ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
আমি ধীরপায়ে ওনার দিকে একটু এগিয়ে গেলাম। উনি এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি একটু কেশে আমার উপস্থিতি জানান দিলাম। কিন্তু উনি কোনো রিঅ্যাকক্ট করলেন নাহ। আমি জানি যে উনি সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি খান। জিজ্ঞেস করবো? না বাবা পরে আবার বকলে? এসব নানারকম কথা ভাবতে ভাবতেই ভেতরে চলে এলাম। খাটে হেলান দিয়ে বসে ব্যালকনির দরজার দিকে তাকিয়ে আছি, যদিও ওনাকে দেখা যাচ্ছে না তবুও দরজার দিকে তাকিয়েই এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছি। ওনাকে ডেকে পরে সেই রাম ধমক খাওয়ার শখ আমার একদমই নেই। সেই প্রথম দিন থেকে ওনার রাম ধমক খেয়ে খেয়েই অভ্যস্ত আমি। আমার বাবা মার কাছেও এতো ধমক খাইনি যতোটা ধমক আমি এই লোকটার কাছে খেয়েছি। এইতো আপির বিয়ের কিছুদিন আগের কথা-
টেস্টের রেসাল্ট দেবে আজকে সেই নিয়ে এমনিতেই ভীষণ টেনশনে আছি। রেসাল্ট বিকেল তিনটায় দেবে। আমি সকাল থেকেই চিন্তায় কোনো কাজ ঠিককরে করতে পারছিনা। মাথায় একটাই কথা ঘুরপাক পাস করবো তো? রি-টেইক দেওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আপি বসে আছে। আমাকে দেখেই বলল,
— ” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
আমি টাওয়েলটা রেখে বললাম,
— ” যাবো তো কলেজে তাতে আবার রেডি হওয়ার কী আছে? যেটা পরে আছি তাতেই হবে।”
আপি নিজের ইয়াররিং পরতে পরতে বলল,
— ” আরে আজ বিয়ের শপিং করতে যাবোতো। ও বাড়ি থেকে জাবিন, আদ্রিয়ানরা এসছে। আর তোর জিজুও এসছে।”
শেষের কথাটা আপি লজ্জায় লাল হয়েই বলল। মাঝখানে এই কথা দিনে ফোনে টুকটাক কথায় ওদের দুজনের খুব ভালো বন্ডিং তৈরী হয়ে গেছে। আমার সাথেও। ইফাজ ভাইয়া আমাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে। প্রথমে শপিং এর কথা শুনে খুশি হলেও আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথা শুনে যাওয়ার ইচ্ছেটাই শেষ হয়ে গেলো। প্রথম দিনেই যেভাবে ধমকেছিলো আমাকে ওনার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে আমার আর নেই। তাই মুখ গোমড়া করে বললাম,
— “তোমরা যাও। আমি যেতে পারবোনা আমার টেস্টের রেসাল্ট দেখতে যেতে হবে।”
আপি আমার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল,
— ” আরে গাধি আগে তোর রেসাল্ট দেখবো তারপর শপিং এ যাবো।”
আমি চোখ বড় বড় করে আপির দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” মানে কী? মানে ইফাজ ভাইয়ারা ওবাড়ির ওরা সবাই মিলে যাবে আমার রেসাল্ট দেখতে।”
আপি নিজের ওড়নাটা সেট করে নিয়ে বলল,
— ” আরে রেসাল্ট তো টানানোই থাকবে। জাস্ট দেখে চলে আসবো বাস। তুই তাড়াতাড়ি আয়।”
বলে চলে যেতে নিলেই আমি হাত ধরে আটকে নিয়ে বলল,
— ” আপি! আপি! আপি! প্লিজ আমার কথাটা শোনো, একটু শোনো। ওনাদের সামনে যদি আমার রেসাল্ট এসে পরে তারওপর যদি ফেইল করি তাহলে আমার মান সম্মান আর কিছুই থাকবে না।”
আপি কিছুক্ষণ বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
— ” তুই ফেইল করবি? সেটাও আবার সম্ভব? এমন হয়েছে কোনোদিন?”
