শুভদিন (পর্ব-০৬/অন্তিম পর্ব)
লিখাঃ সুমাইয়া বিনতে আব্দুল আজিজ
৪ বছর পর….
আরশিকে দেখতে আসবে আজ।ফ্যামিলি থেকে বিয়ে দিতে চাইলেও বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে অরিত্রী।এইসব বিয়ে টিয়ে নাকি ভালো লাগে না তার।সময় হলে একটা বাচ্চা এডপ্ট করে এনে সেই বাচ্চাকে নিয়েই সারাজীবন থাকবে।বিয়ের প্রয়োজন নেই।পরিবারের সবার সামনে এইটাই বলে দিয়েছে অরিত্রী।
অনেক বলেও অরিত্রীকে বিয়ের ব্যাপারে রাজি করাতে পারে নি কেউ।এমনকি আরশি কিংবা ওর বাবাও না।অরিত্রীর এক কথা….বিয়ে সে আর কখনোই করবে না।
আরশি,আহসান আলম অরিত্রীকে অনেক বুঝিয়েছেন যে,অইটা আসলে বিয়ের মধ্যে পরে না।অইটা জীবনের একটা এক্সিডেন্ট। কিন্তু অরিত্রী কিছুতেই কিছু মানতে রাজি না।অরিত্রী কিংবা হৃদয়ের ফ্যামিলির লোককে পরে আর জানানোই হয় নি অই বিয়েটার ব্যাপারে।
ছেলেপক্ষের লোক চলে এসেছে।ছেলে হাসিব,হাসিবের মা,চাচী,আর বড় বোন এসেছে আরশিকে দেখতে।
ছেলে+ছেলের ফ্যামিলি ইসলামিক;একদম আরশি যেরকম চায় তেমনটাই।তবে শুধু ধার্মিকতার দিক থেকেই আরশির মনের মত।অন্য কোনো দিক থেকেই আরশির তেমন ভালো লাগে নি।
আর্থিক দিক দিয়ে আরশিদের থেকে বেশ পিছিয়ে।ছেলে কাপড়ের ব্যবসা করে।টাংগাইলের সমবায় মার্কেটে একটা মেয়েদের রেডিমেড ড্রেসের দোকান আছে।ছেলেরা ১ ভাই ৫ বোন।ভাই-বোনদের মাঝে ছেলে ২ নাম্বার।ছোট আরো ৪ টা বোন আছে।সেই চার বোনের দুই বোন বিবাহিত। ছোট দুইটার বিয়ে হয় নি এখনো।ছেলের বাসা টাংগাইল টাউন থেকে কিছুটা দূরে ‘সন্তোষ’ নামক এলাকায়;মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই।
অন্যান্য দিক থেকে কমতি থাকলেও ধার্মিকতার দিক থেকে কমতি নেই।আর এটাকেই আরশি বেশি প্রাধান্য দিয়ে এই বিয়েতে আগানোর জন্য মত দিয়েছে।
মেয়ে দেখে হাদিয়া স্বরূপ ছেলেপক্ষ তাফসির তাফহীমুল কুরআনের একটা ফুল সেট আরশিকে দেন।মেয়ে দেখতে এসে মেয়ের হাতে টাকা গুজে দেয়ার ব্যাপার টা ভালো লাগে না ছেলের মায়ের।
দেখাদেখির পর্ব শেষ করে বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হল।শরীয়ত সমর্থিত নিয়ম অনুযায়ী সুন্নতি পদ্ধতিতে নির্ধারিত দিনে বিয়ে হয়ে গেল আরশি আর হাসিবের।
আরশিকে বিদায় দিয়ে বাসায় এসে দরজা অফ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল অরিত্রী।মুখের উপর দুইহাত রেখে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল।অনেক বছর সে মন খুলে কান্না করতে পারে না।এত বছরের ফাফর আজ দূর করবে সে কান্না করে।গায়ের জামা,মাথার চুল টানছে আর কান্না করছে…!!
