?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১৮
#ইভা_রহমান
-রোদ তুমি! তুমি হঠাৎ? কোনো দরকার?
– হ্যা খুব দরকার। হিয়ার কাছে না আমার একটা গল্পের বই ছিলো। বই টা আসলো আমার না আমার এক বান্ধবীর। তার না-কি ওটা আজকেই আর্জেন্ট লাগবে। প্লিজ হিয়াকে বলো না বই টা দিয়ে যেতে।
– হিয়া তো পিকনিকে গেছে,ভূলে গেলে তুমি ?
– ওহ,একদমই খেয়াল ছিলো না। তাহলে তুমি দরজা খুলো আমি গিয়ে নিয়ে আসি। হিয়ার টেবিলেই আছে হয়তো রাখা।
– তু-মি ভেতরে আসবে! না বাড়িতে কেউ নেই। তুমি এভাবে।
– তুমি আমাকে গেট থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছো শিশির!
– হেই পাগলি না,তা কেনো হতে যাবে। কিন্তু.. আচ্ছা আসো খুঁজে দেখো পাও কিনা?
শিশির গ্রীলে লাগা তালা খুলে দিতেই রোদ টপটপাটপ এক লাফে ভেতরে লাফিয়ে যায় আর শিশিরের হাতে থাকা তালা চাবি টা নিয়ে তালা লক করতে করতে হুকুম ছাড়ে”এক কাপ চা করো তো,খুব মাথা টা ধরেছে” শিশির পুরো থ বোনে যায় ঔ মুহুর্তে। কি চলছে রোদের মনে তা বুঝতেই রোদের তালা লাগানো শেষ। শিশির হু হ্যা করতেই রোদ তার আঙ্গুলের ডগায় চাবির রিং টা ঘোরাতে ঘোরাতে হিয়ার রুমে এসে টেবিল হাতড়াতে থাকে। রোদের পেছনে আসে শিশির। রোদ হিয়ার সব বই খাতা উল্টাতে উল্টাতে বলে,
– কি হলো কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ দেখছো কি আমার। যা-ও এক কাপ চা করে আনো।
– তুমি সত্যি চা খাবে রোদ?
– হ্যা না খেলে আবার বলতে কেনো যাবো আশ্চর্য।…আর শোনো আমার চায়ের চিনি কিন্তু কম দিতে হয়, খেয়াল আছে তো?
শিশির ওর ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে কি একটা চিন্তা করলো,তারপর মুখ নামিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। আসলে তার বুঝতে ঠিক অসুবিধে হচ্ছিলো এ-ই মুহুর্তে ঠিক কি হচ্ছে তার সাথে। সে কি এ-ই ফাঁকা বাড়িতে রোদের জন্য চা বানাচ্ছে। আর রোদই বা হঠাৎ কি মনে করে এই ভর দুপুরে এ-খা-নে! আর সাতপাঁচ ভাবতে পারলো না শিশির। চায়ের কেটলি টা গ্যাসে বসিয়ে পানি ঢাললো তার কিছুসময় পর চা-পাতার সাথে মিক্সড করলো হালকা চিনি..!
চা হাতে হিয়ার রুমে আসতেই দেখতো পেলো তার রোদরানি হিয়ার রুমে নেই বরং তার রুমে গিয়ে তারাই বিছানো ফ্লোর বিছানায় পায়ে পা তুলে বালিশে হেলান দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। ভূ কুঁচকে রোদের পায়ের কাছে গিয়ে বসলো শিশির। কপালে ভাঁজ এঁটে বললো” কি মতলবে বাড়িতে আসা আপনার শুনি একটু? রোদ অবাক হবার ভঙ্গি এঁটে উঠে বসলো,সাথে আদুরে সুর টেনে বললো” মতলব,কিসের মতলব” শিশির রোদের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে বললো “নেও” রোদ মুচকি হাসি দিয়ে চা টা নিয়ে ফু ফু করে খেতে শুরু করলো। শিশির ফ্লোরের সাথে লাগানো দেওয়ালটাতে পিঠ ঠেকিয়ে রোদের পা জোড়া নিজের উপর রাখলো,আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে থাকলো তার রোদরানির চা খাওয়ার প্রত্যেকটা ভঙ্গি।
– কতোক্ষন থাকবা এখানে?
