?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১০,১১
#ইভা_রহমান
১০
সারি সারি ফাঁকা ক্লাসরুম গুলোর সামন দিয়ে গড়ে ওঠা লম্বা বারান্দার পিলার ঘেঁষে এক কিনারে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। হাত দিয়ে বারবার মুখ মুছলেও অবিরত গড়িয়ে পড়া চোখের পানিতে নরম গাল দুটো আবার মুহুর্তে ভিজে যাচ্ছে তার। কেনো কাঁদছে সে। তার তো খুশি হবার কথা। শিশির তো তাকে ঔ বাজে ছেলে গুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিলো এতে তো তার তৃপ্তি মেটার কথা তাহলে কিসের এতো আক্ষেপ এসে জমা হচ্ছে এ-ই ক্লান্ত মনের শূন্য আকাশ টা জুড়ে..!!
রোদকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো না শিশিরের। ছুটে এসে রোদের পেছনে দাঁড়িয়ে অস্ফুটে রোদ বলে ডাকতেই রোদ পেছন ফিরে এক ধাক্কাতে শিশিরকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো..
-শান্তি মিটছে তোমার এখন। খুব ভালো লাগছে তাই না। রোদ কতো অসহায়,কতো নির্লজ্জ, কতো টা বোকা,এসবই তো দেখতে চেয়েছিলে তুমি।
শিশির রোদের কাছে মিশে কিছু বলতে যাবে কিন্তু রোদ শিশিরকে থামিয়ে তার দু হাতে শিশিরের শার্টের কলার চিপে ধরে। চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে তার। কিন্তু আজ এই লোনাজলের চাইতেও সামনের মানুষ টার প্রতি অভিমানের অভিযোগ টা বেশি প্রখর হয়ে জমেছে যেনো রোদের। তাই তো কান্নাভেজা মুখে রোদ অভিযোগের সুরে তার মনের আর্তনাদ টাকে জাহির করতে থাকলো।
-চুপ। একটা কথা না। কি ভাবো তুমি,রোদ নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারে না রোদ ভীতু,রোদ খেলার পুতুল কোনটা? লিসেন শিশির আহমেদ এ-ই রোদ না এতো টা অসহায় হয় নি যে নিজেকে বাঁচাতে তার অন্য কারো সাহায্য লাগবে। আমি শুধু এটা দেখতে চেয়েছিলাম শিশির রোদের আশেপাশে তার ছায়া হয়ে থাকার পরো কি করে অন্য কেউ তার সুযোগ নেবার কথা চিন্তা করে কি করে..
শিশির রোদের কান্নাভেজা মুখে লেগে যাওয়া চুল গুলোকে রোদের দুই কানের পাশে গুঁজে দিয়ে রোদের দু গালে হাত রাখে। শান্ত কন্ঠে বলে,
– I am sorry রোদ আমি বুঝতে পারি নি। তুমি একটু শান্ত হও।
রোদ শান্ত হবার জায়গায় আরো ক্ষেপে উঠলো। আরো জোরে শিশিরের কলার চিপে রাগ ঝাড়তে শুরু করলো।
– সরি,কিসের সরি। আমাকে সরি শেখাচ্ছো তুমি। সেই প্রথম থেকে আমাকে ইগনোর করছো তুমি। আমার দিকে তাকানোর প্রয়োজন টুকু মনে করো নি তুমি আজ। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ঔ মেহুর সাথে বসে কফি খেলে এতো সাহস হয় কি করে তোমার(উঁচু কন্ঠে)
– আস্তে রোদ। চুপ.. একটু শান্ত হও।
– শান্ত হবো আমি। কেনো শান্ত হবো। মেহুর কথা তুললাম বলে গায়ে লাগলো খুব না..আজকে যদি তুমি আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। আমাকে নিজের কেউ বলে পরিচয় দিতে তাহলে কেউ সাহস পেতো আমার সাথে এসব করার,,বলো,,
– এ ভার্সিটিতে আমার চাইতেও অনেক ভালো ছেলে আছে রোদ,আমি তোমার জন্য ঠিক না।
– তুমি আমার জন্য ঠিক না, না আমি তোমার জন্য । নাকি মেহু ঠিক কোনটা শিশির?
শিশির রোদকে বারান্দার রেলিং এর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পিলারের সাথে ঠেকে দিয়ে এক হাতে রোদের কোমড় জড়িয়ে আরেক হাত রাখলো রোদের গালের মাঝে। রেখে বললো।
– আমাদের মাঝে বারবার মেহু কে কেনো তুমি নিয়ে আসছো রোদ?
– তুমি আনতে বাধ্য করেছো। আমাকে না ভালো লাগলে বলে দেও আমি চলে যাবো। আর বিরক্ত করবো না তোমাকে। আমি বড়লোক তুমি গরীব এটাই তো দোষ আমার ঠিক আছে আমি আমি তো আমার জন্মটাকে বদলাতে পারবো না কিন্তু আমার এই সৌন্দর্য টা,এটাকে তো শেষ করতে পারবো,হ্যা আমি তাই করবো। আমার চেহারা টা শেষ করে দিলো তো কেউ আর আমাকে পেতে চাইবে না তখন তুমিও আমাদের মাঝে ধনী গরিবের দেওয়াল তুলতে পারবে না,হ্যা আমি তাই করবো এখন।
কথা গুলো বলেই রোদ শিশিরকে ছাড়িয়ে এদিক ওদিক ধারালো টাইপ কিছু একটা খোঁজ করতে থাকলো যেটা দিয়ে সে নিজেকে আঘাত করতে পারে। কিছু খুঁজে না পেয়ে রোদ পাগলের মতো নিজের ধারালো নখ দিয়ে নিজের মুখে হাতে আছড় দিতে শুরু করে। কোনো কোনো জায়গা অনেকটা ছিঁলেও যায় নিমিষে কিন্তু এতো টা অশান্ত রোদ যে সেগুলোর ব্যাথা অবধি সে অনুভব করতে পারে না এই মুহুর্তে। এদিকে শিশির রোদের এই পাগলামি সহ্য করতে পারছিলো না। থামাতে গিয়েও রোদের শক্তির কাছে পরাজিত হতে হচ্ছিল তাকে বারবার।একটা পর্যায় শিশির না পেরে এক টানে রোদকে এক ঝাঁকি দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে,রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
– কি করছো কি তুমি রোদ?
