?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৩৬
#ইভা_রহমান
এতো শতো দুঃখের মাঝে সুখের এক খবর নিয়ে আজ বাড়িতে পা রাখলো শিশির। গত একমাস ধরে চাচ্চুর বলে দেওয়া বন্ধুর কোম্পানিতে চাকরির জন্য হন্যা দিয়েছিল সে। আর আজ তার ফলাফল বেড়িয়েছে। আর কোম্পানির হেডস্যারদের খুশি করে চাকরিটা নিজের নামে করে নিতে সক্ষম হয়েছে শিশির। এখন তো চাকরি,পরীক্ষা কম রেফারেন্স দিয়ে হয় বেশি,ভাগ্যিস চাচ্চু আর ওনার বন্ধু শিশিরের পাশে ছিলো এই দুঃসময়ে। তারা শিশিরকে একমাস নিজেদের আন্ডারে রেখে দেখতে চেয়েছিলো শিশির আসলে তাদের কোম্পানির যোগ্য প্রার্থী হতে পারে কি না,বেতনের কথা বলা ছিলো না কোনো। কিন্তু শিশিরের পরিশ্রম করার তাগিদ,কাজ সহ হিসাবপএ গুছিয়ে নেবার অভিজ্ঞতা,কোন ক্লাইন্ডের সাথে কি মুহুর্তে গিয়ে কি বলা উচিৎ তার প্রত্যেকটা গুন মনে ধরলো তাদের। আর চাকরি কনফার্মের সাথে সাথে তারা এই একমাসের বেতনটাও ধরিয়ে দিলো শিশিরের হাতে সাথে ধরিয়ে দিলো কোম্পানির অতি গুরুত্বপূর্ণ এ্যাকাউন্টেন্ট পদের দায়িত্ব!
-ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া,আজকে আমি এতো খুশি এতো খুশি এতো খুশি যেএএএএ খুশিতে তো আমার ধ্যাই ধ্যাই করে শুধু নাচতেই মন চাচ্ছে। নাচতেই মন চাচ্ছে। নাচতেই মন চাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো আমি আকাশে উড়ছি? আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
হেঁসে দিয়ে জুতা খুলতে খুলতে শিশির বললো,,
– ধুর পাগলি যা তো,এমনো কিছু হয়নি যে এতো লাফাতে হবে। সাড় সামন থেকে।
হিয়া কন্ঠে সুর এনে আবেগ জুড়িয়ে বললো,
– কি সাড়বো ভাইয়াআআআ। আমার তো ভাবতেই গা টা শিউরে উঠছে দেখ কিরকম।
এখন থেকে তুই স্যুট টাই পড়ে রোজ রোজ অফিস যাবি,বড়বড় ডিলারদের সাথে ওঠানামা করবি,রোজ ইংলিশে হাই হ্যালো করবি,ইশশশশশ আমার তো ভাবতেই শরীর টা কাঁপছে..কি যে শান্তি পাইছি আমি।
ব্যাগ টা টেবিলে রেখে চলন্ত ফ্যান টার ঠিক নিচে বসে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে শিশির ইশারায় বললো নাচানাচি বন্ধ করে পানি টা একটু ঢেলে দে না বুড়ি..এদিকে ভাইয়ের হুকুম শেষ হতে নেই তারআগেই ঝটপট একগ্লাস ঠান্ডা পানি এনে শিশিরের হাতে ধরিয়ে দিলো হিয়া। নাচতে নাচতে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো শিশিরের একদম কোল ঘেঁষে। হিয়ার চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না আজ। খুশিতে যেনো পুরো গদগদ হয়ে উঠছে মেয়েটা। এতো খুশি তো নিজের বিয়ে কেনো উজানের সাথে থাকলেও বোধহয় হয়না হিয়া কখনো। চোখে মুখে তার এক অন্যরকম লাবণ্য ছড়াচ্ছে। খুশির ঝলকানিতে পুরো মুখ রঙীন হয়ে জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে তার ভাইয়ের জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে না বরং সে নিজেই পরশু থেকে স্যুট টাই পড়ে ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস যাচ্ছে।
– বেতন কতো ভাইয়া! বল নাআআ বেতন কতো?
– বেতন কতো শুনে কি করবি,শুনতে হবে না ভাগ!
