?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_০৮
#ইভা_রহমান
আজ টিচার্স ডে সাথে সবার প্রাণ প্রিয়”প্রতিভা” কোচিং এর পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা বড়সড় রকমের ফাংশন এর আয়োজন করা হয়েছে কোচিং এ,সেই সুবাদে বর্নিল সাজে সেজেছে ক্লাস রুম থেকে শুরু করে কোচিং এ ক্লাস করাতে আসা প্রত্যেক স্যার ম্যাডাম,উজানো আজ ব্যতিক্রম যায় নি,হলুদ পাঞ্জাবি সাদা চুড়িদার এ নিজেকে সাজিয়ে সেও কোচিং এ এসেছে,অফিস রুমে সব টিচার্স দের সাথে কথোপকথন চলাকালীন হিয়া,লতা আর মোহিনী সহ কথা বলতে বলতে উপরে উঠছিলো,তাদের তিনজনকে দেখতে পেয়ে সায়রা ম্যাম তিনজনকে ভেতরে ডাক দিলেন,মোহিনী আর লতা সহ ভেতরে আসলো হিয়া,তাদের তিনজনের পড়নে আজ শাড়ি,প্লান করেই তারা তিন বান্ধবী মিলে আজ শাড়ি পড়েছে,তার উপর ঠিক করেছে ফাংশন এ নাকি তারা রবীন্দ্র সংগীত গাইবে,তাই হারমোনিয়ামের সুরের সাথে শাড়ি নামক পোষাক টা-ই পারফেক্ট বলে মনে হয়েছে তাদের!
– কি রে রুপবতী গুলো,শাড়ি পড়েছিস আজ,শুনলাম গান গাইবি নাকি?
লতা মুচকি হেঁসে উওর দিলো,
-জ্বী ম্যাম হারমোনিয়াম সাথে আনছি তো,রনি স্যার নিয়ে গেলো উপরে দেখেন নি।
– আচ্ছা বেশ,তা কি গান গাইবি শুনি?
ম্যামের সাথে কথা বলতে থাকলো তিনজন,উজান এতোক্ষণ হিয়ার অস্তিত্ব বুঝেও বাকি সব স্যার ম্যামের সামনে হিয়ার দিকে তাকাতে সাহস পাইনি,কিন্তু এবার কলমের ঝুড়ি থেকে কলম তুলতে গিয়ে হিয়ার দিকে তাকাতে চোখ আটকে গেলো উজানের,কালো শাড়ি লাল পাড়,খোপা করা চুল সাথে এ্যান্টিকের এক জোড়া বড় ঝুমকো,ঠোঁটে হালকা রঙ,কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ,এই তো হিয়ার এই টুকু সাজই উজানের মনে উথাল পাথাল ঢেউ তুলতে সক্ষম। শাড়িতে হিয়াকে আজ একটু বেশি বড় লাগছে জেনো,উজান হিয়ার মাথা থেকে পা অবধি পুরোটা পরখ করলো,এমনকি হিয়ার নিষিদ্ধ জায়গাতে চোখ বুলাতেও একটুকো কার্পণ্য করলো না আজ সে। কিছু মুহুর্ত পর চোখ নামিয়ে নিয়ে হালকা হাসলো উজান,কবে তার পিচ্চি টা এতো বড় হ’য়ে গেলো সে বুঝতেও পারলো না এটা কোনো কথা,,হুম এজন্যেই বুঝি এতো এতো প্রেমপএ এসে জমা হচ্ছে তার হিয়া পিচ্চির ডাকবাক্স জুড়ে…!!
ম্যামের থেকে বিদায় নিয়ে হিয়া লতা আর মোহিনী সহ যেখানে স্টেজ বানানো হয়েছে সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই হিয়ার চোখ পড়লো ফারহানের উপর,আজ কদিন থেকে ছেলে টা কেনো জানি হিয়াকে যে-ই পাচ্ছে সেই এড়িয়ে যাচ্ছে,কি মুশকিল,হিয়া এবার হাতেনাতে ফারহানকে ধরতেই আবারো ফারহান পালাতে চেষ্টা করলো কিন্তু এবার ঠিক হিয়া তাকে আঁটকে ফেললো,
– কি হয়েছে ফারহান তোর,কয়েকদিন থেকে দেখছি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস, ব্যাপার কি?
ফারহান এদিক ওদিক ভালো করে তাকিয়ে নিলো,আশেপাশে উজান স্যার নেই তো!
