?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_২০
#ইভা_রহমান
আজ দু চারদিন হলো উজানের ফ্যামিলির সবাই ঢাকাতে গিয়েছিলো ওদের এক কাজিনের বিয়ে খেতে। বিয়ে খেয়ে সবাই ফিরে আসলেও উজানকে ঢাকাতে থেকে যেতে হয় তার বাবা-র কিছু বিজনেস রিলেটেড কাজের জন্য। যার ফলস্বরূপ কিছুদিন যাবৎ হিয়ার সাথে তার না আছে চোখের দেখা না আছে রাতবিরেতে চলা ফোনাআলাপ। উজান তো চেয়েছিলো বিয়ে টা খেয়েই ঔ রাতে রওনা দিয়ে ফিরে আসুক সে তার হিয়া পিচ্চির কাছে কিন্তু ঔ যে পরিবারের বড় ছেলে তাকে উপস্থিত থাকতেই হবে আর তো আছে সাথে তার বাবার কড়া হুকুম!
!
!
সকাল সকাল রোদের কাছে পড়তে এসেই আঁটকে পড়েছে হিয়া। পড়া শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে হিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বসিয়ে বসিয়ে হিয়াকে দিয়ে মেহেদী পড়িয়ে নিচ্ছে রোদ। রোদ তো এ-ই রান্নাবান্না ঘরের যাবতীয় সব কাজ অনেক সুন্দর ভাবেই সুনিপুণ হাতে করতে পারে কিন্তু এই মেহেদী দেওয়া টা আর কোনোভাবেই হয়ে ওঠে না তার। আর উল্টেদিকে আর কিছু পারুক আর না পারুক মেহেদী পড়িয়ে দিতে হিয়ার জুড়ি মেলা ভার। চাঁদ রাতে লতা মেহু সহ এলাকার অনেকেই আসে হিয়াকে দিয়ে মেহেদী পড়িয়ে নিতে। সেদিন যেনো সবার আনাগোনাতে ইদের আগেই ইদ শুরু হ’য়ে যায় বাড়িতে।
– উজান স্যার আর কবে ফিরবে রোদ আপু,দুদিন তো হয়েই আসলো।
– খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি ভাইকে?
– তা না। আসলে কি বলো তো ওনার সাথে তো রোজ কিছু না কিছু কারনে দু’মিনিটের জন্য হলেও আমার দেখা হয়। কথা না হোক কিন্তু ঔ চোখের দেখা টাই তো অনেক বলো। তাই জন্য দুদিন থেকে কিরকম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কিছুটা।
– তো কথা বলে নে ফোনে কিছুক্ষণ।
– উনি যে কাজে গিয়েছে,বলেছে ফ্রী হলে উনি নিজে থেকে ফোন করবে।
– তাহলে আর কি করার,ছবি দেখ না হয় উজানের।
– ছবি দেখি তো,খারাপ লাগলেই দেখি…আচ্ছা রোদ আপু তুমি বিয়ে করবে কবে? আমাকে তোমার বিয়েতে দাওয়াত দিবে?
– ধুর পাগলি তোকে ছাড়া বিয়ে হবে আমার। আর কবে বিয়ে করবো সেটা তো তোর ভাইয়ার উপর ডিপেন্ড করছে না। উনি যেদিন করবে সেদিন না হয় আমিও করবো।
রোদের কথার অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে ব্যাঘাত ঘটালো হিয়ার। না বুঝেই বললো,
– ওহ! জানো আপু আগে না আমি একটা সময় খুব চাইতাম তুমি আমার ভাবী হয়ে আমার বাড়িতে আসো। তোমার মতো একটা সুন্দর পুতুলের মতো বউ হোক ভাইয়ার।
– তো এখন আর চাস না!