– আ হা বল না। সে অনুযায়ী তো আমি ট্রিট চাবো না। তোকে শপিং এর লিস্ট ধরিয়ে দেবো। তারপর এই কতো কিছু কিনতে হবে নতুন বাড়িটার জন্য। এখনো কতো কিছু সাজানো বাকি। ইশশ কবে করবোওও এসব।
চঞ্চল হিয়ার ননস্টপ বকবকানি থামিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শিশির বললো আর একটা মাস ধর্য্য ধর একদিন তোকে নিয়ে ইচ্ছে মতো মার্কেট কিনে আনবো,কেমন। হিয়া মুখের সব শিরা উপশিরা প্রসারিত করে এক বিরাট হাসি ঝুলিয়ে কিছু বলতে যাবে ওমনি কলিংবেলের কিরিং কিরিং শব্দে থেমে গেলো মেয়েটা। দরজা খুলে দিতেই চাচ্চু সহ উজান ভেতরে ঢুকলো। উজানের দু-হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে। শিশির তার এই সুসংবাদ টা ফোনে দিতে গিয়ে বলেছিলো ফেরার পথে মৌবন থেকে ভালো দেখে মিষ্টি নিয়ে আসিস। তাই মিষ্টির প্যাকেট হাতে উজানের বাড়িতে আসা। মিস্টির প্যাকেট সাথে উজান সহ চাচ্চুকে ঢুকতে দেখেই আরো খুশিতে লাফিয়ে উঠে হিয়া বললো” বসো না বসো চাচ্চু, চেয়ারে বসো” চাচ্চু মৃদু হেঁসে দিয়ে চেয়ারে বসে নিয়ে গল্প জুড়তেই উজান হিয়াকে মিষ্টির প্যাকেটগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললো” খিলখিল বন্ধ করে চাচ্চুকে মিষ্টিটাও তো সার্ভ করে দিতে পারো হিয়া” জিহ্ব কেটে সরি সরি বলতে বলতে হিয়া একটা প্লেটে মিষ্টি, রসমালাই সব বেড়ে নিয়ে চাচ্চুকে দিয়ে পাশে বসে পড়লো,প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে খেয়ে নিয়ে গোসলে ঢুকে গেলো উজান,দু নাইট ডিউটি করে বাড়ি না গিয়ে সোজা হিয়ার কাছে সে ফিরলো আজ যদিও এখন বাড়ি কম হিয়ার বাড়িতেই থাকা হয় উজানের বেশি।
– তাহলে চাচ্চু দেখলে তো তোমার বন্ধুর কীরকম আমার ভাইয়াকে মনে ধরে গেলো। আমার তো ভাবতেই কীরকম হাত পা কাঁপছে যে ভাইয়া এরপর থেকে প্রত্যেকদিন ব্যাগ হাতে অফিস দৌড়াবে। কি যে খুশি হয়েছি না আমি বিশ্বাস করো।
– হুম মা আমিও অনেক খুশি হয়েছি।
শিশির ওর জিংকসের পকেট থেকে স্যালারির পুরো খাম টা বের করে চাচ্চুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– আজকে বাবা মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো ওনারা চাচ্চু। কিন্তু ওনারা তো আজ নেই তুমি আছো। তাই এই প্রাপ্যটুকু শুধুই তোমার তুমি আমাকে রেফার না করলে হয়তো আমি কখনো এতো বড় একটা কোম্পানিতে___যাই হোক আমি চাই আমার এই প্রথম স্যালারির পুরো টাকা টা তুমি রাখো। রহিম চাচাদের সাথে মিলে কিছু চা নাস্তা খেয়ে নিও,কেমন!
– ধুর বোকা তোর প্রথম রোজগারের পয়সা। আমি সব নিলে চলবে,হিয়ারো তো কতো অধিকার আছে এতে বল। ওকে দুটো সুন্দর দেখে জামা কিনে দিবি তো এবার। একদম আমার মা টার মতো রঙীন রঙীন জামা।
– দেবো চাচ্চু,পরের মাসে স্যালারি পেলে পুরোটা ওর পেছনে খরচ করে দেবো। কিন্তু এটা এখন তুমি রাখো,ধরো। প্লিজ না করবা না।
– ধুর না,রাখ তো। মিষ্টি দে আগে মিষ্টি খাই,হিয়া দে তো দেখি কি মিষ্টি।
হিয়া চাচ্চুকে মিষ্টি দিতে দিতে বললো,
– চাচ্চু তুমি মিষ্টি খাও আমি ভাত টা দিয়ে আসি,আজকে আসছো যখন আমার বাড়িতে তখন খেয়েই তোমাকে বিদায় করবো দাঁড়াও।
হেঁসে দিলো চাচ্চু,এদিকে হিয়া ভাতটুকু বসিয়ে দিয়ে শিশিরের রুম থেকে কি একটা নিতে রুমে আসতেই উজান শিশিরের বাথরুম থেকে নিজের মাথা মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসলো। তোয়ালে টা শিশিরের বারান্দায় মেলে দিতে যাবে ওমনি হিয়াকে রুমে দেখতে পেয়ে একটানে হিয়াকে নিয়ে আসলো সোজা ব্যালকুনিতে। হিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে হিয়ার খোঁপা করা চুল গুলো একটানে খুলে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
– খুব আনন্দ হচ্ছে না আজ?
