প্যারানরমাল #পর্ব_১_ও_২

0
1131

প্যারানরমাল
#পর্ব_১_ও_২
বিনতে_লোহানী_ফিদা
০১

রাত যতো গভীর হয় কান্নার আওয়াজ
ততো তীব্র হয়।
প্রায় প্রতিরাতেই এই এক ঘটনা।
বিরক্ত হয়ে উঠেছি আমি।
কোথা থেকে আওয়াজ হয় বুঝতে পারিনা।
কখনোও মনে হয় খাটের নিচ থেকে,
কখনোও মনে আলমারিরর পেছন থেকে,আবার কখনোও মনে হয় দেয়ালের ভেতর থেকে।
রাতে ঘুমালে কখনোও এতোটা কাছে ফিল হয় মনে হয় যেন চোখ খুলেই কোন এক বাচ্চা মেয়েকে কাঁদতে দেখবো মুখের ওপর।

অন্যদিকে আবার দুপুর বেলা মনে হয় কেউ খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার চলাফেরার ওপর নজর রাখছে।
এসব নিয়ে আমি একটু চিন্তিত হলেও মোটেও ভীত নই।
আর তাই বিষয়গুলো এখনো অব্দি সোহানের কানে দেইনি।

সোহানের সাথে আমার বিয়ের ৩ মাস চলছে।
ওর কাজের সুত্রে আমরা চট্টগ্রামে থাকি।
চট্টগ্রামে একটা বাসা নিয়েছে ও।
বিয়ের একমাস পরেই আমি এখানে
চলে আসি।
এখানে আসার ১০-১৫ দিন পর থেকেই এই সমস্যাগুলো শুরু হয়েছে।
আমি মেয়ে হিসেবে খুব একটা ভীতু নই।
প্যারানরমাল এই ঘটনাগুলো আমার বিশ্বাস এ কুলোয় না।
তাই হয়তো এখনো অব্দি ভয় পাইনি।
কিন্তু তারপরেও মাঝেমাঝে মনে হয় হয়তো এই বাসায় আমি ছাড়াও অন্যকেউ আছে।

আজ সোহান ফোন দিয়ে জানালো,
রাতে ফিরতে সামান্য দেরী হবে।
আমি একা থাকি,
সোহান আবার এই বিষয়গুলোতে খুব সেনসিটিভ।
তাই ও দেরী হলেও জানিয়ে দেয় যাতে করে আমি আরোও সর্তক থাকতে পারি।

রাত প্রায় ৯ টা বাজে।
টিভি দেখছি।
সুপার ডান্সার।
টিভির পাশ দিয়েই চলে গেছে একটা
ছোট্ট ব্যালকোনি।
আমার খুব পছন্দের।
ওখানে বসলেও আমার রুমটা দেখা যায় খুব পরিষ্কারভাবে।
আমি টিভি অন রেখেই কফির মগটা হাতে ব্যালকোনিতে দাড়ালাম।
খুব সুন্দর বাতাস।
ঘরের এসিতেও সেই শান্তি নেই।
একটু আরাম করেই দোলনায় বসলাম।
মনোরম একটা পরিবেশ।

হঠাৎ করেই আচমকা টিভির চ্যানেলটা বদলে গেলো।
ভলিউম বেড়ে গেলো।
গান হচ্ছিলো।
আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।
ভালোভাবে ঘরটা দেখলাম কেউ নেই তো।
রিমোট সোফার ওপরেই।
চ্যানেল বদলালো কি করে বুঝলাম
না বিষয়টা।
আমি ধীরেধীরে ঘরে আসলাম।
কফির মগটা টেবিলে রেগে গেস্ট রুমের দিকে এগোতে লাগলাম।
মনে হচ্ছে ওখানে কেউ আছে।
হাতে একটা লাঠি নিয়ে নিলাম।
চোর হলে যেন ধোলাই দিতে পারি।
আমাদের গেস্টরুম পর্দা দেয়া।
গেস্টরুমের সামনে দাড়াতেই পর্দার পেছনে একটা স্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেলাম।
শক্ত হাতে লাঠিটা চেপে ধরতেই মনে হলো,
এতো লম্বা মানুষ হয় নাকি?
অফ হোয়াইট পর্দায় কালো অবয়বটা স্পষ্ট।
কিন্তু কোথায় শেষ?
শেষ নেই কোন?
শরীরের গঠন মানুষের মতোন নয়।
শুধু লম্বা,
কোন গঠন নেই আর দুলছে অবয়বটা।
সাথে পর্দাটাও নড়ছে হালকা।
আমি সাহস করেই এক টেনে পর্দাটা
সরিয়ে দেখি,,,,,,

