আবার বললো, শাড়িটা সায়রাকে না দিলেও পারতে। বাবা তোমায় দিয়েছে খুশি হয়ে।

আমি আবার সায়রাকে দিলাম খুশি হয়ে!

রেদোয়ান আর কিছু বলতে পারলো না।

রাতে খাওয়ার সময় কাউকেই দেখতে পেলাম না। গতকাল সায়রা একসাথে খেলেও আজ তারাও খাবার ঘরে নিয়ে গিয়েছে। বাবা কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে। মাও কোন কথা বলছে না। আমি খাবার বেড়ে দিলাম। সবাই অল্প অল্প খেয়ে নিলো কিন্তু মা খেলেন না। অনেক বলার পরও মা খেলেন না। খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে আমি ঘরে গেলাম। রেদোয়ান খাটের উপর বসে কিছু একটা ভাবছে। তাকে এক নজর দেখে বারান্দায় গেলাম তোশকটা শুকিয়েছে কিনা দেখতে। এখনো পুরোপুরি শুকায় নি। অল্প পানি তো পড়ে নি এতে। এরপর মায়ের কাছে গিয়ে একটা মোটা কাঁথা নিয়ে আসলাম। সেটা বিছানায় বিছিয়ে তার উপর চাদরটা বিছিয়ে দিলাম। গতকাল যেটা বিছিয়ে ছিলাম সেটা গায়ে দেওয়ার জন্য রাখলাম। রেদোয়ান এখনো চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাকে এতো চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবছো?

তেমন কিছু না। আমার চাকরিটা হবে আয়ু?

বুঝলাম না কি বলবো। এখন ওকে আশা দিলাম যদি পরে না হয় তখন? সব তো আল্লাহর হাতে। তাই আমি বললাম, আল্লাহ জানে। দোয়া করো হলেও হতে পারে।

রেদোয়ান কিছু বললো না। আমি আবার বললাম, এতো টেনশন না করে এখন ঘুমাও। কপালে যা আছে তাই হবে। আগামীকাল জানাবে বলেছে না? একটা রাতই তো। কাল সব জানবে। এখন ঘুমাও।

রেদোয়ান মাথা নাড়ালো। আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সায়রা চলে যাচ্ছে। মা ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ও কোন কথাই শুনছে না। ও আর এই বাড়িতে থাকবে না আর আসবেও না। মা আমাকে দেখে বললেন, ওরে থাকতে ক না আয়রা। ও যাইতাছে গা তো।

আমি সায়রার কাছে গিয়ে বললাম, তুই চলে যাচ্ছিস কেন রে সায়রা? এভাবে রা/গ করে যেতে হয় না রে। মা বাবা ক/ষ্ট পাবে।

সায়রা আমার কথা মানলো না। বললো, না রে আপা। রাগ করে যাচ্ছি না। গতরাতে ওর অফিসের বস ফোন করেছে। জরুরি কাজ আছে যেতে হবে। আর এই নে ধর তোর শাড়ি। এটা লাগবে না। বাবা থাক তার ছোট মেয়েকে নিয়ে।

সায়রা চলে গেলো। পায়রা নিজের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য বেশ উপভোগ করছে। সায়রা যেতেই ও নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। খুব ক/ষ্ট হচ্ছে। আমাদের বোনদের মধ্যে মধুর সম্পর্কটা আস্তে আস্তে হালকা হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি দিনগুলো হয়ে যাচ্ছে তি/ক্ত। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আগে যখন তিনজন মা বাবার কাছে একত্রে বেড়াতে আসতাম তখন কত আনন্দ হতো। কত হই হুল্লোড় হতো। আর এখন! সব বদলে গেছে দিন বদলে। ভালোবাসা স্বার্থের সামনে শূন্য।

বিকেল গড়ালো। দিনটা কোন মতে কাটলো। ভালো কাটলো না। সায়রার যাওয়ায় খুব খা/রা/প লাগছে। রেদোয়ানও বাড়িতে নেই। মায়ের মনটাও খুব খা/রা/প। বাবাও কেমন চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান এলো। তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, আয়ু! আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।

ওর কথা শুনে কি যে খুশি হয়েছি। অবশেষে একটা চাকরি তো হলো। দুজনে কোন মতে চলতে পারলেই হয়। এখন তো আর কেউ আমায় বলতে পারবে না আমার স্বামীর চাকরি নেই, সে বেকার। আর কেউ তো আমায় কথা শোনাতে পারবে না। এটা ভেবেই আমার দুই ঠোঁট প্রসারিত হলো।

কিন্তু কে জানতো এই হাসি আমার দীর্ঘস্থায়ী হবে না!

চলবে…..

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [৫]
#তানজিলা_তিহা

রেদোয়ান চাকরি পেয়েছে! কত্ত খুশির খবর আমার জন্য। খুশি হয়ে ব্যাপারটা বাবাকে জানাতে গেলাম। বাবা বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন নামাযের জন্য। আসরের আজান দিয়েছে। বাবা বাড়ির মেইন ফটকের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। দেখলাম পায়রা, শিউলি, মাহবুব, নাহিদ বাড়িতে আসছে। হয়তো কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলো।আমি খুশিতে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, বাবা রেদোয়ানের চাকরি হয়েছে!