– না মানে চাই। কিন্তু তোমার সাথে তো ভাইয়ার বিয়ে হবে না। তুমি কি আর ভাইয়াকে পছন্দ করো। তোমার তো তোমার মতো একটা সুন্দর বর হবে দেখিও।
– কেনো তোর ভাইয়া কি হ্যান্ডসাম না।
– হ্যান্ডসাম তো। ভাইয়া যখন ব্ল্যাক শার্ট পড়ে সানগ্লাস টা চোখে দেয় না,ভাইয়াকে না তখন পুরো হিরো হিরো লাগে জানো। হেব্বি দেখতে লাগে। আমার উজান স্যারো তখন পাওা পায় না ভাইয়ার সামনে।
– হুম শিশিরকে ব্ল্যাক অনেক স্যুট করে।
রোদ আর কিছু বলতে গিয়েই হালকা করে কেশে উঠলো। মনে হলো গলায় কিছু একটা বাঁধা দিলো তার। হিয়া বললো পানি দেবো। রোদ কাশতে কাশতে বললো হু। কিন্তু পানি তো ডাইনিং এ আছে। হিয়া বললো তুমি বসো মেহেদী হাতে উঠতে হবে না তোমাকে। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি। রোদ বললো” যাবি,তাহলে যা গিয়ে নিয়ে আয়,আমি আর মেহেদী হাতে না নামি” হিয়া মুচকি হেঁসে দিয়ে ডাইনিং এ পা রাখতেই দেখলো আজ বাড়ি মানুষ দিয়ে ভরা। ডাইনিং এর একপাশের দিকে বসে উজানের মা সবজি কুটছে তো আরেক দিকে বসে রোদের মা চা পানি খাচ্ছে। একটু ইতস্তত হলো হিয়া। কিন্তু উজানের মায়ের মুখের হাসি দেখে জড়তাটা কাটিয়ে উঠে সামনে এসে দাঁড়ালো সে। উজানের মা সবজি কূটতে কূটতেই বললেন,
– কিছু লাগবে মা তোমার?
– হ্যা আন্টি একটু পানি নিতাম,রোদ আপু খাবে।
– ওহ আচ্ছা, তা নিয়ে যা-ও। কি করছে রোদ মা ওদিকে,মেহেদী দেওয়া হয়নি এখনো?
– আর একটু বাকি আছে আন্টি। এ-ই তো হ’য়ে যাবে।
উজানের মা মাথা নাড়িয়ে পানির জগটা বাড়িয়ে দিলেন। হিয়া এসে একটা গ্লাসে পানি ঢেলে নিতেই রোদের মা বলে উঠলেন,
– হিয়া না তোমার নাম?
হিয়া এক ফালি হাসি টেনে দিয়ে বললো,
– জ্বী আন্টি।
– হ্যা দেখি তো পড়তে এসে রোদের সাথে অনেক সময় কাটাও মাঝেমধ্যে। তোমার ভাই আছে না কি যেনো নাম।
– জ্বী শিশির,শিশির আহমেদ।
– হ্যা। সেদিন রোদকে রক্ত দিয়েছিলো তোমার ভাই। আমি অবশ্য ভাবীকে বললাম তোমার ভাইয়ের হাতে কিছু টাকা দিতে পরে যে তোমার ভাই কোথায় চলে গেলো। যাগ আজকে নিয়ে যাইও তো তুমি টাকা টা। কাজে লাগবে তোমাদের অনেক।
– আমি কিছু বুঝলাম না আন্টি। টাকা রক্ত। মানে কিসের টাকা?