– নিজেকে তোমার যোগ্য করছি,ছাড়ো আমাকে,ছাড়ো বলছি…কেমিস্ট্রি কেমিস্ট্রি ল্যাব কোথায় কেমিস্ট্রি ল্যাব এ যাবো আমি,ওখানে এসিড পাওয়া যায় তাই না শিশির। ওটা মুখে পড়লে আমি দেখতে বাজে হয়ে যাবো তাই তো। হ্যা তাই করবো আমি এখন।
ব’লেই রোদ আবার শিশিরের থেকে নিজের বন্ধন টা আলগা করে এদিকে সেদিকে ল্যাব খুঁজতে শুরু করলো। শিশির উপায় না পেয়ে পাশের এক ক্লাস রুমের দরজার সীটকিনি খুলে এক টানে রোদকে নিয়ে সোজা ঢুকে পড়লো সেই রুমে। দরজায় খিল লাগিয়ে জাপ্টে এসে ধরলো রোদকে। চুমু আকলো রোদের ভেজা মুখের প্রত্যেকটা ভাঁজে। এক হাতের পুরোটা রোদের চুলের ভাঁজে ডুবিয়ে নিজের বুকে এনে শক্ত করে চিপে ধরলো রোদের মাথা টা । দু’হাতে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আগলে নিলো তার রোদকে। রোদো এতোক্ষণ লাফঝাপ করে অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়ে শিশিরের বুকে ক্লান্তির শ্বাস ছাড়লো। অকপটে জড়িয়ে নিলো শিশিরকে। এদিকে রোদের শাড়ির সেফটিপিন খুলে আঁচল নিচে নেমে শাড়ি সহ রোদের বিধস্ত অবস্থা কিন্তু এতে না মন আছে রোদের না শিশিরের।
-অনেক অনেক দূরে চলে যাবো। অনেক দূরে। আর বিরক্ত করবো না তোমাকে।
– কোথায় যাবে?
– যাবো চলে। তোমাকে কেনো বলবো। তুমি তো চাও আমি হারিয়ে যাই,পালিয়ে যাই তখন তুমি মেহুর সাথে..
– আবার তুমি শুরু করলে রোদ। এবার কিন্তু আমি সত্যি ভীষণ রেগে যাচ্ছি।
– ওটাই তো পারো তুমি,আর কি জানো ওটা ছাড়া।
– আর তোমাকে যে ভালোবাসি..!! সেটা বললে না?
– না না না, বসো না আমাকে তুমি ভালো,সব মিথ্যা।
– ঠিক আছে বাসি না ভালো,চুপ এখন। আর কাঁদবে না অনেক হইছে। আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবার কথা বললে কিন্তু খু*ন করে দেবো এবার।
– দেও তাও ভালো। তাও শান্তি আমার!
রোদ নাকের পানি টা টেনে আরো শক্ত করে জাপ্টে নিলো শিশিরকে। শিশিরো পরম যত্নে আগলে রইলো তার প্রিয়তমাকে। ফাঁকা ক্লাস রুমে যেনো দু’জনের নিশ্বাসের তপ্ত শ্বাস টাও খুব জোরে এসে কানে বাজতে লাগলো। শরীর দিয়ে ছড়াতে থাকলো ভালোবাসার শুভ্রতা।
!
!
এদিকে হিয়াকে খুঁজতে মরিয়া উজান হিয়ার বাড়িতে এসে উঠোনের সদর দরজা পেড়িয়ে যে-ই গ্রীলের দরজার কাছে আসতে যাবে ওমনি দরজার দু সিঁড়ির মাথায় হিয়াকে মাথা নামিয়ে বসে থাকতে দেখে পা থামিয়ে ফেলে সে। অল্প স্রোতে হিয়ার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে হিয়া আস্তে করে হাঁটুতে মাথা ভর দিয়ে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। গ্রীলের উপর চোখ দিতেই দেখলো সেখানে বড় এক তালা ঝুলছে যার মানে বাড়িতে কেউ নেই এ-ই মুহুর্তে। উজান হিয়ার সামনে আরেকটু এগিয়ে অস্ফুটে হিয়া বলে ডাকতেই হিয়া হাঁটু থেকে তার কান্নারত মুখ টা তুলে এক মায়াময় আবেগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠলো উজানের চোখের দিকে। ঠিক তার পর মুহুর্তে হিয়া উঠে দাঁড়ালো আর বিনা দ্বিধায় বিনা সংকোচে উজানের বুকে পাঁচ ছয়টা কিল বসিয়ে দিতে শুরু করলো। খুব খুব খুব রাগ হচ্ছে তার তার উজান স্যারের উপর,খুব রাগ হচ্ছে। এতো কেনো কঠিন তার এই উজান স্যার কেনো এতো শাসন ওর হিয়ার উপর। কে হিয়া?
উজানের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে হিয়া বললো,
-সব সব আপনার জন্য। আপনি দেখলেন ওটা ছেলেদের ব্যাচ তারপরো কিসের জন্য আপনি আমাকে পরীক্ষা দিতে বললেন। সবসময় আপনি আমাকে এরকম শাসন করেন। রাগ করেন। কেনো করেন আপনি। কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। কেনো সবসময় এরকম বকাবকি করেন আপনি আমার উপর কেনো করেন?