আজকের দিনটাই ওর আরশির বিয়ের ডেট হওয়া লাগল…!? আজকের দিনটাই..!? কিন্তু কেন?
বাবা কি ৪ বছর আগের এই ১লা সেপ্টেম্বরের কথা ভুলে গিয়েছেন? সত্যিই ভুলে গিয়েছেন..!? কেন ভুলল বাবা?
মুহুর্তের মধ্যে যে দিনটা তা জন্য শুভদিনে পরিনত হয়েছিল সেই দিনটা থেকেই যে তার জীবনেও সব সুখ উধাও হয়ে যাবে কল্পনায়ও কি ভেবেছিল সেইটা? কেন এমন হল…!?
মাঝে মাঝে আরশির উপর ওর ভীষণ রাগ হয়।কেন ও বাবাকে ওদের রিলেশনের কথা বলে বিয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়েছিল? বিয়ে টা না হলেই তো কষ্ট থাকলেও এতটা কষ্ট থাকত না।দিনের পর দিন অপেক্ষার দহনে এতটা দগ্ধ হওয়া লাগত না।
অরিত্রী দরজার সাথেই হেলান দিয়ে এবার ফ্লোরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল।মনে পরে যাচ্ছে ৪ বছর আগের সেই ১লা সেপ্টেম্বরের কথা;যেদিন বাবা নিজে উপস্থিত থেকে অরিত্রী আর হৃদয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।
সেদিন বিকেলে হৃদয় অরিত্রীদের বাসায় আসে।একরাত থেকেই চলে যাবে।এতবছর পর মেয়ের ঘরের নাতিকে নিজের বাসায় পেয়ে কি রেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না আহসানের বাবা-মা।অভিমানী সুরে আহসানের মা হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“আমরা তো মরে গেছি।আসবি কেন এই বাসায়? ভাগ্যিস আজ দরকার ছিল এদিকে।নয়তো আজও আসতি না।”
হৃদয় কিছু বলে না।শুধু হাসে….হৃদয়কে ঘিরে এক বেলার মধ্যেই যেন উৎসব লেগে গেল বাসায়।কি খাওয়াবে, কোথায় বসতে দিবে যেন ভেবে পাচ্ছে না কেউ।অরিত্রী বারবার হৃদয়ের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতেছে।কিন্তু ওর সাথে নির্জনে একটু বসে দুইটা কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছে না।
এর মধ্যে আহসান আলম এক কাজ করে বসলেন।আহসান আলম তার মায়ের অষুধের বাক্স থেকে ৫-৬ ট স্লিপিং পিল এনে চায়ের ফ্লাক্সে মিশিয়ে দিলেন।হুমাইরা জাহান ফ্লাক্স ভর্তি করে চা করে রেখেছেন ডিনার শেষে খাওয়ার জন্য।ডিনার শেষে বাসার সবার এক কাপ চা খাওয়া চাই।কিন্তু অই সময়টাতে চা করতে ইচ্ছে করে না হুমাইরার।তাই আগেই বানিয়ে ফ্লাক্স ভর্তি করে রাখেন।
তো,আহসান ফ্লাক্সে স্লিপিং পিল মিক্স করে অরিত্রী,আরশি আর হৃদয়কে আলাদা করে জানিয়ে দেয় যাতে ওরা চা না খায়।তো,নিয়মমাফিক ডিনার শেষে সবাই চা খেলেও অরিত্রী,আরশি,হৃদয় আর আহসান চায়ের পর্ব টা এড়িয়ে যায়।রাতের বেলা বাসার সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। এই ঘুম স্বাভাবিকভাবে সকাল ৮ টার আগে ভাংগার প্রশ্নই আসে না।আহসান আলম হৃদয়কে অরিত্রীর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আরশিকে ওই রুম থেকে সরিয়ে নিয়ে আসলেন।আরশিকে বললেন রাতটুকু ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে কাটিয়ে দিতে।
