বেপরোয়া_ভালবাসা #পর্বঃ ৪২

0
1025

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ ৪২
#লিখনীঃ মনা_হোসাইন

আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কিন্তু আদি তাতে কোন পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে লাইট অফ করে দিল। সাথে সাথে আদিবার অন্তর আত্মা উড়াল দিল। এই ছেলেটা এত বেয়াদব কেন? আদিবার মনের অবস্থাটা একটাবার বুঝার চেষ্টা করবে না? যখন যা মন চায় তাই করবে? কিন্তু কেন? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিল আদিবা কিন্তু উত্তর মিলানোর আগেই আদি এসে তার পাশে বসল।আদিবা ভয়ে পিছিয়ে বসল তার হাত পা অনবরত কাঁপছে।সে আপাতত এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত না তাই আদিকে আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আদিবা ভয় ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল তখন আদি সাইড ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। আদিবা বেশ অবাক হল। তখনী দৃঢ় কন্ঠ ভেসে আসল,

-“শুয়ে পর। সকালে অফিসে যেতে হবে অনেকদিন যাইনি তাই এখন তোর সাথে সাপ লুডু খেলার ইচ্ছে নেই।

আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।আদিবাকে চুপ থাকতে দেখে আদি আবার বলল,

-” আসলে কি বলতো জোর করে কিছু করে আমি “বাসর রাত” নামটার মানে বদলাতে চাই না। এই রাতে যা হয় দুজনের সম্মতিতে হয় তাই আজ তোর ছুটি। জোরাজোরি করার জন্য সারাজীবনটাই তো পড়ে আছে।

আদিবা চোখ বড়বড় করে আদির দিকে তাকাল। আদি চোখ বন্ধ করে উল্টো ঘুরে মিটমিট করে হাসছে..দেখে আদিবার গা জ্বলে উঠল।

-“আপনি ইচ্ছে করে এমন টা করেছেন তাই না?

আদির নির্ভেজাল উত্তর
-“কী করেছি? কিছু তো করলামি না।

-“ভয় দেখালেন কেন?

-“ভয় দেখাতে যাব কেন আমি অতিভদ্র একটা ছেলে তাই তোকে ছাড় দিলাম।

-“ভদ্র তাও আপনি পৃথিবীর নবম আশ্চর্য হয়ত এটাই।

-“আদিবা বেশি পক পক করিস না যথেষ্ট শান্ত আছি যদি উঠি তোর খবর আছে..

-“আমি আপনার সাথে ঘুমাব না

বলেই আদিবা বিছানা ছাড়তে চাইল কিন্তু আদির হাতে ধরা পড়ল।

-“তুই কতটা ইডিয়েট এবার বুঝেছিস তো..?

-‘মানে?

-“আমাকে বিরক্ত না করলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতি কিন্তু তোর সেটা পছন্দ হল না। দুঃখজনক। যাইহোক বউ এখন চুপচাপ বউয়ের দায়িত্ব পালন করো তো।

বলেই আদি হ্যাচকা টানে আদিবাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আদিবা ভিরু চোখে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট প্রমাণ করছে সে কিছু বলতে চায় কিন্তু আদি তাকে সেই সুযোগ দিল না।

আদি আদিবার চুলে মুখ ডুবাতেই আদিবা কেঁপে উঠল।ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত এই প্রথমবার আদিবা আদির প্রতি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখাল। এতে আদি বেশ অবাকেই হল। সে মুখ তুলে আদিবাকে একবার দেখে নিল। না আদিবার চোখে ভয় কিংবা ঘৃনা নেই যা আছে লজ্জা আর সংকোচ। আদির সাহস যেন মূহুর্তেই বেড়ে গেল সে আলতো করে আদিবার মাঝে হারিয়ে যেতে লাগল আদিবাও তাকে বাঁধা দেয় নি।



বেশ কিছুক্ষন পর আদি ফ্রেশ হতে চলে গেল ফিরে এসে বেশ অবাক হল কারন আদিবা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। আদিবার কান্না আদির ভিতরটা ভেঙে দিল। এই প্রথমবার আদিবার কান্না আদিক্স ছুঁতে পারল আদি ব্যাস্ত গলায় বলল,

-“আমি তো আজ তোকে জোর করিনি তুই চাইলেই আমাকে আটকাতে পারতি…

আদির কন্ঠ শুনে আদিবা তাড়াতাড়ি চোখের পানি আড়ালের চেষ্টায় উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। কিন্তু আদি আবারো তাকে আটকে দিল।

আলতো করে বিছানায় বসিয়ে দিল,
-“ব্যাথা পেয়েছিস..?

আদিবা মুখে কিছু না বললেও না সূচক মাথা নাড়ল।

-“তাহলে রাগ করেছিস?

আদিবা আবারো মাথা নাড়ল।
-“তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আমরা লিগ্যালি ম্যারিড। আমাদের মাঝে এমন কিছু ঘটবে এটাই তো স্বাভাবিক।

এতক্ষন পর আদিবার মুখে কথা ফুটল,
-“আমি তো আপনাকে কিছু বলি নি।

-“কাঁদছিস কেন..?

-“আপনার এতকিছু জেনে কি হবে..? আমি আপনাকে কী করে বলব এটা মন ভাংগার কান্না না। এতদিন ধরে যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দের কান্না।আজ থেকে আপনি আমার শুধুই আমার।
(মনে মনে)

-“আদিবা…

-“আপনি ঘুমান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলে আদিবা শান্তভাবে উঠে চলে গেল। আদি আদিবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভিতরে এক প্রকার ঝড় বয়ে যাচ্ছে তবে কী সে মেয়েটার সাথে অন্যায় করল?

আদিবা ফিরে এসে দেখল আদি এখনো এভাবেই বসে আছে তার চোখ ছলছল করছে।আদিবা সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আদির দিকে এগিয়ে দিল।

-“বলছিলেন সকালে অফিস আছে…ঘুমিয়ে পড়ুন।

আদি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

-“আদিবা তোর কি মন খারাপ হয়েছে…যদি হয়ে থাকে আমি তার জন্য দুঃখিত আমি আর কখনো এমন কিছু করব না। প্লিজ মন খারাপ করে থাকিস না।

-“আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি মন খারাপ করেছি? আমার মন খারাপ হবে কেন? আমার তো মনে হয় আজ রাতের বিড়ালটা আপনি নয় আমি মারতে পেরেছি।

-“মানে..?

-“আদিত্য চৌধুরীর মত ত্যাড়া একজন আজ আমার কাছে নত স্বীকার করেছে তার চোখ ছলছল করছে। তাই আমার মনে হয় এরপর থেকে আপনার বউ আপনার কথায় নয়,বরং আপনি আপনার বউয়ের কথায় চলবেন।

বলেই খিল খিল করে হেসে উঠল আদিবা। নিস্তব্ধ রাতে সেই হাসি অদ্ভুত রকমের মিষ্টি শুনাল। আদি নীরব চোখে তাকিয়ে আছে আদিবার হাসিমুখের দিকে। নিজেকে বড্ড বেশি সুখী মনে হচ্ছে আজ। নিজের উপড় নিজেরেই হিং*সা হচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে জীবনে এত সুখ এসে ভীড় জমাতে পারে কে জানত। আদিকে দ্বিতীয় বারের মত অবাক করে দিয়ে আদিবা তার খুব কাছে এসে বলল,

-“এত কেবল শুরু আরও কতকিছু সহ্য করতে আপনার চিন্তায় করতে পারছেন না।আপনার চোখের পানি নাকের পানি এক করে ছাড়ব আমি।



চলবে..!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here