?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৩২
#ইভা_রহমান
(আজ গল্পে সংলাপ বেশি হয়ে গিয়েছে একটু,ধর্য্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো)
?
– সবকিছুর একটা সহ্য করার সীমা থাকে হিয়া। এতোদিন শিশির অসুস্থ ছিলো,তাই তুমি যা বলেছে,যা করেছে আমি টলারেট করে গিয়েছি কিন্তু এবার তুমি অতিরিক্ত করছো। কি চাইছো,আমাকে,আমাকে ছাড়তে চাইছো,তালাক দিতে চাইছো আমাকে,কোনটা বলো? নাকি কোনো বেটার অপশন আসছে? কোনটা হিয়া!
হিয়া শান্ত হয়ে স্থির চিওে তার বাহুতে জড়িয়ে রাখা উজানের হাত দুটো আলতো করে ধরে নিয়ে বললো,
– আমি শুধু এতটুকু চাইছি উজান যে তুমি তোমার ক্যারিয়ার টা গুছিয়ে নেও। সামনের মানথ থেকে তোমার ফাইনাল তুমি আপাতত সেটাতে ফোকাস করো,আন্টি আঙ্কেল যা বলে সেটা শোনো। এদিকে এতোদিনে আমিও আমার এইচএসের জন্য ভালোভাবে প্রিপারেশন নেই নাহয়। দেখবে আমরা ভালো কিছু করলে সবাই তখন এমনিতেই খুশি হয়ে আমাদের আপনাআপনি মন থেকে গ্রহন করবে। আমাদের কিছু বলতেও হবে না।
– রিয়্যালি হিয়া! এটুকুই! একটুকুর জন্যেই তুমি আমার কলস রিসিভ করছো না,টেক্সট দেওয়া ছেড়ে দিয়েছো,দেখা তো করোই না তারউপর আমি যদি শিশিরকে দেখতে আসি নিজে দরজা লাগিয়ে ঘরে বসে থাকো! এসবে আমি কি বুঝবো হিয়া।
– এতে এতো বোঝাবোঝির কি আছে উজান। তুমি তো দেখছো আমি ভাইয়াকে নিয়ে কতো ব্যস্ত থাকি ইদানীং, সারাদিন ভাইকে দেখতে গিয়ে পড়াটুকু আর পড়তে পারি না। রাতে পড়াশোনা করি ঔ সময় তুমি ফোন দেও। কি করবো এখন আমি পড়া ছেড়ে তোমার ফোন রিসিভ করবো।
– আমার সাথে কথা বললে তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হয় হিয়া! এতোদিন অবধি তো আমার কাছে পড়েই তুমি। ইভেন তোমার এসএসের সময়ো তুমি সারারাত আমার থেকে..
একটা ম্লান হাসি টানলো হিয়া, উজানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে গায়ের ওড়না টা ঠিক করে পড়ে নিতে নিতে স্বাভাবিক উত্তর করে বললো,
– সেই সময়টার সাথে এ-ই সময়টার আকাশ জমিন ফারাক আছে উজান। সেসময় তুমি শুধু আমার টিচার ছিলে,আমাকে সেভাবেই গাইড করে পড়িয়েছো আর এখন তো!
হিয়াকে নিজের দিকে আবার ঘুরিয়ে নিয়ে উজান বললো,
– এখন কি হিয়া..দেখো আমি মানছি তোমার রাগ করা,অভিমান করা সবটাই জায়েজ.আমার ফ্যামিলি যা করেছে সবটা অন্যায়,আমি তো তাদের সাপোর্টে কথা বলছি না একবারো। আমি তো জানি তারা অনেক ক্ষতি করেছে তোমাদের কিন্তু এতে আমার কি দোষ হিয়া! তুমি তো নিজে সাক্ষী যে আমি সেসময় তোমার সাথে।
– উজান আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝছি। কিন্তু আমি চাই তোমার একটা ভালো রেজাল্ট, তোমার একটা ভালো ক্যারিয়ার সাথে আমারো একটা ভালো কোথাও এ্যাডমিশন। আর আমার মনে হয় এসব করতে আমাদের একটু স্পেস দরকার। একটু সময় দরকার।
– এগুলো স্পেস,সময় এসব জাস্ট ভোগাজ হিয়া,আমরা তো এসব একে-অপরের পাশে দাঁড়িয়েও করতে পারি সবকিছু বলো !
-না উজান। তুমি তো আমার চাইতে বয়সে,জ্ঞানে বুদ্ধিতে অনেক বড় বলো,একটু এই বিষয় গুলো স্বাভাবিক ওয়েতে ভেবো দেখো।
উজান একটা তপ্ত শ্বাস টেনে দু’হাতে হিয়ার গাল জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– সময় চাই ঠিক আছে তোমার মন যা চায় তাই হোক। কিন্তু কথা দেও কখনো তালাকের কথা বা ছাড়াছাড়ি এসব কিছুর কথা মাথায় আনবা না তুমি?