হৃদয়কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অরিত্রী পাগলের মত কান্না করতেছে।প্রচন্ড সুখে কেউ কখনো এভাবে কান্না করে? বুঝতে পারছে না অরিত্রী। বাবার উপর এতদিন যে অভিমান টা পুষে রেখেছিল মনে সেই অভিমান টা মিইয়ে গেছে একদম।তার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা,আর বোনটাও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোন।
অরিত্রী কান্না করছে…হৃদয় বাধা দিচ্ছে না।আস্তে আস্তে কান্না থামাও অরিত্রী।হৃদয় ওকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে পাঠায়।ওয়াশরুমে গিয়ে একেবারে শাওয়ার নিয়ে ফেলল অরিত্রী।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে লাল আর সোনালি রঙের মিশ্রণে একটা জামদানী শাড়ি বিছানার উপর রাখা।শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে পেটিকোট, ব্লাউজ আর সাথে কিছু ম্যাচিং করা অর্নামেন্টস।
অরিত্রী অবাক হয়ে যায়।অবাক হয়ে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে হৃদয়ের দিকে তাকাতেই হৃদয় বলল যে,
-“তোমাকে বাসায় পাঠিয়েই একটু শপিং-এ গিয়েছিলাম।জীবনের প্রথম বিয়ে বলে কথা;বউকে বিয়েতে কিছু না দিলে কেমন দেখায় না?”
অরিত্রী কপাল কুচকে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“প্রথম বিয়ে মানে? ২য়,৩য় বিয়ের করার ইচ্ছেও আছে নাকি?”
-“আমি কি বলেছি সেই কথা?”
-“যেভাবে বললা,প্রথম বিয়ে বলে কথা…তাই বললাম।”
হৃদয় এবার কাছে এসে অরিত্রীর কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে কাছে টেনে নিল।কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
-“এবার শাড়িটা পরে আমাকে উদ্ধার করুন মহারাণী।লাইফে প্রথমবারের মত শাড়ি কিনলাম।ভালো-মন্দ ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি।তোমার পছন্দ হইছে কিনা….”
অরিত্রী হৃদয়ের মুখে৷ আংগুল দিয়ে থামিয়ে দিল হৃদয়কে।তারপর বলল,
-“শুধু পছন্দ না….অন্নেক বেশি পছন্দ হইছে।হাজার হলেও তোমার দেয়া জিনিস;পছন্দ না হয়ে যাবে কই হুম? তুমি একটু বারান্দায় গিয়ে বস;আমি এক্ষুনি শাড়ি পরে নিচ্ছি।”
হৃদয় বারান্দায় গিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।অরিত্রী ঝটপট শাড়ি পরে নিল।
মুখে হালকা একটু ক্রিম,তার উপরে ফেস পাউডার।লাল কালারের লিপস্টিক সাথে হৃদয়ের আনা অর্নামেন্টস গুলো পড়লো।
কুচি টা ঠিক করা হয় নি….কেমন যেন দেখাচ্ছে;ঠিক করতে হবে।শাড়ির কুচিগুলো খুলে আবার নতুন করে দিয়ে ধরে হৃদয়ের কাছে বলল কুচিটা ধরে ঠিক করে দিতে।জীবনের প্রথম এরকম একটা কাজ করতে গিয়ে অন্যরকম প্রশান্তিতে ভেতরটা ছেড়ে গেল হৃদয়ের।কুচিটা ঠিক করে দিয়ে নিজের হাত দিয়েই সেইটা গুজে দিল হৃদয়।হৃদয়ের স্পর্শ পেতেই কেপে উঠল অরিত্রী।আবেশে জড়িয়ে ধরল।অরিত্রীকে ছাড়িয়ে হৃদয় বলল,
-“অনেক জড়াজড়ি করা হইছে।এবার আমার বউটাকে একটু দেখতে দাও।দেখি…”
অরিত্রী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।হৃদয় থুতনিতে ধরে উচু করে লাজুক মুখটা দেখে বলল,.