এদিকে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে উজানের বুকের সাথে মিশে গেলো হিয়া। কান্না রত হিয়ার মুখে আসা এলোমেলো চুল গুলোকে আলতো হাতে হিয়ার দু কানের পাশে গুঁজে দিলো উজান। অকপটে হিয়াকে নিজের বা বুকে এনে হিয়ার মুখটা দু হাতের তালুতে আলতো করে উঁচু করে ধরে উজান স্থির কন্ঠে কথা বলে হিয়াকে শান্ত করতে চাইলো। কিন্তু অশান্ত হিয়ার চোখের জল আজ বড্ড লাগামহীন হয়ে ঝরে পড়ছে যেনো।
– হিয়া একটু শান্ত হও। কিচ্ছু হয়নি। আমি আছি না।
– আপনি থেকেও তো ঔ ছেলে টা আমার সাথে ঔ বাজে কাজটা করলো। কেনো আপনি আমাকে আজ পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেলেন। আমি ভাইয়াকে বলে দেবো। আপনার নামে বিচার দিয়ে দেবো।
– ঠিক আছে দিও বিচার।
– (নাকের পানি টা টেনে হিয়া বললো) দেবো তো বিচার। বলে দেবো আপনি শুধু শুধু আমাকে বকা দেন। আমি এখন বড় হইছি, আমি কি বুঝি না কি ঠিক কি ভূল। আপনার আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি বাচ্চা এখনো।
গালে রাখা হাত দিয়ে ই হিয়ার গাল মুখ মুছে দিয়ে উজান বললো,
– না তুমি বাচ্চা না। কিন্তু এতো অস্থির কেনো। আমি বললাম না যে হিয়া তুমি সীটে বসো আমি গিয়ে তোমার খাতা নিয়ে আসবো তারপরো কেনো উঠে আসলে তুমি। এতো কিসের তাড়াহুড়ো তোমার।
– হ্যা এখন এটাও আমার দোষ। আমার তাড়াহুড়ো থাকতে নেই। কোচিং শেষ করে কার আবার পরীক্ষা দিতে ইচ্ছে করে বলতে পারেন আপনি। সকালে ৭টায় ঘুম থেকে উঠে রোদ আপুর কাছে পড়তে যাই। আপুর কাছে দু ঘন্টা পড়ে কলেজে যাই কলেজ থেকে আসি দুইটা তারপর আবার কোচিং আসি তিনটা। রাতে আবার দোকান থেকে এসে ভাইয়া নিয়ে পড়তে বসে। পড়া পড়া পড়া সারাদিন তো পড়ার মধ্যে থাকি আর কতো পড়বো।
অভিমানে মোড়া হিয়াকে নিজের বুকে জড়িয়ে দু হাতে আগলে নিলো উজান। হিয়াও তার দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো উজানকে। কিছু মুহুর্তের জন্য হিয়া ভূলে গেলো সে কাকে জড়িয়ে মনের কষ্ট টাকে কমাতে চাইছে..!!
– হ্যা বুঝতে পারিনি তুমি এতো পড়াশোনা করো,চুপ এখন আর কাঁদবে না।
– কাঁদবো আরো আরো বেশি করে কান্না করবো আমি।
– আহ। আমি রাগ হচ্ছি কিন্তু…
হিয়া চুপ করলো ঠিকই কিন্তু তার কান্নার রেশ কমলো না।
-আমি কি সবসময় তোমার সাথে খুব রাগারাগি করি হিয়া? কখনো একটু স্নেহ করিনি,তোমাকে বুঝিনি?
– না একটুও স্নেহ করেন না আপনি আমাকে। আপনি আপনি তো,আপনি তো,সবাইকে কতো ভালোবাসেন কিন্তু আমাকে একটুও স্নেহ করেন না, দেখা হলেই সারাক্ষণ বকাঝোকা করেন, আমার সাথে ঝগড়া করেন। পানিশমেন্ট দেন। একটুও ভালোবাসেন না আপনি আমাকে একটু ও না।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো উজান। সে যে হিয়াকে কতোটা ভালোবাসে সেটা হিয়া কেনো এই পৃথিবীর কারোই জানা নেই,কারো না।
জড়িয়ে রাখা হিয়াকে বা হাতে আরো শক্ত করে আগলে ডান হাতে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো সে। উজানের বুকে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো হিয়া। কিছুক্ষণ এই উষ্ণতায় এক অদ্ভুত ভালোলাগা ঘিরে ধরলো দুজনকে। কিন্তু সেই রেশ বেশিক্ষণ বহাল থাকতে দিলো না হিয়া। হুঁশে ফিরতে উজানের বুক থেকে ছিটকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো সে। কি করছিলো কি এতোক্ষণ এটা। সে কি না উজান স্যারকে এভাবে জড়িয়ে কান্না করছিলো, ধ্যাত। হিয়ার লজ্জায় নিজেও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো উজান। হাতের উল্টো তালুতে নাক টা ঘষে নিয়ে হালকা একটু কেশে নিলো সে।
– বাড়িতে তো কেউ নেই মনে হচ্ছে কোথায় সবাই?
– এসময় তো দাদি আর চাচি ছাড়া কেউ থাকে না বাড়িতে। আজকে ছোট ফুফুর মেয়ে হয়েছে তাকে দেখতে যাবার কথা ছিলো ওখানে গিয়েছে হয়তো।
– বাড়ির চাবি?
– ভাইয়ার দোকান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিলো আমি ভূলে গেছি..
– মনে থাকে টা কি তোমার?(আবার রাগি কন্ঠে)
– এই দেখুন আপনি আবার আমাকে বকছেন।
– সরি..কি করবো তোমার কাজ কর্মই এরকম যে আমার তোমাকে..
– আমাকে?
– কিছু না। কলেজ থেকে ফিরে খেয়েছিলে দুপুরে কিছু?
– না আজকে মোহিনীর জন্মদিন ছিলো আমরা ভেবেছিলাম ওখানে গিয়ে কেক কেটে মজা করবো খাওয়া দাওয়া করবো,কিন্তু আপনার জন্য।
– হ্যা ঔ করে বের হও এবার তো শুধু কেমিস্ট্রিতো গেছে এরপর ফিজিক্স ম্যাথ সব গুলোতে গোল্লা আসবে তোমার,আর তাছাড়া ইদানীং তোমার যা আবভাব দেখছি বাংলাতেও পাশ করতে তোমার না নাকের পানি চোখের পানি এক হয় সামনে..
– আপনি কিন্তু আমাকে underestimate করছেন উজান স্যার।
– কেনো করছি,সেটা নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করো..দেখি..কিছু খাবে এখন?
– না।
– চকলেট?
-না।
– পেস্ট্রি?
-না।
-কেক?
-তাও না।
-চিপস?
-না।
-আইসক্রিম?
-না।
-(একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) বিরিয়ানি?
– উমমমম…না।
– ফুচকা?
ফুচকার নাম শুনে মুখে সেই মুহুর্তে হাসি ফুটে উঠলো হিয়ার,লাফিয়ে উঠে বললো জিহ্বে পানি এনে বললো,
– ঝালঝাল?
-হুম
– হুম খাবো,আপনি খাওয়াবেন আমায় ঔসব রাস্তার জিনিস!
– আর কোনো অপশন রেখেছো কি?
