?#চোখের_তারায়_তুই?
#সূচনা_পর্ব
#ইভা_রহমান
কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে
তুমি আসবে বলে..
রংধনুটা মেঘ ছুঁয়েছে আকাশ নীলে
তুমি আসবে বলে..
নিজের খুলে রাখা শান্ত চুল গুলো খোলা হাওয়ার পালে তুলে দিয়ে গুনগুনিয়ে গান করতে করতে উঠোন পেরিয়ে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো হিয়া। খালি পায়ে মাখলো নরম মাটির মলিন স্বাদ,মুখে এক বালতি হাসি টেনে হাতে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো ঔ সপ্তম আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিতেই সেগুলো বৃষ্টি হয়ে টুপটাপ ঝরে পড়লো সদর দরজা দিয়ে ভেতরের দিকে আসা উজানের গায়ের উপর। উজানের সাদা শার্ট টা মুহুর্তেই কৃষ্ণচূড়ার লালে লাল হয়ে রঙীন হয়ে উঠলো। উজানকে দেখা মাএই হিয়ায় চঞ্চল মনের অস্থিরতা থেমে গিয়ে হিয়া একটা শুকনো ঢোক গিললো। পরিস্থিতি টাকে সামাল দিতে মুখে এক বালতি হাসি টেনেই তার সেই বাচ্চামি কন্ঠে ডাক দিলো”” উজান স্যার””। উজান তার এক ভূ উপরে তুলে হিয়ার দিকে তাকাতেই হিয়া শুরু করলো তার কথার ফুলঝুরি।
-আছে আছে। আমার ট্যালিপ্যাথিতে না জোর আছে,জানেন আমি আপনার ব্যাপারেই ভাবছিলাম আর আপনি এখন আমার সামনে!
-কিসব ইডিয়টের মতো কথা বলছো তুমি হিয়া।
-আপনি আমাকে যতোই ইডিয়ট বলুন,এটা আমি বুঝে গেছি মন থেকে কিছু চাইলে সেটা সত্যি সত্যি হয়,
-কি চেয়েছিলে তুমি?
-কেনো আপনাকে!!
কথা টা মুখ ফুস্কেই বেড়িয়ে আসে হিয়ার,,ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সে। কথা টা হুঁশে আসতেই জিহ্বে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করতে শুরু করলো হিয়া।
-না মানে,,আপনার সাথে দেখা করে একটু কথা বলতে চেয়েছিলাম আরকি।
-এখন আমার হাতে সময় নেই। কোচিং এ ক্লাসের পর দেখা করো। আমি আজ পক্সি দিতে যাচ্ছি। শিশির আছে না বাড়িতে?
-হ্যা মানে ভাইয়া তো আছে। কিন্তু আমার কথা টা তো একটু জরুরি। শুনে যান না প্লিজ। স্যার উজান স্যার। আরে শুনুন না। আরে কোথায় যাচ্ছেন। ধুর। এজন্য বলে মানুষের ভালো করতে নেই। এই সাদা বিলাইয়ের তো নয়ই।
হিয়াকে পাওা না দিয়েই শার্টে লেগে থাকা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি গুলো গা থেকে ঝেড়ে বাড়ির ভেতরে হনহন করে ঢুকে গেলো উজান। উজান স্বভাবতই একটু চাপা স্বভাবের। খুব বেশি কথা বলা তার পছন্দ না। তার উপর হিয়ার এসব মিনিংলেস কথা তো নয়ই। সবাই তার এই চুপ আর গম্ভীর স্বভাবের জন্য তাকে রাগী আর বদমেজাজি মানুষ হিসাবেই বেশি চিনে। তবে সে যে একদমই কম কথা বলে এমনটাও না। সে তার জীবনে তিনটে মানুষের সাথে তার মনের সুখ দুঃখ বিনা দ্বিধায় শেয়ার করে, এক তো তার মা দ্বিতীয়ত্ব তার ছোট চাচার মেয়ে রোদেলা আর তার ছোটবেলার প্রাণের বন্ধু শিশিরের সাথে। শিশিরের সাথে যখন সে থাকে বোঝার উপায় নেই যে সে শান্ত কিংবা একটা গম্ভীর ব্যাক্তিত্বের মানুষ। উপরন্ত শিশিরের সব কথা সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত।