-“সবসময় এভাবেই লজ্জা পাবে….মনে থাকবে?”
অরিত্রী কপাল কুচকে ঠোঁট বাকা করে একটুখানি হাসি দিয়ে বলল,
-“সবসময় লজ্জা যদি না লাগে?”
-“লাগাতে হবে..আমার জন্য।এমন লজ্জামাখা মুখ কত্ত ভালো লাগে জানো?”
অরিত্রী লজ্জা পেয়ে আবারো হৃদয়ের বুকে মুখ লুকালো।হৃদয় ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসালো।মাথায় কাপড়ের আচল দিয়ে ঘোমটা দিয়ে দিল।তারপর ফোন টা এনে কয়েকটা ছবি তুলে নিল অরিত্রী।এরপর দুজনের একসাথে কয়েকটা সেলফি।হৃদয় বলল,
-“বিয়ে তো বিয়েই…সেটা যেমন করেই হোক।মেমোরি তো রাখতেই হয় তাই না? এই ছবিগুলোই আমাদের মেমোরি হয়ে থাকবে।”
সেদিন তারা জীবনের প্রথম দুজন-দুজনার এত কাছাকাছি চলে এসেছিল।এত্ত এত্ত ভালোবাসায় একদম ভরিয়ে দিয়েছিল অরিত্রীকে।নিয়ে গিয়েছিল ভালোবাসার অন্য এক জগতে….যে জগতে সে রাতের আগে কখনোই যাই নি অরিত্রী।আর সে রাতের পরেও আজ অবদি আর যাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি।কখনো হবে কিনা সেইটাও জানা নেই তার।
সারারাত ভালোবাসার সাগরে ডুবে থেকে ফজরের সময় গোসল করে দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে যে যার যার মত আলাদা ঘুমাতে যায়।বেলা ১১ টার পর ঘুম ভাংগে দুজনের।দুপুরের খাবার খেয়ে হৃদয় চলে যাবে।ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল অরিত্রীর।দুপুরের খাবার খেয়ে আল্লাহর রহমতে আহসান আলমের সাহায্যে ৫ মিনিটের জন্য অরিত্রীকে একা পেয়েছিল হৃদয়। অরিত্রীকে প্রথমে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল।যেন,ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।ব্যাথা পাচ্ছিল অরিত্রী।কিন্তু ভালোও লাগছিল।তারপর অরিত্রীর কপালে আর ঠোঁটে একটুখানি ভালোবাসার পরশ দিয়ে বিদায় নিয়েছিল অরিত্রীর কাছ থেকে।
কে জানত?
সেইটাই হবে চিরবিদায়…!?
না না….চিরবিদায় কেন হতে যাবে? অরিত্রীর বিশ্বাস হৃদয় ফিরে আসবে আবার….ওর মন বলে ফিরে আসবে।
সেদিন বাসা থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকে হৃদয় নিখোঁজ…! ফোন নাম্বার অফ,ভার্সিটিতে যায় নি,ময়মনসিংহও যায় নি,অন্যান্য আত্নীয়দের বাসায়ও যায় নি।ফেসবুকে আসে না।মানে,কোনোরকম কোনো খোজ নেই।হৃদয়কে খোঁজার জন্য আইনের সাহায্যও নিয়েছে।লাভ হয় নি কোনো।কারো মাথায় আসে না হুট করেই এত বড় ছেলে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল…!?
