চোখের_তারায়_তুই?#পর্ব_১৯

0
794

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১৯
#ইভা_রহমান

“ও আমার রসিয়া বন্ধুরে তুমি কেনো কোমড়ের বিছা হইলা না” হিয়াকে ক্লাসরুমের ভেতরে আসতে দেখেই লতাদের গ্যাং সেই উঁচু স্বরে গান টা গাইতে শুরু করলো। হিয়া চোখ পাকিয়ে লতাকে একটা ভেংচি এঁটে দিয়ে নিজের ব্যাগটা টেবিলে ঠাস করে ছুঁড়ে দিয়ে বসলো। লতারা আবার সুর তুলে গান চালু করতেই হিয়া রেগে গিয়ে বললো” একটু চুপ করবি কি লতা” লতা হিয়ার কোমড়ে কাতুকুতু দিতে দিতে বললো,

– কেনো গো,আমাদের নিরামিষ উজান স্যার নাকি কাল আপনাকে একটা কোমড়ের বিছা কিনে দিয়েছে শুনলাম।

– হ্যা দিয়েছে তোর সমস্যা। রাগ তুলিস না। এমনিতে নিতে আসতে বলে দশমিনিট আমাকে এই কড়া রোদে দাঁড়িয়ে রাখলো আর শেষে গিয়ে বললো আসতে পারছি না,ভাইয়া আটকে দিয়েছে। ভীতুর ডীম একটা।

– ওহ! তা বিছা কিনলি দেখালিও না। ফালতু।

– দেখিস,অনুষ্ঠানে যখন পড়বো তখন মন খুলে দেখিস।

– তা কি গানে নাচবি ঠিক করেছিস কিছু? বাঙালি শাড়ি পড়বো কিন্তু সবাই এবার।

– আর নাচ। ওপর লেভেল থেকে অডার আসছে না,বড় হচ্ছি,এখন নাকি বেশি নাচানাচি করে উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দেওয়া যাবে না।

– ওপর লে-ভে-লের অডার বলতে! উজান স্যার?

– আর আবার কে।

কথাটা ঝারি দিয়ে বললো হিয়া। ভয় পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেলো লতা। বুঝা গেলো হিয়া আজ খুব ক্ষেপে আছে। এই মেয়েকে আজ না ঘাটানোই ভালো। এদিকে মেহু হতাশার সুর টেনে বললো,

– দেখতে দেখতে সময় গুলো কতো দূত পেড়িয়ে গেলো না রে। আর কখনো এই কোচিং-এ এভাবে ক্লাস করতে আসবো না। কেমন জানি একটা ফিল হচ্ছে জানিস।

– তাও তো অনেকদিন আছে এখনো। চার পাঁচ মাসের মতো।শুনলাম তো টেস্টের পড়েও নাকি পরীক্ষার আগে অবধি ক্লাস চলবে।

– হুম। তবুও বা আর কতোদিন থাকবো।

লতা আহ্লাদের সাথে বলে উঠলো,

– একটা কাজ করলে কেমন হয়,আমরা সবাই মিলে টাকা তুলে স্যারদের কিছু গিফট করে দেই যাওয়ার আগে। স্যার,ম্যাডাম এরা সবাই তো একদম নিজেদের মানুষ ছিলো বল। কতো পুরোনো স্মৃতি আমাদের এখানে! সেই ক্লাস সেভেন থেকে পড়ছি সবাই।

হিয়া একরাশ আবেগ নিয়ে বললো,

– আইডিয়া টা কিন্তু সুন্দর। একটা ছোট্ট গেটটুগেদার হবে সবার সাথে ওদিন। হুম।

মেহু কিছু বলতেই সায়রা ম্যাম খাতা হাতে রুমে ঢুকে পড়লেন। আর কোনো গল্প তো হলোই না উল্টে সায়রা ম্যাম দিয়ে দিলেন অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরীক্ষা। কি আর করার দেও এখন এই পরীক্ষা নামক অত্যাচার। পরপর তিনটে ক্লাস শেষে ক্লান্তিকর শরীর নিয়ে লতাকে নিয়ে নিচে নামছিলো হিয়া। সেসময়ই বাহির থেকে কারো উঁচু কন্ঠ কানে পৌঁছাতে একটু থেমে গেলো হিয়া৷ এটা উজান স্যারের কন্ঠ না। হ্যা তো। কিন্তু উনি এভাবে কার সাথে কথা বলছে,কার কি হয়েছে! দূত পায়ে বাহিরে আসলো হিয়া। আর এসেই দেখলো উজান ফোনে কার সাথে জানি কথা বলছে যে ভয়ের কিচ্ছু নেই আমি আসছি। বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে সবাই আসছে..!!