মুচকি হেঁসে দিলো হিয়া। ইসস কে বলবে একটু আগে সে এ-ই উজান স্যার বলে মানুষটাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাদছিলো..উজান বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিলো,উজানের ঘাড়ে হাত চেপে পেছনে বসে হিয়া।
– আমরা এখন কোথায় যাবো?
– আগে তুমি ভারী কিছু খাবে তারপর তোমাকে নিয়ে সুরভির সামন থেকে ফুচকা খাইয়ে দেবো,ঠিক আছে?
– আরে উজান স্যার,ভারী কিছু খাওয়াতে হবে না শুধু একটু বেশি করে ফুচকা খাওয়ালেই চলবে,,শুনতে পেরেছেন কি বললাম আমি।
– তোমার পেট পুরো খালি হিয়া,
– আরে এরকম খালি প্রায় প্রায় থাকে ওটা কোনো ব্যাপার না।
– তুমি কি একটু চুপ করে স্থির হয়ে বসবে হিয়া। আমার বাইক চালাতে কষ্ট হচ্ছে,
– সরি সরি,আর নড়বো না, আচ্ছা তারপর আপনি আমাকে ভাইয়ার দোকানে দিয়ে আসবেন ঠিক আছে আমি চাবি নেবো বাসার..
– শিশির তো মেবি ভার্সিটিতে ওদের নাকি কি জানি ফাংশন হচ্ছে,
– ভাইয়া দোকানে নেই, এখন!
– মেলায় যাবে?
-কি?
-পুলিশ লাইন্সে মেলা বসছে, যাবে?
-???মেলা মানে চড়কি,ভূতেরঘর,সাজুগুজু জিনিস(নিজমনে),, আপনি নিয়ে যাবেন বলছেন, কিন্তু ভাইয়া?
– আমি রোদকে ফোন করে বলছি শিশিরকে নিয়ে মেলাতে আসতে,খুশি?
– খুশি মানে খুব খুশি,রোদ আপুউউ থাকবে আমার সাথে,কি মজা…
বাইক চলতে থাকলো অলিগলি বেয়ে তার নিজ গন্তব্যে..পরিচ্ছন্ন আকাশ,শুভ্র মেঘের থোকা থোকা ভেলা,পড়ন্ত বিকেলের ঠান্ডা বাতাস,বাতাসের শিহরণ দেখে এটা প্রতিয়মান যে আর কিছু দিন বাদে আগমনরত শীতের তীব্রতা বাড়বে,বাতাসে উড়ছে হিয়ার উড়ন্ত চুল, সাথে উড়ছে হিয়ার দুলালি মন,সেই দোল গিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে উজানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বুকের শার্টের উপরের বোতাম তিনটে খোলা,বুকের কিছু লোম চোখে দেখা মিলছে তার,হাত ঘড়ি টাও ঢিলে হয় হালকা সামনে চলে আসছে,বাইকের স্পীডে উজানের চুল হাওয়াতে পাক খাচ্ছে। সাথে পেছনে বসিয়ে তাকে শক্ত করে ধরে আছে তার মনের রাজ্যের সেই পিচ্চি রানী। এ এক অন্য শিহরণ ভালোবাসার মানুষটার মুখে হাসি দেখার তৃপ্ত স্বাদ…!!
চলবে..
?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১১
#ইভা_রহমান
রোদের ফোনে উজানের কল আসাতে হুঁশ ফিরলো রোদ আর শিশির দুজনের,চোখ টা আলতো করে মুছে নিয়ে রোদ শিশিরকে জড়িয়ে ধরেই উজানের সাথে কথা বলতে থাকলো,উজান জানালো কোথায় আছিস,সাথে শিশির থাকলে তাকে নিয়ে মেলার মাঠে আয়। রোদ মুচকি হেঁসে বললো ঠিক আছে তুই হিয়াকে খাইয়ে মেলার মাঠে গিয়ে দাঁড়া আমি শিশিরকে নিয়ে আসছি। ফোন রেখে শিশিরের বুক থেকে মুখ তুললো রোদ। শিশিরের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো শিশির কিরকম একটা নেশাতুর চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজেকে রোদের মাঝে মিনিটে কোটিবার হারিয়ে ফেলছে সে। নিজের দিকে তাকাতে খেয়াল করলো ইসস শাড়ির আঁচল টা কেমন খুলে গিয়ে ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে তার।ধ্যাত। লজ্জায় রোদের গাল গুলো লাল আভাতে ছেয়ে গেলো নিমিষে,লজ্জা সূচক হাসি টেনে রোদ বললো,
-কি দেখছো ওভাবে?
শিশির রোদের শাড়ির আঁচল টা হাতে নিয়ে সেটাকে রোদের বুকে মেলে দিয়ে বললো,
– তোমার ব্লাউজের সাইজ!
শিশিরের বাহুতে একটা মা’র বসিয়ে দিলো রোদ,
-কি..ফাজিল একটা..
পরমুহুর্তে খিলখিল করে হেসে দিয়ে চোখ জোড়া সরু করে রোদ বললো,
– ব্লাউজের সাইজ দেখছিলে না আমার সাইজ কোনটা হু,?