#পর্ব_২

সোফার ওপর ১টা না ২ টা বিরাট ছাঁয়া।
আমি পর্দা টান দিতেই ছায়াটা যেন ছিটকে ওদিকে চলে গেলো।
গেস্ট রুমের লাইট অফ থাকায় আমি
শুধু ছাঁয়া দুটোই দেখছিলাম।
হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো।
আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখি সোহান।
ওকে দেখে যেন শান্তি ফিরে পেলাম।

খেতে বসেছি।
ভাবলাম আজকের ঘটনাগুলো সব
জানিয়ে দেবো ওকে।
কারণ আমি সত্যি ভয় পেয়েছি।
কিন্তু ওকে দেখে মনে হলো ওর শরীরটা ভালো না।
ক্লান্ত।
তাই আর কিছু না বলেই আমি শুতে এলাম।
কতোক্ষণ ঘুমিয়েছি মনে নেই।
কলিং বেল এর তীব্র আওয়াজ এ
ঘুম ভেঙে গেলো আমার।
বিরক্ত হলাম ভীষণ।
এই সময় আবার কে?
পাশে তাকিয়ে দেখি সোহান নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে।
খুব ধকল গেছে মনে হয় আজ।
বেলটা বেজেই যাচ্ছে।
হাতে একটা লাঠি নিয়ে বের হলাম।
আমার আবার চোরের ভয় খুব।
দরজা খুলে দিয়ে আমি হতম্ভব।
সোহান বৃষ্টিতে ভেজা কাক হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
আমি চোখ বড়বড় করে সোহানকে দেখছি।
সোহান এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত
রেখে বলল,
বিন্তি আর ইউ ওকে?
ভয় পাচ্ছো কেনো?
আমি সোহানকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বেডরুমে আসলাম।
এসে দেখি ঘর ফাঁকা,কেউ নেই ঘরে।
আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম।

২দিন প্রচন্ড জ্বর ছিল।
সোহান ছুটিতে ছিল এই দুই দিন।
আজ অনেকটা সুস্থ মনেই সোহানকে গত দিনের ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
সোহান বিশ্বাস করলো না অবিশ্বাস করলো বুঝলাম না।
ও শুধু বললো,
তোমায় তো আমি বলেছিলাম আমার ফিরতে দেরী হবে।
তাহলে আমি এতো আগেই চলে এলাম,
আর এসে তোমায় কিছু বললামও না।
কেন তাড়াতাড়ি ফিরলাম?
এসব কিছু বলেছি?
আর এমনটা কি আমি কখনোও করেছি বলো?
আচ্ছা অনেক দিন থেকে বাসায় একা বসে তুমি।
কাল আমরা বের হবো ঠিকাছে।