– হিয়া আপু,দেখো আমি তোমাকে ঔ চিঠিতে যা বলেছি সেটা ভুলবশত হ’য়ে গেছে আমি সত্যি করে বলছি আর কখনো এরকম করবো না,
থ হয়ে গেলো হিয়া,কি বলছে কি ফারহান ওকে এসব!
– এএএ তুই কি বলছিস এসব, কিসের চিঠি,,নেশা টেশা গিলছিস নাকি কিছু,,আর একটা কথা বল আমি কোন জন্মে তোর আপু হলাম ভাই?
– এই জন্মে, সেদিন, ৫তারিখ সোমবার বিকাল পাঁচ টায় আমি তোকে আমার বোন হিসাবে গ্রহন করছি,তুই ও আর আমার উপর রাগ করে থাকিস না,আজ থেকে আমরা ভাই বোন ওক্কে
– ফারহান(ধমকে)। কিসের ভাই,কিসের বোন,এ তুই সত্যি করে বল তো ইদানীং মদ টদ কিছুর বদ অভ্যাস হয়েছে না তোর নিশ্চয়ই
– এ না না তা কেনো হতে যাবে…থাক আপু,এখন যা-ই অনেক কাজ বাকি,তোর জিজু আ হা মানে তোর বর আমার জিজু আমাকে অনেক কাজ দিয়ে গেছে আমি সেগুলো করি কেমন,,টাটা মিষ্টি বোন আমার,
– ফারহান শোন,এই ছেলে কোথায় যাচ্ছিস,ফারহান,ফা___ধুর
এতোক্ষণ ফারহান আর হিয়ার কান্ড দেখছিলো লতা আর মোহিনী,ফারহান চলে যেতেই তারা হিয়ার দিকে ঝেপে আসলো,
-কেস টা কি হলো বল তো,আমরা তো জানতাম ফারহান মেবি তোকে লাইক করে আজ এরকম হুটহাট বোন বানিয়ে দিলো কেনো,
– ধুর যা তো,আমি জানলে কি ওরে জিজ্ঞেস করতাম?যাগ ভালো হয়েছে ছ্যাছড়ার মতো লেগে থাকতো সবসময়,নেহাৎ হুমায়ুন স্যারের দুটো বই দিতে চেয়েছিলো তাই ঔ ব্যাটারে খুঁজছিলাম,যাগ আমি রোদ আপুকে বলে না হয় কিনে নেবো ওগুলো,কিন্তু ফারহান কি যেনো না একটা চিঠির কথা বললো বুঝলি! বুঝলাম না।
লতা হতাশ সুরে বললো,
– হুম,ভেবেছিলাম ফারহান আমাদের ফাইভস্টারে নিয়ে গিয়ে চাইনিজ খাওয়াবে আর তোর সাথে চুটিয়ে প্রেম করবে আর এখন কি না দেখো,
এদিকো মোহিনী সুর টেনে বললো,
– এখন তো ঔ চলবে” ফুলোকা তারোকা সাবকা কেহেনা হে এ্যাক হাজারো মে মেরি বেহেনা হে,
ব’লেই লতার সাথে মোহিনী খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো,সাথে হেঁসে দিলো হিয়া নিজেও,কিছুক্ষণ বাদে শুরু হলো অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজন,সব স্টুডেন্ট কে মিষ্টি মুখ করে এবার কিছু স্যার ম্যাডাম কথা বললো,তারপর কিছু ছাএ ছাএীকে মঞ্চে এক এক করে ডেকে এই কোচিং সম্পর্কে,টিচার্স ডে তে তাদের প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে কিছু বলতে,তাদের হাতে খড়ি সম্পর্কে জানাতে,ইত্যাদি সম্পর্কে বলতে ডাকা হলো। লতা মোহিনী সহ বাকি যারা ইচ্ছুক তারা এসে তাদের বক্তব্য টুকু বলতেই লতা এবার জোড় করে হিয়াকে মঞ্চে উঠিয়ে দিলো,হিয়া না না করলেও স্যারদের অনুরোধে তাকে মাইকের সামনে আসতে হলো,মাইকের সামনে এসেই হিয়া হেঁসে ফেললো,নিজেকে শান্ত করে হিয়া বলতে শুরু করলো এবার।
?