– রক্ত দিয়েছে তার টাকা টা। আর হ্যা ভালোই হলো তোমাকে দেখে,ভাবী সেদিন ঔ পুরাতন জামাকাপড় গুলো কোথায় রাখলে। ভালোই তো ছিলো সব। ওখান থেকে একে না হয় কিছু দিয়ে দিতে।
মনটায় একটা অজানা খারাপ লাগা এসে বিরাজ করতে শুরু করলো হিয়ার। রোদের মা এভাবে কেনো কথা বলছে তার সাথে। উনি কি হিয়াকে আর শিশিরকে এতোই নিচুস্তরের ভাবে। কোথায় রোদেলা তো কখনো এভাবে কথা বলেনি তাহলে আজ কেনো তার মা তাকে এভাবে। নিজেকে সামলে নিয়ে হিয়া সৌজন্যতার সাথে বললো,
– আমার এসব কিছু লাগবে না আন্টি। আমার অনেক জামা আছে। পুরো এক আলমারি ভর্তি। সেদিনো ভাইয়া নতুন দুটো জামা এনে দিলো। ওগুলোই এখনো পড়িনি।
রোদের মা একটা ভাব নিয়ে কপাল উচু করে বললেন ঠিক আছে না নিলে আর কি তোমাদের ঔ পাঁচটা জামা আমাদের একটা জামার সমান তাই জন্য বললাম আরকি। হিয়া একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে পিছন ফিরে এক পা ফেলতেই রোদের ভাই সিয়াম এসে উপস্থিত হিয়ার সামনে। মুখে এক বিরাট হাসি টেনে নিয়ে সিয়াম ব্যাঙ্গাত্বক সুরে চেয়ারে বসতে বসতে বললো
– আরে বড় ভাবী যে দেখছি,বিয়ের আগেই বাড়িতে ওত পাতিয়ে বসে আছে। তা ভাবীজান বাড়িতে আসলে একটাবার এ-ই ছোট দেবরটাকে খবর দিলে না।
থমকে গিয়ে পেছন ফিরে তাকালো হিয়া। কিসব বলছে সিয়াম। তাহলে কি সিয়াম জানে যে হিয়া উজান একে অন্যের সাথে..!!
– কিসব বলছিস সিয়াম। বড় ভাবী মানে!
– কেনো বড় আম্মু তোমার ছেলের কীর্তি আর তুমি জানো না। আশ্চর্য!
– কি জানবো?
– কেনো ভাবী তোমার ছেলেকে তো শুনলাম হিয়ার সাথে নাকি কিছু হচ্ছে তার। ইদানীং নাকি প্রায়ই জায়গায় তাদের একসাথে দেখা যায়।
– শুধু কি একসাথে দেখা যায় মা। আরো যে কতো কি চলে। ভেবেছিলাম ভাইয়া এই শাহরিয়ার ফ্যামিলিতে যে একটা হাইফাই গেটআপ নিয়ে চলে তার পছন্দের মানুষো হবে সেই লেভেলের এখন তো দেখি….বাই দা ওয়ে হিয়া কিন্তু দেখতে শুনতে ভালোই আছে কি বলো বড় আম্মু। এখনো তো অনেক বাচ্চা।
কথাটা হিয়াকে মাথা থেকে পা অবধি পরক্ষ করে নিয়েই বললো সিয়াম।হিয়ার কাছে সিয়ামের এই চাহনিটা ঠিক সুবিধার মনে হলো না যেনো। মনে হলো সিয়াম যেনো কি একটা নেশা নিয়ে হিয়াকে দেখছে…উঠে দাঁড়ালো বাসবি। বিশ্বাস করতে পারলো না সিয়ামের এই সব কথার বাজে ইঙ্গিত। রক্তবর্ণ চোখে বললো,
– যা বলার অনেক বলেছো সিয়াম। ভূলে যেও না উজান তোমার ভাই হয়। আর ও শুধু তোমার ভাই না এই শাহরিয়ার ফ্যামিলির সবচাইতে বড় ছেলে। তাই তার বিষয়ে এসব নোংরা কথা বলো তুমি কোথা থেকে??…হ্যা মানছি উজান শিশিরের সাথে উঠাবসা করে,শিশিরদের বাড়িতে যায় তাই বলে হিয়াকে জড়িয়ে তুমি ওর নামে এসব বদনাম রটবে।
– অহেতুক আমার ছেলেকে চোখ রাঙিয়ো না ভাবী। সিয়াম না জেনে কোনো কথা রটাচ্ছে না। খুব অহংকার ছিলো না তোমার ছেলেকে নিয়ে তোমাদের সবার। সে নাকি শাহরিয়ার বংশের যোগ্য পুএ একদম সিয়ামের দাদুর মতো। তা ফলে কি দিলো একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে প্রেমের নামে রঙ তামাশা,যাদের কোনো বংশ পরিচয় নেই, ক্লাস নেই সে কি না হবে শাহরিয়ার বাড়ির বড় নাতবউ। সত্যি!