মৃত্যুর সংবাদ আসলে সেটাও মেনে নেয়া সবার জন্য সহজ হত।কিন্ত এভাবে নিখোঁজ হওয়া কি মানা যায়? কোথায় কেমন অবস্থায় আছে কিচ্ছু জানা নেই।আদৌ বেচে আছে কিনা মরে গেছে সেটা অবদি জানে না কেউ।ব্যাপার টা কেউ মানতে পারে না….কেউ না।
একমাত্র ছেলেকে আচমকা এরকম হারিয়ে হৃদয়ের বাবা মা দুজনের’ই পাগল প্রায় অবস্থা।হৃদয়ের বাবা সময়ের ব্যবধানে নিজেকে সামলে নিতে পারলেও হৃদয়ের মা আসমানী বেগম তা পারেন নি।মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আজও হৃদয়ের সমবয়সী কোনো ছেলেকে দেখলে সে তাকে তার হৃদ ভাবে।আদর করে কাছে ডাকে,হৃদ হৃদ বলে ডাকে,তাকে মা ডাকতে বলে,যত্ন করে রান্না করে খাওয়াতে চায়,হাসতে হাসতে সেই হৃদকে জড়িয়ে ধরে আবার হুট করেই কান্না করেন।আরো কত কি…!!
কিন্তু,মা তো তাও মন খুলে কান্না করে একটুখানি হালকা হতে পারেন।কিন্তু অরিত্রী?
সে তো বাইরের সবার দৃষ্টিতে হৃদয়ের বিশেষ কেউ না।সে কিভাবে হৃদয়ের জন্য সবার সামনে বুক উজার করে কান্না করে একটুখানি হালকা করবে নিজেকে…!?
কিভাবে সামলে নেবে এত বড় ধাক্কা…!?
বিয়ের পরের দিনই স্বামীকে হারানো এই অভাগীর কথা কেউ কি জানে?
হারিয়েই যাওয়ারই যদি কথা ছিল তাহলে বিয়েটা কেন হল? আর বিয়ের পরের দিনই কেন হারিয়ে যেতে হল..!?
হৃদয়ের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে মন ভরে না অরিত্রীর।খুব ইচ্ছে করে হৃদয়কে সামনে বসিয়ে চোখ ভরে দেখতে,ওর হাসিটা দেখতে, কথাগুলো শুনতে,ওর হাসির শব্দ শুনতে…কিন্তু পারে না অরিত্রী।প্রচন্ড কষ্টে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে।কিন্তু কাদতেও পারে না।দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় তখন।
অনেক অনেক প্রশ্ন,অনেক অভিযোগ, অনেক অভিমান মনের ভেতর পুষে রেখেছে অরিত্রী।ওর বিশ্বাস, হৃদয় ঠিক একদিন এসে চমকে দেবে সবাইকে।আর অরিত্রীর ভেতরের সব অভিমানও নিমিষেই ঘুচিয়ে দেবে।
হৃদয় নিখোঁজ হওয়ার পর কিছুদিন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রচন্ড কান্না করত অরিত্রী।তারপর থেকে আর কান্না আসত না।
কান্না করবে কেন অরিত্রী?
অরিত্রী তো হৃদয়ের মৃত্যুর খবর শুনে নি,হৃদয়ের লাশও দেখে নি।তাহলে কেন সে বিশ্বাস করবে যে হৃদয় নেই? কেন সে বিশ্বাস করবে যে হৃদয় আর ফিরে আসবে না?
হৃদয় আসবে… অবশ্যই আসবে…ওর মন বলে হৃদয় ফিরে আসবেই।
শপিং-এ গেলে হৃদয়ের জন্য কিছু পছন্দ হলে কিনে রাখে, হৃদয়কে কিছু বলার ইচ্ছে হলে ওর মেসেঞ্জার আইডিতে টেক্সট দিয়ে বলে রাখে,কিংবা ডায়েরিতে লিখে রাখে।কখনো একটুখানি সাজতে ইচ্ছে করে সেজে পিক তুলে হৃদয়ের আইডিতে পিক সেন্ড করে।
ওর এরকম কান্ড দেখে আরশি প্রথমে কিছুদিন কান্না করত।এখন আর কান্না করে না…শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
***
রাত ২:৫০….