– ওলে তুমি বুঝে গেছো আমি এখানে থাকতে এসেছি।
শিশির উল্টোদিকে মুখ করে বললো হুম এখন বুঝলাম। রোদ হেঁসে দিয়ে বললো,
– জুম্মার নামাজে গিয়েছিলে আজ।
– হুম। আসলাম একটু আগে।
– ওহ! তা খাওনি এখনো?
– না খাবো। তার আগে তুমি আসলে।
– ওহ! (একটু থেমে থেকে)আচ্ছা মেনুতে আজকে কি কি আছে? মানে দুপুরে কি দিয়ে খাবে?
– হাঁসের মাংস,খাবি?
লাফিয়ে উঠলো রোদ। তার যে কতো প্রিয় এই হাসেঁর মাংস কিন্তু ঘাটের এই এ্যালার্জি! সারা শরীর লাল লাল চাকা চাকা বানিয়ে দেয়!
– খাবো তো সব খাবো।
– আর সারারাত গা চুলকাবেন। এ্যালার্জি রুগী!
ক্ষেপে উঠলো রোদ। তাকে কিনা এতো সহজে এ্যালার্জি রুগী বানিয়ে দিলো। যা খাবোই না এ-ই হাসেঁর বাচ্চার মাংস। রোদকে মুখ ফুলিয়ে আবার বই নিয়ে পাতা উল্টাতে দেখে মুচকি হাসলো শিশির। নীরব হাসিতে উঠে গিয়ে পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে। গরম ভাত যদিও সেটা নিজের জন্যেই রান্না করেছিলো সে। তাতে কি! এতেই পেটভরে হয়ে যাবে দু’জনের। একটা কাঁচের প্লেটে পুরো ভাতটা ঢেলে নিলো শিশির সাথে অল্প পরিমাণ হাঁসের মাংসের সাথে একটা ডিম অমলেট করে নিয়ে প্রফুল্লতার সহিত রুমে এসে রোদের পাশে বসতেই হাঁসের মাংসের গন্ধ শুঁকেই উঠে বসলো রোদ। ইসস গরম ভাত দিয়ে তো ধোঁয়া বের হচ্ছে এখনো সাথে এ-ই মাংস। জিহ্বে জল চলে আসলো রোদের। সেই পানি টাকে গিলে নিয়েই রোদ হা করলো। শিশির কিছু গরমভাতের সাথে কিছু ডিম মিশিয়ে রোদের মুখে ঢুকিয়ে দিতে বাংলার পাঁচের মতো মুখ ধারণ করলো রোদেলা! এটা ঠিক কি ছিলো!
– এটা কি!
– অমলেটের সাথে গরম ভাত স্পেশালি তোমার জন্য!
– এটা কিন্তু চিটিং। হাঁসের মাংসের লোভ দেখিয়ে এখন শুধা ডিম পোস। আমি খেলবো না।
– তুমি বাচ্চা না রোদ। হাঁসের মাংসে তোমার বুক ডেবে যায়,শ্বাস নিতে পারো না এরপরো কিসের জন্য আমি তোমাকে এটা দেবো!
– প্লিজজজ…ঔষধ খাচ্ছি তো এখন। এখন আর সত্যি কোনো এ্যালার্জির সমস্যা নেই আমার বিশ্বাস করো।
– না আমি করি না বিশ্বাস।
– প্লিজ শিশির.. তাহলে তুমিও খাবে না বলো?
– আচ্ছা খাবো না। নেও হা করো এখন।
– দেও না একটা পিস! কিচ্ছু হবে না। প্লিজজজজজ বলছি না ঔষধ খাচ্ছি।
– হে মাবূদ রক্ষা করো আমাকে। দেখি মুখ খুলো।
রোদের জোড়াজুড়িতে হাঁসের মাংসের সাথে ভাত মাখতে বাধ্য হলো শিশির। ডিম পোসের সাথে পুরো গোটা মাংস ভুনাটাই শেষ করলো রোদ। রোদকে এ-তো মন ভরে,আনন্দের সাথে খেতে দেখে আর বাঁধা দিলো না শিশির। তবে ভয় পেলো অনেকটা। নিজে কি খেলো সেই হুঁশ নেই রোদের তৃপ্তি মেটাতেই মূখ্য এ-ই মানুষটার কাছে। রোদের পূর্ণতায়,রোদের প্রাপ্তিতেই যেনো শিশির নামটা পরিপূর্ণ!