নিজেকে উজানের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে মৃদু এক ম্লান হাসি টেনে নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো হিয়া। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিয়ে বের হতে হতে বললো” লতাকে নিয়ে ফটোকপির দোকানে যাচ্ছি উজান,কোচিংএর নোটস গুলো কপি করে কালেক্ট করা বাকি,এসে কথা বলবো”
হিয়ার কথায় কেমন যেনো এক বিচ্ছেদের সুর খুঁজে পেলো উজান৷ কেনো হিয়া কি চাইলে উজানের হাতদুটো জড়িয়ে বলতে পারতো না” না উজান কখনো তোমাকে তালাক দেবার কথা আমি মনে আনতে পারি কি” কিন্তু কোথায় হিয়া তো হ্যা না কিছু উওর করলো না তারমানে কি হিয়া চায় না সম্পর্ক টা কন্টিনিউ হোক!
সেদিন হিয়ার “এসে কথা বলবো” কথাটার অপেক্ষায় পুরো রাত নির্ঘুম পাড় করে দিয়েছিলো উজান কিন্তু হিয়া কোনো উওর দেয় নি। শুধু সে রাত না এরপর থেকে প্রায় প্রত্যেকটা রাত’ই হিয়ার অপেক্ষায় উজানের নির্ঘুম রাত কেটে গেছে। হিয়ার একটাই কথা ছিলো” উজানের ফাইনাল,তার এ্যাডমিশন,শিশিরের একটা জব,আর সে সবের জন্য একটু সময়” শত কষ্ট চাপা স্বত্বেও উজান তাই আর হিয়াকে জোড় করেনি কোনোকিছুর জন্য,দেক না হিয়া পরীক্ষা কতোদিনই বা আর লাগবে সময়। কিন্তু উজান বুঝতে পারেনি সম্পর্কে চির ধরতে গেলে বেশি সময় না শুধু অভিমান আর অভিযোগের ধারালো ফলা গুলো থাকলেই যথেষ্ট হয়,যেগুলো যেকোনো মুহুর্তে জখম করে দিতে পারে যেকোনো সম্পর্ককে!
!
!
এলাকার এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে আছে শিশির আর উজান। হিয়া এসেছেও বলা চলে শিশির তাকে জোর করে নিয়ে আসছে। শরীর ভালো ছিলো না হিয়ার সকালে একবার বমি করেছিলো হঠাৎ কিন্তু পাওা দেয়নি বিষয়টা। এদিকে আসবে না আসবে না বলে আসলো এখন আবার দেখো কি করছে। শিশির ডাকছে পাশে বসার জন্য কিন্তু মেয়েকে দেখো কলেজের কি এক বান্ধবী পেয়েছে তার সাথেই গল্প দিয়ে যাচ্ছে তখন থেকে।
– তোকে এতো আপসেট লাগছে কেনো উজান? ইটস এ্যাভরিথিংক ওল রাইট? মুখটা এরকম ফ্যাকাশে লাগছে সকাল থেকে কিছু খাসনি নাকি?
– আপসেট না এমনি, ভালো লাগছে না কিছু । বাবা সব হাতখরচ বন্ধ করে রাখছে শিশির। আমার জমানো যা ছিলো সেই খুচরো কটা টাকা দিয়ে কয়েকদিন তো চালিয়ে নিলাম। কলেজে টাকা দিতে হবে,সামনে ফাইনাল। মা’র কাছেও চাইতে পারছি না। একটা জব খুঁজছি টিউশন পড়িয়ে আর কতোই বা এ্যারেন্জ করতে পারবো।
-তোর টাকা লাগবে সে কথা তুই আমাকে বল। দেখ বাড়ি করার জন্য এখনো হাতে অনেক টাকা আছে আমার আর মনেও হয় না ওতো গুলো টাকা এক্ষুনি লাগবে। তুই সেখান থেকে নে।
– ধুর না। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ির কাজ টা শেষ কর হিয়াকে দেখে কেনো জানি মনে হয় না সে আর এখন তোর চাচিদের সাথে থাকতে চায়।
– হ্যা বলেছে সে কথা আমাকে। দেখি দুটো রুমের কাজ আপাতত শেষ,এক সপ্তাহের মধ্যে বাথরুমের ফিটিংস গুলো হলেই উঠে যাবো। তারপর না হয় ধীরেসুস্থে বাকিটা…আচ্ছা ওসব বাদ দে,তোর কতো লাগবে সেটা বল এখন?
– পঞ্চাশের কাছাকাছি ওতোও লাগবে না আই গেস।
– আচ্ছা বেশ আমার কার্ডটা নিয়ে যা,বুথ থেকে যতো লাগে তুলে নিস। আচ্ছা শোন না,রোদের সাথে কনটাক্ট করতে পারলি পরে? আন্টি কিছু বললো?