উজান ফোন রাখতেই হিয়া উজানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,

– কার কি হয়েছে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন এখন। আপনাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেনো আজ?

– রোদের একটা এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে হিয়া। পেটের কাছে ইনজুরি হয়েছে অনেক। ব্লাড লাগছে ইমিডিয়েটলি। অনেক রক্ত বেড়িয়েছে।

রোদের কথা শুনতেই বুকটা ভরে আসলো হিয়ার। কি হয়েছে তার রোদ আপুর। এতো রক্ত বেড়িয়েছে। উজানের থেকেও বেশি অস্থির হয়ে পড়লো হিয়া। আর একটু হলে বুঝি কেঁদেই ফেলে মেয়েটা।

– আমি আমি দেবো রক্ত। আপুর কি গ্রুপ পজিটিভ না নেগেটিভ। আমার ও পজিটিভ,পজিটিভ হলে আমি দিতে পারবো।

– রোদের বি নেগেটিভ রক্ত হিয়া। আর তোমাকে এতো ভাবতে হবে না ওদিকে শুনলাম শিশির দিচ্ছে রক্ত।

– ভাইয়া দিচ্ছে ব্লাড! হ্যা ভাইয়ারতো ও নেগেটিভ তাহলে তো সমস্যা নেই না কোনো আর।

-না, কিন্তু পরে যদি আরো লাগে। তাই জন্য ভাবছি।

– আচ্ছা ভাইয়া আগে দিয়ে নিক। এরমধ্যে আমরা ম্যানেজ করে রাখি আরো।

– হুম।

– এখন আমরা রোদআপুর কাছে যাই। আমাকেও সাথে নিয়ে যান না প্লিজ।

– আচ্ছা আসো,উঠো বাইকে।

!
!

ক্লিনিকের বেডে ঘুমিয়ে আছে রোদেলা। ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে ভার্সিটির মুখে একটা বিরাট এ্যাক্সিডেন্ট হয় তার। পেটের কাছে কেটে গিয়ে অনেক কয়েকটা সেলাই পড়েছে। রক্ত দেওয়া সেই প্রথমেই শেষ। এক ব্যাগ ফ্রেশ রক্ত লাগতো যেটা সেই মুহুর্তে শিশির বিনাদ্বিধায় দিয়ে দিয়েছে। অপারেশনের প্রায় এক ঘন্টা পেড়িয়ে গেছে। ডাক্তার রোদকে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। উজান অবশ্য এই খবরটা একদম দেড়িতে আর শেষে গিয়ে পায়…..রোদের কেবিনে এ-ই মুহুর্তে উপস্থিত আছে রোদের মা সাথে উজানের মা। তাদের সামনে থাকতে অনেক সংকোচ’ই বোধ হচ্ছিলো শিশিরের। ভাগ্যিস তাসফিয়া সহ রাকিব ছিলো এতক্ষণ এখানে। কিন্তু তারা চলে যেতেই একা হ’য়ে পড়লো শিশির। এদিকে রোদকে ছেড়ে চলে আসতেও কষ্ট হচ্ছিলো তার। উজানো তো এখনো আসলো না কখন কিসের দরকার পড়ে। এরা দুজন মহিলা মানুষ কি থেকে কি করবে। রোদের যদি কোনো সমস্যা হয়! অস্থির শিশির পায়চারি করছে কেবিনের বাহিরে। রোদের মা বা উজানের মা তাকে নিয়ে কি ভাবছে এ বিষয়টা তাকে ভাবাচ্ছে না বরং রোদের কখন ঘুম ভাঙ্গবে কখন তার রোদ তার বিশাল চোখের ঘন পাপড়ি যুগল পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তাই যেনো মূখ্য এখন তার কাছে।