আমি কি বলবো…(এটুকু বলতে হিয়া হো হো করে হেঁসে দিলো,সাথে হেসে দিলো উপস্থিত সবাই…এদিকে সীটে বসে থাকা উজান শুধু আস্তে করে হিয়ার উদ্দেশ্যে “পাগলি” শব্দ টুকু ব’লেই মৃদু হাসলো)…অনেক কষ্টে হিয়া নিজেকে শান্ত করলো,একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো হিয়া)… সবাই তো সবার হাতে খড়ির কথা বলছে,কেউ বলছে তার মা তাকে ক লিখতে শিখিয়ে কেউ বা বলছে তার বাবা,আমি কি দিয়ে কি বলবো (আবার হালকা হেঁসে দিলো হিয়া),আমার তো মা বাবা কাউকে আমি সেভাবে কখনো পাইনি,আমার জন্মের ক মাস আগে বাবা ইন্তেকাল করেছেন আর মা আমাকে জন্ম দিতে,সেই হিসাবে আমার হাতে খড়ি তো আমি তাদের কারো কাছে শিখতে পারি নি…
(হিয়া শুরু করলো তার শিশির ভাইকে দিয়ে,তার জীবনে শিশিরের অবদান সাথে তার রোদ আপুকেও সেই তালিকা থেকে বাদ দিলো না হিয়া,উজান মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো হিয়ার কথা,হয়তো সেই নামের তালিকায় নিজের নাম টাও শুনতে বড্ড ইচ্ছে করছিলো তার..! রনি স্যার এসে ইশারায় গেটের মাথা থেকে উজানকে ডাকতেই উজান নিজের সীট ছেড়ে উঠতে যাবে ওমনি হিয়ার কিছু কথা কানে আসতেই থমকে গেলো সে)
“উজান স্যার এখন আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে আসবে( বলতেই এবার আরো জোরে করে হো হো করে হেঁসে দিলো হিয়া,সাথে আবার হাসলো উপস্থিত সবাই) আমার জীবনে উজান স্যার অনেকটা বড় জায়গা জুড়ে আছে,শিশির ভাইয়া আমাকে যেমন বাবা-মা’র অভাব টা বুঝতে দেয়নি তেমনি উজান স্যারো আমার অভিভাবক হ’য়ে আমার জীবন টাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে অনেকটা সহ্য করেছেন(মৃদু হাসলো হিয়া,উজান নিজের সীটে বসে গিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে রইলো হিয়ার দিকে) আমি যখন সিক্স কি সেভেনে পড়ি তখন উজান স্যার আমাকে মাঝেমধ্যে পড়াতে আসতো,একবার পড়াতে গিয়ে আমার হাতে ঠাস ঠাস স্টিলের স্কেল দিয়ে কি যে মা’র দিয়েছিলো ইসস,তারপর থেকে আমি ওনাকে একদম সহ্য করতে পারতাম না,ওনাকে দেখলেই আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতাম,মাঝেমধ্যে তো পড়তে বসে এমন কান্না করে দিতাম আমার চিৎকারে বাড়ির সবাই হু,একবার রাগের বশে তো আমি ওনার গায়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়ে(আবার হো হো করে হেঁসে দিলো হিয়া,সবাই আবার হেঁসে দিলো,তারা কখনো একবার হিয়াকে দেখছে তো কখনো উজানকে,এর ফলে একটু একটু অপ্রস্তুত হ’য়ে পড়তে শুরু করলো উজান ) আরো অনেক কিছু করেছি আমি ওনার সাথে একবার তো মেঝেতে তেল ছড়িয়ে দিয়ে ওনাকে… মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষার আগে স্যার নিজের প্রফের পরীক্ষা রেখে ভাইয়ার অনুরোধে সারারাত আমাকে কেমিস্ট্রির বিক্রিয়া বুঝিয়ে গেছেন,রিক্সা করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেতে যেতে আমাকে হাতে শীট ধরিয়ে পড়া পড়িয়েছেন,( সবাই উজানের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো) এ-ই মানুষ টা আমাকে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন,পড়াশোনার বাহিরে গিয়ে এই জগৎ টা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন,নীতি নৈতিকতা ভূল খারাপের পথ টা চিনতে শিখিয়েছেন,তাই আজ টিচার্স ডে তে আমার জীবনে’র ভাইয়া আর রোদ আপুর পাশাপাশি আমি আমার উজান স্যার,আমার গুরুজীকেও অনেক অনেক অনেকটা ধন্যবাদ দিতে চাই অনেকটা। ধন্যবাদ উজান স্যার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এ-ই হিয়াকে এতো টা টলারেট করার জন্য..