শিশির রোদের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
– দিন দিন অতিরিক্ত পাকতিছো তুমি রোদ,সবসময় পাকা পাকা কথা,দেখি সোজা হও.তোমার জন্য কোনদিন যে ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ড হতে হয়ে কে জানে,
রোদকে সোজা করে দিয়ে শিশির আস্তে করে ব্লাউজের ভাঁজে লেগে থাকা সেফটিপিন টা খুলে রোদের হাতে ধরিয়ে দিলো,রোদ আঁচল টা ঠিক করে নিয়ে শাড়িতে পিন আঁটকাতে আঁটকাতে বললো উজান হিয়াকে নিয়ে মেলার মাঠে আছে আমাদের ওখানে যেতে বললো। শিশির রুমের সিটকিনি খুলে এদিক সেদিক দেখে রোদকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো আর পকেট থেকে মানিব্যাগ হাতড়ে দেখলো টাকা কতো আছে সাথে। রোদ চোখ পাকিয়ে মানি ব্যাগ টা ছো মেরে কেঁড়ে নিয়ে বললো”আসবা কি তুমি,সব টাকা আজকে খরচ করে দিয়ে আসবো আমি, সবসময় শুধু টাকার হিসাব অসহ্য”শিশির রোদকে কিছু বলতে পারলো না,বাধ্য ছেলের মতো রোদকে নিয়ে মেলার মাঠে পাড়ি জমালো।
এদিকে হিয়াকে নিয়ে মেলায় আসার পর হিয়ার বাহানা মেটাতে এবার চড়কিতে উঠতে গিয়ে বাঁধলো বিপওি,উজান তেমন কখনো একটা চড়কিতে চড়েনি,ছোট বেলায় চড়েছিলো ভয় লাগতো বিধায় কখনো চড়কি দেখে আর আগ্রহ প্রকাশ করে নি সে। এতোদিন বাদে ভেবেছিলো হয়তো সেই ছোট বেলার ভয়টা এখন আর কাজ করবে না তার,তাই হিয়ার সাথে নিজেরো একটা টিকিট কেটে উঠে যায় দুজনে। এদিকে হিয়ার চঞ্চল মন তো চড়কিতে উঠতে পেরে লাফাচ্ছে ঝাঁপাচ্ছে দৌড়ৌচ্ছে মনে হচ্ছে,ইসস মনের এ-ই লাফঝাপ টাকে যদি বাস্তবে প্রকাশ করানো যেতো!
– আপনি কি ভয় পাচ্ছেন উজান স্যার?
– হোয়াট!
– না মানে আপনার চোখ মুখ দেখে কিরকম ফ্যাকাশে লাগছে,মনে হচ্ছে রক্ত কমে গেছে।
– আমি ঠিক আছি,তুমি সাবধানে ধরো,
– ভয় লাগলে বলতে পারেন আমি ধরে রাখবো নে আপনাকে হে হে
– ইডিয়ট! সবসময় এতো হাসি আসে কোথা থেকে তোমার? হাসতে গিয়ে ক্লান্ত হও না!
– আরে ক্লান্ত কেনো হবো,আপনি জানেন না হাসি is good for health,আপনি যতো হাসিখুশি থাকবেন আপনার আশেপাশের মানুষ গুলোকে ততোই ভালো রাখতে পারবেন বুঝলেন,
উজান শ্বাস ফেলে বললো,
– বুঝলাম..সাবধানে ধরো
-হুম ধরছি ধরছি,
বলেই হিয়া আবার মুখে এক ফালি হাসি টেনে নিচে তাকিয়ে সবাইকে দেখতে থাকলো। এদিকে চড়কিতে লোক ভর্তি হয়ে যাওয়াতে চড়কির লোক আস্তে আস্তে করে সেটাকে ঘুড়াতে থাকলো,প্রথম দুই পাকে নিজের ভয় টাকে দমাতে পারলেও শেষে গিয়ে পাশে বসে থাকা হিয়ার বা হাতটাকে নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলো উজান। বিষ্ময়ে তাকিয়ে উঠলো হিয়া৷ উজানের দিকে তাকাতেই দেখলো কেমন ঠোট জোড়া চিপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে তার উজান স্যার। পেট ফেটে এই মুহুর্তে হাসি আসছে হিয়ার। কিন্তু সেটাকে খুব কৌশলে সামলে নিলো হিয়া। এদিকে তাদের সামনে বসা বাচ্চা মেয়েটাও ভয়ে চিৎকারে মেলা মাথায় তুললো,ইসস বাচ্চা টার মতো যদি উজানো বুক ফেটে চিৎকার করতে পারতো…!!
চড়কি থেকে নেমে উজানের বেহাল অবস্থা দেখে মুখ টিপে হেঁসে দিলো হিয়া। রেগে গেলো উজান,তেড়ে এসে বললো,
– আর কখনো যদি এসবে ওঠা দেখেছি, উপর থেকেই ধাক্কা দিয়ে ফেলায় দেবো তোমাকে,,এটাতে কেউ চড়ে,মানুষকে মেরে ফেলার বদবুদ্ধি,,
– তাই নাকি। আর এদিকে আপনি যে কি শক্তি দিয়ে আমার হাত চিপে ধরে ছিলেন তার বেলা,দেখুন কিরকম পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছেন।
– বেশ করেছি,দেখি আসো,আর কোনো রাইডে চড়া হবে না বলে দিলাম।
হিয়া ভেংচি কেটে সামনে পুতুলের দোকান,কসমেটিকস এর দোকান নিজে নিজে ঘুরে দেখতে থাকলো,কিছু সময় বাদে রোদকে নিয়ে শিশির আসতেই হিয়া এক ছুটে দৌড়ে আসলো তার ভাইয়ের কাছে। ছুটে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরে মুখে এক বালতি হাসি টেনে বললো,
– এতো দেড়ি করলি কেনো ভাইয়া কখন থেকে একা একা ঘুরছি আমি,
শিশির হিয়ার দিকে তাকিয়ে উজানের দিকে তাকালো কিছু বলতে যাবে তার আগে হিয়া ওর পকেট থেকে একটা ছোট্ট লিপিস্টিক বের করে শিশিরের সামনে ধরিয়ে বললো,
– ভাইয়া দেখ উজান স্যার আমাকে লিপিস্টিক টা কিনে দিলো এক্ষুনি,কি সুন্দর রঙ!
শিশির মৃদু রেগে গিয়ে বললো,
– তুই নিলি কেনো কিনে,আমাকে বললে কি আমি কিনে দিতাম না তোকে..