!
!
ভাত খাবার পর্ব চুকে যেতেই রোদ বিরাট হাই তুলে লুটিয়ে পড়ে শিশিরের বিছানায়। চোখ ফেটে ঘুম আসছে তার। সাথে পেট টাও তো বড্ড ভারী ভারী লাগছে। আজ কি একটু বেশি খাওয়া হলো নাকি তার। ইশশ তাই হয়তো!
গত আধা ঘণ্টা ধরে রোদের পায়ের কাছে বসে হিসাবের খাতা হাতে হিসাব কষতে কষতে রোদকে দেখে যাচ্ছে শিশির। রোদ কখনো হাই তুলছে। কখনো চোখ বুজে ঘুম দিচ্ছে। তো কখনো বই উল্টাছে তো কখনো নিজের ওড়না পেঁচাতে পেঁচাতে কোন সব কল্পনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। হিসাব কষতে কষতে রোদের এই অস্থিরতা বড্ড ভালো লাগাচ্ছে শিশিরকে। হিসাবের বই টা বন্ধ করলো শিশির। সেটাকে এক পাশে রেখে আঁকড়ে ধরলো রোদের পা জোড়া। পা দুটো উঁচু করে রোদের পায়ের তালু দুটোতে নিজের মুখ এনে ঠেকালো শিশির। নেশাক্ত কন্ঠে বললো,
– তুই এতো সুন্দর কেনো রোদ! এতো সুন্দর আমার সহ্য হবে তো..!
হেঁসে দিলো রোদ। সে যে অতিমাত্রায় সুন্দর এটা কি শিশির আজ প্রথম জানলো নাকি। রোদের হাসিতে আরো মুগ্ধতা বিরাজ করলো। শিশির প্রশ্ন করলো ” হাসতিছিস কেন এভাবে পাগলি” রোদ উওর করলো ” তোমার বোকা বোকা প্রশ্ন শুনে হাসছি পাগল ” শিশির প্রতিউত্তরে হাসলো শুধু কিছু বললো না। রোদের পায়ের তালু দুটো আলতো করে নিচে নামিয়ে পেছনে ঘুরলো। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুড়িটা থেকে কি একটা হাতড়ে আবার এ মুখে ঘুরে রোদের পা জোড়া আঁকড়ে ধরলো শিশির। রোদ সেসময় বেখেয়ালে ছিলো। শিশির কখন তার পা ধরছে কখন ছাড়ছে এতো এদিকে মন দেবার সময় যেনো ছিলো না তার। শিশির রোদের বা পায়ে রুপার পায়েল টা পড়িয়ে দিতে দিতেই বলে উঠলো” হ্যাপি বার্থডে মাই বিউটিফুল সিনড্রেলা..!” কথাটা কানে পৌঁছাতে দেড়ি নেই তার আগে কুনো ব্যাঙের মতো লাফিয়ে উঠে,বসে পড়লো রোদ। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখতে থাকলো তার পা জোড়া। যার একটাতে জ্বলজ্বল করছে একটা রুপোর পায়েল! চোখ বড় করে শিশিরের দিকে তাকাতেই রোদের কোলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়লো শিশির। রোদের নাক টা টেনে দিয়ে বললো” পছন্দ হয়েছে তোমার” রোদ যে এখনো হতভম্ব। তার মানে শিশির সাহেবের খেয়াল আছে আজ যে তার রোদরানির জন্মদিন! বাহ বা খাটাস মশাই তলে তলে এতো রোমান্টিক আগে জানা ছিলো না তো! মুগ্ধ দৃষ্টি ছুঁড়ে রোদ বললো,
– শিশির তুমি জানতে আজ আমার!