— ” হয়নি কিন্তু তাই বলে হবেনা তারতো কোনো মানে নেই তাইনা?”
আপি এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
— “বেশি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রেডি হয়ে আয়তো। লাঞ্চ করব সবাই একসাথে। ময়নাপ্পি বকতে শুরু করবে নইলে।”
বলে বাইরে চলে গেলো। আমি অসহায় এর মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনো উপায় না পেয়ে রেডি হয়ে নিলাম। রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে আছে। ইফাজ ভাইয়া, জাবিন, আর ঐ খবিশটাও আর ওনার সাথে যেই দুজন ছেলে বসে থাকে তারাও আছেন। সেদিন ওনাদের নামও জানতে পেরেছি একজনের নাম আদিব আরেকজনের নাম ইশরাক। আমি চুপচাপ গিয়ে দাঁড়াতেই জাবিন উঠে এসে আমায় জরিয়ে ধরল। মেয়েটা এমনিতে খুব ভালো। যেমন সুন্দর দেখতে ঠিক তেমনই সুন্দর ব্যবহার। ও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
— ” কেমন আছো? জানো কতোটা মিস করেছি তোমাকে?”
আমি একটু অবাক হলাম। আমাকে দেখেছেই তো এনগেইজমেন্ট এর দিন এরমধ্যেই মিস করেছে? অদ্ভূত! আমিও মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললাম,
— ” ভালো। তুমি ভালো আছো?”
— ” ভীষণ।”
কথাটা বলে চেয়ারে বসে পরল। আমি আপির পাশের চেয়ারটায় বসে ইফাজ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললাম,
— ” কী জিজু? কেমন আছো?”
ইফাজ ভাইয়া হেসে বলল,
— ” সকাল সকাল যদি শালিকার মিষ্টি চেহারাটা দেখতে পাই তাহলে আর খারাপ থাকি কীকরে?”
আমি একটু হাসলাম। তারপর আদ্রিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনিও আমার দিকে তাকালেন আমি মুচকি হেসে বললাম,
— “ভালো আছেন?”
উনি মুখে হালকা একটু হাসি ফুটিয়ে মাথা দুলিয়ে খাওয়ায় মন দিলেন। খবিশ আমাকে জিজ্ঞেস করলে কী হতো? বাট হাসতে দেখে একটু অবাক হলাম উনি হাসতেও পারে? অারে বাহ! পরে আদিব আর ইশরাক ভাইয়ার সাথে একটু কুশল বিনিময় করে খাওয়া শুরু করলাম খেতে খেতে সবাই বেশ ইনজয় করেছি মজার ব্যাপার আদ্রিয়ান ভাইয়াও আমাদের জয়েন করেছেন। যেটা দেখে খুব বেশিই অবাক হয়েছি আমি। তবে ইশরাক ভাইয়া মানুষটা খুব মজার ছিলেন। এই অল্প সময়ের সবার সাথে দারুণভাবে মিশে গেছেন।এরপর সবাই মিলে বেড়িয়ে গেলাম। আমি, আপি, আদ্রিয়ান ভাইয়া, ইফাজ ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, আদিব ভাইয়া, অর্নব আর সজীব ভাইয়া। কাব্য স্কুলে আছে তাই ও এখন যাবেনা ও আমার কলেজের স্কুলেই পরে তাই ওখান থেকে পিক করে নেবো। সবাই বিভিন্ন কথা বলে মজা করতে করতে যাচ্ছে কিন্তু আমিতো ভীষণ টেনশনে আছি। মনে মনে একটা কথাই বলছি আল্লাহ প্লিজ আমার প্রেজটিজটা এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও। এসব ভাবতে ভাবতেই ইফাজ ভাইয়া ফ্রন্ট সিট থেকে বলে উঠলো,
— ” কী ব্যাপার অনি ম্যাডাম এতো চুপচাপ যে।”
আমি অসহায়ভাবে তাকালাম ইফাজ ভাইয়ার দিকে। আপি হাসতে হাসতে বলল,
— ” আরে ওর রেসাল্ট নিয়ে টেনশনে আছে। ওর ধারণা ও ফেইল করবে।”
এটা শুনে সবাই আমায় সাহস দেওয়ার মতো কথা বললেও আদ্রিয়ান ভাইয়া ড্রাইভ করতে করতে বললেন,
