চোখের_তারায়_তুই?#পর্ব_৪৪

0
899

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৪৪
#ইভা_রহমান

বর্ষাকে নিয়ে কেক কাটার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উজান। পাশে দাঁড়িয়ে হিয়া কেকে মোম জ্বালাতে ব্যস্ত। কেক কাটা হবে আর কিছু সময় বাদে। পুরো ছাঁদ আজ আলোকসজ্জায় সজ্জিত। সাথে সব মেহমানরা নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে বর্ষাকে শুভেচ্ছা জানাতে তৎপর। মোম জ্বালানো শেষে বর্ষার মাথায় টুপি পড়িয়ে দিলো হিয়া। বাসবি এসে কেকের পাশে চাকু রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। শিশিরকে ক্যামেরা হাতে ধরিয়ে দিয়ে রোদ রাগান্বিত সুর টেনে বললো ” সারাদিন তো কিচ্ছু করো নি,এবার একটু ছবি তুলে দিয়ে উদ্ধার করো আমাকে” মৃদু হেঁসে ক্যামেরা হাতে নিয়ে সব বাচ্চাদের সাথে বর্ষার ছবি তুলে দিতে থাকলো শিশির। এদিকে নয়টা পাড় হচ্ছে দেখে রোদ উজানকে ডেকে দিয়ে বললো রাত হচ্ছে কেকটা কেটে ফেল। রোদের কথা মতো মোমবাতি নিভিয়ে বর্ষাকে নিয়ে কেক কাটলো উজান। সাথে হাত রাখলো হিয়া। বর্ষার মাথার উপর পার্টি স্পে করার দায়িত্ব পড়লো চাচ্চুর হাতে। মাথার উপর ফেনা উড়তে দেখে আনন্দে ভরে উঠলো বর্ষার ছোট্ট মন। কেকটা কয়েকটা ছোট টুকরো করে কেটে দিয়ে হিয়া বর্ষাকে খাইয়ে দিলো। মিষ্টি জিনিস খুব বেশি একটা মুখে ঢুকালো না মেয়েটা। রেগে গিয়ে বর্ষার মুখে কেক ছুঁইয়ে দিলো হিয়া। হিয়াকে একটা ঠাস করে মা’র বসিয়ে বর্ষা বললো,

– যা, যা,পঁচা মেয়ে তুই যা।

– তবে রে,সবার সামনে মারলি। এ-ই গোটা কেক এখন আমি একায় খাবো থাম।

হিয়াকে রাগ করে উজান বললো,

– হিয়া! কি হচ্ছে কি?

– আরে ঔ তো মারলো আমাকে।

– ও মারলো বলে তুমি এরকম করবা। দেখি বর্ষা বুড়ি,তুমি ফুফুকে কেক খাইয়ে দেও তো।

– না দেবো না। আমি সবার আগে বাবাকে কেক খাইয়ে দেবো। বাবা ও বাবা,আব্বু শুনো না।

মেয়ের মুখে সবার আগে বাবাকে কেক খাইয়ে দেবো শুনে রীতিমতো ক্ষেপে উঠলো রোদেলা। সারাদিন খাটাখাটুনি করলাম আমরা সবাই, সারাদিন দৌড়াদৌড়ি থেকে কেক অর্ডার দিয়ে কেক নিয়ে আসলাম আমরা সবাই আর এ-ই বদমাইশ কিনা সবার আগে তার আব্বুকে খাওয়াবে। তবে রে আজ দেখাচ্ছি মজা। একটা বড়সড় এ্যাটিটিউট নিয়ে রোদকে দেখিয়ে দেখিয়ে বর্ষার হাত থেকে কেক খাইয়ে নিলো শিশির। রোদ কপাল কুঁচকে আছে দেখে শিশিরের সাথে হেঁসে ফেললো বাকি সবাই। এদিকে সবার কেক খাওয়ানোর পর্ব শেষ হতে কেক নিয়ে নিচে আসতে রোদেলা বর্ষাকে ধোলাই দিয়ে বললো” রাতে আর ঘুমানোর সময় মাম খেতে চাবি তো ওমনি বাবা-র সাথে বাহিরে বের করে দেবো,বাপের দুলালি হু”

রোদের রাগ করা দেখে হেঁসে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে বর্ষাকে নাচতে পাঠিয়ে দিলো হিয়া। সাথে গানের রিদমে নিজেও বাচ্চাদের সাথে কোমড় দুলাতে শুরু করলো। হিয়ার মাথা থেকে প্রেগন্যান্সির কথাটা ভূলে গেলেও উজানের মনে রাখতে কোনো ভূল হলো না। নাচতে থাকা হিয়াকে একটানে নিচে নিয়ে আসলো। রাগ করতে করতে বললো,

