?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৩৫
#ইভা_রহমান
?
জীবনের এই সময়ে অসময়ে আসা ঝড়গুলোর তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জীবনটাকে সাজিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো ক্ষত হৃদয়ে ভরে ওঠা মানুষ চারটা। সব হারিয়ে যেই খড়কুটো গুলো পড়েছিলো সেটা দিয়েই একটা সুন্দর জীবনের বুনুন গাঁথতে থাকলো সবাই। উজানের ফাইনাল শেষ হলো,সাথে ফাইনাল শেষ হবার সাথে সাথে শুরু হলো হিয়ার বোর্ড পরীক্ষা। হেলেদুলে সেই পরীক্ষা টাও টপকালো হিয়া,সাথে প্র্যাক্টিকেলো কম্পিলিট করলো। কিন্তু পরীক্ষা ঠিক কেমন দিলো তার সঠিক ব্যাখা হিয়া দিতে পারলো না। পারবেই বা কিভাবে হিয়া যে এখন মেন্টালি অনেকটা আনব্যালেন্সড হয়ে আছে। হ্যা হিয়া এখন আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক নেই। অনেকটাই মানসিক এক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার শরীর মন সবদিক দিয়ে সে নিজেকে বেসামাল করে ফেলেছে। এখন সে নিজের সাথেই নিজে একা একা কথা বলে,কখনো বা কোনো পুতুল জড়িয়ে ঘুম পাড়ানি গান গায়,কখনো সেই জানালার পেছনে গিয়ে বাচ্চাটার দাফনের জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে নিজ মনে কথা বলতে থাকে। শিশির সারাদিন বাড়িতে থাকে না তাই হিয়ার এই মানসিক অবস্থার সাথে সে খুব একটা অবগত ছিলো না। তারউপর নিজের ফাইনাল আর হিয়ার পরীক্ষা দেখে উজানো হিয়াকে খুব একটা বিরক্ত করেনি সেই সুবাদে উজানেরো হিয়ার মেন্টাল কন্ডিশন সম্পর্কে খুব একটা সম্মুখ ধারণা মেলেনি। তবে হিয়া যে আগের মতো স্বাভাবিক নেই সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয়নি উজানকে। উজান ঠিক হিয়ার মানসিক ক্ষতিটার কথা দিনদিন উপলব্ধি করতে পারছিলো।
সেদিনের সেই ট্রমা থেকে যে হিয়া এখনো বের হতে পারেনি তা উপলব্ধি করেই উজান ইদানীং হিয়ার সবসময় আশেপাশে থাকতে চেষ্টা করে। যখনি ডিউটি শেষ হয় সোজা হিয়ার কাছে চলে আসে সে। কখনো হিয়া উজানকে জড়িয়ে ধরে একা-একা কিসব বলে উজানকে আঁকড়ে ধরতে চায় কখনো বা দূরছাই করে উজানকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তবুও উজান হিয়াকে ছাড়ে না। হিয়াকে সে ছাড়তে চায় না,আসলে হিয়াকে যে সে কখনো ছাড়তেই পারবে না!
!
!
বাহিরে আজ আকাশের অবস্থা খুব একটা সুবিধের না। ক্ষণে ক্ষনে সে তার চিএ পাল্টাচ্ছে। কখনো মেঘ ভারী হয়ে কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো আকাশ কখনো সেই কালো মেঘের এক সরু ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। তবে বাতাসের তীব্রতা আর মেঘের কালো কালো থোকা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আজ যখনতখন বৃষ্টি নামবে প্রকৃতির কোল জুড়ে। আজো এই ঘন অন্ধকার পরিবেশের মাঝেও সেই দাফনের জায়গাটায় গিয়ে বসে আছে হিয়া। আপনমনে ঝড়ে পড়া কামিনী ফুল গুলো কুঁড়ে নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে একা একা হাসছে তো কখনো একা হয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। কেবলই ডিউটি শেষ হয়েছে উজানের। আর নিজের সেই উষ্কখুষ্ক চুল,ঘামে ভেজা শরীর,ক্ষুধার্ত পেট নিয়েই একদম সোজা নিজের বাইক ঠেকিয়েছে হিয়ার বাড়ির চৌকোঠে। উজান রোজ বাড়িতে আসে বিধায় শিশির লকের এক্সট্রা চাবিও উজানকে দিয়ে রাখছে,হিয়া কখন গেট খুলে না খুলে এই ভয়ে। সেই চাবি দিয়ে লক খুলে রুমে আসলো উজান,কিন্তু হিয়াকে খুঁজে পেলো না কোথাও। দেখলো বিছানার উপর একটা প্লেটে খাবার পড়ে আছে গোটা অর্ধেক। চিন্তার ভাঁজ পড়লো উজানের চোখেমুখে। স্টেথোস্কোপ টা বিছানায় রেখে জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই খেয়াল করলো আজো তার পিচ্চিটা ঔ দাফনের জায়গাটায় বসে একা একা কিসব বিড়বিড় করছে। হিয়ার সেই অসহায় মায়াভরা মুখটার দিকে তাকাতেই বুক কেঁপে উঠলো উজানের। হিয়ার এই করুন অবস্থা যে উজান কিছুতেই আর নিতে পারছে না। কি হলো এই কয়েকটা দিনের মাঝে যে তার পিচ্চি টা কিনা এভাবে।
ধীর পায়ে ঘর ছেড়ে উজান এসে বসলো হিয়ার পাশে। উজানকে দেখে মুখে এক মলিন হাসি ঝুলিয়ে হিয়া মাটিতে পুরো বসে গিয়ে উজানকে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরলো। হিয়ার সাথে উজানো বসে পড়লো সেই ধুলোমাখা মাটিতে। পা সামনে বিছিয়ে পিঠ ঠেকালো দেওয়ালে। হিয়াকে বুকে জড়িয়ে চুমু খেলো হিয়ার মাথায়।
– কি করছো এখানে,বৃষ্টি আসবে না? ভিজে গেলে তখন?