– না রে আম্মু কিছু বলে না। বলবে কি রোদ তো নিজে কিছু বলতে চায় না। বাড়িতে কারো সাথে মেয়েটা যোগাযোগ করে না ইভেন ওর মা বাবা-র সাথেও না। মা’র সাথে একটু কথা বলে তবুও ঔ কেমন আছো,কি করছো ঔ অবধি। সেদিন আমি এতো রিকুয়েষ্ট করলাম কথা বলবো বলে কিন্তু কিছুতেই আর তাকে রাজি করানো গেলো না। মনে হচ্ছে আমার উপরো তার রাগ অভিযোগ।
– রোদ ভালো আছে তো উজান! ওর হাসবেন্ড?
– আমি ওর হাসবেন্ডের সাথেও কথা বলতে ট্রাই করেছি শিশির বাট তার মাঝে আন্তরিকতার কিছু খুঁজে পাইনি। রোদ ভালো আছে এটুকুই বলে রেখে দিলো।
– ওদের এ্যাড্রেস বা কোথায় থাকে,এসব কিছু?
– আমি জানি না। চাচি আর চাচ্চুকে আস্ক করেছিলাম কিন্তু তারা তো জানিস। এদিকে রোদ…
উজান রোদেলাকে নিয়ে আর কিছু বলতে যাবে ওমনি সামন থেকে হিয়াকে আসতে দেখে শিশির ফিসফিস করে বলে উঠলো,
– হিয়া আসছে,ওর সামনে রোদকে নিয়ে কিছু বলিস না,রাগ হয় খুব।
– হিয়া এরকম কেনো হলো শিশির। মানছি ওর রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক তাই বলে এরকম ভূল বুঝে। রোদের কি দোষ এখানে। রোদ তো তোকে জেনুইন ই..
– সেটা তো হিয়া বুঝতে চাইছে না। সেদিন আমাকে ওভাবে রক্তান্ত দেখার পর থেকে ওর মনে একটা জীদ চাপছে,সবকিছুর জন্য নিজেকে,তোকে,রোদকে দায়ী ভাবছে,তার উপর রোদের বিয়েটাও ওর কাছে অনেক শোকিং একটা বিষয় ছিলো। সে ভাবছে রোদ আমাকে ঠকিয়ে।
– তুই ওকে বুঝিয়ে বল সেটা যে রোদ কোন পরিস্থিতিতে পড়ে সেদিন।
– শুনতেই তো চায় না কিছু। তোর কথা রোদের কথা তুললেই রেগে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। সেই মেয়েকে আমি আর কি বোঝাবো।
– কিন্তু এভাবে আর কতোদিন শিশির। বিয়ে নাহলেও একটা কথা ছিলো,এখন বিয়ে করে দেড়মাসের একটা সংসার লীড করে আলাদা থাকা সবকিছু কি এতোই ইজি।
– আচ্ছা এই ঝামেলা গুলো যাগ। নতুন বাড়িতে উঠি। তুই ফাইনাল টা দে, তারপর তোদের আমি একটা ব্যবস্থা করছি এভাবে তো আসলেই হয় না। এদিকে আবার তোর বাড়ির লোকজন?
– ড্যাম ইউর বাড়ির লোকজন। সাধ্যে থাকলে কবে ঔ বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে আসতাম আমি। নেহাৎ তোর মতো জায়গা বা সেভিংস নেই। নয়তো একটা টিন দিয়ে হলেও আলাদা বাড়ি বানিয়ে হিয়াকে নিয়ে থাকতাম। চাই না এরকম পরিবার আমার।
– ধ্যাত তা বললে হয়। আন্টির কথা একটু ভাব। উনি তো তোর বাড়ির লোকজনের চাপে পড়ে এরকমটা হতে বাধ্য হয়েছে। ওনার কি দোষ এতে।
আর কিছু বলতে পারলো না কেউই, হিয়া এসে শিশিরের পাশে বসে যেতেই পারভেজ তার পরিবার সহ হিয়ার দিকে এক-এক করে বসে নিতেই বাঁকা চোখে তাকিয়ে উঠে উজান। পারভেজ তার বাড়ির সবার সাথে শিশির উজান সহ হিয়ার পরিচয় করিয়ে দিতে খাবার এসে টেবিলে দিয়ে যায়। বেশ গল্প গুজব করেই খাওয়ার টেবিলটা জমে উঠে। এদিকে পারভেজের আজো হিয়ার প্রতি অতিরিক্ত খবরদারী সহ্য হয়ে উঠতে চাইলো না উজানের। হিয়া বুঝতে পারছে উজান ক্ষেপে উঠছে কিন্তু এখন এ-ই পারভেজের থেকে পেছনই বা ছুটায় কি করে মেয়েটা। উফ কি জ্বালা!