– মাথায় যে মিনিমাম কমন সেন্স টুকে যে তোমার নাই এটা এ্যাটলিস্ট জানা ছিলো না আমার।

– আরে আশ্চর্য তো,আমি আবার কি করলাম।

– কি করলাম মানে,এর আগের বার মিচক্যারেজ হয়েও হুশ হলো না তোমার। এখন এ-ই প্রেগন্যান্সি শরীরে আবারো নাচগান শুরু করছো।

উজানের কথায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হিয়া। কি বলে এ-ই লোকটা। তারমানে কি উজান জেনে গেছে সে প্রেগন্যান্ট।

– ইয়ে মানে আমি,তু তুমি কি করে জানলে আমি প্রেগন্যান্ট?

– কি করে জানলাম, সব গেস্টদের বিদায় হতে দেও সব খবর করছি তোমার।

হিয়াকে শা*সিয়ে উপরে এসে খাবারদাবারের আয়োজন দেখতে শুরু করলো উজান। আর শা*সানোর সাথে সাথে এও বলে গেলো একদম যেনো আর সিঁড়ি ভেঙে নামা নামি ওঠাবসা করা না দেখি তার। ভয়ে আর উপরে তো গেলোই না হিয়া বরং রুমে এসে হন্তদন্ত হয়ে রিপোর্ট খুঁজতে গিয়ে দেখলো সেগুলো বিছানার উপর তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা মেক-আপের উপর পড়ে আছে। বুঝতে আর বাকি কিছুই রইলো না হিয়ার। কি জ্বালা খামোখা ভয় পাইয়ে দিলো। বেশি নড়াচড়া করলেই যে শুধু মিচক্যারেজ হয় না সাথে মানসিক ভয় দেখালেও যে মিচক্যারেজ হয় তা কি উজান জানে না। শুধু শুধু টেনশন ধরিয়ে দিলো মেয়েটার। ভয়ে শাড়ি খুলে এসে একটা পাতলা সুতি কামিজ গায়ে জড়িয়ে পুরো রুম সুন্দর মতো পরিষ্কার করে নিলো হিয়া। বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেকআপ কিট,অগোছালো ড্রেসিং আয়নার সাথে কাবাডের জামাকাপড় সব গুছিয়ে একদম পরিপাটি করে রাখলো পুরো রুম। নয়তো এটার জন্যেও বকুনি দিক আবার। ধুর!
!
!
রাত তখন এগারোটার কিছুপর। অধিকাংশ গেস্টই বিদায় নিয়েছে। উজানের এক বন্ধু সাথে শিশিরের এক কলিগ দেড়িতে আসায় চলছে এখনো তাদের খাওয়াদাওয়া। এদিকে বর্ষাকে খাইয়ে হিয়ার কাছে বর্ষাকে রেখে গেলো বাসবি। বর্ষার নাকি খুব ঘুম পাচ্ছে এখন ঘুম পাড়ায় দেও এই মেয়েকে। বর্ষাকে সুন্দর মতো হাতমুখ ধুইয়ে একটা সুতি জামা পড়িয়ে দিলো হিয়া। উপরে খাবারের আয়োজন চললেও নীচে চলছে একদম নীরবতা। বর্ষাকে নিয়ে বিছানায় বসে তাকে কোলে নিয়ে লাইট বন্ধ করে দিলো হিয়া। দরজা খোলা রাখা বিধায় ডাইনিং থেকে আলো এসে পড়ছে রুমে।

– আমাকে হালুম কবে এনে দিবি ফুপু?

হিয়া বর্ষাকে কোলে নিয়ে দোল দোল করতে করতে বর্ষার পিঠে আস্তে ধীরে থাপড়াতে থাপড়াতে বললো,

– কালকে এনে দেবো সোনা,আজকে ফুপু যায়নি না বাহিরে,আর কালকে দোকান সব বন্ধ ছিলো। ফুফু গিয়ে কালকে পরীটার জন্য দুটো হালুম কিনে আনবে,কেমন।

– একটা হলুদ হালুম,আর একটা লাল হালুম।

– আচ্ছা একটা হলুদ আর একটা লাল,এখন চোখ বন্ধ। চোখ খুললে কিন্তু সত্যি সত্যি হালুম মামা এসে যাবে,তারপর যখন দেখবে বর্ষারানি এখনো ঘুমায়নি ওমনি তখন গপ করে খেয়ে ফেলবে,