– পড়ছে তো বৃষ্টি এই দেখো ঝুরোঝুরো বৃষ্টি নামছে আকাশ থেকে। কি সুন্দররর!
– হুম সুন্দর। ওঠো এখন ঘরে যাই আমরা,চলো।
-যাবোই তো থামো না।_____আমাদের আরেকটা বাবু হবে দেখিও উজান,একদম ঠিক আমার মতো গুলুমুলু হবে।
– আরেকটা না পাখি বলো প্রথম বাবু হবে।
– আরে না,আমাদের আরেকটা বাবু আসবে তো।
উজান হিয়ার শরীরে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– তাহলে প্রথম বাবুটা কোথা থেকে আসবে? তার কি হবে?
উজানের প্রশ্নে হিয়া উঠে বসে সেই দাফন হওয়া মাটিতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে যে তাদের বাবু নাকি এসেছে আর সে এই মাটির ভেতরে ঘুমিয়ে আছে।
– আরেএএ প্রথম বাবুটাতো আসছে এ-ই দেখো। এখানে ঘুমোচ্ছে। আমার সোনা বাবুটা। আমার ময়নাপাখি টা। কি সুন্দর ঘুমোচ্ছে দেখো। বাবা আসছে,বাবাকে দেখবি না বাবু,উঠ না একটু উঠ,উঠ।
হিয়ার এই পাগলামি যেমন উজানকে নিত্যদিনের মতো বিস্মিত করে তুললো তেমনি উজানের বুকের ভেতরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে হাজার, লক্ষ,কোটি টুকরো টুকরো করে ফেলছিলো। না চাইতেও উজানের চোখ দিয়ে টপটপ ফোঁটা বেয়ে লোনাজল ঝড়ে পড়লো। হিয়া উজানের গাল বেয়ে আসা পানি গুলো মুছে দিয়ে বললো “তুমি কাঁদছো কেনো হিয়ানের বাবা,হিয়ান ঘুমাচ্ছে বলে তুমি কাঁদছো, সিয়াম ভাইয়া যদি আবার আমার পেটে মারতে আসে ঔজন্য তো আমি আমার বাবু টাকে এখানে মাটির তলে লুকিয়ে রাখছি,ঠিক করছি না আমি বলো” উজান হিয়াকে ঠিক এই মুহুর্তে এই প্রশ্নের কি উওর দিবে বুঝতে পারলো না। নিজেকে সংযত করে নিলো উজান। শার্টের হাতা দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিয়ে হিয়াকে নিয়ে রুমে আসলো। হিয়াকে আকুতির সুর টেনে বললো”খুব ক্ষিদে পেয়েছে হিয়া,একটু খাইয়ে দিবে আজ” হিয়া মুচকি এক হাসি দিয়ে বললো তুমি গোসল করে আসো আমি খাবার বেড়ে এক্ষুনি নিয়ে আসছি। গোসল করে আসলো উজান। সাথে ধুয়ে দিলো পড়নের শার্টটা। হিয়ার ঝুড়িতে রাখা স্যান্ডোগেঞ্জি টা পড়ে নিয়ে তোয়ালে হাতে মাথা মুছছে সেই মুহুর্তে প্লেটে খাবার সাজিয়ে আনলো হিয়া। গরম ভাত সাথে মুরগীর কষা ভূনা আর লালশাক ভাজি। হিয়া ভাতের গোল গোল লোকমা বানিয়ে উজানকে খাইয়ে দিতে যাবে ওমনি হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে থামিয়ে দিলো উজান। হিয়া কপালে ভাঁজ এঁটে বললো “কি,খাবে না? মৃদু হেঁসে দিয়ে উজান হিয়ার থেকে ভাতের প্লেটটা নিয়ে বললো আজ আমি খাইয়ে দেই এ-ই পিচ্চি টাকে? চলবে? মুখে বিরাট এক হাসি ঝুলিয়ে হিয়া বললো “বেশ,তাই দেও” উজান তার আলতো হাতে কখনো হিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে তো কখনো নিজে খাচ্ছে। এদিকে হিয়া উজানের পাত থেকে হাড্ডি তুলে নিয়ে কটকট করে চিবোচ্ছে আর বকবক করে করে উজানের মাথা খাচ্ছে। উজানো আজ এমন করে গপগপ করে ভাত খাচ্ছে যে না জানি পেটে কতো ক্ষুধা তার!