হঠাৎই খাবার মাঝে হিয়ার ভীষম উঠলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে পারভেজ। হিয়ার মাথা চাপড়ে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই আঁতকে উঠে হিয়া। পারভেজ ভাইয়া মাথায় হাত রাখছে কেনো মাবূদ। উজান তো আজ আমাকে আস্ত চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে! হিয়ার ভীষম না কমলেও হিয়া মুখে ভাতের লোকমা ঢুকিয়ে বলে আমি ঠিক আছি,প্লিজ আর এরকম করবেন না। পারভেজে মৃদু হেঁসে সরি বলে বললো কষ্ট হচ্ছিল তোমার তাই জন্য,আর শিশিরের ওদিকে গ্লাস ছিলো না তোমাকে দেবার জন্য” হিয়া মুখে একটা অল্প হাসি ঝুলিয়ে ব্যাপারটা ওখানেই স্টপ করতে নিজের ভাতের থালা টা সামনে চটকে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো উজান। পারলে বুঝি খু*ন করে ফেলে পারভেজকে সে সাথে হিয়াকেও। ভয়ে বুক শুকিয়ে আসলো হিয়ার যতোই রাগ ঢাক যা চলে চলুক কিন্তু উজান যা পজেসিভ হিয়াকে নিয়ে, ভাবতেই গায়ে কাটা দিলো হিয়ার। নিজেকে যতোটা পারা যায় সংযত করে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসলো উজান। শিশির দুবার ডেকেও থেমে গেলো, জানে উজানের রাগ! হিয়ার দিকে হাত বাড়িয়েছে অন্য কেউ। বিয়ে বাড়ি না হলে নির্ঘাত আজকে এখানে একটা হুলস্থুল কান্ড বেঁধে যেতো!
হিয়ার ভয়ার্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে হালকা করে হেসে ফেললো শিশির। রাগ উঠলো হিয়ার। চোখ পাকিয়ে বললো” তাড়াতাড়ি খা,দেড়ি দেখলে এবার সত্যি সত্যি তুলে আছাড় মারবে আমাকে আর তার সাথে ফ্রী ফ্রী তোকেও”
!
!
সকাল তখন আটটার কাছাকাছি। ক্যান্টরোডের রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে হিয়া। আর এক মাসো নেই বোর্ড পরীক্ষার। আর তার কি না এখনো রেজিস্ট্রেশন কার্ড সহ এ্যাডমিট কার্ড তোলা বাকি। উফফ ঢাকায় গিয়ে সুখে সংসার টা না করলে আজ আর সকাল সকাল এই কলেজের দিকে ছুটতে হতো না আর তাকে। ভাগ্যিস বেলাল স্যারটা ভালো ছিলো নয়তো সময় মতো কার্ড তুলতে না আসায় তো রতন স্যার একবারে চিবিয়ে খেতো।
হঠাৎই হাঁটতে গিয়ে পেছন থেকে হিয়ার উচ্চস্বরে ডাক পড়তেই পেছন ফিরে তাকালো হিয়া। আরে পারভেজ ভাইয়া যে! এতো সকালে এই মেডিকেলের রোডে।
– ভাইয়া আপনি এই সাত সকালে। তাও আবার এখানে!
– হুম,সকালে মর্নিংওয়াকে বেড়িয়েছিলাম তারপর হাঁটতে হাঁটতে তোমাদের রাসেল ভাইয়ার সাথে দেখা। ঔ তারপর উনি জোড় করে এক হোটেলে নিয়ে গিয়ে নাস্তা করালেন,ওনার এক রিলেটিভ এ্যাডমিট ছিলো ওনাকে দেখতে গিয়েছিলাম সাথে, দেন তো এখন তোমার সামনেই।
– ও আচ্ছা, রাসেল ভাইয়াও তো বাহিরে ছিলেন। তবে আপনি আসার আগে উনি অবশ্য দেশে ফিরেছেন।
– হুম তাই নিয়ে গল্প করলাম। তা তুমি এই সকালে কোথায় যাচ্ছো? কোনো দরকার?
– না আসলে কলেজ থেকে এখনো রেজিস্ট্রেশন আর এ্যাডমিট কার্ড তোলা হয়নি সেগুলো নিতেই স্যার আট টা নয়টার দিকে আসতে বলেছিলেন তাই কলেজে গিয়ে কাগজপত্র তুলে।
– ওহ,সব কাগজপত্র ঠিকঠাক তুলে নেওয়া হলো তো নাকি?
– হুম ওল গুড!
– তা এখন কি বাড়িতে ফিরবে না অন্য কোথাও?
– না আসলে মোহিনীরা আমার অপেক্ষায় ব্যাংক মোড়ের দিকে আছে, একটু ওদের সাথে মিট করে তারপর বাড়িতে ফিরবো। এরপর তো পরীক্ষা শুরু দেখা হয় কি না-হয়। কোচিংও তো বন্ধ দিয়ে দিচ্ছে
– ওহ! তা হেঁটে যাবে নাকি এতোদূর রাস্তা?
