এক_পশলা_বৃষ্টি #লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া #পর্ব-৭

0
397

#এক_পশলা_বৃষ্টি
#লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭

এই ঘটনার মাসখানিক পর,

শোভা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সঙ্গে ওর মেয়েটাও। দুজনকেই হসপিটালাইজড করা হয়। যেহেতু ডাক্তার সাইফ এতদিনে ওদের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছে তাই আগের হাসপাতালেই ওদের এডমিট করা হয়।

কোনো এক অজানা কারণে সাদের ইচ্ছে হয় শোভাকে দেখতে যাওয়ার। এতদিনে অবশ্য সে নিশ্চিত যে শোভা এবোরেশন করিয়েছে আর ওর পরিবারও সাদের উপর রেগে নেই। কেননা সেদিন হাসপাতালে শাফিন বা মিলি কেউবোর সঙ্গে তেমন আচরণ করেনি। তাই বুকে সাহস জমে সাদের। রওয়ানা দেয় শোভার বাসায় উদ্দেশ্যে। ওখানে গিয়ে শুনে শোভাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিবেশীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে হাসপাতালে যায় সাদ। কিন্তু ওর ভাবনা সব উলোটপালট হয়ে গেলো যখন মিলি ফ্যাসফ্যাসে গলায় ওকে বললো, ‘মিস্টার সাদ চৌধুরী, খুব ভালো করে শুনে রাখুন, শোভার সাথে আপনার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তাই যখন তখন ওর সাথে দেখা করতে আসতে পারেন না আপনি।’

সাদ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে কিছুতেই এটা মানতে পারছেনা যে ওর সাথে শোভার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। মিলি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ‘এবার প্লিজ যান। মুক্ত করে দিয়েছে আপনাকে।’

সাদ তেতে উঠল। হুংকার দেওয়া কন্ঠে বলল, ‘আমি এটা মানিনা।’

মিলি বেশ অবাক হলো। তবুও কিছু বুঝতে না দিয়ে সহজভাবে বললো, ‘তাতে কারো কিছু যায়-আসে না।’

‘ আমি এই ডিভোর্স মানিনা।’

‘ মানেন না? কিন্তু কেন জানতে পারি?’

সাদ উত্তর দেয়না। পেছন থেকে শাফিন জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি ডিভোর্স মানেন না? আপনার মতামত কী কেউ জানতে চেয়েছে মিস্টার সাদ চৌধুরী?’

‘ শোভা আমার স্ত্রী!’

‘ কিছুদিন আগ অবধি ছিলো। কিন্তু আপনি এখন আমার বোনের জন্য পরপুরুষ ব্যতীত অন্য কিছুই নন।’

সাদ বলার মতো কিছুই পেলোনা। কিছুক্ষণ গাইগুই করে বললো, ‘কিন্তু ও আমার সন্তানের মা হতো।’

মিলি এবার বেশ চটে গেলো। চিৎকার করে বললো, ‘আপনার কোনো সন্তান নেই। যারা এসেছে তারা শুধু এবং শুধুমাত্র আমার শুভির সন্তান!’

সাদ অবাক হয়ে বললো, ‘ এসেছে মানে?’

শাফিন কটমট করে বললো, ‘কিছুনা। আপনি যান এখান থেকে।’

মিলি চলে আসতে নিলে সাদ পথ আটকালো।

‘ অসভ্যের মতো রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

‘ তার আগে বলো কে এসেছে? আর শোভা কোথায়?’

‘ আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।’

সাদ রেগে গেলো। বললো, ‘না বলা অবিধি আমি তোমাকে যেতে দেবোনা।’

‘ সেদিনের থাপ্পড়ের কথাটা ভুলে গেছেন?’

‘ আই ডোন্ট কেয়ার।’

ডাক্তার সাইফ এতোক্ষণ চুপচাপ দেখছিলো সব। এতক্ষণে যা বুঝার ও বুঝে গিয়েছে। মিলি শোভার পুরো ঘটনাটাই ওকে জানিয়েছে। আর সাদকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ও শোভার সেই সো কল্ড স্বামী। এতক্ষণ কিছু বলেনি, কিন্তু মিলির সাথে সাদের কথা কাটাকাটির ব্যাপারটাতে সাইফ বেশ রাগলো। ও এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘দেখুন মিস্টার। এটা হসপিটাল। এটা কোনো সিনক্রিয়েট করার জায়গা নয়। আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান।

সাদ চকিতে তাকালো মিলির দিকে। তারপর সাইফকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আমি এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করতে আসিনি। আমি জানতে চাচ্ছি শোভা কোথায়?’