!
বাহিরে বৃষ্টি অনেকক্ষন যাবৎ শুরু হয়েছে। আর এতোই তাল মিলিয়ে বৃষ্টি ঝরছে যে দেখে তো মনে হচ্ছে না এ-ই বৃষ্টি এখন আর থামার নাম নিবে। শিশির আর এই বৃষ্টিতে খেতে আসেনি পলাশকে পাঠিয়েছে দুপুরের খাবার নিয়ে আসার জন্য। হিয়া টিফিন বক্সে করে শিশিরের জন্য দুপুরের ভাতটুকু দিয়ে সব দরজা জানালা লাগিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে বসলো। গা টা যেনো এই বৃষ্টিতে অসম্ভব রকমের শিরশির করছে তার। ফ্যানের হাওয়ার সাথে একটা পাতলা কাঁথা গায়ে জড়ালে মন্দ হয় না বিষয়টা। তাই করলো হিয়া। ফ্যান স্পীডে দিয়ে উজানকে বললো একটা কাঁথা নিয়ে আসো না গো। উজান চোখ পাকিয়ে হিয়ার আলমারি থেকে একটা কাঁথা বের হিয়ার মুখের উপর ঠাস করে ছুঁড়ে দিয়ে রুমের লাইটগুলো বন্ধ করে দিলো। চোখ পাকিয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুইয়ে পড়লো হিয়া। হিয়ার রুমের দুটো জানালা। একটা এদিকের পেছন সাইডে,যেই জানালার পেছন বারবার হিয়া বাচ্চা টাকে দাফন দিয়েছে, আর একটা জানালা বাহিরের ব্যালকুনি বরাবর যেই ব্যালকুনিটুকু দিয়ে প্রথমে গ্রীলের দরজা খুলে তারপর ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে হয়। আর সেই জানালা বরাবর লাগানো হিয়ার বিছানা….দু জানালা খুলে রেখেছে উজান। বাতাসের বেগ এতোই যে পর্দা পর্যন্ত পতপত শব্দ করে উড়ে ছুটছে। মাথার কাছের পর্দাটা জানালার কানিতে গুঁজে দিলো হিয়া। উজান হিয়াকে আর বেশি থাইটা মেলতে দিলো না কারণ এই জানালা দিয়ে গ্রীল ভেদ করে বাহিরের সবকিছু স্পষ্ট দেখা মিলে। তবে বাহিরে যা তুমুল বৃষ্টি আর ঘন অন্ধকার এ-ই মুহুর্তে উঠোনে এসে এদিকে কেউ দাঁড়াবে বলে মনে আর হয় না। হিয়াকে নিজের সাথে কাঁথার তোলে মুড়ে নিলো উজান। হিয়ার ঠান্ডা লাগছে কি আর এই লোকটাকে দেখো স্যান্ডোগেঞ্জি টাও খুলে ফেলে আসলো। উজানের খোলা বুকের মাঝে মুখ ডুবালো হিয়া। হিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে উজান হিয়ার সাড়া শরীর বুলিয়ে দিলো। হিয়া উজানের বুকের লোম গুলো নিয়ে খুটখুট করতে বললো,
– ইশশ কি বড় বড় হয়েছে দেখো লোমগুলো। কি বাজেএ দেখতে।
– হুম খুব বাজে দেখতে। দেখি এখন ঘুমোও আমরা পড়তে বসবো রাতে। এদিকে পরীক্ষা যে কেমন দিলে সেটাও তো জানালে না। তারউপর এই মেডিকেল কোচিং।
– হুম তো?