?
এই বলে নিজের বক্তব্য টুকু শেষ করলো হিয়া। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো,পাশ থেকে মিলন স্যার উজানের পিঠ চাপড়ে দিলো,উজান বোধ হয় আর একটু হলে কেঁদে ফেলতো এমন অবস্থা,হিয়ার চোখে মুখে পরিতৃপ্ত টার হাসি,সাথে সেই পরিতৃপ্তির রেশ উজানের চোখে মুখে হিয়াকে ঘিরে!
!
!
লাল রঙের ম্যামোর বই হাতে এক কাস্টমারের বিল করতে ব্যস্ত শিশির,ঠিক সেই মুহুর্তে দোকানে আসলো চাচ্চু সহ রোদের বাবা,রোদের বাবা-র বয়সী এক লোক আর মাঝবয়েসী এক মহিলা,তাদের এ-ই দোকানে আসার কারণ রোদের বাবা-র এই বন্ধু তার নিজ এক ফার্মের জন্য দরজা জানালার থাই তৈরিতে কিছু অর্ডার করবে,আর শিশিরের চাচ্চুর দোকান ছোট হলেও একটা সুনাম আছে দোকানের,তাই অনেক ছোট বড় কাস্টমারের আসা যাওয়া হয় এই দোকানে,রোদের বাবা’কে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো শিশির,হঠাৎ উনি এখানে,তাদের তিনজনকে ভেতরে বসতে দিয়ে চাচ্চু এসে বসলো,চা কফি অর্ডার করতে বললো কিন্তু রোদের বাবা মানা করে দিলো,রোদের আব্বু চাচ্চুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– দেখো মিরাজ,তুমি তো জানো আমি যে সে দোকান থেকে কিছু অর্ডার করার মতো মানুষ না,নেহাৎ চাপে পড়ে আমার বন্ধুকে তোমার এখানে নিয়ে আসলাম,আর তাছাড়া তোমার দোকান ছোট হলেও একটা সুনাম আছে আমি জানি,তাই,,আমার কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি চাই,পারবে দিতে?
রোদের বাবা-র কথায় চাচ্চুর হালকা খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই তার,প্রায় তিন লাখের এ-ই প্রজেক্ট,ঠিক সময় করে দিতে পারলে ওনার লাভ হবে এিশ হাজার,আর শিশিরদের মতো মধ্যবিও ফ্যামিলিতে এই ত্রিশ হাজার’ই ত্রিশ কোটির সমান,চাচ্চু হেঁসে দিয়ে বললো সমস্যা নেই স্যার আপনি আপনার প্রয়োজনে আমাদের দোকানে এসেছেন এটাই অনেক আমার জন্য,চিন্তা করবেন না ঠিক সময় সব ডেলিভারি পেয়ে যাবেন…
অনেকক্ষণ কথা হলো সবার,কথার মাঝে অনেক কথা বলতে গিয়ে কথা উঠলো সবার বাচ্চাকাচ্চা সম্বন্ধে,যেখানে রোদের সম্পর্কে কথা উঠতেই বুকে যেনো এক একটা কাঁচের টুকরো বিধতে থাকলো শিশিরের!
– ভাইয়ের আর কি,এক মেয়ে এক ছেলে,ছেলে তো শুনলাম গ্রাজুয়েশন শেষ করতে কানাডা যাচ্ছে,আর আমাদের রোদ মা তো মাশাআল্লাহ,, যেমন গুনবতী ওমনি রুপবতী,ওরকম পুতুলের মতো মেয়ের জন্য তো ছেলেরা লাইন লাগিয়ে বসে আছে শুনেছি,আপনার ভাস্তে কি যেনো নাম,উজান, সেও তো শুনেছি ডক্টরি পড়ছে।
রোদের বাবা মুচকি হেঁসে উওর করলো,
– হুম,,চেয়েছিলাম তো মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে নর্থ সাউথ এ ভর্তি করিয়ে দেই,কিন্তু মেয়েটা যে আমার এ-ই ভার্সিটিতে কি পেয়েছে কে জানে, সে নাকি পাবলিকে পড়বে এটাই তার শেষ কথা,এখন একটা মাএ ছোট মেয়ে আমার, ওর জেদের কাছে আর কি বা করি বলুন,
– ভাই যদি রাগ না করেন তাহলে একটা প্রস্তাব দিয়ে রাখি,আমার ছোট ভাই,এ বছরই নেভিতে জয়েন করেছে যদি রোদের সাথে একবার ভেবে দেখতেন বিষয়টা!