সাথে সাথে চোখ বন্ধ করলো বর্ষা,বর্ষাকে নিজের আরো ভেতরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে হিয়া ছড়া কাটতে থাকলো। তিনটে ছড়া শেষ হতেই আবারো চোখ খুললো বর্ষা,আকুতির সুর টেনে বললো,

– মা যাবো।

– কি যাবি, না মা যাওয়া যাবে না। মা কাজ করে না উপরে। তুই ঘুমো।

– না আমি মা যাবো।

– এবার কিন্তু মা’র দেবো বর্ষা। তুই না আমার সোনামোনা হোস,আমার কাছে আজকে ঘুমো। আমি মামা আর তুই আমরা একসাথে ঘুমাবো এখন কেমন।

– না আমি মাম খাবো,মা যাবো। মা মাম দিবে।

– কি মাম খাবো মাম খাবো,বড় হয়েছিস না এখন তুই। এতো বড় বাচ্চা কেউ মাম খায়। তোর মা’র মাম বের হয় না এখন ধুর।

– না আমি মা যাবো।

– আমি কিন্তু এবার রাগ করবো বর্ষা। ঘুমোতে বলছি না। আচ্ছা আমরা গল্প করতে করতে ঘুমাই হ্যা,একটা ছিলো টোনা একটা টুনি।

হিয়ার বুকে একটা ঠাস করে মা’র বসিয়ে বর্ষা আবারো বললো” সে গল্প শুনবে না সে এখন মা যাবে” রেগে গিয়ে বর্ষাকে নিজেই মাম খাইয়ে দিলো হিয়া। একটা পর্যায় ফুপুর নরমকোলে ঘুমিয়ে পড়লো বর্ষা। সাথে বর্ষার পাশে চোখ বন্ধ করলো হিয়া নিজেও। এদিকে সবাইকে বিদায় দিয়ে সব ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে নামিয়ে নিচে আনতে রাত তখন একটা। বাসবি এসে নিজের রুমে শুইয়ে পড়তেই রোদ বর্ষাকে দেখতে রুমে আসতেই দেখলো মেয়ে তার ফুপুর গায়ে পা তুলে দিব্যি ঘুমাচ্ছে। আর বিরক্ত না করে নিজে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সব গুছিয়ে রাখলো বাকি যা কাজ আছে কালকে করা যাবে নাহয়। শিশির আর উজানো নিচে নেমে আসলো। সব দেখে নিয়ে যে যার রুমে শুতে আসতেই শিশির দেখলো তার রোদমামুনি নেই আজ,ঘুমাচ্ছে তার বোনের কোলে যাগ এই সুযোগ আজকে না হয় রোদরানিকে ইচ্ছে মতো আদর করা হবে তার। উল্টো দিকে হিয়ার পাশে বর্ষাকে দেখে চোখ পাকালো উজান,নিজ মনে বললো” বকুনি দেবো দেখে বর্ষাকে নিয়ে রাখছে,এতো ট্রিকস পরীক্ষার খাতায় এ্যাপ্লাই করলেও তো কিছু একটা কাজ দিতো” হিয়াকে আর ডেকে তুললো না উজান। ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা শুইয়ে পড়লো হিয়ার পেছন ঘেঁসে। এক হাত বাড়িয়ে হিয়ার চুলে বিলি কাটতে লেগে আসা ঘুমটা ভেঙে আসলো হিয়ার। চোখ কচলে উঠে বসতেই নিজের গা ঘেঁসে উজানকে দেখে ভয়ে হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলো,

– আমি কিন্তু কিচ্ছু করিনি হ্যা,তোমার যখনতখন আদর পায় তুমি তো তখন কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই আদর করো,এটা কিন্তু তোমার ভূল। আমি কিচ্ছু করিনি যা হয়েছে তোমার ভূলের জন্য হয়েছে আমাকে কিন্তু বকা দিতে পারবা না এখন হ্যা।

হিয়াকে ভয় পেতে দেখে মুচকি হাসলো উজান। হিয়ার কপালে স্নেহের পরশ বুলে দিয়ে বললো,

– আর আমি যে ঔষধ এনে দিয়েছিলাম সেটা কে ইচ্ছাকৃত ভাবে না খেয়ে ড্রয়ারে ফেলায় রাখছে শুনি?