এদিকে শিশিরের একমাত্র বোন তার আদরের রাজকন্যা হিয়া হচ্ছে এক উড়ন্ত কিশোরী। একটা জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকা যে কি জিনিস এই মেয়ে তা জানে না। যেনো পায়ে তার চাকা লাগানো আছে এরকম অবস্থা, দস্যি মেয়ে যাকে বলে এক কথাতে। ছোট বেলায় বাবা মা’কে হারিয়ে নিজের সব বলতে এখন সে বুঝে তার এই শিশির ভাইকে। থাকে দাদুর বাড়িতে যদিও এখানে তাদের চাইতে আধিপত্য বেশি তার ছোট চাচারই। দেওয়াল হতে সিমেন্ট খোসে পড়া,রঙ ওঠা ছোট্ট একটা রুমে জায়গা মেলে হিয়ার৷ এতে অবশ্য হিয়ার মনে কোনো আক্ষেপ নেই৷ সারাদিন খেলাধুলা আর গল্পের বই পড়েই সময় কেটে যায় তার। তবে খেলাধুলা হচ্ছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মেশানো।এটা ছাড়া তার একদমই চলে না। ছোট চাচি যে তাকে আর শিশিরকে তুচ্ছ নজরে দেখে ব্যাপারটা সেরকমো না। মধ্যবিও সংসারে টানাপোড়েনে যেভাবে চলে আরকি। সেভাবেই উনি চেষ্টা করে শিশির আর হিয়াকে ভালো রাখতে। তবে রক্ত তো রক্তোই হয়। কোথায় নিজের সন্তান আর কোথায় অন্যের!!
!
!
পা দুটো একটু উঁচুতে তুলে লাফাতে লাফাতে গেট দিয়ে রাস্তায় আসতে হিয়ার নজরে পড়লো উজানের লাল কালো বাইকটার দিকে। সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কি জানি একটা ভাবতে থাকলো হিয়া,
-এটাআআ এটা কার গাড়ি। ঔ সাদা বিলাই টার না। তারমানে ভাইয়ারা এখন আমায় রেখে একা একা বেরু করতে যাবে। কত্তো খারাপ!
বলেই হিয়া উজানের বাইকের উপর তার স্কাটের পকেটের মধ্যে রাখা বাদামের খোসা গুলো সব এক এক করে ছড়িয়ে দিয়ে এক ছুটে সামনে লতাদের বাড়ির দিকে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো আর মুখ পাকিয়ে পাকিয়ে বলতে থাকলো,
-ঠিক হয়েছে যা করেছি বেশ করেছি,আমার কথা শোনার টাইম নেই,,হু। যেই মেয়ে এই সাদা বিলাই টাকে বিয়ে করবে সে সারাজীবন পস্তাবে। এতো সাইলেন্ট একটা মানুষ থাকে কি করে,,বোরিং!
!
!
-একটা মেয়ে কি করে এতো কথা বলতে পারে শিশির। তুই হিয়ার সাথে থাকিস কিভাবে। আমি হলে সিরিয়াসলি পাগল হয়ে যেতাম।
-শোন। আমিও পাগল হই কিন্তু কখন জানিস যখন আমার এই বোন টা বোবা হ’য়ে যায়!মানে রাগে মুখ ফুলিয়ে আমার সাথে কথা বলা ছেড়ে দেয় তখন। বুঝলি বন্ধু
-খুব ভালোবাসিস না তুই হিয়াকে। তা যখন বিয়ে দিয়ে পাড় করবি তখন থাকবি কি করে নিজের এ-ই বোনটাকে ছাড়া।
-জানি না,শুধু জানি হিয়াকে ভালো রাখতে হবে,
-আর তোর ভালো থাকা?
-হিয়ার ভালো থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ!