মিলি কিছু বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই সাইফ বললো, ‘রিল্যাক্স। মিস শোভা কেবিনে আছেন। ওনার তো ক’দিন আগে টু-ইন বেবি হয়েছে। বাচ্চারা এবং ওনি এখন একটু অসুস্থ আছেন। এবার যান আপনি!’

সাদ আকস্মিক বাবা হওয়ার সংবাদটা নিতে পারলোনা। বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওর হিংস্র মস্তিষ্ক ভাবলো, ‘শোভার শুধুমাত্র একার অধিকার এই বাচ্চাদের উপর নেই। ওর বাচ্চা, ও ওদেরকে নিয়ে যাবে।’

যেই ভাবা সেইমতো কাজ। সাদ বললো, ‘আমার বাচ্চাদের আমি নিয়ে যাবো।’

এই পর্যায়ে শাফিন আর রাগ ধরে রাখতে পারলোনা। কাপুরুষটা কী বলে? বাচ্চাদের নিয়ে যাবে? ওর বাচ্চা? শাফিন তেড়ে এসে ওর কলার চেপে ধরলো। গলার শিরা ফুলে উঠেছে, রাগে কাঁপছে। চিৎকার করে বললো, ‘তোর বাচ্চা? কারা? ওই দুটি বাচ্চা আমার শুভির। তুই কে যে ওদেরকে নিজের বাচ্চা বলতে আসিস? ওরা আমার বাচ্চা, আমি ওদের মামু, আমি ওদের বাপ। ওদের আর কোনো বাপ লাগবে না। শুনলি তুই?’

সাদও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। সে বললো, ‘ওরা আমার বাচ্চা?’

‘ তোর ওই নোংরা মুখে ওদের পিতৃত্ব দাবি করবিনা হারামজাদা।’

‘ একশোবার করবো। ওদেরকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।’

‘ ওরা তোর বাচ্চা না। তোর সাথে আমার বোনের বিয়ে হয়েছিলো শুধু, ওরা জারজ সন্তান। আর ওদের বাবা কে তা তুই জানিস না। বুঝলি?’

সাদ রেগে শাফিনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। বললো, ‘ওরা আমার সন্তান।’

মিলি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সাইফের কাঁধে হাত রেখে ও হাসতে লাগলো। চোখে পানি এসে পড়েছে হাসার দরুন। অনেক কষ্টে হাসিটা চেপে বললো, ‘তাই নাকি সাদ চৌধুরী?’

রাগী গলায় সাদ বললো, ‘অবশ্যই।’

‘ কিন্তু এর প্রুফ কী?’

সাদ বললো, ‘প্রুফ মানে?’

‘ আরে ইয়ার। সিম্পল কথাটা আপনার মতো চতুর ব্যক্তি বুঝতে পারছে না? আমিতো সহজ বাংলায় ঝেড়ে কাশছি।’

‘ যা বলার ক্লিয়ার বলো। আমি ভনিতা পছন্দ করিনা!’

‘ ওহহ..আই সি! সো মিস্টার সাদ চৌধুরী, আমি আবারও বলছি শুভির বাচ্চারা যে আপনার তার প্রুফ কী? এমন কোনো এভিডেন্স আছে যেগুলোর ভিত্তিতে আপনি বাচ্চাদেরকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন?’

সাদ সহজভাবে বললো, ‘শোভাই প্রুফ।’

‘ কিন্তু শোভা তো অন্যকথা বলে।’

‘ কী বলে?’

‘ শুভির বাচ্চার বাবা আপনি নন।’

সাদ রেগে বললো, ‘আমি বিশ্বাস করিনা, আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই।’

‘ কিন্তু ও তো চায়না! আর তাছাড়া বাচ্চারা যদি আপনার হয়েও থাকে, তাহলেও আপনি ওদের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে পারেন না।’

‘ মানে?’

মিলি হাসে। তারপর ব্যাগ থেকে ডিভোর্স পেপারটা বের করে, সাথে আরেকটা পেপারও আছে। সেখানে লেখা বাচ্চাদের উপর সাদের কোনো অধিকার নেই, শুধুই শুভির অধিকার। সাদ হতভম্ব চোখে তাকায়।

মিলি বাঁকা হেসে বললো, ‘মনে পড়ে সেদিন হাসপাতালের করিডোরে একটা সাইন করেছিলেন? স্বেচ্ছায় আপনি সাইন করেছেন যে, বাচ্চাদের উপর আপনার অধিকার নেই। আর এক সপ্তাহ আগে আমি আপনার অফিসে গিয়ে একটা সাইন নিয়ে আসি সেটা আপনাদের ডিভোর্স করানোর জন্য। আপনি করার পরপরই সেটাতে শুভিও সাইন করে। আপনি আমাদের বোকা বানিয়েছিলেন, এবার না-হয় আমিই একটা খেল দেখালাম। এখানে আপনার ছোট্ট একটা ভুল হয়েছে, দুটো পেপারই আপনি একবারের জন্যও পড়েননি। এনিওয়ে, হোয়াট আ ফ্রি লাইফ ফিলস লাইক, উইথ ইউর সেকেন্ড ওয়াইফ?’