হিয়া উজানের আঙ্গুল ধরে দু’বার ঘুরপাক খেয়ে আবার উজানের গলায় হাত ঝুলিয়ে এপাশ ওপাশ দুলতে দুলতে বললো,
– খুব মানে খুব খুব খুব খুববববব আনন্দ হচ্ছে। আমার তো শুধু আজকে নাচতেই মন চাচ্ছে দেখো।
অস্থির হিয়াকে চিপে ধরলো উজান। এতো কেনো ছটফটানি এই মেয়েটার হ্যা।
– হুম। তা আমি যে ফাইনালে এ-তো সুন্দর রেজাল্ট করে এখন ইন্টার্নি করছি তখন তো ম্যাডেমের চোখে মুখে এতো হাসি দেখলাম না।
– আপনি আর ভাইয়া কি এক না-কি। আজ না হোক কাল আপনি তো ডক্টর হতেনই,কিন্তু ভাইয়ার চাকরি টা তো অনেক ডিফিকাল্ট ছিলো না বলুন। আমি তো কালকে ভাইয়ার নামে একটা রোজাও মানত করে ফেলেছি,আর ঠিক করেছি সামনের শুক্রবার কেরামতিয়া মসজিদের সামন থেকে কয়েকটা ফকির মিসকিন নিয়ে এসে ভালোমন্দ যা পারি খাইয়ে দেবো। ভালো হবে না বলুন।
উজান হিয়ার কানের পাশে চুল গুলো বুলাতে বুলাতে বললো,
– হুম খুব ভালো হবে,তা ভাইয়ের জন্য এতো আয়োজন। আর এদিকে আমি,আমি যে আজ তিনরাত পরে ডিউটি দিয়ে বাড়িতে ফিরলাম তার কি হবে? তার তো কেউ খোঁজ’ই নিচ্ছে না।
হিয়া আদুরে একটা মুখ করে উজানকে জড়িয়ে উজানের প্রশ্বস্থ,উন্মুক্ত,ভেজা বুকে একটা দীর্ঘ চুমু দিয়ে বললো,
-উমমমমমআআ,,,,,সরিইই..আমি কি করতে পারি এতে বলুন তো,আগে তো আপনার জন্য আপনার পেশেন্ট তাই না বলুন,আগে তো ওদের ঠিক রাখতে হবে তারপর না বাকি সব। আচ্ছা শুনো না কালকে আবার যাবে কখন তুমি?
– রাতে ডিউটি আছে কেনো?
– তাহলে আমরা কালকে সকাল সকাল একটু কেনাকাটা করতে বের হবো কেমন। ভাইয়া প্রথম অফিসে যাবে,একটু নতুন জামাকাপড় কিনে না দিলে হবে। আমার ভাইয়াকে তো একদম হিরোদের মতো এন্ট্রি নিতে হবে না অফিসে,বুঝলা কিছু?
উজান হিয়ার পুরো মুখে এক এক করে অনেক কয়েকটা চুমু এঁকে দিয়ে বললো,
– হুম বুঝলাম বোনের চোখে তো শুধু ভাই ই তার হিরো এদিকে তো সবাই কেনো তার নিজের হাসবেন্ডো তার কাছে জিইইইরো।
খিলখিল করে হেঁসে দিয়ে হিয়া বললো”হিরোই তো আমার ভাইয়া,সুপার হিরো,আপনার মতো খাটাস নাকি হু” উজান কিছু বলতে নিতেই চাচ্চুর ডাক পড়লে হিয়া দৌড়ে রুমে আসে। আর উজান তোয়ালে টা নেড়ে দিতে দিতে বলে উঠে” কোথায় ভাই স্যালারি পাইছে তার থেকে নতুন জামা-জুতো কিনে নেবে,আর এনাকে দেখো উল্টে ভাই অফিসে নতুন কি পড়ে যাবে তাই নিয়ে ব্যস্ত ম্যাডাম,সত্যিই ইডিয়ট একটা ”
– প্লিজ চাচ্চু না করো না,আমার জন্য প্লিজ!
– আচ্ছা বাবা নিচ্ছি কিন্তু এতো আমার লাগতো না বাবা। আচ্ছা আসছি এখন তোর চাচি ঘরে আছে একলা,
চাচ্চুর যাবার কথা শুনে হিয়া দৌড়ে এসে বলে উঠলো,
– কি চাচ্চু আমি যে ভাত দিলাম তুমি চলে যাবে। দেখো জানালা খুলে দিলেই চাচিকে দেখা যায় এখান থেকে আর তুমি চাচির জন্য শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো।
– না মা,অনেক রাত হচ্ছে আজকে না অন্য একদিন খাবো,কেমন।
– আচ্ছা তাহলে এ-ই পুরো প্যাকেট দুটো বাড়ির জন্য নিয়ে যা-ও, দাদি আর চাচি খাবে এখন.