– আমার কাছে খুচরো ছিলো না তাই জন্য তো,
– তাই জন্য হলেও তুই নিবি কেনো,আমার জন্য অপেক্ষা করা যেতো না,এগুলো কোন ধরনের ছোটলোকি স্বভাব তোর।
মনটা ছোট করলো হিয়া,শীতল কন্ঠে বললো,
-শুধু তো বিশ টাকাই নিছে,
– বিশ টাকা নেক আর হাজার টাকা নিক তুই নিবি কেনো কিনে,তুই বললে তোকে আমি কিনে দেই না এসব।
মনটা মুহুর্তে খারাপ হয়ে আসলো হিয়ার,সত্যি কি লিপিস্টিক টা কিনে নিয়ে সে ছোটলোকির পরিচয় দিয়েছে,ধ্যাত কি ভাবলো উজান স্যার যে হিয়ার ভাই হিয়াকে কিছু কিনে দেয় না। হিয়া মুখটাকে গোমড়া করে বললো আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি একটু,এ-ই যে ঔ দোকান টায় যাবো আর আসবো। বলা মাএ-ই এক দৌড়ে ছুটে গেলো হিয়া। শিশির একটা ফোন রিসিভ করতে সামনে এগুতেই উজান রাগান্বিত ভঙ্গিতে রোদের দিকে তেড়ে এসে বললো,
– একদিন তোর শিশির আমার এই হাতে কিন্তু খু*ন হবে দেখিস,
– রেগে কেনো যাচ্ছিস জানিসই তো ও কারো থেকে কিছু নেওয়া পছন্দ করে না,রাগ করিস না প্লিজ।
– কারো থেকে মানে,আমি আমি এখন কারো থেকে হয়ে গেলাম,
– আচ্ছা এটা কখনো ভেবেছিস শিশির যদি এই সম্পর্কে কখনো রাজি না হয় তুই চাইলে পারবি তখন হিয়াকে নিজের করতে..
– দরকার পড়লে শিশিরকে মে*রে হিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে রাখবো,দেখবো তখন কিভাবে বোনকে আগলে রাখে।
কপাল কুঁচকে রোদ বললো,
– শিশিরকে খু*ন করলে আমি তোকে ছাড়বো নাকি আমিও তোকে খুন করে দেবো,হু
বলেই রাগে হিয়ার দিকে হাঁটা দিলো রোদ। শিশির ফোন রেখে উজানকে এসে বললো মাগরিবের সময় হচ্ছে চল নামাজ টা পড়ে আসি ওরা দুজন ঘুরুক ততোক্ষণ। উজান রোদকে হিয়ার দিকে খেয়াল রাখতে ব’লেই শিশিরের সাথে নামাযের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো,এদিকে রোদ পাশে থাকলে আর কি লাগে হিয়ার,আরেকদফা চড়কিতে উঠলো সে সাথে আরো দুটো রাইডে উঠে পুরো মেলা চক্কর দিতে থাকলো দু’জনে মিলে হাতে হাত ধরে..!!
নামাজ শেষে উজান শিশিরকে নিয়ে মেলার মাঠেই আসতে রোদ শিশিরকে নিয়ে একটা কাপড়ের স্টলে ঢুকে পড়লো,শিশিরের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে বললো,
– নেও তো এটা রাখো,
– কি?
– রাখতে দিলাম রাখো এতো প্রশ্ন করো কেনো। সবসময় কি কেনো কোথায় কোনটা একটা না একটা কোয়শ্চন লেগেই থাকে তোমার অসহ্য।
স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা রোদের কথা শুনে মুচকি হেঁসে দিলো,শিশির মুখ টা নামিয়ে রোদের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো,রোদ শিশির কে একটা কামিজ ধরিয়ে বললো এখন এটা আমাকে কিনে দেও। শিশির কাপড় টা ভালো করে দেখে বললো না অন্য কিছু দেখো তুমি,এটার কোয়ালিটি ভালো না। কিন্তু রোদ তো রোদ জেটা জিদ করবে তার তো সেটাই চাই!
– তুমি দিবে না কিনে?
-না
– শুধু ৭৫০ টাকাই তো লিখা আছে আর বলছেও ৫০টাকা কম রাখবে এরপরো দিবে না,
– না
– তুমি এরকম কিপ্টে কেনো শিশির,আমি নিজে থেকে কিছু পছন্দ করে তোমার কাছে কিনতে চাইছি তুমি তা-ও কিনে দিবে না।
– রোদ আমি ছোট থেকে চাচ্চুর কাপড়ের ব্যবসা সামলে এসেছি আমি জানি কোনটা কাপড় ভালো কোনটা কোন মানের,এগুলো ঢাকায় নীল মার্কেটের সামনের ফুটপাতে বিক্রি করে,নেও একবার এক ধোঁয়াতে শেষ.
– আমি তাও কিনবো.
-এটা ৫০০টাকা দিয়ে কিনলেও লস হবে রোদ,
– হলে হবে আমি পড়বো তোমার কি!
– আশ্চর্য তো,আমি বলছি কাপড় টা ভালো না তারপরো কেনো ছোট বাচ্চার মতো জিদ করছো তুমি,
– আমি এটা কিনবো কিনবো কিনবো,টাকা দেও তুমি।
– না আমি দেবো না,
– আমি কিন্তু কান্না করে দেবো এখন এখানে,
– দেও,যা মন চায় করো,
– আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি শিশির,
– তোমার এ-ই কামিজ টাই লাগবে তো আমি এই কামিজ’ই অরজিনাল তোমাকে কালকের মধ্যে এনে দেবো এবার চলো তো,
– না না না আমি এটাই কিনবো মানে এটাই,
– আল্লাহ,কার যে পাল্লায় পড়ছি আমি,বলতিছি এগুলো সব রেপ্লিকা তা-ও বুঝে না,
রোদকে মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখে শিশির পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে টাকা বের করে দোকানের স্টাফ কে ডেকে বললো,দিন এটাউ প্যাক করে,দোকান দার ওটা প্যাক করে রোদের হাতে দিতেই রোদ খুশিতে ভরে উঠলো,মুখের বিজয়ী হাসি তে রোদের সৌন্দর্য যেনো আরো জ্বল জ্বল করতে থাকলো মুহূর্তে!
এদিকে বাকি টাকা টা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে শিশির বললো,
– “মেয়ে মানুষ ” বললাম ভালো টা এনে দেবো শুনলো না…দেখি আরো কিছু কিনবা তুমি?
– হে হে,না আর কিছু লাগবে না
– লাগলে বলো,টাকা আছে পকেটে আমার,
– আছে টাকা,তাহলে চুড়ি কিনে দেও
– শুধু চুড়ি?
– উমমম,,কানের দুল,
– আচ্ছা আসো,হিয়া কোথায়?
– উজান নিয়ে গেছে সামনে..
-ঠিক আছে আসো,
!
!