-হু,,বের হবি তো নাকি এখন,ওদিকে রাহাত বসে আছে আবার।
-হুম চল,হয়ে গেছে আমার।
শিশিরকে নিয়ে বাইকের সামনে এসে দাঁড়াতেই ভূ কুঁচকে গেলো উজানের। সদ্য পরিষ্কার করে নিয়ে আসা বাইকটার একি অবস্থা। কে করলো এই নোংরা কাজ। বাদামের খোসা গুলো বাইক থেকে পরিষ্কার করতে গিয়েই উজানের স্মরণে আসলো একটু আগের ঘটনা। তখন হিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়েই ও লক্ষ্য করেছিলো হিয়ার স্কার্টের পকেটে বাদামের প্যাকেট ঝুলছিলো। তার মানে এই কাজ টা নিশ্চয়ই হিয়া ব্যাতীত আর কারো নয় কারণ এ-ই ধরণীতে হিয়ার আগমন’ই ঘটেছে উজানকে জালিয়ে পুড়িয়ে ছাই বানানোর জন্য,আর যা এ-ই কটা বছরে বেশ ভালো করেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে উজান ।
উজান রাগান্বিত দৃষ্টিতে শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশির ফিঁক করে হেঁসে দিলো। উজানের চাহনি দেখে শিশিরের ও বুঝতে বাকি থাকলো না কাজ টা তার গুনোধর বোন ছাড়া আর কারোই নয়। বাইক স্টার্ট দিলো উজান। গন্তব্য শহর থেকে একটু দূরে একটা কোম্পানির হেইড অফিসে। সেখানে যাওয়ার কারণ শিশিরের চাচার বিজনেস রিলেটড কিছু কথা বলার জন্য। আর ঔ কোম্পানির হেইড উজানের পরিচিত বিধায় উজানকে নিয়ে যাওয়া।____ওহ বলা হয় নি উজান এবার রংপুর মেডিকেলে এমবিবিএস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে আর শিশির এ্যাকাউন্টিং নিয়ে বিবিএ করছে রোকেয়া ভার্সিটি থেকে। আর এলাকায় উজানদের কিছুফ্রেন্ডদের নিয়ে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে সবার সাথে হিয়াও পড়তে যায়। সেই সূএে উজানকে হিয়া তার উজান স্যার বলেই সম্বোধন করতে বেশি পছন্দ করে। এদিকে শিশিরের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে উজানের কাজিন রোদেলা। উজান যেমন হিয়াকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না ওমনি শিশির আর রোদেলার সম্পর্ক টাও সাপে নেউলে টাইপ। দেখা হলেই শুধু ঝগড়া আর বিবাদ। তবে সেটা ভালোবাসার সৃষ্টি ঝগড়া। আড়ালে যে তার অন্য কিছু লুকানো। এদিকে আমাদের হিয়া পিচ্চি পড়ছে সবে নিউ টেইনে। আর এই নাইনের কৌঠা টপকে টেনে উঠে যেনো তার অদৃশ্য পাখা টা একটু বেশিই উড়ছে আজকাল!
!
!
হেইড অফিসের কাজটা শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেবার পথে থেমে যায় উজান। একটা পুকুর দেখে শিশির কে বলে চল ঔ গাছ তলার নিচে কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর যা-ই। আসলে সিগারেট নামক অসহ্যকর নেশার বস্তুটা খাওয়া হয়নি অনেকক্ষণ যাবৎ। সেটা টানতেই এই বসার আয়োজন।
পুকুরের পাড়ের ধার ঘেসে বেড়ে ওঠা আম গাছ টার নিচে বসে আছে দুই বন্ধু। কিছুকিছু ছেলেবাচ্চা পুকুরে নেমে ইচ্ছে মতো সাঁতার কাটছে কেউ বা বর্শি দিয়ে তুলছে মাছ। তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিশির। কি জানি কি সে ভাবছে,,হঠাৎই হেঁসে দিয়ে শিশির বলে উঠলো,
-তুই আমার বোনকে সহ্য করতে পারিস না কেনো বল তো?
স্বাভাবিক উওর উজানের,
-আমি না, তোর বোন আমাকে সহ্য করতে পারে না,আমি যে কোচিং এ ওর টিচার হই, টিচার হিসাবে আমাকে মিনিমাম সেই রেসপেক্ট টুকু সে করে নি আজ অবধি।
-মোটেই বাজে কথা বলবি না। আমার বোন সবাইকে রেসপেক্ট দিতে জানে। তুই সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকিস বলে সবার মতো সেও তোকে ভয় পায় এই যা।
-ভায় পায় তোর বোন,তাও আবার আমাকে!!!!কাজ দিয়েছে তাহলে,,আচ্ছা আমার কথা বাদ দে তুই রোদকে সহ্য করতে পারিস না কেনো বল তো?
-দেখ ভাই আমাদের নাম দেখেই গেইচ করে নে আমরা কতো বিপরীত আমি ভোরের শান্ত শিশির আর তোর বোন কড়া রোদের ঝলকানি। এতো তেজ পুড়ো জ্বলে যাই আমি!