– ইয়ে মানে আমি তো,আমি তো খাই না,তুমি এনে দিলেই তো খাই,এখন ড্রয়ারে কি আছে না আছে আমি কি করে জানবো।

– হুম সেই হিয়া কেনো জানবে জানবে তো এই উজান..তা এ-তো বড় একটা কথা তুমি একবারো আমাকে জানালে না,একা একা টেস্ট করতে দিয়ে আসলে,বাড়ির কাউকে তো মানুষ এ্যাটলিস্ট বলে।

উজানকে স্বাভাবিক দেখে মুখে এক বিরাট প্রফুল্লের হাসি টেনে হিয়া বললো,

– আরে আমি তো নিজেও বুঝিনি কি থেকে কি হচ্ছে। তুমি আগে শোনো না কি হইছে,আমার না কয়েকদিন ধরে সিম্পটম গুলো দেখা যাচ্ছিলো তো আমি ভাবলাম তুমি তো আসবে বর্ষার জন্মদিনে তখন বলবো না হয় সামনাসামনি। ফোনে বললে যদি রাগ করো। আর বাড়িতে বলার আগে লতাকে বলি,আপুকেও বলতে কি রকম লজ্জা লজ্জা লাগছিলো,পরে লতা তো কালকে শোনামাত্র ওর মামার ল্যাবে নিয়ে গেলো আমাকে,আমি তো ওকে বললাম তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস ওসব কিছুই হয়নি আমার, কিন্তু না ঔ শুনলো না। আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে টেস্ট করালো। আমি তো তোমার ভয়ে ছিলাম তুমি কি রাগ করবে না বকবে,তাই বলি নি কালকে। পরে যখন বিকালে লতা রিপোর্ট দিয়ে গেলো তখন যে আমি কি খুশি হইছি বিশ্বাস করো তুমি উজান,আমি তো খুশির চোটে উপরেও গিয়েছিলাম তোমাকে সবটা তক্ষুনি তক্ষুনি বলবো বলে কিন্তু কেটারিং এর লোক গুলোর সাথে যে রাগারাগি করছিলে তুমি,ভয়ে আর কিছু না ব’লেই নিচে নেমে আসছি আমি।

– হুম হয়েছে বুঝেছি আমি….এখন যে ঢাকা গিয়েও শান্তি পাবো না আমি। ডবল চিন্তা ধরিয়ে দিলে আমার,আগে তোমার চিন্তা হতো এখন সাথে আমাদের বাচ্চা টার চিন্তা। কি করবো আমি ওখানে একা একা।

– আরে এখানে তো মা আছে আপু আছে, আমি আছি তাহলে কি চিন্তা তোমার এতো শুনি।

– থেকেও বা কি,যার বাচ্চা তারই যদি কোনো রেসপনসেবলিটি না থাকে।

– তুমি বেশি ভাবছো উজান,দেখো বাবু আসতে মিলতেও তোমার এমডি কম্পিলিট হ’য়ে যাবে আর আমার ফাইনালো। আমি চাই প্রেগন্যান্সি সময় টা তুমি আমার পাশে না থাকলেও বাবু হবার পর তুমি সবসময় আমার কাছে আমার পাশে থাকো।

উজান হিয়ার গালে হাত রেখে হিয়ার ঠোঁট জোড়া বুলাতে বুলাতে বললো,

– হুম বুঝলাম। কিন্তু তোমাকেও এখন আগের মতো লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি করলে চলবে না। বর্ষা কিন্তু হুটহাট তোমাকে মারে,ওর থেকে সাবধানে থাকবা। একদম ওর সাথে ঝগড়াঝাঁটি মারামারি কিচ্ছু করতে যাবা না।

হিয়া উজানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

– হুম হুম মনে থাকবে। তুমি দেখবে আমার বাবু আসছে শুনলেই বর্ষা কিরকম খুশি হয়ে যাবে। ওর আরেকটা খেলার সঙ্গী আসবে যে।

– হুম। সবাই খুব খুশি হবে।

– তুমি খুশি তো উজান। তুমি তো চেয়েছিলে না আরো সময় নিয়ে তারপর..আমি মন খারাপ করবো দেখে কিছু বলছো না তো?

– ধুর পাগলি। হ্যা আমি চেয়েছিলাম তুমি ফাইনাল শেষ করার পরই আমরা বাবু নেবো যাতে তোমার সুবিধে হয়,কষ্ট কম হয়। কিন্তু যখন হয়েছে তখন সেটাতে কি করে আমি অখুশি হয়ে থাকতে পারি বলো।

– Thank you!