হতভম্ব সাদ এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা। এত বড় একটা ধোঁকা দেওয়া হলো ওকে? সে দু’পা এগিয়ে মিলির হাত থেকে পেপারগুলো কেড়ে নিতে চায়। উদ্দেশ্য ছিঁড়ে ফেলা। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মিলি কিছুতেই ছাড়ছেনা পেপারগুলো। শাফিন সাদকে ছাড়াতে গেলে সাদ মিলিকে ধাক্কা মারে। টাল সামলাতে না পেরে মিলি পিছলে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো, পেপারগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। সাইফ দৌড়ে গিয়ে মিলিকে উঠায়। তারপর রেগে সাদকে বলে আপনি এক্ষুনি এখান থেকে যাবেন? নাকি দারোয়ান ডাকবো?

সাদকে শাফিন পেছন থেকে ধরে রেখেছে। সে ফুঁসে উঠে বললো, ‘তোদের যা ইচ্ছা করে নিস। আমি এতো সহজে হাল ছাড়বোনা।’

মিলি এসে ওর গালে থাপ্পড় মারে। বলে, ‘যেদিন নিজের বাচ্চাদের জারজ আখ্যা দিয়েছিলি, শুভির চরিত্রে স্বামী হয়ে দাগ লাগিয়েছিলি সেদিন মনে ছিলোনা? তোকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতাম আর তুই? তুই শুভির সুসাইডের নিউজ শুনে দেখতেও আসিসনি। মধুর চাকের খোঁজে বেরিয়েছিলি। তোর বাপ আমাদেরকে অপমান করে বের করে দিয়েছিলো, মনে নাই সেদিনের কথা যেদিন শাফিন ভাই, আঙ্কেল তোর কাছে গিয়ে নিজের মেয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলো তখন লাথি মেরে ভাগিয়ে দিয়েছিলি তুই। এই আটমাসে একবার খোঁজ নিয়েছিলি? অথচ নতুন বউ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ঘুরে এসেছিস। ছিঃ! তখন এসবের কথা মনে ছিলোনা?’

মিলি হাঁপাচ্ছে। ডাক্তার সাইফ ওকে ধরে রেখেছে। সাদ গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপমানে, লজ্জ্বায় ওর ইচ্ছে করছে মিলিকে লাথি মেরে সরিয়ে দিতে। এবার মনে হচ্ছে বেশ করেছে শোভার সাথে, বেশ করেছে। জোরে বলে উঠলো, ‘বেশ করেছি আমি, যা হয়েছে ও এটারই যোগ্য!’

শাফিন কষে থাপ্পড় মারে। সাইফ সিকিউরিটি ডেকে আনে। সবাই ওকে জোর করে হসপিটাল থেকে বের করে দেয়।

রাগে সাদের গা কাঁপছে। কোনোমতে বাড়ি ফিরে যায়৷ তখন রাত প্রায় দেড়টা। রোমেলা, সাদিদ সাহেব ঘরে ঘুমুচ্ছেন। টিনা ফোনে ইফতির সাথে প্রেমালাপে লিপ্ত। ঠিক এই সময়ে সাদ ঘরে ঢুকেই হাতের কাছে যা পেলো তাই ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো। টিনার শখের পারফিউম ভেঙ্গে টুকরো হয়ে গেলো। চমকে পেছনে ফিরে দেখে রক্তবর্ণ চেহারা নিয়ে সাদ হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভাঙছে। টিনা ভয়ে বিছানা থেকে নেমে এলো। জিজ্ঞেস করলো, ‘ কী হয়েছে বেবি?’