– of course এতে না জানার কি আছে। প্রতিবার হয়তো উইশ করার সময় পেতাম না কিন্তু গিফট তো তোমার কাছে ঠিক পৌঁছে দিতাম!
লজ্জাসূচক হেঁসে দিয়ে রোদ শিশিরের মুখের দিকে ঝুঁকে এসে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে বললো” হ্যা আগের বার কি পাঠিয়েছিলেন, একটা বার্বিডল! মানে সত্যি। তুমি ভাবলে যে আমি এ-ই এতো বড় হয়ে বার্বিডোল নিয়ে খেলবো,বেকুব একটা। শিশির উঠে সামনের বালিশ টায় শুইয়ে পড়লে রোদ এসে শিশিরের বুকের কাছে শুইয়ে নিতেই শিশির রোদের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে”
-আমি কি কিনেছি নাকি,হিয়া বললো বলে না”
– হ্যা হিয়া না হয় বাচ্চা ওর ওসব ভালো লাগতেই পারে তাই ও বললো তুমিও তাই আমার জন্য কিনে নিলে।
-হ্যা ঔ এক জিনিস বলে বলে বারবার লজ্জা দিতে হবে না। বুঝেছি আমি।
– তুমি যে কি বুঝছো,সেটা একমাএ তুমি’ই ভালো জানো।
রোদকে বুকের মধ্যে উল্টে পাল্টে জড়িয়ে নিয়ে শিশির বললো” হ্যা রে পাগলি হ্যা সব বুঝছি”
রোদ দম ফেলে বললো” আহা কি ওজন তোমার শিশির,আমার চুলল” শিশির হাতের নিচে থাকা রোদের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে উপরে ভাঁজ করলো,রোদকে নিজের বুকের ভেতর জাপ্টে ধরে বললো” এটুকু ওজন নিতে পারিস না,সামলাবি কেমন করে বাকি টা জীবন আমায়” রোদ শিশিরকে আরো শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো” কেমন করে কি সামলাবো,সব দেখতে পাবে,সময় আসুক!
– তুমি যে এখন এভাবে আমার সাথে আছো এটা,বাড়িতে জানলে কি হবে কোনো ধারণা আছে তোমার।
– বাড়িতে বলতেই বা যাবে কে?
– হুম কিছু যদি ভূলভাল করে বসি আমি। লোভ তো দেখাচ্ছো সেই পর্যায়ের।
হেঁসে ফেললো রোদ। হেঁসে দিয়েই বললো।
– আমি লোভ দেখালেই তোমাকে লোভ পেতে হবে। অবশ্য তুমি যদি…
রোদকে আর বলতে না দিয়ে বুকের ভেতর রোদের মাথা টা শক্ত করে চাপিয়ে ধরলো শিশির। রোদের মাথায় চুমু এঁকে বললো,
– না রোদেলা। আমি তোমাকে কখনো গ্রহন করলে সেটা হালাল ভাবেই গ্রহন করবো। এভাবে না…।
রোদ শিশিরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– সত্যি তুমি একটা নিরামিষ শিশির।
হেঁসে দিলো শিশির। নিরামিষ! আচ্ছা হোক তাই সই। অনেকটা সময় নীরব থাকার পর শিশির রোদের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বললো,
– আচ্ছা রোদ ধরো আজ যদি আমার অনেক টাকা থাকতো তুমি আমাদের ঘরের জন্য আগে কোন জিনিসটা বানাতে?
– বুঝলাম না কি বললে আরেকবার বলো?
– না জাস্ট ইমাজিন আমরা এখন একটা সংসারে আছি। সাপোস ধরো এটাই আমাদের সংসার এটাই আমাদের থাকার ঘর এরকমই অগোছালো ছন্নছাড়া।
– ওকে ধরে নিলাম এরপর।
– এ্যান্ড দা মিন টাইম আমার একটা বিশাল চাকরি হলো বা কোনো সোর্স থেকে আমার অনেক টাকা আসলো তখন তুমি আমাদের ঘরের জন্য আগে প্রথম কোন জিনিস টা কিনতে?