– আরে না রে পাগলি ওতো লাগবে না।
শিশির চাচ্চুর হাতে প্যাকেট দুটো ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– চাচি দাদি দুজনেই মিষ্টি খেতে চাইছে চাচ্চু তুমি আর না করো না তো। ধরো। আর দোকান নিয়ে চিন্তা করো না। পলাশ আছে রমজান চাচাও আছে, আর আমার তো অফিস সাতটা অবধি,শুক্র,শনি বন্ধ, আমি এদিকে জবো করবো আর আগের মতো দোকানো দেখে রাখবো। তুমি ভেবো না।
– তোর পরিশ্রম হ’য়ে যাবে বাবা,এতো চাপ নেওয়া যায় তাই।
– তুমি যা-ও তো। আমি আছি বললাম না। কিচ্ছু ভাবতে হবে না তোমাকে। ভয়সা নেই আমার উপর তোমার?
চাচ্চু হেঁসে দিয়ে বললো তুই তো আমার বড় ছেলে তোর উপর থাকবে না তো ভরসা কার উপরে আর করবো আমি বল তো। হাসিমুখে বিদায় নিলো চাচ্চু সাথে হিয়া আর উজানকেও দোয়া দিয়ে বললো” এতোকিছুর পরো যখন তোদের আলাদা করা গেলো না তখন এভাবেই ভালো থাক দুজনে মিলে”
!
!
সময় গুলো ভালো ভাবেই অতিক্রান্ত হলো ঠিকই কিন্তু সুখ কপালে যেনো সইলো না বেশিদিন হিয়ার। দূর্ভাগ্যবশত হলেও এবার মেডিকেল এ্যাডমিশনে গিয়ে আবারো হেরে যেতে হলো হিয়াকে। সাথে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টও এ প্লাসের চৌকাঠ পেরুতে পারেনি তার। পেরুবেই বা কি করে সেসময় তার না ছিলো মানসিক অবস্থা সচল না উজানকে তার পাশে রাখতে দিয়েছিলো মেয়েটা। একয়েকদিনে উজানের প্রচেষ্টায় যাও বা হিয়ার ঘাতে মলম কাজ করতে শুরু করেছিলো,হিয়া যাও বা সব ভূলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ধরেছিলো কিন্তু এই আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়া সাথে চান্সটাও এভাবে মিস হওয়া দুইয়ে মিলে যেনো মেয়েটা আবার নিজেকে চুপসে ফেললো। আরো সেই জখম গিয়ে গভীর হতে থাকলো যখন হিয়া জানতে পারলো প্রিয়ন্তীর চান্স হয়েছে তাও আবার এই রংপুর মেডিকেলেই। মন থেকে পুরোপুরি ভেঙে পড়লেও মুখে আর সেই বিষয়টা জাহির করলো না হিয়া। ঠিক করলো সে সেকেন্ড টাইম করবে। কিন্তু শিশির রাজি হলো না এমনিতে সেকেন্ড টাইমে এক্সট্রা করে পাঁচ মার্ক কাট করে রাখা হয় তারউপর রেজাল্টে জিপিএ কম থাকায় এমনিতেও হিয়ার দেড় মার্ক কাটা যাবে,তাই অহেতুক দ্বিতীয় বার মেডিকেলের প্রিপারেশন নেবার কোনো প্রয়োজন শিশির দেখলো না। কিন্তু হিয়া জেদি মেয়ে। সে শুনলো না শিশিরের কথা। জানে বিষয়টা অনেক টাফ তবুও হিয়া রিস্ক নিলো,বলা চলে নিজেকে প্রমাণ করতে একটা জীদ করে বসলো সে। উজানো হ্যা না কিছুই সিদ্ধান্ত দিতে পারলো না একদিকে পাঁচ মার্ক কেটে রাখার ভয় অন্য দিকে হিয়ার মনের ইচ্ছে। শেষমেশ বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে বললো” আচ্ছা হোক আমি পড়াবো হিয়াকে দেখি কিভাবে ওর চান্স মিস হয়”
!