– নাহ নাহ,সামনে রাস্তায় উঠে অটো নেবো।
– আচ্ছা বেশ চলো এতটুকু রাস্তা না-হয় একসাথেই হাঁটি।
– উমমম..ওক্কে আসুন!
পারভেজের ইনটেনশন অন্য কিছু থাকলেও হিয়ার দুচোখ শুধু উজানকেই খুঁজছে যেনো। এই তো সামনে মেডিকেল। উজান কি ক্লাস করতে আসেনি আজ। নাকি ফাইনাল বলে কোনো ক্লাস নেই। বা কোনো ডিউটি৷ রোজ তো কাক ভোর হতে না হতেই বেড়িয়ে পড়ে আজ কি তবে….হঠাৎই গল্প করে হাঁটতে গিয়ে আজো হিয়ার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। পারভেজ তড়িঘড়ি করে হিয়াকে রাস্তার পাশের এক ফুচকার স্টলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিতেই রাস্তার এক ধারে কিছুটা বমি করে ভাসিয়ে দেয় হিয়া। পারভেজ অসুস্থ হিয়াকে অনেকটা সারিয়ে তুলে নিয়ে হিয়াকে শান্ত করে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতেই হিয়ার মাথায় হাত রাখতেই অনেকটা ইতস্তত হ’য়ে পড়ে হিয়া। আজো পারভেজ ভাইয়া মাথায় হাত দিচ্ছে ইশশ উজান দেখলে নির্ঘাত আজ সত্যি সত্যি তুলে আছাড় দিতো। এ মুহূর্তে ঠিক করা উচিৎ বুঝতে না পেরে উঠে দাড়িয়ে পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে মুখে ঝাপ্টা দিতে থাকে মেয়েটা। ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে শুরু করে স্বাভাবিক হয়ে হিয়া বলতে শুরু করে,
– আপনি এতো চিন্তিত হবেন না ভাইয়া,আমি ঠিক আছি,আসলে কালকে রাত থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা করছে তার উপর সকালে না খেয়ে বেড়িয়ে এসেছি,তাই জন্য।
– তাই জন্য মানে! তুমি সকালে না খেয়ে এই রোদে কলেজ করতে আসছো কোনো হিয়া। এগুলো কথা কোনো। তুমি এক্ষুনি আমার সাথে গিয়ে কিছু খাবে চলো,আসো। কি হলো আসো বলছি।
– আরে না না,এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। ওদিকে মেহুরা অপেক্ষা করছে এখন নাস্তা করতে গেলেই আরো দেড়ি হয়ে যাবে।
– কোনো কথা না হিয়া। আসতে বলছি তুমি আসো।
হিয়া যাবে না অথচ পারভেজের জোড়াজুড়ি অস্বস্তি হতে শুরু করলো হিয়ার। হিয়া আর পারভেজের এ-ই আরগুমেন্ট চলাকালীন পারভেজ হিয়ার হাতটা চেপে নিতেই উজান এসে উপস্থিত সেই স্টলে। বেচারার তো হিয়ার উপর এমনিতেই রাগ, তারউপর হিয়া তাকে সময় না দিয়ে এই ফুচকা স্টলে পারভেজের সাথে। এখন কোন পুরুষমানুষ নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে অন্য কারো সাথে এতো ক্লোজলি দেখে চুপ থাকতে পারে যখন আবার সেই পিচ্চি বউকে সে মিনিটে একশো লক্ষ কোটিবার চোখে হারায়। এক ধাক্কাতে পারভেজকে সরিয়ে হিয়ার দিকে তেড়ে আসলো উজান। আজ তো খু*ন ই হয়ে যাবে মেয়েটা বোধহয়! হে মাবূদ রক্ষা করো!
– হোয়াট দা হ্যাল ইস দীস উজান। গায়ে হাত তুলছিস কেনো এভাবে তুই?
– কোন সাহসে হিয়ার হাত ধরে টানাটানি করিস তুই। হিয়া কে তোর?
– আমার কে মানে। আর তোর’ই বা কে হিয়া যে সবসময় এতো অধিকার তোর হিয়ার উপর।
– হিয়া আমার ওয়াইফ। আমার বিয়ে করা বউ সে। আর আমার ওয়াইফের উপর আমার কি রাইট সেটা এখন তুই শেখাবি আমায়।
উজানের কথায় একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো যেনো পারভেজ। হ্যা সে শুনেছিলো উজান নাকি হিয়াকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে। কিন্তু লোকমুখের সেই কথা গুলো পাওা দেয় নি সে। ভেবেছিলো সব গুজব। কিন্তু না। তাহলে কি!