সবার কথার বেড়াজালে পিশে যাচ্ছিলো হিয়া। এরকম পরিস্থিতি জীবনে এর আগে কখনো ফেইস করতে হয়নি তার। হ্যা সে বকা খেয়েছে অনেক কথাও শুনেছে কিন্তু সেগুলো খেলতে গিয়ে বা ছেলেমানুষী করতে গিয়ে কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে,এই একটা কারনে এরকম অপমান,এটা তো দশটা মিনিট আগেও কল্পনা করে নি হিয়া। হিয়ার সারা শরীর কাঁপছে,ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। চারপাশের সবাইকে ভয় হচ্ছে তার। কেমন একটা অনিরাপদ অনুভব হচ্ছে নিজেকে। এরপর বাসবি কিছু জিজ্ঞেস করলে কি উওর দিবে হিয়া! বলে দিবে সব সত্যি!
– একটু থামো মেহরিন। বলতে শুরু করলে তুমি বলতেই থাকো কিছু মুখে আটকাও না। আমি হিয়ার কাছে শুনতে চাই সবটা..হিয়া..কি বলছে সিয়াম এসব,তুমি আর উজানকি একসাথে?
হিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলে হয়তো এ-ই অত্যাচার থেকে রেহাই মিলতো তার। কিন্তু পালাতেও তো পারবে না। না কিছু বলতে। মুখ দিয়ে কিছু শব্দ বের করলেও সেটা দিয়ে বাক্য তৈরি করতে ব্যর্থ হলো হিয়া। শিশির ঠিকই বলে হিয়ার সব জবরদস্তি শুধু তার ভাইয়ের সাথেই খাটে,বাকিদের সামনে তো একটা আওয়াজ অবধি করার সাহস আনতে পারে না মুখে। এদিকে হিয়ার নিরবতায় আরো প্রশ্ন শুরু করলো বাসবি। অপরদিকে রোদের মা আর ভাইয়ের তো ব্যাঙ্গাত্বক কথাবার্তা আছেই। ভয়ে একদম কুঁকড়ে উঠলো হিয়া। মন থেকে বারবার একটা উজান নামক আশ্রয় খুঁজতে শুরু করলো সে কিন্তু পেলো না কোনো বাঁচার উপায়…এদিকে হিয়াকে কুনজর ভরে দেখতে গিয়েই সিয়াম খেয়াল করলো হিয়ার গলায় সেই পেন্ডেন্ট যেটা চিনতে একটুও ভূল হলো না সিয়ামের। এটা তো সেই পেন্ডেন্ট আর চেইন যেটা কিনতে গিয়েই ঢাকাতে প্রিয়ন্তীর সাথে উজানের কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিলো। তারমানে উজান ঔ এক্সপেন্সিভ লকেট টা হিয়াকে দিতেই! উঠে দাঁড়ালো সিয়াম। হিয়ার দিকে ঝুঁকে এসে বললো,
– আরে আম্মু এটা ঔ পেন্ডেন্ট টা না যেটা নিয়ে গতবার মার্কেটে ভাই আর প্রিয়ন্তীর কাড়াকাড়ি লাগলো। আরে হ্যা তো…বাহ বা ভাবীজান বিয়ের আগেই এসব লেনদেন শুরু।
– এই তার নমুনা। সেদিন প্রিয়ন্তীকে ওভাবে বলে তোমার ছেলে কি না এ-ই মেয়ের জন্য এটা কিনলো ভাবী…এ-ই মেয়ে তুমি দাম জানো এটার,কতো এক্সপেন্সিভ এই লকেট টা বুঝো তুমি?