কিছু সময়বাদে একটা নার্স এসে বললো এই কিছু মেডিসিন ডাক্তার নিচ থেকে নিয়ে আসতে বললো পেশেন্টের ঘুম ভাঙ্গলেই তার স্যালাইনের সাথে ইনজেক্ট করতে হবে। বিলম্ব করলো না শিশির। স্লিপ হাতে নেমে পড়লো রিসিপশনের ঔষধ কাউন্টারে। বলে দেওয়া ঔষধ গুলো নিয়ে কেবিনের দিকে আসতেই একটা জায়গায় থেমে গেলো শিশির। রোদের মা আর উজানের মা’র কিছু কথা কানে পৌঁছালো তার যেগুলো হজম করে মেনে নেওয়া ছিলো সত্যি অনেকটা যন্ত্রণার,

– আমি তো তোমাকে বলছি মেহরিন শিশির টাকা নিবে না। অহেতুক কি দরকার আছে টাকা দেবার।

– তুমি বুঝো না বড় ভাবী। রক্ত দিয়েছে বিনিময়ে টাকা তো চাইবে স্বাভাবিক।

– তোমাকে কি ও এসে বলেছে যে ওর টাকা চাই।

– বলতে হয় না ভাবী,বোঝা যায়। দেখলে না রোদের তো আরো দু’জন বন্ধু ছিলো সাথে,ওরা চলে গেলো,তা এ আবার কিসের জন্য আছে। নিশ্চয়ই টাকার জন্য।

– হ্যা ঠিক আছে। তাই বলে এভাবে।

-আর অনেক ঔষধপএ তো কিনলো,সেগুলোরো তো টাকা চাইতে পারছে না,বুঝছি তো আমি। তুমি বরং এই পাঁচ হাজার টাকা টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলো কিছু কিনে খেয়ে নিতে। এতিম বাচ্চা ওরা আমরা যদি সাহায্য না করি চলবে। ক টাকাই বা রোজগার করে ওর ঔ মামা না চাচার দোকান হতে।

আর কিছু কানে ঢোকাতে পারলো না শিশির। রোদের মা’র কথা গুলো পুরো শরীরকে নাড়িয়ে দিলো যেনো। শিশির কি না রক্তের বদলে টাকা নিতে এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এ-ই কথাটা উনি মনে আনলো কি করে। একটা বড় শ্বাস টেনে রোদের কেবিনে গিয়ে দাঁড়ালো শিশির। দেখলো কেবিন পুরো ফাঁকা আছে। ঔষধভর্তি পলিব্যাগ টা রোদের মাথার সাইডে রেখে রোদের দিকে আলতো করে ঝুঁকে আসলো শিশির। রোদের মায়ামাখা মুখটার দিকে তাকাতেই চোখ ভরে আসলো তার। ঘুমন্ত পরী যেনো একটা তার রোদরানি। চোখ গড়িয়ে এক ফোঁটা লোনাজল এসে পড়লো রোদের মুখে। সেই লোনাজল পড়া মুখের উপর তপ্ত এক শ্বাস ফেললো শিশির। রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে রোদের কপালে একটা স্নেহের পরশ এঁকে নিজ মনে বললো” তোকে রক্ত দিয়েছি টাকার বিনিময়ে না রোদেলা,দিয়েছি তো নিজের অস্তিত্বটা টিকিয়ে রাখতে”

কেবিন থেকে বেড়িয়ে সোজা নিচে নেমে আসলো শিশির। চোখ টা মুছে গেটের বাহিরে পা রাখতেই হিয়া সহ উজান এসে দাড়ালো তার সামনে।

– তুই চলে যাচ্ছিস শিশির?

– হ্যা,অনেকক্ষণ হলো,আর ওদিকে দোকান ওভাবে ফেলে রেখে আসছি।

– ওহ! উপরে কে আছে এখন,সিয়াম আসেনি এখনো?

– না তবে তোর মা আর চাচি আছে।

– আচ্ছা। এমনি ডাক্তার আর কি বললো,আর কোনো ভয়ের কিছু নেই তো?