শিশিরের কথা শুনে মুচকি হাসলো উজান,,
-হুম বুঝলাম,তা এভাবে আর কতোদিন চাচার ব্যবসা দেখবি,,,,,তুই হয়তো মানবি না তবে তোর ছোট চাচিকে কিন্তু আমার মোটেই সুবিধের মনে হয় না শিশির,,
-ধুর পাগল। চাচি অনেক ভালো একটা মানুষ। মা বাবাকে হারানোর পর তো আমরা দুই ভাই বোন ওনার কাছেই মানুষ বল,
-সেটা তাদের দায়িত্ব। আর একটা কথা ও বাড়িটা তোদের নিজেদেরও তাই….আর উনি তো ওনার মেয়েকে নর্থ সাউথের মতো প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছ তোর মনে হয় ওনাদের টাকা নেই..!!
-দেখ চাচির বাবার বাড়ির অবস্থা বিশাল। তাই উনি ওখান থেকে এনে ওনার মেয়েকে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতেই পারে। কিন্তু চাচ্চু তো ওতো উচ্চবিও না। ভালোবেসে বিয়ে করে চাচির আমাদের মতো পরিবারে আসা। এখন উনি ওনার টাকা দিয়ে যা খুশি করুক। হিয়ার দায়িত্ব টা তো আমারই বল। ওনাদের না,,,,,হিয়া বড় হলে ওকে একটা মন মতো ছেলের হাতে তুলে দিয়েই আমি একটা শান্তির ঘুম দেবো,,কতো চিন্তা হয় ওর জন্য জানিস,,রাতে ঘুম আসে না ঠিক মতো
-হুম,,আমারো চিন্তা হয় তোর বোনকে নিয়ে! (অস্ফুটে)
-মানে!
-তুই বললি না মন মতো ছেলে চাস,,তোর ঔ ডানাকাটা বোনের জন্য কোন যে সুপাএ জুটবে উপর মাবূদ ই ভালো জানেন,,
-এভাবে বলিস না দোস্ত। মেয়েটা একটু চঞ্চল বলে তুই এরকম বলবি।
-তো কি বলতাম। সেদিনো দেখলাম মাঠের মধ্যে সবার সাথে কেমন দলবেঁধে কিসব খেলছে। তোর বোনের খেলার বয়স আছে এখন। বড় হচ্ছে শরীরে গ্রোথ হচ্ছে। দেখতেও তো জিনিস টা বাজে দেখায়। তুই ভাই হয়ে একটু শাসন করতে পারিস না। খালি পায়ে সারাক্ষণ।
-তুই হিয়ার দিকে ঔসব নজরে দেখিস!?
-(রেগে গিয়ে)একদম বাজে কথা বলবি না শিশির। জিনিস টা চোখে লাগে প্রচুর।
-সরি সরি। আমি তো মজা করলাম। আমি তো জানি তুই কেমন ছেলে,,,,,,আর আমিই বা কি করি বল তো। থাকিই বা কতোক্ষণ বাড়িতে। সবসময় তো চাচার সাথে দোকানে থাকতে হয়,,
-তাই বলে তুই শাসন করবি না হিয়াকে।
-সে আমার শাসন শুনলে তো। ওর ঔ বান্ধুবী গুলো ডাকতে আসে ওমনি কোন ফাঁকে যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় আমি টেরো পাই না ভাব। এমন দস্যি একটা মেয়ে।
-আমার বোন হলে পায়ে শিকল বাঁধিয়ে রাখতাম,রোদের কাছেও তো শুনলাম এখন নাকি হিয়া পড়তে আসে। রোদকে দেখে কিছু শিখতে পারে না। রোদেলা কতো গোছানো আর পরিপাটি জানিস।
-থাক ভাই,আমার বোন যেমন আছে ওমনি ভালো। তোর বোনের মতো গোছানো হবার চাইতে ঔ ছন্নছাড়া হয়েই থাক। উফফ তোর বোন তো না একটা পুরো ধানিলংকা।
রেগে উঠলো উজান। শিশির হেঁসে দিলো। সিগারেটের শেষ অংশটুকু মনের সুখে টেনে নিয়ে দু’জনে উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎই শিশিরের মাথার ভূত টা নড়েচড়ে বসতেই সে বায়না ধরলো তারা এখন এই পুকুরটা থেকে একটা ডুব দিয়ে আসবে। তার প্রচুর গরম লাগছে,আরএই গরম তাড়ানোর নিনজা টেকনিক হচ্ছে এ-ই পুকুর। উজান না না করলেও শিশির ঠিক উজানকে রাজি করিয়ে নেয়। শার্ট প্যান্ট খুলে কয়েকটা ডুব দিয়ে আসবো তারপর কাপড়ের সেম্পল গুলো থেকে একটা নিয়ে মাথা টাথা ভালো করে মুছে জামাকাপড় গুলো পড়ে ফেলবো,,এই তো ব্যাছ!!