– এখন দেখি,আর কোনো কথা না,চুপচাপ ঘুম দিতে হবে। এখন থেকে প্রপার টাইমে ঘুম,প্রাপর টাইমে খাওয়া,প্রপার টাইমে সবকিছু করতে হবে। ঠিক আছে।

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো হিয়া। মুচকি হেঁসে উজানের বুকের উষ্ণুমে ঘুমিয়ে পড়তেই এদিকে ঘুম ভেঙে উঠে বসলো বর্ষা। আধো আধো চোখে মা কে খুঁজতেই শুরু করলো তার খুতখুতানি কান্না। এ-ই মেয়ের হয়েছে এক জ্বালা সারাদিন মা না হলেও তার চলবে,ফুফু মামা মামনির সাথে খেলে সময় পাড় করতে পারবে কিন্তু রাত এগারোটার বারোটা বাজার সাথে সাথে মা’র কথা তীব্র থেকে তীব্র ভাবে মনে আসে তার। তখন যে দুনিয়া উল্টে গেলেও তাকে তার মা’র কাছে যেতে হবে মানে যেতেই হবে,থাকতেই হবে তার মা’র সাথে। কান্নারত বর্ষাকে কোলে তুলে নিলো উজান। হিয়া উঠে বর্ষার গাল চিপে একটা ইচ্ছামতো বাবুনি দিতেই ঠাস করে একটা মা’র বসিয়ে দিলো বর্ষা।

– বর্ষা শাঁকচুন্নি আমাকে মারলি আবার,আর যদি ঘুম পাড়িয়ে দিছি তোকে।

– ঠিক’ই আছে বর্ষার সাথে মারামারি করো সারাদিন এরপর নিজের বাচ্চা আসলে দেখবো তখন কি করো।

চিন্তায় পড়ে গেলো হিয়া। সত্যি তো তার বাবু আসলেও কি তার সাথে সারাদিন এরকম মারামারি করবে সে। সেও কি বর্ষার মতো চঞ্চল হবে নাকি উজানের মতো শান্ত স্থির। ব্যাপারটা তো ভীষণ চিন্তার। বর্ষাকে রোদের কাছে দিয়ে আসতেই মা’র কোলের নরমে আহ্লাদী এক কান্না করতে শুরু করলো বর্ষা। তার রাগ কেনো তার মা আজকে তাকে মাম খাইয়ে ঘুম পাড়ায় দেয়নি। উজান বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের রুমে আসলো। এদিকে বর্ষাকে কোলে আগলে বিছানায় শুইয়ে মাম খাইয়ে দিতে থাকলো রোদেলা।

– আমার আম্মুটা আজকে কার কাছে ঘুমাইছে,ফুপুর কাছে। ফুপু কি গল্প শুনাইছে?

– টোনাটুনির গল্প বলচে। মা মাম দেও।

– কেনো মাম দেবো আমি,দেবো না তো। তুই বাবাকে আগে কেক খাইয়ে দিলি,কোথায় আমাকে তো দিলি না। বললিও মা মা একটু কেক খাও।

– বলচি তো। তুমি তো নাগ করে কেক নিয়ে চলে আসলে।

– আমি রাগ করছি না।…আচ্ছা মা ঘুমাও এখন অনেক বাজে।

– বাবা কোতায় মা?

-বাবা গোসলে গেছে মা। তুমি ঘুমাও।

মাম খেতে খেতে ঘুমিয়ে চোখটা লেগে আসলো বর্ষার। এদিকে গোসল সেরে রোদেলাকে ডাক পাড়তেই রেগে উঠলো রোদেলা। কি চাই আবার তার একটু এসে শুলো মেয়েটা।

– রোদেলা,রোদেলা!

– কি হচ্ছে কি ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছ কেনো,কি চাই?

– একটা হাফ প্যান্ট দেও।

– গোসল করতে ঢুকলে একবারে সব নিয়ে ঢুকতে পারো না। আমি শুইছি পারবো না উঠতে আর। তোয়ালে পরে বের হয়ে আসো কেউ দেখবে না তোমায়।