সাদ কিছু সহ্য করতে পারছেনা। চিৎকার করে বললো, ‘এক্ষুনি ঘর থেকে বেরুও। আমি একা থাকতে চাই।’

টিনা আর কিছু বলার আগেই সাদ ধমকে উঠলো। ভয়ে টিনা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ভাঙাভাঙির এই শব্দ নিচতলায় পৌঁছলোনা। রোমেলা বা সাদিদ সাহেব কেউ-ই শুনতে পেলোনা। টিনা বেরুতেই সাদ ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। পানির গ্লাসটা ছুঁড়ে মারে ফ্লোরে। মিলি! ওই হারামজাদিটা দ্বিতীয়বার ওর গালে থাপ্পড় মারলো, তাও আবার বাইরের মানুষের সামনে? আর কী বলে? ওই শোভার সাথে ওর তালাক হয়ে গেছে, বাচ্চাদের উপর ওর অধিকার নেই? এতবড় অপমান সাদ নিতে পারছেনা।

কিন্তু ও এরকম করছে কেন? শোভা! হা, ওই শোভাকে আজকাল বড্ড মিস করতো। প্রথম যখন শোভাকে দেখে তখনই সাদ ওকে পছন্দ করে, প্রেমে পড়ে যায়। এড়িয়ে যেতে যেতে শোভাও একসময় ওকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু যখন জানতে পারে ওদের দুই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে পুরোনো শত্রুতা আছে, তখন সাদ চিন্তায় পড়ে যায়। শোভার প্রেমে পড়ার একটাই কারণ, শোভা অপূর্ব সুন্দরী। ওর সেই সৌন্দর্য ভোগ করার উদ্দেশ্যেই মূলত ওর সাথে সাদ প্রেমের অভিনয় করে। কিন্তু যখন নিশ্চিত হয়ে যায় যে, আদৌ ওর ফ্যামিলি ওদের বিয়ে দেবেনা, বা মানবেনা তখন সাদ মনোবাসনা পূরণের জন্য গোপনে বিয়ে করে নেয় শোভাকে, অবশ্য শোভা গোপন বিয়ে করতে রাজি ছিলোনা।

সাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কাছে হার মেনে বিয়ে করে। এটাই ওর ভুল। বৈবাহিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে বেশ কয়েকবার ওর আর শোভার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যখন সাদ জানতে পারে শোভা প্রেগন্যান্ট, তখন নিজের চরিত্রে যাতে কালি না লাগে, বাবার কাছে যাতে ছোট না হয়ে যায় তখন বিয়ের বিষয়টা স্বীকার করলেও বাচ্চাদেরকে জারজ উপাধি দেয়। সাদিদ সাহেব ছেলেকে বিশ্বাস করেন, তাই সাদের কথাও মেনে নেয়।

কিন্তু টিনার সাথে বিয়ে হওয়ার পর সাদের মাঝেমাঝেই শোভার কথা মনে পড়তো। দুই বউয়ের মাঝে অনেক তফাৎ খুঁজে পায়। ভাবে টিনার সাথে কখনোই সুখে থাকতে পারবেনা। তখন ওর শোভাকে মনে পড়ে, তাইতো আজ ছুটে গিয়েছিলো। কিন্তু মাঝখান থেকে ওই মিলি মেয়েটা বেশ বাড়াবাড়ি শুরু করে দিলো। নাহ,আর কিছু ভাবতে পারছেনা ও। এখন ওর কাউকে চাই, নিজেকে শান্ত করতে কাউকে চাই। দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো সাদ। নিচতলায় নেমে দেখে টিনা সোফায় শুয়ে আছে, মোবাইল টিপছে। সাদ ওকে কোলে তুলে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। আচমকা টিনা অবাক হয়ে যায়। বলে, ‘আরে কী করছো? নামাও আমায়।’

‘ চুপ। একদম চুপ!’

ধমক খেয়ে টিনা চুপ হয়ে যায়। দু’হাতে সাদের গলা জড়িয়ে ধরে। সাদ রুমে এনে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে টিনাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর। নিজের রাগগুলো মেটাতে থাকে টিনার উপর।

________

ওদিকে রাতে এতোবড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর রমজান সাহেব বা শোভা কাউকেই ওরা কিছু জানায়নি। পরদিন বিকেলে ওরা বাসায় ফিরে আসে। শরীর দুর্বল থাকায় আপাতত জানালো না খবরটা।

পরদিন। সকাল নয়টা।সালমা বেগম মেয়ের জন্য নরম খাবার নিয়ে এসেছেন রান্না করে । চামচ দিয়ে একটু একটু করে ওর মুখে তুলে দিচ্ছেন। এসময় খুশির খবরটা ওকে মিলি দিলো। খুশি খুশি গলায় বললো, ‘হেই শুভি, তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!’

শোভা অবাক হয়ে বলে, ‘কীসের সারপ্রাইজ?’

‘ গেস কর!’

‘ বলনা।’

‘ তার আগে বল, তুই আমাকে কী দিবি?’

শোভা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলে, ‘ একটা উম্মাহ দেবো তোর গালে।’

মিলি হেসে বললো, ‘বাহ! দারুণ।’

‘ এবার বল, কী সারপ্রাইজ?’