– তো আবার কি। সারাদিন এরকম করে যে থাকো আসল পড়াটা পড়ো কোথায় আর শুনি। এভাবে কখনো চান্স হবে।
– হবে হবে,তুমি এখন ঘুমোতে দেও তো আমাকে। ওদিকে আমাদের বাবুটা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আর একটু থাকতেও দিলে না। কতো খারাপ বাবা তুমি একটা। একদম বাজে।
হিয়ার এই অযৌক্তিক কথায় আর কথা বাড়ালো না উজান। ঠিক করলে আর কিছু দিন দেখবে যদি এরপরো হিয়া এরকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে গিয়ে এসব আবোলতাবোল বকতে থাকে তাহলে শিশিরকে বলে একটা ভালো সাইক্রাটিসের সাথে যোগাযোগ করবে সে। হিয়া উজানের আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গুজিয়ে বকবক করতে গিয়ে কখন যে বৃষ্টির তালে নিজেও ঘুমে হারিয়ে গেলো জানা নেই তার। এদিকে ঘুমন্ত হিয়াকে আগলে উজানো চোখ বন্ধ করলো। কালকে সারারাত ডিউটি ছিলো তার। সাথে সকালেও ফিরতে পারেনি সে। এখন এই শীতল পরিবেশে হিয়াকে কাছে পেয়ে যেনো রাজ্যের ঘুম এসে নামলো তার দু চোখ ভরে। হিয়াকে আগলে সেও ঘুমিয়ে পড়লো একটা সময়ে। জানালা দিয়ে হাওয়া এসে জোড়ো হলো সমস্ত ঘরে। সাথে শিহরণ জাগিয়ে দিলো এই প্রেমিকযুগলের শরীরেও। কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দু’জন। সাথে বৃষ্টিও ঝরতে শুরু করলো তার অবিরাম ধারাতে!
!
!
রাত তখন আটটার কিছুপর,কলিংবেলের কিরিং কিরিং শব্দে একটা বিরাট আড়মোড়া দিয়ে চোখ খুললো হিয়া। আর চোখ মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো উজানের প্রশ্বস্থ বুকের খাঁজে। মৃদু একটা হাসি টেনে নিজের দিকে চোখ পড়তেই জিহ্বে কামড় বসিয়ে আবারো উজানকে জড়িয়ে ধরে উজানের পুরো মুখে হাত বুলিয়ে দিলো সাথে উজানের চুলে বিলে কাটতে কাটতে বললো “ফাজিল ছেলে একটা নিজেও জামা খুলছে খুলছে ঘুমের তালে আদর করতে করতে আমার জামাটাও টেনে খুলে নিছে,বদমাইশ। হঠাৎই আবার কলিংবেলের কিরিং কিরিং কানে পৌঁছাতে চমকে উঠলো হিয়া। এই রে ভূলেই তো গেছে সে দরজা খোলবার কথা। ইশশ! উজানকে পাশ কাটিয়ে, টুক করে জামাটা গায়ে জড়িয়ে,দরজা খুলে দিলো হিয়া। আরে ভাইয়া যে আজ এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লো। হিয়ার হাতে এক গাদা নাস্তার প্যাকেট ধরিয়ে শিশির রুমে আসলো। জুতো জোড়া খুলে নিতে নিতে বললো,
– বাহিরে তুমুল বৃষ্টি বুড়ি,আজকে আবার ভিজিস নিতো?
– আরে না কোথায় ভিজতে পারলাম। ঘুমে এমন বুদ হয়ে ছিলাম যে এদিকে বন্যা হচ্ছে টেরই পায়নি।
– হুম,তোর রুমে কে ওটা,উজান?
– হুম,স্যারো ও তো ঘুমে ছিলো আমার সাথে। কি বৃষ্টি তখন।আচ্ছা তুই গোসল সেরে আয় আমি ডেকে দিচ্ছি ওনাকে!
হিয়ার কথায় একটু অবাক হলো শিশির। এইতো কালকে না পরশু উজানকে সহ্য করতে না পেরে তাড়িয়ে দিয়েছিলো হিয়া এখন কি না আবার এরমধ্যে ভাব হ’য়ে গেলো। সত্যি এরা পারেও বটে। শিশির গোসল সেরে আসতেই উঠে পড়লো উজান। হিয়া উজানকে একগাদা পেয়াজ আর রসুন ছিঁড়তে বসিয়ে দিয়ে বললো” রাতে গরমগরম খিচুড়ি করবো,এখন ঝটপট এগুলো কেটে দিন তো” বাধ্য প্রেমিক সরি বাধ্য হাসবেন্ডের মতো চাকু হাতে পিয়াজ ছিঁড়তে বসে গেলো উজান। এদিকে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে হিয়ার রুমে এসে উজানের হাতে চাকু আর সাথে পেঁয়াজ দেখে হেঁসে ফেললো শিশির,আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে মিলতে বললো,
– কোথায় ডাক্তারবাবু চাকু ছুঁড়ি নিয়ে মানুষের হার্ট ওপেন করবে তা না তাকে কিনা হার্টের বদলে ধরিয়ে দেওয়া হলো পেঁয়াজ রসুন,সত্যি।
– বেশি বকবক করিস না তো। তোর ইন্টারভিউ কবে কি হলো সেটা বল এখন? সেই একবার বগুড়া যাচ্ছিস আবার চিটাগং,আসলে কাহিনী টা কি?