উপায়ন্ত না পেয়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে আসতে হলো শিশিরকে। আর এসেই বউয়ের কোলে বাচ্চাকে দেখে মুখ টা ছোট্ট হয়ে আসলো তার। কোথায় ভাবলো বর্ষা নেই একটু তার রোদরানিকে রাতভোর আদর করা যাবে এই ফাঁকে কিন্তু কি আর করার সব’ই কপাল। তোয়ালে রেখে একটা হ্যাফপ্যান্ট পড়ে রোদের মাথার কাছে এসে বসলো শিশির। বাবাকে দেখে মাম খাওয়া ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বাবা-র দিকে তাকিয়ে উঠলো বর্ষা। শিশির কোমড় জড়িয়ে কাতুকুতু দিতেই লাফিয়ে উঠে মাম খেতে খেতেই খিলখিল করে হেঁসে ফেললো বর্ষা। বর্ষার মুখের এই অবলীল হাসি যেনো রোদেলা আর শিশিরের সারাদিনের সব ক্লান্তি ধুইয়ে মুছে নিয়ে গেলো কোন এক দূরদেশে। বর্ষাকে খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো রোদেলা। চারপাশে বালিশ দিয়ে ভর দিয়ে মশারী লাগিয়ে নিলো। দরজা জানালা লাগিয়ে শিশির এসে রোদের পাশে শুতেই শিশিরকে রাগ করে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে এ পাশ ফিরলো রোদ,মৃদু হেঁসে রোদেলাকে জড়িয়ে ধরলো শিশির। রোদের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো,

– মেয়ের মা কি আজকে খুব ক্লান্ত।

– হুম খুব ক্লান্ত বর্ষার মা আজকে।

– একটুও কি আদর করা যাবে না?

– না একটুও না।

তপ্ত শ্বাস ছুঁড়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো বাবা মেয়ে দুজনেই। এদিকে বাবা মেয়ের এ-ই শরীর জড়িয়ে ঘুম দেওয়াতে নিজের ঘুম আর হয়েও ঠিক মতো হলো না রোদের। কি আর করার ঘুমোও এখন এভাবে!

?
কিছু মাস পর

আজ হিয়ার কনসিভ করার প্রায় সাত মাস হয়ে আসছে। এ-ই সাত মাসে হিয়ার খুব একটা শরীর খারাপ না করলেও চোখ থেকে যেনো পুরোপুরি ঘুম উধাও হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ বাদে উজান নিজের কোর্সটুকু শেষ করে রংপুরে ফিরছে সেই আনন্দে ঘুম তো যেনো আরো ছুটি কাটাচ্ছে। এরপর থেকে উজান রংপুরেই হিয়ার পাশে থাকবে বলে ঠিক করে নিয়েছে। যদি হিয়া তার বাকি কোর্স করতে ঢাকা যায় সে আরেক বিষয়। এখন তো আর যাচ্ছে না। এ-ই সাত মাসে হিয়া সহ নিজের বাচ্চার থেকে দূরে থাকা টা যেমন উজানের কাছে খুব সহজ ছিলো না তেমনি স্বামী ছাড়া একা একা হিয়ারো মন টা মানতে চায়নি। কিন্তু যাগ এখন উজান আসছে এটাই শান্তি।

এক সপ্তাহ বাদে উজান ফিরে আসার পরই হিয়ার সাত মাসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। জমকালো না হলেও একটা ছোট্ট গেটটুগেদার এর যে আয়োজন করা হয় সেটাও বেশ ভালো করেই সমাপ্ত ঘটে। আজ হিয়া আর শুতে বাসবির রুমে যায় নি। আজ থেকে যে উজান ফিরছে সে যে আবার এখন থেকে তার কাছেই থাকবে!

বর্ষাও এই কয়েকটা মাসে অনেকটা বড় হয়েছে। হিয়ার বাবু আসছে দেখে এখন আর সে হিয়াকে কথায় কথায় মারে না উপরন্তু হিয়ার সব কথা শুনে সে। একটু চঞ্চলতা কমলেও আজো রাত হলে আর কাউকে না মা’কেই একমাত্র কাছে চাই তার। মা’র মাম না খেলে নাকি ঘুমই আসতে চায় না তার। মাঝে মাঝে বর্ষার এ-ই বাচ্চামিতে বিরক্ত হয়ে যায় রোদেলা। কিন্তু কি আর করার এতো কিছু করেও এ-ই মেয়ের বদঅভ্যেস টা আর ছাড়ানো যাচ্ছে না।
!
!
বিছানার উপর বালিশে হেলান দিয়ে শুইয়ে আছে হিয়া। হিয়ার পাশে বসে বসে হিয়ার পেটে অনবরত হাত বুলিয়ে যাচ্ছে বর্ষা। পড়নে তার হিয়ার এ্যাপরোন সাথে গলায় ঝুলছে উজানের স্টেথোস্কোপ। বর্ষা হিয়ার পেটের উপর নিজের ছোট্ট মস্তিষ্কের ডাক্তারি ফলাতে ফলাতে বললো,

– হিয়া শোন,শোন না। দেখ তোর বাবুটা এখনো ঘুমাচ্ছে না। বাবুটার মনে হয় পেট খারাপ হইছে আমার মতো।