এদিকে উজানকে এমন ক্ষিপ্ত হতে দেখে হিয়া দৌড়ে এসে উজানের বাহু ধরে উজানে থামিয়ে হালকা রাগ করে বলে উঠে,
– কি করছো উজান,পাগল হয়েছো তুমি?
– হ্যা পাগলি হয়েছি,কার জন্য হয়েছি,তোমার জন্য হয়েছি।
– দেখো এটা পাবলিক প্লেস এখানে কোনো সীনক্রিয়েট করো না।
– আমি সীনক্রিয়েট করছি,আর তুমি যেটা করছো।
– আমি আবার কি করলাম।
– আমাকে কি বলেছিলে সেদিন তুমি, যে তুমি পড়াশোনা করতে চাও,আমার ফাইনাল সেখানে আমাকে এক্টিভ থাকতে বলো,আমার একটা ভালো ক্যারিয়ার,তোমার একটা ভালো রেজাল্ট এসব এসব তোমার চাই
– হ্যা চাই এখনো চাই কিন্তু এসব কথা এ-ই মাঝরাস্তাতে কেনো আনছো তুমি? আশ্চর্য!
-কেনো আনছি,তুমি প্রশ্ন করছো সেটা কেনো আনছি___সময় চাওয়ার কথা বলে তুমি পারভেজের সাথে এখানে রংতামাশা করতিছো,ফুচকা খাচ্ছো,আর কি দেখতে বলো আমাকে।
– ভেবেচিন্তে কথা বলো উজান। যা মুখে আসছে তাই বলতিছো। শুনো তো আগে আমরা এখানে কেনো কিসের জন্য!
– না শুনবো না আমি। গত দেড় মাস থেকে এ-ই করে আসতিছো তুমি, তোমার কিছু লাগলে শিশিরকে বলো,শরীর খারাপ লাগলে লতাকে জানাও,পড়তে গিয়ে কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নীরবকে ফোন দেও। কেনো আমি কি দোষ করছি। আমাকে জানাতে কোথায় বাধে তোমার। এসবের মধ্যে আমি কোথায় হিয়া। তোমার তোমার এই ফুচকার স্টলে কীসের প্রয়োজন,ফুচকা খেতে মন চাইছে আমাকে বলতা সেটা পারভেজের সাথে আসতে হবে কেনো তোমাকে! বুঝাও সেটা?
– তুমি কোথাকার কোন কথা কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাচ্ছো উজান। আমার উপর তোমার ভরসা নেই?
– ভরসা আছে বলেই এখনো চুপ হয়ে আছি হিয়া। কিন্তু আমার খারাপ লাগাটাও তোমাকে বুঝতে হবে। আমার তোমাকে দরকার হিয়া!
একটা বড় করে শ্বাস টেনে নিজের রাগটাকে শান্ত করে নিয়ে হিয়া বললো,
– তুমি বাসায় যা-ও উজান। আর দু চারদিন আছে ফাইনাল পরীক্ষার সেখানে মন দেও।
– তুমি না থাকলে এসব পরীক্ষা, রেজাল্ট এগুলো দিয়ে আমি করবো টা কি হিয়া? ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড না যে আমি এভাবে তোমাকে ছাড়া পারছি না আর। কি চাইছো তুমি তালাক দিতে চাইছো বলে দেও সেটা। প্রতিনিয়ত এরকম যন্ত্রণা দেবার চাইতে একবারে শেষ করে দেও আমাকে।
– আমি আসছি উজান। আমার শরীর টা ভীষণ খারাপ লাগছে।
– না তুমি যাবে না। আমার কথা গুলোর এ্যান্সার না দেওয়া অবধি তুমি কোথাও যাবে না।
– ঠিক আছে। থাকো তুমি এখানে। আমিও বাধ্য নই তোমার সব হুকুম শুনে, সব কথা মেনে চলতে। আমি এখানে কলেজে একটা কাজে আসছিলাম, মেহুরা ওয়েট করছিলো ভেবেছিলাম কাজটা শেষ হলে ওদের সাথে একটু মিট করবো কিন্তু তুমি আর সেটা হতে দিলে না।এখন তোমার যেখানে খুশি যা-ও তুমি যা ইচ্ছে হয় করো কিন্তু খবরদার আর আমাকে খোঁজ করতে আসবে না।
– হিয়া শোনো হিয়া,হিয়া লিসেন হিয়। হিয়া। ড্যাম..
!
!