-তোর সাথে থাকলে একদিন নির্ঘাত লোকে আমায় পেটাবে শিশির,,চেনা পরিচিত কেউ দেখলে কি ভাববে বল তো।
-ধুর এখানে আমাদের দেখার মতো কেউ নেই ভাই,,আর ভাব তো ছোট বেলায় মাহতিমদের পাড়ার পুকুরটায় সারাদিন মাছ ধরতাম আর গরম লাগলেই কিরকম সাঁতার কাটতাম,
-আর চাচ্চুর মারো খেতাম সেই রকম,
-তোদের এ-ই বড়লোক বাড়ির ছেলেমেয়েদের তো এই এক সমস্যা,জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করা টা তোদের কপালে জুটে না,,,,বাদ দে,নে আমি রেডি,,
-হাফ প্যান্ট পড়ে কেমন করে দাঁড়িয়ে আছি দেখ,,তুই ছাড়া এই কাজ আমাকে কেউ করতে বললে জীবনেও রাজি হতাম না আমি
-জানি জানি,আমাকে না তুই করতেই পারবি না,,নে হাত ধর,,,রেডি….ওয়ান,টু,থ্রীইইইই
থ্রী গোনার সাথে সাথেই দুই বন্ধু মিলে লাফিয়ে ডুব দিলো পুকুরটাতে,,মনে পড়ে গেলো সেই ছোটবেলার কিছু ছেলেমানুষী কিছু সুন্দর মুহুর্তের চিএ!
!
!
!
রাত তখন আটটার কাছাকাছি। চায়ের কাপে টোস্টের বাকি অংশটুকু ভিজিয়ে খাচ্ছিলো হিয়া। সামনে বই খাতা সব খুলে রাখা। যদিও এতে মনোযোগ তার নেই বললেই চলে। হঠাৎই তার খাওয়ার মাঝে শিশির বলে উঠলো,
-তুই আর কাল থেকে মাঠে খেলতে যাবি না হিয়া,,
মুখ থেকে টোষ্ট টা টুক করে বেড়িয়ে আসলো হিয়ার৷ টপাটপ মুখ মুছে রাগি চোখে বলে উঠলো,
-কেনো কেনো কেনো যাবো না,,হোয়াই?
-কারণ আমি বলছি তাই।
-না না তুই তো না করার মতো ছেলে না,,নিশ্চয় কেউ তোর কান ভরাইছে। এই এই ঔ সাদা বিলাই টা আবার তোকে কিছু বলে নি তো,,সেদিন মাঠে খেলার সময় কিরকম তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
-আমাকে কেউ কিচ্ছু বলেনি পাগলি। তুই বড় হচ্ছিস না একটু বুঝ।
-বড় হয়ে গিয়েছি দেখে কি আর খেলবো না আজব।
-বাড়িতে খেল,উঠোন আছে ওখানে খেল,মাঠে কি তোর। কতো ছেলেপেলে রাস্তা দিয়ে যায়।
-কেউ যায় না। আমরা যখন খেলি তখন মাঠ ফাঁকাই থাকে,হু
-সে যাই হোক। আর তোর না রোদেলার কাছে ম্যাথ পড়ার কথা। গিয়েছিলি পড়তে?
কথাটা শুনেই হিয়া শিশিরের সামনে এসে বিস্ময়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠে। হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে থাকে রোদেলা দের বাড়ির রাজকীয় বিবিরণের প্রতিচ্ছবি;
-হু ভাইয়া গিয়েছিলাম তো। জানিস ভাইয়া রোদেলা আপুদের বাড়িটা কি বিশাল! আমরা তো আপুদের রান্নাঘরের সাথে লাগানো ব্যালকুনিতে পড়ি কিন্তু আজ আগে আগে যাওয়াতে রোদ আপু তার পুরো বাড়ি আমাদের ঘুরে দেখালো। মনে হচ্ছিলো কি জানিস একটা রাজপ্রাসাদ! আমি তো আজকে ঔ সাদা বিলাইয়ের রুমেও গিয়েছিলাম। তোর বন্ধুর রুম টা কি বিশাল আর সুন্দর উফফ,,কি বড় এসি। মেঝেতে টাইলস দেওয়া এমনকি ঘরের দেওয়ালেও টাইলস জানিস.