– চুপ পাগলি। আমার বাবুর তোর মতো কথায় কথায় পেট খারাপ হয় না।

– তুই চুপ থাক। তুই কিছু বুঝিস। আমি ডাতার(ডাক্তার) আমি বুঝি সব।

– বেশি পকপক করিস তুই হেবলি। যা ঘুমা গিয়ে মা’র সাথে, ভাগ। আপু কি বলছে জানিস আজকে, তোর মামের মধ্যে করলা মিষিয়ে দিবে তখন কেমন করে মাম খাবি তুই, ছিঃ এতো বড় মেয়ে মাম খায়। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, ছিঃ

রেগে গিয়ে হিয়ার মুখে ঠাস করে আবারো একটা মা’র বসিয়ে দিলো বর্ষা।

– তুই ছি ছি,আর একবার বললে না তোর মুখ ভেঙে দেবো,হিয়ার বাচ্চা।

বর্ষার কথাটা শেষ হতে নেই ওমনি রুমে ঢুকে মেয়েকে এরকম হু*মকি দিতে শুনে রেগে উঠলো রোদেলা। শিশিরকে ডেকে দিয়ে বললো,দেখো কি বলছে কি তোমার মেয়ে,কি রকম ফুফুকে শাসা*চ্ছে দেখো। রোদের অভিযোগ শুনে শিশির তার ছোট্ট ডাক্তার-নিকে কোলে নিয়ে রুমে আসলো। শিশির বর্ষাকে নিয়ে ব্যালকুনিতে এসে দাঁড়াতেই গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে গেলো বর্ষা। শিশির বর্ষাকে আগলে নিতেই বর্ষা বললো,

– জানো বাবা,হিয়ার বাচ্চা টার না পেটে ব্যাথা হইছে,ঔজন্য ঘুমাচ্ছে না শুধু হিয়ার পেটে নড়তিছে।

– তাই! তা আমার মা টা কি করে বুঝলো। মা টা কি ডাক্তার হয়ে গেলো নাকি আজকে।

– হুম তো আমি মামুজানের মতো ডাতার হবো তো।

রোদেলা এসে বর্ষার পাশে হেলান দিয়ে বললো,

– একটা কবিতা শিখিয়েছি তাই বলতে পারিস না,আর তুই হবি ডাক্তার। হু। আর হিয়া কি হ্যা হিয়া কি। বলছি না ফুফু বলে ডাকতে।

– না ঔটা হিয়া হিয়া হিয়া।

– পিটুনি দেবো কিন্তু বর্ষা। খুব বকবো।

শিশির বর্ষার সাথে রোদেলাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

– এতো বকাবকি কিসের শুনি। সারাদিনে কাজ করে বাড়ি ফিরি একটু আদর করে কথা বলবে তা না উল্টে বাপ মেয়েকে উঠতে বসতে ঝারি দেওয়া হয় শুধু।

– এখন আর আদর করে কথা বলার বয়স নেই বর্ষার আব্বু। কিছুদিন পর মেয়েকে স্কুলে দিবা সেই লেহাজ করো।

– না সে তো দেবো। না আমি ভাবছি মেয়ে তো বড় হয়ে যাচ্ছে না। এর মধ্যে যদি আরেকটা..

– তাই না। আগে এ-ই পাকনি টাকেই ঠিকঠাক মতো মানুষ করো। তারপর ভাবা যাবে বাকিসব।

– আচ্ছা বেশ। তা বলছি কি যে উজান তো আজ আসলো এখন তো হিয়া ওর সাথেই থাকবে না। বড় আম্মু এখন একা থাকবে তুমি বরং বর্ষাকে না হয়।

– থাক আর বলতে হবে না। ওসব আশা বাদ দেও।নিজের মেয়েকে তো চিনোই। রাতে আমার গায়ের গন্ধ না শুকলে তার আবার ঘুম হয় না। একদম বাবা-র মতো। তাই গিয়ে চুপচাপ মশারী দিয়ে দুজনে ঘুমাও।

বলেই বেড়িয়ে আসতে রোদেলাকে জড়িয়ে থামিয়ে দিলো শিশির। হেসে দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে রোদ বললো,