রোদের আব্বু হাসলো শুধু কিছু বললো না,এদিকে এদের তিনজনের কথা শুনে শিশিরের এটাই মনে হতে শুরু করলো যেনো এরা তিনজন বুঝি তাকে এ-ই কথা গুলো বলার জন্যেই আজ এ-ই দোকানে এসেছে,তাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলছে তুমি রোদের জন্য একদম বেমানান শিশির একদম বেমানান,চোখ টল টল করছে শিশিরের,তাদের প্রত্যেকটা কথা তার বুকে তারকাটার মতো বিঁধছিলো যেনো,নিজের কষ্ট টাকে কোনো মতে দমিয়ে শিশির তার চাচ্চুর হাতে তাদের ম্যামো রিসিট টা ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসলো এক প্রকার!
!
!
দুপুরের লাঞ্চ করতে আজো পলাশের সাথে বসে আছে শিশির,সকালের সেই ঘটনার পর থেকে নিজেকে সেই মুহুর্তে অনেকটা কঠিন এক শক্ত মোড়কে মুড়ে নিয়েছে সে,পলাশকে খেতে দিয়ে চুপচাপ পলাশের মুখ পড়ছে শিশির,সত্যিমিথ্যার বেড়াজাল থেকে সত্য খুঁজতে চাইছে যেনো সে!
– চাল কতো করে কেজি কিনলি পলাশ? তোদের এ-ই চাল টার দেখি স্বাদ অনেক,ভাবছি এখন থেকে এই চাল টা বাড়িতে আনবো,
বোকা বোনে গেলো পলাশ,এ-ই চাল তো সে জন্মেও কিনে না-ই,এইসব তো রোদ তাকে,ধুর এখন কি উওর দেওয়া যায়,
– মনে না-ই ভাই,ঔ হবে ৪০/৫০
– ৪০/৫০ না,,
– হ্যা মানে,,
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো শিশির,এখনো পলাশ তাকে মিথ্যা বলছে,,
– কি হলো ভাই,খাবেন না?
– না আজকে এ-ই সব ভাত তুই খাবি,
– কেন ভাইজান,খাবার টা আজ মজা হয়নি?
– কেনো মজা হবে না,তোর রোদ আপু রোজ যেমন রান্না করে আজো সেরকমই হয়েছে,খা তুই,
চোখ বড় বড় করে তাকালো পলাশ,তার মানে কি শিশির বুঝে গেছে যে এ-ই সব ভাত তরকারি তার মা না রোদ আপায় দিয়া পাঠায়,শিশিরের চোখের দিকে তাকাতে গা শিউরে উঠলো পলাশের,এরপর কোন ঝড় আসবে তার উপর, উপর মাবূদ ই ভালো বলতে পারবেন..!!
!
!
পলাশ সহ রোদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শিশির। দাঁত মুখ শক্ত তার,চোয়াল ভারী,সাথে রাগান্বিত চোখের লাল আভা..এদিকে রোদের চোখ দিয়ে পড়ছে টপটপ লোনাজল,রোদ নিশ্চুপ,আজকে একটা প্রতিবাদ করারো সুযোগ দিচ্ছে না তাকে শিশির এমন!
– কি বোঝাতে চাও,আমি খেতে পারি না,দু বেলা নিজের ভাত জোটাতে কষ্ট হয় আমার,কোনটা রোদ?
– তুমি আমাকে অহেতুক ভূল বুঝছো শিশির,
– এটা অহেতুক রোদ! তা আমাকে রিজন দেও কেনো তুমি এ-ই কাজ টা করতা,বলো কেনো করতা,কোনো উওর আছে তোমার?
– আমি,,আমি তো শুধু চেয়েছিলাম যে তোমাকে আমার হাতের রান্না করা খাবার টা..
– প্লিজ রোদ,কে তুমি আর আমি বা কে তোমার? কিসের অধিকারে এসব করো তুমি,আমি তোমাকে বলেছি না আমাদের মাঝে কখনো কিছু সম্ভব না। তারপরো কিসের এতো জীদ করো তুমি।
– তুমি আমাকে ভালোবাসো না শিশির!