সময় গড়িয়ে তখন অনেকদিন। নিউ সেশনের ক্লাস শুরু হবে আর কিছুদিন বাদে। বড় ফুফুর খাতিরে একরকম বাধ্য হ’য়ে প্রিয়ন্তীর এ্যাডমিশন কাগজ নিয়ে ছুটোছুটি করছে উজান। আর তো ইন্টার্নির আছে কয়েকটা মাস সহ্য করো এখন সেই কয়েকদিন এ-ই মেয়েকে। আজকে তো এ্যাডমিশনের জন্য দৌড়াতে হচ্ছে এরপর না জানি আর কোন কাজ ধরিয়ে দেয় ফুফো। যদিও প্রথম দেখে বিষয়টাকে না করতে পারলো না উজান,কিন্তু ঠিক করলো এরপর থেকে সবকিছুতেই না বাক্য উচ্চারিত করবে সে।
– তোমার বাকিসব কাগজপত্র,এদিকে সব কাজ কম্পিলিট এখন শুধু ঠিক মতো ক্লাস এ্যাটেন্ড করতে পারলেই এনাফ। আর হ্যা একটা কথা ফুফুর কাছে আমার মায়ের অনেক ঋন আছে তাই কাজটা করতে রাজি হয়েছি আমি কিন্তু ফুফুকে বলে দিস তোর জন্য করা এটাই ফাস্ট আর এটাই লাস্ট কাজ আমার। একই মেডিকেলে এ্যাডমিশন হয়েছে বলে ভাবিস না তুই কোনো কাজ বললেই আমি করে দেবো। ফুফুকেও কথাটা ভালো মতো বুঝিয়ে দিস।
– এরকম ভাবে কথা কেনো বলো উজান। যেনো তো মনে হয় ঔ শিশির আর হিয়াই তোমার আপন আমরা তো যেনো উড়ে এসে বসে আছি তোমার আর বড় আম্মুর জীবনে।
কথা বাড়ালো না উজান,কথা বাড়াবে কি প্রিয়ন্তীকে দেখলেই তো ওর মন চায় ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দিক সে তার গালে,পেছন ফিরে চলে আসতেই প্রিয়ন্তী উজানকে ডেকে দিয়ে বললো,
– শুনলাম হিয়ার নাকি মেডিকেলে চান্স হয়নি। তা কোথায় ভর্তি হচ্ছে ও এখন?
– হ্যা হয়নি চান্স তো?
– না সেকেন্ড টাইম করবে নাকি,সেকেন্ড টাইমে যা টাফ,পারবে ও?
– না পারলে পারবে না। সবাইকেই যে ডাক্তার হতে হবে এরকম কি কোনো কন্ডিশন আছে নাকি?আছে বলে তো আমার জানা নেই প্রিয়ন্তী।
– না তা বলিনি,আসলে তুমি একজন এতো ওয়েল ডাক্তার সে হিসাবে তোমার ওয়াইফো তোমার মতো ডাক্তার হওয়াটাই বোধহয় বেশি মানাতো আই থিংক সো,
একটা বাকা হেঁসে দিয়ে উজান বললো,
– এটা কি কথাও লেখা আছে নাকি যে ডক্টরের ওয়াইফকে ডক্টর হতে হবে,যে প্রফেসর তার ওয়াইফকে সেরকম প্রফেসর হতে হবে। সত্যি প্রিয়ন্তি তোর মাইন্ড যে কতো চিপ সেটাতো হিয়ার ফোন চুড়ি করবার সময়ই বুঝেছিলাম কিন্তু এতোটই যে নীচ জানা ছিলো না বিশ্বাস কর।
– ঠিক করে কথা বলো উজান। কাদেরকে ছোটলোক বলছো তুমি। তোমার নিজের ওয়াইফই নিজের যোগ্যতা দেখাতে পারেনি আর তুমি আসছো আমাকে কথা শোনাতে।
– শোন প্রিয়ন্তী,একটা কথা মনে রাখবি হিয়া ডাক্তারিতে পড়ুক আর অন্য কোথাও। আমার কাছে আমার হিয়া তো আমার হিয়াই থাকবে। সবার চাইতে দামি! সবার চাইতে আলাদা।
!
!
এদিকে প্রিয়ন্তীকে উজান হেল্প করেছে কথাটা শুনতেই সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে হিয়া। এমন না যে সে উজানকে অবিশ্বাস করছে,তাকে সন্দেহ করছে তা নয়৷ আসলে হিয়ার মনে একটা ভয় চেপে বসেছে। সারাজীবন শুনে আসলো সে উজানের জন্য পারফেক্ট না,উজানের সাথে সে যায় না,তাকে নাকি উজানের পাশে বেমানান লাগে,শুনে শুনে আজ যখন নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ ছিলো সেটাও হারিয়ে গেলো,মানসিক অবস্থা এমনিতেও হিয়ার ভালো নেই তারউপর একের পর এক ধাক্কা মেয়েটার মনটাকে ছোট করে দিচ্ছিলো যেনো। হিয়া কাঁদতে চাইছে না তবুও তার চোখ দিয়ে অবিরাম পানি ঝরছে। সে যে কেনো কাঁদছে কিসের জন্য কাঁদছে তাও আজ জানা নেই যেনো তার!
কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসা উজানকে তাড়িয়ে দিতে দিতে হিয়া বললো,
– না না না,তুমি আর আসবে না এ বাড়িতে, তুমি যা-ও প্রিয়ন্তীর কাছে,আমি পাইনি চান্স,আমি তো হতে পারবো না ডাক্তার প্রিয়ন্তী ডাক্তার হবে,তুমি ওর কাছে যাও।
– হিয়া একটু শান্ত হও,আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।
– না না,তুমি যা-ও। আমার মতো একটা মেয়ের সাথে তোমাকে মানায়,মানায় না তো। তুমি বাড়ি যা-ও, আমি তো না পারলাম নিজের বাচ্চা টাকে বাঁচাতে, না পারলাম একটা ভালো রেজাল্ট করতে,চান্স টাও হলো না আমার। সবাই ভালো ভালো জায়গায় পড়ছে লতারো ডেন্টালে হ’য়ে গেলো আর আমি,ন্যাশনালেও একটা ভালো সাবজেক্ট আসলো না।
উজান হিয়াকে আগলে হিয়ার চোখ মুখ মুছে দিতে দিতে বললো,
– হ্যা তো আসে নি,কি হয়েছে এতে। হয়নি চান্স। সবাইকে চান্স পেতে হবে নাকি। দেখি চোখ মুছো দেখো আমার দিকে।
– না আমি দেখবো না। কিচ্ছু শুনবো না আমি,তুমি বের হও বাড়ি থেকে। আমি তো তোমাকে ডিজার্ভ করি না। করি না ডিজার্ভ আমি।
চোখ মুখ নাক টানতে টানতে উজানকে টেনে হিছড়ে সোজা এনে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে দিলো হিয়া। এদিকে কান্নার আওয়াজ সাথে উজান হিয়ার পাল্টাপাল্টি তর্কাতর্কিতে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো শিশির। আর এসেই হিয়ার এরকম কাঁদতে কাঁদতে করা ছেলেমানুষী যেনো কিছুতেই সহ্য হয়ে উঠলো না তার। অনেকদিন ধরে অনেক সহ্য করে আসছে সে, কখনো হিয়া উজানকে কাছে টানছে কখনো দূরো সরিয়ে দিচ্ছে কি সমস্যা কি হিয়ার। ছাড়তে চায় তো একবারে ডিভোর্স দিয়ে দিক।
গলা ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করতে করতে শিশির বললো,
– তোর সমস্যা কি হিয়া। ছাড় বলছি উজানকে, ছেড়ে দে এক্ষুনি। সবকিছু ফাইজলামি নাকি। আয় তো তুই ঘরে, দরকার পড়লে ঔ বেড়িয়ে যাবে বাড়ি থেকে। সবসময় ছেলেমানুষী।
– না উনি ঢুকবেন না আর ভেতরে। কি কাজ ওনার এই বাড়িতে। ওনাকে ওনাকে লাগবে না এখানে। আপনি চলে যান বাড়ি থেকে,আর আসবেন না আপনি।
শিশির রাগ হচ্ছে দেখেও হিয়া উজানকে টেনে গ্রীলের কাছে বের করে দিতেই শিশির এক বিশাল থাপ্পড় বসিয়ে দিলো হিয়ার গালে। শব্দ করে কেঁদে দিলো হিয়া। কিন্তু রেগে উঠলো উজান। রাগ দেখিয়ে বললো,
– শিশির! হাত তুলিশ কেনো গায়ে ওর তুই। কোন ধরনের স্বভাব এগুলো। আর কখনো যদি তোকে না দেখি এরকম।
– তুই চুপ থাক। দরকার পড়লে লাঠি দিয়ে মেরে মেরে চামড়া তুলে দেবো আমি ওর।(হিয়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বললো) মন চাইলো কাছে টানবি আবার মন চাইলো তো বের করে দিবি। কয় মাস ধরে কি নাটক শুরু করছিস তুই এসব উজানের সাথে। বল এসব কি নাটক।
শিশির চোখ বড় বড় করে হিয়াকে রাগ করছে দেখে উজান শিশিরের হাত ধরে ভেতরে ঠেলতে ঠেলতে বললো,
– শিশির যা তো ভাই তুই ভেতরে,আমাদের বিষয় আমরা সলটআউট করে নিচ্ছি তুই যা।
– না আমি যাবো না কোথাও। ওকে বলতে হবে আজ,আসলে ও কি চায়। ডিভোর্স চাইলে বলুক সেটা। আমি ব্যবস্থা করে দেই সব। এতো তো নাটকের কোনো প্রয়োজন হয় না।
– আশ্চর্য তো কেনো বুঝতে চাইছিস না ওর মেন্টাল অবস্থা আর আগের মতো নেই। ওর শখ ছিলো মেডিকেলে পড়বে সেটা পূরণ হয়নি,লতারা অবধি চান্স পেয়ে বসে আছে ওর খারাপ লাগবে,কষ্ট পাবে এটাই তো স্বাভাবিক নাকি।
– হ্যা স্বাভাবিক,তো,এটা ওর ব্যর্থতা কেনো ও চান্স পাইনি। পড়াশোনা করেনি চান্স হয়নি।
– তুই যা তো ভাই ভেতরে। অহেতুক ঝামেলা বাড়াস না।