– কি আবার কাহিনী। কেবলই তো অনার্স ফাইনাল শেষ করলাম এখনি কি বললেই চাকরি হাতে পাওয়া যায়!
– হ্যা তো এদিকে চাকরির জন্য চেষ্টা কর ওদিকে এমবিএ টাতেও ভর্তি হ।
– আচ্ছা দেখি,পরশু আরেকটা ইন্টারভিউ আছে চাচ্চুর এক বন্ধুর অফিসে দেখি কি বলে ওনারা তারপর ভাববো।
উজান শিশিরের প্রতিউওরে গিয়ে কিছু বলতে যাবে ওমনি হাত ফস্কে চাকুটা বেসামাল হয়ে যায় তার আর সাথে সাথে হাতের মাঝ বরাবর এক বড় চিড় ধরে কেটে গিয়ে গলগল করে রক্তে ভরিয়ে তুলে পুরো ফ্লোর সহ উজানের কোলের উপরে রাখা কুশনটাকেও। তোয়ালে টা ছুঁড়ে দিয়ে দৌড়ে উজানের কাছে আসলো শিশির। অস্থির কন্ঠে উজানকে সাবধানতার সংজ্ঞা দিতে দিতে হিয়াকে ডাকতে শুরু করলো। চাউল ধোঁয়া পাতিল হাতে” কি হ’য়েছে কি,একটা পেঁয়াজ রসুন কাটতে দিয়েছি তাও এরকম অবস্থা,আসছি আসছি” বলে ফ্যাচ ফ্যাচ করতে করতে রুমে এসেই থমকে গেলো হিয়া। রক্ত! কিসের রক্ত এতো!
শিশির রাগান্বিত সুর টেনে বললো দাঁড়িয়ে মুখ কি দেখছিস বুড়ি,যা গিয়ে ফাস্ট এইডের বক্সটা নিয়ে আয় জলদি” হিয়া শিশিরের হুকুম শুনবে কি সে তো এই রক্তের বন্যা দেখে ওখানেই কেমন একটা কাঁপতে শুরু করলো। শিশিরের চিৎকার,উজানের চোখে মুখে ভাষা কষ্ট,আর এই ফ্লোরসহ উজানের গায়ে ঝরে পড়া রক্তের বন্যা,এসবে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না হিয়া। চোখের সামনে ভাসতে থাকলো শিশিরের সেদিনের সেই রক্তাক্ত শরীর,সাথে ভেসে উঠলো মিচক্যারেজের সময় হওয়া রক্তের বারিধারা,সিয়ামের অত্যাচরে যখন প্রতিবাদ স্বরুপ চাকু হাতে নিয়ে একটা আঘাত ছুঁড়লো সেই সময় সিয়ামের বুক চিঁড়ে বেড়িয়ে আসা রক্ত,সব কিছু মিলিয়ে হিয়াকে পুরো চেপে ধরলো বিষয়টা। রক্ত রক্ত রক্ত। হিয়াকে আবার নিয়ে গেলো সেই বিভীষিকাময় কালো অধ্যায়ের ভাঁজে। একটা বিভৎস চিৎকার দিয়ে আঁতকে উঠলো হিয়া। শিশির আর উজান দুজনই কথা বলতে বলতে থেমে গিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠলো হিয়ার দিকে। কি হলো হিয়ার। হিয়া এরকম করছে কেনো! শিশির হিয়াকে ধরবে না উজানকে দেখবে হিমশিম খেয়ে বসলো যেনো। উজানের ইশারায় হিয়াকে এসে ধরে নিতেই শিশিরের শার্ট চিপে ধরে তার পেছনে লুকিয়ে পড়লো হিয়া। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো “শিশির ভাইয়া তোর কি হইছে রক্ত কেনো তোর এতো,ভাইয়া সিয়াম আমার পেটে মারছে ভাইয়া,আমার বাবুটা পেট থেকে বের করে নিচ্ছে ভাইয়া,এই লোকটাকে তুই নিয়ে যা ভাইয়া,এই লোকটাকে তুই দূরে নিয়ে যা,তোকে ডাক্তার সারিয়ে তুলবে তো ভাইয়া তুই ভয় পাস না,আমি আছি তো,ভাইয়া,রক্ত কেনো ভাইয়া,এই লোকটাকে বল না বেড়িয়ে যেতে” হিয়ার চিৎকারে চিন্তার ভাঁজ পড়লো দু’জনের কপালে। কি হচ্ছে কি হিয়ার সাথে এসব। রক্ত ভেজা হাতে উজান উঠে এসে হিয়াকে ধরতে নিতেই আরো ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করলো হিয়া। শিশিরের পেছনে লুকিয়ে বাঁচতে চাইলো যেনো এক প্রকার। একটা সময় চিৎকার করতে করতে সেন্স হারিয়ে ফেললো হিয়া। লুটিয়ে পড়ে নিতেই উজান তার রক্তভেজা হাতে হিয়াকে ভাসিয়ে ধরলো। একদিকে নিজের হাতের এই রক্তাক্ত অবস্থা অন্য দিকে হিয়ার এই কন্ডিশন। দিশে হারা হয়ে পড়লো উজান। বাহিরে তুমুল বৃষ্টি এরমাঝে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে হিয়াকে মেডিকেল