– না বাসি না,শান্তি।
– শিশির (অস্ফুটে)
রোদ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো,শিশির পলাশকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আর পলাশ,কালকে থেকে তুই আমার সাথে কাজে আসবি না,কথাটা যেনো মাথায় থাকে তোর,
কথাটা গিয়ে একদম বুকে বিধলো পলাশের,এটার’ই ভয় পাচ্ছিলো যেনো বাচ্চা টা,পলাশ এক ছুটে দৌড়ে এসে শিশিরের পা জড়িয়ে ধরলো,কান্নামাখা ভারী কন্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করলো” ভাই,আমার সাথে এমনটা করবেন না ভাই,আপনি কাজ থেকে তাড়ায় দিলে আমি কোনহানে গিয়ে কাজ খুজতাম,আপনার পায়ে পড়ি ভাই আমি আর রোদ আপার কথা শুনুম না,সবসময় আপনার লগে লগে থাকুম,এবারের মতো মাফ করেন ভাই”
শিশিরের মন গলাতে ব্যর্থ হলো ছোট্ট পলাশ।এদিকে রোদ নিজের কান্না টা কোনোমতে থামিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে এসে শিশিরের বাহু ধরতেই তাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো শিশির,রোদ দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানেই,কষ্ট টাকে দমিয়ে কাপা কন্ঠে কথা বলতে চেষ্টা করলো রোদ..
– আমি মানছি ভূলটা আমি করেছি বাচ্চা টার কি দোষ,কেনো তুমি ওকে আমার ভূলের শাস্তি দিচ্ছো,
– আমি কি করবো না করবো তা এখন তুমি ঠিক করে দেবে রোদ!
– আমি তা বলিনি শিশির..তুমি একটু মাথা টা ঠান্ডা করো, দেখো আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনো কোনো কিছু পলাশকে দিয়ে তোমার কাছে পাঠাবো না,কিন্তু তুমি বাচ্চা টার কথা একটু ভাবো এই চাকরি টা না করলে সে কি করে…প্লিজ শিশির আমি তোমার সামনে হাত জোড় করছি।
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো শিশির,পরক্ষণে কি একটা ভেবে বললো” বেশ,কিন্তু তুই এখন থেকে আবার কাপড়ের দোকানে বসবি,আমি যেনো আমার দোকানের আশেপাশে তোকে আর না দেখি” শিশির ছাড়া কখনো পলাশ একটা কাজ করেনি সেখানে শিশিরের এরকম একটা শাস্তি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো বাচ্চাটার খুব,কিন্তু খারাপ লাগলেও যে তার আর কিচ্ছু করার নেই কিচ্ছু না। একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে শিশির রোদকে সেটাতে উঠতে বললো,রোদ কোনোমতে চোখ মুছে চুপচাপ শিশির যা বলছে তাই বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো,রোদ দু’বার শিশির বলে ঠোঁট নাড়িয়ে হালকা করে ডাকলেও কিছু বলতে পারছিলো না যেনো,শিশির রিকশা মামার হাতে টাকা ধরিয়ে ঠিকানা বলে বললো যান আপনি এখন,আর বলেই সোজা দোকানের দিকে হাটতে শুরু করলো একবার ঘুরে রোদের দিকে তাকালো না পর্যন্ত,পলাশ কি করবে বুঝতে পারছিলো না,কোনোমতে চোখ মুছে একবার রোদকে দেখে নিয়ে শিশিরের পিছে ভয়ে ভয়ে হাটতে শুরু করলো,এদিকে রিক্সা চলতে শুরু করলো তার নিজ গন্তব্যে,হুট তোলা রিক্সায় একটু আড়াল হয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চিপে ডুকরে কেঁদে ফেললো রোদ,রিক্সার কানিতে চাপতে গিয়ে বা হাতে আঁচড় কাটলো রোদের, নিমিষেই চিলিক দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে পড়লো তার থেকে। এদিকে দোকানে এসে রাগের মাথায় গাড়ি থেকে কাঁচের থাই গুলো নামাতে গিয়ে থাইয়ের এক কানিতে নিজের হাতের এক পাশ টা পুরো ছিলে ফেললো শিশির,বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটা টপ টপ করে ঝড়ে পড়তে থাকলো সাদা ফ্লোরে..!!
চলবে…