– সাড় তো..শোন হিয়া। ভালোই ভালো বলছি ভালো হয়ে যা নয়তো আমি উজানের সাথে তোকেও বাড়ি থেকে বের করে দেবো কিন্তু এবার।
কাঁদতে কাঁদতে হিয়া নাক টেনে বলে উঠলো,
– দিবি তো তাড়িয়ে, সবাই তাড়িয়ে দেবে,রোদ আপু ছেড়ে চলে গেছে,উজান স্যারো প্রিয়ন্তী আপুর কাছে চলে যাবে,আমার বাচ্চাটাও মরে গেছে,এখন তুই ও তাড়িয়ে দিবি। সবাই তাড়িয়ে দেবে সবাই ভূলে যাবে। আমি চান্স পাইনি আমি মাথামোটা গর্ধব ইডিয়ট কেউ ভালোবাসবে না এখন আমাকে।
– যা হয়েছে সব ভূলে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলা হয়নি তোকে,বললাম একটা ভালো সাইক্রাটিস পেয়েছি দেখিয়ে আনি চল,কিন্তু তুই তো শুনলি না।
আরো রেগে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হিয়া বললো,
– আমি তো পাগল না যে আমি ডাক্তার দেখাবো,হ্যা হ্যা হিয়া তো পাগল,হিয়ার মাথায় সমস্যা ঔজন্য তো হিয়া চান্স পাইনি। তুই এখন বড় চাকরি করিস,উজান স্যারো ডাক্তার,আমি তো পাগল, পাগল আমি।
উজান শিশিরকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো” যা তো তুই, দেখছিস কাঁদছে মেয়েটা তারপরো খামোখা কাহিনি করছিস কেনো?” শিশির ভেতর থেকে আবার বাহিরে এসে হিয়াকে রাগ করতে করতে বললো,
– চান্স হয়নি হয়নি এ বিষয়ে আমি বা উজান কেউ কিছু বলেছি তোকে। মানুষ কে কি বললো তাই জন্য আমাদের সাথে এরকম করবি তুই,স্বামী হয় উজান তোর একটু তো লেহাজ কর তার। স্ত্রী হিসাবে দিনে কয়টা দায়িত্ব পালন করিস তুই ওর, উজান ডিউটি থেকে ফিরলে কতোটা খেদমত করিস নিজের স্বামীর! দরকারের সময় তো এটা চাই ওটা চাই বলে বলে কি আবদার তার। আর সময় ফুরিয়ে আসলে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কতো সুযোগ সন্ধানী না তুই হিয়া? দেখ হিয়া আমাকে কালকে অফিসের কাজে ঢাকা যেতে হবে এখন কোনো কাহিনি করবি না কিন্তু তুই আর।
– আমার যা ইচ্ছে করবো তুই কে বলার। আমি সুযোগ সন্ধানী,স্বার্থপর,তোদের অযোগ্য, কেনো মিশিস আমার সাথে কেনো কথা বলিস বলবি না আর কথা,লাগবে না আমার কাউকে,চাই না কাউকে আমার।
বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে শুইয়ে পড়লো হিয়া। বালিশ জড়িয়ে এমনই কান্না শুরু করলো যে উঠোন অবধি সেই কান্নার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
– তোকে বললাম হিয়াকে কিছু বলিস না। তারপরো,এতো বাড়াবাড়ির কিছু ছিলো না শিশির।
– বাড়াবাড়ি আমি করছি না হিয়া করছে উজান। এভাবে কতোদিন তুই ওর সাথে সংসার করবি। জানি তার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই তা-ই জন্য এতো অপমান তুই ডিজার্ভ করিস কি। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কতো সাহস ওর।
– শোন শিশির মেয়েটাকে সুস্থ হতে দে। একটু সুস্থ হলো তো রেজাল্ট খারাপ আসলো,আবার সেই ধাক্কা কাটিয়ে পরীক্ষা দিলো সেটাতেও টিকতে পারলো না। তার উপর কে না কি বলেছে প্রিয়ন্তীর চান্স হয়েছে আমি এখন একই মেডিকেলে প্রিয়ন্তীর সাথে তাই জন্য তো
– তাই জন্য কি ও তোকে সন্দেহ করছে যে তুই ওকে ভূলে।
– এটা সন্দেহ না শিশির। এটা এক ধরনের ইনসিকিউরিটি,ওর প্রিয়ন্তী বল না কেনো আর সবাইকে নিয়ে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। এখন ওকে একটু সময় দে। সবটা মেনে নেওয়ার ধর্য্য দে। প্লিজ। আর কথা দে কখনো হিয়ার গায়ে হাত তুলবি না তুই।
– জানি না কি করবো আয় ভেতরে এখন।
– না হিয়া যখন চাইছে আমি বের হয়ে যা-ই তাহলে তাই হোক। ও যা চায় তাই করি আমরা প্লিজ।
– তোর মাথা খারাপ এই রাতে তুই কোথায় গিয়ে থাকবি এখন?