— ” ফেইল করার মতো পরীক্ষা দিয়েছে তাই এমন মনে হচ্ছে। যদি ঠিকঠাক পরীক্ষা দিতো তাহলে অন্তত পাশ করার মতো কনফিডেন্স টা থাকতো। ”
যেটুকু সাহস সঞ্চার করেছিলাম আদ্রিয়ান ভাইয়া তার রফাদফা করে দিলো। ইফাজ ভাইয়া ওনাকে ধমকে বলল,
— ” তুই চুপ করবি। বেচারী এমনিতেই টেনশনে আছে।”
আদ্রিয়ান ভাইয়া মুচকি হাসতে হাসতে বললেন,
— ” ভুল কী বললাম? এটুকু কনফিডেন্স যখন নেই তখন সিউর ফেইল করবে।”
এবার সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। সবাই বুঝতে পারলো উনি আমাকে জ্বালানোর জন্যেই এমন করছেন। আমি কিছুই না বলে হাত ভাজ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। ওনার ওপর খুব বেশিই বিরক্ত আমি এই মুহূর্তে। কলেজের সামনে আদ্রিয়ান ভাইয়া গাড়ি থামিয়েছেন। কিন্তু আমি কিছুতেই নামছি না। সবাই বলছে নামার জন্যে কিন্তু আমি এতোটাই টেনশনে আছি যে নামতেই পারছিনা। আপি বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” অনি প্লিজ চল দেখিস ভালোই হবে।”
আদ্রিয়ান ভাইয়া এবার রেগে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
— ” এখানে কী তোমার নাটক দেখতে এসছি আমরা? আচ্ছা হিয়া ওর রোল টা বলো আমি গিয়ে দেখে আসছি আর কাব্যকেও নিয়ে আসছি।”
আপি ওনাকে আমার রোলটা বলার সাথেসাথেই উনি গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলেন। আমার এবার আরো টেনশন হচ্ছে উনি দেখতে যাচ্ছেন? না জানি কী হয়েছে রেসাল্ট। টেনশনে শক্ত হয়ে বসে আছি। প্রায় দশ মিনিট পর উনি ফিরে এলেন সাথে কাব্যও। চোখে মুখে একরাশ গাম্ভীর্যতা। আমার এবার ভয়ে কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। আপি বলল,
— ” কী হলো কী হয়েছে রেসাল্ট?”
সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান ভাইয়ার দিকে। উনি একটা গম্ভীর শ্বাস ফেলে বলল,
— ” কী আর হবে যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
আমিতো এবার কেঁদেই দিয়েছি। আপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আদিব ভাইয়া বলল,
— ” এই দেখ আদ্রিয়ান একদম দুষ্টুমি করবি না মেয়েটা এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে।”
সবাই আদ্রিয়ান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করছে। আমি এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলাম। নির্ঘাত ফেইল করেছি তাইতো এভাবে বলছে। আদ্রিয়ান এবার একটু ধমক দিয়ে বললেন,
— ” এই চুপ। এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে হবেনা। ফেইল করেননি আপনি আবার ফার্স্ট ও হননি। থার্ড হয়েছেন।
সবাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করলো। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। ওনার ধমকে এমনিতেই ভয় পেয়ে গেছি। বাদর ছেলে একটা আমাকে এভাবে ভয় দেখালো? আপি হেসে জরিয়ে ধরলো আমাকে। ইফাজ ভাইয়া আদ্রিয়ানের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল,
— ” বান্দর। মেয়েটাকে কাঁদিয়ে ছাড়লো।”