কিছুদিন পরঃ
আজ দুদিন হলো হিয়াদের নতুন বাড়িতে শিফট করেছে হিয়া আর শিশির। যদিও ফ্ল্যাটের বেশিরভাগ কাজেই এখনো বাকি কিন্তু হিয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে এ বাড়িতে আসা শিশিরের। এ দুদিনে এসব গোছানো মিলিয়ে সব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উজানকে বেশি সময় দিয়ে উঠতে পারে নি হিয়া। যদিও এখন সে উজানকে সময় দেয় না কিন্তু ঔ দিন শেষে রাতে গিয়ে যাও বা এক দুমিনিট কথা হয় সেটাও আজ কয়েকদিন যাবৎ বন্ধ যেনো। একদিকে হিয়ার এ-ই ভালোবাসা নামক অভিমানের অত্যাচার তো অন্য দিকে বাড়ি থেকে টাকা পয়সা তুলে নিয়ে মানসিক টর্চার। পুরোই যেনো মাথা পাগল হয়ে আছে উজানের। নিজের একটা ডেবিট কার্ডে টাকা নেই না আছে নিজের টিউশনের বাকি পয়সা। কোথায় এখন সে হিয়াকে এর্টা ওটা কিনে দিবে উল্টে শিশিরের থেকেও বারবার একশো দুইশো করে চাইতেও লজ্জায় পুরো বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ছেলেটা!
রাগে বিরক্ত হয়ে কাল রাতে আর বাড়িতেই ফেরেনি উজান। ছিলো এক বন্ধুর বাড়িতে সেখানেই মনে দুঃখ মেটাতে খেয়েছিলো কিছু ছাইপাঁশ। যেগুলোর রেশ কোনোভাবেই লুকোনো যায়নি তার মায়ের থেকে।
– তুই নেশা করেছিস উজান! এসব কিসের গন্ধ আসতিছে তোর গা দিয়ে,কালকে সারারাত কোথায় ছিলি তুই! উজান তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?
– মেডিকেলে ছিলাম মা,মেডিসিন বিভাগে কোনো ইন্টার্নি ছিলো না তাই রাসেদ স্যারের কথাতে।
– আমাকে মিথ্যা বলছিস তুই উজান। তাকা আমার দিকে দেখ আমাকে। কি খেয়েছিস,তোর চোখ মুখ এরকম লাল হয়ে আছে কেনো? তুই তুই এরকম নেতিয়ে কেনো আছিস?
– কিচ্ছু হয়নি মা,আমি ঠিক আছি।
নিজের মা’কে পাশ কাটিয়ে ডাইনিং পেড়িয়ে রুমে আসতে যাবে ঠিক সে মুহুর্তেই ডাইনিং এ বসা চাচা চাচিদের তার হিয়াকে নিয়ে কিছু অশোভন কথা কানে পৌঁছাতে থেমে যায় উজান। তাদের ভাষায় তারা হিয়াকে যেভাব সজ্ঞায়িত করলো যেনো মনে হয় এ-ই পৃথিবীর সবচাইতে লোভী,নিকৃষ্ট এক বস্তুির মেয়ে হিয়া। নিজেকে আর আজকে ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়লো উজানের কাছে। হারিয়ে ফেললো সে নিজের সব সংযম। ভূলে গেলো সব সম্পর্ক। ভূলে গেলো বয়সে কে বড়,অপরদিকের মানুষটা তার সম্মানের কি না। ডাইনিংএ এসে এক এক করে সব কাঁচের জিনিস ভাঙ্গলো উজান। ভয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো সবাই। নিজের ছেলের এ-ই অগ্নিরুপ দেখে ভয়ে ওখানেই হাত পা কাঁপতে শুরু করলো বাসবির। উজান যে আজ বড্ড লাগামহীন! বড্ড আগুনে বীলিন । রোদের বাবার কলার চিপে ধরে, প্রখর এক অগ্নি দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে উজান বললো,
– চাচা হোন আমার,এতোদিন এই রক্তের খাতিরে চুপ থেকে ছিলাম। অন্যায় দেখেও কিছু বলিনি। তাই বলে ভাববেন না আমি এখনো চুপ থাকবো।
– তুমি তোমার চাচার গায়ে হাত তুলছো উজান! এতো স্পর্ধা তোমার!
– শুধু তো কলারটা ধরেছি হাত আর তুললাম কোথায়। এরপর যদি এ-ই বাড়ির কারো মুখে হিয়া সম্পর্কে আমি একটা বাজে মন্তব্য শুনি তো সেদিনই তাকে জ্যান্তপুতে দিয়ে আসবো আমি। হিয়া আমার ওয়াইফ, এই শাহরিয়ার বংশের বড় নাতবউ ভূলেও তার দিকে খারাপ ইঙ্গিতে কথা বলেছেন তো সেদিনই আপনাদের!
উজানের কন্ঠ ছিলো ভারী।চোখে ছিলো আগুনের লাল আভা। সেই মোটা কন্ঠের এরকম হুশিয়ারি ভয় পেয়ে উঠলো যেনো সবাই। উজানকে ক্ষেপে উঠতে দেখে ভয়ে চাচি এসে থামাতে চেষ্টা করলো,বাসবি এসে উজানের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু উজানকে আর আজ সামলাতে পারলো না।
– ভাবী আপনার ছেলেকে বুঝিয়ে দিন সে কিন্তু একজন কর্ণেলের গায়ে হাত তুলছে। আমার ক্ষমতা ঠিক কতোটা সে কিন্তু..