– না তবে সেলাইে যাতে কোনোরকম ইনফেকশন না হয় সেদিকে খুব ভালো করে লক্ষ্য দিতে বলেছে। তুই তো যাচ্ছিস। একটুপর ডাক্তার আবার ভিজিটে আসবে তখন না হয় আরেকবার কথা বলে নিস।

– আচ্ছা ঠিক আছে। তা তুই এখনি চলে যাবি আর কিছুক্ষন থাক।

– না রে জরুরি না হলে তো থাকতামই….আয় হিয়া।

হিয়া চোখ পাকিয়ে বললো,

– কোথায় যাবো আমি আবার। আমি তো রোদ আপুকে দেখবো বলে এসেছি। তুই যা। স্যার এখন আমাকে পরে বাড়িতে দিয়ে আসবে।

– না,তুমি চলো আমার সাথে।

– আশ্চর্য তো আমি তোর সাথে এখন দোকানে গিয়ে কি করবো,আমি রোদ আপুকে দেখবো না।

– রোদ এখন ঘুমাচ্ছে হিয়া। উঠলে আসবো এখন আমরা।

– না আমি এক্ষুনি আপুকে দেখবো মানে এক্ষুনি দেখবো। স্যার আপনি কিছু বলেন না ভাইয়াকে।

– হিয়া কথা শোন আমার। উপরে রোদের বাড়ির লোক আছে,উজানো আছে এখন। তোর আর গিয়ে বিরক্ত করার কোনো দরকার নেই।

– আমি বিরক্ত কি করলাম আবার। আমি তো শুধু রোদ আপুকে….

– তুই আমার মুখের উপর তর্ক করছিস হিয়া।

– আরে আমি তো..

আর কিছু বলার আগে চোখ বড় করে তাকালো শিশির। ভয়ে চুপসে গেলো হিয়া। একদিকে রোদ আপুকে দেখার জন্য মনটা ছিঁড়ে আসছিলো তার উল্টোদিকে ভাইয়ের এই রক্তবর্ণ লাল লাল চোখ। দমে গিয়ে ভাইয়ের হ্যা তে হ্যা করতে হলো হিয়াকে। হিয়াকে মন ছোট করতে দেখে উজান ফিসফিস করে বললো” যা-ও বাড়ি,রোদ উঠলে এখন আমি ভিডিওকলে কথা বলে দেবো” মৃদু হাসলো হিয়া। কোথায় সামনাসামনি দেখা আর কোথায় ভিডিওকলে। মন খারাপ করে শিশিরের সাথে বাড়িতে আসলো হিয়া। মুখ ফুলিয়ে একটা কথা বললো না আর শিশিরের সাথে। খুব তো বললো দোকানে নাকি জরুরি কাজ তাই জন্য চলে আসছি। তা দোকান না গিয়ে বাড়িতে কি তার,হু!

!
!

রাত তখন দশটার কিছু পর। ঘুম ভেঙেছে রোদের। ভাইয়ের সাথে হালকা পাতলা কথাও বলছে এখন। ব্যাথা আছে অনেকটা। কিন্তু সহ্য তো করতেই হবে কি আর করার।

– ভাই শিশির আসেনি না আমাকে দেখতে?

– ধুর পাগলি, শিশির’ই তো তোকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছে আজ।

– আমার রক্ত শিশির দিয়েছে?

– হুম,

– তা থাকতো আমার জন্য কিছুক্ষণ। আমি ওকে একটু দেখতাম।

উজান রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

– ছিলো তো অনেকক্ষণ। তুই তো ঘুমিয়েছিলি না। আর দোকানে তো জানিস ওকে ছাড়া হয় না। জরুরি দেখে গেলো।

– ওহ! কিন্তু আবার রক্ত দিয়ে দোকান করার কি দরকার ছিলো। দেখবি এই আমার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে দুপুরের খাবার টাই আজ খায়নি।

– হুম,,আচ্ছা তুই এখন কথা বলতে পারবি একটু,হিয়া সেই সন্ধ্যা থেকে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তোকে দেখার জন্য। আমি ভিডিও কল দিচ্ছি একটু কথা বল,