আর কিছু বলতেই সিয়াম হিয়ার গলায় হাত দিয়ে পেন্ডেট টা কেঁড়ে নিতে চাইলো কিন্তু ভয়ে পিছিয়ে গেলো হিয়া। সিয়ামের মা রাগে আরো রস ঢেলে দিয়ে বললো নে তো কেঁড়ে লকেট টা। তাতে যেনো আরো উৎসাহ পেয়ে বসলো সিয়াম। হিয়ার গলায় হাত দিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে সেই হাত ছোঁয়ালো হিয়ার বুকের খাঁজে। আর কিছু বাড়তে দেবার আগেই হিয়া সিয়ামের গালে বসিয়ে দিলো এক থাপ্পড়। ঘটনাস্থল টা যেনো মুহুর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে পড়লো। এদিকে হিয়ার আসতে দেড়ি দেখে রোদেলা হিয়ার খোঁজে ডাইনিং এ এসব দেখতেই পুরো থমকে গেলো। দূত পায়ে হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই রোদের মা হিয়াকে এক টানে সামনে ধরে হিয়ার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে কান্নায় ভেঙে পড়লো হিয়া। রোদেলা হিয়াকে আঁকড়ে নিয়ে তার মা’কে হাজারটা কথা বলতে গিয়েই শুরু হলো আরো এক পর্যায়ের কথা কাটাকাটি। ভয়ে রোদের বুকে আশ্রয়ে থাকতেও ভয় হচ্ছিল আজ হিয়ার। ভয় হচ্ছিল চারপাশের মানুষের এসব দেখে।
– এটা তুমি কি করলে মেহরিন। তুমি ঔ বাচ্চা মেয়েটার গায়ে হাত তুললে।
– তুমি চুপ করো ভাবী। এখন তো মনে হচ্ছে উজানকে এসব করতে তুমিই উস্কে দিয়েছো। এ-ই মেয়ের সাহস কত্তো বড় যে আমার ছেলের গায়ে হাত তোলে। বেয়াদব বস্তির মেয়ে কোথাকার।
– চুপ করো মা। আর কতো মানুষকে ছোট করবে। দিনদিন বয়স হচ্ছে একটু তো পরকালের কথা ভাবো। বাড়িতে আসা মেহমান কে এভাবে তাচ্ছিল্য করছো তুমি। ছিঃ
– তুই তোর মা’কে ছিঃ করছিস রোদেলা। এ-ই তোদেরকে আমি মানুষ করেছি। সব আবদার মিটিয়েছি।
– মানুষ করেছো বলে তো তুমি তোমার মেয়ের সাথে এরকম ব্যবহার করতে পারো বা মেহরিন। ঘটনা এতোদূর আগাতেই না যদি তোমরা ভালো ভাবে কথাটা তুলতে…আমি তো কথা বলছিলাম হিয়ার সাথে…আর রোদেলা এসব কি? এগুলো কি সব সত্যি,সত্যি যে উজান আর হিয়া এভাবে?
– হ্যা বড় আম্মু মানে সত্যি বলতে যে..
– থাক যা বোঝার আমি বুঝে গিয়েছি। এরপর যা কথা বলার আমি উজানের সাথে বলে নেবো। তুমি এখন হিয়াকে বিদায় করো যা-ও।
রোদ একটা শ্বাস টেনে হিয়াকে নিয়ে এদিকে ফিরতেই থমকে যায় হিয়া। দরজার দিকে এ কাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে সে। শিশির ভাইয়া। রোদেলা হিয়ার বিধস্ত চুল গুলো ঠিক করতে করতে কিছু বলতে যাবে ওমনি হিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠে সে নিজেও। শিশির এখানে!
এক পা দু পা করে হিয়ার কাছে আসতেই ভয়ে রোদের হাত চিপে ধরে হিয়া। কি হবে এখন। শিশির কি সব শুনে ফেললো, দেখে নিলো সব,এরপর…শিশিরকে দেখামাত্রই আরো ক্ষেপে উঠলো রোদের মা। যা নয় তাই কথা শুনিয়ে যেতে থাকলো সাথে তো আজ সিয়াম আছেই। রোদেলা হাত জোড় করে তার মা’কে থামতে বলছে কিন্তু উল্টে রোদকে থামিয়ে দিয়ে উনি নিজের মতো হিয়ার চরিত্রের বর্ণনা তুলে ধরছে তার ভাইয়ের সামনে। হিয়ার দিকে তাকিয়ে সবার সবকিছু হজম করছে শিশির। হিয়া ভয়ে আর শিশিরের দিকে তাকাতে পাচ্ছে না আজ। নিচের দিকে তাকিয়ে ফ্লোরের মাঝে টপটপ চোখের পানি ফেলছে। রোদের মা বাড়াবাড়ি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও চুপ হচ্ছে না। সেটাতে আরো ঘি ঢালতে সিয়ামের মানিব্যাগ থেকে এক খাপলা টাকা নিয়ে উনি সেটা ছুঁড়ে দেন শিশিরের গায়ের উপর সাথে অহংকারের সহিত বলেন ” নিয়ে যাও সব টাকা,কারো ঋন রাখে না এই শাহরিয়ার ফ্যামিলি,তোমরাটাও রাখবে না”
!