অরিত্রীর ঘুম আসছে না।আলমারি থেকে বিয়ের সেই শাড়িটা বের করে পরে নিলো অরিত্রী।তারপর বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো….
চারিদিকে ঘোর অন্ধকার….আকাশে আজ জ্যোৎস্নাও নেই।আমাবস্যা বুঝি?
আশেপাশের বড় বড় বিল্ডিং গুলোর জন্য রাস্তার সোডিয়ামের আলোও অরিত্রীর বারান্দায় এসে পৌছাচ্ছে না।এই অন্ধকার টাই বেশ লাগে অরিত্রীর।অন্ধকারে হৃদয়কে অনুভব করা যায় সহজেই।কল্পনায় ওর সাথে চুপি চুপি কথা বলা যায়,হাসাহাসি করা যায় আবার ওকে জড়িয়ে ধরে চুমুও খাওয়া যায়।
আজ অনেকদিন পর অরিত্রী তার মিস্টার মুগ্ধের সাথে কথা বলতে আসছে।অরিত্রী চোখ বন্ধ করে চুপিচুপি ডাকছে,
-“মুগ্ধ…? মিস্টার মুগ্ধ….?”
-“এইতো হৃদী…আমি এখানেই।”
অরিত্রী মুচকি হাসল।তারপর বলল,
-“তোমার দেয়া বিয়ের সেই শাড়িটা পরেছি আজকে।কেমন লাগছে দেখো তো?”
হৃদয় এবার কোনো জবাব দিল না।অরিত্রী চোখ বন্ধ করে দেখতে পেল হৃদয় ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হৃদয়ের জবাব পেয়ে গেল অরিত্রী।লজ্জায় মাথা নিচু করে মুচকি হাসল।
হৃদয় এবার বলল,
-“এত সুন্দর করে লজ্জা পেয়ো না হৃদী…আমি খুন হয়ে যাব।”
খুন…!? অরিত্রীর মন টা এবার হুট করেই খারাপ হয়ে গেল…! বিষন্ন মুখ নিয়ে বলল,
-“প্রিয়,তুমি কি সত্যিই আছো?
-“হ্যা…আছি তো…এইতো আমি।”
-“কই? আমি তাহলে তোমাকে স্পর্শ করতে পারি না কেন? আমার ভীষণ ইচ্ছে হয় তোমাকে স্পর্শ করার…তোমার স্পর্শ পাবার।”
হৃদয় এবার কোনো কথা বলে না।অরিত্রী আবার জিজ্ঞেস করে,
-“কবে আসবে বল না? আর কত দেড়ি হবে?”
-“রাস্তায় প্রচুর জ্যাম অরু….সেজন্যই আসতে লেট হচ্ছে।”
হৃদয়ের দুষ্টুমি মার্কা কথা শুনে অরিত্রী মুচকি হাসে।তারপর চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই ফিসফিস করে ডাকল তার মিস্টার মুগ্ধকে,
-“মিস্টার মুগ্ধ…?”
-“বলুন মিসেস।”
-“শুভদিন সত্যি সত্যিই আসবে তো?”
#সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ ফিনিশিং টা কার কেমন লাগবে জানি না।তবে আমার নিজের কাছেই ভালো লাগে নি।অরিত্রী,আরশি,হৃদয়কে নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছে ছিল এই গল্পে।কিন্তু হল না।গল্পটা শুরু করার আগেই আমাকে শেষ করতে হল।যেভাবে চরিত্রগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম পারলাম না।তবে আবার অন্য কোনো গল্পে ইন-শা-আল্লাহ এই টুইন বোন অরিত্রী,আরশি আর হৃদয়কে নিয়ে আসব ইন-শা-আল্লাহ।দুয়া করবেন আমার জন্য সবাই❤