– আরে কি করছো। শিশির..প্লিজ না।

– তাহলে আজকে আদর দিবে বলো।

– না,দেবো না।

– কি বললা।

– দেবো দেবো। মেয়ে টাকে তো আগে ঘুমাতে দেও।

– হুম। মনে থাকে যাতে।

হাসতে হাসতে বারান্দা ছেড়ে পালিয়ে আসলো রোদেলা। না মেয়ে যেমন এক বাপ ও তেমন আরেক।
!
!
বিছানায় শুইয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হিয়া। উজান গোসলে ছিলো। বেড়িয়ে এসে হিয়াকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে রুমের দরজা লাগিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়লো। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছছে ওমনি সময় চোখ খুলে একটু সোজা হয়ে উঠে বসলো হিয়া। অনিমেষ পলকে তাকিয়ে রইলো বহুক্ষণ উজানের দিকে। উজান চুলের পানি গুলো হিয়ার মুখে ছিটিয়ে দিয়ে বললো,

– কি হয়েছে, হিয়ানের মা কেনো জানি হিয়ানের বাবা-র দিকে এভাবে অপলক তাকিয়ে আছে আজ।

উজানের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে উজানকে অকপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো হিয়া। হিয়ার কান্নায় স্তব্ধ হয়ে পড়লো উজান। হিয়ার এই অসময়ের কান্নার কোনো মানে খুঁজে পেলো না উজান। একটু আগে অবধি তো সব ঠিকই ছিলো,অনুষ্ঠান হলো,মজা হলো। কতো আদর পেলো মেয়েটা আর এখন কি না এভাবে সে।

– হিয়া কি হইছে..হিয়া চুপ করো। কি কষ্ট হচ্ছে তোমার। বলো আমাকে?….আরে কান্না করার তো একটা কারণ থাকা চাই না। আমি আজ দু মাস পর ফিরলাম তুমি এরকম করে কান্না করে যাবে। এই মেয়ে…আমার কষ্ট হচ্ছে হিয়া। দেখো আমার দিকে।

অনেকক্ষণ কান্না করার পর মুখ তুলে চোখ মুখ মুছে মুখে একফালি হাসি টেনে হিয়া কান্নারত কন্ঠে বললো,

– কিচ্ছু হয়নি আমার আমি ঠিক আছি।

– তাহলে কান্না করলে কেনো হঠাৎ?

– তোমাকে এই দুটো মাসে না অনেক মিস করছি। মন চাইতো যদি তুমি পাশে থাকতা। খুব কান্না আসতো। মনে হতো এক্ষুনি পাখি হয়ে উড়ে যাই তোমার কাছে। একা একা খুব খারাপ লাগতো জানো।

বলতে বলতে চোখ দিয়ে আবারো পানি ঝরালো হিয়া। উজান হিয়ার কান্নারত পুরো মুখে চুমু এঁকে বললো,

– এ-ই তো আমি এসে গিয়েছি,এখন আর কোথাও যাবো না আমি,প্রমিস।

হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে উজানের বুকে নিজেকে লুকালো। উজান হিয়ার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পেরেই অশান্ত হিয়াকে শান্ত করতে এটা ওটা নানা গল্প জুড়ে দিলো। হিয়ান আসলে কি করবে,হিয়ান বড় হলে তারা কি করবে,হিয়ান কথা না শুনলে কে আগে বকবে সব সব সব গল্পে হিয়াকে মুড়ে দিলো। সাথে স্যুটকেস থেকে হিয়ার জন্য একটা সুন্দর হ্যালোকিটির সেট বের করে দিতেই লাফিয়ে উঠলো হিয়া। আরে তার প্রিয় হ্যালোকিটি যে।

– এটা এটা কার জন্য উজান,আমার জন্য?

– হুম এটা আমার হিয়ানের মায়ের জন্য। স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো কিন্তু। তার প্রিয় কিটি!

হিয়া উজানের গালে একটা বিরাট চুমু এঁকে বললো,

– thank you thank you thank you সাদা বিলাই……তবে উজান আমি এটা পড়লে সবাই না কি ভাববে আমাকে বলো তো। যে বাচ্চার মা হয়ে আমি?

– হুম পড়ার কথা তো বাচ্চার। বাচ্চার মা-ই যদি বাচ্চা হয় তাহলে আর কি বা করার সেখানে।

হেঁসে ফেললো হিয়া। সেট জোড়া পেয়ে হিয়া যা করলো উজান তো এখন চিন্তায় পড়ে গেলো। এ-ই মেয়ে কি তাদের বাচ্চা আসলেও এরকম বাচ্চাই থাকবে না একটু নিজেকে চেঞ্জ করবে। । দেখি হিয়ান আসুক। এদিকে আবার সে তার মায়ের মতো এরকম দূরন্ত হয় না বাবার মতো ধীর শান্ত তাই দেখার বিষয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here