রাগে রোদের আব্বুকে ফেলে দিয়ে ডাইনিং থেকে একটা চেয়ার তুলে সেই টেবিলে আছাড় মারলো উজান,সাথে সাথে টেবিল টা ভেঙে পুরো বিশ্রী ভাবে ছড়িয়ে গিয়ে লন্ডভন্ড হয়ে উঠলো পুরো পরিবেশ!
– রাখেন আপনার এই সো কলড পদবীর অহংকার। যে নিজের মেয়েকে কুরবানি দিয়ে দেয় কিছু টাকার বিনিময়ে সে আর কিসের মেজর,কিসের কর্ণেল। আপনাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের মেয়ে বিয়ে হয়ে যাবার পর আপনাদের সাথে না বরং আমার মা’র সাথে যোগাযোগ রাখে। আপনারা তাকে তাজ্য কি করতেন সে তো নিজেই আপনাদের তাজ্য করে দিছে। কি পেলেন এসব পদমর্যাদা এসব টাকার স্তুপ,এসব বাড়ি গাড়ির অহংকার করে এক তো নিজের ছেলেকে একটা নেশাখোর বানিয়ে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি মজা করতে দেখলেন আর নিজের মেয়েটা তাকে তো জিন্দালাশ বানিয়ে রাখলেন। আখিরাতের ভয় হয় না আপনাদের! বিচার দিবসে কি হিসাব দিবেন নিজেদের হয়ে। বুক কাঁপে না একটুও।
বাসবি এসে উজানের হাত ধরে উজানকে নিজের রুমে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু উজান শুনে না। যেনো সব রাগ,সব ক্ষোভ আজকেই পুষিয়ে নিতে মাঠে নামছে সে।
– নিজের ছেলেকে সামলাও ভাবী। নেশা করে এসে নিজের চাচার সাথে মার পিট করছে। পরিবারের লোকেদের মাঝে বিষয়গুলো জানাজানি হলে মানসম্মান থাকবে তোমার। সবাই তোমাকে আর তোমার ছেলেকে ছিঃ ছিঃ করবে।
– উজান চল,উজান চল বলছি। উজান আমার কথা শোন।
– ছিঃ ছিঃ তো আপনার মেয়ে আপনাদের উপর করে চাচিআম্মু। আমার উপর নাহয় বাড়ির অন্য জন করবে কিন্তু আপনাদের উপর তো আপনার কোলের সন্তান করে। আজ এখানে দাঁড়িয়ে বলে রাখলাম এই অহংকার এই সম্পদ’ই একদিন আপনাদের পতনের মূল হবে দেখবেন। সময় আছে ভালো হ’য়ে যান। আযাব টা কম ভোগ করবেন।
– তোর আব্বু আজকে আসতিছে না বাসায়। আমি সব বলবো। আর এটাও বলবো এভাবে তোদের সাথে এক ছাঁদের নিচে থাকা সম্ভব না আর। নেহাৎ শ্বশুরের নিজের ভিটে বলে এতোদিন সহ্য করে ছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে এখন আলাদা হবার যথেষ্ট সময় হয়ে গেছে!
আরো অনেক দফা তর্কাতর্কির পর উজানকে নিজের রুমে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় বাসবি। উজানের চোখ মুখের অবস্থা খুব একটা ভালো না। মনে হয় কালকে রাত থেকে এখন অবধি না ঘুমানো সে। সাথে যে এসব কি নেশা গিলছে সে কে জানে! বাসবির খাবার এনে দিতে চাইলেও উজান শুনলো না। বললো তার খুব ঘুম পাচ্ছে সে এখন একটু ঘুমাতে চায়। কথা বাড়ালো না বাসবি। উজানকে রেখে রুমে আসলো নিজের। কান্নায় ভেঙে গিয়ে একটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই সাহায্য চাইলো তার ছেলের নেক হেদায়েত যেটাতে তার ভালো হয়,হিয়ার ভালো হয়,এই পরিবারের ভালো হয়। অপরদিকে রুমের দরজা লাগিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা ব্যাঙ্গাত্বক হাসি দিলো উজান এখনো হিয়া তার টেক্সট সীন করেনি অথচ কাল রাত দুটো অবধি সে অনলাইনে ছিলো! ফোনটা সাইলেন্ট করে সোফার উপর ছুঁড়ে ফেললো উজান। মাতাল সুরে গুনগুন করতে করতে বিছানায় শুইয়ে ঘুমের রাজ্য নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। একমাএ এ-ই ঘুম টাই তো পারে সবকিছু ভূলিয়ে একটু নিজেকে শান্ত রাখতে।
চলবে….