– বাহ বা শিশির আহমেদ কোনো আলাদীনের জিনির দেখা পাইছে নাকি হঠাৎ।
– যা পাগলি ফাজলামো করিস না আমি সত্যি সত্যি জানতে চাইছি তোর কাছে।
– ওক্কে ওক্কে। বলছি। ফাস্টে ফাস্টে ফাস্টেএএ তো হু আগে একটা তিন পাল্লার বড় আলমারি বানাতে দিতাম।
– খাট রেখে আগে আলমারি!
– হু নিচে ঘুমোতে না আমার কোনো সমস্যা নেই। কারন বেড তো এতো বেশি অগোছালো হবে না না। কিন্তু তোমার এ-ই যেখানে সেখানে কাপড়চোপড়, বিশ্বাস করো খুব রাগ লাগে আমার। তুমি দেখো না আমি কতো গুছানো। আমার না জিনিস এদিক থেকে ওদিক গেলেই মাথা গরম হয়ে যায় তুমি জানো না।
– হুম এইটুকুনি একটা মাথা তার আবার গরম হয় কি।
– হে হে..আচ্ছা বলো না কেনো জানতে চাইলে হঠাৎ এইসব।
– না। এক জায়গা থেকে কাঠ পাবার কথা তাই জন্য বললাম।
– এমনি এমনি কাঠ দিয়ে দিবে তোমাকে!
– ধুর বোকা না। কিনতে হবে।
– কিন্তু তুমি এতো টাকা কোথায় পাবে।
– তোকে ভাবতে হবে না। আর কি লাগবে ম্যাডামের। তিনটে জিনিস বানাবো আপাতত। পরে আবার টাকা হলে বাকি টা।
– যদি টাকা হয় তাহলে আলমারির সাথে একটা খাট বানাবে। আর পারলে সোফা বানিয়ো একটা। আমাদের রুমে মানুষজন আসলে বসতে দেবো কোথায়।
– হুম। আর আয়না?
– এটা দিয়ে হয়ে যাবে তো। মুখ দেখা নিয়ে তো কথা নাকি।
!
!
বাসের সীটে পাশাপাশি বসে আছে উজান হিয়া। সূর্য এই কিছুক্ষণ আগে ডুব দিয়েছে। অন্ধকার নামছে নিভু নিভু। সাথে একটা গরম বাতাস। আর এই ক্লান্ত শরীর। মন তো চাইছে পাশের মানুষটার চাওয়া কাঁধটায় মাথাটা হেলে দেক হিয়া। কিন্তু ঝগড়া চলছে তো। হেরে গেলে চলবে না। উজান টাও বড্ড বেহায়াপনা করছে আজ। কি দরকার ছিলো ফেরার সময় ঔ রিমা কিমার জন্য এক্সট্রা দরদ দেখানোর। হিয়া জ্বলবে নাই বা কেনো। মেয়ে মানুষ। রাগ তো লাগবেই।
উজান একটু এদিক সেদিক দেখিয়ে নিলো ভালো করে। স্যাররা সব নিজেদের জায়গায় বসে আছো তো ঠিক মতো। হ্যা আছে। ওদিকে আসার সময় লতাদের যে গান বাজনার ঢেউ উঠছিলো তা যেনো ফেরার পথে ক্লান্তির চাপে পড়ে বিলীন হয়ে পড়লো। এদিকে এপাশের সীটে গা এলিয়ে ঘুমে বিভোর নীরব স্যার।এটাই সুযোগ। সবাইকে নিজ নিজ জায়গায় শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখে উজান হিয়ার দিকে চেপে আসলো। লম্বা পা জোড়া সামনে ঠেকিয়ে দিয়ে পকেট হতে ফোন বের করে ছাড়লো ” তোমার জন্য নীলচে তারায় একটুখানি আলো” সাথে নিজেও গুনগুন করতে করতে এক হাত হিয়ার পেছনে দিয়ে কোমড় জড়িয়ে এক টানে হিয়াকে নিজের কাছে এনে গা ঘেঁসে দিলো। কঠিন দৃষ্টি ছুঁড়ে উজানের দিকে ভূ কুঁচকে তাকালো হিয়া,ফিসফিস করে বললো” কি করছেন কি,ছাড়ুন আমাকে,আমি কিন্তু এখনো আপনার উপর রেগে আছি হ্যা,ধরতে মন চাইলে ঔ রিমাকিমার কোমড় গিয়ে ধরুন না,অনেক তুলতুলে ওনার কোমড়,যান যান গিয়ে ধরুন” উজান শয়তানির হাসি টেনে বললো ” সত্যি