– তা ওকে নিয়ে আসতি সাথে করে। আমার সাথে থাকতো।

– না রাত হয়েছে না তাই নিয়ে আসলাম না। দেখি ধর,ধরে কথা বলে আমাকে দিস।

উজান ভিডিওকল দিতেই বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো হিয়া। এতোক্ষণ ধরে এই কল টার জন্যেই তো ছটফট করছিলো সে। রোদ কেমন আছে জিজ্ঞেস করার আগেই শিশিরের নামে অর্ধেক বিচার দেওয়া শেষ তার। কি করে তার ভাই তাকে তার প্রিয় রোদ আপুর কাছে পাঠাতে বাঁধা দিয়েছে থেকে শুরু করে রাজ্যের নানা গল্প। এদিকে হিয়ার এই ননস্টপ কথায় বিরক্ত হয়ে গেলো উজান। একটা মানুষ ময়নাপাখির মতো অবিরাম কি করে এতো কথা বলতে পারে। হাউ। রোদের হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে হিয়ার দিকে তাকাতেই ভূ কুঁচকে আসলো উজানের। হিয়া,ওড়না ছাড়া এভাবে। এক বিভৎস ঝারি দিয়ে উজান বললো” গায়ে ওড়না কোথায় তোমার হিয়া” চোখ বড় করে নিজের দিকে তাকিয়ে উঠলো হিয়া। হেই রে সত্যি তো। গায়ে ওড়না কোথায় তার। আর সে কি না এভাবে। আমতাআমতা করে হিয়া বলে উঠলো” আসলে আপনি হুট করে ফোন দিয়েছিলেন না,আর আমি তো অনেক্ষণ ধরে এই কলটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তাই জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভূলে” গলাটা আরো গম্ভীর করে উজান বললো” হ্যা,এভাবেই থাকো এখন,শিশির আসুক,চাচ্চু আসুক,ভালো লাগবে তো তখন” রাগে ফোন রেখে ওড়না নিয়ে এসে মাথা গা ঢেকে বসলো হিয়া,রাগ ঝেরে বললো” হয়েছে শান্তি এখন” মৃদু হাসলো উজান। হিয়া কিছু বলতে যাবে ওমনি শিশির এসে হিয়ার ফোন কেঁড়ে নিতেই আআ করে চিৎকার করেও করতে পারলো না হিয়া। এখনো ভাইয়ের চোখ বড় বড় তার। কাঁদো কাঁদো মুখ করে হিয়া বললো,

– তুই এতো খারাপ কেন ভাই,দেখতিছিলি আমি রোদ আপুর সাথে কথা বলতিছিলাম সহ্য হচ্ছিলো না না তোর।

– না হচ্ছিল না। মেয়েটা অসুস্থ তারপরো কোন সেন্সে ওকে দিয়ে তুই এতো কথা বলাচ্ছিস। আর একটা কথা আমি বুঝি না ইদানীং উজানের সাথে কি এতো তোর। ওকে বিরক্ত করিস কেনো এতো? ও তোর মতো না। ও অনেক পড়াশোনা করে। অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।

– আরে আমি কখন সাদা বিলাইকে বি বি …না মানে উজান স্যারকে বিরক্ত করলাম?

– তুই যে কি করিস সব জানা আছে আমার। সারাদিন একে ওকে সবাইকে বিরক্ত করে ছাড়ে। ফাজিল একটা।

– আরে আমি কি ফাজলামো করলাম আমি তো শুধু..

আর কথা বাড়াতে পারলো না হিয়া। ভাই যে ক্ষেপে আছে এখন আর তর্ক না করাই যুক্তিযুক্ত।

!
!

আজ দুক সপ্তাহ পরঃ

এই মাঝরাতে রাএি বারোটার সময় উজানের বায়না মেটাতে মিথ্যে বলে সদর দরজার বাহিরে আসতে হলো হিয়াকে। মাথার কাপড় টা ঠিক করে দিয়ে মুখ ঢেকে এদিকে সেদিক তাকিয়ে উজানের কাছে আসতেই রাগ ছুড়লো হিয়া। মাঝরাতে এটা কোন ধরনের বায়না শুনি!

– আপনি তো নিজে ভাইয়ার হাতে খু*ন হবেন হবে,সাথে আমাকেও ফাঁসিয়ে দিয়ে যাবেন।

– সরিইইই। কি বলে বের হলে,শিশির আসবে না তো আবার এদিকে?

– জানি না। আর বললাম যে কোচিং-এ নোটস ফেলে রেখে আসছি ওটা দিতে আসছে স্যার,কাল কলেজে পরীক্ষা আছে।

– ছিঃ হিয়া। এতো মিথ্যা বলো নিজের ভাইকে তুমি। একটা ইবাদতো তোমার কবুল হবে না দেখিয়ো।

– তবে রে। আমার কথা আমাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। আমি মিথ্যা কার জন্য বলছি,আপনার জন্য বলছি,আপনার এ-ই রাত দুপুরের আবদার মেটাতে বলছি। আর আপনাকে দেখুন।

– আচ্ছা আচ্ছা, থামো একটু এখন__দেখি ওদিকে ঘোরো তো একটু!