-হুম উজানরা অনেক বড়লোক জানি আমি। আগে ছোটতে আবীর থাকাকালীন প্রায় রোজই যেতাম ওদের বাসায়।
-হুম। আমি তো পুরো টাস্কি খেয়ে উল্টে পড়ে যাচ্ছিলাম,এতো সুন্দর বাড়ি আমি সিনেমা মুভিতেও দেখি নি। উফফ সিঁড়ির কাছের ঝারবাতি টাও কি জোস..!!
-তোর খুব ইচ্ছে হয় না রে ওরকম একটা সুন্দর বাড়িতে থাকতে,আমি খুব খারাপ একটা ভাই তোকে কিছুই ঠিক ভাবে দিতে পারি না।
শিশিরের কথায় হিয়া এবার কেঁদে দিয়ে ঢং করে বলে উঠে;
-হুম খারাপ ই তো। খুব খুব খুব খারাপ তুই,,তবে কি বল তো ঔ সুন্দর বাড়ি দিতে না পারার জন্য না। যখন তুই আমার খেলাধুলা বন্ধ করে দিস,আমাকে লতা ঝিনুক আর পারুলদের বাড়িতে যেতে না দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দিস,আমার গল্পের বই গুলো নিয়ে এসে তোর আলমারি তে লক করে রেখে দিস তখন মনে হয় তুই এই পৃথিবীর সব চাইতে খারাপ একটা ভাই খুব খুব খুব বাজে মানুষ,
হিয়ার এ-ই ন্যাকামো দেখে শিশির হেঁসে উঠে তার বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-পাগলি!!যা পড়তে বস,,এতো নাটক করিস, নাট্যকলাতে ভর্তি করিয়ে দেবো তোকে,বড় হ শুধু
-হে হে,,আমি ভর্তি হলে তো,,
শিশিরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হিয়া চায়ের কাপ টা আবার তুলে পড়তে বসে যায়।হঠাৎই পড়ার মাঝে শিশির তাচ্ছিল্যের সুরে প্রশ্ন তুলে।
-রোদেলারা খুব বড়লোক তাই না রে হিয়া?
চা টা পুরো গিলে নিয়েই হিয়া বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
-তা নয় তো কি,জানিস আপুর ঘরে যেই আলমারি টা ওটার দামই নাকি ৬০,০০০।আপু তো বলতে চায় না। কি যেনো কথা প্রসঙ্গে কথা টা উঠলো,,আমি তো পুরো থ,,আচ্ছা ভাইয়া সত্যি কি ৬০,০০০টাকার ফার্ণিচার দোকানে পাওয়া যায়!!!!
-যায় এক লাখ টাকারো আলমারি পাওয়া যায়। বাদ দে। পড় মনোযোগ দিয়ে,,
হিয়াকে পড়তে বসিয়ে দিয়ে শিশির ওর জানালার কাছে এসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। রোদেলার জন্য তার মনে একটা গভীর ভালোবাসা আছে,যতোই সে রোদেলার সাথে ঝগড়া করুক,রোদকে দূরে সরিয়ে রাখুক, রোদেলার প্রতি তার একটা অন্যরকম না বলা ভালা লাগা কাজ করে প্রতি মুহুর্তে। রোদেলার বাবা যে আর্মির একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা তাদের যে এতো অঢেল সম্পতি সেটা অবশ্য রোদকে দেখে বোঝা অসম্ভব। নিজের সাজানো গুছানো ছোট্ট পরিপাটি জীবন নিয়েই সে খুশি। কিন্তু শিশির জানে রোদেলার মতো উচ্চবিও মেয়ে তার জন্য নিষিদ্ধ পুরোপুরি নিষিদ্ধ..!!
শিশির তো নিজের মনকে সামলে নিলো কিন্তু হিয়া! হিয়ার চঞ্চল মন কি পারবে উজান স্যারের শাষণে নিজেকে বিলীণ করে দিয়ে,তাকে মনের সবটা দিয়ে ভালো না বেসে থাকতে। হিয়া কি কখনো বুঝবে উচ্চবিও পরিবার থেকে আসা উজান স্যারের দিকে তাকানো টাও তার জন্য নিষিদ্ধ..!!
প্রাচুর্যের দেওয়াল ভেঙে কি কখনো এ-ই চারটে হৃদয় এক হতে পারবে। পারবে কি সব সম্পর্ককে পেছনে ফেলে নিজেদের ভালোবাসাটাকে টিকিয়ে রাখতে।
চলবে….