আদ্রিয়ান ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করতে করতে বলল,
— ” একচুয়ালি যারা একটু ভালো স্টুডেন্ট হয় রেসাল্টের সময় অলওয়েজ একটা নেকামি করতেই থাকে। ফেইল করবো,ফেইল করবো। পরে দেখা যায় এনারাই ফার্স্ট,সেকেন্ড,থার্ড হয়ে বসে আছে। আরে এতো ভালো এক্সাম দিয়েও ফেইল করবো এটা কীকরে মনে হয়? লজিকটা কী ভাই? আমিও তো কলেজ টপার ছিলাম এমনতো কখনো মনে হয়নি।”
ইশরাক ভাইয়া বললেন,
— ” তুমিতো হানড্রেট পার্সেন্ট সিউর থাকতা মামা। অবলা তো ছিলাম আমরা কী হবে সবচাই ধোঁয়াশা ছিলো।”
অর্নব ভাইয়া আমায় পিঞ্চ করে বলল,
— ” ও এরকমি ভাইয়া ছিচকাঁদুনি।”
আমি রেগে তাকালাম অর্নব ভাইয়ার দিকে। কাব্য তাল মিলিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সজীব ভাইয়া বলল,
— ” এই চুপ করো সবাই ওকে আর কেউ জ্বালিয়োনা এমনিতেই অনেক ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা।”
কেউ কিছু বলল না। আমি নাক ফুলিয়ে বসে আছি একটু পর পর ফোঁপাচ্ছি। ব্যাটা খবিশ আমাকে ইনডিরেক্টলি নাটকবাজ বলল। সবাই মোটামুটি খুশি আমার রেসাল্টের কথা শুনে, আমিও খুশি কিন্তু কান্না থামাতে পারছিনা তখন খুব বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে এভাবে ফোঁপাতে দেখে আদ্রিয়ান ভাইয়া বললেন,
— ” থাক কাঁদেনা বাবু। সামনের আইসক্রিম পার্লার থেকে আইসক্রিম কিনে দেবো। এবার চুপ করো।”
সবাই হেসে দিলো ওনার কথায়। আমি কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থেকে নিজেও হেসে দিলাম। এরপর সবাই মিলে অনেক মজা করে শপিং করেছি। ইশরাক ভাইয়ার মজাগুলো তো আছেই। আদ্রিয়ান ভাইয়াকেও নতুনভাবে জেনেছি। প্রথম দেখায় ঠিক যেমন ভেবেছি উনি পুরোটা তেমন না। উনি বেশ রাগী হলেও বোরিং আর একঘুয়ে নাহ। পরিস্থিতি অনুযায়ী বিহেভ করতে জানেন। সবার সাথে মিশতে হাসিমজা যেমন করতে পারেন, আবার রেগে যাওয়ার সময় ভীষণ রাগতেও পারেন। একদম পার্ফেক্ট পার্সোনালিটি যাকে বলে আরকি।
হঠাৎ দরজা নক করার শব্দে কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। দরজার ওপাশ থেকে মামনী মানে আমার শাশুড়ি মা নিচে যেতে বলে চলে গেলেন। আদ্রিয়ান ভাইয়া এখনো রুমে আসেননি। আমি কোনোরকমে তৈরি হয়ে নিচে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি মা আর বড় মা কিচেনে কাজ করছেন। কাল বাড়িতে আসার পরেই ওনারা করা নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন এসব আন্টি ফান্টি বলে ডাকা যাবেনা। আদ্রিয়ান ভাইয়া যেমন ওনাদের মা বা মামনী আর বড় মা বলে ডাকেন আমাকেও ওই নামেই ডাকতে হবে। আর আপিও ওনাদের হেল্প করছে। এই কয়েকমাসে এই বাড়িটাকে নিজের করে নিয়েছে আপি। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছে নিজের সংসার। আসলে ও বরাবরই খুব রেসপন্সিবল একটা মেয়ে তাই এটাই স্বাভাবিক। সেদিক দিয়ে আমি একেবারেই অগোছালো আর খাপছাড়া। আমি যেতেই মামনী এসে আমাকে ধরে ভেতরে কিচেনের নিয়ে গেলো তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
— ” কীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোর এখানে?”