বা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া বড্ড সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উপায়ন্ত না পেয়ে ডাক্তার সমীরকে ফোন করলো উজান। ওনার বাসা এই এলাকাতেই সাথে উজানদের সাথে সম্পর্কো ঘনিষ্ঠ তার উপর উজান ছিলো ওনার একজন প্রিয় স্টুডেন্ট। তাই উজানের একটা ফোনেই এই তুমুল বৃষ্টিতে উনি এসে রাজি হলো হিয়াকে দেখতে। এ-র মধ্যে হিয়ার পেশার চেক করে নেওয়া শেষ উজানের। সমির স্যার হিয়াকে ইমিডিয়েট একটা স্যালাইন আর কিছু মেডিসিনের কথা বলে বললো দূত নিয়ে এসে এগুলো স্যালাইনে পুশ করে ইনজেক্ট করতে। হিয়ার পেশার লো হ’য়ে হিয়া সেন্স হারিয়ে ফেলছে এমনি বেশি ভয়ের কিছু নেই। সমির স্যারের নির্দেশে সব ব্যবস্থা করলো উজান। সাথে ফোন পাবার সাথে সাথে নীরব সহ বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো রিমা। রিমাই হিয়াকে স্যালাইন দিয়ে ঔষধ পুশ করিয়ে দিলো। সমীর স্যারকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে বসলো উজান। বাহিরে বৃষ্টি থেমেছে একটু আগে। এখন আর বৃষ্টি ঝরবে বলে মনে হয় না সেরকম। উজানের থেকে শুধু আজকের না সাথে এতোদিন হিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাগুলো শুনে নিতে থাকলো রিমা। হিয়ার এ-ই একা একা কথা বলা,মানসিকভাবে নিজেকে আনব্যালেন্সড তৈরি করা,সব শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রিমা। হিয়াকে আরেকবার দেখে দিয়ে উজানের থেকে বিদায় নিয়ে নীরব সহ বাহিরে আসলো সে। নীরবকে বললো তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি উজানের সাথে কিছু কথা বলে আসছি। নীরব গাড়িতে বসে যেতেই উজানকে ডেকে পাঠালো রিমা। আর এমনকিছু কথা বলে বসলো যেগুলোর জন্য না উজান কখনো প্রস্তুত ছিলো না সে কখনো কল্পনাতেও ভেবেছিলো তার অগোচরে তার হিয়া পিচ্চি কি না এভাবে এতো যন্ত্রণার কাতরে নিজেকে বিলিয়ে বের হচ্ছিলো!
– তোকে হিয়া কিছু বলেনি না না এরমধ্যে?
– কি বলবে! কি হয়েছে রিমা? হিয়া ঠিক আছে তো?
– তুই আমার উপর রাগ করিস না। আমি সব জানতাম কিন্তু হিয়া আমাকে ছুঁয়ে কথা দিয়ে নিয়েছিলো যে আমাদের ফাইনাল শেষ না হবার আগে যেনো আমি কোনোভাবেই তোকে এ বিষয়ে কিছু না বলি। হিয়া চেয়েছিলো তুই ঠান্ডা মাথায় ধীরেসুস্থে আগে পরীক্ষাটা দে তারপর সে নিজে তোকে। আমিও তাই হিয়ার কথা রাখতে আর তোকে বিষয়টা বলিনি সেদিন।
– কি বলবি সেটা স্পষ্ট করে বল রিমা,প্লিজ।
– বলছি। আমি ভেবেছিলাম হিয়া হয়তো ঠিক আছে আর ফাইনাল তো আমারো ছিলো সেই চাপে গিয়ে এদিকে আর খেয়াল রাখতে পারিনি। আর তুই তো জানিস নীরব আর আমার বিয়ের সিচুয়েশন টাও বাড়িতে কিভাবে ঝুলে আছে… কিন্তু এই দেড়টা মাসে হিয়া যে এভাবে মেন্টালি আনব্যালেন্সড হয়ে পড়বে আমি বুঝতে পারিনি উজান বিশ্বাস কর।
– তুই কথা গুলো ঘুরিয়ে না বলে সোজাসাপ্টা বলবি কি রিমা।
– বলছি। একটু শান্ত হ___সেদিন যখন তুই আমাকে হিয়ার কাছে রেখে বেড়িয়েছিলি সেদিন মাঝরাতে হিয়ার ঘুমটা ভেঙে আসে। আর আমাকে তার পাশে দেখতে পেয়ে আবার কান্না শুরু করে দেয় মেয়েটা। আমি হিয়াকে শান্ত করে জানতে চাই কি সমস্যা হচ্ছে তার,আমি এসেছি বলে কি সে ভয় পাচ্ছে নাকি,তখন হিয়া বলে যে না,সেদিন শুধু সিয়াম ওর উপর হায়নার মতো আক্রমণ করেনি উজান, তার আগেও বিশাল এক ঝড় উঠেছিল মেয়েটার জীবনে!
কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো উজানের। অস্থির কন্ঠে জানতে চাইলো,
– এর থেকেও কি বড় ঝড় রিমা যে সেটা আমার থেকেও লুকিয়ে রাখতে হলো?
– সেদিন যেদিন হিয়া তোর খোঁজে তোর বাড়িতে গিয়েছিল না সেদিন বিকেলের মাঝামাঝি হিয়ার মিচক্যারেজ হয়! তোদের একটা বাচ্চা ছিলো যার আগমনের কথা তুই বা হিয়া কেউ বুঝতে পারিসনি। না পারারই কথা কারণ প্রেগন্যান্সির সেরকম সিম্পটমই হিয়ার মাঝে খুব একটা ছিলো না। আর শিশিরের জন্য ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি,এই নতুন বাড়ির দেখাশোনা, মাল নিয়ে এক হাতে নতুন বাড়িতে ওঠা শরীর তো সহ্য করতে পারেনিনা,যার ফলস্বরুপ তোদের বাচ্চা টা ওভাবে সেদিন!
পাথরের মতো যেনো জমে গেলো উজান। রিমার বিবরণ সাথে চোখের সামনে হিয়ার সেদিনের প্রতিচ্ছবি ভেসে আসতেই কান্নার মেঘ এসে জড়ো হতে থাকলো উজানের দু-চোখের কোটরে। সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে টুপটাপ ঝড়ে পড়লো কিছুটা আর বাকিটা তোলা রাখলো পরের এক সময়ের জন্য! বিচলিত কন্ঠে উজান জানতে চাইলো,
– তা-রপর!
– আমাকে হিয়া শুধু এতটুকুই বলেছিলো সেদিন উজান। তারউপর সিয়াম হিয়ার সেই ব্যাথা পেটে তিন চারবার লাথি দিয়েছিলো,মেয়েটা উজান উজান বলে তোকে পাগলের মতো ডাকছিলো কিন্তু তুই আসিসনি। তোকে খুব দরকার ছিলো ওর সেই মুহুর্তে,কিন্তু তুই ছিলি না। তারপর আমি অবশ্য একদিন হিয়াকে নিয়ে এক গাইনি ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম উনি হিয়াকে দেখে নিয়ে বলেছিলেন এখন সব ঠিক আছে। কিন্তু জিনিসটা যে হিয়ার মাথায় এভাবে ইফেক্ট ফেলবে বুঝতে পারিনি____শিশিরের ঔ রক্তাক্ত শরীর,মিচক্যারেজের সময় এক রক্ত, সিয়ামকে চাকু দিয়ে আঘাত করবার একটা রক্ত এসবে না মেয়েটার রক্তের উপর একটা ফোবিয়া তৈরি হয়েছে। তাই জন্য আজ তোর হাত দেখে হিয়া ওভাবে!
– আমার আগচরে এতো কিছু ঘটে গেলো রিমা আর আমি এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র জানতে পারলাম না। হিয়া তোকে নিষেধ করলো আর তুই শুনে নিলি। তুই জানিস এই ট্রমাটা ওকে কিভাবে শেষ করে দিচ্ছে!