– কেনো মুখ দেখে মন ভরেনি যে পেছন দেখতে চাইছেন।

ভূ কুঁচকে হিয়াকে পেছনে দাঁড় করিয়ে মাথার ওড়নাটা এক টানে খুলে ফেললো উজান। এ-ই মেয়েটা এতো কেনো পকপক করে। বলছি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে। তারপরো শুনছে না। স্টুপিড একটা।

– কি হলো আর কতক্ষণ দরজার দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকবো। জলদি করুন না কি করবেন..?

উজান হাত বাড়িয়ে হিয়ার গলায় একটা সুন্দর পেন্ডেন্ট পড়িয়ে দিতে থমকে গেলো হিয়া। এটা কি! সুন্দর তো। কি সুন্দর জ্বলজ্বল করছে। মুখ ঘুরে তাকালো হিয়া। এক ফালি হাসি টেনে বললো” এ-টা কি,কি-সের জন্য” উজান হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে বললো ”

-শুভ জন্মদিন হিয়া।
– স্যার আপনি!

– হুম,

– আপনি এ-ই রাতে আমাকে উইশ করতে!

– হুম,পছন্দ হয়েছে এটা?

– হ্যা কিন্তু,আমি এটা নিলে ভাইয়া অনেক রাগ করবে। আমি এটা কি করে নেবো বলুন।

– কিচ্ছু বলবে না শিশির। ওকে দেখানোরই বা কি দরকার। আর যদি দেখেও বলে দেবা আমি দিয়েছি,দেখবা কিচ্ছু বলবে না।

– না ভাইয়া রাগ হয় ইদানীং খুব। আপনি উইশ করেছেন এটাই এনাফ আমার জন্য কিন্তু এসব।

হিয়া আর কিছু বলতে যাবে ওমনি শিশির এসে উপস্থিত তাদের সামনে। শিশিরের উপস্থিতি টের পেতেই যত দূত সম্ভব নিরাপদ দূরত্ব বজায় নিলো হিয়া আর উজান। শিশিরর প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে উজানের সামনে এসে দাঁড়াতেই উজান হিয়ার হাতে একটা বক্সের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো,

– এটা তোমার জন্য। রোদ পাঠালো।

– কি এটা!

– তোমার জন্মদিন দেখে কেক বানিয়েছিলো। আমাকে বললো তোমাকে গিয়ে দিয়ে আসতে। তাই আর এ-ই যে তোমার নোটস।

– রোদেলা হিয়ার জন্য এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কেক বানালো। তুই নিষেধ করতে পারলি না কেনো। আশ্চর্য।

– তুই তো রোদের জীদ জানিসই। মানা করলে ও শুনে।

– তাই বলে এই অবস্থায়।

– আরে ওহ এখন অনেকটা সুস্থ আছে। হাঁটাচলা করছে। তুই এতো ভাবিস না।

শিশিরের রাগ উঠলেও চুপ করে সেটা নিজের মধ্যেই ডেবে দিলো সে। উজান বললো যাবি না-কি চা খেতে মোড়ের দোকান খোলা আছে এখনো দেখলাম। শিশির সম্মতি দিয়ে বললো ঠিক আছে একটু দাঁড়া আমি ফোন টা নিয়ে আসি। এ-ই বলে হিয়াকে নিয়ে ভেতরে আসতেই হিয়া শিশিরের হাতে সব ধরিয়ে দিয়ে বললো” ভাই এক মিনিট, তুই গিয়ে ফোন টা নিয়ে আয় আমি আসছি” এক দৌড়ে উজানের দিকে তেড়ে এসে এপাশ ওপাশ উপর নিচ তাকালো হিয়া,না আশেপাশে কারো জানালা খোলা নেই। একহাতে উজানের বাহু টেনে আরেক হাত রাখলো উজানের ডান গালে। আর শক্তপোক্ত হাতে উজানের বা গালে একটা ইয়া বড় চুমু এঁকে দিয়ে বললো”Thank youuuuu সাদাবিলাই”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here