আমি উত্তরে একটা মলিন হাসি দিলাম। মামনী হয়তো এই হাসির অর্থ বুঝতে পারলেন তাই আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে বললেন,
— ” জানি মা আমরা তোর ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দিয়েছি। এই ছোট্ট কাধে অনেক বড় দায়িত্ব ঝুলিয়ে দিয়েছি কিন্তু চিন্তা করিসনা দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বড় মাও একি কথা বললেন। আপির দিকে তাকাতেই দেখি আপির দৃষ্টি আমার কাটা হাতটার দিকে। ওর চোখ ছলছল করছে হয়তো অনুমান করে ফেলেছে যে কাল রাতে আমার সাথে কী হয়েছে। আমি আপির দিকে তাকিয়ে একটা শান্তনার হাসি দিলাম ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরোটা বেলায় মন দিলো। হয়তো এখন আমার মনের অবস্থা জানে তাই কিছু বলতে চাইছেনা। মামনী আমার হাতে একটা কফির মগ ধরিয়ে আদ্রিয়ান ভাইয়াকে দিয়ে আসতে বললেন। আমিও ভাবছিলাম বলবো তার আগেই মামনী দিয়ে দিলো। কফিটা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি উনি খাটে হেলান দিয়ে কপালে এক হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি ঘুমান নি। তাই ওনার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম,
— ” শুনছেন।”
বলার সাথে সাথে উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। আবার আমার হাতে বা গায়ে কফি ছুড়ে মারবে না তো? মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” আপনার কফিটা।”
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই কফির মগটা হাতে নিলেন। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে হঠাৎ ছুড়ে ফেলে দিলেন কফির মগটা। আমি সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম। না আমার গায়ে মারেনি। এমন এঙ্গেলেই মেরেছে যেদিক দিয়ে আমার গায়ে লাগার কোনো সম্ভাবনা নেই। উনি চট করেই উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো আমিও ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। উনি চেঁচিয়ে বললেন,
— ” কতোবার বলতে হবে স্টে এওয়ে ফ্রম মি? কতোবার? সহজ কথা বোঝোনা বলো? বোঝোনা? ”
ওনার একেকটা ধমকে কেঁপে উঠছি আমি। উনি এখন এগোচ্ছেন আর আমার এখনও কান্না পাচ্ছে কিন্তু আমি কাঁদবোনা ওনার সামনেতো একদমি নাহ। উনি এবার আমার হাত চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে বললেন,
— ” কে বলেছিলো আমার জন্যে কফি আনতে? বউ সাজতে এসছো? এই বয়স কতো তোমার? একটা বাচ্চা মেয়ে এখনো আঠারো পেরিয়েছে কী পেরোয় নি আমার বউ হতে এসছে। তোমাকে বলেছিনা একদম বউগিরি দেখাতে আসবেনা? আরেকবার যদি দেখি তো..”
উনি বুঝতে পারছেন কীনা জানিনা তবে উনি আমার সেই কাটা হাতটাই চেপে ধরে আছেন।অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। অবাধ্য একফোটা জল গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। উনি এবার একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
— ” কেনো আমার পেছনে পরে আছো হ্যাঁ? কেনো? কেনো চলে যাচ্ছোনা? কাল রাতে ওরকম ব্যবহার করার পরেও কেনো সকালে উঠেই চলে গেলেনা? এতুটুকু আত্নসম্মান নেই তোমার? কেনো বুঝতে পারছোনা আমি যা বলছি তো.. আমাদের ভালোর জন্যে বলছি। আমি তোমাকে কোনোদিন নিজের বউ হিসেবে মানবোনা। কতোদিন থাকবে এভাবে তুমি? খুব দেরি হয়ে যায়নি এখনো। নিজেও মুক্ত হয় আর আমাকেও মুক্তি দাও তোমার কাছ থেকে। জাস্ট গেট লস্ট।”
বলে উনি একটা টাওয়েল নিয়ে হনহনিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। আমিও ধপ করে সোফায় বসে পরলাম। ওনার সামনে নিজেকে শক্ত রাখলেও এখন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। উনি হয়তো সজ্ঞানে আমার ওপর শারীরিক কোনো টর্চার করছেন না কিন্তু মানসিকভাবে যেই আঘাতগুলো দিচ্ছেন সেটার মাপটাও কী বুঝতে পারছেন না?
#চলবে…