– থাকবো এখন। নিলয়ের ম্যাছে গিয়ে দেখি ম্যাছ বন্ধ থাকলে মসজিদে কাটিয়ে দেবো এখন।
– কখনোই না। হিয়া কি বলে বলুক তুই এখানেই থাকবি। আমার রুমে থাকবি আয় বলছি।
– না। হিয়া যা চাবে তাই হবে। আর কথা বাড়াস না যা।
– এতো ভালোবাসিস তুই হিয়াকে?
– তুই বুঝবি না যা তো!
– আমি বুঝবো না বলছিস।
মৃদু হাসলো উজান। কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে আসতেই শিশির অস্ফুটে কন্ঠে ডেকে দিয়ে বললো,
– রোদ কি আজও আমার সাথে কথা বলতে চায় না উজান?
– না মানে আসলে হঠাৎ তখন..
– জানি,ফোন দিয়েছিলি তুই ওকে,আর ও বলেছিলো যে সে আমার সাথে কথা বলতে চায় না তাই তো।
নিশ্চুপ উজান। কি বা উওর দিবে এর। সত্যি তো রোদেলা এখন আর শিশিরের সাথে কথা বলতে চায় না। উজানের সাথে যাও বা কথা বলে সবার খোঁজ খবর রাখে কিন্তু শিশিরের কথা উঠলেই কথা ঘুরিয়ে দিতে চায়। উজান কতো বলেছে একটা সেকেন্ড জাস্ট একটা সেকেন্ড কথা বল তাও শুনেনি রোদেলা। কথা বলছি এটাই কি যথেষ্ট না উজানের জন্য।
উজানকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে মেকি একটা হাসি দিয়ে শিশির বললো,
– ভালো আছে যখন ভালো থাক ও। আমার কথা বলে আর বিরক্ত করিস না তাকে।
উজান পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করতে বললো,
– আমি আছি মামার দোকানে। হিয়াকে সামলে নিয়ে তুই ও আয়। একদম কিন্তু আর বকাঝকা করবি না ওকে। যা।
!
!
কাঁদতে কাঁদতে বালিশ মুড়ে ওখানেই ঘুমে পড়লো হিয়া। মাঝরাতে ঘুমন্ত হিয়াকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে শুইয়ে পড়লো শিশির। আজ যেনো মনটা বড্ড ছটফট করছে তার। কেনো মনে হচ্ছে ঢাকায় মিটিং টা এ্যাটেন্ট করতে গেলেই রোদেলার সাথে দেখা হবে তার। কেনো মনে হচ্ছে রোদেলাকে সে খুব করে অনুভব করছে।হাশপাশ করতে শুরু করলো শিশির। কখনো এদিকে বালিশ টেনে তো কখনো ওদিকে শুইয়ে পড়তে থাকলো কিন্তু লাভ হলো না কিছুই। এমনিতে লাইফে প্রথম কতোবড় একটা মিটিং এ্যাটেন্ড করতে তাকে কাল যেতে হচ্ছে ঢাকা সেটার এক টেনশন তারউপর হিয়ার এ-ই অবস্থা। কতো বকাঝকা করলো সে আজ হিয়াকে। একটা থাপ্পড় অবধি বসিয়ে দিলো মেয়েটার গায়ে। কি হচ্ছে এসব। কবে আর হিয়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তার। অস্থির মনটাকে শান্ত করতে না পেরে ওজু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লো শিশির। হিয়ার জন্য দু’রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে মোনাজাতে শুধু একটাই দোয়া চাইলো হিয়ার সুস্থতা। এই একটা পর একটা বিপদ যেনো আর তার বোনের জীবনটাকে বিষিয়ে না তুলে। আর কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি যেনো তার বোনকে না পড়তে হয়। সৃষ্টিকর্তা যেনো হিয়ার সব রাস্তা এখন থেকে সহজ করে তুলে। রহমতের বর্ষন নাজিল করে যেনো তার এই ছোট্ট বোনের উপর। এভাবে যে আর ভালো লাগছে না। সত্যি ভালো লাগছে না!
চলবে….