যাবো,আই নেভার মাইন্ড যদি তুমিইই” সপাটে উজানের কলার চিপে ধরলো হিয়া। চোখ বড় করে পাকিয়ে বললো” হ্যা যান এরপর আপনাকে আর আপনার ঔ সাধের রিমাকে যদি আমি এই চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে না ফেলেছি তো আমার নামো হিয়া না” মুচকি হাসলো উজান। ভেংচি এঁটে অন্য পাশে মুখ ফেরালো হিয়া। রাগান্বিত হিয়ার গালে গাল ঘষিয়ে ফু দিতে শুরু করলো উজান। বিরক্ত হয়ে গিয়ে হিয়া বললো” আপনার দাঁড়ি গুলো লাগে তো,ইসস কি বিশ্রী কাটার মতো” হিয়ার গালের সাথে আরো জোড়ে গাল ঘষতে শুরু করলো উজান। মনে তো হচ্ছে যেনো আজ হিয়ার এ-ই তুলতুলে গালে দাঁড়ির আঘাতে ছোট বড় অনেক গর্ত হ’য়ে যাবে,হু। পেছন থেকে লতার একটু উঁচু আওয়াজ আসতে হকচকিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসলো দুজন। না এদিকে লতার কাজ নেই সে তো পেছনে মেহুকে ডাকছে।
– আপনি বোঝেন না কিন্তু আমি বুঝি রিমা ম্যাডাম আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আর আপনি যে আমার দিকে এক্সট্রা করে কেয়ার নেন এটা উনি সহ্য করতে পারেন না।
– তোমাকে বলছে এসে উনি এসব।
– বলতে হয় না আমি একটা মেয়ে মানুষ। সব বুঝতে পারি। উনি কোচিং এও আমার সাথে কেমন একটা করে। আমি ভালো করলেও একটা না একটা খুত ধরে আমাকে বকাঝকা করে। কেনো আমি কি ওনার শএু।
– রিমা তোমাকে কেনো এমনি এমনি বকতে যাবে। নিশ্চয়ই কোনো বদমাইশি করো। পড়া দেও না ঠিক মতো।
– আমি আপনাকে বলছি আপনি তারপরো..ঠিক আছে করতে হবে না আমার কথা বিশ্বাস। আপনি রিমা আপুর কথাই বিশ্বাস করুন। আমি কে?
অভিমানে আর একটা কথা বাড়ালো না হিয়া। চুপচাপ শক্ত হয়ে জানালার সীকে হাত রেখে মাথা রাখলো। চোখ বুজে রইলো অনেক্ষণ। সাথে সেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া টপটপ চোখের পানি লুকানো গেলো না উজানের থেকে। উজান হিয়ার মাথায় হাত রাখতেই এক ঝাটকাতে সেই হাত সারিয়ে দিলো হিয়া। দু’হাতে মুখ ঢেকে চোখ বন্ধ করেই ঘুমিয়ে পড়লো চলন্ত গাড়ির স্রোতের টানে। আর ঘুমাতে গিয়ে অজান্তেই ঢুলে পড়লো উজানের কোলে। নিষ্পাপ হিয়াকে সুন্দর মতো কোলে শুইয়ে দিলো উজান। কিন্তু হিয়ার খোলা চুল গুলো যে মেয়েটাকে ঘুমাতে দিতে বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে। লতাকে উঁচু কন্ঠে ডাক দিতেই উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে ঝুকলো লতা। উজান বললো কারো ব্যাগে কোনো রাবার ব্যান বা কাকড়া থাকলে একটা দিতে। লতা মেহুর ব্যাগ থেকে একটা কাকড়া এনে দিলো উজানের হাতে। উজান বললো এখন বসো তুমি। লতা বসে যেতেই হিয়ার মাথার সব চুল গুলো পেঁচিয়ে একটা উপরে খোঁপা করলো উজান। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো” পাগলি একটা,কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো”
!