‘ আগে বল কাঁদবিনা।’

শোভা সন্দেহী চোখে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো, ‘কী এমন সারপ্রাইজ যে আমি কাঁদলেও কাঁদতে পারি?’

মিলি ব্যাগ থেকে পেপারগুলো শোভার হাতে দিয়ে বললো, ‘ নিজেই দেখে নে!’

শোভা একহাতে আস্তে আস্তে কাগজগুলো দেখে। সাদের সাইন করা ডিভোর্স পেপার, সাথে একটা এগ্রিমেন্ট। যদি কৌশলে সব করা হয়েছে তবুও, চতুর সাদের সাথে এরকমটা কর‍তেই হতো৷ সে ও তো কৌশল করেই শোভার জীবন নষ্ট করেছে! না চাইতেও ওর চোখে পানি এসে যায়। মিলি ধমকে বলে, ‘একদম কাঁদবিনা। কত কান্ড ঘটিয়ে কাজটা করেছি জানিস তুই।’

শোভা ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে, ‘সেদিন চাইলাম আর আজ তুই আমার কাজটা সফল করে দিলি? কীভাবে করলি?’

‘ পেপার সব আগেই তৈরি করা ছিলো। আমি সন্দেহ করেছিলাম ওই সাইদ্দা বাচ্চাদের উপর অধিকার চাইলেও চাইতে পারে। আর ওই কু* বাচ্চার কোনো ছায়াও আমি তোর বাচ্চাদের উপর পড়তে দেবোনা বলে সব ঠিকঠাক করে রেখেছিলাম। তুই কাল বলতেই আমি হোস্টেল থেকে অজান্তাকে দিয়ে আনিয়ে নিলাম। আর কাকতালীয়ভাবে ওই হারামিটা সেই রাতে তোকে দেখতে এসেছিলো আর আমি কৌশলে এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইনটা করিয়ে নিলাম। সেই এগ্রিমেন্ট পেপারে লেখা ছিল সন্তানদের উপর সাদ চৌধুরীর কোনো অধিকার নেই, আর না তোর উপর। এখন শুধু ডিভোর্সটা কার্যকর হলেই সব শেষ। ফর্মালিটি সব ক্লোজড! আর ওই বোকা সাদ একবার পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।’

শোভা ইশারায় মিলিকে কাছে ডাকে। তারপর মিলির গালে একটা উম্মাহ দিয়ে বলে, ‘খুব ভালো করেছিস। ওনার কোনো অধিকার বা ছায়া আমার সন্তানের উপর নেই, থাকতেও পারেনা!’

সালমা বেগম এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলেন। তিনি বরাবরই নরম মনের মানুষ। মিলি মেয়েটাকে তিনি নিজের মেয়ের মতো দেখেন। শোভার এই দুঃসময়ে মেয়েটা যে কীভাবে ওদের পাশে ছিলো, অন্য কেউ হলে কখনো থাকতোনা, এতো সাহায্যও করতোনা। তিনি মিলিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন। মিলি হেসে বললো, ‘কেঁদোনা তো মণি। এবার আমাদের কত দায়িত্ব বলো তো। সবকিছু ভুলে নতুন করে সব শুরু করতে হবে আমাদের। এ সময় কাঁদলে কী চলে?’

সালমা বেগম আবেগী কন্ঠে বললেন, ‘তুই এবার থেকে আমাদের বাসায় থাকবি। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা!’

শোভাও জোর গলায় দাবি জানালো যে এবার থেকে মিলি ওদের বাসায় থাকবে। মিলিও রাজি হয়। কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে শোভা জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা ওনি কী বাচ্চাদের দেখেছেন?’

‘ নাহ।’

‘ তাহলে জানলো কীভাবে?’

মিলির মুখটা কালো হয়ে যায়। আশ্চর্য! ওই হৃদপিণ্ডের ডাক্তারটাকে এই কথার জন্য শাস্তি দেওয়া দরকার ছিলো। এই হাঁদারামটা না বললে তো সাদ আরো পরে জানতে পারতো আর কাল রাতে এতো ঝামেলাও হতে পারতোনা। মিলি শক্ত গলায় কিড়মিড় করে বললো, ‘ডাক্তার সাইফ।’

‘ ওই যে হার্টের ডাক্তার? ওনি?’

‘ হুম। দাঁড়া আমি আসছি!’

বলেই মিলি গটগটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিছু প্রশ্ন জানার আছে ওর সাইফের কাছ থেকে। একদম ভুলে গিয়েছিলো।

চলবে….ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here