আমি সোহানের কথাগুলো ভাবতে লাগলাম,
ও তো ঠিকি বলেছে।
আমি যখন কফি খাচ্ছিলাম তখন নয়টা বাজে।
তারপর এই ঘটনাগুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো কিভাবে?
আমি কফি খেলাম,গেস্টরুমে গেলাম,ছাঁয়া দুটো দেখলাম,হঠাৎ কলিং বেল বাজলো,সোহান আসলো,আমি ওর সাথে খেলাম পর্যন্ত,ঘুমাতে গেলাম,আবার বেলের আওয়াজ এ উঠলাম,তখন তো ও পাশেই ছিল,আবার দরজা খুলেও সোহানকেই দেখলাম।
তাহলে ঘরে আমি কার সাথে ছিলাম?
কার সাথে খেলাম?
আর সোহান বললো ও বাসায় এসেছে
১২ টায়।
তাহলে এত্তো কিছু এই স্বল্প সময়ে কি করে ঘটে গেলো?
কোন কিছুই যেনো আমি মেলাতে পারছিনা।
মাথাটা ভারর হয়ে আসছে।

ছায়া দুটোর কথা মনে পড়তেই গেস্ট
রুমে গেলাম।
দুই দিন পর আজ সোহান অফিস গেছে।
বর্তমানে এখন আমি একা।
সোফায় বসে আছি।
হঠাৎ ধুপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলাম রান্নাঘর থেকে।
রান্নাঘরে যেতেও ভয় পাচ্ছি।
শরীরটা ভালো নেই,
নতুন কোন ধাক্কা হয়তো আমি আর
নিতে পারবোনা।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখি কিছুই নেই।
সব ঠিক।
শুধু তেলের বোতল টা মাটিতে পড়ে আছে কিন্তু তেল নেই।

বেশকিছু দিন থেকে বাড়িতে আর অন্যকোন সমস্যা না থাকলেও তেল পাওয়া যাচ্ছেনা ইদানীং ।
কথাটা হাস্যকর হলেও সত্যি।
প্রতিদিন তেল ভর্তি করে রাখলেও তেলের বোতল ফাঁকা হয়ে যায় নিমিষেই।
ইঁদূরের কাজ না কিসের কাজ আমি জানিনা।
প্রতিদিন দুপুরে রান্না করার সময় এই ঝামেলাটা আমায় পোহাতে হয়।
আজও তাই হয়েছে।
তাই আজ তেল কিনে আর রান্নাঘরে রাখিনি।
আমার বেডরুমে রেখে দিয়েছি।
যা হয় হোক,
নিজ চোখে দেখা যাবে এবার।
আজ প্রচন্ড রোদ আর এত্তো গরম যা অভাবনীয়।
গোসল করে বেরিয়েছি মাত্র।
আনুমানিক দুইটা পাঁচ অথবা দশ বাজে তখন।
ঘরে ঢুকেই আমার সামনে দেখি বিরাট লম্বা দুটো কুচকুচে কালো লোক,
খালি গা,
চপচপ করে নিজেদের শরীরে তেল মাখছে।
আর তেলের বোতল ততোক্ষণে ফাঁকা।
এই দৃশ্য দেখামাত্রই আমি প্রচন্ড চিৎকারে জ্ঞান হারালাম।

তারপর আবার প্রায় সপ্তাহ খানেক অসুস্থ।
বাসায় এখন আমার সাথে একটা মেয়ে থাকে।
আমার শশুড়বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে আমার দেখাশোনার জন্য।
ওর নাম পারুল।
বয়স ১৭-১৮ মতোন।
বেশ কিছুদিন আমি ভালো থাকলেও,
মনের মধ্যে অশান্তি আর ভয় বাসা বেঁধেছে।
আমি তো এমন ছিলাম না।
তাহলে এমন হলাম কেনো?

বিকেলে পারুল ছাদে গেছে কাপড় আনতে।
আমি গল্পের বই পড়ছিলাম।
প্রায় অনেকটা সময় কেটে গেলো,
ও এখনোও আসছে না কেন ভেবে নিজেই ছাদে চলে গেলাম।
কতো করে বলেছি বিকেলে ছাদে দাড়াবিনা বেশি।
কথাই শোনেনা।
ছাদের দরজার কাছে আসতেই কেমন গোঙানির মতো একটা আওয়াজ পেলাম।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঠুকতেই দেখি পারুল,,,,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here