!
ঘুমন্ত হিয়াকে আলতো সুরে ডাকতেই কেঁপে গিয়ে উঠে বসলো হিয়া। চোখ পিটপিট করে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় কি করে ঘুমিয়েছিলো সে এতোক্ষণ। বুঝে আসতে লজ্জা পেয়ে করুন সুরে বললো” আমরা কি এসে গিয়েছি বাড়িতে? উজান হিয়ার এলোমেলো চুল গুলো দু’হাতে সুন্দর করে ঠিক করে গুছিয়ে দিয়ে বললো” হুম আর একটু,নেমে যাবো এক্ষুনি ” হিয়া মাথা নামিয়ে তার সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আবার মাথা রাখলো উজানের কাঁধে। ঘুম টা ভালো হয়নি যে তার,তারউপর বমির একটা হালকা আভাস আসছে। এখন গাড়ি থেকে নামতে পারলেই যেনো শান্তি। উজান হিয়ার বা হাতটা তার ডান হাতের ভাঁজে ভরে নিয়ে সেটাকে উপরে উঠিয়ে একটা চুমু খেলো। চোখ খুলে উজানের গায়ের সাথে আরো লেপ্টে বসলো হিয়া। দু’জনে মাথা ঠুকিয়ে দিয়ে একটা তপ্ত শ্বাস ফেললো,সারাদিনের ক্লান্তিতে এটা যেনো একটা অনেক বড় প্রশান্তি!
– স্যারদের সামনে কেউ কখনো স্যারের মাথার চুল এভাবে ধরে টানাটানি করে?
– সরিইই…কি বা করতাম বলুন,খুব রাগ লাগছিলো আমার৷ কতো কিছু করার পর গিয়ে ভাইয়া ফোন টা কিনে দিয়েছিলো এখন আমি কি করে..আপনি কেনো ভাঙ্গলেন আমার ফোনটা?
– তো তুমি কোন সাহসে অন্য ছেলের সাথে ছবি তুলো আর সেটা আবার আমাকে পাঠাও। মানে ফাজলামো সব তাই না!
– তো আপনি কি জেলাস হোন তাতে?
– জেলাস হবো না!
উজান বা হাত বাকিয়ে হিয়ার গাল ধরে হিয়ার মুখ টাকে আরো নিজের মুখের সামনে এনে দিয়ে বলে,
– তুমি শুধু আমার হিয়া। শুধু এই উজানের। তোমার সাহস হয় কি করে অন্য ছেলেকে আমার নজরে দেখার। ফাজিল একটা। মনে তো হচ্ছিল খু*ন করে ফেলি তোমাকে।
হিয়া একটা ভেংচি কেটে দিয়ে গাল থেকে উজানের হাত সারিয়ে দিয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলো,
– হ্যা ওসব তো মুখেই বলেন ঔজন্য তো আপনি ঔ রিমা আপুর জন্য এক্সট্রা এক্সট্রা দরদ দেখান। তখনো বললাম যে আমি বলছি আপু আমাকে হুটহাট বকা দেয়, রাগ করে তারপরো আপনি আমাকে বিলিভ না করে কি করলেন। জানেন আমি কতো কষ্ট পাইছি..আজকে খুব কষ্ট দিয়েছেন আপনি আমায়। না তো আমাকে সময় দিয়েছেন না তো একটু ভালো করে কথা বলেছেন,হ্যা মানছি স্যাররা ছিলো তাই বলে আমাকে ইগনোর করবেন,সব ঔ রিমা কিমার জন্য জানি তো আমি,আমি কি কি..
আর বলতে পারলো না হিয়া। তার আগে হিয়ার ছটফট চঞ্চল ঠোঁট জোড়াতে একটা বাইট বসিয়ে দিলো উজান। স্ট্যাচুর মতো থমকে গেলো হিয়া। কি হলো কেস টা!
চলবে….