বাবাও খুশি হলেন। হাসলেন উৎসুক হয়ে বললেন, কবে? কই হইছে?

আজই বাবা। আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে।

তাইলে তো ভালাই। জয়েন দিবো কবে? এনে চাকরি হইলে তোরা থাকবি কনে?

ও বলেছে বাসা ভাড়া করবে।

পায়রাও আমাদের কথা শুনছিলো বোধহয়। আমার কথা শেষ হতেই পায়রা বললো, বাসা ভাড়া করবি কেন রে আপা? তুই তো এখানেই থাকবি। বাসা ভাড়া করবি কি লোক দেখাতে? বাবার সব শেষ করতেই তো দুলাভাইকে দিয়ে এখানে চাকরি নেওয়ালি। এখন আর লোক দেখাতে দূরে থাকার দরকার কি?

পায়রার ওমন কথায় আমি তাজ্জব বনে গেলাম। কি বলছে ও এগুলো? এসব চিন্তা তো কখনোই মাথায় আনি নি আমি। এতোটা আ/ঘা/ত দিয়ে ও কথা বলবে চিন্তা করি নি। ভেবেছিলাম আমার স্বামীর চাকরি হলে সবাই খুশি হবে। কেউ আর আমাকে কিছু বলতে পারবে না। এখন দেখছি জ্বা/লা আরো বেরে গেলো। চাকরি না থাকায় যা শুনতে হয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ শুনতে হবে এই চাকরি যদি ও করে তবে।

শিউলি মুখ বাঁকিয়ে বললো, এগুলো তো বোঝাই যায়। এগুলো কি আর বলা লাগে ভাবি? ওনার স্বামী আর উনি প্ল্যান করেই বোধহয় এখানে এসেছে তারা। থাক ভাবি তুমি আর কিছু বলো না এরপর তোমাকে আবার কি কি বলে দেয়! কাল দেখলে না তোমার মেজ বোন কি বললো!

আমার চোখের নোনাজল গড়ানো শুরু করলো। এখানে চাকরি হাওয়াটা যে মস্ত ভু,ল এটা বুঝতে বাকি রইলো না। চাকরি পেতেই এ কথা শুনতে হচ্ছে। যখন চাকরি করবে তখন কি বলবে? তখন তো আরো বেশি শুনতে হবে! আমি না খেয়ে থাকতে পারবো কিন্তু আমার স্বামীর অ,প,মা,ন আমি সহ্য করবো না। না খেয়ে থাকলে কেউ দেখবে না কিন্তু কথার বেলায় কেউ ছাড় দেবে না। রেদোয়ান এখানে চাকরির দরখাস্ত করে মস্ত ভু,ল করেছে।

বাবা পায়রাকে ধমকে বললেন, পায়রা দিন দিন তো তুই অনেক বে/য়া/দ/ব হইয়া যাইতাছোছ। আর শিউলি তুমি আমগো পরিবারের মইধ্যে কথা কও কেন? এডা তো তোমার উচিত না।

পায়রা বাবাকে তৎক্ষণাৎ বললো, তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলা বাবা? উচিত কথা বললেই বে/য়া/দ/ব হয়ে যায় মানুষ তাই না? জামাইয়ের চাকরি নেই অন্যের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে এটা কি মিথ্যে কথা? এটা বললেই বে/য়া/দ/ব? আবার এখন নাকি চাকরি হয়েছে তাও একটা প্রাইমারি স্কুলে কত বেতন পাবে শুনি? এই বেতনে কি তার সংসার চলবে? তোমার কাছে আছে আর ঠিকই তখন তোমাকে ভে/ঙে খাবে। এটা তো আর মিথ্যা নয়। আমি এগুলো বলতে গেলেই দো/ষ। আমরা তো নিজের পয়সায় খাই। এগুলো বললেই তোমাদের কাছে ভালো না।

শিউলি বললো, আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারলেন তালই সাহেব? ভাবি তোমাদের বাড়িতে প্রত্যেক পদে পদে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে আমাকে অ/প/মা/ন করা হচ্ছে আমি এই জন্যই এই বাড়িতে আসতে চাই নি। আমাকে এভাবে অ/প/মা/ন করানোর জন্য তোমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছো?

ওর কথায় পায়রা রেগে বললো, বাবা আমার ননদকে তুমি এ কথা বলতে পারো না। ও তোমাদের এখানে খাওয়ার জন্য আসে নি। বেড়াতে এসেছে। এভাবে অ/প/মা/ন করতে পারো না তুমি।

পায়রার কথায় খুব অবাক হলাম। তার মানে আমি কি এখানে খাবারের জন্য এসেছি? ওরা আমাকে কি পেয়েছে? ওদের নজরে আমি এতোটাই তু/চ্ছ? বললাম, পায়রা আমি কি এখানে খাওয়ার জন্য এসেছি?