উজানের হাত ধরে টানতে টানতে মাঠের এক কিনারে নিয়ে আসলো হিয়া। এখন নাকি উজানকে খেলতে হবে মানে একটা ভারী ওয়েট দিয়ে এই মাঝখানে মারতে হবে যদি মিটারে ৫০০ এর উপরে উঠে তাহলে তাকে দেওয়া হবে সামনের বক্সে রাখা সুন্দর পুতুল গুলো থেকে যেকোনো একটা পুতুল আর যার টিকিট মূল্য বিশ টাকা এবং সুযোগ পাবে দুই বার।
– কি করছো কি হিয়া,টানছো কেনো? যাচ্ছি তো আমি আস্তে,
– এ-ই যে,এখানে দেখুন কি খেলা হচ্ছে,আপনি ওটাতে একটা বারি দিয়ে আমাকে ঔ একটা পুতুল এনে দিন না উজান স্যার, প্লিজ,
হিয়ার কথা অনুসরণ করে উজান সামনে তাকিয়ে খেলা টা কি দেখে নিলো,শার্টের হাতা গুটিয়ে বললো,
– টিকিট কাটতে হবে না?
– হবে তো,আমি কেটে আনছি এ-ই যে টিকিট,আপনি শুধু গায়ে জোরে বারি দিবেন বুঝছেন যেনো ৫০০ আপ করে,আমি না ভাইয়াকেই বলতাম কিন্তু রোদ আপু যে কোথায় নিয়ে গেলো ভাইয়াকে,আপনি আমাকে এনে দিন না ঔ পুতুল টা প্লিজ…
– এটা নিলে যদি আবার শিশির রাগ করে তখন।
– আরে এটা তো আমি আপনার থেকে টাকা দিয়ে কিনছি না না,আপনি একটু শুধু গায়ের শক্তি টা ব্যায় করবেন এ-ই যা,এতো সুন্দর সুন্দর সালমান খানের মতো বডি আপনার সেগুলো আর কবে কাজে লাগাবেন শুনি,
-ইডিয়ট,
হিয়া উজানকে বাটার লাগাতে গিয়ে উল্টে নিজে ফিঁক করে হেঁসে দিলো,এদিকে উজানের আগে পরপর দুটো ছেলে এসে ট্রাই করলো কিন্তু তারা কেউ ৪৩০ এর উপরে টপকাতে পারলো না,উজানের সময় আসতে হিয়া শুধু বললো আমার বিশ টাকা টা নষ্ট করবেন না স্যার প্লিজ। উজান মৃদু হাসলো শুধু। প্রথম বার ওয়েট টা তুলে মারতেই সেটা ৪৮০এর কোঠায় গিয়ে ঠেকলো,৫০০ আর আপ করতে পারলো না। মুখ টা মুহুর্তে ছোট হয়ে আসলো হিয়ার। এ-ই বুঝি বিশ টাকা যাবার কষ্টে শেষ হয়ে যাবে মেয়েটা। দ্বিতীয় বার উজান আরো ভালো করে দাঁড়িয়ে হাত টাকে ঠিক ভাবে গুটিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বারি মারতেই সেটা ৫১০ এর কোঠা ছুলো। উপস্থিত ছেলে গুলো সবাই হাত তালি দিয়ে হালকা আওয়াজে চিৎকার করলো। আর এদিকে হিয়ার খুশি এই মুহুর্তে দেখে কে। টনসিল,ইসোফোগাস সব বের করে দিয়ে মুখে এক বিরাট বিজয়ী হাসি টেনে দৌড়ে এসে উজানের বাহু ধরে বললো,
– Thank you Thank you Thank you উজান স্যার। মান রাখছেন আপনি আমার টাকা টার,হে হে
ব’লেই পুতুলের বাক্সটার সামনে গিয়ে কোনটা পুতুল নিবে তাই হাতড়িয়ে দেখতে থাকলো হিয়া। সব গুলো পুতুলই ভালো লাগাতে কনফিউজড হয়ে গেলো হিয়া। উজান কে বললো স্যার দেখুন না কোনটা পুতুল নেই সব গুলোই তো সুন্দর। উজান এসে পুতুল গুলোর ভেতর থেকে একটা হ্যালো কিটির পুতুল বের করে দিতেই আবারো মুখে এক বালতি হাসি টানলো হিয়া। উল্লাসে লাফিয়ে বললো,
– কিটিইইইই! ইসস আমি তো খেয়াল’ই করিনি,
– চোখ থাকলে তো খেয়াল করবে,আসো এখন আমি আর হাঁটতে পারবো না,
হিয়া মুখ টিপে হেঁসে দিয়ে উজানকে নিয়ে স্টলটা থেকে বের হতে ধরবে ওমনি শিশির আর রোদকে এদিকে আসতে দেখে হিয়া দৌড়ে শিশিরের কাছে গিয়ে বললো” ভাইয়া দেখ উজান স্যার বারি দিয়ে আমাকে একটা পুতুল পাইয়ে দিলো,তুই ও একটা বারি দিয়ে রোদ আপুর জন্য পুতুল এনে দে না,প্লিজজ” হিয়ার আবদার শুনে শিশির রাজি হলো ঠিকই কিন্তু পুতুল নিয়ে আসতে ব্যর্থ হতে হলো তাকে। রেগে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে রইলো হিয়া,কেনো পারলো না তার শিশির ভাই..
– পারবে কিভাবে তোর ভাই হিয়া,গায়ে জোর থাকলে না পারবে,
– ইসস ৪৯০ আর একটু জোরে মারলে কি হতো তোর! এজন্য বলি আমাকে না খাইয়ে নিজে বেশি বেশি করে খা,কেন বলি বুঝলি এবার
– হুম বুঝলাম আমার মা,দেখি এদিকে,কি কিনে চাইলি তখন?
– ঔ জুতো কিনে চাইলাম,বেশি দাম না ওনলি ১৫০,
– কোথায় ঔ দোকান নিয়ে চল,
হিয়া মুখে এক ফালি হাসি টেনে শিশিরকে নিয়ে দু জোড়া ১৫০টাকার জুতো কিনে নিলো,এরপর চারজনে আরেকটু ঘোরাঘুরি করে মেলা থেকে বেরুতেই উজান ওদের তিনজনকে দাঁড়িয়ে বললো তোরা একটু দাঁড়িয়ে থাক আসছি আমি। উজান চলে যেতে হিয়া সামনে একটা ঝালমুড়ি দোকান দেখে শিশিরের থেকে দশটাকা চেয়ে নিয়ে এক দৌড়ে সেখানে ছুটে গেলো। এদিকে রোদ তার খুলে রাখা চুল গুলো খোপা করে নিয়ে শিশিরের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলো শিশির ঠিক তখনকার মতো নেশাতুর চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই,রোদ কপাল কুঁচকে বললো,
– কি দেখো?