!
তপ্ত শ্বাস টেনে বাসবির দিকে এগিয়ে আসলো শিশির। বাসবির হাতে কিছু ব্যাংকের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো”আন্টি এগুলো উজান ব্যাংক থেকে তুলে আপনাকে দিতে বলেছিলো আজ।নিন” বাসবি কাগজ গুলো নিতেই শিশির হিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বেড়িয়ে আসতে ধরলেই বাঁধ সাধলো রোদ। কান্নারত ভেজা কন্ঠে শিশিরকে আটকাতে চেষ্টা করে বললো,
– শিশির তুমি এভাবে যাবে না। আমার,আমার কথা টা একটু শোনো তুমি।
– আমাকে যেতে দেও রোদ।
– হ্যা কিন্তু তার আগে তুমি একটু শান্ত হও। দেখো আমি বা উজান কেউ কিন্তু..
– আমাকে যেতে দেও রোদ। পথ ছাড়ো।
– তুমি একটু শোনো না আমার কথা। আমি বলছি যে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার হয়ে। তুমি রাগ করে আমার সাথে বা উজানের সাথে..
আর কিছু বলতে পারলো না রোদেলা। তার আগেই গলা ছেড়ে এক ঝারি দিয়ে শিশির বললো” আমি কি বললাম সেটা তোমার কানে যায়নি রোদেলা। রাস্তা ছাড়ো আমার” কথাটা এতোই জোড়ালো আর রাগের হুঙ্কার দিয়ে শিশির বললো যে রোদ তো চুপ হলো হলো সাথে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা হিয়াও কেঁপে উঠলো। শিশিরের চোখের দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠলো রোদ। এই জ্বলন্ত আগুনের ন্যায় চোখ গুলো এর আগেও একবার দেখেছিলো রোদ যেদিন ক্যাম্পাসের ঔ ছেলে গুলো তাকে উত্যক্ত করেছিলে আর আজ সেই আগুনের চাইতেও লক্ষ্য কোটিগুন বেশি আগুন দেখছে সে শিশিরের চোখে। সারা শরীর কাঁপছে শিশিরের। রাগে যেনো পুরো মুখ শক্ত হ’য়ে আছে। হয়তো রোদের আম্মু বলেই শিশির নিজেকে দমিয়ে রাখলো নয়তো হিয়ার গায়ে হাত তোলার অপরাধে এই মহিলার ঠিক কি হাল করতে তা আর বুঝতে বাকি নেই রোদের। হিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো শিশির। রোদ রাগে ক্ষোভে ঘেন্নায় আর কথাও বললো না বাড়ির কারো সাথে। সোজা গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে উজানকে ফোন করলো। হ্যা তবে কি হয়েছে সেটুকু না বলেই বললো “কালকের মধ্যেই সব কাজ মিটিয়ে তুই বাড়িতে ফিরবি,আমার কথা আছে তোর সাথে, আর সেটা জরুরি” ফোন রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো রোদেলা। হাতের মেহেদী কোথায় গিয়ে কি হয়েছে আর কোনো হুঁশ নেই তার। শিশিরের পাহাড় সমান রাগ টা মনে পড়তেই কেঁপে উঠলো রোদ আবার। এরপর ঠিক কোনদিকে মোড় নিবে এই চারটে সম্পর্ক ভাবতেই যেনো শরীর রক্তশূণ্য হয়ে পড়চ্ছে তার!
চলবে..