সে তোরটা তুই জানিস তুই কেন এসেছিস। সবার মধ্যে ঝ/গ/ড়া লাগাতে এসেছিস তুই। একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে এ বাড়িতে। শুধু তোর জন্য। তোর জন্য বাবাও দেখতে পারে না আমাদের।

ভীষণ আশ্চর্য হলাম। পায়রা চলে গেলো। কি বলে গেলো ও এগুলো? বাবা নিশ্চুপ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছু বলতে পারছেন না। আমি বাবাকে নামাজ পড়তে যেতে বলে ঘরে চলে আসলাম। এটা খুব বুঝতে পেরেছি রেদোয়ান এখানে চাকরি করতে পারবে না। তাহলে মানুষের কথা শুনে শুনেই আমাকে ম/র/তে হবে। ও বাড়িতে না খেয়ে থাকলে শাশুড়ি আর জা দের কথা শুনবো। কিন্তু এখানে নিজের পরিবারের লোকজন, নিজের আপনজনদের নানান কথা শুনতে হবে। যা আমি স/হ্য করতে পারবো না।

রেদোয়ান বিছানায় শুয়ে আছে। আমাকে মন খারাপ করে ঘরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, আয়ু তোমার চোখ মুখ ফুলে আছে কেন? তোমার মন খারাপ কেন?

কি বলবো তাকে? তাকে চাকরি করতে কি করে বারণ করি আমি? বেকার থাকাটা কত কষ্টের সেটা যে থাকে সে ভালো বোঝে। এখন যদি তাকে আমি এগুলো বলি তবে সে কি সহ্য করতে পারবে? আমি কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বললাম, রেদোয়ান তোমাকে এখানে চাকরি করতে হবে না।

রেদোয়ান ভীষণ অবাক হলো। আমাকে প্রতিউত্তরে প্রশ্ন করলো, কেন আয়ু?

না বলেছি তো নাই। না খেয়ে আমি থাকতে পারবো কিন্তু মানুষের কথা শুনতে পারবো না। এখানে তোমার চাকরি করা লাগবে না।

রেদোয়ান হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে কেন আমি চাকরি করতে বারণ করেছি। তাই সে আর কথা বাড়ালো না। আমি নিশ্চুপ বসে রইলাম। পায়রার সাথে আমার কি শ/ত্রু/তা আছে তা ভাবতে লাগলাম। মানুষ হয়তো বা শ/ত্রু/র সাথেও এমন ব্যবহার করে না যেমন ও আমার সাথে করছে। আজ ওরা ভালো অবস্থানে আছে তাই আমার সাথে এমন করতে পারছে। আচ্ছা ভবিষ্যতে যদি ও আমার অবস্থানে আসে তখন? ও কি এসব একটুও ভাবছে না? মানুষ কি সব সময় এক অবস্থায় থাকে নাকি? সব তো বিধাতার হাতে। কখন কাকে কোন অবস্থায় রাখবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমিও তো একদিন ওর মতো অবস্থায় ছিলাম। বরং ওর থেকে ভালো অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু আমার সাথে কি হলো! নিয়তি আমার বড্ড ক/রু/ণ!

রেদোয়ান আর বাড়ি থেকে বের হলো না আজ। তখন থেকেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। আমিও কোন কথা বলি নি। কি বা বলবো আমি? আমি তার থেকে তার একটু ভালো থাকার চেষ্টাটাকে কেড়ে নিতে চাচ্ছি!

সন্ধ্যায় বড় খালা আমাদের বাড়িতে আসলেন। মা তার সাথে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত। পায়রা, শিউলি একপাশে বসে তাদের কথা শুনছে। আমি খালার জন্য পান বানিয়ে দিচ্ছি। কথা বলার এক পর্যায়ে আমাকে নিয়ে কথা উঠলে মা বললেন রেদোয়ানের চাকরি হয়েছে। খালাও খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললেন। কিন্তু মাঝে ফোড়ন কাটলো পায়রা। বললো, ‘বুঝেছো খালা আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলেই চাকরি হয়েছে। এখন ঘরজামাই থেকে এখানে চাকরি করবে। তুমিই বলো খালা প্রাইমারি স্কুলের সামান্য বেতনে কারো সংসার চলে?’

পায়রার কথায় লজ্জায় আমার মাথা কা/টা যাচ্ছে। আমি লজ্জায় কোন কথা বলতে পারলাম না। খালাও কেমন যেন করে তাকিয়ে আমার দিকে। ও যেভাবে কথাটা বলেছে এর জন্য এভাবে তাকিয়ে থাকাটা স্বাভাবিক। আমি খালাকে পান দিয়ে ঘরে চলে আসলাম। রেদোয়ান শুয়ে ছিলো। আমি রেদোয়ানকে এসেই বললাম, ‘রেদোয়ান আমি আর এ বাড়িতে থাকবো না। ম/রে গেলেও আর এ বাড়িতে আসতে চাইবো না। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি এখানে থাকলে আমি ম/রে/ই যাবো! আর সহ্য করতে পারছি না এসব!’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here