রোদের প্রশ্নে চোখ নামালো শিশির। খোঁপা করা চুলে যে রোদকে এতো টা কিউট লাগতে পারে তা বোঝা মুশকিল..
-কি হলো কি এখন আবার ওভাবে তাকিয়ে কিসের সাইজ দেখছিলে শুনি?
– পাকনি,কিছু দেখছিলাম না..(একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে) রোদ?
– হুম বলো?
– এখন আমাদের যা হচ্ছে যা হবে যে-ই স্বপ্ন গুলো তুমি আমাকে নিয়ে সাজিয়েছো সেগুলো যদি কখনো পূরণ না-ও হয় তুমি আমাকে কথা দেও তুমি কষ্ট পাবে না।
– তুমি এভাবে কেনো বলছো শিশির!
– যদি কখনো তোমার বাড়ি থেকে এ-ই সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠে তুমি আমাকে প্রমিস করো তোমার বাবা মা যা সিদ্ধান্ত নিবে তুমি তাই করবে,তাদের অমান্য হবে না,
– শিশির (অস্ফুটে)
– আমার তোমার জন্য খুব ভয় হয় রোদেলা..!!
– তুমি থাকতে আমার কিসের ভয় শিশির। তুমি পারবে না আমাকে আগলে রাখতে?
– তুমি বুঝবা না রোদ আমার অসহায়ত্ব টা কি,বাদ দেও।
রোদ কিছু বলার আগে হিয়া আসলো তার সাথে উজান তার হাতে অনেকগুলো বাতাসা,নারকেলের মোড়া,সন্দেশ আর এক ব্যাগ ভর্তি আচার নিয়ে এসে কিছুটা রোদের হাতে দিলো আর বাকি পুরোটা হিয়ার দিকে বাড়াতেই হিয়া হাত গুটিয়ে নিলো,
– এগুলো তোমার জন্য হিয়া ধরো,কি হলো নেও।
– না ভাইয়া বকা দিবে,
– কিচ্ছু বলবে না,ধরো,
হিয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নসূচক চাহনি দিলো সে কি এগুলো নিবে না নিবে না। রেগে গিয়ে শিশিরের দিকে তাকালো উজান এখন এটা নেবার জন্যেও কিনা হিয়াকে তার ভাইয়ের পারমিশন নিতে হবে। আজব! উজান রেগে আছে দেখে শিশির শান্ত কন্ঠে হিয়াকে বললো “নে” হিয়া মুখে হাসি টেনে উজানের হাত থেকে ওগুলো নিয়ে খুশিতে ভরে উঠলো। ইসস এগুলোই তো টানছিলো হিয়াকে এতোক্ষণ এই নারকেল কুঁচি, সন্দেশ,বড়াই এর আচার,ইসস এ-ই উজান স্যার মানুষ টা এতো ভালো কেনো হিয়ার মনের কথা গুলো না চাইতেও পড়ে ফেলে ইস,ইস ইস ইস,নিজের মনের খুশিটাকে কোনো মতে দমালো হিয়া,ইস যদি খুশিতে একটু উজান স্যারের গাল দুটো টেনে দিতে পারতো সে।
শিশির বললো অনেক রাত হচ্ছে রোদকে নিয়ে এখন বাড়িতে যা,উজান একটা রিক্সা ডেকে নিতে শিশির হিয়া উঠে গিয়ে উজানের বাইকে চেপে বসলো রোদ,এদিকে রিক্সা প্যাডেল তুলতেই হিয়ার কি একটা মনে আসতেই হিয়া রিক্সা মামাকে বললো মামা গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও,শিশির ভূ তে ভাঁজ এঁটে বললো কি সমস্যা আবার তোর। হিয়া রিকশা থেকে নেমে গিয়ে সোজা উজানের বাইকের সামনে এসে দাঁড়ালো,উজান ভূ কুঁচকে বললো হিয়া”
– ইসস ভুলেই গিয়েছিলাম,এটা না আমি আপনার জন্য কিনেছি,দেখুন তো কিরকম?
উজান হিয়ার হাত থেকে ছোট্ট প্যাকেট টা নিয়ে খুলে দেখলো সেটাতে একটা সানগ্লাস রাখা,একটু অবাক হলো উজান,হিয়া আবার কখন এসব!
– তখন আপনার থেকে লিপিস্টিক টা কিনে নিলাম বলে ভাইয়া রাগ করলো না এজন্য আমি এটা আপনার জন্য কিনেছি,এখন শোধবোধ!
আবারো ক্ষেপে উঠলো উজান।
– তোমাকে কেও পাকামো করে বলেছিলো শোধ দিতে,ইডিয়ট,কিছু জিনিসের রিটার্ন হয় না কবে বুঝবা তুমি, আর আমাদের মাঝে যা হয় সব ভাইয়াকে বলার কি আছে কিছু জিনিস প্রাইভেট রাখতে হয় তুমি জানো না,
– হ্যা মানে কিন্তু
– কোনো কিন্তু না,যা-ও এখন শিশির ডাকছে
– হুম,মানে,
– আবার কি
– না কিছু না
ব’লেই আবার দৌড়ে এসে রিক্সায় উঠলো হিয়া। রিক্সা চলতে থাকলো তার নিজ গন্তব্যে। এদিকে সানগ্লাস টা চোখে দিয়ে বাইকের আয়নায় নিজেকে দেখতে গিয়ে হালকা হাসলো উজান,রোদ পেছন থেকে উজানের মাথায় বারি দিয়ে বললো হয়েছে হিরো গাড়ি স্টার্ট দে এবার। উজান সানগ্লাস টা খুলে শার্টের পকেটে ঝুলিয়ে আস্তে করে বললো “ইডিয়ট”
চারটে প্রাণ আজ পরিতৃপ্ত তায় পরিপূর্ণ। ছোট ছোট খুশিতে আনন্দে উল্লাসে ভরপুর। কি জানি গরীব ধনি এ-ই ভেদাভেদ ভূলে কি জয়ী হতে পারবে এদের ভালোবাসা। মেঘলা আকাশে কি ভালোবাসার রামধুন বিরাজ করবে সারাটা জীবন জুড়ে!!
চলবে..