– আমি জানি উজান। এ-ই জিনিস গুলো যদি আমাদের সাথে হতো আমরা মানতে পারতাম সহ্য করতে পারতাম। কিন্তু হিয়া। বয়স কতো ওর। একটু ভাব হিয়ার সাথে আমাদের বয়সের ৫/৬ বছরের গ্যাপ। ওর পেশার নেবার ক্ষমতা, ওর সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের মতো না। ও নিতে পারেনি এই ট্রমাগুলো___তার উপর না আছে মাথার উপর মায়ের হাত না বাবা-র হাত। না আছে আপন কেউ, আগে যাও বা রোদেলা ছিলো এখন তো সেও নি যার সাথে মনের দুঃখ গুলো ভাগ করবে সে। শিশিরের সাথেও বা কি সব শেয়ার করা যায় তুই ভাব। তারউপর তোর পরিবারের যে অত্যাচার,শুধু গায়ে হাত তুলে কি আঘাত হয় অনেক সময় কথার আঘাত গুলোও বড্ড জখম করে। তোর মা তোর ভবিষ্যতের কথা ভাবতে গিয়ে আরেকটা সন্তানের ভবিষ্যতে বিষিয়ে তুললো। এরপর তুই কি করবি তুই ভালো জানিস।- হিয়াকে সময় দে,ওর পাশে থাক। কি বলে সহ্য করে নে। হিয়া তোকে দূরে ঠেলবে আবার নিজেই কাছে টেনে আনবে। ওকে একটু ওর মতো করে থাকতে দে। পারলে শিশিরের সাথে পরামর্শ করে একটা ভালো সাইক্রাটিসের কাছেও নিয়ে যেতে পারিস যদি তোর মনে হয়। এখন দেখ বিষয়টা। আমি আসছি,হিয়া ঘুমোক সকালে উঠলে এখন আমি আবার আসবো।
!
!
রাত তখন দুটোর কাছাকাছি। নিজের রুমে অচেতন অবস্থায় শুইয়ে আছে হিয়া। এই ঘুম যে কখন ভাঙ্গবে তার! স্যালাইন ঝুলছে,সাথে টেবিলের উপর ছড়িয়ে আছে এক গাদা ঔষধপএ। শিশির একটু আগে নিজের রুমে গিয়ে গা টা বিছানায় মেলে দিয়েছে,হিয়ার পাশে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু উজান দিলো না। বললো সে আছে হিয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে নিজের রুমে আসতে হলো শিশিরকে,থাক স্ত্রীর অসুস্থতায় স্বামীর খেদমতটাই আল্লাহ তালার বেশি পছন্দ তাই সেটাই হোক আজ।
দরজা জানালা সব লাগিয়ে দিয়ে হিয়ার পায়ের কাছে এসে বসলো উজান। আলতো হাতে হিয়ার পা জোড়া আঁকড়ে নিলো তার কাটা হাতে। একটা দুটো করে করে পুরো শত-শত চুম্বনে ভরিয়ে তুললো হিয়ার পায়ের পাতা। চোখ দিয়ে পড়া পরিশ্রান্ত অবিরত লাগামহীন লোনাজলের বন্যা এসে ভিজিয়ে দিতে থাকলো হিয়ার পুরো পা জোড়াকে। কাঁদতে কাঁদতে উজানের চোখ ফুলে উঠলো। নাক সহ পুরো মুখ লাল হ’য়ে উঠলো কিন্তু আজ আর উজানের কান্না থামলো না। আজ তো যেনো হিয়ার দখলে রাখা সাতটা মহাসমুদ্রের পানিকেও নিজের নামে করে ঝরাতে শুরু করলো উজান।
– সিয়াম তোমার ঔ ব্যাথা পেটে লাথি মারছে পাখি,খুব লাগছে না তোমার। তুমি আমাকে ডাকছো কিন্তু আমি শুনিনি,আসিনি তোমাকে সেভ করতে। খুব খারাপ করছি আমি খুব,আমাকে তুমি ক্ষমা করো হিয়া। এটাকে তোমার স্বামীর শেষ ভূল বলে ক্ষমা করে দেও পিচ্চি আমার। তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি এরপরো তুমি চুপ করে থাকবে,বলবে না কথা আমার সাথে, আর তো এরকম ভূল হবে না পাখি,একটু তাকাও আমার দিকে,কথা দিচ্ছি তোমাকে ছুঁয়ে এখন থেকে স্বামী হিসেবে তোমার সব আঘাত আমি আদর হিসাবে গ্রহন করবো,তোমার সব অপমান আমি পুরষ্কার হিসাবে কবুল করবো,তোমার সব অভিমান,অভিযোগ নিজের প্রাপ্য হিসাবে পুষিয়ে নেবো,আমার সব নেকি তোমার সদকায় জাহির করবো,তোমার সব ভূলএূটিগুলো নিজের পাপের খাতায় সামিল করবো,আজকে থেকে যা তুমি খাবে,যতটুকু খাবে আমিও সেই পরিমাণ রিজিকের খোঁজ করবো,তোমার সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একফালি হাসির কারণ সেজে বৃষ্টি হয়ে তোমার উপর ঝরে পড়বো,উজানের জোয়ারে যে হিয়াকেই ভাসতে হবে হিয়া,কথা দিচ্ছি আজ থেকে এই উজানের এই জোয়ার শুধু সুখ বয়ে নিয়ে আসবে হিয়ার জীবনে,শুধু সুখ!
চলবে…